Center For Research In Indo

Author name: admin

দেশকে ভালবাসুন

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। আপনি যত ভাল গাড়ী চালান না কেন, তবু আপনি অ্যাক্সিডেন্টের কবলে পড়তে পারেন। এ দৃষ্টান্তটি এখন বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্যে প্রযোজ্য। সরকার চাইলেও যে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে তা বলা যায় না। সকল পক্ষকে এটি চাইতে হবে? একইভাবে নির্বাচন কমিশন চাইলেও ভোট অবাধ ও সুষ্ঠূ হবে এমন থিওরী সত্য নয়,  কারণ প্রার্থীদের মধ্যে ইতিমধ্যে ‘বিনা-ভোটে’ জয়ের একটি প্রবণতা গড়ে উঠেছে। সম্ভবত: একারণে বিএনপি শেখ হাসিনা’র অধীনে নির্বাচন যেতে চায়না, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বেই নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ মুহূর্তে এটি মূল সমস্যা। রাজনীতিকরা কি পারবেন এ সমস্যার সমাধান করতে? মনে হয়না, তাহলে বিদেশিরা মাঠে থাকবেন বৈকি!  সঙ্গত কারণে সরকার এখন বিদেশীদের পছন্দ করছেন না, বিএনপি পছন্দ করছেন। ২০০৮-এ ঠিক উল্টোটা ছিল। তাহলে দোষটা কি বিদেশীদের না আমাদের? দেশের প্রতিটি রাজনীতিকের স্বীকার করা উচিত যে, তাঁরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কখনই আন্তরিক ছিলেন না, সবাই ক্ষমতার ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের’ কথা ভেবেছেন? ক্ষমতায় গেলে সবাই ভুলে যান, ‘আমি তো ভাই ঘরের মালিক নই’! আজকে দেশে যে সমস্যা এজন্যে পুরোপুরি রাজনীতিকরা দায়ী। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দায়ী। গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর জাতি বড় দুই দলের কাছে আশা করেছিল যে, আর যেন কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসতে না পারে? দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে। ২০২৩-এ দাঁড়িয়ে বলা যায়, এর কোনটাই হয়নি? নূর হোসেন বুকে পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেওয়াটা বৃথাই গেছে। আমরা মুখে বলি, নেতার চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ  বড়, কাজ করি ঠিক উল্টো। নির্বাচন ঘনাচ্ছে, জটিলতা বাড়ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে এবার দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিতে হবে? কারণ দেশের চাইতেও ক্ষমতার প্রেম তাঁদের বেশি। প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, ‘বাঘে ধরলে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না’। আমেরিকা কিন্তু একবার ধরলে সহজে ছাড়ে না। ভারত-চীন-রাশিয়া যতই পাশে থাকুক, আমেরিকা ‘অর্থনৈতিক অবরোধ’ দিলে অবস্থা বেসামাল হয়ে যাবে। আমেরিকা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বলছি না যে, আমেরিকা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে, পরিস্থিতি যাতে সেদিকে না গড়ায় সেটি খেয়াল রাখতে হবে। তাই বলছিলাম, ‘দেশকে ভালবাসুন’। ভারত আমেরিকাকে জানিয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে তা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কারো পক্ষেই সুখকর হবে না। ভারত ও আমেরিকা প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার পক্ষে-বিপক্ষে, কিন্তু বাংলাদেশের জন্যে ভারত আমেরিকার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করবে ততটা আশা করা বোধহয় ঠিক নয়। সেপ্টেম্বরে বিষয়টি খোলসা হবে? সমস্যা হচ্ছে, আমেরিকা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু  নির্বাচন চায়, ভারত তো বলতে পারবে না যে, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না? প্রক্রিয়া নিয়ে হয়তো আলোচনা হতে পারে, কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তো কারো আপত্তি থাকার কারণ নেই?   চেতনায় সাম্প্রদায়িকতা লালন করে সম্প্রীতির মডেল হওয়া যায়না! ২ বাংলাদেশের মানুষ হিন্দুর ওপর অত্যাচারকে সাম্প্রদায়িকতা মনে করেনা, তাই দেশ ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির’ অন্যন্য দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের প্রশাসন মূর্তিভাঙ্গা বা মন্দির আক্রমণকে অপরাধ মনে করেনা, তাই গত বাহান্ন বছরে হাজার হাজার মূর্তিভাঙ্গা বা মন্দির আক্রমণের পরও কারো বিচার হয়নি, বা এ অপরাধে কেউ সাজা পায়নি। কিছু ভুল বললাম? আজকাল অনেকেই বুক ফুলিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল’। এ মিথ্যাচার ঠিক কখন শুরু হয়েছিল, এবং কেন? পাকিস্তান আমলে কেউ একথা বলতো না, কারণ দেশটি ছিল একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু’র সময়ও একথা উঠেনি। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, এদেশ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃস্টান, সবার। আমরা সবাই বাঙ্গালী। প্রেসিডেন্ট জিয়া সাম্প্রদায়িক বীজ বপন করেন, তখন নির্বাচনকালীন হিন্দু’র ওপর অত্যাচার শুরু হয়, জাতি একটু-আধটু ‘সম্প্রীতির’ কথা শুনতে শুরু করে? এরশাদের আমলে আমরা শুনতে পাই, বাংলাদেশ একটি ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ’? ইতিমধ্যে সংবিধানে পঞ্চম, অষ্টম সংশোধনী ঢুকেছে, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে দেশ ছেয়ে গেছে, আর জাতি শুনছে ‘সম্প্রীতির’ গান! খালেদা জিয়ার প্রথমবার শাসন আমলে মন্ত্রীরা সম্প্রীতির গান গেয়েছেন। আওয়ামী লীগের  শাসন আমলে (১৯৯৬-২০০১) মন্ত্রীরা এখনকার (২০২৩) মত ঘনঘন বলেননি যে, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল। আওয়ামী লীগ জোরেশোরে এ মিথ্যাচার করছে ২০১২’র রামু’র ঘটনার পর থেকে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ  অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হারায়। সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচার যত বাড়ছে, সম্প্রীতির মডেল শ্লোগানও তত বাড়ছে! সাম্প্রদায়িক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঢাকতে বা ধুম্রজাল সৃষ্টি করতে এমন মিথ্যাচার করতে হয়, ষোলআনা মিথ্যা জেনেও এটি বলতে হয় বৈকি! বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ কখনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল ছিল না, এখনো নয়। পঞ্চম ও অষ্টম সংশোধনী ললাটে ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক হওয়া যায় না। অসম্প্রদায়িক হওয়ার প্রথম শর্ত বাহাত্তরের সংবিধান। এটি নেই মানে রাষ্ট্রটি কমবেশি সাম্প্রদায়িক। ‘মদিনা সনদে’ রাষ্ট্র চলছে। মদিনা শহরে অমুসলমানদের প্রবেশ নিষেধ। বাংলাদেশে বেশিদিন মদিনা সনদ চললে হিন্দু-বৌদ্ধরা কমতে কমতে একদিন শূন্য হয়ে যাবে। সুপ্রিমকোর্ট ৭২-র সংবিধানে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছিল, আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দল অসাম্প্রদায়িক নয়, কম্যুনিস্ট পার্টিও নয়? জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র একটি অংশ অসাম্প্রদায়িক হলেও কথা বলতে পারছেন না? যুব সমাজের একটি অংশ ধর্মের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে, তাদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে দেশছাড়া করা হচ্ছে। দেশে অধিকাংশ মানুষ এখন সাম্প্রদায়িক। চেতনায়  সাম্প্রদায়িকতা লালন করে সম্প্রীতির মডেল হওয়া যায় না!

টাকা ও রুপিতে বাংলাদেশ ও ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের বিভিন্ন দিক।

শঙ্কর সরকার, বাংলাদেশ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বৈদেশিক বাণিজ্য দুই দেশের প্রচলিত মুদ্রায় আংশিক শুরু হয়েছে  মূলত  করোনা পরবর্তী বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং বাংলাদেশ ও ভারতের উভয় দেশের পরস্পরের ডলারের উপরে নির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে। রুপি ও টাকার মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করে ভারত ও বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্প্রসারণের সম্ভাবনা সম্পর্কে  বিভিন্নজন বিস্তারিত মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন এবং কথা বলেছেন যা দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ ব্যবস্থার আওতায় ভারত থেকে পণ্য সামগ্রী সস্তায় আমদানি করা যাবে। বেশির ভাগ মানুষ এ ব্যবস্থাকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর একটি অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অল্প সংখ্যক বিজ্ঞজন অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, এ ব্যবস্থায় ডলারের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।   এক: ফরেন এক্সচেঞ্জের ওপর রিজার্ভের চাপ– ভারত থেকে বাংলাদেশে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার,  রপ্তানি থেকে আয় মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি ১৪ বিলিয়ন ডলার। এ পার্থক্য পূরণের জন্য রুপি হোক কিংবা ডলার, ইউরো হোক বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের বিদেশি হিসাব, ব্যাঙ্কের পরিভাষায় নস্টা একাউন্ট থেকে সংস্থান করতে হবে। বলা বাহুল্য সেই লেনদেনের ফলে প্রকারান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন  এক্সচেঞ্জ রিজার্ভের ওপর প্রভাব পড়বে। এ শূন্যতা পূরণে বিকল্প কোন পন্থা নেই। মোটকথা রিজার্ভের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে।    দুই: আমদানি ব্যয়ভার লাঘব– বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ভারতীয় রুপিসহ সব দেশের মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারিত করে বাংলাদেশের ইনটারভেনশন কারেন্সি মার্কিন ডলারের মাধ্যমে, ব্যাঙ্কের পরিভাষায় ক্রসরেট ব্যবহার করে। তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কারেন্সির বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয় মার্কিন ডলারের মাধ্যমে, ব্যাঙ্কের পরিভাষায় যাকে বলে ক্রস রেট। যেমন ভারতীয় রুপির বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয় ডলার-রুপির বিনিময় হারের সাথে বাংলাদেশের টাকা-ডলারের বিনিময় হারের সাথে ক্রস করে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরণের লেনদেনের জন্য ক্রস রেটের সমন্বয়ে করা হয় ব্যাঙ্কের নিজস্ব লাভের মার্জিন ও অন্যান্য খরচপাতি। উদাহরণ হিসেবে ভারতের রুপিতে ড্র করা রপ্তানি বিল ক্রয় করার জন্য ২৪ জুলাই ২০২৩ বাংলাদেশ সোনালী ব্যাংকের বিনিময় হার ছিল রুপি ১=টাকা ১.২৯৭৭। আমদানি বিল পরিশোধ করতে বিনিময় হার ছিল ১.৩৪২৬।  বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয় ডলারের মাধ্যমে।              সহজভাবে বলা যায় ভারতীয় পণ্য আমদানি পণ্যের মূল্য রুপি হিসেবে পরিশোধ করতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে মার্কিন ডলার বা অন্য কোন কারেন্সিতে পরিশোধ করতে একই ব্যয় হবে। তাছাড়া ভারত বাংলাদেশের দুইটি কারেন্সির বিনিময় হার খুবই অস্থির। অল্প কয়েক মাসের ব্যবধানে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৫ টাকা থেকে ১০৫-১০৬ টাকা। অন্যদিকে রুপির হিসাবে ডলারের মূল্য ২০২২ সালের গড় বিনিময় হার ৭৮.৬০৪৩ থেকে বর্তমান প্রায় কম বেশি ৮২.০০ রুপিতে পৌঁছে গেছে। এই উত্থান পতনের অনিশ্চিয়তার কারণে আমদানি বাবদ বাড়তি টাকা পরিশোধ করার ঝুঁকি থাকে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে বিনিময়হারজনিত ঝুঁকি ব্যাংক  থেকে আগাম রুপি কিনে নিলেই তা নিরসন করা যায়? ব্যাঙ্ক থেকে রুপি আগাম ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে বিনিময়হার ঝুঁকি নিরসনের ব্যবস্থা এখন নাই। থাকলেই বা কি ? ফরেন কারেন্সি আগাম বিক্রয়ের হার নির্ধারণ করা হয় তাৎক্ষণিক বিনিময় হার বা স্পট রেটের সাথে প্রিমিয়াম যোগ করে। মোটকথা দরদামে বাংলাদেশ – ভারত দুই দেশের কারেন্সিতে অথবা তৃতীয় কোন কারেন্সিতে লেনদেন  নিষ্পত্তি করার মধ্যে পার্থক্য নেই। শুধু বাংলাদেশের রপ্তানি মূল্য বাবদ ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ  ভারতীয় রুপি আমদানি পণ্যের মূল্য পরিশোধের সুযোগ আছে। কিন্তু তাতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের কারও বাড়তি সুবিধা হবে না ডলার হোক কিংবা রুপি আমদানিকারকের ব্যয়ভারে কোন হেরফের হবে না। ভারতীয় রফতানিকারকরাও রুপির হিসাবে  রফতানি মূল্য আদায় করতে আগ্রহী হবে তেমন  আশা করা রায় না। রুপির পরিবর্তে মার্কিন ডলার অথবা অন্য কোন আন্তর্জাতিক কারেন্সিতে রফতানি মূল্য আদায় করতেই তাদের বেশি আগ্রহ। ক্রমশ নিম্নমুখী ভারতীয় মুদ্রার বিনিময় হারের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন  ডলারসহ আন্তর্জাতিক কোন কারেন্সিতে রফতানি চুক্তি করলে বাড়তি কিছু লাভের সম্ভাবনা থাকে। ব্যাঙ্কের কাছে রফতানি বিল আগাম বিক্রি করেও অতিরিক্ত প্রিমিয়াম পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ রকম  বিবিধ সুবিধা বিসর্জন করতে বললে তারা রুপির হিসাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করবে। কঠিন প্রতিযোগিতামূলক ধূসর পুঁজিবাদী বাণিজ্যিক জগতে ফ্রিল্যানস বলে কোন কথা নেই। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে এশিয়ান ক্লিয়ারিং  ইউনিয়নের সময়ে। আফগানিস্তান ও মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের আওতায় প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের কারেন্সিতে লেনদেন ব্যবস্থা প্রবর্তনে ব্যর্থ হয়ে শেষমেশ মার্কিন ডলার, ইউরো এবং জাপানি ইয়েন মধ্যবতী কারেন্সি হিসাবে ব্যবহার করা রীতিসম্মত হয়েছে। দৈনিক লেনদেন ক্লিয়ারিং আ্যকাউন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হলেও পণ্য আমদানির সময়ে পণ্যের মূল্য এবং পণ্য প্রাপ্তির সময়ে পণ্যের মূল্যের  যে রুপির পার্থক্য তা রুপির পরিবর্তে  মার্কিন ডলারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশের  দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর সব দেশের কারেন্সিই ফরেন কারেন্সি। ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে ভারত কিম্বা দুর্বল মিয়ানমার কারেন্সি অন্যান্য দেশের কারেন্সির মতোই মূল্যবান। যেমন সিঙ্গাপুরে ডলার  কিনতে আমাদের মার্কিন ডলার রিজার্ভ ব্যবহার করতে হয়। ভারতের রুপি এবং মিয়ানমারের চাট কিনতে প্রকারান্তরে রিজার্ভ থেকেই সংকুলান করা হয়। এই দুই কারেন্সিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার যৌক্তিকতা নেই।            তিন:  আমেরিকার ডলারের উপর নির্ভরতা – এই কথা সত্য যে রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে বিগত কয়েক বছর ধরে মার্কিন ডলারের গুরুত্ব কমে গেছে। ১৯৯৯ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নয়া কারেন্সি চালু হওয়ার  পর বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্কিন ডলারে বর্ণিত সম্পদের শেয়ার শতকরা ৭১ শতাংশ থেকে কমে ৫৯ শতাংশ হয়ে গেছে। ইউরো ছাড়াও অন্য কয়েকটি দেশের কারেন্সি ডলারের শেয়ারে ভাগ বসিয়েছে। বাংলাদেশের রিজার্ভের একাংশ ও বিকেন্দ্রীকরণের উদ্দেশ্য কারেন্সিতে ও অন্যান্য কারেন্সিতে বিনিয়োগ করা হয়। মার্কিন ডলারে বিনিয়োগ আরও কম করার এক্তিয়ার  আমাদের থাকলেও দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য মার্কিন ডলারের গুরুত্ব মোটেও কমেনি। Bank for International Settlement কর্তৃক ত্রিবাষিক জরিপ অনুযায়ী ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য ৮৮  শতাংশ ট্রানজেকশনের বিপরীতে দুটি কারেন্সির একটি ছিল মার্কিন ডলার। তিন বছর পর ২০২৩ সালে  অর্থাৎ মাত্র গত বছরের সার্ভে অনুযায়ী মার্কিন ডলারের ভূমিকা একই পর্যায়ে রয়েছে। আমরা চাইলেই ইচ্ছেমত লেনদেনের জন্য মার্কিন ডলারের পরিবর্তে অন্যান্য কারেন্সি ঢালাওভাবে ব্যবহার করতে পারার কোন সম্ভাবনা নেই।   বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি উভয়ের জন্য লেনদেনের কারেন্সির বিষয়টি নির্ভর করে বিদেশী ক্রেতা বিক্রেতার মর্জির উপর। অর্থনীতির ভাষায় বায়ার্স মার্কেটে আমেরিকান ক্রেতার কখনো অন্যান্য কারেন্সিতে আমদানি রফতানি মূল্য পরিশোধ করার সম্ভাবনা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পছন্দ ইউরো অথবা মার্কিন ডলারে লেনদেন করতে। আমদানির ক্ষেত্রে একই কথা। এমনকি ভারতীয় রপ্তানিকারকরা অবাধে রূপান্তরযোগ্য  কারেন্সিতে লেনদেন করতে বেশী আগ্রহী।    মোটকথা বাংলাদেশ ও ভারতের দুই দেশের ব্যবসায়ীদের ভারতীয় রুপির অথবা বাংলাদেশ টাকায় লেনদেন করার জন্য বাধ্যতা আরোপ করা হলে তাতে জটিলতা দেখা দেবে। এ পরিস্থিতিতে চিরাচরিত ডলারে পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করার পাশাপাশি কোন কারেন্সিতে ব্যবসায়ীরা বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করতে স্বস্তিবোধ  করে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি তাদের কাছে ছেড়ে দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের …

টাকা ও রুপিতে বাংলাদেশ ও ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের বিভিন্ন দিক। Read More »

মুজিবের দৃষ্টিতে মুজিবীয় দর্শন

কৃষ্ণকান্ত বিশ্বাস, বাংলাদেশ লেখক-যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক এমআরটি লাইন-৬ (১৫ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার, মানবজমিনে প্রকাশিত।) হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সারা জীবনের চিন্তা-চেতনা, কর্ম, ভালোলাগা,  ভালোবাসা, সব কিছুই ছিল বাঙালি কেন্দ্রিক। তিনি ছোটবেলা থেকেই মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও মমত্ব দেখিয়েছেন এবং মানুষকে ভালোবেসে মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য কাজ করেছেন সারা জীবন। সর্বোপরি বাঙালি জাতিকে দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত করার জন্য বরণ করেছেন জেল, জুলুম, অত্যাচার ও নিপীড়ন। তাঁর আজীবন সংগ্রামের সার্থক রূপায়ণ একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ছোটবেলা থেকে মাঝ বয়স পর্যন্ত ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে। সে গ্রন্থেই ফুটে   উঠেছে  তাঁর বিশ্বাস, আদর্শ, কর্ম ও দর্শনের কথা। সেখান থেকেই এ প্রবন্ধে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মুজিবের দৃষ্টিতে মুজিবীয় দর্শনের কথা। অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের ভূমিকায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, “এই মহান নেতা নিজের হাতে স্মৃতিকথা লিখে গেছেন যা তাঁর মহাপ্রয়াণের ঊনত্রিশ বছর পর হাতে পেয়েছি । সে লেখা তাঁর ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া, পরিবারের কথা, ছাত্রজীবনের আন্দোলন, সংগ্রামসহ তাঁর জীবনের অনেক অজানা ঘটনা জানার সুযোগ এনে দেবে। তাঁর বিশাল রাজনৈতিক জীবনের এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা এই গ্রন্থে তাঁর লেখনীর ভাষায় আমরা পাই”। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এক বনেদি মুসলিম পরিবারে শেখ মুজিবের জন্ম টুঙ্গিপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ। তিনি নিজেই জানিয়েছেন ছোট সময় তিনি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলেন। খেলাধুলা করতেন, গান গাইতেন ও খুব ভালো ব্রতচারী করতে পারতেন। তাঁর গৃহশিক্ষক কাজী আব্দুল হামিদ প্রতিষ্ঠিত ‘মুসলিম সেবা সমিতি’র সদস্য হিসেবে থলি নিয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে চাল উঠিয়ে আনতেন এবং এই চাল বিক্রি করে গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার অন্যান্য খরচ দিতেন। ঘুরে ঘুরে জায়গিরও ঠিক করে দিতেন। হঠাৎ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে সেই শিক্ষক মারা যান। তখন তিনি এই সেবা সমিতির ভার নেন এবং অনেকদিন পরিচালনা করেন। তিনি কিশোর বেলায় অনেকগুলো খবরের কাগজ পড়তেন। তাঁর আব্বা খবরের কাগজ রাখতেন। আনন্দবাজার, বসুমতী, আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী ও সওগাত। তিনি জানান “ছোটকাল থেকে আমি সকল কাগজই পড়তাম”। গোপালগঞ্জে এক বন্ধুকে মারপিট করছে শুনে কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে বন্ধুকে উদ্ধার করতে মারামারি করায় থানায় মামলা হয়। জীবনে প্রথম গ্রেপ্তার হন এবং জেল হাজতে যান। সাতদিন পর জামিন পান। পরে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনাক্রমে পনের শত টাকা ক্ষতি পূরণ দিয়ে মামলা তুলে নেয়া হয়েছিল। বন্ধুর জন্য শেখ মুজিবের ভালোবাসার নিদর্শন এতে পাওয়া যায়। ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেয়ার পর ভীষণভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সভা করেন, বক্তৃতা করেন। পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নাই। ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষ হয়। গ্রাম থেকে লাখ লাখ লোক শহরে চলে আসে।  খাবার নাই, কাপড় নাই। এমন দিন নাই রাস্তায় লোক মরে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। শেখ মুজিব তখন সিভিল সাপ্লাই মন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর কাছে গিয়ে বললেন, “কিছুতেই জনসাধারণকে বাঁচাতে পারবেন না, মিছামিছি বদনাম নেবেন”। তিনি বললেন দেখি চেষ্টা করে কিছু করা যায় কিনা, কিছু লোক তো বাঁচাতে চেষ্টা করবো ”।     দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় মানুষকে সহায়তার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তমিজুদ্দিন খান, মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ, মোয়াজেম হোসেন চৌধুরী (লালমিয়া) প্রমুখের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কনফারেন্স আয়োজনের মূল ভূমিকা শেখ মুজিব পালন করেন। দেশের মানুষকে সহায়তার জন্য শেখ মুজিবের আন্তরিকতা তখনই বোঝা গেছে।    পাকিস্তান সৃষ্টির পেছনে শেখ মুজিবের দর্শন তাঁর নিজের লেখনীতে, “অখণ্ড ভারতে যে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবে না এটা আমি মনপ্রাণ  দিয়ে বিশ্বাস করতাম। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হিন্দু নেতারা ক্ষেপে গেছেন কেন? ভারতবর্ষে মুসলমান থাকবে এবং পাকিস্তানেও হিন্দুরা থাকবে। সকলেই শাসন অধিকার পাবে। পাকিস্তানের হিন্দুরাও স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বাস করবে। ভারতবর্ষের মুসলমানরাও সমান অধিকার পাবে।  পাকিস্তানে  মুসলমানরা যেমন  হিন্দুদের ভাই হিসেবে গ্রহণ করবে, ভারতবর্ষের হিন্দুরাও মুসলমানদের ভাই হিসেবে গ্রহণ করবে”। বাঙালিদের মানসিকতা শেখ মুজিবের দৃষ্টিতে ফুটে উঠেছে তার নিজের জবানিতে, “আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হলো আমরা মুসলমান, আর একটা হলো আমরা বাঙালি”। পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধ হয় দুনিয়ার কোনো ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না, ঈর্ষা-দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যায় অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি । এমন উর্বর ভূ দুনিয়ার খুব অল্প দেশেই আছে । তবুও এরা গরিব। কারণ যুগ যুগ এরা শোষিত হয়েছে নিজের দেশে । নিজেকে এরা চেনে না আর যতদিন চিনবে না এবং বুঝবে না ততদিন এদের মুক্তি আসবে না ”। ভ্রমণের মাধ্যমে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান দর্শন, জনগণের সঙ্গে আলাপের মাধ্যমে তাদের অবস্থা ইত্যাদি জানা বঙ্গবন্ধুর শখের মধ্যে অন্যতম ছিল। তিনি জিন্নাহ সাহেবের আহ্বানে ভারতবর্ষের মুসলিম লীগপন্থি    কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের কনভেনশনে দিল্লিতে অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে যোগদান করেন। আগ্রা থেকে ট্রেনে উঠার সময় অনেক ভিড়ের মধ্যে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ট্রেনে উঠতে না পেরে এক ফার্স্ট  ক্লাসের দরোজার হাতল ধরে দাঁড়ালেন। সাথে আরেক বন্ধু ছিল। অনেক ধাক্কা ধাক্কি করলেও প্রথম শ্রেণির ভদ্রলোক দরজা খোলেননি । ট্রেন ভীষণ জোরে চলেছে, তাদের ভয় হতে লাগলো, একবার হাত ছুটে গেলে আর উপায় নাই। তিনি দুই হাতলের মধ্যে দুই হাত ভরে দিলেন, আর তার বন্ধুকে বুকের কাছে রাখলেন। এভাবে বিপদের সময় অসহায় মানুষকে বুকে আগলে রাখা তার মানসিকতা – এটাই বঙ্গবন্ধুর দর্শন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ধর্মঘট করেছে । শেখ মুজিব কয়েকজন    ছাত্রনেতাকে নিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করে যাতে কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত না করা হয় এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ন্যায্য দাবি পূরণের জন্য । তাদের আন্দোলনে সমর্থন দেয়ায় শেখ মুজিবসহ সাতাশ ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে । তবে চারজন ছাড়া বন্ড ও জরিমানা দিলে লেখাপড়া করতে পারবে। শেখ মুজিব এই চারজনের মধ্যে ছিলেন না । ছাত্রনেতাদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে আন্দোলন করায় শেখ মুজিবসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে । শেখ মুজিব নতি স্বীকারও করেননি, বন্ডও দেননি । আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।  কারাগারের জীবন সম্পর্কে শেখ মুজিবের অনুভূতি শেখ মুজিবের বয়ানে, “সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে সমস্ত কয়েদির কামরায় বাহির থেকে তালা বন্ধ করে দেয়া হয় গণনার পর। আমি কয়েদিদের কাছে বসে তাঁদের   জীবনের ইতিহাস ও সুখদুঃখের  কথা শুনতে ভালো বাসতাম”।  ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন কর্মী সম্মেলনে পুরাতন মুসলিম লীগকে বাদ দিয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করা হলো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক জনাব শামসুল হক এবং শেখ মুজিব জয়েন্ট সেক্রেটারি। তিনি তখন কারাগারে। তাঁর ভাবনা ছিল একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে । তিনি জানান, “ভাবলাম সময় এখনো আসে নাই, তাই যাঁরা বাইরে আছেন চিন্তাভাবনা করেই করেছেন”। ঢাকা জেলখানায় ফুলের বাগান করেছিলেন শেখ মুজিব। জেলখানার পাশে সরকারি প্রেস ছিল। তার মত প্রকাশে স্বাধীনতা ছিল …

মুজিবের দৃষ্টিতে মুজিবীয় দর্শন Read More »

বাংলাদেশে পাকিস্তানি প্রত্যয় এখনও সজীব (২)

বিমল প্রামাণিক দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকে নিয়ে বাংলাদেশের ইসলামী সমাজে এত মাতম কেন?  যে লোকটা আমৃত্য কারাদণ্ড প্রাপ্ত একজন অপরাধী, যে কিনা যুদ্ধাপরাধে অপরাধী পাকিস্তানি কোলাবরেটর, বহু লুট ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত, তাকে নিয়ে এত মাতম কারা করছে?  জামাতে ইসলামী বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বড় শত্রু। রাজাকার, আলবদর, আলসামসের জন্মদাতা, ত্রিশ লক্ষ গণহত্যার অন্যতম অভিযুক্ত – তার নেতা দেলোয়ার  হোসেন সাঈদি। কোন্ পাকিস্তানির দল তাকে ‘শহীদ’ বলে আখ্যায়িত করছে? পাকিস্তানের অতীত এখনও এদের তাড়া করে ফিরছে।    ‘সে পিরোজপুরের সাঈদখালি গ্রাম এলাকায় দেইল্লা রাজাকার নামে একজন হিংস্র প্রকৃতির রাজাকার ছিল। পাড়েরহাট গ্রামে হাটবারে সে হিন্দু বাড়ির লুট করা মালামালও বিক্রি করতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেইল্লা রাজাকার এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে তখন মুক্তিযোদ্ধারা ধরতে পারেনি। সেই লোকটিই এখন নাম পাল্টে বিভিন্ন এলাকায় দেলোয়ার হোসেন সাঈদি নামে ওয়াজ করে বেড়াচ্ছে।’ পিরোজপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কম্যান্ডের ১৯৮৭ সালের চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় মোতাবেক ২০১৮ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে তার কৃতকর্মের জন্য আমৃত্যু যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করা হয়। ১৪ই আগস্ট ২০২৩ জেল হেফাজতেই তার মৃত্যু হয়। মুসলমান সমাজে পাকিস্তান ও বাংলাদেশি আমলে ছোট-বড় শত শত দেলোয়ার হোসেন সাঈদির কেন জন্ম হল বুঝতে হলে ইতিহাসে ফিরে যেতে হবে। মোটা দাগে ১৯০৬ সালে মুসলিম লিগ গঠন, তিরিশ-চল্লিশের  দশকে দ্বিজাতিতত্ত্ব, ১৯৪৭-এ বাংলাভাগ এবং পাকিস্তান গঠন। বাঙালি মুসলমানরা বাঙালি পরিচয় ত্যাগ করে মুসলমান পরিচয়ে থিতু হতে চাইল। তাদের হিন্দু-বিদ্বেষ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাল। বাঙালি সংস্কৃতি বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতিরই অঙ্গ। বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায় নিজ সংস্কৃতি বর্জন করে ভারতীয় মুসলমানগণের  প্রভাব না এড়াতে পেরে নিজেদের আত্মপরিচয় খুঁজতে ভারত আক্রমণকারী লুটেরাদের ও আরব মরুভূমির ইসলামি পরিচয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ল।  এমনকি ইংরেজ বিরোধী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি হিন্দুদের চূড়ান্ত আত্মত্যাগ, শত শত হিন্দু যুবক ফাঁসির সাজা হাসিমুখে বরণ করল।  দলে দলে আন্দামান ও ভারতের বিভিন্ন কারাগারগুলিতে নিজেদের জীবন-যৌবন বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করল না। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি হিন্দুর অতি মূল্যবান এই স্বর্ণালি ইতিহাসের গৌরবকেও বাঙালি মুসলমানরা  নিজেদের অংশীদার হিসেবে ভাবতে পারল না। যদিও বাঙালি জাতি হিসাবে হিন্দুর সোনালি অতীত গ্রহণ করতে এখনও কুণ্ঠার সীমা-পরিসীমা নাই। সেকারণেই দেলোয়ার হোসেন সাঈদিদের বাঙালি মুসলমান  সমাজে অভাব হয় না। পঞ্চাশ বছর কাল ইতিহাসের নিয়মে সামান্য  সময় হলেও বাঙালি মুসলমানদের সামনে একটা সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল – ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উজ্জ্বল ইতিহাসকে সংরক্ষণ করে নিজেদের রাষ্ট্র-সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে প্রতিষ্ঠা করার এবং অনাগত উত্তরসূরিদের জন্য পূর্বসূরিদের আত্মত্যাগের বীরগাথার কালোত্তীর্ণ অবদান রেখে যাওয়ার। তা তো দেখা যাচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি সর্বজনবিদিত। নানা ঘটনা মুছে  ফেলা হয়েছে, নানা ঘটনা বিকৃত করা হচ্ছে। এমনকি দেলোয়ার হোসেন সাঈদির মতো একজন জঘন্য যুদ্ধাপরাধীকে আজ ‘শহীদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তার জানাজায় লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ হচ্ছে। আজকে ভেবে দেখার সময় এসেছে, বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলেও কেন নিজেদের পাকিস্তানি মানসিকতা থেকে উত্তরণ ঘটাতে ব্যর্থ হল। পাকিস্তান আমলে বাঙালি মুসলমান নিজেদের মুসলমান পরিচয়ে গর্ববোধ করত – এ অভিজ্ঞতা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনাকালীন সময়ে আমার ভালোভাবেই হয়েছিল। আর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে যেভাবে বাঙালি মুসলমানদের  মধ্যে পাকিস্তানি জোশের বিস্ফোরণ  ঘটল – তা দেখে মোটেই অবাক হইনি কারণ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাঙালি মুসলমান সমাজে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছিল। মুসলমানদের বৃহদংশ পাকিস্তান ভেঙ্গে ভারতের সাহায্যে বাংলাদেশ গঠনের পক্ষে ছিল না। সরকারিভাবে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ-বাহিনীর সামনে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ হলেও সাধারণ মুসলমানরা এখনও বিশ্বাস করে পাকিস্তান ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। মাত্র চার বছরের মধ্যেই আমরা দেখতে পেলাম স্বপরিবার শেখ মুজিবসহ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী প্রধান নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের মাটিতে নৃশংসভাবে খুন হয়ে গেল। বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে কোন প্রতিবাদ ধ্বনি শোনা গেল না ! নীরবে বাংলাদেশের কবর হয়ে গেল ‘পাকিস্তানের’ মাটিতে। আজকে দেশে-বিদেশে লক্ষ লক্ষ মুসলমান সাঈদির জন্য শোক প্রকাশ করে, জানাজা পাঠ করে। হায়রে বাংলাদেশ ! কি বিচিত্র এই বাঙালি মুসলমান! একটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে-সাত কোটি। ধরা হয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে। এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। বাংলাদেশ মুক্ত হওয়ার পর এক কোটি শরণার্থীর মধ্যে কমপক্ষে ত্রিশ লক্ষ মানুষ ভারতে থেকে গেছে। ঐ ত্রিশ লক্ষের মধ্যে সেইসব মানুষও ধরা হয়েছে যারা মুক্ত বাংলাদেশে ফিরে নিজেদের স্থায়ী সম্পদ (স্থাবর) অর্থাৎ বাড়িঘর, জমিজমা, ব্যবসাবাণিজ্য উদ্ধার করতে না পেরে পুনরায় ভারতেই আশ্রয় নিয়েছিল। এটা আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশকেন্দ্রিক ভারতীয় সীমান্ত রাজ্যগুলির ১৯৮১’র সেন্সাসের (আদমশুমারি বা জনগণনা) জনসংখ্যা বৃ্দ্ধির হার থেকে। অন্যদিকে ১৯৭৪ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল সাত-কোটি চৌদ্দ লক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৭১ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত তিন শতাংশের অধিক হারে বৃদ্ধি জনসংখ্যার পরিমাণও। তাহলে হিসাবে পাওয়া যাচ্ছে, সাড়ে সাত-কোটির মধ্যে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর ত্রিশ লক্ষ হিন্দু ভারতে থেকে যাওয়ায় মোট ৬০ লক্ষ জনসংখ্যা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে কমে যায়। আর বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। অর্থাৎ স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশে দশ কোটি জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে। এই দশ কোটি জনসংখ্যার সামনে গত পঞ্চাশ বছরে পাকিস্তানি গণহত্যার ইতিহাস এবং পাকিস্তানিদের বাঙালি সহযোগীদের ভূমিকা, জামাতের গণহত্যাকারীদের পরিচয়, মুসলিম লিগ, নেজামে ইসলাম, পীর মৌলানা, পাকিস্তানি বাহিনী ও সরকারের সহযোগী কর্মচারী, সাধারণ জনগণ – যারা পাকিস্তান সরকারের পক্ষে থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল – তার কতটুকু তুলে ধরা হয়েছে? ১৯৭৫ পরবর্তী সরকারগুলি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ১৯৭১ এর গণহত্যার ইতিহাস তুলে না ধরে চাপা দিয়েছে, ভূলিয়ে দিয়েছে। ফলে শত শত সাঈদির জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশকে বোরখা, মাদ্রাসা আর উগ্র ইসলামী মৌলবাদ গ্রাস করে ফেলেছে। এসকল বিষয় কি মুক্তিযুদ্ধের দাবীদার আওয়ামি লিগ সরকারের অজানা? পরিবারসহ শেখ মুজিব ও জেলখানায় চার নেতা নিহত হওয়ার পর তদানীন্তন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, তাঁর একজন বাঙালি পরামর্শদাতাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘আমি কি ভারতের পেটের মধ্যে একটি বিষফোঁড়া তৈরি করে ফেললাম।’  বিষফোঁড়া বড় হতে দিলে চিকিৎসা জটিল হওয়ার প্রবণতা থাকে।    

The Northern Rakhine Muslims (Rohingyas) and their forgotten History from Indian perspective

