শঙ্কর সরকার, বাংলাদেশ
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাণ খুলে গেয়েছেন ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ এটি একটি কবিতা এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ গান। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। বিবিসির জরিপ ও তথ্যমতে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি —-’ গানটি বাংলাদেশে সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গান। কবিগুরু ভারতবর্ষের মধ্যে সর্বপ্রথম নোবেল পুরস্কার পেয়ে সারা বিশ্বে মর্যাদা ও সম্মানের আসনে বসেন এবং ভারতবর্ষকে সারা বিশ্বে বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রায় হাজার বছরের পরাধীন ভারতমাতার ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সন্তানেরা ‘বন্দে মাতরম্’ মহামন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেন। আর এই মহামন্ত্রের স্রষ্টাও এক বাঙালি, সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী বাঙালি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, যিনি মেধায় কমনওয়েলথ ভুক্ত ৫৪টি দেশের মধ্যে তৃতীয় এবং অবিভক্ত ভারতের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন। আধুনিক ভারতবর্ষকে আলোর পথ দেখিয়েছেন যে সব ভারতমাতার সন্তানেরা, তাদের মধ্যে বাঙালিরাই পথিকৃৎ বলা চলে। আজকাল বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহলে একটি কথা প্রায় মাঝে মাঝে শোনা যায় বাঙালি বিভক্ত তাই বাঙালি দুর্বল। আমাদের প্রশ্ন জাগে বাঙালিকে বিভক্ত করল কে বা কেন বাঙালি বিভক্ত হল? ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ডের বাঙালি জাতি কেন বিভক্ত হল? কেন মারাঠা, গুজরাটি, উড়িয়া, তামিল ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ন্যায় বাঙালি একটি অবিভক্ত অভিন্ন জাতি হিসেবে নিজেদের ধরে রাখতে পারেনি বা একটি অখণ্ড জাতি হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারল না কেন? বৃটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতবর্ষে একটি কথা প্রচলিত ছিল সেটা হল What Bengal thinks today India thinks tomorrow. কথাটা সমগ্র ভারতবর্ষের লোকজন স্বীকার করেছেন এবং বৃটিশ সরকারও বিষয়টি মানতো। ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত দুর্বল বাঙালি তাই ভারতের একদা লোকবলে, অর্থবলে, শিক্ষা, শিল্প, প্রতিটি ক্ষেত্রে এক বিশাল জনগোষ্ঠী হয়েও অবিভক্ত ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বিশ্ববাণিজ্যে ভারতের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক পিছিয়ে। বর্তমান বিশ্বে রাজনীতি ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ববাণিজ্যে ভারতীয়দের যেখানে বিশাল ভূমিকা সেখানে বিশাল জাতি হিসেবে বাঙালিদের ভূমিকা সামান্য, কারণ বাঙালি বিভক্ত, ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্তির প্রাচীর যেন জার্মানির প্রাচীরের চেয়েও বেশি শক্তিশালী, ফলে কখনও বাঙালিরা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে একক নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়নি। বাঙালি নৈতিক ও আদর্শগতভাবে পথ হারিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বহু আগেই। কারণ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পূর্বেই অবিভক্ত বাংলায় বাঙালি হিন্দু নিজ মাতৃভূমিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। ফল হয়েছে বঙ্গভঙ্গ। তারই পথ ধরে হয়েছে পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস, জন্মেছে ঘৃণা, হারিয়েছে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, বিশ্বাস। ধর্ম বিশ্বাসে বিভক্ত বাঙালির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নিজের অজান্তেই ঘটিয়ে ফেলেছে ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় দ্যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং, নোয়াখালী রায়ট। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম নেতৃবৃন্দ এক ও অভিন্ন জাতি হিসেবে সমৃদ্ধি ও উন্নতির নেতৃত্ব দেবার পরিবর্তে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। পূর্ববাংলা তথা আজকের বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরাট অংশ আদর্শগত ও সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালি সংস্কৃতির পরিবর্তে আরবীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির ভাবধারায় পুষ্ট যার একটা অংশ তালিবানি আদর্শের প্রতি ধাবিত। আজকাল বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ দায়িত্বরত ভিসি মহোদয়ের ও দেশের জাতীয় স্তরের ক্রিকেট খেলোয়াড়ের মুখেও তালিবানি আদর্শের প্রশংসা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষিত বাঙালি মুসলিম সমাজ আর ১৯৭০-৭১ সালের শতকরা ২০ ভাগ শিক্ষিত বাঙালি মুসলিম সমাজের সামাজিক অবস্থার পার্থক্য বিশাল যা চোখে পড়ার মত। তাই এই সব বিষয় পর্যবেক্ষণ ও বিবেচনা করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার কর্মী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন আজকাল বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচল করলে মনে হয় আমি পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের রাস্তাঘাটে চলাফেরা করছি। বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার এত পরিবর্তন কেন হল কিভাবে হল সেটাই আসল বিষয়।
বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম এবং শতকরা ১০ ভাগ মানুষ ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। ক্ষমতাহীন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পক্ষে সম্ভব নয় দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করা, দেশের যে কোন শুভশক্তিকে সহায়তা করতে পারে মাত্র। কারণ দেশের নির্বাহী বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ এবং বিচার বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯০ ভাগ জনগণের ইচ্ছার উপর পরিচালিত হয়। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকজন যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশ কি একটি মোল্লাতন্ত্রের শাসন-ব্যবস্থা পরিচালিত হবে নাকি আধুনিক রাষ্ট্রের সামাজিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীগণ কি আধুনিক বাঙ্গালীর সামাজিক পোশাক পরিহিত থাকবেন নাকি মোল্লা বেশধারী হবে, তাদের আরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের ভবিষ্যৎ নারীসমাজ একটি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হবে যারা সমানতালে পুরুষের পাশাপাশি জাতীয় সার্বিক কল্যাণে কাজ করবে নাকি বোরখা, হিজাব পরিহিত মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করবে? এই প্রশ্ন আমরা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে করছি যাদের উপর দেশ পরিচালনার ভার। ইতিমধ্যে পশ্চিমা কালচার, বাঙালি কালচার ও আরবীয় কালচারের মিশ্রণে বাংলাদেশে একটি জগাখিচুড়ি কালচারে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে প্রায় ৫০টির বেশী ইসলামী দেশ রয়েছে যার মধ্যে ২৮টি আরব রাষ্ট্র এবং বাকি রাষ্ট্রগুলি এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের। এশিয়া আফ্রিকার ইসলামী রাষ্ট্রগুলি তারা তাদের স্ব স্ব কৃষ্টি, কালচার ও সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশের বিষয়ে অতীব যত্নশীল। তারা ধর্মে মুসলমান হলেও আরবীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করে না। বিষয়টি আমাদের দেশের রাষ্ট্রপরিচালকদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে কারণ তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন। এই দায়িত্ব শুধু সরকারী দলের নয় সমান দায়িত্ব বিরোধী দলেরও ।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকেও হত্যা করা হয়। দেশে বার বার সামরিক শাসন জারি হয়েছে। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ ও বেআইনিভাবে দেশ থেকে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে আমেরিকা, কানাডা, লন্ডন, অষ্ট্রেলিয়াসহ বিদেশের বহুদেশে বাংলাদেশী অভিবাসীরা গড়ে তুলছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল অভিজাত সুরম্য অট্টালিকার বেগমপাড়া যে সব ভবন দেখে খোদ ইউরোপীয় ও আমেরিকানরা অভিভূত হন। বাধাগ্রস্ত হয়েছে গণতন্ত্র ও স্বাভাবিক রাজনীতি। দূর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচার বিষয়ে জাতীয় সংসদে পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে। এতকিছুর পরেও দেশের উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ১৯৭১ সালের সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। সরকারী কোষাগার শূন্য বিদেশি সাহায্য নির্ভর অর্থনীতি। সামান্য শিল্প কারখানা যা ছিল যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ মাত্র, রপ্তানি ও বিদেশে কর্মসংস্থান শূন্য, ছিল শুধু সামান্য কৃষিজমি যার ফসল উৎপাদন করার মত পর্যাপ্ত অর্থ কৃষক ও সরকার কারও কাছে ছিল না। ১৯৭০ সালে বন্যা, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বছর বছর বেশ কয়েকবার প্রলয়ংকরী বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও খরায় দেশের কৃষকের সারা বছর মাথায় হাত, হাহুতাশ আর আর্তনাদ লেগেই থাকত আর যে সরকার ক্ষমতায় থাকত সে সরকার বিদেশি সাহায্যের জন্য সারা বছর বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছে। সারা বিশ্বের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ অশিক্ষিত, দরিদ্র, তৃতীয় বিশ্বের ক্ষুদ্র একটি দেশ যার আয়তনের তুলনায় প্রায় পাঁচ-ছয় গুণ বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি দেশ। অভাব, অনটন তার নিত্য সঙ্গী। আমাদের রাষ্ট্রপ্রধানদেরও বিদেশে কম অপমান সহ্য করতে হয়নি। আমেরিকার প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একবার বাংলাদেশকে Bottomless Busket অর্থাৎ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি বলে চরম অপমানজনক কথা বলে বসলেন। বিদেশী অনেক বড় বড় অর্থনীতিবিদরা মন্তব্য করলেন বাংলাদেশ একটি অকার্যকর বা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এই সব অপমান বাংলাদেশকে নীরবে সহ্য করতে হয়েছে। ১৯৭২ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় বাজেট ছিল ৫৫০০ কোটি টাকা, বিএনপি যখন ক্ষমতা ছেড়ে চলে যায় সেই বছর শেষে জাতীয় বাজেট ছিল এক লক্ষ কোটি টাকার কিছু বেশি আর বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের জাতীয় বাজেট আট লক্ষ কোটি টাকারও বেশি যা বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একটা শক্তিশালী কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে গেছে তার প্রধান কারণ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে প্রতিটি সরকারই উদার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের শিল্পায়নের ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। উদাহরণ হিসেবে ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে ভারী শিল্পের মধ্যে টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস্ গড়ে উঠেছে কমবেশী ৪০০টি তার মধ্যে ২০০ টি মিল ভাল চলছে। প্রতিটি মিলে কমপক্ষে ৪০০থেকে ৫০০ লোক কাজ করে অধিকতর ১৫০০ থেকে ২০০০ শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তারা কাজ করে। তাছাড়া কম্পোজিট বড় বড় মিলে ১০০০০, ১৫০০০, ২০০০০ পর্যন্ত শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তারা কাজ করে। একজন শিল্পপতি ১০০, ২০০, ৫০০, ১০০০ পরিবারের কর্মসংস্থান করতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে দেশ শিল্পে যত বেশী উন্নত সে দেশ তত বেশী ধনী। তার উদাহরণ পশ্চিম ইউরোপ, জাপান, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, ইত্যাদি দেশ। বাংলাদেশ বর্তমান টেক্সটাইল ও রেডিমেড পোশাক রপ্তানিতে চীনকে টপকে বিশ্বের প্রথম স্থান অধিকার করেছে। শুধু টেক্সটাইল নয় সিমেন্ট, সিরামিক,ম্যালামাইন, লেদার গুডস, রড, ফার্মাসিউটিক্যালসহ শিল্পায়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমান একটি আধুনিক যুগপোযোগী দেশের জন্য যা যা করা দরকার বাংলাদেশের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসন সব করেছেন। বাংলাদেশের বৃহত্তম দুটি নদী পদ্মা ও মেঘনা নদীর উপর দিয়ে সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। সারা বাংলাদেশ রেল যোগাযোগের আওতায় এসেছে। চট্টগ্রাম, চালনা, মঙ্গলা, পায়রা চারটি সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পর পাবনায় আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে একটি অত্যাধুনিক বিমানবন্দরে পরিণত করা হচ্ছে যাতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি দুবাই, হংকং, সিঙ্গাপুরের মতই ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি ফুয়েল নিয়ে এবং পাইলটরা বিশ্রাম নিয়ে আবার ফ্লাই করতে পারে। বাংলাদেশের এখন শুধুই এগিয়ে যাবার সময়।
একই বঙ্গদেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ যেখানে ১৯৭১ সালের পর টেক্সটাইল মিল গড়ে উঠেছে মাত্র ১০-১২টি। বাংলাদেশ ভারত থেকে মেশিন কেনে, ভারতের কাঁচামাল আমদানি করে, ভারতীয় বিশেষজ্ঞ টেকনোলজি ও টেকনিশিয়ানদের ব্যবহার করে আজ বিশ্বের শীর্ষ টেক্সটাইল পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। অবশ্য মেশিনারি ইউরোপ, জাপান থেকেও বাংলাদেশ আমদানি করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারই শুধু শিল্পায়নে নয় দেশে উৎপাদিত তৈরি সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি, বিদেশে কর্মসংস্থান, (বিদেশে কর্ম সংস্থান ও প্রশিক্ষণ প্রদানে সরকার উৎসাহিত করতে লোন পর্যন্ত দেয়) দেশের শিল্পায়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে সব সরকার সহায়তা প্রদান করে উদারভাবে দ্রুতগতিতে। নেই কোন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, নেই অকারণ হয়রানি ও অহেতুক বিরোধিতা। কোন ব্যক্তি যদি কোন একটি শিল্পকারখানা গড়তে ৫০ লক্ষ, ১ কোটি, ৫ কোটি টাকা এবং একটি প্রজেক্ট প্রোফাইল নিয়ে উদ্যোগী হয় তাহলে সাথে সাথে সরকার ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান দ্রুত যাচাই বাছাই করে আরও সমপরিমাণে বা বেশি অর্থ বিনিয়োগ করে শিল্প কারখানাটির বাস্তবায়নে সহায়তা করে। বাংলাদেশ ভারত থেকে সব কিছু কিনে এনে ট্যাকস্ ভ্যাট দিয়ে শিল্প কারখানা গড়ল অথচ পশ্চিমবাংলায় হল না। পশ্চিমবঙ্গের নিজ দেশের এত বড় হোম মার্কেট, বৈদেশিক বাণিজ্যের সুযোগ থাকার পরেও হল না। নিজ প্রদেশে শিল্পায়নের অভাবে নিজ প্রদেশের অর্থনীতি অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে, নিজদের যুবসমাজ ও মেধা কাজ করছে অন্য রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ক্লাব থেকে ভারতের বৃহত্তম শিল্পপতি মিস্টার বিড়লাকে অপমান করা হয়েছে এবং টাটার মত কোম্পানি পশ্চিমবাংলায় শিল্প কারখানা করতে এসে ফিরে গেছে সেটা ছিল পশ্চিমবাংলার শিল্পায়নের জন্য একটি অশনি সংকেত। বিষয়টি বিবেচনা করেই বিদেশি বিনিয়োগ বা ভারতের অন্য প্রদেশের শিল্পপতিরাও পশ্চিমবাংলায় শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহী হয় না। তারপরও আছে সাবেক কমিউনিস্ট শাসন আমলের শ্রমিক নীতি যা শিল্পায়নের জন্য বিরাট বাধা কারণ সেখানে মালিকের চেয়ে শ্রমিকদের শক্তি বেশি। পশ্চিমবঙ্গে ৩৫ বছরের কমিউনিস্ট শাসন পশ্চিমবাংলাকে ১০০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। সব থেকে বড় কথা ভারত স্বাধীন হয়েছে আজ ৭৫ বছর তারমধ্যে ৫০ বছরই পশ্চিমবাংলার প্রদেশ সরকার কেন্দ্র বিরোধী। প্রদেশ সরকার তার সীমিত ক্ষমতা ও অর্থনীতি দিয়ে কতটুকুই বা উন্নয়ন করতে পারে? উন্নয়ন করতে হলে কেন্দ্রীয় ও প্রদেশ সরকারকে একসাথে হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে তবেই হবে উন্নয়ন। পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা অতীব জরুরী। কেননা উন্নয়ন করতে লাগবে শিল্পায়ন, দেশে উৎপাদিত পণ্যের বিদেশে রপ্তানি, বিদেশে কর্মসংস্থান, বিদেশী বিনিয়োগ অন্যতম যেগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা ছাড়া অসম্ভব। মাসে মাসে বেকার ভাতা ও অনুদান প্রদান করে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই পশ্চিমবাংলার উন্নয়ন এমন একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় থাকা দরকার যে সরকার সর্বভারতীয় একটি রাজনৈতিক দল অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারে এমন রাজনৈতিক দল। পশ্চিমবঙ্গের মালিক হলো পশ্চিম বাংলার জনগণ এবং এই সঠিক সিদ্ধান্ত পশ্চিমবাংলার জনগণকেই নিতে হবে। তবেই হবে ‘সোনার বাংলা’ ভারতের সবচেয়ে উন্নত প্রদেশগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আমরা বুক বেঁধে আছি সেই দিনের জন্য।