Center For Research In Indo

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত এবং ইন্দিরা গান্ধীর অনন্য ভূমিকা  

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক

ইন্দিরা গান্ধী ৩১শে অক্টোবর ১৯৭১ সালে লন্ডনে বলেছিলেন: “শরণার্থী সমস্যা ছোট করে দেখার উপায় নেই। বাংলাদেশের সমস্যা শুধু শরণার্থী সমস্যা নয়, বরং এর চেয়ে অনেক গভীর। ভারতের জন্যে শরণার্থী সমস্যা শুধু অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নয় বরং এটা ভারতের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার জন্যে বিরাট হুমকী।  শরণার্থীদের ওপর যে বর্বরোচিত নির্যাতন হচ্ছে বিশ্ব তা জানে না, কিন্তু প্রতিদিন শরণার্থীরা ভারতে আসছে। মানুষ আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, কতদিন এই ভার আমরা  বহন করতে পারবো? আমি বলছি, সেই সময় পেরিয়ে গেছে। আমরা আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছি, জানিনা কখন সেটা উদগীরণ শুরু করবে? আমরা সংযত, কিন্তু কতটা সংযত থাকবো বিষয়টি নির্ভর করছে, সীমান্তে কি ঘটছে এর ওপর। আমরা মনে করি বিশ্বসম্প্রদায়ের দায়িত্ব এর সমাধান খুঁজে বের করা। সবচেয়ে ভালো হয়, এবং সেটা মানবিক, তা হলো এর রাজনৈতিক সমাধান বা বাংলাদেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। 

শরতের শুরুতে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের পক্ষে আক্রমণাত্মক কূটনৈতিক সফরে পশ্চিমা বিশ্বে যান এবং যুক্তরাজ্য ও  ফ্রান্সকে পক্ষে আনতে সমর্থ হন। এই দুই রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য এবং মার্কিন বলয়ের, কিন্তু বাংলাদেশ প্রশ্নে এরা ভারতকে সমর্থন দেয়। ঐসময় ইন্দিরা গান্ধীর বিরাট কূটনৈতিক বিজয় ছিল, ৯ই আগষ্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ২০ বছর মেয়াদী ‘বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা  চুক্তি’। যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে এটা ছিল একটি বড় আঘাত। এরফলে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে চীনের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কমে যায়।  চীন তখন পাকিস্তানকে নৈতিক সমর্থন বা সামান্য সামরিক সাহায্য দিলেও ভারত সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটায়নি। ইন্দিরা গান্ধী ওয়াশিংটন সফর করেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিক্সন তাকে ততটা আমলে নেননি। হোয়াইট হাইসের ‘রোজ গার্ডেনে’ বসেই ইন্দিরা গান্ধী প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন যে, আমেরিকা না চাইলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। ইন্দিরা গান্ধীর জীবনী ‘মাই ট্রুথ’ গ্রন্থে বাংলাদেশের ঘটনাবলী বিশদ বিবৃত আছে। 

২৭শে মার্চ ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে পূর্ণ সমর্থন দেন। শরণার্থীদের আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়। পশ্চিমবাংলা, বিহার, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা সীমান্তে শরণার্থী শিবির  খোলা হয়। নির্বাসিত বাংলাদেশী সেনা অফিসার ও স্বেচ্ছাসেবীরা ঐসব ক্যাম্প থেকে মুক্তিবাহিনীর সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ কাজে নিয়োজিত হয়। ভারতের ইষ্টার্ন কমান্ডের মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব এক ইন্টারভিউতে বলেছেন, বেসরকারিভাবে ভারত এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশে জড়িয়ে যায়, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে সেটা ঘটে অনেক পরে। তিনি জানান, এপ্রিল থেকেই ভারত মুক্তিবাহিনীকে ট্রেনিং দিতে শুরু করে। জেনারেল জ্যাকব আরও বলেন, এটা ছিল বাংলাদেশের ফাইট, ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ও মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে ভালবেসে সাহসের সাথে যুদ্ধ করেছে, আমরা পাশে ছিলাম। ইন্দিরা গান্ধী ও জেনারেল জ্যাকবের মন্তব্য থেকে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভারত কিভাবে জড়িয়ে পড়ে এর আঁচ পাওয়া যায়। প্রায় ১ কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অস্ত্র সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। 

বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে কিন্তু ক্ষমতা পায়না। পূর্ব-পাকিস্তানে আন্দোলন শুরু হয়। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তান গণহত্যা শুরু করলে একইদিন দিবাগত রাতে (২৬ মার্চ ১৯৭১) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। তাকে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান ২৬শে মার্চ প্রথম রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু। পাকিস্তান গণহত্যা চালায়। ভারত সীমান্ত খুলে দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায় এবং মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেই শুরু। ভারত-পাকিস্তানের শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে এ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। তিনি হিসাব করেন যে, এই বিপুল শরণার্থীর ভার বহনের চেয়ে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে খরচ কম হবে। ফলশ্রুতিতে ভারত মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পরে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের  অভ্যুদয় ঘটে। 

৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তান অকস্মাৎ ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। ভারত পাল্টা আঘাত হানে। শুরু হয় আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ। তিনটি ভারতীয় কর্পস তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে যুদ্ধ করে, সাথে প্রায় তিন ব্রিগেড মুক্তিবাহিনী। ভারতীয়  বিমান বাহিনী এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব-পাকিস্তানের আকাশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। পশ্চিমেও প্রায় একই অবস্থা, ভারতীয় নেভী একই সময়ে প্রায় অর্ধেক পাকিস্তানী নৌবহর ও ট্যাঙ্কার ধ্বংস করে। জাতিসংঘে বারবার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সোভিয়েত ভেটোতে বানচাল হয়ে যায়। উপায়ন্তর না দেখে পাকিস্তান ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ব-পাকিস্তানে আত্মসমর্পণ করে। পশ্চিম রণাঙ্গনে ভারত সর্বাত্মক সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার পরও ইন্দিরা গান্ধী একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। যুদ্ধ শেষ। ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে মাথা নীচু করে আত্মসমর্পণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একসাথে এত সৈন্যের  আত্মসমর্পণ এই প্রথম। লেঃ জেনারেল এএকে নিয়াজী এতে স্বাক্ষর করেন। পৃথিবীর বুকে ৭ম জনবহুল ও ৪র্থ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ  রাষ্ট্র বাংলাদেশ জন্ম নেয়। পরাজয়ের পূর্ব-মুহূর্তে পাকিস্তানিরা স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সংঘঠিত করে। 

ইন্দিরা গান্ধী ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে পাকিস্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়। তিনি ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে ফিরে আসেন। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। বাংলাদেশ জাতিসংঘে সদস্যপদ চায়, কিন্তু চীনের ভেটোতে সেটা হয়না। বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করে যে, দখলদার পাকিস্তান বাহিনী ৩০লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে এবং ২লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত কেড়ে নিয়েছে। পাকিস্তানের জন্যে এই পরাজয় ছিল অবমাননাকর ও লজ্জাজনক। পাকিস্তান তার অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা হারায়। টু-নেশান থিওরী মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পাকিস্তান এক তৃতীয়াংশ সৈন্য, এক চতুর্থাংশ বিমান বাহিনী এবং অর্ধেক নেভীর শক্তি হারায়। ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের অবসান ঘটে। জুলফিকার আলী ভুট্টো  ক্ষমতাসীন হন। ১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তি হয়। ভারত যুদ্ধবন্দীদের ১৯২৫ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী তদারকি করে। ৯৩০০০ বন্দিকে মুক্তি দেয়, এমনকি যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ২০০ সেনাকেও ক্ষমা করে দেয়। একই সাথে পশ্চিম রনাঙ্গনে দখলকৃত ১৩০০০ বর্গ-কিলোমিটার ভূমি ফেরত দিয়ে দেয়। এই বিশাল পরাজয়ের গ্লানি ঘুচাতে এবং আর একটি ভারতীয় আক্রমণ ঠেকাতে ভুট্টো পারমাণবিক বোমা কর্মসূচীতে হাত দেন।

বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডটি ভারতের সৃষ্টি। কথাটা এভাবেও বলা যায়: হিন্দু-ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে। বোনাস হিসাবে তাই বাংলাদেশে হিন্দুদের বলা হয় ভারতের দালাল। এটা সার্বজনীন উপাধি। আবার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার কথা? বাস্তবতা ঠিক উল্টো, দায়সারা গোছে ভারতকে আমরা স্মরণ করি।  ১৯৭৫-১৯৯৬ পর্যন্ত ভারত শত্রু ছিলো।  অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা এক অনবদ্য ইতিহাস। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামসহ সমগ্র ভারতবাসী, ইন্দিরা গান্ধী তথা ভারত সরকার এবং বিএসএফ ও ভারতীয় সৈন্যদের কিংবদন্তী সাহায্য-সহযোগিতা ও আত্মত্যাগের সফল পরিণতি বাংলাদেশ। এটা ঠিক ভারতের সামরিক কৌশলগত স্বার্থ ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের জন্যে ভারতবাসীর এতটা ত্যাগ ও ভালবাসা বিশ্বের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। মোদ্দা কথা, স্বাধীনতাকামী জনগণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় ভারত আমাদের (বাংলাদেশের) স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। অনেকটা না-চাইতে এবং কিছু বোঝার আগেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। হয়ত, এ কারণে বাংলাদেশিরা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান খাটো করে দেখে, বা ততটা স্বীকার করতে চায়না। অথবা কটু কথা বলে? বাঙ্গালী নাকি ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝেনা’! যদি মুক্তিযুদ্ধ অন্তত: নয় মাস না হয়ে নয় বছর হতো; প্রতি ঘরে ঘরে, একজন শহীদ বা বীরঙ্গনা থাকতো তাহলে হয়তো বাঙ্গালী স্বাধীনতার মর্যাদা বুঝতো এবং ভারতের অবদানকে মেনে নিত। সহজলভ্য স্বাধীনতার কারণেই বাঙ্গালী পেরেছিলো মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ইতিহাসের চাকা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিতে? 

একাত্তরে আমরা বাঙ্গালি ছিলাম। সবাই রাতারাতি বাঙালি হয়ে গিয়েছিল। খোলস খুলতে খুব বেশি দেরি হয়নি। এখন বাঙ্গালি মুসলমান। পাকিস্তান আমলেও কিন্তু আমরা বাঙ্গালি মুসলমান ছিলাম। এর সুবিধা হচ্ছে, বাঙ্গালি মুসলমান হলে একটু পাকিস্তান-পাকিস্তান গন্ধ থাকে? তাই ক্রিকেটে ভারত পাকিস্তানের কাছে হারলে বা যে কারো কাছে ভারত হারলে আমাদের খুশির অন্ত থাকেনা? এটা তামসিক মানসিকতা। বাংলাদেশে সবার অজান্তে একটি চমৎকার ঘটনা ঘটে গিয়েছে? সহজ বাক্যে সেটি হল: যিনিই ভারত বিরোধী, তিনিই সাম্প্রদায়িক। নাহ, ব্যতিক্রম দেখিনা? বাংলাদেশের সংখ্যাধিক্য মানুষ এখন সাম্প্রদায়িক, সুতরাং ভারত বিরোধী। তাই মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান যতটা ক্ষুদ্রাকারে দেখানো যায়, তাই ভালো। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে ভারতীয় সৈন্য মরেছে, সেই ইতিহাস খুঁজে পাওয়া বেশ দু:সাধ্য। সরকার অবশ্য ভারতকে অস্বীকার করছে না বা করতে পারছে না। আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধে বিদেশীদের অবদান স্মরণ করে বেশ কিছু কাজ করেছেন। লক্ষ্যণীয় যে, শব্দটি ‘বিদেশী’? ব্যাকরণগতভাবে শব্দটি সঠিক, কিন্তু এও কি সত্য নয় যে, ‘ভাসুরের নাম নিতে মানা’? 

২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সৈন্যদের সম্মাননা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন দু দেশের মধ্যে বেশকিছু কথাবার্তা হয়। ঐসময় লেঃ জেঃ বিজয় কুমার সিংহের নেতৃত্বে একটি ভারতীয় সামরিক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম তখন বলেছিলেন, বাংলাদেশ কখনো স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা ভুলবেনা। তিনি আরও  জানিয়েছিলেন যে, নিহত ভারতীয় সৈন্যদের স্মরণে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি স্মৃতিসৌধ হবে এবং তাতে নিহত প্রতিটি ভারতীয় সৈনিকের নাম লেখা থাকবে। মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ঠিক কত সৈন্য নিহত হয়েছিলেন, বাঙ্গালী তা আজও  জানে না। গুগুল ও এনডিটিভি জানাচ্ছে, সংখ্যাটি ৩৯০০, আহত ৯৮৫১। ইকোনোমিক টাইমস/ ইন্ডিয়া টাইমস ০২জুন ২০১৫ বাংলাদেশ সরকারের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে, নিহতের সংখ্যা ১৯৮০। আমার দেশের (বাংলাদেশ) জন্যে যারা অকাতরে জীবন দিয়ে গেলো এদের প্রতি আমাদের কি কোন দায় নেই? না, নেই, কারণ ভারতীয় সৈন্যরা মুসলমান নয়।  

নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধে আমাদের (বাংলাদেশের) গৌরবগাথা সত্য, তারপরও এটাও সত্য যে, আমাদের স্বাধীনতার জন্যে আমরা ভারতের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। সেই কৃতজ্ঞতার দায় সামান্য হলেও পরিশোধের জন্যে বাংলাদেশের মাটিতে নিহত ভারতীয় সৈন্যদের জন্য মন্ত্রীর কথামত ঢাকায় একটি স্মৃতিসৌধ হওয়া উচিত। নাকি এটি শুধু কথার কথা? একদা রেসকোর্সে ‘ইন্দিরা মঞ্চ’ ছিলো। সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভারত বিরোধিতা আমাদের মজ্জায় মজ্জায় এতটাই গভীরভাবে প্রোথিত যে, আমরা অকৃতজ্ঞ হয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে আমরা ‘বেইমান’ খেতাব পেয়েছি, তেমনি ভারতের অবদানকে খাটো করে ‘অকৃতজ্ঞ’ হচ্ছি। কেন এত দৈন্যতা? ভারত হিন্দু বা হিন্দুই ভারত বলে? একাত্তরে একথা মনে ছিল না? কোন মুসলমান রাষ্ট্র কি সেদিন বাংলাদেশের পক্ষে এগিয়ে এসেছিল? চীন? কেউ আসেনি। বরং সবাই মিলে বিরোধিতা করেছিল! পক্ষে ছিলো ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক বলয়। ভারত এবং ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা ছিল অনন্য।

 

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *