Why should India protect the remaining Hindus and other religious and ethnic minorities in Bangladesh? Sitangshu Guha Sitangshu Guha, a columnist, a former college assistant-professor, a Human Rights defender, is playing a pivotal role against persecution of Hindus in Bangladesh and campaigned worldwide to save Bangladesh from the grasp of militant Islamists. Guha, a Bangladeshi, currently living in the USA has compiled and published several books. He can be reached via email: guhasb@gmail.com; and what’s app 001-646-696-5569. India should protect the remaining Hindus and other religious ethnic minorities of Bangladesh not only as a humanitarian obligation, but for its own interest, too. If the Islamists can eliminate the remaining 20 million Hindus in less than 30 years as has been predicted by Professor Barakat based on statistical analysis of the current trend of their exodus to India under duress, Bangladesh will become another Pakistan or Afghanistan. This reality should be a cause for concern not only in New Delhi but everywhere in the community of civilized nations. While all the non-Muslim minorities have been targeted for elimination, particularly the Hindus are infinitely more vulnerable than the Buddhists and Christians because the Islamists fear that the U.S., E.U., China, and Japan might be displeased, which in turn might hurt Bangladesh economically. The vicious campaign of eliminating Hindus and other religious-ethnic minorities has persisted regardless of which government has been in power, varying only degrees of intensity. Every government, including the Awami League, has seized millions of acres of land and businesses from the Hindus by using the Enemy (Vested) Property Act. The Digital Security Act (DSA), now the CSA (Cyber Security Act) is used against Hindus as a substitute to the blasphemy laws. Prime Minister Sheikh Hasina is reluctant to bring the minority persecutors to justice, thus, exactly like BNP-Jamaat, granted the Islamists complete impunity, in other words, licensed the Islamists to exterminate the religious and ethnic minorities and forced them to flee to India. If the Hindus and Buddhists of Bangladesh are protected, this twenty million strong body of population can in and of itself serve as a bulwark against the rising tide of militant Islam in the country. In the past, it was only Jatiya Party and BNP-Jamaat who promoted Islamic extremism by reinstating the Islamists in national politics and partnering with them in governance, but from 2013 Awami League has also partnered with the Islamists. As is well known this Kwami madrassah network has trained Islamic jihadists since the 1980s, now with the ARSA, ARSO, AQIS, IS-Bangla having joined forces with BNP-Jamaat, AL the country is headed toward a complete Talibanization. This process (the process of Talibanization) must be stopped; and in dealing with this dangerous issue, enabling the country’s 20 million religious & ethnic minorities, and empowering them economically and politically can be extremely helpful. As indicated, their inclusion in every government, semi-government, and private sector would constitute an obstacle to radicalizing schools, colleges, offices, and industries. In order to achieve this goal Prime Minister Hasina needs to be persuaded into taking the following steps, and India has a legitimate right to ask Prime Minister Hasina to act without further delay to stop minority exodus into India (They are entering India approximately @ 760 per day and is projected that the remaining 20 million will enter India in the next 30 years unless the process is stopped by taking necessary measures by the Bangladesh Government). To look for a solution Bangladesh PM can pass a ‘Minority Protection Act’ and a ‘Minority Commission’ immediately by making an effective use of her absolute majority in the Parliament. The minorities of Bangladesh are an extremely vulnerable group much like children and women, who are incapable of protecting themselves. Therefore, an extremely strong Minority Protection Law is required to ensure their safety and security. A separate National Minority Commission is indispensable because the existing National Human Rights Commission is unable to manage the daily incidents of human rights violations, persecution, and atrocities that the minorities are being subjected to. In addition to these, there are frequent large scale mayhems and pogroms being conducted. If a national Minority Commission is formed and empowered and mandated to directly call upon the RAB and High Court to act immediately as the pogroms unfold the minorities will be much better protected. Such a commission will also be able to produce a quarterly report of violence against minorities which can be shared with various nationals and international human rights groups as well as the foreign embassies in Dhaka. This will serve as a powerful deterrent against minority persecution. Bangladesh government should immediately start the process of prosecuting and punishing the minority persecutors in the proposed fast-track courts under the proposed Hate Crime & Speech Law, starting with the list of persecutors that was submitted to Sheikh Hasina government in April 2011 by the Judge Mohammad Shahabuddin Commission Report, a.k.a. the Probe Commission Report. And produce a comprehensive list of perpetrators of crime against the minorities from October 1972 through the Temple/Deities destruction mayhem on February 4-5, 2023, and then turn it over to the Fast-Track courts for prosecution, trial & punishment. The government’s deliberate failure to prosecute and punish the minority persecutors, in other words the government’s grating the Islamists’ impunity is the main reason the vicious campaign of religious & ethnic cleansing has persisted for decades. If the process of prosecution and trial begins violence against the minorities will decline drastically. The Bangladesh government should Stop incarcerating the minorities, particularly the Hindus, on fictitious charges of “hurting the Muslims’ religious sentiment” by using the Digital Security Act (aka, CSA) as a substitute for a Blasphemy Law. Reinstating the original constitution of the country (1972) will also help. Declaration of Islam as the State Religion has been interpreted by the common Muslims as a license for ridding the country of its non-Muslim population through violence. And, of course according to one religion the status of State Religion automatically renders the others inferior and it contradicts the principle of secular democracy that the country …
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত এবং ইন্দিরা গান্ধীর অনন্য ভূমিকা শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক ইন্দিরা গান্ধী ৩১শে অক্টোবর ১৯৭১ সালে লন্ডনে বলেছিলেন: “শরণার্থী সমস্যা ছোট করে দেখার উপায় নেই। বাংলাদেশের সমস্যা শুধু শরণার্থী সমস্যা নয়, বরং এর চেয়ে অনেক গভীর। ভারতের জন্যে শরণার্থী সমস্যা শুধু অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নয় বরং এটা ভারতের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার জন্যে বিরাট হুমকী। শরণার্থীদের ওপর যে বর্বরোচিত নির্যাতন হচ্ছে বিশ্ব তা জানে না, কিন্তু প্রতিদিন শরণার্থীরা ভারতে আসছে। মানুষ আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, কতদিন এই ভার আমরা বহন করতে পারবো? আমি বলছি, সেই সময় পেরিয়ে গেছে। আমরা আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছি, জানিনা কখন সেটা উদগীরণ শুরু করবে? আমরা সংযত, কিন্তু কতটা সংযত থাকবো বিষয়টি নির্ভর করছে, সীমান্তে কি ঘটছে এর ওপর। আমরা মনে করি বিশ্বসম্প্রদায়ের দায়িত্ব এর সমাধান খুঁজে বের করা। সবচেয়ে ভালো হয়, এবং সেটা মানবিক, তা হলো এর রাজনৈতিক সমাধান বা বাংলাদেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। শরতের শুরুতে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের পক্ষে আক্রমণাত্মক কূটনৈতিক সফরে পশ্চিমা বিশ্বে যান এবং যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে পক্ষে আনতে সমর্থ হন। এই দুই রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য এবং মার্কিন বলয়ের, কিন্তু বাংলাদেশ প্রশ্নে এরা ভারতকে সমর্থন দেয়। ঐসময় ইন্দিরা গান্ধীর বিরাট কূটনৈতিক বিজয় ছিল, ৯ই আগষ্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ২০ বছর মেয়াদী ‘বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি’। যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে এটা ছিল একটি বড় আঘাত। এরফলে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে চীনের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কমে যায়। চীন তখন পাকিস্তানকে নৈতিক সমর্থন বা সামান্য সামরিক সাহায্য দিলেও ভারত সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটায়নি। ইন্দিরা গান্ধী ওয়াশিংটন সফর করেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিক্সন তাকে ততটা আমলে নেননি। হোয়াইট হাইসের ‘রোজ গার্ডেনে’ বসেই ইন্দিরা গান্ধী প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন যে, আমেরিকা না চাইলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। ইন্দিরা গান্ধীর জীবনী ‘মাই ট্রুথ’ গ্রন্থে বাংলাদেশের ঘটনাবলী বিশদ বিবৃত আছে। ২৭শে মার্চ ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে পূর্ণ সমর্থন দেন। শরণার্থীদের আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়। পশ্চিমবাংলা, বিহার, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা সীমান্তে শরণার্থী শিবির খোলা হয়। নির্বাসিত বাংলাদেশী সেনা অফিসার ও স্বেচ্ছাসেবীরা ঐসব ক্যাম্প থেকে মুক্তিবাহিনীর সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ কাজে নিয়োজিত হয়। ভারতের ইষ্টার্ন কমান্ডের মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব এক ইন্টারভিউতে বলেছেন, বেসরকারিভাবে ভারত এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশে জড়িয়ে যায়, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে সেটা ঘটে অনেক পরে। তিনি জানান, এপ্রিল থেকেই ভারত মুক্তিবাহিনীকে ট্রেনিং দিতে শুরু করে। জেনারেল জ্যাকব আরও বলেন, এটা ছিল বাংলাদেশের ফাইট, ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ও মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে ভালবেসে সাহসের সাথে যুদ্ধ করেছে, আমরা পাশে ছিলাম। ইন্দিরা গান্ধী ও জেনারেল জ্যাকবের মন্তব্য থেকে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভারত কিভাবে জড়িয়ে পড়ে এর আঁচ পাওয়া যায়। প্রায় ১ কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অস্ত্র সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে কিন্তু ক্ষমতা পায়না। পূর্ব-পাকিস্তানে আন্দোলন শুরু হয়। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তান গণহত্যা শুরু করলে একইদিন দিবাগত রাতে (২৬ মার্চ ১৯৭১) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। তাকে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান ২৬শে মার্চ প্রথম রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু। পাকিস্তান গণহত্যা চালায়। ভারত সীমান্ত খুলে দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায় এবং মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেই শুরু। ভারত-পাকিস্তানের শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে এ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। তিনি হিসাব করেন যে, এই বিপুল শরণার্থীর ভার বহনের চেয়ে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে খরচ কম হবে। ফলশ্রুতিতে ভারত মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পরে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তান অকস্মাৎ ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। ভারত পাল্টা আঘাত হানে। শুরু হয় আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ। তিনটি ভারতীয় কর্পস তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে যুদ্ধ করে, সাথে প্রায় তিন ব্রিগেড মুক্তিবাহিনী। ভারতীয় বিমান বাহিনী এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব-পাকিস্তানের আকাশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। পশ্চিমেও প্রায় একই অবস্থা, ভারতীয় নেভী একই সময়ে প্রায় অর্ধেক পাকিস্তানী নৌবহর ও ট্যাঙ্কার ধ্বংস করে। জাতিসংঘে বারবার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সোভিয়েত ভেটোতে বানচাল হয়ে যায়। উপায়ন্তর না দেখে পাকিস্তান ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ব-পাকিস্তানে আত্মসমর্পণ করে। পশ্চিম রণাঙ্গনে ভারত সর্বাত্মক সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার পরও ইন্দিরা গান্ধী একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। যুদ্ধ শেষ। ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে মাথা নীচু করে আত্মসমর্পণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একসাথে এত সৈন্যের আত্মসমর্পণ এই প্রথম। লেঃ জেনারেল এএকে নিয়াজী এতে স্বাক্ষর করেন। পৃথিবীর বুকে ৭ম জনবহুল ও ৪র্থ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র বাংলাদেশ জন্ম নেয়। পরাজয়ের পূর্ব-মুহূর্তে পাকিস্তানিরা স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সংঘঠিত করে। ইন্দিরা গান্ধী ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে পাকিস্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়। তিনি ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে ফিরে আসেন। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। বাংলাদেশ জাতিসংঘে সদস্যপদ চায়, কিন্তু চীনের ভেটোতে সেটা হয়না। বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করে যে, দখলদার পাকিস্তান বাহিনী ৩০লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে এবং ২লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত কেড়ে নিয়েছে। পাকিস্তানের জন্যে এই পরাজয় ছিল অবমাননাকর ও লজ্জাজনক। পাকিস্তান তার অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা হারায়। টু-নেশান থিওরী মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পাকিস্তান এক তৃতীয়াংশ সৈন্য, এক চতুর্থাংশ বিমান বাহিনী এবং অর্ধেক নেভীর শক্তি হারায়। ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের অবসান ঘটে। জুলফিকার আলী ভুট্টো ক্ষমতাসীন হন। ১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তি হয়। ভারত যুদ্ধবন্দীদের ১৯২৫ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী তদারকি করে। ৯৩০০০ বন্দিকে মুক্তি দেয়, এমনকি যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ২০০ সেনাকেও ক্ষমা করে দেয়। একই সাথে পশ্চিম রনাঙ্গনে দখলকৃত ১৩০০০ বর্গ-কিলোমিটার ভূমি ফেরত দিয়ে দেয়। এই বিশাল পরাজয়ের গ্লানি ঘুচাতে এবং আর একটি ভারতীয় আক্রমণ ঠেকাতে ভুট্টো পারমাণবিক বোমা কর্মসূচীতে হাত দেন। বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডটি ভারতের সৃষ্টি। কথাটা এভাবেও বলা যায়: হিন্দু-ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে। বোনাস হিসাবে তাই বাংলাদেশে হিন্দুদের বলা হয় ভারতের দালাল। এটা সার্বজনীন উপাধি। আবার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার কথা? বাস্তবতা ঠিক উল্টো, দায়সারা গোছে ভারতকে আমরা স্মরণ করি। ১৯৭৫-১৯৯৬ পর্যন্ত ভারত শত্রু ছিলো। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা এক অনবদ্য ইতিহাস। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামসহ সমগ্র ভারতবাসী, ইন্দিরা গান্ধী তথা ভারত সরকার এবং বিএসএফ ও ভারতীয় সৈন্যদের কিংবদন্তী সাহায্য-সহযোগিতা ও আত্মত্যাগের সফল পরিণতি বাংলাদেশ। এটা ঠিক ভারতের সামরিক কৌশলগত স্বার্থ ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের জন্যে ভারতবাসীর এতটা ত্যাগ ও ভালবাসা বিশ্বের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। মোদ্দা কথা, স্বাধীনতাকামী জনগণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় ভারত আমাদের (বাংলাদেশের) স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। অনেকটা না-চাইতে এবং কিছু বোঝার আগেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। হয়ত, এ কারণে বাংলাদেশিরা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান খাটো করে দেখে, বা ততটা স্বীকার করতে চায়না। অথবা কটু কথা বলে? বাঙ্গালী নাকি ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝেনা’! যদি মুক্তিযুদ্ধ অন্তত: নয় মাস না হয়ে নয় বছর হতো; প্রতি ঘরে ঘরে, একজন শহীদ বা বীরঙ্গনা থাকতো তাহলে হয়তো বাঙ্গালী …
বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষঃ একটি বিশ্লেষণ
বিমল প্রামাণিক ‘পাকিস্তানি বাধা অতিক্রম করে মধ্যবিত্তের বিকাশের পথ যখন উন্মুক্ত হল তখন তার সামনে সমস্যা দেখা দিল আরেকটি। ভারত বড় প্রতিবেশী। শুধু আয়তনে নয়, অর্থনীতিসহ সব দিক দিয়েই বাংলাদেশের তুলনায় ভারত অগ্রসর। আর ভয় সেখানেই। এভয় হল ক্ষুদ্র প্রতিবেশীর বৃহৎ সম্পর্ক-ভীতি। তার উপর দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাথে অবিশ্বাস বা বিদ্বেষের যে পটভূমিতে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়েছিল মাঝের গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় তা দূরীভূত হয়েছে এটা মনে করার কোন কারণ নেই। ফলে স্বাধীনতার পরে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত সম্পর্কে সন্দেহের ভাব যখন দেখা দিল মধ্যবিত্তের মনে, তখন স্বাভাবিকভাবে সম্প্রদায়গত বিভেদের ইতিহাসও সামনে এসে দাঁড়াল। আর এদের সাথে একাংশের ভিতর পাকিস্তানের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বদলে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তারও অস্বাভাবিক মনে হল না। আর ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শীতলতা যত বেড়েছে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক তত ঘনিষ্ঠতর হয়েছে। বস্তুত বাঙালি মধ্যবিত্তের মাঝে একদিকে মুক্তিযুদ্ধ বা তার আগের অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে ভারত সম্পর্কে সন্দেহ-অবিশ্বাস (যা অতীত সম্প্রদায়গত বিভেদের অভিজ্ঞতা দ্বারা পরিপোষিত) – এই দু’য়ের টানাপোড়েন বিদ্যমান। আর এই টানাপোড়েনেই বাঙালি না মুসলমান, না মুসলমান বাঙালি, না বাঙালি মুসলমান এই দোলাচলে অভিব্যক্ত।’ ১ আজকের বাংলাদেশের মুসলমান সমাজে ভারত বিদ্বেষের যে প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা কোন নতুন বিষয় নয়। এর শিকড় দ্বিজাতিতত্ত্বের গভীরে নিহিত ছিল। এর প্রকট প্রকাশ ধরা পরে হিন্দু বিদ্বেষের ঘটনাবলীর ধারাবাহিকতায়। পাকিস্তানের ‘যোগাযোগ মন্ত্রী’ শ্রী যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল ১৯৫০ সালেই তার সুদীর্ঘ ইস্তফাপত্রে পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সরকারের হিন্দু-বিতাড়নের নীতি ও কার্যকলাপের যে বিস্তারিত বিবরণ লিখে গেছেন তা থেকে কিঞ্চিৎ এখানে উদ্ধৃত করা হলঃ “Pakistan `Accursed’ for Hindus Now this being in brief the overall picture of Pakistan so far as the Hindus are concerned, I shall not be unjustified in stating that Hindus of Pakistan have to all intents and purposes been rendered “stateless” in their own houses. They have no other fault than that they profess Hindu religion. Declarations are being repeatedly made by Muslim League leaders that Pakistan is and shall be an Islamic State. Islam is being offered as the sovereign remedy for all earthly evils. In the ruthless dialectics of capitalism and socialism you present the exhilarating democratic synthesis of Islamic equality and fraternity. In that grand setting of the Shariat Muslims alone are rulers while Hindus and other minorities are jimmies who are entitled to protection at a price, and you know more than anybody else, Mr. Prime Minister, what that price is. After anxious and prolonged thought I have come to the conclusion that Pakistan is no place for Hindus to live in and that their future is darkened by the ominous shadow of conversion or liquidation. The bulk of the upper class Hindus and politically conscious scheduled castes have left East Bengal. These Hindus who will continue to stay in the accursed province and for that matter in Pakistan will, I am afraid, by gradual stages and in a planned manner be either converted to Islam or completely exterminated. It is really amazing that a man of your education, culture and experience should be an exponent of a doctrine fraught with so great a danger to humanity and subversive of all principles of equity and good sense. I may tell you and your fellow workers that Hindus will never allow themselves, whatever the thereat or temptation, to be treated as jimmies in the land of their birth. Today they may, as indeed many of them have already done, abandon their hearths and homes in sorrow but in panic. Tomorrow they will strive for their rightful place in the economy of life. Who knows what the womb of the future is? When I am convinced that my continuance in office in the Pakistan Central Government is not of any help to Hindus I should not, with a clear conscience, create the false impression in the minds of the Hindus of Pakistan and peoples abroad that Hindus can live there with honour and with a sense of security in respect of their life, property and religion. This is about Hindus.”2 পাকিস্তান সরকারের যে ভারত তথা হিন্দু বিদ্বেষী নীতি ও কার্যকলাপ এবং তার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই ভারতের বিরুদ্ধে মাত্র চব্বিশ বছরের (১৯৪৭-১৯৭১) মধ্যেই তিনবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েই ক্ষান্ত হয়নি, লাগাতার হিন্দু বিরোধী দাঙ্গা ও কালা কানুন ( Enemy Property ordinances and laws উল্লেখযোগ্য) জারী করে হিন্দু নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখায় পাকিস্তানের মুসলমান সম্প্রদায় ভারতকে তাদের প্রধান শত্রু হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। এর প্রধান সুবিধাভোগী ছিল উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও ক্ষমতাশালী মুসলমান সম্প্রদায়। ফলে পূর্ব পাকিস্তান ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশে যারা শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন বা করছেন তারা ভারত বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হবেন কী করে ! ভারত বিদ্বেষের মধ্যেই যাদের জন্ম এবং বংশ পরম্পরায় বেড়ে ওঠা সেই পাকিস্তানি সংস্কৃতির আবহে, তা থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে উত্তরণ ঘটানোর জন্য যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গঠনের উদ্যোগ প্রয়োজন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রারম্ভেই তার একটা চেষ্টার অঙ্কুর দেখা গেলেও অচিরেই তা রুদ্ধ হয়ে যায়। আর ১৯৭৫-এর কালান্তক ঘটনার পর বাংলাদেশের শরীরে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা জাঁকিয়ে বসতে কাল বিলম্ব করেনি। বিশিষ্ট গবেষক নুহু-উল-আলম লেনিন ‘সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ’ সমকালীন বাংলা সাহিত্যে যে থাবা বিস্তার করেছে, তার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লিখেছেন, “সাম্প্রদায়িক উন্মাদনায় সৃষ্ট পাকিস্তানের সমকালীন কবি- সাহিত্যিকরা অনেকেই তাই সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে উপেক্ষা করতে পারেননি। তাঁদের কবিতা, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক সবকিছুতেই এর ছাপ পড়েছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সমাজ-রাষ্ট্র কাঠামোতে নানা পরিবর্তন সাধিত হলেও সাম্প্রদায়িক চেতনার সাহিত্যিকেরা ধর্মীয় ও পশ্চাদপদ রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে আসতে পারানি। … কিন্তু ১৯৭৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদী চেতনার প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়।” … আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান কবি “আল মাহমুদ পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা সবকিছু মূল্যায়ণ করেছেন। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের সশস্ত্র সংগ্রামকে তিনি যেমন সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক মনোভাবের দ্বারা সমর্থন করেছেন, তেমনি সংস্কৃতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠতে পারেননি। বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকর্মকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি সব কিছুতে ইসলাম আর মুসলমান লেবেল এঁটে দিয়েছেনঃ বাংলাদেশ মূলত একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এখানে সাড়ে এগারো কোটি নর-নারীর মধ্যে দেড় কোটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃস্টান বাদে আর সকলেই ইসলাম ধর্মাবলম্বী । ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক ইসলামের বিধিনিষেধ সমূহ এখানকার জনজীবনে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিপালিত হচ্ছে। এমনকি অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও। এখানকার আদব-কায়দা, প্রাত্যহিক সামাজিক বিনিময়ে, পোশাক-আশাকে, খাদ্য রুচিতে এবং সর্বোপরি সাধারণ সামাজিক সম্মিলনের ক্ষেত্রগুলোতেও অচেতনভাবে হলেও ইসলামের হালাল-হারাম পাত্তা পেয়ে আসছে। পারস্পরিক সাক্ষাৎ মুহুর্তে আমরা …
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঃ বাঙালি মুসলমানদের মনে সাদরে স্বীকৃতি পেল না কেন?
বিমল প্রামাণিক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হওয়ার অব্যবহিত পর থেকেই হিন্দু জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনে দারুনভাবে প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে, সাথে সাথে মেয়েদের নিরাপত্তাও। দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লুটপাট এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে বহুসংখ্যক মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। আমার জানা মতে একটি মুসলমান পরিবারও পাইনি যারা হিন্দুদের পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন বা আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। সুদীর্ঘকাল একই সাথে একই গ্রামে বসবাস করে যাদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল, সে সকল মুসলমান পরিবারও যেন কেমন হয়ে গেল পূর্ববঙ্গ স্বাধীন ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হওয়ায়। বঙ্গ বিভাজন করে ইসলামি রাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তান তাদের মোহগ্রস্ত ও আত্মহারা করে ফেলেছিল। তাদের কাছে অন্য আর কিছুর অগ্রাধিকার ছিল না। তা না হলে দেশভাগের মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই এক কোটিরও অধিক হিন্দু জনগোষ্ঠী উদ্বাস্তু হয়ে কিভাবে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হল ? পাকিস্তানের জন্ম থেকেই পূর্ববঙ্গের মুসলমান জনগোষ্ঠী এবং সরকার ইসলামি ভ্রাতৃত্ববোধের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল। সমস্ত ইসলামি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং ভারতকে শত্রু-রাষ্ট্র হিসেবে শুধু জ্ঞান করাই নয়, চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসনের যাঁতাকলে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক আন্দোলন মাথাচাড়া দেয়। শেখ মুজিব এই রাজনীতিকেই আঁকড়ে ধরেন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির মোড়কে জনগণের সম্মুখে রেখে এমন একটা মোহসৃষ্টি করতে সক্ষম হন, যা ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে তার দলের ব্যাপক সাফল্য এনে দেয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নৃশংস মুজিব হত্যার পরবর্তী বাংলাদেশে মুসলমান জনগোষ্ঠীর যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহের প্রকাশ আমরা দেখলাম তা তো বাঙালি জাতীয়তাবাদী চরিত্র নয়, সেটা হল উগ্র ইসলামি জাতীয়তাবাদী বৈশিষ্ট্যের ছাপ যা পাকিস্তান আমলের চেয়েও কট্টর ইসলামি, কুরুচিকর সাম্প্রদায়িকতায় জর্জরিত। পাকিস্তানের ইতিহাসে কখনও বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রভাব দেখা যায়নি, কারণ পাকিস্তানের রাজনীতির ভিত্তিই ছিল দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং বঙ্গ বিভাগও সেই দ্বিজাতিতত্ত্ব মেনেই হয়েছে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ পর্বের পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ইতিহাসে দেখা যায়, ধীর এবং নিশ্চিত পদক্ষেপে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে অবদমিত, শোষিত বাঙালি মুসলমানের মধ্যে একটা নবচেতনার উত্থান ঘটে যায়, যার ফলে তিনি পাকিস্তানি ক্ষমতাকেন্দ্রে শুধু নাড়াই দেননি, দিয়েছিলেন ক্ষমতা ভাগের বিকল্পের সন্ধান। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী এবং সামরিক জান্তা এই বিষয়টিকে একেবারেই মেনে নিতে পারেননি তারা মগ্ন ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান দ্বারা শাসিত এক অঙ্গরাজ্য হিসাবে দমিয়ে রাখার ক্ষুদ্র এবং স্বার্থপর চিন্তায়। আর সেকারণেই শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয়ে যায় পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার এক গণসংগ্রাম। শেখ মুজিব জানতেন তার দল আওয়ামি লিগের মিনার গড়ে উঠেছে মুসলিম লিগের ভিতের উপর যার আদর্শগত ভিত্তি দ্বিজাতিতত্ত্ব। এই দলকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আদর্শে উত্তরণ ঘটানো অসম্ভব কাজ। তাই তিনি সেপথে যাননি। তিনি ছাত্র সমাজের উপর ভরসা রাখলেন। কিন্তু দেশের যে জনতা মুজিবকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করলেন তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চাওয়া। তারা আওয়ামি লিগের ‘ছয়–দফা’ দাবির মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ন ও অধিকারের স্বপ্ন দেখেছিল। তারা পাকিস্তান খন্ডিত হওয়া বা পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেনি। আর স্বাধীন বাংলাদেশ তাদের কল্পনায়ও ছিল না। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পরবর্তী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ গণহত্যার পূর্ব পর্যন্ত এই প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষাঙ্গন ও গ্রামে-গঞ্জে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একটা ধারণা নিয়ে প্রধানত ছাত্র-যুবকদের মধ্যে একটা উন্মাদনা লক্ষ করা গেল। সবটাই পাকিস্তান-বিরোধী বাঙালি জাতীয়তাবাদের উচ্ছ্বাসে ভরা। বাঙালি সংস্কৃতি- নির্ভরশীলতার ভিত দুর্বল থাকায় পাকিস্তান-বিরোধী মানসিকতাই এখানে প্রাধান্য পেল। ফলে পাকিস্তানি মানসিকতা থেকে বাঙালি চেতনায় প্রকৃত উত্তরণ ঘটল না। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণা অচিরেই উবে গেল যখন ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ থেকে পাকিস্তানি সেনার গণহত্যা দ্রুত সারা পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়লো। আমি তখন রাজশাহী- বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এস.সি. (গণিত) ক্লাসের ছাত্র। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় ঠুনকো বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারণার পরিণতি নিম্নরূপঃ বাঙালি মুসলমানরা আওয়ামি লিগকে ভোটবাক্সে আশাতীত সাফল্য পেতে এগিয়ে এসেছিল এই ভেবে যে তারা ন্যায্য অধিকার পাবে – যা আওয়ামি লিগ স্বপ্ন দেখিয়েছিল। তারা পাকিস্তান ভেঙ্গে ফেলার জন্য ভোট দেয়নি। ফলে পাক-বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে তারাও এক বড় অংশ পাকিস্তানের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গেল। শুধু মুসলিম লিগ জামাতে ইসলামি নয়, আওয়ামি লিগ সমর্থকরাও অনেকেই সামিল হয়ে গেল পাকিস্তান বাঁচাতে। এটা পাকিস্তানের তেইশ বছর বাঙালি মুসলমানদের মগজ ধোলাই-এর ফল যা বিভিন্ন দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সম্পত্তি দখল ও লুটপাট ও হিন্দু-বিতাড়নের ঘটনার মধ্য দিয়ে এতদিন প্রকাশ পেয়েছে। এটা ছিল পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার আক্রোশের বহিঃপ্রকাশও। হিন্দু-মুসলমানের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব, সুসম্পর্ক এবং পড়শি বা একই গ্রামের অধিবাসী বংশ পরম্পরায় পরিচিত সম্পর্ককে কী অনায়াসে রাতারাতি ভেঙ্গে ফেলা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ না এলে এটা হয়ত কোনদিনই আমার অভিজ্ঞতায় আসত না। সমাজতত্ত্বের গবেষক বিশিষ্ট পণ্ডিতজন হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে কিছু মতামত ব্যক্ত করলেও দ্বিজাতিতত্ত্বের মত যে বিষধর চিন্তা বাঙালি মুসলমানের রক্ত-মজ্জায় মিশে আছে তা পরিশ্রুত হওয়া মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। বিশিষ্ট চিন্তক ও প্রাবন্ধিক আহমদ ছফার প্রণিধানযোগ্য মতামত নিম্নে উদ্ধৃত হলঃ “ইতিহাসে বিশ-ত্রিশ বছর কোন দীর্ঘ সময় নয়। বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্রযন্ত্রটি প্রতিষ্ঠা করেছে সে রাষ্ট্রের সংকটের অন্ত নেই, কোথায়ও কোন দিক নির্দেশনার চিহ্ন পরিদৃশ্যমান নয়। সামাজিক সভ্য এবং ধর্মীয় কুসংস্কার সাম্প্রতিক কালে এমন প্রচন্ড আকার নিয়ে দেখা দিয়েছে, অনেক সময় মনে হয়, এই জাতি মেরুদণ্ডের উপর থিতু হয়ে কোনদিন দাঁড়াতে পারবে না। মধ্যযুগীয় ভূত এই জাতিকে এমনভাবে আষ্টে-পৃষ্টে বেঁধে রেখেছে তার নাগপাশ কখন কিভাবে ছাড়াতে পারবে একথা এখন একরকম চিন্তা করাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান অস্থিরতা এবং মধ্যযুগীয় ধর্মীয় বদ্ধ মতের পুনরুত্থানের একটি কারণ আমি নির্দেশ করতে চাই। শুরু থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে দলটি গিয়েছিল তার আদর্শিক বৃত্তটি বিশ্লেষণ করলেই সেটা ধরা পড়বে। আওয়ামি লিগ বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। অন্যান্য দলও স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেছে। কিন্তু আওয়ামি লিগের ভূমিকাটি যে প্রধান তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই আওয়ামি লিগের কী পরিচয় ? আওয়ামি লিগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ভাসানী ছিলেন আসাম মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট। হোসেন সহীদ সোহরাওয়ার্দী নিখিলবঙ্গ মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট এবং শেখ মুজিবর রহমান নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক। সুতরাং একথা বলা একটুও অযৌক্তিক হবে না যে, মূলত আওয়ামি লিগ মুসলিম লিগের একটা অংশ। পাকিস্তানের সঙ্গে বাস করে তাদের ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারছিল না বলে আওয়ামি লিগকে শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সূচনা করতে হয়েছিল। একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন তাৎপর্যের দিক দিয়ে দুটি এক জিনিস নয়। এই আওয়ামি লিগের আন্দোলন যতই বেগ এবং আবেগ সঞ্চয় করেছে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের নেতৃত্ব কবুল করে নিয়েছিল। কিন্তু সমাজের ভিতরে তারা কোন নতুন মূল্যচিন্তার জন্ম দিতে পারেনি; নতুন সংস্কৃতি নির্মাণ করতে পারেনি। তারা সেক্যুলারিজমের নীতি শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল।” ১ এই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু উপযোগী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সমাজতাত্ত্বিক অধ্যাপক আবুল বারকাত-এর বিশ্লেষণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সামাজিক রূপান্তরের একটা পরিষ্কার (স্বচ্ছ) ধারণা পেতে সাহায্য করবে। তিনি মনে করেন, “১. ১৯৪৭-এ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি। ২. …
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঃ বাঙালি মুসলমানদের মনে সাদরে স্বীকৃতি পেল না কেন? Read More »
বাংলাদেশে নির্বাচন
শিতাংশু গুহ, নিউ ইয়র্ক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: বাংলাদেশে ইতিহাসে মাত্র তিনবার পপুলার ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৮-সালে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তাঁর ক্ষমতা বৈধ করতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তিনি ৭৬.৬% ভোট পেয়ে জয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বী এমএজি ওসমানী পান ২১.৭%। জিয়া হত্যার পর ১৯৮১ সালে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, বিএনপি’র আবদুস সাত্তার ৬৫.৫% ভোট পেয়ে জয়ী হ’ন। প্রতিদ্বন্দ্বী ড: কামাল হোসেন পান ২৬% ভোট। এরপর সাত্তারকে সরিয়ে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এটি বৈধ করতে ১৯৮৬ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরশাদ ৮৪.১% ভোট পেয়ে জয়ী হন, ভোট পরে ৫৪.৯%। এ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না! ১৯৯১ সাল থেকে মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকার চালু হওয়ায় প্রত্যক্ষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নেই, সংসদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকেন। রেফারেন্ডাম: বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনবার জাতীয় রেফারেন্ডাম, যা ‘হ্যাঁ/না’ ভোট নামে সমধিক পরিচিত। জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ একবার করে তাঁদের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে কিনা তা যাচাই করতে ১৯৭৭ ও ১৯৮৫ সালে ‘হ্যাঁ/না’ ভোট আয়োজন করেন। বলা বাহুল্য, এসব ভোট সবসময় সামরিক শাসকদের অনুকূলে যায়। ১৯৯১ সালের ব্যতিক্রমধর্মী রেফারেন্ডামটি ছিল সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে আসার জন্যে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘হ্যাঁ/না’ ভোট করেন ৩০শে মে ১৯৭৭। এতে তারপক্ষে ভোট পরে ৯৮.৯%। মোট ভোট পড়েছিল ৮৮.১%। দ্বিতীয় ‘হ্যাঁ/না’ ভোট আয়োজন করেন হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, ২১শে মার্চ ১৯৮৫। তারপক্ষে ভোট পরে ৯৪.৫%। মোট ভোট পড়েছিল ৭২.২%। বলা বাহুল্য, উভয়ক্ষেত্রে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। তৃতীয় রেফারেন্ডাম হয় ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৯১। সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে আসার পক্ষে ভোট পরে ৮৩.৬%, বিপক্ষে ১৫.৫%, মোট ভোট পড়েছিল ৩৫.৫%। একই সংশোধনীতে প্রেসিডেন্ট সংসদে পরোক্ষ ভোট নির্বাচিত হবার বিধান এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদটি বিলুপ্ত করার পক্ষে জনগণ মত দেন। জাতীয় (সংসদ) নির্বাচন: বাংলাদেশে প্রথম সংসদ নির্বাচন হয় ৭ই মার্চ ১৯৭৩ সালে। আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে। এগার জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়। ভোট পরে ৫৫%। মহিলা রিজার্ভ ১৫টি আসন। এ নির্বাচনে কারচুপি’র অভিযোগ উঠে, তবে সেটি কেন্দ্রভিত্তিক, জাতীয়ভাবে কিছু ছিল না। নির্বাচনটি ভালোই ছিল, গ্রহণযোগ্য ছিল। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৮ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯। বিএনপি ২০৭ আসনে জেতে, আওয়ামী লীগ ৩৯। ভোট পরে ৫১%। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। এ নির্বাচনে জাতি প্রথম ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং দেখে, একই সাথে ভোটের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়। তৃতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ৭ই মে ১৯৮৬ সালে। জাতীয় পার্টি ১৫৩, আওয়ামী লীগ ৭৬, জামাত ১০টি আসন লাভ করে। ভোট পরে ৬১%। বিএনপি ভোট বয়কট করে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। চতুর্থ সংসদ নির্বাচন ৩রা মার্চ ১৯৮৮। জাতীয় পার্টি ২৫১, সম্মিলিত বিরোধী জোট ১৯টি আসন লাভ করে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ২য়, ৩য় ও ৪র্থ সংসদ নর্বাচনের ফলাফল বিশ্বাসযোগ্য ছিল না, সামরিক স্বেচ্ছাচারী সরকারের ইচ্ছেমত ফলাফল ঘোষণা হয়। পঞ্চম সংসদ নির্বাচন হয় ১৩ই জানুয়ারী ১৯৯১। বিএনপি ১৪০, আওয়ামী লীগ ৮৮, জাতীয় পার্টি ৩৫, জামাত ১৮টি আসনে জেতে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ভোট পরে ৫৫.৪৫%। এ নির্বাচনটি ভাল এবং গ্রহণযোগ্য হয়। শেখ হাসিনা সূক্ষ্ণ কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন, গ্রাহ্য হয়নি। ১৯৯৬-এ দু’টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচন, আওয়ামী লীগ বয়কট করে, বিএনপি জয়ী হয়, আসন ২৭৮। আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে ‘তত্বাবধায়ক সরকার’ দাবি আদায় করে। জুনে আবার সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬, জাতীয় পার্টি ৩২, জামাত ৩, ইসলামী ঐক্যজোট ১, জাসদ (রব) ১, স্বতন্ত্র ১টি আসন লাভ করে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ভোট পরে ৭৫,৬%। ১৫ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচনটি জাতির জন্যে কলঙ্ক। অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে, যদিও বিএনপি ভোট পায় ৪০.৯৭%, আওয়ামী লীগ ৪০.১৩%। আসন, বিএনপি ১৯৩, আওয়ামী লীগ ৬২, জামাত ১৭, ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১৪, জাতীয় পার্টি ৪, ইসলামী ঐক্যজোট ২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ১, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ১টি আসন। স্বতন্ত্র ৬, ভোট পরে ৭৪.৯৭%। ২০০৮-এ নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বিএনপি ৩০, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ২৭, জাসদ ৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ২, জামাত ২, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১, স্বতন্ত্র ৪, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি আসন। মোট ভোট পরে ৮৭.১৩%। মহিলা রিজার্ভ ৪৫টি আসন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত: এটি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ৫ই জানুয়ারি ২০১৪, আওয়ামী লীগ ১৫৩টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়লাভ করে। বিএনপি বয়কট করে। ভোট পরে ৩৯.৫৮%। মোট আসন, আওয়ামী লীগ ২৩৪, জাতীয় পার্টি ৩৪, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬, জাসদ ৫, তরিকত ফেডারেশন ২, জাতীয় পার্টি (মন্জু) ২, বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্ট ১, স্বতন্ত্র ১৬টি আসন। মহিলা রিজার্ভ ৫০টি আসন। এটি ‘বিনে ভোটের’ নির্বাচন বলে স্বীকৃতি পায়। এগারতম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৩০শে ডিসেম্বর ২০১৮। প্রদত্ত ভোট ৮০.২%। মহিলা রিজার্ভ ৫০টি আসন। জাতীয় পার্টি ২৬, বিএনপি ৭, আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন। বাকি অন্যান্য। এ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে, এবং দিনের ভোট রাতে হয় বলে পরিচিতি লাভ করে। দ্বাদশতম সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ই জানুয়ারী ২০২৪। আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ২৯৯টি আসনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। প্রদত্ত ভোট ৪০%, গুজব রয়েছে ১০%’র নীচে ভোট পড়েছে। বিএনপি বয়কট করেছে। স্বতন্ত্র ৬১টি আসন। এটিকে ‘ডামি ভোট’ বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ নির্বাচন নিয়ে ঢাকার মাঠে সরকারের পক্ষে ভারত-রাশিয়া-চীন এবং অন্যপক্ষে আমেরিকা-ইউরোপ-কানাডা বা পশ্চিমা বিশ্ব খেলছে। Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.
বাংলাদেশ ও ভারতের যোগাযোগ ও বাণিজ্যে বেনাপোল পেট্রাপোল স্থলবন্দরের গুরুত্ব।
শঙ্কর সরকার, বাংলাদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের চীন-ভারত মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তার দেওয়া সম্বর্ধনা সভায় বলেন বন্ধু বদল করা যায় কিন্তু প্রতিবেশী কখনো বদলানো যায় না। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে তাঁর সরকারের এবং ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। শুধু তাই নয় ভারতীয় সব সরকারি কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতগণ সব সময়ই একই বক্তব্য রাখেন। ভারতীয় প্রতিনিধিগণ প্রায়শই বলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যেভাবে বাংলাদেশের পাশে ছিল ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের সব উন্নয়নমূলক কাজে ভারত সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। সেই কারণেই একটি সুপ্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিষয়টি উভয় দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বেনাপোল-পেট্রাপল স্থলবন্দর। বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে ভারতীয় অংশকে বলা হয় পেট্রাপল স্থলবন্দর এবং বাংলাদেশ অংশের বন্দরকে বলা হয় বেনাপোল বন্দর। ভারতের পেট্রাপোল ও বাংলাদেশের বেনাপোল এই দুই মিলে তৈরি হয়েছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর করিডোর। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা থেকে পেট্রাপোল বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। বেনাপোল পেট্রাপল স্থলবন্দর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ও ভারতের স্থল-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্রস্থল। দুই দেশের মধ্যেকার স্থল-বাণিজ্যের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ সম্পাদিত হয় এই করিডোর বন্দর দিয়ে। শুধু স্থল-বাণিজ্যের নয় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার বিবিধ প্রয়োজনে প্রতিবছর প্রায় ২২ লাখ মানুষ এই স্থলপথে যোগাযোগ ও যাতায়াত করে। বাংলাদেশ ও ভারতের উভয় দেশের আমদানি রফতানির জন্য, পণ্য পরিবহনের জন্য এবং যাত্রী পারাপারের সুবিধা সহজ করতে দুই দেশের মধ্যে এখানে চালু করা হয়েছে সমন্বিত চেকপোস্ট। বাংলাদেশ ও ভারতের যাতায়াতকারী ২২ লাখ মানুষের মধ্যে শুধু টুরিস্ট ভিসা নয়, চিকিৎসা, পড়াশোনা, বাণিজ্য, ইত্যাদি বিষয়ে মানুষ এই পথে যাতায়াত করে। ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের তথ্যমতে শুধুমাত্র ঢাকা থেকেই প্রায় বছরে ১৫ লাখ ভিসা প্রদান করা হয় যা সারা বিশ্বে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিসা প্রদানে সর্বাধিক। বেনাপোল পেট্রাপোল সীমান্ত স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতি কাপড়, যানবাহনের চেসিস(chassis),কাঁচামাল, কাঁচাতুলা, ইস্পাত, লোহা, রাসায়নিক রঞ্জক, সিনথেটিক কাপড়, মোটর সাইকেল, হালকা যানবাহন, শিশুখাদ্য, খাদ্যশস্য, মিল কলকারখানার মেশিন ও ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ও নানা ধরনের পণ্য আমদানি করা হয়। বিপরীতে এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে তৈরি-পোশাক, ব্যাগ, ব্রিফকেস, পাটের সুতা, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, ইত্যাদি পণ্য। কিছুদিন আগেই ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর এলাকা সফরে আসেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সফরে তিনি স্থলবন্দরের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ঐ সময় তিনি পেট্রাপোলে একটি কার্গো গেট উদ্বোধন করার সময় তিনি বলেছিলেন ভারতীয় পেট্রাপল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ শুধু দেশটির অর্থনীতিকেই শক্তিশালী করছে না একই সাথে তা সীমান্তে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন আমাদের নীতিমালা পরিষ্কার। আমারা চাই সীমান্ত এলাকায় একটি শক্তিশালী অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি গড়ে উঠুক যাতে করে ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তের দুই স্থলবন্দর পথেই বাণিজ্য অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর বাণিজ্য খাতে “গেম চেঞ্জার” হয়ে উঠতে পারে বলেও বিভিন্ন সময়ে সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। ভারতীয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের Land Ports Authority of India (LPAI) তথ্য অনুযায়ী ভারতের পেট্রাপোল দিয়ে বাংলাদেশে – ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের আকার প্রতিবছর বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এই স্থলবন্দরের বাণিজ্যর পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৭৯৯ কোটি রুপি। ২০২০-২১ অর্থ বছরে করোনা মহামারীর কারণে বাণিজ্যর পরিমাণ কমলেও অন্যান্য বছরে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বাণিজ্য হয়েছে ২১ হাজার ৩৮০ কোটি রুপি। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২০ হাজার ৬০৫ কোটি রুপি। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১৫ হাজার ৭৭১ কোটি রুপি। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২৯ হাজার ৪০৬ কোটি রুপি বাণিজ্য হয়েছে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। আর চলতি অর্থ বছরে এখন পর্যন্ত ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য হয়েছে ১৯ হাজার ৬৩১ কোটি রুপি। আশা করা যাচ্ছে বর্তমান অর্থ বছরের শেষ নাগাদ বাণিজ্য ৪০ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ-ভারত স্থলবন্দর আমদানি রপ্তানি কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমানের ভাষ্য হল দেশে সরকার অনুমোদিত ২৪টি স্থলবন্দর দিয়ে অনুমোদন থাকলেও মাত্র ১২টি বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বাণিজ্য হয়। অন্যান্য বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য করার আগ্রহ কম। বেনাপোল বন্দর দিয়েই ব্যবসায়ীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ১৯ দশমিক ৮৮ লাখ টন পণ্য। বিপরীতে রপ্তানি করা হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৫৩ লাখ টন পণ্য। একই ভাবে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে আমদানি করা হয়েছে ২১ দশমিক ৮১ লাখ টন পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ৪ দশমিক ১ লাখ টন পণ্য। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২০ দশমিক ৩৮ লাখ টন পণ্য আমদানি এবং ৩ দশমিক ১৭ লাখ টন পণ্য রফতানি হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২৭ দশমিক ৭৮ লাখ টন পণ্য আমদানি এবং ২ দশমিক ৯৭ লাখ টন পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়েছে ২২ দশমিক ১৩ লাখ টন পণ্য। আর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৪ দশমিক ১৯ লাখ টন পণ্য। মূলত পশ্চিমবাংলার রাজধানী কলকাতার সাথে কম দূরত্বের কারণে বাংলাদেশে ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ বলে জানিয়েছেন ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। বেনাপোল বন্দরে আমদানি রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেনাপোল বন্দরের পণ্য হ্যানডলিঙের পরিমাণও বেড়েছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২৬ দশমিক ১৫ লাখ টন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ২৯ দশমিক ১২ লাখ টন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৩২ দশমিক ১৩ লাখ টন , ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৩৩ দশমিক ১৭ লাখ টন ও ২০২১-২২ অর্থ বছরে বেনাপোল স্থলবন্দরে ৩৯ দশমিক ৯৩ লাখ টন পণ্য হ্যানডলিঙ করা হয়েছে। তবে বেনাপোল স্থলবন্দরে এখনো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন শুধু অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর বাণিজ্যর পরিমাণ কাঙ্ক্ষিতের অর্ধেক হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর দূর্নীতি, হয়রানি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। বন্দর ব্যবসায়ীরা বলেন কাস্টমস ও বন্দরের ঘুষ বাণিজ্যের কারণে গত কয়েক বছর বেনাপোল কাস্টমস হাউসে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। বন্দরের ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে সিএনএফ CNF(cost net freight) ফাইল প্রতি ঘুষ আদায় করে। ব্যবসায়ীরা এখানে কাস্টম ও সিএনএফের কাছে অসহায়। বেনাপোলে ব্যবসায়ীদের এই আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না থাকলে বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে ও বাংলাদেশ ভারতের অন্যান্য অনেক ব্যবসা হত উভয় দেশের মধ্যে এবং উভয় দেশের সরকারের এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বেনাপোল বন্দরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ব্যবসায়ীদের মতে বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। বেনাপোল বন্দরের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৪৫ হাজার টন পণ্যের। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে দুই লাখ টন আমদানি পণ্য নিয়ে ভারতের ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। এসব ট্রাকে শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণাধীন …
বাংলাদেশ ও ভারতের যোগাযোগ ও বাণিজ্যে বেনাপোল পেট্রাপোল স্থলবন্দরের গুরুত্ব। Read More »
বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন ও ভারতের অবদান।
শঙ্কর সরকার, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম। একটি শিশুর জন্মের সময় মায়ের যে ভূমিকা বাংলাদেশের জন্মের সময় ভারতের ভূমিকাও সেইরূপ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সেই অতীত অবদানের কথা নতুনভাবে এখানে লেখার প্রয়োজন নেই, তবে আমারা মনে করি হয়ত ভারতের তৎকালীন সরকার মনে করছিলেন পাশাপাশি নেপাল ভুটান শ্রীলঙ্কা আয়তনে, লোকবল অর্থবলে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম হয়ে যদি একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকতে পারে, তবে বাংলাদেশও একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে অবশ্যই থাকবে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের মত স্বদেশকে গড়ে তুলতে পারবে। অথচ চীন ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত থাকাকালীন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি পর্যন্ত দেয় নাই। সম্প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মি: ইয়াও ওয়েন বলেন গত চুয়াত্তর বছরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) বলিষ্ঠ নেতৃত্বে চীন যুগান্তকারী পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে পথ অতিক্রম করেছে আর সৃষ্টি করেছে দুটি বিস্ময়, বিশ্বের অন্য কোথাও যার জুড়ি মেলা ভার, যেমন দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক স্থিতিশীলতা। চীনা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সমাজতন্ত্রের পথ ধরে চীনা জনগণ কেবল তাদের মাতৃভূমিকে সুগভীর উন্নয়নমূলক পরিবর্তন সাধন করেনি বরং বিশ্বকে উন্নত করেছে বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন আধুনিকীকরণের চীনা পথে রয়েছে অতুলনীয় জীবনীশক্তি। সর্বক্ষেত্রে একটি মধ্যপন্থী সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের প্রথম শতবর্ষী লক্ষ্য অর্জনের পর, চীনা জনগণ এখন চীনকে সর্বক্ষেত্রে একটি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দ্বিতীয় শতবর্ষী লক্ষ্যের দিকে কঠিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা এবং অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে তা সত্ত্বেও চীনের অর্থনৈতিক শক্তি নিজস্ব মানদণ্ড সুরক্ষিত রেখে এবং নিজ গুণমানের উন্নতির মাধ্যমে কঠোর চাপের মুখেও টিকে আছে। এ বছরের প্রথমার্ধে চীনের জিডিপি ৫৯.