Center For Research In Indo

ইতিহাসের পরিহাস : পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের রূপান্তরণ

পূর্ণিমা নস্কর

পাকিস্তান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাঙালি মুসলমানের মানসজগতে দ্বি-জাতিতত্ত্বের যে একটা গভীর প্রভাব সৃষ্টি হয়েছিল – তা থেকে বাঙালি জাতিসত্ত্বার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া মোটেই সহজ কর্ম ছিল না। হিন্দু ও মুসলমান দুটি আলাদা জাতি – এই মানসিকতা বাঙালি মুসলমানদের যথেষ্টই প্রভাবিত করেছিল। ফলে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি গণপরিষদে উত্থাপিত হলেও পূর্ব বাংলার মুসলমান প্রতিনিধিরা কেউই তার স্বপক্ষে দাঁড়াননি। তাঁরা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে উর্দুর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন। এই রকম যখন পূর্ববঙ্গের সামাজিক অবস্থা তখন বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশের পথ মোটেই সহজ ছিল না।

 

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন হলেও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশের ধারা তেমন গতি সঞ্চয় করতে পারেনি। কারণ পূর্ব পাকিস্তানের জনতার মধ্যে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ধারণা মোটেই দুর্বল ছিল না এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যেও দ্বিজাতিতত্ত্ব বিরোধী তেমন কোন কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ ব্রিটিশ ভারতে বিভিন্ন রাজনৈতিক বা স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালি মুসলমানদের তেমনভাবে যোগদানের নজির পাওয়া যায় না। বাঙালি মুসলমান সমাজে ইসলাম ধর্মের চর্চা গভীরভাবে দেখা না গেলেও বিভিন্ন মাওলানা, মৌলবী ও ইসলামিক সংগঠনগুলি মুসলমানদের মধ্যে ধর্মাচরণ ও ইসলামিক রীতি-নীতির একটি অভ্যাস বা অনুশীলন অব্যাহত রেখেছিল। ফলে গভীরভাবে ধর্মচর্চা না করেও বাঙালি মুসলমানরা ইসলামের প্রভাব বলয়ের মধ্যে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। সাধারণ মুসলমান সমাজে ইসলামী সংস্কৃতি ব্যতিরেকে উদার বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা খুবই স্বল্প মাত্রায় দেখা যেত। সেকারণে পাকিস্তান আন্দোলনে দ্বিজাতিতত্ব তাদের উপর সহজেই প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছিল। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন পরবর্তীতে সারা দেশের আবহে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার ধারা ক্রমে বেগবান হয়ে ওঠে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের শিকড় ক্রমেই পুষ্ট হতে থাকে। কিন্তু দ্বিজাতিতত্ত্বের দ্বারা মুসলমান সমাজ এতটাই প্রভাবান্বিত হয়েছিল যে, বাংলা ভাষার পরিবর্তে যখন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রস্তাব করা হল, তখনও বাঙালি মুসলমানদের গণপরিষদে সকল প্রতিনিধি উর্দুর পক্ষে সমর্থন দিয়েছিলেন এই ভেবে যে, উর্দু হল মুসলমানদের ভাষা এবং পাকিস্তান একটি ইসলামিক রাষ্ট্র, আর এই ইসলামকে রক্ষা করতে হলে মুসলমানদের ভাষা উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করা যথাযথ। তারা মনে করতেন, বাংলা ভাষার উপরে হিন্দুদের প্রভাব খুব বেশি, তার শব্দ ভাণ্ডারের সঙ্গে ইসলাম বা মুসলমানের খুব একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই। পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুসলিম নেতৃবৃন্দ বাঙালি মুসলমানদের কাছে এই ধারণাই তুলে ধরতে সচেষ্ট ছিলেন। বাংলাদেশের সমাজেও এই সময়কালে অর্থাৎ ভাষা আন্দোলন কিংবা তার পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি ইসলামী আদর্শের ভালরকমেরই প্রভাব ছিল। ফলে উদার বাঙালি চেতনার বিকাশে তেমন কোন সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি ১৯৬৮ সালের আগে পর্যন্ত।

 

তার কারণ ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন হলেও শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য ১৯৬২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত পূর্ববঙ্গ এবং পূর্বপাকিস্তানে বাঙালি নেতৃবৃন্দ বারে বারে ক্ষমতায় এলেও তারা শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছেন বলে মনে হয় না। ঐ সময়কালে তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য বাঙালি নেতৃবৃন্দ নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে যে ধরণের বিবাদে লিপ্ত ছিলেন, সেখানে ভাষা আন্দোলনের স্মারক নির্মাণের তেমন কোন গুরুত্বই ছিল না।

 

তাহলে কি সমাজে ভাষা আন্দোলনের তেমন প্রভাব তখনও পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি? “১৯৫৮ সালে আয়ুব খানের সামরিক শাসন শুরু হওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।” এর পিছনে হয়তো সামরিক জান্তার বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করে থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হল ভাষা আন্দোলনের দশ বছরের মধ্যেও পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি নেতৃবৃন্দ ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্মারক নির্মাণের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারলেন না কেন? ভাষা আন্দোলন তৎকালীন রাজনীতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিল বলে আমাদের মনে হয় না। তা যদি হতো তাহলে স্মারক নির্মাণের জন্য দশ বছর অপেক্ষা করতে হল কেন?

 

তাছাড়া বাঙালি মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনচর্চায় ইসলাম ধর্ম যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ছিল একথার প্রকৃত প্রমাণ মেলে বহু পূর্বেই। বঙ্গভঙ্গ রদের (১৯১১ সাল) পরে যখন মুসলমান নেতৃবৃন্দ হিন্দু বুদ্ধিজীবীও নেতৃবৃন্দকে দোষারোপ করেছিল তখন এই অভিযোগ করেছিল যে, পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ গঠিত হলে পূর্ববঙ্গের বাঙালি মুসলমানরা, একটা বিরাট ভূখণ্ডে তাদের চলাচল, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বসবাসের জন্য ছড়িয়ে পড়তে পারত। পূর্ববঙ্গের একটা বড় অংশ সামুদ্রিক ঝড় জলোচ্ছ্বাসের আওতায় থাকায় পূর্ববঙ্গ-আসাম প্রদেশ তাদের জন্য বাসযোগ্য একটা বড় ভূমিখণ্ড হিসাবে সামনে এসেছিল, যা রবীন্দ্রনাথসহ বাঙালি হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলনে তাদের হাতছাড়া হয়ে গেল। বাঙালি মুসলমান বুদ্ধিজীবীরা পূর্ববঙ্গের মুসলমান অধিবাসীদের কাছে প্রাঞ্জল ভাষায় এটা ব্যক্ত করেছিলেন। তখন থেকেই হিন্দু মুসলমান সম্পর্কের উপর যে মেঘ ঘনীভূত হয়ে গেল দেশবিভাগ ও তার পরবর্তী সময় পর্যন্ত তা আর দূর করা সম্ভব হয়নি। ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম ধর্ম এবং লোকজ সংস্কৃতির বাইরে সাধারণ মানুষের জীবনে সংস্কৃতির দিক থেকে তেমন কোন বড় পরিবর্তন তখনও দেখা যায়নি। পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী ইসলামি সংস্কৃতির বাঁধনে পূর্ব পাকিস্তানি জনগণকে গোড়া থেকেই বেঁধে রাখবার একটা প্রয়াস শুরু করেছিল। সেখানে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রবেশ ঘটেছিল নামমাত্র এবং ছাত্র যুবকদের যে আন্দোলন ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তা সাধারণ গ্রামের মানুষের – কাছে ততটা স্পষ্ট ছিল না।

 

একথা বলা যেতে পারে যে, শেখ মুজিবুর রহমানের স্বল্প সময়, মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসন আমল, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং গণতন্ত্রের বিকাশে তেমন সহায়ক হতে পারেনি, ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত একেবারেই দৃঢ় হতে পারেনি। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশের জনমনে, যুবমানসে ও ছাত্র সমাজে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে বীজ প্রোথিত হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে তার শিকড় আরো গভীরে প্রবেশ করার সুযোগ পেল না।

 

স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমান সংবিধান বদলে দিলেন। তিনি সংবিধানের ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য বিকৃতি পূর্বক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নামে রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টা করেন। আর এভাবেই তিনি সমস্ত বাঙালি জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেন, যে বাঙালি জাতি নিজেদের আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল।

 

        আর এক্ষেত্রে পাকিস্তান আন্দোলন প্রসঙ্গে বদরুদ্দীন উমরের মন্তব্যকে স্মরণ করতে পারি। তাঁর মতে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হচ্ছে পাকিস্তানি ধ্যান ধারণারই অনুকরণ মাত্র। এই বাংলাদেশের ভাগ্যেও পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের পরিনতিই অপেক্ষা করছে।

 

১৯৭৮ সালে সংবিধানের প্রস্তাবনার উপরে ‘বিসমিল্লাহি রহমানির রহিম’ সংযোজিত হয়ে গেল। অর্থাৎ বলা যায় – “The BNP government also introduced significant policy changes in the socio cultural life of Bangladesh. The most important was the move away from secularism to Islamic ideals. While under Sheikh Mujibar Rahman secularism was the basis of the state, General Zia made it more Islamic.”

 

১৯৬৮, ১৯৬৯ এর ছাত্র আন্দোলন, ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ সমাজে যে একটা গ্রহণযোগ্যতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, জিয়াউর রহমানের আমলে সংবিধানের ইসলামীকরণের মাধ্যমে দ্রুতই তা বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যেতে থাকল। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ক্রমান্বয়ে সমাজে স্থান পেতে থাকল। ফলে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক ও রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার বাধা অপসারিত হল। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী জামাত, রাজাকার, শান্তি কমিটি, বদরবাহিনীর সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে পুনর্বাসিত করলেন। ফলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের একটা শক্তিশালী ক্ষেত্র সমাজে দ্রুত গড়ে উঠতে থাকল।

 

জিয়াউর রহমান ও এরশাদের একযুগের শাসন, বাংলাদেশে পাকিস্তান মানস শুধু প্রজ্জলন নয়, সেই শিখা যাতে অকম্পিত থাকে তার ব্যবস্থা করা হয়। তাইতো এরশাদের পতনের পর জিয়া পত্নী বেগম খালেদা জিয়াও এর থেকে ব্যতিক্রমী ছিলেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার সামনে জেনারেল জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর আদর্শগত ভাবে বাংলাদেশকে যে পাকিস্তানী ভাবাদর্শে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছিল তা মূলত জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই। সেক্ষেত্রে বলা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক চিন্তা জিয়াউর রহমান – থেকে ভিন্ন হওয়ার কথা নয়, কারণ তিনি তাঁরই উত্তরসুরী। ফলে ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বাংলাদেশ যে রাজনীতি ও সরকারি মিথ্যাচার প্রত্যক্ষ করলো তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু ছিল না।

 

পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হয়েছে। তাতেও এর কোনো সমাধান হয়নি। কারণ মুক্তিযুদ্ধেও মানুষের চেতনা (ইতিহাস চেতনাসহ) ও বিচার বুদ্ধির গুণগত কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। তার অন্তরের গভীরতর সংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসসমূহে ঘা পড়েনি। যুদ্ধ অধিকাংশ সময় বাহ্য ভাবাবেগ ও উন্মাদনার গভীরে প্রবেশ করতে পারেনা। এমনকি রাজনৈতিক আন্দোলনও এককভাবে মানুষকে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে মহত্তর বোধে আলোড়িত করতে পারে না, যতটা পারে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্কার আন্দোলন। দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশি সমাজের মূলস্রোতে সরাসরি তার প্রভাব পড়েনি। একাজের জন্য চাই উপযুক্ত সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও জাগরণমূলক কর্মোদ্যোগ। এক্ষেত্রে কাজ না হলে বা সে কাজে ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয় না, সাময়িক কোনো সাফল্য এলেও তার সুফল ধরে রাখা যায় না, যেমন অতীতে যায়নি। রাজনৈতিক জাগরণ বা উত্থান বহুবার ঘটেছে – ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬৯, ১৯৭১ এবং সর্বশেষ ১৯৯০-এ অব্যর্থ ছিল গণঅভ্যূত্থান। কিন্তু সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটেনি বলে বা এক্ষেত্রে মূলধারায় একাত্ম হওয়া যায়নি বলে শেষ পর্যন্ত একটা মুক্তিযুদ্ধ বিজয়েও মুক্তির স্বাদ পাওয়া গেল না এবং সাম্প্রতিককালে ঘটে গেল শাহবাগ আন্দোলনের ব্যর্থতা। ফলে তীব্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের আবেগ হ্রাস পেয়ে দ্রুত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

 

এ অবস্থাটা আরো ভালো বোঝা যায় যখন দেখা যায় এ সমাজে যখন তখন ইচ্ছে মতো ধর্মান্ধ আবেগ দিয়ে একটা ইস্যু খাড়া করা যায় এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সত্ত্বেও রাজনীতি তাকে ঠেকাতে পারে না। ধর্মান্ধতা এবং তার যে উগ্ররূপ মৌলবাদ তা গণতন্ত্র ও উদার মানবিক সংস্কৃতির বিকাশের পথে বড় বাধা। সাধারণ মানুষ রাজপথে প্রচুর আন্দোলন, এমনকি মুক্তিযুদ্ধ করলেও মানবিক বিকাশের প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করতে পারেনি ও তার জন্য জরুরি সামাজিক আন্দোলন করেনি। শোষক শক্তির আঁতাত ভাঙেনি বরং শক্তিশালী হচ্ছে, মৌলবাদও বাড়ছে, গণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে সরকার তাদের মদত দিচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *