Center For Research In Indo

(১) হিন্দুরা চায় না মাদ্রাসার ছাত্ররা পুজায় পাহারা দিক

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক

 

প্রথমে শুনলাম, মাদ্রাসার ছাত্ররা দুর্গাপুজায় পাহারা দেবে। ধর্ম-উপদেষ্টা জানালেন, মাদ্রাসার ছাত্ররা পাহারা দিতে রাজি হয়েছে। এখন শুনছি, পুজা কমিটি চাইলে মাদ্রাসার ছাত্ররা মন্দির বা পুজামণ্ডপ পাহারা দেবে। আমাদের উত্তরটা বেশ স্পষ্ট ও শক্ত এবং তা হচ্ছে, ‘আমরা চাইনা মাদ্রাসার ছাত্ররা মন্দির/মণ্ডপ পাহারা দিক’। মাদ্রাসার ছাত্ররা বরং তাঁদের উগ্রপন্থী ভাইদের পাহারা দিক যাতে তারা মন্দিরের ধারে-কাছে না আসে। বাংলাদেশ পুজা উদযাপন কমিটি ও অন্যান্য পুজা কমিটি একযোগে একথা জানিয়ে দিন্।  

 
আমাদের এ সিদ্ধান্তের ৩টি কারণ উল্লেখ করছি: (১) মাদ্রাসার ছাত্ররা খুলনার উৎসব মন্ডলের যে পরিণতি ঘটিয়েছে সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি। হিন্দুরা ‘শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা’ দিতে চায়না। (২) পুজায় আমাদের মা-বোনেরা ব্যাপকভাবে উপস্থিত থাকে, তাদের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। (৩) শেখ হাসিনা ‘কওমী মাতা’ হয়ে তাঁর সন্তানতুল্য মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা করে নিজে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, আমরা তার ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চাইনা। 

 

নোবেল বিজয়ী ড: মোহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, ‘এমন দেশ গড়বো যাতে মন্দির পাহারা দিতে না হয়’। আমরা তার কথার ওপর গুরুত্ব দিতে চাই। পুজায় পাহারা লাগবে কেন? ঈদে তো পাহারা লাগেনা। কারণটা সবাই জানে, বলে না। প্রশাসন বা পুলিশ-ৱ্যাব প্রহরা ঠিক আছে, তবে তা হওয়া উচিত ‘নিমিত্তমাত্র’, যদি প্রয়োজন পড়ে। আমরা চাই কোন প্রকার পাহারা ছাড়া পুজা করতে। সেটি যখন সম্ভব হবে, যখন হিন্দুর মন্দির আক্রমণ হবে না, মূর্তি ভাঙ্গবে না, সেদিন আসবে প্রকৃত স্বাধীনতা।

 

জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া-শেখ হাসিনা সকল সরকারের আমলে হিন্দু ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হয়েছে। ফখরুদ্দিন-মঈন তত্বাবধায়ক সরকার আমলে পরিস্থিতি কিছুটা ভাল ছিলো। ড: ইউনুস আমলে হিন্দুরা ভাল থাকতে চায়, যদিও প্রথম মাসে, বা এখনো ঘটনা ঘটছে। তবু আমরা দেখছি প্রধান উপদেষ্টাকে এনিয়ে কথা বলতে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যেতে। ধর্ম উপদেষ্টা ও জামাতের আমির ঢাকেশ্বরী গেছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘হাতজোড়’ করে ক্ষমা চেয়েছেন। এসব আমরা আগে দেখিনি। 

 

তবে কথা ও কাজে মিল থাকতে হবে। অতীতে সকল সরকার মিথ্যাচার করে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’র গীত গাইতেন। সরকার প্রধান যখন মিথ্যাচার করেন তখন রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষতি হয়। এটি বন্ধ হওয়া দরকার। বাংলাদেশে যেদিন পাহারা ব্যতীত পুজা হবে; সিএসএ ব্লাসফেমী হিসাবে ব্যবহৃত হবে না; হিন্দুরা দেশত্যাগে বাধ্য হবে না; বাড়িঘর-ব্যবসা লুট হবে না; কন্যা ধর্ষিতা হবে না; হিন্দুরা বৈষম্যহীনভাবে দেশ সেবার সুযোগ পাবেন; সেদিন দেশে সম্প্রীতি জোয়ার বইবে, তার আগে নয়? 

 (২) বিশ্বখ্যাত টাইম স্কয়ারে দুর্গাপূজা

শিতাংশু গুহনিউইয়র্ক

 

 

বিশ্বখ্যাত টাইম স্কয়ারে এ বছর (২০২৪)-এ দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই প্রথম। এটি একটি ঐতিহাসিক  ঘটনা। বাঙ্গালীর দুর্গাপুজা ইউনেস্কো সাংস্কৃতিক হেরিটেজের অংশ। টাইম স্কয়ারে দুর্গাপুজা এই ঐতিহ্যকে আরো মহামান্বিত করবে। পুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার ও রবিবার ৫ই ও ৬ই অক্টোবর ২০২৪, পঞ্জিকায় নির্দিষ্ট পুজা নির্ঘন্টের এক সপ্তাহ পূর্বে। মায়ের পুজা যে কোন সময়ই করা যায়,  শ্রীরাম চন্দ্র অকাল বোধনই আধুনিক দুর্গাপুজা। টাইম স্কয়ারে দুর্গাপুজা করার চিন্তাই অচিন্তনীয়, বেঙ্গলি ক্লাব ইউএসএ সেই অসম্ভব সম্ভব করেছে। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটিতে দুর্গোৎসব এই ক্লাবই করেছে। এ পূজায় ব্যাপক সাড়া লক্ষণীয়। এই মহৎ কর্মকান্ড যাঁরা সম্পন্ন করছেন, যারা সহযোগিতা করছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছেন।  

 

এবার পুজা এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বাংলদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে ৫৩ বছর ধরেই দেশে হিন্দুরা নিপীড়িত, লাঞ্ছিত ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার। বাংলাদেশে এবার পুজা নিরানন্দ।   পুজা হচ্ছে, উৎসাহ ও আনন্দ নেই, বা কম, এবং ভয়ভীতি বিরাজমান। একদল বলছে, পুজা হতে দেয়া হবে না,  হিন্দুরা বাংলাদেশ ছাড়ো। এর অবসান জরুরি। বাংলাদেশের হিন্দু দেবী চন্ডীর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে অসুর দমনে উজ্জ্বীবিত হোন। দেবী দুর্গা আসেন, দেবী অসুর সংহার করেন, ফাঁক-ফোঁকরে কিছু অসুর বেঁচে যায়, এরাই অশান্তি সৃষ্টি করে, মুর্তি ভাঙ্গে, পুজায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের দুর্গাপূজা থেকে মুর্তিভাঙ্গা শুরু, আজো অবিরাম ধারায় চলছে। কোন সরকারই এটি বন্ধ করতে আন্তরিক ছিলেন না, এখনো নন?   

 

দুর্গাপুজা বাঙ্গালী হিন্দু’র সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান। বাঙ্গালী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, দুর্গাপুজাও তাই এখন ‘বিশ্বজনীন’ অনুষ্ঠান। ধর্মীয় আবেদনের বাইরেও এর সামাজিক-সাংস্কৃতিক আবেদন দুর্গোৎসবকে করেছে ‘সর্বজনীন’।  দুর্গাপুজার প্রতীকী মেসেজ হচ্ছে, অসুরের বিরুদ্ধে সুরের লড়াই অথবা অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের যুদ্ধ এবং এ সংগ্রামে সর্বদা সুর, সুন্দর বা সত্য বিজয়ী হয়। দুর্গোৎসবের অন্য দু’টি মেসেজ হচ্ছে, ‘পারিবারিক মূল্যবোধ’ এবং ‘নারীশক্তি’। দেবীদুর্গা পুত্রকন্যা নিয়ে মর্ত্যে আসেন, ক’টা দিন সবাইকে আনন্দে ভাসিয়ে যান। আর তিনি নারীশক্তির বলে বলীয়ান হয়ে অসুর বধ করেন। পুজা চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এরপর  সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। কীর্তন থাকবে। কলকাতার চিত্রনায়িকা পায়েল আসবেন। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সর্বক্ষণ পাহারায় থাকবেন। পুজার প্রসাদ ছাড়াও ড্ৰাই খিচুড়ি/লাবড়া থাকবে। 


আমাদের মহিলারা ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মুড়ির মোয়া, নাড়ু, সন্দেশ তৈরী করে ফেলেছেন। ধুনুচি নাচ, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি প্রতিযোগিতা রয়েছে। দীপ চ্যাটার্জি’র লাইভ কনসার্ট হবে। বিশাল জ্যোতি গাইবেন।  নিউইয়র্কের প্রখ্যাত ড্যান্স স্কুল ‘আড্ডা’ (অনুপ দাশ ড্যান্স একাডেমি)’র নাচ হবে শনিবার। ১০জনকে শারদ সম্মান দেয়া হবে, এরা হচ্ছেন: সর্বশ্রী সুশীল সাহা, ডাঃ কালিপ্রদীপ চৌধুরী, ব্রাহ্মণ স্বপন চক্রবর্তী, রথীন্দ্রনাথ রায়, কুমার বিশ্বজিৎ, রতন তালুকদার, ডাঃ দেবাশীষ মির্ধা, প্রবীর রায়, মনোরঞ্জন চক্রবর্তী (মরণোত্তর) এবং শিল্পী তাজুল ইমাম। এই অনুষ্ঠানটি হবে রোববার। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক এডাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপালের রাষ্ট্রদূতদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও কলকাতা, নেপালের হিন্দুদের মধ্যে এটি ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্যে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো  হয়েছে।      

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *