শিতাংশু গুহ, ১৫ই জুলাই ২০২৩, নিউইয়র্ক।।
সমুদ্রে ঝড় উঠলে তা সাথে সাথে উপকূলে আছড়ে পড়ে না, ধীরে ধীরে তা ঘনীভূত হয়, এবং এক সময় ১০নং বিপদ সঙ্কেত উড়িয়ে লোকালয়ে সবকিছু ওলোট-পালট করে দেয়। কখনো-বা ঝড় হালকা হয়ে সামান্য বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে শান্ত হয়ে পরে! আজরা জেয়া বা ডোনাল্ড ল্যু’র সফর নিয়ে এখনও শেষকথা বলার সময় হয়নি। মিডিয়া বলছে, ঢাকার আবহাওয়া অতটা গরম নয়, ল্যু হাওয়া বইছে না, বরং অনুকূল মৃদুমন্দ ‘মোদী’ হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। ভালো।
চিড়িয়াখানায় ভালুককে কাতুকুতু দিলে ভালুক নাকি হাসতে বেশ খানিকটা সময় নেয়? এক লোক ভালুককে কাতুকুতু দিয়ে বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষা করে, ভালুক হাসে-না, তিনি চলে যান, চব্বিশ ঘন্টা পর ফিরে এসে দেখেন ভালুক হাসছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাজ-কারবার ঐরকমই, রিয়্যাকশন জানতে আরো সময় নেবে? মার্কিন মুলুকে সব কাজ হয় প্রটোকল অনুসারে, জেয়া-ল্যু প্রটোকল মত কাজ সেরে এসেছেন, রিপোর্ট পরে। এতে খুশি হওয়ার বা দু:খ পাওয়ারও তেমন কোন কারণ নেই!
আমেরিকা পাকিস্তানে ইমরান খানের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। দেশের অবস্থা খারাপ, ইমরান খান মস্কো গিয়েছিলেন পুটিনের কাছ থেকে টাকাপয়সা আনতে। এরফলে তিনি দু’কুল হারাচ্ছেন, এখন তার ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। ভারত ইমরান খানের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি, আসার কথাও না। পাকিস্তানী আর্মি আমেরিকাকে ভীষণ ভালবাসে। সুতরাং, খান সাহেবের অবস্থা আর ভালো হবার সম্ভবনা নেই, ‘সুখ’ আর তাঁর কপালে সইবে না?
শেখ হাসিনা মস্কো যাননি। বেজিংও না। যদিও বেজিং ও মস্কোর লোকজন আসছেন, বিবৃতি দিচ্ছেন, পাশে থাকার কথা বলছেন। এ বড় বিপজ্জনক খেলা! একদা শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘খেলা হবে’। মমতা ব্যানার্জী ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান চুরি করে নিয়ে বললেন, ‘ খেলা হবে’, এবং বিধানসভা নির্বাচনে ভাঙ্গা-পা নিয়ে খেললেন জিতলেন। এখন ‘খেলা হচ্ছে’ ঢাকায়, আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে ‘কোয়াটার ফাইনাল’। প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে আসছেন। খেলা হবে।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, বাংলাদেশে ক’টি মিডিয়া শামীম ওসমানকে নিয়ে রংচং স্টোরি বানাচ্ছে, যা সবই ‘হলুদ’ রং-এর। এখানে কিচ্ছু হয়নি, জ্যাকসন হাইট্সের ৭৩ স্ট্রীটে দাঁড়িয়ে তিনি চা খাচ্ছিলেন, কিয়ৎ দূর থেকে তাকে একজন ‘গালি’ দেন্, প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, আমাদের ছেলেপিলে আসার আগেই এখান থেকে কেটে পর, নইলে আমেরিকা হলেও তোমার খবর আছে। ব্যস! ঘটনা এইটুকুই। ভিডিওতে কিচ্ছু নাই, তবুও—’পাইছি’–’পাইছি’–ভাব !
বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা হয়না। পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক ভালো, বাংলাদেশের বেজিং-মস্কোর সম্পর্ক ভালো। ইমরান খান মস্কোর সাথে হাত মিলিয়ে বিপদে পড়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধকালে মস্কোর সাথে ‘নুতন প্রেম’ আমেরিকা ভালোভাবে নেবে না? এরমধ্যে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, ঢাকা-দিল্লী চমৎকার সম্পর্ক এবং শেখ হাসিনা-মোদী পারস্পরিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং। শেখ হাসিনা-বাইডেন-এর মধ্যে হিমালয়ের মত দাঁড়িয়ে আছেন নরেন্দ্র মোদী।
আমেরিকার সাথে শত্রুতার দরকার কি? চীনের সাথে ব্যবসা করা যাবে, ঘর-সংসার নয়! চীন আমেরিকার শত্রু, ভারত-চীন বন্ধু নয়! বাংলাদেশের আঞ্চলিক গুরুত্ব বাড়ছে, সাথে বাড়ছে ‘খেলা হবার’ সম্ভাবনা। রাশিয়া-চীন ‘দূরের বন্ধু’ থাকুক। নেতারা একটু আস্তে কথা বলুন। ইদি আমিনকে বৃটেন থাপ্পড় মেরে বসিয়ে দিয়েছিলো। নরিয়েগাকে যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিয়ে এসেছিলো। মাহিয়া মুরাদকে কেউ আশ্রয় দেয়নি। আমেরিকা বলছে ‘একটি সুন্দর নির্বাচন করুন’। স্বাধীনতা এনেছেন, দেশের উন্নতি করেছেন, একটি সুন্দর নির্বাচন করে দেখিয়ে দিন্। ব্যস।