Center For Research In Indo

কালে কালে আরো কত কি দেখিবো!

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নামটি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া। কারণ জিয়ার নাম বাদ  দিয়ে এমন একটি নাম দিতে হবে যাতে সহজে নামটি বদল করা না যায়? এজন্যে নামের সাথে একটু ধর্মীয় অনুভূতি যোগ করে দেওয়া হয়েছে।  জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নামটি রেখেছিলো বিএনপি। অথচ এর পূর্বেকার নাম ছিলো ‘কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর’। নাম পরিবর্তনের এই খেলাটি রাজনৈতিক, তবে ধর্মীয় সুড়সুড়ি বা অনুভূতি জড়িত হয়েছে।  

 

বাংলাদেশে এখন ধর্মের চাইতে ‘অনুভূতি’ বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে রামু থেকে কুমিল্লায় অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। সদ্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী একজন মহিলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এক মুক্তিযোদ্ধার জানাজায় আসতে বাধা দিয়েছেন। এর পেছনে ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকা সম্ভব, যদিও তিনি ‘অনুভূতি’-কে কাজে লাগিয়েছেন। অথচ বঙ্গবীরকে যদি নারী প্রধানমন্ত্রী ডাকেন তিনি সুড়সুড় করে এসে ‘কদমবুচি’ করবেন। 

 

এ লেখাটি নাম পরিবর্তন নিয়ে, ‘নামেই কিবা আসে যায়, যখন যে নামে খুশি ডেকো গো আমায়’! খুলনা শহরের বিখ্যাত ‘শিববাড়ী মোড়’ হঠাৎ করে ‘বঙ্গবন্ধু মোড়’ হয়ে যাচ্ছিলো, সামাজিক মাধ্যমে হৈচৈ শুরু হলে পৌর কর্পোরেশন সিদ্ধান্ত পাল্টায়। নিউইয়র্কে ‘ইউনাইটেড হিন্দুজ অফ ইউএসএ’ জ্যাকসন হাইট্সে এক সমাবেশে এর প্রতিবাদ করে। ইত্তেফাকে বেরিয়েছে, খুলনা সিটি’র মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন ‘ঐতিহ্যবাহী শিববাড়ী মোড়সহ দু’টি মোড়ের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। 

 

বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তনে ধর্ম ব্যবহার এবং শিববাড়ী মোড়ের নাম বদলে বঙ্গবন্ধুকে টেনে আনা এক ধরণের বিপত্তি। ধর্ম ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে টানাটানি না করলেই কি নয়? শিববাড়ী মোড় হয়তো বদল হবে না, কিন্তু বিমান বন্দরের নাম, সরকার পরিবর্তন হলে আবারো পরিবর্তন হবে না, এ গ্যারান্টি কোথায়? হজরত শাহজালাল ধর্মীয় নেতা, তিনি বাঙ্গালী নন, তাঁর নাম আমদানি করা কতটা যৌক্তিক? বিমান বন্দরের নাম বদলের কর্মটি কিন্তু প্রথম শুরু করে বিএনপি? 

 

জয়দেবপুর আশির দশকে বেশ ঘটা করে এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ‘গাজীপুর’ হয়। এদের কাউকে কাউকে আমি চিনতাম, তাঁরা একটি ম্যাগাজিন বের করেছিলো, কপি আমার কাছে আছে। এ পরিবর্তনের পক্ষে যত কারণই দেখানো হোক না কেন, ভেতরের কারণটি অন্য। নিউইয়র্কের মৌলানা কাউয়ুম ‘জোক্স’ করে লিখেছেন, ‘খুলনা’ একটি অশ্লীল শব্দ, মুসলিম দেশে এমন নাম থাকতে পারেনা, এটি পাল্টিয়ে ‘ঢাকনা’ রাখা উচিত’। নিশীথ বিশ্বাস উত্তরে লিখেছেন, ‘খুলনা তো খোলা, তাই এটি বোরখায় ঢেকে দেয়া হোক’।  

 

খালেদা জিয়া একবার গোপালগঞ্জের নাম বদলাতে চেয়েছিলেন। এটি রাজনৈতিক। বিক্রমপুর থেকে মুন্সীগঞ্জ হবার কারণ অন্য। তেমনি কালীগঞ্জ হয়েছে নেত্রকোনা, চট্টগ্রামের ব্রাহ্মণপাড়া হয়েছে বুরহানবাগ, শ্রীহট্ট হয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জের দুর্গাপাশা হয়েছে দরগাপাশা, স্বরূপকাঠির হিন্দুরহাট হয়েছে মিয়ারহাট, সুনামগঞ্জের দুর্গাপুর হয়েছে দরগাপুর, ঢাকার রামচন্দ্রপুর হয়েছে মোহাম্মদপুর, নরসিংদীর বাবুরহাট হয়েছে শেখেরচর, ইত্যাদি।   

এ তালিকা বেশ বড়, তবে একে আজাদ ও মিঠুন গোস্বামী লিখেছেন, ‘ঘুম থেকে উঠে আর রাম নাম নয়, তাইতো রাজবাড়ীর ‘রামদিয়া’ এখন ইসলামপুর। চেয়ারম্যান পূর্ব-বালিথুবা তাঁর ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিলাহ, দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়েছে’। নাম পরিবর্তনের খেলা বেশ পুরানো। পারলে এঁরা দিনগুলোর নাম সোম, মঙ্গলবার বদলে ইসলামী নাম রাখতো। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর নাম পাল্টে দিতো।                       


সমস্যা হচ্ছে, হিন্দুরা পুরো বাংলা ভাষাটা দখল করে বসে আছে, ৯০% মুসলিম দেশে এটি মেনে নেওয়া যায় না! সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ভারতেও নাম পরিবর্তন হচ্ছে। উত্তরে আর একজন লিখেছেন, ভারতে পুরানো নাম পুনর্বহাল হচ্ছে, যেমন এলাহাবাদ হয়েছে প্রয়াগরাজ, যা এর পূর্বেকার নাম। বাংলাদেশে হচ্ছে ইসলামীকরণ। 

 

একজন নুরুল আমিন লিখেছেন, ‘কালো কালিতে লেখা নাম, ‘আউলিয়া নগর’, কিন্তু পাথরে খোদিত নামটি এখনও অক্ষত, তা হচ্ছে, ‘রাম-অমৃতগঞ্জ’। পরের ষ্টেশনের নাম ছিল ‘সেনবাড়ী’, হয়েছে আহমেদাবাদ, কালিরবাজার হয়েছে ফাতেমানগর।

 

বলি কি, পুরানো নাম ভালো, তাই আমাদের প্রধান বিমানবন্দরটি পূর্ব-নামে, অর্থাৎ ‘কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নামে ফিরে এলে মন্দ কি!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *