Center For Research In Indo

Author name: admin

রাকেশ, পরিতোষের পর সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের শিকার তিথি সরকার

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক   কলেজ ছাত্রী তিথি সরকার ইসলাম ধর্ম অবমাননার দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। যমুনা টিভি ১৩ই মে ২০২৪ জানায়, তিথি হজরত মুহম্মদকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে খারাপ মন্তব্য করেছিলেন। ২০২০ সালের ২৭শে অক্টোবর নিউ এজ পত্রিকা জানিয়েছিল যে, জগন্নাথ ভার্সিটি’র জুলজি বিভাগের তৃতীয বর্ষের ছাত্রী তিথি সরকারকে ইসলাম ও মুহম্মদ সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করার জন্যে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিথি ভার্সিটি রাইটস কাউন্সিলের সাবেক সম্পাদক ও ওয়ার্ল্ড হিন্দু ষ্ট্রাগল কাউন্সিলের কনভেনর। তিথি সরকার দাবি করেছিল যে, তাঁর  ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে এবং এ ব্যাপারে তিনি থানায় একটি জিডি করেন। অক্টোবরে তাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়। পূর্বাহ্নে ছাত্ররা তিথির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ১৩ই মে ২০২৪ বাংলানিউজ ২৪ জানায়, ঢাকার সাইবার ট্রাইবুনাল বিচারক জুলফিকার হায়াৎ বহিস্কৃত জগন্নাথ ভার্সিটি’র ছাত্রী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছেন। আদালত অবশ্য একগুচ্ছ নিয়ম বেঁধে দিয়ে বলেছেন, এগুলো মানলে তিথিকে জেলে যেতে হবেনা।    ডেইলি ষ্টার ৪ঠা জানুয়ারি ২০২৩-এ জানিয়েছে যে, রাকেশ রায় নামক হিন্দু এক যুবককে আদালত ধর্ম অবমাননার জন্যে সাত বছর কারাদন্ড দিয়েছেন। একই বছর ১২ই ফেব্রুয়ারি রংপুরে আদালত পরিতোষ সরকার নামে অপর এক হিন্দু যুবককে ৪টি কারাদণ্ডের আদেশ দেয়, একবছর, দু’বছর, তিনবছর ও পাঁচ বছর, মোট এগার বছর। আদালত অবশ্য সবক’টি সাজা একত্রে শুরুর আদেশ দেন, এবং সেইমত পরিতোষকে পাঁচ বছর সাজা খাটতে হবে। যায়যায়দিন ১৫ই মে ২০২৪ খবর দিয়েছে যে, ফেনীতে নবীকে নিয়ে কটূক্তি করায় বাদল বণিক ৪০ নামে এক ব্যক্তিকে জনতা গণধোলাই দিয়েছে।   ফেনী মডেল থানার ওসি শহিদুল  ইসলাম চৌধুরী জানান,  বাদল নামের এক যুবককে জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার  করে  পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সে  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।তবে বাদল দাবি করেন তিনি রাসুলকে গালি দেননি। পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে টার্গেট করা হয়েছে। নয়াদিগন্ত পত্রিকা ১৫ই মে ২০২৪ বলেছে, নবী ও ইসলাম ধর্ম অবমাননার দায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী স্বপ্নীল মুখার্জিকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে প্রক্টরিয়াল বডি। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধর্ম অবমাননার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্বপ্নীলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আমার সংবাদ মিডিয়া ২রা মে ২০২৪ জানিয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী কাওয়িং কেইন ও এডিসন দেওয়ান-এর বিরুদ্ধে নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছে। বুদ্ধিষ্ট প্রোভার্ড নামক ফেইসবুক পেইজের একটি ভিডিও শেয়ার দেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী এডিসন দেওয়ান, এতে বুদ্ধের বিরুদ্ধে এক হুজুর কুৎসা করেন।  কাওয়িং কেইন তাতে মুহম্মদ নাম নিয়ে মন্তব্য করেন। দেওয়ান তাতে হাহা রিয়েক্ট দেন্। কাওয়িং কেইন বলেছেন, তিনি নবীকে গালি দেননি, মুসলমানরা নামের আগে সবাই মুহম্মদ লিখে, হুজুরের নামের আগে মুহম্মদ আছে ভেবেই তিনি মুহম্মদ লিখে হুজুরের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন।    ডেইলী ষ্টার ২৯শে এপ্রিল ২০২৪ ফেইসবুকে লালনের গান লিখে হিন্দু যুবকের গ্রেফতারের খবর দিয়েছিল। সুধী মহলের প্রতিবাদের মুখে পুলিশ তাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়। সাপ্তাহিক ব্লিজ পত্রিকা ৫ই মে ২০২৪ বলেছে, বাংলাদেশে শরিয়া ব্যাংক ফান্ড লাভ-জ্বিহাদের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভোরের কাগজ হেডিং করেছে: “ঐক্য পরিষদ ও পূজা পরিষদের উদ্বেগ: হিন্দু নারীদের ধর্মান্তকরণে প্রেমের ফাঁদ”। ভিডিও ১০ই এপ্রিল জানিয়েছে, বগুড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর ঘটনায় মাদ্রাসার শিক্ষক ফয়সল করিজ রেজা গ্রেফতার হয়েছেন। সময় টিভি ২৭শে এপ্রিল ২০২৪ জানিয়েছিল যে, ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে মহিলা আম্পায়ারের অধীনে খেলতে রাজি ছিলেন না ক্রিকেটাররা।  এ ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক সময়ে মিডিয়ায় এসেছে। এরকম আরো হাজারো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। সবগুলো ঘটনা কি একসূত্রে বাধা যায়? নাকি প্রশাসন বা নেতাদের মতানুসারে এগুলো সবই বিচ্ছিন্ন ঘটনা? ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে কয়েকশ’ হিন্দু ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন, কেউ জেল খাটছেন, কেউবা বিনা বিচারে আটক আছেন, কেউ পলাতক, অথবা দণ্ডিত। বলে রাখা ভাল যে, বাংলাদেশের হিন্দুরা ইসলাম বা মোহাম্মদকে কখনই অপমান করেনা। এমনিতে তারা পদে পদে লাঞ্চিত, অপমানিত, ভীত, সন্ত্রস্ত, নির্যাতিত, তারা জানে ইসলাম বা মুহম্মদকে অবমাননা করলে মৃত্যু বা চরম নির্যাতন নিশ্চিত, কেউ কি ডেকে বিপদ আনতে চায়? বাস্তবতা হচ্ছে, একটি মহল এ অস্ত্রটি প্রায়শ: হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্র এতে মৌনতা অবলম্বন করছে, অথবা ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।   বাংলাদেশের হিন্দুরা মসজিদে ঢিল মারে না, অথচ মন্দির আক্রমণ বা মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা দেশে একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। হুজুররা ওয়াজে ইসলামের মাহাত্ম্য বর্ণনার চাইতে হিন্দু দেবদেবী নিয়ে মুখরোচক মিথ্যা অহরহ বলে চলেছেন। দেখার কেউ নেই! ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমী আইনের মত ব্যবহৃত হচ্ছে। হুজুরদের ধরা হচ্ছেনা। বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতি আছে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের, অন্যদের সেটি থাকতে নেই, অথবা তাদের অনুভূতি ভোথা হয়ে গেছে। প্রশ্ন জাগে, ধর্ম কি এতই ঠুনকো যে, একটি কিশোরী তিথি সরকার কি বলল তাতে পুরো প্রশাসন ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে? পশ্চিমা দেশে যীশুর বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলছেন। ভারতে দেবদেবীর বিরুদ্ধে হিন্দুরাই কথা বলছেন। তাদের কোন অনুভূতি নাই? যত অনুভূতি বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্টের। এ অনুভূতির জ্বালায় হিন্দুদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা’? আপাতত: এ থেকে পরিত্রাণের উপায় দেখা যাচ্ছে না। Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

বাংলার ঘরে ঘরে বেনজির, মোশাররফ বা রাগীব আলীতে ভরপুর!

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক     পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজির আহমদ গোপালগঞ্জে হিন্দুদের শতশত বিঘা জমি দখল করেছেন। সাবেক  মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুরে অরুণ গুহ মজুমদারের ৭০কোটি টাকা মূল্যের বাড়ী মাত্র ২০লক্ষ টাকায় কিনেছিলেন, সেটিও দিতে বাধ্য হয়েছিলেন কারণ মিডিয়া এনিয়ে কিছুটা হৈচৈ হয়েছিল বলে! সিলেটের রাগীব আলী হিন্দুর সম্পত্তি জবর-দখল করে দানবীর হয়েছেন, তিনি কিছুকাল জেল খেটেছেন, তাতে কি, এখন তার বড় উকিল, তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে? উত্তরবঙ্গের সাবেক এমপি দবির-উদ্দিনের বিরুদ্ধে হিন্দু জমি জবরদখলের বিশদ রিপোর্ট মিডিয়ায় এসেছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, সুযোগ পেলে প্রায় সবাই হিন্দু সম্পত্তি দখল করেন বা করেছেন।    মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন যখন হিন্দুর বাড়ীটি দখল করেন, তখন প্রয়াত আব্দুল গাফফার চৌধুরী আমেরিকায় এসেছিলেন। এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে আমি তাঁকে মন্ত্রীর হিন্দু বাড়ী দখলের কাহিনীটি জানালে তিনি তাৎক্ষণিক আমায়  বললেন, ‘হিন্দুর সম্পত্তি গনিমতের মাল’। তাই  বলছিলাম, বাংলার ঘরে ঘরে বেনজির, মোশাররফ বা রাগীব আলীতে ভরপুর’। এদের মধ্যে ধরা খেলে কেউ কেউ ‘ভূমিদস্য’ বলে আখ্যায়িত হ’ন, ছোটখাট দস্যুরা দেশের সর্বত্র বিরাজমান। মিডিয়ায় মাঝেমধ্যে কিছু সংবাদ বেরিয়ে যায়, তখন আমরা জানতে পারি, অন্যরা ‘অধরা’ থেকে যায়! এমনকি তদানীন্তন পাকিস্তান বা পূর্ব-পাকিস্তান এবং আজকের বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকেও ‘ভূমিদস্যু’ বলা যায়?    রাষ্ট্র কিভাবে ভূমিদস্যু হয়? হয়, পাকিস্তান আমলে ১৯৫০ সালে জমিদারী স্বত্ব বাতিল আইন হয়। আইনটি ছিলো শুধুমাত্র পূর্ব-পাকিস্তানের জন্যে, পশ্চিম-পাকিস্তানের জন্যে নয়। কারণ পশ্চিম-পাকিস্তানে জমিদাররা ছিলেন প্রায় সবাই মুসলমান, এবং পূর্ব-পাকিস্তানের প্রায় সকল জমিদার ছিলেন হিন্দু। সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং হিন্দুদের থেকে জমি কেড়ে নেয়ার জন্যে পাকিস্তান এ আইনটি করেছিল এবং এর সফল বাস্তবায়ন করে, হিন্দুরা জমি হারায়, মুসলমানরা ‘বিনে-পয়সায়’ হিন্দুর জমি জবর-দখল করে। পূর্ব-পাকিস্তানে হিন্দুর জমি কেড়ে নেয়ার ইতিহাস এক করুণ অধ্যায়, এবং সেই ধারা আজো চলছে।      এরপর ১৯৬৫ সালে আসে শত্রু সম্পত্তি আইন। যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থায় এ আইনটি প্রণীত হয় এবং  এর ব্যবহার বড় বড় শিল্প-কারখানার ওপর সীমিত ছিল। ১৯৬৯ সালে আন্দোলনের মুখে জরুরী অবস্থা উঠে যায়, কিন্তু শত্রু-সম্পত্তি আইনটি বিশেষ ক্ষমতাবলে রেখে দেয়া হয়। এরপর ১৯৭১, স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের দলিলে বলা হয়েছিল যে, দেশ স্বাধীন হলে সকল ‘কালা-কানুন’ বাতিল হবে। তা হয়নি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আইনটি রেখে দিয়েছিলেন ‘অর্পিত-সম্পত্তি’ নামে। মনোরঞ্জন ধর তখন আইনমন্ত্রী ছিলেন, একজন হিন্দুর হাত দিয়েই এ আইনটি আসে। হয়তো তিনি চেষ্টা করেছেন, পারেননি। এজন্যে হিন্দুরা মনোরঞ্জন ধরকে মনে রাখেনি।    অতঃপর জেনারেল জিয়া, তিনি তহশিলদারকে ক্ষমতা দেন হিন্দুর সম্পত্তিকে ‘শত্রু-সম্পত্তি’ হিসাবে ঘোষণা করার। ফল যা হবার তাই হয়, তহশিলদারগন দলিলে হিন্দুর নাম দেখে দেখে তা ‘শত্রু-সম্পত্তি’ হিসাবে নোটিশ দেয়া শুরু করে। হিন্দুরা বাপ্-দাদার সম্পত্তি হারাতে শুরু করে। ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন, একবার সম্পত্তি ‘শত্রু-সম্পত্তি’ হলে তা থেকে বেরিয়ে আসা একরকম অসম্ভব। ‘শত্রু’ বা অর্পিত সম্পত্তি, যাই বলিনা কেন, এর যাঁতাকলে হিন্দুরা পিষ্ট হতে থাকে। এরশাদ আমলে কিছুটা স্বস্তি নেমে আসে, তিনি একটি ‘স্টে-অর্ডার’ জারি করেছিলেন। খালেদা জিয়ার আমলে আবার শুরু হিন্দুর জমির জবর দখল।     শেখ হাসিনা প্রথম দফায় ক্ষমতাসীন হয়ে পাঁচ বছর সময় নেন আইনটি বাতিল করতে। মেয়াদের একেবারে শেষে ১১ই এপ্রিল ২০০১-এটি বাতিল হয়, যদিও একটু ফাঁক ছিল, আইনটি গেজেট হতে একটি সময়সীমা দেয়া হয়। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা পরাজিত হ’ন, খালেদা জিয়া আবার ক্ষমতাসীন হ’ন, এবং আইনের খসড়াটি বাতিল করেন। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনা পুনরায় আইনটি বাতিল করেন। আইনটি এখন নেই, কিন্তু এর জ্বালাতন আছে। এর সুফল এখন পর্যন্ত কোন হিন্দু পেয়েছেন বলে কেউ শোনেনি। এরমধ্যে হিন্দু সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। হারানো সম্পত্তি হিন্দুরা ফেরত পাবেন, এ গ্যারান্টি নেই?  এ আইনে হিন্দুরা কতটা সম্পত্তি হারিয়েছেন সেই হিসাব নেই? বলা হয়, দেশের প্রতিটি  উপজেলা অফিসই শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি’র ওপর? হ্যাঁ, গাফফার চৌধুরীর সংজ্ঞামতে ঐসব ‘গনিমতের মাল’ প্রায় সবই মুসলমানদের দখলে। শুনতে খারাপ লাগলেও কথা কিন্তু সত্য। পুলিশ প্রধান, মন্ত্রী, এমপি যখন হিন্দু সম্পত্তি দখল করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই নীচের তলার মানুষ বসে থাকবে না? হিন্দুর জমি বা সম্পত্তি জবর দখলের ঘটনা  বাংলাদেশে একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা, গ্রামে-গঞ্জে এটি মহামারী, মামলা-মোকদ্দমা তো আছেই! দেখার কেউ নেই? তাই বলছিলাম, দোষ একা বেনজির আহমদের নয়? দেশে ছোটবড় বেনজিরের সংখ্যা অগুনতি।     Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

– Copy

দ্বিজাতিতত্ত্ব ও বাঙালি মুসলমানদের ভবিতব্য বিমল প্রামাণিক   বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার প্রধান প্রবাহ বা ধারা এখনও দ্বিজাতিতত্ত্বের পরম্পরামুক্ত হতে পারছে না এবং আদৌ পারবে কিনা তা গবেষণার বিষয়। আর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত গড়ে উঠেছে ভারত তথা হিন্দু বিরোধিতার স্তম্ভের উপর, সেখানে মুসলমান জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক-মানবিক উন্নয়নের চেয়েও ভারত তথা হিন্দু বিরোধীতা বরাবরই অগ্রাধিকার পেয়ে এসেছে। যা বাঙালি জাতিসত্তা  বিকাশের প্রধান অন্তরায়। ফলে পাকিস্তানের চব্বিশ বছর এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পাঁচ দশক অতিক্রান্ত হলেও বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠীর বৃহদংশ মধুতুল্য ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ কেই আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে রয়েছে। পূর্বপাকিস্তানের চব্বিশ বছর বাঙালি মুসলমানদের চিন্তন বা দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে কোন সঙ্কট বা সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। তখন সরাসরি ভারতকে বলা হতো শত্রু রাষ্ট্র এবং অমুসলমানগণ ছিল রাষ্ট্রের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, যেহেতু পাকিস্তান ঘোষিত ইসলামিক রাষ্ট্র। বিভাজিত রাষ্ট্রের নাগরিকদের দুর্বল স্মৃতি ও সুদীর্ঘকাল অবিভক্ত ভারতে সকল জাতিধর্ম সম্প্রদায় একসঙ্গে বসবাসহেতু  বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে যে একটা পারস্পরিক কার্যকর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল – ধর্মান্তরিত হলেও যার বৈশিষ্ট  একেবারে মুছে ফেলা যায়নি – সেকথা মাথায় রেখেই দেশবিভাগ ও পূর্বপাকিস্তান  কায়েম করার পরপরই ঘনঘন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত করে পূর্বপাকিস্তান থেকে হিন্দু উচ্ছেদ শুধু তরান্বিত করা হল না, বাঙালি মুসলমানদের চাঙ্গা রাখতে এবং কট্টর ভারত ও হিন্দু বিদ্বেষ চাগিয়ে তুলতে কয়েকবার ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেও পাকিস্তানের ধর্মীয় বিকারগ্রস্ত মনোবৃত্তির  পরিবর্তনের কোন লক্ষণ দেখা গেল না। বাঙালি মুসলমান – সাচ্চা মুসলমানে পরিগণিত হওয়ার বিশ্বাসে পাকিস্তান আঞ্চলিক শোষণ ও বৈষম্য  অব্যাহত রাখায় পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতের সক্রিয় সহায়তায় একটি স্বাধীন দেশ গঠিত হল বটে, কিন্তু তার আধেয়’র গুণগত কোন পরিবর্তন দেখা গেল না, এটা বর্তমানেও অপরিবর্তিত বলে মনে করি। বর্তমান বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তির প্রগলভ-জনদের আলোচনায় একটি কথা বার-বার উঠে আসে – তাহল, বর্তমান মোদী-সরকার ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করে ফেলেছে বা করতে চাইছে – ফলে বাংলাদেশে ইসলামি মৌলবাদের এত বাড়-বাড়ন্ত। বাংলাদেশী রাজনীতির অঙ্গনে ভারত বিরোধীতার প্রকাশ সাম্প্রতিককালে আলোচনায় এসেছে। বর্তমানে আওয়ামি লিগ পরিচালিত সরকার থাকা ও নির্বাচনে স্বচ্ছতা ব্যতিরেকে ক্ষমতার মসনদে তাদের আরোহণ এটাও একটা ইস্যু। আলোচনা করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটিও স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ ও সর্বজনগৃহীত নির্বাচনের নজির নেই। অর্থাৎ বলা যায়,  বাংলাদেশে এখনও রাজনৈতিক-সামাজিক ও রাষ্ট্র-পরিচালনার ক্ষেত্রগুলিতে গণতন্ত্রের মৌলিক ধারণার চর্চা ও তার প্রয়োগ পাঁচ দশক অতিক্রান্ত হলেও প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। এবিষয়টি আলাদা প্রবন্ধে আলোচিত হতে পারে।  বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তি–রাজনীতি ও সামাজিক অঙ্গনে ভারত তথা হিন্দু বিদ্বেষের ভিত্তি তৈরি মূলতঃ ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ ভিত্তিক। বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের প্রশ্নে ভারতের ভূমিকা ও হিন্দুদের আত্মত্যাগ ইতিহাস থেকে নিশ্চিহ্ন করা না গেলেও বর্তমান বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বৃহদংশ সেই পাকিস্তানি ভারত বিদ্বেষী মানসিক বিকারগ্রস্ততা থেকে মোটেই মুক্ত হতে পারেনি। এর পশ্চাতে রয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানের চেয়েও সংগঠিত সামরিক-রাজনৈতিক-সামাজিক প্রয়াস – যার বিকট চেহারা ১৯৭৫ সালের ভয়ঙ্কর যুগান্তকারী নৃশংস ঘটনার মধ্যে বিশ্বব্যাপী উন্মোচিত হয়েছিল। এই অমোঘ পরিবর্তন  প্রতিরোধী কোন বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠী আর পাওয়া গেল না। রাষ্ট্র এবং সমাজের অত্যধিক সংখ্যাধিক্য জনগোষ্ঠী ইতিহাসের চাকা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে অন্ধকারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। এমনকি আলোকিত জনগোষ্ঠীও  ইসলামি বাংলাদেশে ধর্মান্ধতা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিক্ষা- সংস্কৃতি-রাজনীতি সমাজে ঘোরতর ইসলামিকরণ ও পশ্চাদাভিমুখে যাত্রা চোখের সামনে ঘটলেও তার প্রতিবাদের প্রয়োজন বোধ করে না —  তাদের মনে উদয় হয়, ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হয়ে গেছে – ‘মোদি’ হিন্দুত্বের ঝাণ্ডাবাহী। তারা একথা বুঝতে চায় না, ভারত একটি বহুজাতি- বহুধর্ম- বহুসংস্কৃতি- বহুভাষাভাষী  মানুষের দেশ। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পঁচাত্তর বছরে কোন মিলিটারি বা সামরিক শাসন জারী করতে হয়নি, কোন একনায়কতন্ত্র গেড়ে বসেনি, নিয়মতান্ত্রিকতা মেনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংবিধান চালু হওয়ার পর থেকে দলমত নির্বিশেষে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে গত সাত দশকের অধিক সর্বদল গৃহীত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সরকার গঠিত বা গণতান্ত্রিক শাসন অব্যাহত রয়েছে।  পঁচাত্তর বছর পেরিয়ে গেলেও অত্যধিক সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু বা সনাতন ধর্মাবলম্বী অধিবাসী ভারতীয়গণ নিজেদের রাষ্ট্রকে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা করে নাই। সনাতনী হিন্দুদের গণতান্ত্রিক চর্চার বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি ও সহনশীলতার কারণে ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা ১৯৫০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৯.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে  ১৪.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বৃদ্ধি ৪৩ শতাংশের অধিক। ঐ সময়ে হিন্দু জনসংখ্যা ৮৪.৭ শতাংশ থেকে কমে গিয়ে ৭৮.১ শতাংশে নেমে এসেছে, অর্থাৎ হিন্দু জনসংখ্যার হ্রাস ৭.৮ শতাংশ। গবেষকগণ ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনসংখ্যা হ্রাস এবং সংখ্যালঘু জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখেছেন, “decrease in the  share of the majority population and a consequent increase in the share of minorities suggests that the net result of all policy actions, political decisions  and societal processess is to provide a conducive environment for increasing diversity in the society”.১  অপরদিকে পাকিস্তানের জন্মই ইসলামিক রাষ্ট্র হিসাবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাঙালি মুসলমানের নব্বই শতাংশের অধিক ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের জন্য মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। ইতিহাসের পাকেচক্রে বাংলাদেশ নামে একটি ভূখণ্ড পরিচিতি পেল বটে, কিন্তু তার আধেয় চারিত্রিক বৈশিষ্টে বাঙালিত্বে উত্তরণ ঘটাতে ব্যর্থ হল। এই ব্যর্থতার প্রক্রিয়া গত পাঁচ দশকের ইতিহাসে ছত্রে ছত্রে বিধৃত রয়েছে। ফলে পূর্ব-পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ধর্মীয় সংখ্যালঘু অমুসলমান, বিশেষতঃ হিন্দু ১৯৫১ সালে ২২ শতাংশে থাকলেও ২০২১ সালে ৮ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তি বা আলোকিত মহলও এই ইতিহাসকে আর  অস্বীকার করতে পারছেন না। বাংলাদেশ ইতিহাসের কালো গহ্বরের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। ‘বাংলাদেশ ভূখণ্ডে’ বাঙালির ভবিতব্য হিসাবে এটাই কি মেনে নিতে হবে !     তথ্যসূত্রঃ  ১ Shamik Ravi, Abraham Jose and Apurv Kumar Misra, “Share of Religious Minorities: A  Cross-Country Analysis (1950-2015)”, A  Report by Economic Advisory Council to the Prime Minister, Government of India.         Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