৩ ট্রিলিয়ন আর এম বি ছাড়িয়েছে, যেখানে বছরে প্রবৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশ যা গত বছরের ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হারের চেয়ে বেশি এবং একই সময়ের মধ্যে অন্যান্য অনেক বড় উন্নত অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। আইএম এফের (IMF) মতে চীনের অর্থনীতি ৫.২ শতাংশ প্রসারিত হবে যা বিশ্ব অর্থনীতির মোট প্রবৃদ্ধির এক তৃতীয়াংশ অবদান রাখবে। চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ২০১৬ সালে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয় এবং ২০১৯ সালে গভীর হয়। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৈঠক করেন যেখানে তাঁরা উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অধিকতর উন্নয়নের জন্য কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। চীন ও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের নিজ নিজ মূল স্বার্থ ও উদ্বেগের বিষয়টি একে অপরকে সমর্থন করে। চীন জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় এবং বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধীতায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে, যাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে এবং উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে একচীন নীতি অনুসরণ করে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে চীন যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার প্রশংসা করে। চীন ও বাংলাদেশ যৌথ উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ অংশীদার। এই বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিঙয়ের হাত ধরে বি আর আই (The Belt and Road Initiative) এর যাত্রার দশম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশই প্রথম বি আর আইতে যোগদান করে। গত সাত বছরে বি আর আই বঙ্গোপসাগরে শিকড় গেড়েছে এবং প্রস্ফুটিত হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু এবং এর রেল যোগাযোগে গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৯৩৩.৫৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতুতে সর্বমোট ব্যয় হবে ৩৯২৪৬ কোটি টাকা যা বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অর্থনীতির জন্য একটি আশীর্বাদ স্বরূপ। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মাধ্যমে উভয় পাশের যোগাযোগের ৩ থেকে ৪ ঘন্টার দূরত্ব ৫ মিনিটেই শেষ করা সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য কর্ণফুলী নদীর এই টানেল নদীর তলদেশে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম। তাছাড়া দাশেরকান্দি পয়োশোধনাগার প্রকল্প এবং আরও অনেক এরূপ প্রকল্পের ন্যায় মেগা প্রকল্পগুলি একের পর এক চীন বাংলাদেশে সম্পন্ন করছে যা বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এবং অবকাঠামো উন্নয়ন ও দেশের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তাছাড়া চীনের ইকোনমিক জোন পাল্টে দেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বি আর আইয়ের প্রশংসা করে বলেন যে এটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ ও চীনের উচিত উন্নয়নের ঐতিহাসিক সুযোগগুলো কাজে লাগানো। উন্নয়ন কৌশলগুলো আরও একীভূত করে উচ্চমাত্রার উন্নয়নের লক্ষ্যে বেল্ট অ্যাণ্ড রোড সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়া এবং একে অপরের পরিপূরক ও সম্পূরক হিসেবে দুই দেশের নিজ নিজ অর্থনৈতিক সুবিধা কাজে লাগানো। বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তি, নতুন জ্বালানি এবং কৃষি। পরস্পরের সমর্থনকারী চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে ভালো ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক। এই বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এর প্রস্তাবিত চীন এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে বন্ধুত্ব, আন্তরিকতা, পারস্পরিক সুবিধা এবং অন্তর্ভুক্তির নীতির দশম বার্ষিকী। এক দশক ধরে চীন এই কুটনৈতিক নির্দেশনা মেনে চলেছে এবং সক্রিয়ভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া বেশি বেশি যোগাযোগের মাধ্যম জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে সৃষ্টি হয়। এই লক্ষ্যে চীন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং কর্মী বিনিময়ের বিশাল চাহিদা মেটাতে একাধিক সুবিধামুলক ব্যবস্থা চালু করেছে। আপাতত ঢাকা ও চীনের নির্দিষ্ট শহরগুলোতে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ৫০টি সরাসরি ফ্লাইট চালু করা হয়েছে যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ১০ হাজার লোকের যাতায়াত সম্ভব। এই বছর বাংলাদেশস্থ চীনা দূতাবাস এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার, রাজনৈতিক দল, মিডিয়া, থিঙ্কট্যাঙ্ক এবং তরুণদের কয়েক ডজন প্রতিনিধির চীন সফরের ব্যবস্থা করেছে। বিনিয়োগ ও পর্যটনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসা চীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের ও চীনা নাগরিকদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় ভারতের অবস্থান চীনের থেকে অনেক সুবিধাজনক অবস্থায়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও বাণিজ্য ভারত বাংলাদেশের সাথে চীনের তুলনায় অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে যখন তোফায়েল আহমেদ শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন তখন ভারতের চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসেন এবং তারা বাংলাদেশে টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিকস, সিমেন্ট, রড, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এবং তখন বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন ভারত না থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। তিনি বলেছিলেন ‘ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আসলে প্রয়োজনবোধে আলাদা জোন করে দেওয়া হবে’। বিষয়টি ভারতের আবার বিবেচনা করা দরকার কারণ ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ আমলের রেলপথ, সড়কপথ, নৌপথে, আকাশপথে সব ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়নের ব্যাপারে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভিত্তিক যাহা বিবিধ কঠিন চুক্তি অনুযায়ী সীমাবদ্ধ কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক যৌথ উন্নয়নের অংশীদারিত্ব মূলক এবং কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারত নেপাল ভুটান চতুর্দেশীয় উন্নয়নমূলক। এই সকলের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান …
The Marmas of Bangladesh: A Historical Profile of their Accommodation
Swapna Bhattacharya, former Professor and Head, South & Southeast Asian Studies, Calcutta University This writing restricted in its scope of projecting on some aspects of the History of the Marmas of Chittagong Hill Tracts of Bangladesh comes from my heart. The present contribution should also be read as a logical continuation of my previous one, published in this E. journal. Thus, to avoid repetition, facts about the northern Rakhine Muslims (Rohingyas) already highlighted there, have been kept outside focus. Nevertheless, the uncertain repatriation or challenging rehabilitation of the Rohingyas in general directly affects the Buddhist communities of CHT, the Marmas included. A recent publication entitled Rohingya Crisis; Response in Bangladesh adequately addresses the concern. Over the last few decades a large number of articles, Occasional papers and a few books on this corner of Bangladesh-Myanmar-Northeast India could be produced by me, a part of which has been included in the bibliography. Such gifts I could present before my readers as I had the fortune to meet many scholars at international conferences, workshops etc. and senior Rakhine monks, based in India and beyond. The History of Nation building process is an extremely fascinating phenomenon, in which the combined force of faiths and institutions plays an extremely constructive role. The Rakhine Buddhism and the Rakhine spirit of accommodation ( of various faiths and ideas) contributed a lot in this regard. Among many thinkers of India, Gurudev Rabindranath Tagore and Dr. B. R. Ambedkar( S. Bhattacharya, 2015 & 2019) could read this asset in the Rakhine people. The Marmas of CHT numerically a tiny community though, faithfully follow the Dhamma ( the righteous Path) and it is high time that the young generation in India should know more about this “forgotten ” chapter of combined History of Bangladesh-India-Myanmar. After all, Bangladesh and Myanmar are the two most trusted regional partners for India. All three countries have strong institutional bodies (Government, private, academic, religious), Think tanks, and vibrant civil societies . Thus, future challenges, if any, can certainly be fought out and solved jointly. The CHT, or Chittagong Hill Tracts of Bangladesh, the valley of Feni, Karnafuli, Sangu and Matamuri, is home of about 1.2 million people. Most of them actually came from across the border and have their co brethren in the Arakan Hills and elsewhere in Myanmar. The major groups of CHT are: Chakma, Marma, and Tippera. The Chakmas and Marmas follow the orthodox Theravada faith of Myanmar model, while the third group, the Tipperas, adhere to Hinduism. According to dependable sources, the number of Marmas is just 3, 500 today, while in 1981 ( Bhattacharya , 2001: 321) their number was 1,20,000. The ever descending trend can be read either as their “failure” to accommodate with a Muslim majority state or it can also be due to peculiar challenges, faced by them. Most probably or as I argue here, it is the second factor. There are quite a few Bangladeshi and Indian scholars of eminence who ( Mustafa Majid, 2003: 149-152, A. Asad, 2014, S. Mukherje, 2000, S. Chakma, 1986) are equally concerned about the ever increasing settlements – legal or illegal- in the Hills of Chittagong, leading to pressure, if not displacement of the indigenous people. Bimal Parmanik in his extremely valuable work Hindu Decrescent: Bangladesh & West Bengal ( Pramanik, 2021: 19-21) highlighted the descending or unhappy trend also of the Buddhist population, taking examples from districts of Chittagong Bandarban, Khagrachhari and Rangamati. According to him), the Buddhist population in Bangladesh came down from 49.98% in 1981 to 37, 68% in 2011 ( Parmanik, 2021: 22). His study with concrete data skilfully projects upon the concerning downward trend of Hindu population of all the districts of Bangladesh. The Marmas live mostly in the areas like Bandarban, Rangamati and Khagrachari of Chittagong Hill Tracts, and in the plains of Cox’s Bazaar and coastal Patuakhali. As I have shown in one of my earlier writings ( S. Bhattacharya, 2011, 23 & 2015: 35), the Buddhism followed by the Chakmas is much more open than that followed by relatively more orthodox Marmas. The minor groups of CHT are Tongchengya, Mru ( L. G. Loeffler, 1990) , Mrung/ Riang, Bawm, Khumi, Sak, Pangkhua, Khyang and Lushai. Only the Lushai and a few other small groups follow Christianity, while Tongchengya, Mru, Mrung, Bawm, Khumi, Sak follow Buddhism and also worship nature. In the ethnographical literature written by a large number of colonial administrators, the Chakmas and Marmas are projected as the “Children of the River “ (Khyountha) category, while the rest as the children of the Hills or Toungtha. The word “ Toung” in Myanmar language means “ mountain”. Such “Plains-Hills Dichotomy” (Bhattacharya, 2001: 326) in reality is a myth, and often created by the colonial rulers and administrators (Lewin, 2004: 55-57) in their own interest. The armed resistance that the colonial rulers faced – which they often called “ raids” – made them extremely cautious in dealing with such frontier areas ( F.K. Lehman, 1980) as the Lushai Hills ( modern Mizoram), Chittagong Hill Tracts or Arakan Hills. The Plains dwellers were focused as more “civilized’ against the “Raiders” who were considered as “wild” or wild tribes. The Magh – a generic name used widely in the colonial literature on Bengal-Burma Frontier actually — points to the Rakhines (Arakanese) of Myanmar. The Marmas do not use the term for themselves. Among many explanations for the popularity of the term may be the “Magadha connection” . After all, Magadha Empire emerged as the most supreme centre for spread of Buddhism. Hutchinson states “The Magh tribe is scattered throughout the District; the majority occupy the country south of the river Karnaphuli, and are under the Chiefship of the Bohmong who has his headquarter at Bandarban on the Sangu river “ ( Hutchinson, 2006: 42). According to Census of 1901, their total strength was 34,706 ( Hutchinson, 2006: 44). Hutchinson narrates further details of history regarding settlement of the 33, 000 …
The Marmas of Bangladesh: A Historical Profile of their Accommodation Read More »
The Bangladesh way to women centric development
Dr. KasturiBhadra Roy Links between the South Asian neighbours, People’s Republic of Bangladesh and the Republic of India are cultural, civilizational, social, and economic. There is much that unites the two countries – a shared history of the common heritage originating from the Bengal region, linguistic and cultural ties, passion for music, literature and the arts. Both are common members of SAARC, BIMSTEC, IORA (Indian Ocean Rim Association) the Commonwealth. Bangladesh, however, once called a ‘bottomless basket’ by former US Secretary of State Henry Kissinger, has recently garnered worldwide acclaim for its strides in human development. As reflected in the Gender Gap Report‘s 17th edition (2023), Bangladesh secured 59th position in the overall tally. All other south Asian countries have ranks beyond 100. India secured rank 127. As compared to India, more percentage of women is participating in paid work in Bangladesh. Economic participation’, in Bangladesh (0.438) is better than its neighbouring India (0.367). Wage of women is closer to the wage of Bangladeshi men for similar work and in fact, in 2018, Bangladesh’s gender wage gap was lowest in the globe (MTBiz 2018). In ‘Educational attainment’ and ‘Health and survival’ sub-indices, Bangladesh attained (0.936) and (0.962) respectively and has done more or less the same as its neighbouring countries. These are sub-indices where most countries have done well. However, in ‘political empowerment’, Bangladesh (0.552) is way ahead of its neighbours in south Asia, ranking 7th globally. These achievements, however, run contrary to the traditional portrait of Muslim society and women in Bangladesh. If we look back at the post war of Independence era, in 1971, Tully (2019) writes, the economy had collapsed, and, as a result, there was a famine in 1974. The government said 27,000 people died of starvation; unofficial estimates were as high as 1.8 million. The famine was followed by the assassination of Sheikh MujiburRahman, and almost his entire family, leading to a series of military coups and political instability. Bangladesh went through difficult times, setting up a new administration, rehabilitating displaced persons, and dealing with the assassination of its founder and top political leadership and several aborted and successful military coups (Husain 2021). The two major political parties, Sheikh Hasina’sAwami League and Khaleda Zia’s Bangladesh Nationalist Party, have alternated in power since 1991. Since 2009, the Awami League has ruled, having won three consecutive elections. The battle of the begums has remained intense and bitter. Khaleda Zia boycotted the elections and has remained in jail for quite some time along with many of her party stalwarts. It is interesting in this perspective, to see how the country could make substantial economic and social headway with such fierce political rivalry and perceived instability. Despite bitter political rivalries, however, there has been continuity in economic policies, projects and programmes in Bangladesh. The parties did not deviate from the basic anchors – macroeconomic stability, fiscal prudence, openness to trade, incentivizing the private sector and commitment to social development. Policy irreversibility has shown that a change of government would have no abrupt dislocation that could adversely affect investor and market sentiment, allowing investors to pursue their plans uninterrupted-resulting in economic gains over time (Husain 2021). After a series of crises post the country’s 1971 liberation war, the elites in Bangladesh reached a consensus to develop better relationships with international donor agencies to take their support in rebuilding the country. The elites accepted the agencies’ conditions and priorities such as women-focused developmental programmes. Bangladesh has successfully used its low-cost advantage to become a base for garment manufacturing. (Chakravarty 2013).This has led to the migration of millions of people from rural areas into the manufacturing sector, with women being the biggest beneficiaries. From the 1990s, there were rising numbers of women in paid work in export factories, number of girls’ enrolment in schools, women receiving health care and other services. Women were employed in increasing numbers by the state, including as teachers, health workers, administrators and the police. Husain also mentions that laws, policies and programmes to protect women and children against violence and to protect the most vulnerable from hunger and poverty were passed and implemented. Women played a growing role in politics through quotas and reservations (the index 0.552 in Bangladesh compared to 0.253 in India). On the other hand, the Bangladesh Rural Advancement Committee, GrameenBank and Association for Social Advancement have also played a pivotal role in spreading education and health facilities and providing women access to Self-employment through micro credit schemes. M NiazAsadullah et al (2013), in their article enumerate that an inclusive development strategy involving various non-government stakeholders, religious bodies and aid donors has helped Bangladesh in promoting women-centric development programmes. A strong commitment from the elites, support from donor agencies and involvement of non-government stakeholders in framing the development strategy helped keep women in the forefront of the development process. This is an interesting journey to learn from. Bangladesh has depended on aid and had to accept the advice that comes with it. However, it hasnot always been a happy relationship. Bangladeshi NGOs, for instance, have often clashed with international donors. The Bangladeshis have claimed, with some justification, that they know what is best for their country. There have also been accusations that Bangladesh has developed an aid-dependence syndrome, and some donors have given bad advice at times, prompted by their country’s commercial interests rather than the interests of Bangladesh. But Bangladesh’s dependence on aid has meant that it has been far less easy for politicians to politicize economic decisions or twist them to their own advantage. It is undeniable also that it has given NGOs the freedom to make a contribution to the county’s development. Guided by their experience of working on the ground, they have also been able to influenced policy. India, on the other hand, has taken a different path to growth. Instead of low-skilled manufacturing jobs, the services sector has become the country’s economic powerhouse due to its pool …