শিতাংশু গুহ, নিউ ইয়র্ক
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: বাংলাদেশে ইতিহাসে মাত্র তিনবার পপুলার ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৮-সালে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তাঁর ক্ষমতা বৈধ করতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তিনি ৭৬.৬% ভোট পেয়ে জয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বী এমএজি ওসমানী পান ২১.৭%। জিয়া হত্যার পর ১৯৮১ সালে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, বিএনপি’র আবদুস সাত্তার ৬৫.৫% ভোট পেয়ে জয়ী হ’ন। প্রতিদ্বন্দ্বী ড: কামাল হোসেন পান ২৬% ভোট। এরপর সাত্তারকে সরিয়ে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এটি বৈধ করতে ১৯৮৬ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরশাদ ৮৪.১% ভোট পেয়ে জয়ী হন, ভোট পরে ৫৪.৯%। এ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না! ১৯৯১ সাল থেকে মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকার চালু হওয়ায় প্রত্যক্ষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নেই, সংসদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
রেফারেন্ডাম: বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনবার জাতীয় রেফারেন্ডাম, যা ‘হ্যাঁ/না’ ভোট নামে সমধিক পরিচিত। জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ একবার করে তাঁদের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে কিনা তা যাচাই করতে ১৯৭৭ ও ১৯৮৫ সালে ‘হ্যাঁ/না’ ভোট আয়োজন করেন। বলা বাহুল্য, এসব ভোট সবসময় সামরিক শাসকদের অনুকূলে যায়। ১৯৯১ সালের ব্যতিক্রমধর্মী রেফারেন্ডামটি ছিল সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে আসার জন্যে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘হ্যাঁ/না’ ভোট করেন ৩০শে মে ১৯৭৭। এতে তারপক্ষে ভোট পরে ৯৮.৯%। মোট ভোট পড়েছিল ৮৮.১%। দ্বিতীয় ‘হ্যাঁ/না’ ভোট আয়োজন করেন হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, ২১শে মার্চ ১৯৮৫। তারপক্ষে ভোট পরে ৯৪.৫%। মোট ভোট পড়েছিল ৭২.২%। বলা বাহুল্য, উভয়ক্ষেত্রে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। তৃতীয় রেফারেন্ডাম হয় ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৯১। সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে আসার পক্ষে ভোট পরে ৮৩.৬%, বিপক্ষে ১৫.৫%, মোট ভোট পড়েছিল ৩৫.৫%। একই সংশোধনীতে প্রেসিডেন্ট সংসদে পরোক্ষ ভোট নির্বাচিত হবার বিধান এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদটি বিলুপ্ত করার পক্ষে জনগণ মত দেন।
জাতীয় (সংসদ) নির্বাচন: বাংলাদেশে প্রথম সংসদ নির্বাচন হয় ৭ই মার্চ ১৯৭৩ সালে। আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে। এগার জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়। ভোট পরে ৫৫%। মহিলা রিজার্ভ ১৫টি আসন। এ নির্বাচনে কারচুপি’র অভিযোগ উঠে, তবে সেটি কেন্দ্রভিত্তিক, জাতীয়ভাবে কিছু ছিল না। নির্বাচনটি ভালোই ছিল, গ্রহণযোগ্য ছিল।
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৮ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯। বিএনপি ২০৭ আসনে জেতে, আওয়ামী লীগ ৩৯। ভোট পরে ৫১%। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। এ নির্বাচনে জাতি প্রথম ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং দেখে, একই সাথে ভোটের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়।
তৃতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ৭ই মে ১৯৮৬ সালে। জাতীয় পার্টি ১৫৩, আওয়ামী লীগ ৭৬, জামাত ১০টি আসন লাভ করে। ভোট পরে ৬১%। বিএনপি ভোট বয়কট করে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন।
চতুর্থ সংসদ নির্বাচন ৩রা মার্চ ১৯৮৮। জাতীয় পার্টি ২৫১, সম্মিলিত বিরোধী জোট ১৯টি আসন লাভ করে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ২য়, ৩য় ও ৪র্থ সংসদ নর্বাচনের ফলাফল বিশ্বাসযোগ্য ছিল না, সামরিক স্বেচ্ছাচারী সরকারের ইচ্ছেমত ফলাফল ঘোষণা হয়।
পঞ্চম সংসদ নির্বাচন হয় ১৩ই জানুয়ারী ১৯৯১। বিএনপি ১৪০, আওয়ামী লীগ ৮৮, জাতীয় পার্টি ৩৫, জামাত ১৮টি আসনে জেতে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ভোট পরে ৫৫.৪৫%। এ নির্বাচনটি ভাল এবং গ্রহণযোগ্য হয়। শেখ হাসিনা সূক্ষ্ণ কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন, গ্রাহ্য হয়নি।
১৯৯৬-এ দু’টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচন, আওয়ামী লীগ বয়কট করে, বিএনপি জয়ী হয়, আসন ২৭৮। আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে ‘তত্বাবধায়ক সরকার’ দাবি আদায় করে। জুনে আবার সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬, জাতীয় পার্টি ৩২, জামাত ৩, ইসলামী ঐক্যজোট ১, জাসদ (রব) ১, স্বতন্ত্র ১টি আসন লাভ করে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ভোট পরে ৭৫,৬%। ১৫ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচনটি জাতির জন্যে কলঙ্ক।
অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে, যদিও বিএনপি ভোট পায় ৪০.৯৭%, আওয়ামী লীগ ৪০.১৩%। আসন, বিএনপি ১৯৩, আওয়ামী লীগ ৬২, জামাত ১৭, ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১৪, জাতীয় পার্টি ৪, ইসলামী ঐক্যজোট ২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ১, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ১টি আসন। স্বতন্ত্র ৬, ভোট পরে ৭৪.৯৭%।
২০০৮-এ নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বিএনপি ৩০, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ২৭, জাসদ ৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ২, জামাত ২, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১, স্বতন্ত্র ৪, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি আসন। মোট ভোট পরে ৮৭.১৩%। মহিলা রিজার্ভ ৪৫টি আসন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত: এটি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ৫ই জানুয়ারি ২০১৪, আওয়ামী লীগ ১৫৩টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়লাভ করে। বিএনপি বয়কট করে। ভোট পরে ৩৯.৫৮%। মোট আসন, আওয়ামী লীগ ২৩৪, জাতীয় পার্টি ৩৪, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬, জাসদ ৫, তরিকত ফেডারেশন ২, জাতীয় পার্টি (মন্জু) ২, বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্ট ১, স্বতন্ত্র ১৬টি আসন। মহিলা রিজার্ভ ৫০টি আসন। এটি ‘বিনে ভোটের’ নির্বাচন বলে স্বীকৃতি পায়।
এগারতম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৩০শে ডিসেম্বর ২০১৮। প্রদত্ত ভোট ৮০.২%। মহিলা রিজার্ভ ৫০টি আসন। জাতীয় পার্টি ২৬, বিএনপি ৭, আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন। বাকি অন্যান্য। এ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে, এবং দিনের ভোট রাতে হয় বলে পরিচিতি লাভ করে।
দ্বাদশতম সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ই জানুয়ারী ২০২৪। আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ২৯৯টি আসনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। প্রদত্ত ভোট ৪০%, গুজব রয়েছে ১০%’র নীচে ভোট পড়েছে। বিএনপি বয়কট করেছে। স্বতন্ত্র ৬১টি আসন। এটিকে ‘ডামি ভোট’ বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ নির্বাচন নিয়ে ঢাকার মাঠে সরকারের পক্ষে ভারত-রাশিয়া-চীন এবং অন্যপক্ষে আমেরিকা-ইউরোপ-কানাডা বা পশ্চিমা বিশ্ব খেলছে।
Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.