প্রতিকূলতার অর্ধশতক  পেরিয়ে পশ্চিমবাংলার উদ্বাস্তু ও অভিবাসী নারীশক্তিঃ রাষ্ট্রস্তম্ভের বীরাঙ্গনা মানবীয় সম্পদ (১৯৭১–২০২১) সুদীপ কুমার আচার্য্য    (রিসার্চ এসোসিয়েট, সেন্টার ফর রিসার্চ ইন ইন্দো-বাংলাদেশ রিলেশনস)   স্বাধীনতা উত্তর পশ্চিমবঙ্গে অগোছালো সমাজব্যবস্থার অভ্যন্তরে নারী জাতিসত্ত্বা ও মর্যাদার বিষয়টি ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আর উদ্বাস্তু নারীজীবনে এসবের প্রভাব ছিল সবচেয়ে অধিক আবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইতে তাঁরাই ছিলেন প্রথম শ্রেণীতে। দেশভাগ বা পাকিস্তান আমলে পূর্ববঙ্গ থেকে উদ্বাস্তু অভিপ্রয়াণ ছিল নিত্যনৈমিত্যিক ব্যাপার। এই সময় মোট উদ্বাস্তুর প্রায় ৪৬.২১ শতাংশ মহিলা পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছিলেন। এ ছিল অভিপ্রয়াণের একটা সূচনা মাত্র এবং এখানেই এর পরিসমাপ্তি ঘটেনি। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ১ কোটিরও বেশি মানুষ পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর কিছু সংখ্যক শরণার্থী ফিরে গেলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় থেকে গিয়েছিলেন এই বঙ্গে। ২০১১-র জনগণনা  পর্যন্ত এদেশে ৩০ লক্ষ অভিবাসী আছেন যার ৯৮ শতাংশ হলেন বাংলাদেশী। সেনসাস অনুসারে ১৯৭১-এ যেখানে ৪৬.২১ শতাংশ ছিলেন মহিলা, ২০০১-এ তা প্রায় ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।১  নানাভাবে ইনফিলট্রেশনের মাধ্যমে এই সংখ্যার পরিধি বেড়েছে। ২০১৬ সালের শেষদিক পর্যন্ত সরকারী হিসাব অনুযায়ী ভারতে অভিবাসী তথা বেআইনী অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যা ৫৭ লক্ষ, আসামে ৫০ লক্ষ । এইভাবে ভারতের প্রায় ১৭টি রাজ্যে অনৈতিকভাবে এরা থেকে গেছেন। (The Times of India report – Two crores Bangladeshi immigrants illegally stay in India, centre informs Rajya Sabha- report by Bharati Jain, November 17, 2016, রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর দেওয়া তথ্য) কিন্তু সেনসাসে তার সঠিক সংখ্যা ধরা পড়ে না। বর্তমানে Citizenship  Amendment Act, 2019, (১৯৫৫ সালের নাগরিক আইন সংশোধন করে ২০১৯ সালের ১১ই ডিসেম্বর সংসদে এটি পাশ হয়) (CAA) আইন লাগু করে এরকম  অনেক পরিবারকে নাগরিকতা দেওয়া  হবে আশা করা যায়। যাইহোক, আমাদের বর্তমান প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হল, ১৯৭১ পরবর্তী এই অভিবাসী মহিলাদের এক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস গবেষণা। প্রধানত মূল লক্ষ্য প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে (সামাজিক সমস্যা, আর্থিক শোষণ, নির্বান্ধবতা, জোরপূর্বক উদ্বাসনের অসহায়তা, কর্মস্থলে নিরাপত্তার ভয়ংকর অভাব, উদ্বাস্তুদের প্রতি ভারতীয় আইনের প্রতিকূলতা) এই নারীদের সংগ্রামের ঐতিহ্য বিশ্লেষণ এবং পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক প্রেক্ষিতে তাদের বর্তমান ভূমিকা ও অবস্থার বিশ্লেষণ। পশ্চিমবঙ্গে গত ৫০ বছরে এই অভিবাসী মহিলাদের কর্মজীবন, সমাজে তাঁদের মিশে যাওয়ার প্রচেষ্টা কতটা সফল হল? পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁদের বিশেষ ভূমিকা কতটা? এবং তাঁদের বর্তমান অবস্থান ইত্যাদির উপর আমরা বিশেষ দৃষ্টি দেব।  এছাড়া তাঁদের সংগ্রাম, ব্যক্তিগত জীবন, পরবর্তী প্রজন্মকে মানুষ করার প্রচেষ্টা, প্রশাসনিক সাহায্য এবং ভারতীয় নাগরিকতার পিছনে ছুটে চলার দীর্ঘ আকুতি ইত্যাদি ছোট ছোট বিষয়গুলিকে দেখার চেষ্টা করব। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে তাঁদের প্রতি আচরণ এবং রাষ্ট্রের প্রতি ন্যূনতম  কর্তব্য এবং উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই নেতিবাচক। মানব উন্নয়ন এবং  দেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত এই অভিবাসী নারীরা ব্যক্তিগত অথবা দলগতভাবে এ দেশকে এগিয়ে দিচ্ছেন তা বলা বাহুল্য। একথা ভুলে যাওয়া অনুচিত হবে যে, মানব সম্পদ হিসাবে এই নারীসমাজের বিরাট ভূমিকা আছে এবং তা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের উন্নতি সূচকের অগ্রগামিতায় ভূমিকা নিচ্ছে। দীর্ঘদিন ভারতীয় ইতিহাস চর্চায় নারী ইতিহাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ১৯৪৭ পরবর্তীতে এ মনোভাবে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তথাপি অধ্যাপিকা রেখা পান্ডের মতে বলা যায়, ‘While the women’s movement is a much earlier phenomenon, the term Feminism is modern one’ অর্থাৎ ‘In the Indian context women’s history is still at its infancy’.২ তাছাড়া স্বাধীন এবং স্বাভাবিক গবেষণা হিসাবে নারী ইতিহাস নিয়ে গ্রন্থের অভাব আছে এবং চিন্তা ভাবনারও ঘাটতি আছে। বিশেষত উদ্বাস্তু নারী ইতিহাসের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য। তবে জাতীয় আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা নিয়ে জোয়ানা লিডল এবং রোমা যোশীর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Daughters of Independence’ রয়েছে। এই দুই লেখিকা তাঁদের গ্রন্থে জেন্ডারের সঙ্গে কাস্ট ও ক্লাস সম্পর্ক খুঁজেছেন। তাঁদের মতে পূর্বে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ, জাতিবর্ণ ব্যবস্থা, নারীদের অবদমিত করে রাখা এসব ছিল। কিন্তু সমতা, উচ্চমর্যাদার দিক দিয়ে ভারতের অনেকস্থানেই নারীর স্থান ছিল উচ্চে। ইউরোপিয়ান সাম্রাজ্যবাদ অর্থনৈতিক ঝঞ্ঝাট ও ক্রমাগত বিপত্তি সৃষ্টি করে, ভারতীয় সমাজ  কাঠামো চূর্ণ করে নারী স্বাধীনতাকে সংকুচিত করে দেয়। পার্থ চ্যাটার্জী বলেন, কলোনিয়াল প্রশাসকরা ভারতীয় নারীর পূর্বতন চিত্রটাই পালটে ফেলে তাকে পরিবর্তিত করে অঙ্কন করেন।৩ তুলনায় পোষ্ট কলোনিয়াল সমাজে বিশেষত শরণার্থী ঢেউ শুরু হবার পর নানা সামাজিক আপত্তি বাধানিষেধ ভেঙ্গে ওপার বাংলার মহিলারা পশ্চিমবঙ্গে এসে এক নতুন রূপে দেখা দেন। কিন্তু এতৎসত্বেও ‘The contradiction for women today is that despite the liberality of the Laws, the inequalities remain. The implementation of the Laws to secure equality continue to be hindered by patriarchal family structures’ এবং সেজন্যই হয়ত It was from this aspect of the patriarchal family that she wished to escape.৪ জাতীয়তাবাদ কিভাবে নারী প্রশ্নের সমাধান করেছে তা নিয়ে কুমকুম সাংগারি এবং সুদেশ বেদ সম্পাদিত Recasting Women: Essays in Colonial History গ্রন্থে পার্থ চ্যাটার্জীর ভাষায় ‘New Woman is the product of a new patriarchy formed along class lines’.৫ কে. ললিতা ও সুশি থারু সম্পাদিত ১৯৯১ ও ১৯৯৩ সালে প্রমাণ সাইজের দুই খন্ডে ‘Women writing in India’ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম খন্ডে খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ থেকে বিংশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ও দ্বিতীয় খন্ডে শুধুমাত্র  বিংশ শতকের নারী ইতিহাস, সাহিত্যিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে নারীকেন্দ্রিক সারগর্ভ আলোচনা স্থান পেয়েছিল। কিন্তু পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তু, অভিবাসী নারীসমাজ নিয়ে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য আলোচনা নেই।৬ তেলেঙ্গানার নারীসমাজের সংগ্রাম নিয়ে ‘We were making history life stories of women in the Telengana uprising’ এক অনবদ্য গ্রন্থ। এখানে তেলেঙ্গানা কৃষক আন্দোলনের লড়াকু নেত্রীদের কথা বলা হয়েছে যারা তেলেঙ্গানার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন পৃথক সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তেলেঙ্গানা গঠনের পর তারাই আজ ব্রাত্য। “We need not reiterate the fact that thousands of women played major roles in several articulations of the Telengana movement over the last decade. However, where are such women in today’s political world? What are the reasons for their absence in legislatures, leadership and government structures? Is history repeating itself?” (অন্বেষী নারী গবেষণা কেন্দ্র প্রকাশিত অনলাইন ব্লগ পোষ্টে কে ললিতার সাক্ষাৎকার ‘Language of silence’ –সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোগো শ্যামলা এবং এ সুনীথা ২৩.০১.২০১৫)। দুঃখের বিষয় হল পশ্চিমবঙ্গে অভিবাসী বা অভিপ্রয়াণকারী নারীদের জীবনসংগ্রাম বা বিভিন্ন আন্দোলনে তাদের বলিষ্ঠ অংশগ্রহণ নিয়ে এমন পূর্ণাঙ্গ গবেষণা বেশি পাওয়া যায় না। ১৯৭৪ সালে ‘Economic & Political weekly’ (Vol. 9 & 10, March 1974) জার্নালের দুটি প্রবন্ধে পার্থনাথ মুখার্জী বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে চাঁদপাড়া, বকচরা ইত্যাদি এলাকায় ক্ষেত্র গবেষণা করে ১৯৭১  এর উদ্বাস্তু আগমন, তাঁদের স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলা, এলাকার স্থানীয় জনগণের সঙ্গে তাঁদের বোঝাপড়া ইত্যাদি নিয়ে লিখেছেন।৭ কিন্তু নারী উদ্বাস্তু সমস্যা বা তাঁদের প্রাথমিক সংগ্রামের কোনো মূল্যায়ণ তিনি করেননি। আরও কয়েক দশক পর একবিংশ শতকে এসে অধ্যাপিকা পলা ব্যানার্জী লিখিত ‘Women in Indian Borderlands’ নামে গ্রন্থটির দুটি অধ্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের দু-তিনটি জেলা যেমন – মুর্শিদাবাদ, হুগলী, …

