Center For Research In Indo

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল গণতন্ত্র ও সুশাসন

Bimal Pramanik

Director, Centre for Research in Indo-Bangladesh Relations

যখন পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছিল, তাদের প্রধান দাবি ছিল গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুশাসন। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবনবাজি রেখেছিলাম,  লড়াই – এর ময়দানেও একথাটি কখনও ভূলে যাইনি। ব্যাপক গণহত্যা, দেশত্যাগ, ধ্বংসের  মধ্যেও কখনও আশা ছাড়িনি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলে নিশ্চই আমাদের ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠিত হবে।  আজকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত। সেইসব মুক্তিযোদ্ধা যারা জীবিত  আছে তারা আজ জীবন সায়াহ্নে। যারা যুদ্ধে শহিদ হয়েছে তাদের স্বপ্নও কি মৃত্যুর সাথে সাথে লীন হয়ে গেল ?   

একবার বিগত পঞ্চাশ বছরের দিকে আলোকপাত করা যাক। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম দশকের  মধ্যেই স্বপ্নের গণতন্ত্র  ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল। যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান কান্ডারী ছিলেন তারা নির্মম –নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হলেন, অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক নিহত হয়। সামরিক বুটের আস্ফালন ও দখলদারি ১৯৭১ সালে শেষ হয়েছে এমনটা সাধারণ মানুষ ভেবে নিলেও এত অল্প সময়ের ব্যবধানে সেই সামরিক বুট যে  আবার রক্তের বিনিময়ে কষ্টার্জিত  গণতন্ত্রের পিঠে আমূল ছুরি  বসিয়ে  দেবে আমরা কখনও  ভেবে দেখিনি। আমি কখনও ইতিহাস বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম না, ছাত্র জীবনে তাই ইতিহাসের জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ ঘটেনি। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের পাঁচ দশক আমার সামনে ইতিহাস এবং রাজনীতির সাধারণ জ্ঞান কিছুটা উন্মোচিত করেছে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রথম দশকেই বাংলাদেশের  ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারিত  হয়ে গেল। আবার বাংলাদেশী মোড়কে সেই পাকিস্তানি ইসলামি সামরিক শাসনের পুনরাবৃত্তি।  

কখনও সামরিক স্বৈরতন্ত্রের হুংকার, কখনও গণতন্ত্রের নামে ব্যাভিচার। এমনভাবেই কেটে গেল দুই দশক। শুরু হলো গণতন্ত্রের সংগ্রাম। কিন্তু দুই দশকে সদ্য স্বাধীন দেশের আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খিত স্বপ্ন মলিন হয়ে গেছে। ‘স্বপ্নের সংবিধান’ ধর্ষিত হয়ে গেছে। সামরিক/স্বৈরাচারী শাসকগণ বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা সংস্কৃতির এতই অবনমন ঘটিয়েছে যে সাধারণ জনগণের মনেও এই ধারণা জন্ম হয়েছিল যে, ‘পাকিস্তানের  আমলে আমরা অনেক ভাল ছিলাম’।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়,  মহাযুদ্ধগুলোর পরেও ধংসপ্রাপ্ত/ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহ আবার উঠে দাঁড়িয়েছে, দেশের সমাজ বদলেছে, নাগরিক  অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মানুষের  ব্যক্তি স্বাধীনতার  মূল্যায়ণ হয়েছে। এসব কারণেই মানুষ শত বিপদেও আশাহত হয়ে যায় না।  দু’দশক পর আবার গণতন্ত্রের স্বপ্ন জেগে উঠল। জনগণের মধ্যে পুনরায় একটা আশার সঞ্চার দেখা যেতে লাগল। কিন্তু এতদিনে সমাজ এবং রাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের ফলে অর্জিত ফলাফল ভূলুন্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতৃবৃন্দ নিহত হওয়ায় এবং দ্বিতীয়/তৃতীয় সারির  নেতা-নেত্রীদের অধিকাংশেরই আদর্শচ্যুতি ঘটায় মুক্তিযুদ্ধের কষ্টার্জিত আদর্শের বিভ্রান্তি ঘটেছে। সমাজে ও রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের  ধর্মীয় অধিকার জাঁকিয়ে বসেছে। রাষ্ট্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর  অধিকার শুধু খর্বই হয়নি, জোর করে তাদের দেশ থেকে বিতাড়ন এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা । কোনো দেশের গণতন্ত্র  চর্চার অন্যতম প্রধান বিষয়টি  হল সেদেশে সবধরণের   সংখ্যালঘুর অধিকার নিশ্চিতকরণ ও সামাজিক নিরাপত্তা।

এই সকল বাস্তব পরিস্থিতির  প্রেক্ষিতে  বাংলাদেশের গণতন্ত্র চর্চায় বারবার উত্থান পতন হয়েছে। আর সুশাসনের কথা যত কম আলোচনা করা যায় ততই ভাল। গত তিন দশকের রাজনীতি, নির্বাচন, সরকার, গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার নিয়ে সংক্ষেপে  দু’চারটি কথা বলা যেতে পারে।    

বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বৈরতন্ত্র-বিরোধী গণতন্ত্রের অন্যতম বড় রাজনৈতিক লড়াই ছিল জেনারেল এ এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে, ১৯৯০ সালে যার সমাপ্তি ঘটে। ‘স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ গণআন্দোলনের  এটা ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান। বাংলাদেশে ১৫, ৭ ও ৫ দলের তিন রাজনৈতিক জোটের মধ্যে মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা, জিয়া পত্নী বেগম খালেদা জিয়া ও বামপন্থীদের নেতৃত্ব জনগণের ব্যাপক সমর্থন ছিল এই আন্দোলনে। সর্বসম্মতভাবে একটি  ‘কেয়ার টেকার’ সরকারের মাধ্যমে একটি সুষঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে জোটগুলির ঐক্যমত প্রকাশে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত তৈরি হবে বলে জনগণের বড় আশা  ছিল। ১৯৯১ এর নির্বাচনের পর ১৯৯২ সালেই  জনগণ আশাহত হল যখন সারা দেশব্যাপী সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হল ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অজুহাতে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকারের ছত্রছায়ায় মধ্যযুগীয় বর্বরতা প্রত্যক্ষ  করলো সারা দেশ ও দুনিয়া। বাংলাদেশের সচেতন জনতা, এত লড়াই–এর অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে, তারা এই বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ব্যর্থ হল। গণতন্ত্রের অন্যতম শর্তই হলো সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা ও অধিকার সংরক্ষণ এটা বিপন্ন হলে গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশ সম্ভব নয় কোন দেশে।

এরপর গণতন্ত্রের মুখোশের আড়ালে বড় আঘাত এলো ২০০১ সালে। সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে  কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের উপর চালানো হল মধ্যযুগীয় বর্বরতা। সম্পদ লুট, নির্যাতন, গণহারে নারী ধর্ষণ, খুন, বসতবাটি ও দেশ থেকে জোরপূর্বক বিতাড়ন। সরকার, প্রশাসন প্রথম কয়েকমাস একথা স্বীকারই করতে চাইলো না যে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর কোনো নৃশংস অত্যাচার হয়েছে। ‘গণতদন্ত কমিশনের’ তদন্ত প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলা হয়েছে        

নিপীড়নের চরিত্র মোটামুটি নিম্নরূপ :

  • নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিচারে দৈহিক নির্যাতন ও কিছু কিছু লোমহর্ষক হত্যাকান্ড;
  • নারীদের উপর যৌন নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি;
  • বসতবাটি, দোকানপাঠ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ধ্বংসসাধন, অগ্নি সংযোগ;
  • কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয়ার অভিযোগ এনে বসতবাটি থেকে বিতাড়ন এবং অনেক ক্ষেত্রে দেশ  ত্যাগের ঘটনাও ঘটেছে;
  • গণহারে চাঁদাবাজি, ক্ষেত্রবিশেষে ধর্মান্তরের ও দেশত্যাগের হুমকি।

এই অত্যাচারে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘুরাই নির্যাতিত হয়নি,  খৃসটান

ধর্মাবলম্বী ও আদিবাসী সংখ্যালঘু সদস্যরাও রেহাই পায়নি।

গনতদন্ত  কমিশনের প্রতিবেদনে  নির্যাতনের কিছু বৈশিষ্ট্য  উল্লেখ করা হয়েছে :

১)  এসব নির্যাতনের পেছনে প্রচ্ছন্নভাবে যে মতাদর্শ, কর্মপরিকল্পনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো কাজ করেছে তার নিয়ামক শক্তির মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতাকে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে সৃষ্টি এবং সংহত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির প্রভাব বহুলাংশে বৃদ্ধি করা, যা সেই নিয়ামক শক্তির সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এই সত্য অনুধাবন করতে পারলেও বিভিন্ন কারণে এর বিরুদ্ধে কখনও সোচ্চার হয়নি, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়নি।   

২)  এবারকার সংখ্যালঘু নির্যাতনের মোকাবিলায় সরকারি প্রশাসনের ভূমিকা, প্রচার মাধ্যম,  জনসাধারণ এবং সচেতন নাগরিক সমাজ কতৃক ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে এবং তদন্ত কমিশনের কাছে উপস্থাপিত বিভিন্ন সংস্থার রিপোট ও সাক্ষ্যে তার প্রমান পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, আক্রমণকারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই   স্থানীয় মানুষজন বিধায় ভূক্তভোগীরা এদের প্রায় সকলকেই নাম-ধামসহ শনাক্ত করতে পেরেছে। এতদসত্তেবও  ঘট্নার তিন মাস পরের রিপোটগুলোতেও  দেখা যাচ্ছে যে গ্রেফতারের সংখ্যা নগণ্য এবং সন্ত্রাসীরা  স্ব- স্ব এলাকায় স্বদম্ভে  বিচরণ  করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে,  প্রশাসন  প্রভাবিত হয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ  থেকে বিরত থেকেছে এবং পাকিস্তানী আমলের সাম্প্রদায়িক সরকারের আদলে নীরব সম্মতি  এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে  আক্রান্তদের প্রতি  বৈরী আচরণের  মাধ্যমে সন্ত্রাসীদেরই উৎসাহিত করেছে,  বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে যা আর কখনোও ঘটেনি।

ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এই  সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আগের নির্যাতনের  সঙ্গে এবারকার নির্যাতনের একটি বড় পাথক্য হল এর ব্যাপকতা   ও তীব্রতায় এবং নিযাতন ঘটেছে সংখ্যালঘু নাগরিকদের   সামাজিক অবস্থান,  নির্বিশেষে নিম্নবিত্ত, উচ্চবিত্ত এমনকি  পেশাজীবী সংখ্যালঘুরাও এবার নিস্তার পায়নি। এ থেকে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, এ ধরণের ব্যাপক সহিংসতা পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে ঘটানো সম্ভব নয়। তদন্ত কমিশনের মনে হয়েছে যে এই সব পরিকল্পিত হিংস্রতার পেছনে একটি সুদুর প্রসারী  লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য  রয়েছে ।এর মধ্যে রয়েছে :

(ক) বাঙালী সমাজ ব্যবস্থায় বহুত্ববাদী ধারণাগুলোর (Concepts of pluralism),  বা বাঙালী সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ‘বৈচিত্রের মধ্যে একত্ব (Unity in diversity)  প্রভৃতি যুগ যুগ ধরে লালিত বৈশিষ্ট্যগুলোর অবসান ঘটিয়ে  দেশের অগ্রগামী সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে মূল জনস্রোত থেকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কার্যকরভাবে বিচ্ছিন্ন করা ।

(খ) বাংলাদেশের একাশ্মময় সমাজ ব্যবস্থা (monolithic social system) ও ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা (Theocratic state ) গড়ে তোলা। এই দ্বিবিধ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্বাধী্ন ও সার্বভৌম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাষ্ট্র নির্মানের পূর্বাপর ইতিহাস, সংগ্রাম ও আদর্শ থেকে বিচ্যুতি। “২ ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মেয়াদের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার সুশাসন এবং গণতন্ত্রের নামে যে অরাজকতা ও আপশাসনের নজির রেখে গেছে তা অভূতপূর্ব। মাৎস্যন্যায় বলাই যথাযথ।

সামরিক বাহিনীর ছত্রছায়ায় স্বল্প মেয়াদের একটি অরাজনৈতিক (caretaker)        সরকার সামারি  ট্রায়ালে (Summary Trial) বাংলাভাইসহ ছয়জনের ফাঁসি দিলেও সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ যে সকল মন্ত্রীসভার সদস্য এই অরাজকতা  তৈরির জন্য সরাসরি দায়ী ছিল তাদের বিচারের  সম্মুখীন করতে ব্যর্থ হল। কেন তা ‘গণতদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন’   বিশ্লেষনেই পরিস্কার হয়েছে।

এরপর বলতে হয় ২০১২ সালের জঙ্গীবাদী  তাণ্ডবের কথা। তখনও বাংলাদেশের জনগণের স্মৃতিতে তাজা রয়েছে পূর্বতন নির্বাচিত সরকারের আমলের দুঃস্বপ্নের স্মৃতি।

বিশিষ্ট মানবতাবাদী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন – “আমরা স্তম্ভিত। কিন্তু আমরা এটাও জানতাম যে, সংবিধান থেকে প্রথমে ধর্মনিরপেক্ষতার উচ্ছেদের পর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। তারপর রাষ্ট্রধর্মরূপে ইসলামের প্রবর্তন বাংলাদেশের সংবিধানের মূল কাঠামো বদলে দেয়। ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করেন, তারা সোল্লাসে ফিরে আসেন রঙ্গমঞ্চে – ধর্ম দিয়ে ভেদ করতে থাকেন নাগরিকদের। শুধু মুসলমান অমুসলমানে ভেদ নয়  শিয়া–সুন্নির ভেদ, আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন। সংকীর্ণ থেকে সকীর্ণতর স্তরে তাঁরা নিয়ে গেলেন বাংলাদেশের সমাজকে।  সমাজিক উদারতার কথা, মানবতার কথা সব তুচ্ছ করে ফেললেন।

২০০১ সালে নিছক রাজনৈতিক কারণে আবার দেখা দিল সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা। রাজনৈতিক দল-যারা এসব হাঙ্গামা থামাতে পারতো–তারা নিজেরাই তখন পলায়নপর। দেশের সর্বত্র চলল এই উন্মত্ততা। নীরবে নিভৃতে নয়, প্রকাশ্যে সজোরে শোনা গেল এই মানবতার ক্রন্দন।

তারপর আবার এই ২০১২ সাল। ২০০১ সালের মতো সর্বগ্রাসী নয়। কিন্তু সাতক্ষিরা, হাঠহাজারি, চিরিরবন্দর, রামু, উখিয়া, পটিয়া – উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিম বাংলাদেশে হিন্দু আক্রান্ত, বৌদ্ধ নিস্পেষিত, আহমদিয়া লাঞ্ছিত। আমার বাংলাদেশের একি ভাবমূর্তি দেখছি  অবিশ্বাস্য। আর আমাদের প্রশাসন অবিশ্বাস্যভাবে  ব্যর্থ, রহস্যজনকভাবে শক্তিহীন।

এরপরও প্রায় প্রতিবছর, বিচ্ছিন্নভাবে সারা দেশেই সরকার ও প্রশাসনের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তার  সুযোগে সংখ্যালঘু নিপীড়ন বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। এহেন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ও সুশাসন কতটুকু আশা করা যায় তার বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে কি ?

তথ্যসূত্র :

১। সংখ্যালঘু নির্যাতন ২০০১, গণতদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি , ঢাকা।

২। গনতদন্ত কমিশনের  প্রতিবেদন , পৃ ৭৯-৮০।

৩। নির্যাতনের দলিল – ২০০১, জঙ্গিবাদী তান্ডব ২০১২, দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা। সম্মিলিত  সামাজিক আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ, ঢাকা, ডিসেম্বর, ২০১২।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *