শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক
অনেকদিন দেশে রাজনীতি ছিলোনা, বিএনপি-জামাত হারিয়ে গিয়েছিলো, মাঠে শুধু ছিলো আওয়ামী লীগ। অধুনা বিএনপি জেগেছে, হঠাৎ জামাত মাঠে নেমেছে। নির্বাচন এলে এমনটা হয়, এবারো হচ্ছে, দেশে এখন রাজনীতি হচ্ছে। এটি ভাল। রাজনীতি হোক। ঢাকাই রাজনীতিতে বিদেশীরাও প্লেয়ার। আমরা তাঁদের ‘হায়ার’ করে ডেকে আনি, অথবা আমাদের ব্যর্থতার কারণে ওঁরা দামী প্লেয়ার হিসাবে জায়গা করে নেন, ‘গোল’ ওরাই দেয়, আমরা হাততালি দেই, ওদের প্রশংসা করি। ভালো দর্শক হিসাবে আমাদের কোন তুলনা হয়না। ওঁরা সার্টিফিকেট দেয়, আমরা নিজেদের ‘ধন্য’ মনে করি।
ভারত ও আমেরিকার দুই কূটনীতিক একই দিনে ঢাকা নেমেছেন। তাঁরা শেখ হাসিনা’র সাথে দেখা করবেন বা করেছেন। সামনের সপ্তাহে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ডোনাল্ড লু।পরের সপ্তাহে আসবেন অর্থনৈতিক বিষয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জোসে ডব্লিউ ফার্নান্দেজ। এদের টেক্কা দিয়ে আগেই আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব (পূর্ব) সৌরভ কুমার। লু’র ঠিক একদিন আগে তিনি আসছেন। ডোনাল্ড লু’-কে বলা হয় ‘রেজিম চেঞ্জ’ স্পেশালিস্ট। দেখা যাক, ঢাকায় লু’-হাওয়া বইবে, নাকি এই প্রচন্ড গরমে বাতাস ‘সৌরভ’-এ ভরপুর হবে?
ওঁরা সবাই আসছে, আমাদের গণতন্ত্র শেখাতে, কিভাবে সুষ্ঠূ ভোট করতে হয় সেই জ্ঞান দিতে। ওঁরা আমাদের ‘কাইজ্যা’ (ঝগড়া) থামাতে বৈঠক করবে, সব দলকে নির্বাচনে আনতে চেষ্টা করবে, আশা দেবে, ভরসা দেবে, সাথে থাকতে বুদ্ধি দেবে। এসব সাবজেক্ট ওঁরা নিশ্চিতরূপে আমাদের চাইতে ভালো জানে, তাই তাঁরা আমাদের প্রশিক্ষণ দিতেই পারে। অতীতে যখন ওঁরা এসব করতো না, আমরা তখন, ‘আমরা’ মানে যাঁরা কখনো না কখনো ক্ষমতায় ছিলাম বা আছি, ওঁদের দুয়ারে মাথা খুঁটেছি, আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার ট্রেনিং দেয়ার জন্যে। ওঁরা উদার, ওঁরা ট্রেনিং দিয়েছে, এখনো দিচ্ছে। এটি তো সত্য, জাতি হিসাবে আমরা এখনো সুষ্ঠূ নির্বাচন করতে শিখিনি, তাই ট্রেনিং দরকার!
এবার কি শিখবো? মনে হয়না। প্রবাদ আছে, যিনি জেগে ঘুমিয়ে থাকেন, তাকে জাগানো যায়না’, আমরা ধনুর্ভঙ্গ পণ করেছি, আমরা শিখবো না, আমাদের শেখায় সাধ্য কার? বাংলাদেশে সুষ্ঠূ নির্বাচনের সংজ্ঞা হচ্ছে, ‘আপনাকে হারিয়া প্রমাণ করিতে হইবে নির্বাচন সুষ্ঠূ হইয়াছে’। ‘তালগাছ আমার না থাকিলে বিচার সঠিক হয় কি করিয়া’? আশার কথা (!) আমরা বিদেশীদের পরামর্শ শুনি, মেনে নেই, অবশ্য যদি ‘আমার’ পক্ষে বলে! চীন আমার পক্ষে কথা বললে আমরা ‘চীনের গণতন্ত্র’-র ভক্ত হয়ে পড়ি। আমেরিকা আমার বিরুদ্ধে থাকলে, আমেরিকার গণতন্ত্র কোন গণতন্ত্রই নয় বলে মন্তব্য করি। আর ভারত? ভারতের ‘কাঁচালঙ্কা’ কারো কাছে ‘বেজায় ঝাল’ আবার কারো কাছে ‘কাঁচামিঠা’ আমের মত অম্ল-মিষ্টি-মধুর!