Read More »

Why should India protect the remaining Hindus and other religious and ethnic minorities in Bangladesh?   Sitangshu Guha Sitangshu  Guha, a columnist, a former college assistant-professor, a Human Rights defender, is playing a pivotal role against persecution of Hindus in Bangladesh and campaigned worldwide to save Bangladesh from the grasp of militant Islamists. Guha, a Bangladeshi, currently living in the USA has compiled and published several books. He can be reached via email: guhasb@gmail.com; and what’s app 001-646-696-5569.     India should protect the remaining Hindus and other religious ethnic minorities of Bangladesh not only as a humanitarian obligation, but for its own interest, too. If the Islamists can eliminate the remaining 20 million Hindus in less than 30 years as has been predicted by Professor Barakat based on statistical analysis of the current trend of their exodus to India under duress, Bangladesh will become another Pakistan or Afghanistan. This reality should be a cause for concern not only in New Delhi but everywhere in the community of civilized nations.   While all the non-Muslim minorities have been targeted for elimination, particularly the Hindus are infinitely more vulnerable than the Buddhists and Christians because the Islamists fear that the U.S., E.U., China, and Japan might be displeased, which in turn might hurt Bangladesh economically. The vicious campaign of eliminating Hindus and other religious-ethnic minorities has persisted regardless of which government has been in power, varying only degrees of intensity.   Every government, including the Awami League, has seized millions of acres of land and businesses from the Hindus by using the Enemy (Vested) Property Act. The Digital Security Act (DSA), now the CSA (Cyber Security Act) is used against Hindus as a substitute to the blasphemy laws. Prime Minister Sheikh Hasina is reluctant to bring the minority persecutors to justice, thus, exactly like BNP-Jamaat, granted the Islamists complete impunity, in other words, licensed the Islamists to exterminate the religious and ethnic minorities and forced them to flee to India.   If the Hindus and Buddhists of Bangladesh are protected, this twenty million strong body of population can in and of itself serve as a bulwark against the rising tide of militant Islam in the country. In the past, it was only Jatiya Party and BNP-Jamaat who promoted Islamic extremism by reinstating the Islamists in national politics and partnering with them in governance, but from 2013 Awami League has also partnered with the Islamists. As is well known this Kwami madrassah network has trained Islamic jihadists since the 1980s, now with the ARSA, ARSO, AQIS, IS-Bangla having joined forces with BNP-Jamaat, AL the country is headed toward a complete Talibanization.   This process (the process of Talibanization) must be stopped; and in dealing with this dangerous issue, enabling the country’s 20 million religious & ethnic minorities, and empowering them economically and politically can be extremely helpful. As indicated, their inclusion in every government, semi-government, and private sector would constitute an obstacle to radicalizing schools, colleges, offices, and industries.   In order to achieve this goal Prime Minister Hasina needs to be persuaded into taking the following steps, and India has a legitimate right to ask Prime Minister Hasina to act without further delay to stop minority exodus into India (They are entering India approximately @ 760 per day and is projected that the remaining 20 million will enter India in the next 30 years unless the process is stopped by taking necessary measures by the Bangladesh Government).   To look for a solution Bangladesh PM can pass a ‘Minority Protection Act’ and a ‘Minority Commission’ immediately by making an effective use of her absolute majority in the Parliament. The minorities of Bangladesh are an extremely vulnerable group much like children and women, who are incapable of protecting themselves. Therefore, an extremely strong Minority Protection Law is required to ensure their safety and security.   A separate National Minority Commission is indispensable because the existing National Human Rights Commission is unable to manage the daily incidents of human rights violations, persecution, and atrocities that the minorities are being subjected to. In addition to these, there are frequent large scale mayhems and pogroms being conducted. If a national Minority Commission is formed and empowered and mandated to directly call upon the RAB and High Court to act immediately as the pogroms unfold the minorities will be much better protected. Such a commission will also be able to produce a quarterly report of violence against minorities which can be shared with various nationals and international human rights groups as well as the foreign embassies in Dhaka. This will serve as a powerful deterrent against minority persecution.   Bangladesh government should immediately start the process of prosecuting and punishing the minority persecutors in the proposed fast-track courts under the proposed Hate Crime & Speech Law, starting with the list of persecutors that was submitted to Sheikh Hasina government in April 2011 by the Judge Mohammad Shahabuddin Commission Report, a.k.a. the Probe Commission Report. And produce a comprehensive list of perpetrators of crime against the minorities from October 1972 through the Temple/Deities destruction mayhem on February 4-5, 2023, and then turn it over to the Fast-Track courts for prosecution, trial & punishment.   The government’s deliberate failure to prosecute and punish the minority persecutors, in other words the government’s grating the Islamists’ impunity is the main reason the vicious campaign of religious & ethnic cleansing has persisted for decades. If the process of prosecution and trial begins violence against the minorities will decline drastically.   The Bangladesh government should Stop incarcerating the minorities, particularly the Hindus, on fictitious charges of “hurting the Muslims’ religious sentiment” by using the Digital Security Act (aka, CSA) as a substitute for a Blasphemy Law. Reinstating the original constitution of the country (1972) will also help. Declaration of Islam as the State Religion has been interpreted by the common Muslims as a license for ridding the country of its non-Muslim population through violence. And, of course according to one religion the status of State Religion automatically renders the others inferior and it contradicts the principle of secular democracy that the country …

Read More »

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত এবং ইন্দিরা গান্ধীর অনন্য ভূমিকা   শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক ইন্দিরা গান্ধী ৩১শে অক্টোবর ১৯৭১ সালে লন্ডনে বলেছিলেন: “শরণার্থী সমস্যা ছোট করে দেখার উপায় নেই। বাংলাদেশের সমস্যা শুধু শরণার্থী সমস্যা নয়, বরং এর চেয়ে অনেক গভীর। ভারতের জন্যে শরণার্থী সমস্যা শুধু অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নয় বরং এটা ভারতের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার জন্যে বিরাট হুমকী।  শরণার্থীদের ওপর যে বর্বরোচিত নির্যাতন হচ্ছে বিশ্ব তা জানে না, কিন্তু প্রতিদিন শরণার্থীরা ভারতে আসছে। মানুষ আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, কতদিন এই ভার আমরা  বহন করতে পারবো? আমি বলছি, সেই সময় পেরিয়ে গেছে। আমরা আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছি, জানিনা কখন সেটা উদগীরণ শুরু করবে? আমরা সংযত, কিন্তু কতটা সংযত থাকবো বিষয়টি নির্ভর করছে, সীমান্তে কি ঘটছে এর ওপর। আমরা মনে করি বিশ্বসম্প্রদায়ের দায়িত্ব এর সমাধান খুঁজে বের করা। সবচেয়ে ভালো হয়, এবং সেটা মানবিক, তা হলো এর রাজনৈতিক সমাধান বা বাংলাদেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।  শরতের শুরুতে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের পক্ষে আক্রমণাত্মক কূটনৈতিক সফরে পশ্চিমা বিশ্বে যান এবং যুক্তরাজ্য ও  ফ্রান্সকে পক্ষে আনতে সমর্থ হন। এই দুই রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য এবং মার্কিন বলয়ের, কিন্তু বাংলাদেশ প্রশ্নে এরা ভারতকে সমর্থন দেয়। ঐসময় ইন্দিরা গান্ধীর বিরাট কূটনৈতিক বিজয় ছিল, ৯ই আগষ্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ২০ বছর মেয়াদী ‘বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা  চুক্তি’। যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে এটা ছিল একটি বড় আঘাত। এরফলে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে চীনের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কমে যায়।  চীন তখন পাকিস্তানকে নৈতিক সমর্থন বা সামান্য সামরিক সাহায্য দিলেও ভারত সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটায়নি। ইন্দিরা গান্ধী ওয়াশিংটন সফর করেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিক্সন তাকে ততটা আমলে নেননি। হোয়াইট হাইসের ‘রোজ গার্ডেনে’ বসেই ইন্দিরা গান্ধী প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন যে, আমেরিকা না চাইলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। ইন্দিরা গান্ধীর জীবনী ‘মাই ট্রুথ’ গ্রন্থে বাংলাদেশের ঘটনাবলী বিশদ বিবৃত আছে।  ২৭শে মার্চ ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে পূর্ণ সমর্থন দেন। শরণার্থীদের আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়। পশ্চিমবাংলা, বিহার, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা সীমান্তে শরণার্থী শিবির  খোলা হয়। নির্বাসিত বাংলাদেশী সেনা অফিসার ও স্বেচ্ছাসেবীরা ঐসব ক্যাম্প থেকে মুক্তিবাহিনীর সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ কাজে নিয়োজিত হয়। ভারতের ইষ্টার্ন কমান্ডের মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব এক ইন্টারভিউতে বলেছেন, বেসরকারিভাবে ভারত এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশে জড়িয়ে যায়, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে সেটা ঘটে অনেক পরে। তিনি জানান, এপ্রিল থেকেই ভারত মুক্তিবাহিনীকে ট্রেনিং দিতে শুরু করে। জেনারেল জ্যাকব আরও বলেন, এটা ছিল বাংলাদেশের ফাইট, ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ও মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে ভালবেসে সাহসের সাথে যুদ্ধ করেছে, আমরা পাশে ছিলাম। ইন্দিরা গান্ধী ও জেনারেল জ্যাকবের মন্তব্য থেকে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভারত কিভাবে জড়িয়ে পড়ে এর আঁচ পাওয়া যায়। প্রায় ১ কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অস্ত্র সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।  বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে কিন্তু ক্ষমতা পায়না। পূর্ব-পাকিস্তানে আন্দোলন শুরু হয়। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তান গণহত্যা শুরু করলে একইদিন দিবাগত রাতে (২৬ মার্চ ১৯৭১) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। তাকে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান ২৬শে মার্চ প্রথম রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু। পাকিস্তান গণহত্যা চালায়। ভারত সীমান্ত খুলে দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায় এবং মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেই শুরু। ভারত-পাকিস্তানের শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে এ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। তিনি হিসাব করেন যে, এই বিপুল শরণার্থীর ভার বহনের চেয়ে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে খরচ কম হবে। ফলশ্রুতিতে ভারত মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পরে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের  অভ্যুদয় ঘটে।  ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তান অকস্মাৎ ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। ভারত পাল্টা আঘাত হানে। শুরু হয় আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ। তিনটি ভারতীয় কর্পস তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে যুদ্ধ করে, সাথে প্রায় তিন ব্রিগেড মুক্তিবাহিনী। ভারতীয়  বিমান বাহিনী এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব-পাকিস্তানের আকাশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। পশ্চিমেও প্রায় একই অবস্থা, ভারতীয় নেভী একই সময়ে প্রায় অর্ধেক পাকিস্তানী নৌবহর ও ট্যাঙ্কার ধ্বংস করে। জাতিসংঘে বারবার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সোভিয়েত ভেটোতে বানচাল হয়ে যায়। উপায়ন্তর না দেখে পাকিস্তান ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ব-পাকিস্তানে আত্মসমর্পণ করে। পশ্চিম রণাঙ্গনে ভারত সর্বাত্মক সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার পরও ইন্দিরা গান্ধী একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। যুদ্ধ শেষ। ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে মাথা নীচু করে আত্মসমর্পণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একসাথে এত সৈন্যের  আত্মসমর্পণ এই প্রথম। লেঃ জেনারেল এএকে নিয়াজী এতে স্বাক্ষর করেন। পৃথিবীর বুকে ৭ম জনবহুল ও ৪র্থ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ  রাষ্ট্র বাংলাদেশ জন্ম নেয়। পরাজয়ের পূর্ব-মুহূর্তে পাকিস্তানিরা স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সংঘঠিত করে।  ইন্দিরা গান্ধী ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে পাকিস্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়। তিনি ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে ফিরে আসেন। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। বাংলাদেশ জাতিসংঘে সদস্যপদ চায়, কিন্তু চীনের ভেটোতে সেটা হয়না। বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করে যে, দখলদার পাকিস্তান বাহিনী ৩০লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে এবং ২লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত কেড়ে নিয়েছে। পাকিস্তানের জন্যে এই পরাজয় ছিল অবমাননাকর ও লজ্জাজনক। পাকিস্তান তার অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা হারায়। টু-নেশান থিওরী মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পাকিস্তান এক তৃতীয়াংশ সৈন্য, এক চতুর্থাংশ বিমান বাহিনী এবং অর্ধেক নেভীর শক্তি হারায়। ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের অবসান ঘটে। জুলফিকার আলী ভুট্টো  ক্ষমতাসীন হন। ১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তি হয়। ভারত যুদ্ধবন্দীদের ১৯২৫ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী তদারকি করে। ৯৩০০০ বন্দিকে মুক্তি দেয়, এমনকি যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ২০০ সেনাকেও ক্ষমা করে দেয়। একই সাথে পশ্চিম রনাঙ্গনে দখলকৃত ১৩০০০ বর্গ-কিলোমিটার ভূমি ফেরত দিয়ে দেয়। এই বিশাল পরাজয়ের গ্লানি ঘুচাতে এবং আর একটি ভারতীয় আক্রমণ ঠেকাতে ভুট্টো পারমাণবিক বোমা কর্মসূচীতে হাত দেন। বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডটি ভারতের সৃষ্টি। কথাটা এভাবেও বলা যায়: হিন্দু-ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে। বোনাস হিসাবে তাই বাংলাদেশে হিন্দুদের বলা হয় ভারতের দালাল। এটা সার্বজনীন উপাধি। আবার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার কথা? বাস্তবতা ঠিক উল্টো, দায়সারা গোছে ভারতকে আমরা স্মরণ করি।  ১৯৭৫-১৯৯৬ পর্যন্ত ভারত শত্রু ছিলো।  অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা এক অনবদ্য ইতিহাস। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামসহ সমগ্র ভারতবাসী, ইন্দিরা গান্ধী তথা ভারত সরকার এবং বিএসএফ ও ভারতীয় সৈন্যদের কিংবদন্তী সাহায্য-সহযোগিতা ও আত্মত্যাগের সফল পরিণতি বাংলাদেশ। এটা ঠিক ভারতের সামরিক কৌশলগত স্বার্থ ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের জন্যে ভারতবাসীর এতটা ত্যাগ ও ভালবাসা বিশ্বের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। মোদ্দা কথা, স্বাধীনতাকামী জনগণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় ভারত আমাদের (বাংলাদেশের) স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। অনেকটা না-চাইতে এবং কিছু বোঝার আগেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। হয়ত, এ কারণে বাংলাদেশিরা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান খাটো করে দেখে, বা ততটা স্বীকার করতে চায়না। অথবা কটু কথা বলে? বাঙ্গালী নাকি ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝেনা’! যদি মুক্তিযুদ্ধ অন্তত: নয় মাস না হয়ে নয় বছর হতো; প্রতি ঘরে ঘরে, একজন শহীদ বা বীরঙ্গনা থাকতো তাহলে হয়তো বাঙ্গালী …

Read More »

বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষঃ একটি বিশ্লেষণ

বিমল প্রামাণিক   ‘পাকিস্তানি বাধা অতিক্রম করে মধ্যবিত্তের বিকাশের পথ যখন উন্মুক্ত হল তখন তার সামনে সমস্যা দেখা দিল আরেকটি। ভারত বড় প্রতিবেশী। শুধু আয়তনে নয়, অর্থনীতিসহ সব দিক দিয়েই বাংলাদেশের তুলনায় ভারত অগ্রসর। আর ভয় সেখানেই। এভয় হল ক্ষুদ্র প্রতিবেশীর বৃহৎ সম্পর্ক-ভীতি। তার উপর দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাথে অবিশ্বাস বা বিদ্বেষের যে পটভূমিতে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়েছিল মাঝের গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় তা দূরীভূত হয়েছে এটা মনে করার কোন কারণ নেই। ফলে স্বাধীনতার পরে  বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত সম্পর্কে সন্দেহের ভাব যখন দেখা দিল মধ্যবিত্তের মনে, তখন স্বাভাবিকভাবে সম্প্রদায়গত বিভেদের ইতিহাসও সামনে এসে দাঁড়াল। আর এদের সাথে একাংশের ভিতর পাকিস্তানের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বদলে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তারও অস্বাভাবিক মনে হল না। আর ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শীতলতা যত বেড়েছে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক তত ঘনিষ্ঠতর হয়েছে। বস্তুত বাঙালি মধ্যবিত্তের মাঝে একদিকে মুক্তিযুদ্ধ বা তার আগের অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে ভারত সম্পর্কে সন্দেহ-অবিশ্বাস (যা অতীত সম্প্রদায়গত বিভেদের অভিজ্ঞতা দ্বারা পরিপোষিত) – এই দু’য়ের টানাপোড়েন বিদ্যমান। আর এই টানাপোড়েনেই বাঙালি না মুসলমান, না মুসলমান বাঙালি, না বাঙালি মুসলমান এই দোলাচলে অভিব্যক্ত।’ ১   আজকের বাংলাদেশের মুসলমান সমাজে ভারত বিদ্বেষের যে প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা কোন নতুন বিষয় নয়। এর শিকড় দ্বিজাতিতত্ত্বের গভীরে নিহিত ছিল। এর প্রকট প্রকাশ ধরা পরে হিন্দু বিদ্বেষের ঘটনাবলীর ধারাবাহিকতায়। পাকিস্তানের ‘যোগাযোগ মন্ত্রী’ শ্রী যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল ১৯৫০ সালেই তার সুদীর্ঘ ইস্তফাপত্রে পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সরকারের হিন্দু-বিতাড়নের নীতি ও কার্যকলাপের যে বিস্তারিত বিবরণ লিখে গেছেন তা থেকে কিঞ্চিৎ এখানে উদ্ধৃত করা হলঃ “Pakistan `Accursed’ for Hindus Now this being in brief the overall picture of Pakistan so far as the Hindus are concerned, I shall not be unjustified in stating that Hindus of Pakistan have to all intents and purposes been rendered “stateless” in their own houses. They have no other fault than that they profess Hindu religion. Declarations are being repeatedly made by Muslim League leaders that Pakistan is and shall be an Islamic State. Islam is being offered as the sovereign remedy for all earthly evils.  In the ruthless dialectics of capitalism and socialism you present the exhilarating  democratic synthesis of Islamic equality and fraternity.  In that grand setting of the Shariat Muslims alone are rulers while Hindus and other minorities are jimmies who are entitled to protection at a price, and you know more than anybody else, Mr. Prime Minister, what that price is.  After anxious and prolonged thought I have come to the conclusion that Pakistan is no place for Hindus to live in and that their future is darkened by the ominous shadow of  conversion or liquidation.  The bulk of the upper class Hindus and politically conscious scheduled castes have left East Bengal.  These Hindus who will continue to stay in the accursed province and for that matter in Pakistan will, I am afraid, by gradual stages and in a planned manner be either converted to Islam or completely exterminated.  It is really amazing that a man of your education, culture and experience should be an exponent of a doctrine fraught with so great a danger to humanity and  subversive of all principles of equity and good sense. I may tell you and your fellow workers that Hindus will never allow themselves, whatever the thereat or temptation, to be treated as jimmies in the land of their birth. Today they may, as indeed many of them have already done, abandon their hearths and homes in sorrow but in panic. Tomorrow they will strive for their rightful place in the economy of life. Who knows what the womb of the future is? When I am convinced that my continuance in office in the Pakistan Central Government is not of any help to Hindus I should not, with a clear conscience, create the false impression in the minds of the Hindus of Pakistan and peoples abroad that Hindus can live there with honour and with a sense of security in respect of their life, property and religion.  This is about Hindus.”2   পাকিস্তান সরকারের যে ভারত তথা হিন্দু বিদ্বেষী নীতি ও কার্যকলাপ এবং তার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই ভারতের বিরুদ্ধে মাত্র চব্বিশ  বছরের (১৯৪৭-১৯৭১) মধ্যেই তিনবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েই ক্ষান্ত হয়নি, লাগাতার হিন্দু বিরোধী দাঙ্গা ও কালা কানুন ( Enemy Property ordinances and laws  উল্লেখযোগ্য) জারী করে হিন্দু নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখায় পাকিস্তানের মুসলমান সম্প্রদায়  ভারতকে তাদের প্রধান শত্রু হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। এর প্রধান সুবিধাভোগী ছিল উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও ক্ষমতাশালী মুসলমান সম্প্রদায়। ফলে পূর্ব পাকিস্তান ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশে যারা শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন বা করছেন তারা ভারত বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হবেন কী করে ! ভারত বিদ্বেষের মধ্যেই যাদের জন্ম এবং বংশ পরম্পরায় বেড়ে ওঠা সেই পাকিস্তানি সংস্কৃতির আবহে, তা থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে উত্তরণ ঘটানোর জন্য যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গঠনের উদ্যোগ প্রয়োজন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রারম্ভেই তার একটা চেষ্টার অঙ্কুর দেখা গেলেও অচিরেই তা রুদ্ধ হয়ে যায়। আর ১৯৭৫-এর কালান্তক ঘটনার পর বাংলাদেশের শরীরে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা জাঁকিয়ে বসতে কাল বিলম্ব করেনি। বিশিষ্ট গবেষক নুহু-উল-আলম লেনিন ‘সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ’ সমকালীন বাংলা সাহিত্যে যে থাবা বিস্তার করেছে, তার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লিখেছেন,  “সাম্প্রদায়িক উন্মাদনায় সৃষ্ট পাকিস্তানের সমকালীন কবি- সাহিত্যিকরা অনেকেই তাই সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে  উপেক্ষা করতে পারেননি। তাঁদের কবিতা, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক সবকিছুতেই এর ছাপ পড়েছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সমাজ-রাষ্ট্র কাঠামোতে নানা পরিবর্তন সাধিত হলেও সাম্প্রদায়িক চেতনার সাহিত্যিকেরা ধর্মীয় ও পশ্চাদপদ রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে আসতে পারানি। … কিন্তু ১৯৭৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদী চেতনার প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়।” … আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান কবি “আল মাহমুদ পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা সবকিছু মূল্যায়ণ করেছেন। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের সশস্ত্র সংগ্রামকে তিনি যেমন সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক মনোভাবের দ্বারা সমর্থন করেছেন, তেমনি সংস্কৃতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠতে পারেননি। বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকর্মকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি সব কিছুতে ইসলাম আর মুসলমান লেবেল এঁটে দিয়েছেনঃ বাংলাদেশ মূলত একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এখানে সাড়ে এগারো কোটি নর-নারীর  মধ্যে দেড় কোটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃস্টান বাদে আর সকলেই ইসলাম ধর্মাবলম্বী । ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক ইসলামের বিধিনিষেধ সমূহ এখানকার জনজীবনে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিপালিত হচ্ছে। এমনকি অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও। এখানকার  আদব-কায়দা, প্রাত্যহিক সামাজিক বিনিময়ে, পোশাক-আশাকে, খাদ্য রুচিতে এবং সর্বোপরি সাধারণ সামাজিক সম্মিলনের ক্ষেত্রগুলোতেও অচেতনভাবে হলেও ইসলামের হালাল-হারাম পাত্তা পেয়ে আসছে। পারস্পরিক সাক্ষাৎ মুহুর্তে আমরা …

বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষঃ একটি বিশ্লেষণ Read More »

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঃ বাঙালি মুসলমানদের মনে সাদরে স্বীকৃতি পেল না কেন?

বিমল প্রামাণিক   পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হওয়ার অব্যবহিত পর থেকেই হিন্দু জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনে দারুনভাবে প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে, সাথে সাথে মেয়েদের নিরাপত্তাও। দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লুটপাট এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে বহুসংখ্যক মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। আমার জানা মতে একটি মুসলমান পরিবারও পাইনি যারা হিন্দুদের পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন বা আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। সুদীর্ঘকাল  একই সাথে একই গ্রামে বসবাস করে যাদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল, সে সকল মুসলমান পরিবারও যেন কেমন হয়ে গেল পূর্ববঙ্গ  স্বাধীন ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হওয়ায়। বঙ্গ বিভাজন করে ইসলামি রাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তান তাদের মোহগ্রস্ত ও আত্মহারা করে ফেলেছিল। তাদের কাছে অন্য আর কিছুর অগ্রাধিকার ছিল না। তা না হলে দেশভাগের মাত্র পাঁচ  বছরের মধ্যেই এক কোটিরও অধিক হিন্দু জনগোষ্ঠী উদ্বাস্তু হয়ে কিভাবে ভারতে আশ্রয়  নিতে বাধ্য হল ? পাকিস্তানের জন্ম থেকেই পূর্ববঙ্গের মুসলমান জনগোষ্ঠী এবং সরকার ইসলামি ভ্রাতৃত্ববোধের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল। সমস্ত ইসলামি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং ভারতকে শত্রু-রাষ্ট্র হিসেবে শুধু জ্ঞান করাই নয়,  চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসনের যাঁতাকলে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক আন্দোলন মাথাচাড়া দেয়। শেখ মুজিব এই রাজনীতিকেই আঁকড়ে ধরেন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির মোড়কে জনগণের সম্মুখে রেখে এমন একটা মোহসৃষ্টি করতে সক্ষম হন,  যা ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে তার দলের ব্যাপক সাফল্য এনে দেয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নৃশংস মুজিব হত্যার পরবর্তী বাংলাদেশে মুসলমান জনগোষ্ঠীর যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহের প্রকাশ আমরা দেখলাম তা তো বাঙালি জাতীয়তাবাদী চরিত্র নয়, সেটা হল উগ্র ইসলামি জাতীয়তাবাদী বৈশিষ্ট্যের ছাপ যা পাকিস্তান আমলের চেয়েও কট্টর ইসলামি, কুরুচিকর সাম্প্রদায়িকতায় জর্জরিত। পাকিস্তানের ইতিহাসে কখনও  বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রভাব দেখা যায়নি, কারণ পাকিস্তানের রাজনীতির ভিত্তিই ছিল দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং বঙ্গ বিভাগও সেই দ্বিজাতিতত্ত্ব মেনেই হয়েছে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ পর্বের পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ইতিহাসে দেখা যায়,  ধীর এবং নিশ্চিত পদক্ষেপে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে অবদমিত, শোষিত বাঙালি মুসলমানের মধ্যে একটা নবচেতনার উত্থান ঘটে যায়, যার ফলে  তিনি পাকিস্তানি ক্ষমতাকেন্দ্রে শুধু  নাড়াই দেননি, দিয়েছিলেন ক্ষমতা ভাগের  বিকল্পের      সন্ধান। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী এবং সামরিক জান্তা এই বিষয়টিকে  একেবারেই মেনে নিতে পারেননি  তারা মগ্ন  ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান দ্বারা  শাসিত এক অঙ্গরাজ্য হিসাবে দমিয়ে রাখার  ক্ষুদ্র এবং স্বার্থপর চিন্তায়। আর সেকারণেই শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয়ে যায় পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের  বিরুদ্ধে লাগাতার এক গণসংগ্রাম। শেখ মুজিব জানতেন তার দল আওয়ামি লিগের মিনার গড়ে উঠেছে মুসলিম লিগের ভিতের উপর যার আদর্শগত ভিত্তি দ্বিজাতিতত্ত্ব। এই দলকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আদর্শে উত্তরণ ঘটানো অসম্ভব কাজ। তাই তিনি সেপথে যাননি। তিনি ছাত্র সমাজের উপর ভরসা রাখলেন। কিন্তু দেশের যে জনতা মুজিবকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করলেন তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চাওয়া। তারা আওয়ামি লিগের ‘ছয়–দফা’ দাবির মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ন ও অধিকারের স্বপ্ন দেখেছিল। তারা পাকিস্তান খন্ডিত হওয়া বা পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার  স্বপ্ন দেখেনি। আর স্বাধীন বাংলাদেশ তাদের কল্পনায়ও ছিল না। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পরবর্তী  ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ গণহত্যার পূর্ব পর্যন্ত  এই প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষাঙ্গন ও গ্রামে-গঞ্জে  বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একটা ধারণা নিয়ে প্রধানত ছাত্র-যুবকদের মধ্যে  একটা উন্মাদনা লক্ষ করা গেল। সবটাই পাকিস্তান-বিরোধী বাঙালি জাতীয়তাবাদের উচ্ছ্বাসে ভরা। বাঙালি সংস্কৃতি- নির্ভরশীলতার  ভিত দুর্বল থাকায় পাকিস্তান-বিরোধী মানসিকতাই এখানে প্রাধান্য পেল। ফলে পাকিস্তানি মানসিকতা থেকে বাঙালি চেতনায়  প্রকৃত উত্তরণ ঘটল না। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণা অচিরেই  উবে গেল যখন ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ থেকে পাকিস্তানি সেনার গণহত্যা দ্রুত সারা পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়লো। আমি তখন রাজশাহী- বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এস.সি. (গণিত) ক্লাসের ছাত্র। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় ঠুনকো বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারণার পরিণতি নিম্নরূপঃ বাঙালি মুসলমানরা আওয়ামি লিগকে ভোটবাক্সে আশাতীত সাফল্য পেতে এগিয়ে এসেছিল এই ভেবে যে তারা ন্যায্য অধিকার পাবে – যা আওয়ামি লিগ স্বপ্ন দেখিয়েছিল। তারা পাকিস্তান ভেঙ্গে ফেলার জন্য ভোট দেয়নি। ফলে পাক-বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে তারাও এক বড় অংশ পাকিস্তানের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গেল। শুধু মুসলিম লিগ জামাতে ইসলামি নয়, আওয়ামি লিগ সমর্থকরাও অনেকেই সামিল হয়ে গেল পাকিস্তান বাঁচাতে। এটা পাকিস্তানের তেইশ বছর বাঙালি মুসলমানদের মগজ ধোলাই-এর ফল যা বিভিন্ন দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সম্পত্তি দখল ও লুটপাট ও হিন্দু-বিতাড়নের ঘটনার মধ্য দিয়ে এতদিন প্রকাশ পেয়েছে। এটা ছিল পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার আক্রোশের বহিঃপ্রকাশও। হিন্দু-মুসলমানের  দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব, সুসম্পর্ক এবং পড়শি বা একই গ্রামের অধিবাসী বংশ পরম্পরায় পরিচিত সম্পর্ককে কী অনায়াসে রাতারাতি ভেঙ্গে ফেলা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ না এলে এটা হয়ত কোনদিনই আমার অভিজ্ঞতায় আসত না। সমাজতত্ত্বের গবেষক বিশিষ্ট পণ্ডিতজন হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে কিছু মতামত ব্যক্ত করলেও দ্বিজাতিতত্ত্বের মত যে বিষধর চিন্তা বাঙালি মুসলমানের  রক্ত-মজ্জায় মিশে আছে তা পরিশ্রুত হওয়া মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। বিশিষ্ট চিন্তক ও প্রাবন্ধিক আহমদ ছফার প্রণিধানযোগ্য মতামত নিম্নে উদ্ধৃত হলঃ         “ইতিহাসে  বিশ-ত্রিশ বছর কোন দীর্ঘ সময় নয়। বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্রযন্ত্রটি প্রতিষ্ঠা করেছে সে রাষ্ট্রের সংকটের অন্ত নেই, কোথায়ও কোন দিক নির্দেশনার চিহ্ন পরিদৃশ্যমান নয়। সামাজিক সভ্য এবং ধর্মীয় কুসংস্কার সাম্প্রতিক কালে এমন প্রচন্ড আকার  নিয়ে দেখা দিয়েছে, অনেক সময় মনে হয়, এই জাতি মেরুদণ্ডের উপর থিতু হয়ে কোনদিন দাঁড়াতে পারবে না। মধ্যযুগীয় ভূত এই জাতিকে এমনভাবে আষ্টে-পৃষ্টে বেঁধে রেখেছে তার নাগপাশ কখন কিভাবে ছাড়াতে পারবে একথা এখন একরকম চিন্তা করাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।         বর্তমান অস্থিরতা এবং মধ্যযুগীয় ধর্মীয়  বদ্ধ মতের পুনরুত্থানের একটি কারণ আমি নির্দেশ করতে চাই। শুরু থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে দলটি গিয়েছিল তার আদর্শিক বৃত্তটি বিশ্লেষণ করলেই সেটা ধরা পড়বে। আওয়ামি লিগ বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। অন্যান্য দলও স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেছে। কিন্তু আওয়ামি লিগের ভূমিকাটি যে প্রধান তাতে সন্দেহ  নেই। কিন্তু এই আওয়ামি লিগের কী পরিচয় ? আওয়ামি লিগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ভাসানী ছিলেন আসাম মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট। হোসেন সহীদ সোহরাওয়ার্দী নিখিলবঙ্গ মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট এবং শেখ মুজিবর রহমান নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক। সুতরাং একথা বলা একটুও অযৌক্তিক হবে না যে, মূলত  আওয়ামি লিগ মুসলিম লিগের একটা অংশ। পাকিস্তানের সঙ্গে বাস করে তাদের ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারছিল না বলে আওয়ামি লিগকে শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সূচনা করতে হয়েছিল।         একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন তাৎপর্যের দিক দিয়ে দুটি এক জিনিস নয়। এই আওয়ামি লিগের আন্দোলন যতই বেগ এবং আবেগ সঞ্চয় করেছে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের নেতৃত্ব  কবুল করে নিয়েছিল। কিন্তু সমাজের ভিতরে তারা কোন নতুন মূল্যচিন্তার জন্ম দিতে পারেনি; নতুন সংস্কৃতি নির্মাণ করতে পারেনি। তারা সেক্যুলারিজমের নীতি শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল।” ১ এই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু উপযোগী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সমাজতাত্ত্বিক অধ্যাপক আবুল বারকাত-এর বিশ্লেষণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সামাজিক রূপান্তরের একটা পরিষ্কার (স্বচ্ছ) ধারণা পেতে সাহায্য করবে। তিনি মনে করেন,  “১. ১৯৪৭-এ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি।  ২. …

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঃ বাঙালি মুসলমানদের মনে সাদরে স্বীকৃতি পেল না কেন? Read More »

বাংলাদেশে নির্বাচন

শিতাংশু গুহ, নিউ ইয়র্ক     প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: বাংলাদেশে ইতিহাসে মাত্র তিনবার পপুলার ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৮-সালে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তাঁর ক্ষমতা বৈধ করতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তিনি ৭৬.৬% ভোট পেয়ে জয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বী এমএজি ওসমানী পান ২১.৭%। জিয়া হত্যার পর ১৯৮১ সালে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, বিএনপি’র আবদুস সাত্তার ৬৫.৫% ভোট পেয়ে জয়ী হ’ন। প্রতিদ্বন্দ্বী ড: কামাল হোসেন পান ২৬% ভোট। এরপর সাত্তারকে সরিয়ে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এটি বৈধ করতে ১৯৮৬ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরশাদ ৮৪.১% ভোট পেয়ে জয়ী হন, ভোট পরে ৫৪.৯%। এ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না! ১৯৯১ সাল থেকে মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকার চালু হওয়ায় প্রত্যক্ষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নেই, সংসদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকেন।    রেফারেন্ডাম: বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনবার জাতীয় রেফারেন্ডাম, যা ‘হ্যাঁ/না’ ভোট নামে সমধিক পরিচিত। জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ একবার করে তাঁদের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে কিনা তা যাচাই করতে ১৯৭৭ ও ১৯৮৫ সালে ‘হ্যাঁ/না’ ভোট আয়োজন করেন। বলা বাহুল্য, এসব ভোট সবসময় সামরিক শাসকদের অনুকূলে যায়। ১৯৯১ সালের ব্যতিক্রমধর্মী রেফারেন্ডামটি ছিল সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে আসার জন্যে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘হ্যাঁ/না’ ভোট করেন ৩০শে মে ১৯৭৭। এতে তারপক্ষে ভোট পরে ৯৮.৯%। মোট ভোট পড়েছিল ৮৮.১%। দ্বিতীয় ‘হ্যাঁ/না’ ভোট  আয়োজন করেন হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, ২১শে মার্চ ১৯৮৫। তারপক্ষে ভোট পরে ৯৪.৫%। মোট ভোট পড়েছিল ৭২.২%। বলা বাহুল্য, উভয়ক্ষেত্রে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। তৃতীয় রেফারেন্ডাম হয় ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৯১। সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে আসার পক্ষে ভোট পরে ৮৩.৬%, বিপক্ষে ১৫.৫%, মোট ভোট পড়েছিল ৩৫.৫%। একই সংশোধনীতে প্রেসিডেন্ট সংসদে পরোক্ষ ভোট নির্বাচিত হবার বিধান এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদটি বিলুপ্ত করার পক্ষে জনগণ মত দেন।   জাতীয় (সংসদ) নির্বাচন: বাংলাদেশে প্রথম সংসদ নির্বাচন হয় ৭ই মার্চ ১৯৭৩ সালে। আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে। এগার জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়। ভোট পরে ৫৫%। মহিলা রিজার্ভ ১৫টি আসন। এ নির্বাচনে কারচুপি’র অভিযোগ উঠে, তবে সেটি কেন্দ্রভিত্তিক, জাতীয়ভাবে কিছু ছিল না। নির্বাচনটি ভালোই ছিল, গ্রহণযোগ্য ছিল।    দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৮ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯। বিএনপি ২০৭ আসনে জেতে, আওয়ামী লীগ ৩৯। ভোট পরে ৫১%। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। এ নির্বাচনে জাতি প্রথম ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং দেখে, একই সাথে ভোটের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়।    তৃতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ৭ই মে ১৯৮৬ সালে। জাতীয় পার্টি ১৫৩, আওয়ামী লীগ ৭৬, জামাত ১০টি আসন লাভ করে। ভোট পরে ৬১%। বিএনপি ভোট বয়কট করে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন।    চতুর্থ সংসদ নির্বাচন ৩রা মার্চ ১৯৮৮। জাতীয় পার্টি ২৫১, সম্মিলিত বিরোধী জোট ১৯টি আসন লাভ করে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে।  মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ২য়, ৩য় ও ৪র্থ সংসদ নর্বাচনের ফলাফল বিশ্বাসযোগ্য ছিল না, সামরিক স্বেচ্ছাচারী সরকারের ইচ্ছেমত ফলাফল ঘোষণা হয়।   পঞ্চম সংসদ নির্বাচন হয় ১৩ই জানুয়ারী ১৯৯১। বিএনপি ১৪০, আওয়ামী লীগ ৮৮, জাতীয় পার্টি ৩৫, জামাত ১৮টি আসনে জেতে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ভোট পরে ৫৫.৪৫%। এ নির্বাচনটি ভাল এবং গ্রহণযোগ্য হয়। শেখ হাসিনা সূক্ষ্ণ কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন, গ্রাহ্য হয়নি।    ১৯৯৬-এ  দু’টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচন, আওয়ামী লীগ বয়কট করে, বিএনপি জয়ী হয়, আসন ২৭৮। আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে ‘তত্বাবধায়ক সরকার’ দাবি আদায় করে। জুনে আবার সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬, জাতীয় পার্টি ৩২, জামাত ৩, ইসলামী ঐক্যজোট ১, জাসদ (রব) ১, স্বতন্ত্র ১টি আসন লাভ করে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ভোট পরে ৭৫,৬%। ১৫ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচনটি জাতির জন্যে কলঙ্ক।    অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে, যদিও বিএনপি ভোট পায় ৪০.৯৭%, আওয়ামী লীগ ৪০.১৩%। আসন, বিএনপি ১৯৩, আওয়ামী লীগ ৬২, জামাত ১৭, ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১৪, জাতীয় পার্টি ৪, ইসলামী ঐক্যজোট ২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ১, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ১টি আসন। স্বতন্ত্র ৬, ভোট পরে ৭৪.৯৭%।   ২০০৮-এ নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বিএনপি ৩০, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ২৭, জাসদ ৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ২, জামাত ২, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১, স্বতন্ত্র ৪, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি আসন। মোট ভোট পরে ৮৭.১৩%। মহিলা রিজার্ভ ৪৫টি আসন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত: এটি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।    দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ৫ই জানুয়ারি ২০১৪, আওয়ামী লীগ ১৫৩টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়লাভ করে। বিএনপি বয়কট করে। ভোট পরে ৩৯.৫৮%। মোট আসন, আওয়ামী লীগ ২৩৪, জাতীয় পার্টি ৩৪, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬, জাসদ ৫, তরিকত ফেডারেশন ২, জাতীয় পার্টি (মন্জু) ২, বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্ট ১, স্বতন্ত্র ১৬টি আসন। মহিলা রিজার্ভ ৫০টি আসন। এটি ‘বিনে ভোটের’ নির্বাচন বলে স্বীকৃতি পায়।   এগারতম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৩০শে ডিসেম্বর ২০১৮। প্রদত্ত ভোট ৮০.২%। মহিলা রিজার্ভ ৫০টি আসন। জাতীয় পার্টি ২৬, বিএনপি ৭, আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন। বাকি অন্যান্য। এ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে, এবং দিনের ভোট রাতে হয় বলে পরিচিতি লাভ করে।    দ্বাদশতম সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ই জানুয়ারী ২০২৪। আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ২৯৯টি আসনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। প্রদত্ত ভোট ৪০%, গুজব রয়েছে ১০%’র নীচে ভোট পড়েছে। বিএনপি বয়কট করেছে। স্বতন্ত্র ৬১টি আসন। এটিকে ‘ডামি ভোট’ বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ নির্বাচন নিয়ে ঢাকার মাঠে সরকারের পক্ষে ভারত-রাশিয়া-চীন এবং অন্যপক্ষে আমেরিকা-ইউরোপ-কানাডা বা পশ্চিমা বিশ্ব খেলছে।         Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

বাংলাদেশ ও ভারতের যোগাযোগ ও বাণিজ্যে বেনাপোল পেট্রাপোল স্থলবন্দরের গুরুত্ব।

শঙ্কর সরকার, বাংলাদেশ   ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের চীন-ভারত মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তার দেওয়া সম্বর্ধনা সভায় বলেন বন্ধু বদল করা যায় কিন্তু প্রতিবেশী কখনো বদলানো যায় না। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে তাঁর সরকারের এবং ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। শুধু তাই নয় ভারতীয় সব সরকারি কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতগণ সব সময়ই একই বক্তব্য রাখেন। ভারতীয়  প্রতিনিধিগণ প্রায়শই বলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যেভাবে বাংলাদেশের পাশে ছিল ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের সব উন্নয়নমূলক কাজে ভারত সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। সেই কারণেই একটি সুপ্রতিবেশী দেশ  হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিষয়টি উভয় দেশের  জনগণের জন্য কল্যাণকর।    বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে বড় ও  গুরুত্বপূর্ণ বেনাপোল-পেট্রাপল স্থলবন্দর। বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে ভারতীয় অংশকে বলা হয় পেট্রাপল স্থলবন্দর এবং বাংলাদেশ অংশের বন্দরকে বলা হয় বেনাপোল বন্দর।  ভারতের  পেট্রাপোল ও বাংলাদেশের বেনাপোল এই দুই মিলে তৈরি হয়েছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর করিডোর। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা থেকে পেট্রাপোল বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। বেনাপোল পেট্রাপল  স্থলবন্দর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ও ভারতের স্থল-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্রস্থল। দুই দেশের মধ্যেকার স্থল-বাণিজ্যের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ সম্পাদিত হয় এই করিডোর বন্দর দিয়ে। শুধু স্থল-বাণিজ্যের নয় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার বিবিধ প্রয়োজনে প্রতিবছর প্রায় ২২ লাখ মানুষ এই স্থলপথে যোগাযোগ ও  যাতায়াত করে।   বাংলাদেশ ও ভারতের উভয় দেশের আমদানি রফতানির জন্য, পণ্য  পরিবহনের জন্য এবং যাত্রী পারাপারের সুবিধা সহজ করতে দুই দেশের মধ্যে এখানে চালু করা হয়েছে সমন্বিত চেকপোস্ট।  বাংলাদেশ ও ভারতের যাতায়াতকারী ২২ লাখ মানুষের মধ্যে শুধু টুরিস্ট  ভিসা নয়, চিকিৎসা, পড়াশোনা, বাণিজ্য, ইত্যাদি বিষয়ে মানুষ এই পথে যাতায়াত করে। ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের তথ্যমতে শুধুমাত্র ঢাকা থেকেই প্রায় বছরে ১৫ লাখ ভিসা প্রদান করা হয় যা সারা বিশ্বে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিসা প্রদানে সর্বাধিক।    বেনাপোল পেট্রাপোল সীমান্ত স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতি কাপড়, যানবাহনের চেসিস(chassis),কাঁচামাল, কাঁচাতুলা, ইস্পাত, লোহা, রাসায়নিক রঞ্জক, সিনথেটিক কাপড়, মোটর সাইকেল, হালকা যানবাহন, শিশুখাদ্য, খাদ্যশস্য, মিল কলকারখানার মেশিন ও ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ও নানা ধরনের পণ্য আমদানি করা হয়। বিপরীতে এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে তৈরি-পোশাক, ব্যাগ, ব্রিফকেস, পাটের সুতা, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, ইত্যাদি পণ্য। কিছুদিন আগেই ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর এলাকা সফরে আসেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সফরে তিনি স্থলবন্দরের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ঐ সময় তিনি পেট্রাপোলে একটি কার্গো গেট উদ্বোধন করার সময় তিনি বলেছিলেন ভারতীয় পেট্রাপল স্থলবন্দর  কর্তৃপক্ষ শুধু দেশটির অর্থনীতিকেই শক্তিশালী করছে না একই সাথে তা সীমান্তে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে।  তিনি আরও বলেন আমাদের নীতিমালা পরিষ্কার। আমারা চাই সীমান্ত এলাকায় একটি শক্তিশালী অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি গড়ে উঠুক যাতে করে ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তের দুই স্থলবন্দর পথেই বাণিজ্য অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের বেনাপোল ও ভারতের  পেট্রাপোল বন্দর বাণিজ্য খাতে “গেম চেঞ্জার” হয়ে উঠতে পারে বলেও বিভিন্ন সময়ে সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। ভারতীয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের Land Ports Authority of India (LPAI) তথ্য অনুযায়ী ভারতের পেট্রাপোল দিয়ে বাংলাদেশে – ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের আকার প্রতিবছর বৃদ্ধি পেয়েছে।    ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এই স্থলবন্দরের বাণিজ্যর পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৭৯৯ কোটি রুপি। ২০২০-২১ অর্থ বছরে করোনা মহামারীর কারণে বাণিজ্যর পরিমাণ কমলেও অন্যান্য বছরে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বাণিজ্য হয়েছে ২১ হাজার ৩৮০ কোটি রুপি। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২০ হাজার ৬০৫ কোটি রুপি। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১৫ হাজার ৭৭১ কোটি রুপি। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২৯ হাজার ৪০৬ কোটি রুপি বাণিজ্য হয়েছে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। আর চলতি অর্থ বছরে এখন পর্যন্ত ভারতের পেট্রাপোল  স্থলবন্দর দিয়ে  বাণিজ্য হয়েছে ১৯ হাজার ৬৩১ কোটি রুপি। আশা করা যাচ্ছে বর্তমান অর্থ বছরের শেষ নাগাদ বাণিজ্য ৪০ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ-ভারত স্থলবন্দর আমদানি রপ্তানি কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমানের ভাষ্য হল দেশে সরকার অনুমোদিত ২৪টি স্থলবন্দর দিয়ে অনুমোদন থাকলেও মাত্র ১২টি বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বাণিজ্য হয়।  অন্যান্য বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য করার আগ্রহ কম। বেনাপোল বন্দর দিয়েই ব্যবসায়ীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ১৯ দশমিক ৮৮ লাখ টন  পণ্য। বিপরীতে রপ্তানি করা হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৫৩ লাখ টন পণ্য। একই ভাবে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে আমদানি করা হয়েছে ২১ দশমিক ৮১ লাখ টন পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ৪ দশমিক ১ লাখ টন পণ্য।  ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২০ দশমিক ৩৮ লাখ টন পণ্য আমদানি এবং ৩ দশমিক ১৭ লাখ টন পণ্য রফতানি হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২৭ দশমিক ৭৮ লাখ টন পণ্য আমদানি এবং ২ দশমিক ৯৭ লাখ টন পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই  বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়েছে ২২ দশমিক ১৩ লাখ টন পণ্য। আর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৪ দশমিক ১৯ লাখ টন পণ্য। মূলত পশ্চিমবাংলার রাজধানী কলকাতার সাথে কম দূরত্বের কারণে বাংলাদেশে ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ বলে জানিয়েছেন ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা।   বেনাপোল বন্দরে আমদানি রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেনাপোল বন্দরের পণ্য হ্যানডলিঙের পরিমাণও বেড়েছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২৬ দশমিক ১৫ লাখ টন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ২৯ দশমিক ১২ লাখ টন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৩২ দশমিক ১৩ লাখ টন , ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৩৩ দশমিক ১৭ লাখ টন ও ২০২১-২২ অর্থ বছরে বেনাপোল স্থলবন্দরে ৩৯ দশমিক ৯৩ লাখ টন পণ্য হ্যানডলিঙ করা হয়েছে। তবে বেনাপোল স্থলবন্দরে এখনো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন শুধু অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর বাণিজ্যর পরিমাণ কাঙ্ক্ষিতের   অর্ধেক হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর দূর্নীতি, হয়রানি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। বন্দর ব্যবসায়ীরা বলেন কাস্টমস ও বন্দরের ঘুষ বাণিজ্যের কারণে গত কয়েক বছর বেনাপোল কাস্টমস হাউসে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। বন্দরের ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে সিএনএফ CNF(cost net freight)  ফাইল প্রতি ঘুষ আদায় করে। ব্যবসায়ীরা এখানে কাস্টম ও সিএনএফের কাছে অসহায়।  বেনাপোলে ব্যবসায়ীদের এই আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না থাকলে বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে ও বাংলাদেশ ভারতের অন্যান্য  অনেক ব্যবসা হত উভয় দেশের মধ্যে এবং উভয় দেশের সরকারের এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।  বেনাপোল বন্দরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ব্যবসায়ীদের মতে বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। বেনাপোল বন্দরের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৪৫ হাজার টন পণ্যের। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে দুই লাখ টন আমদানি পণ্য নিয়ে ভারতের ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। এসব ট্রাকে শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণাধীন …

বাংলাদেশ ও ভারতের যোগাযোগ ও বাণিজ্যে বেনাপোল পেট্রাপোল স্থলবন্দরের গুরুত্ব। Read More »