Swapna Bhattacharya, former Professor and Head, South & Southeast Asian Studies, Calcutta University After the publication of the book The Rakhine State (Arakan) of Myanmar: History, Culture and Conflict in 2015, I actually took a quiet distance from this particular subject of Bangladesh – Myanmar Relations over the Rohingya issue. I must add here that the term “Rohingya” is not accepted by the Myanmar Government and a large section of Myanmarese people. According to the 1982 Citizenship Law,  ( Khan, 2023: 156)  there are restrictions and limitation to award citizenship for all concerned.  The Government from the earlier period too – gave a lot of attention to verify the documents which the residents possess or in cases not able to show.   But, the name “Rohingya” –  is widely used by international community and their ( Rohingya people’s ) distress has attracted world’s attention. There are Rohingya refugees not only in India, but also in various Southeast Asian countries, and elsewhere.  The subject has already been over-discussed; and I am afraid to get lost in the plethora of researches highlighting aspects, ranging from Human Rights violation, big power rivalry to possibility of outbreak of terrorism from this long-drawn deprivation. China‘s maritime aspiration in the Bay of Bengal ( Kyaukphyu port and connectivity projects) to draw maximum resources often come in connection with the present subject. The present paper however is simple, and based on some historical facts, which may be  important to revisit in the present context. My abovementioned book ends with developments in the Chittagong-Rakhine front up to 2012.  The chapters,  eight (8)  in number, highlighted among other subjects, the historical encounter of the Rakhine State with Bengal ( Gutman, 2001)  at various phases, almost from the time of the Buddha ( in form of the great Mahamuni) through the golden era of the Mrauk-U or Sayyid Alaol’s Rosanga  ( 1430-1784) in the Kaladan valley, overlapping of cultural assets of Hinduism, Buddhism and Islam with their polymorphous traditions,  Annexation of Arakan by the Bamar ( Burman) king Bodawpaya (1784),  and the politics of wooing the  regionalism of the Buddhist Rakhines  by the British to control the richest agricultural corridor in the Bay of Bengal littoral. After all, the capital of Arakan, Akyab or modern Sittwe, was one of the busiest rice exporting ports in the whole world.  The Rakhine kingdom was also well-connected with Upper Myanmar region, routes being across the Rakhine Yoma (Gommans & Leider eds. 2002).   The often discussed narrative of dichotomy of  — “ Buddhist South versus Muslim North”  — has its genesis in the massive  communal polarization during the World War Second ( 1942-1945). Historians like Hugh Tinker            (1967), Moshe Yegar (1972) and Klaus Fleishmann (1981), whose works I often referred, adequately gave attention to various economic, social and political reasons, leading to this divide. In the British censuses from the 1920- 1940s, the dichotomy between the bona-fide residents of Arakan and Immigrants from Chittagong is repeatedly focussed (Bhattacharya 1994). The mass movement of people from Chittagong, Comilla and Noakhali to the rural areas of Maungdaw, Buthidaung and Rathedaw as well as Akyab was due to economic opportunities. The ports of Chittagong was well connected to Akyab, while for using the land route, the river Naaf (Tinker, 1967: 357)  had to be crossed. The British used this important corridor of northern Arakan and its  Muslim   population to build up a strong front to resist the Japanese forces. On the other hand, the Japanese forces were backed by the Buddhist Rakhines, who are known by the name “Maghs” (Abdul Mabud Khan, 1999). Other details of Communist Party’s involvement to use this situation declaring a “ anti-fascist war” considerably isolated the Rakhine Muslims, and the Rakhine nationalist scenario altogether. Instead the spirit of the AFPFL ( Anti-Fascist People’s Freedom League) of the mainland , Independent  Arakan Parliamentary Group (IAPG) was more dominating.  Though one does not know much about ACP/Arakanese Communist Party  (K. Fleischmann, 1989: 143), but its creation considerably polarized and divided the national spirit.  Those interested can go through a few pages from my book India-Myanmar relations: 1886-1948 (Bhattacharya, 2007:371-378).   Thus, Myanmar or former Burma was born in 1948 with this troubled region, which otherwise gave birth to so many great monks (U Ottama), intellectuals and  politicians. I may just add here that, none other than Dr. Ambedkar got initiated to Buddhism by a Rakhine monk, U Chandramani. From yet another level, the root of the problem can be traced back to  the  unnatural birth of Pakistan out of Bharat. Most of the Muslims of Myanmar (except the Panthey /Chinese Muslims) are of Indian origin, but well-settled in various cities (Yangon, Mandalay, Akyab) with their families and praying houses or mosques.  The Kaman Muslims of the Rakhine State have also their origin in India.   As we know, the last Mughal Emperor’s graveyard        (Mazar of Bahadur Shah Zafar) in the heart of Yangon is a solemn meeting place for all Muslims (also Hindus and Buddhists) from India, Pakistan and Bangladesh. I have visited the place several times. Interestingly,  a large number of northern Rakhine Muslims were counted in the Census as “Indian”, at time Chittagonian, Bengali etc. Even after 1937 Separation of British Burma from British India, their immigration into Burma was permitted.   Muslims of Myanmar from the Mainland as well as from this frontier state is intensely attached with undivided India or Bharat. This is why Netaji Subhas Chandra Bose had a huge support  from the Muslims of British Burma, who vehemently opposed the Partition Plan and contributed tremendously in the INA Movement (Bhattacharya, 2007:Chapter VII & 2023 13) . The transition from colonial period to the period of Nation Building (decolonization)  in South and Southeast  Asia has been a complex process itself;  religious divides,  China-backed communist insurgences  and  outbreak of the Cold War were  as destructive as domestic  rivalries within the newly emerged nation states. U Nu, the first Prime Minister of independent Myanmar (former Burma) as well as his successor General Ne Win …

The Northern Rakhine Muslims (Rohingyas) and their forgotten History from Indian perspective Read More »

A great role of the Calcutta University in 1971 Bangladesh  Liberation War.

Bimal Pramanik (Part I)There was a great commotion among the teaching community of West Bengal at the news of military crackdown by the Pakistani Army in Dhaka. On 27 March 1971 the Senate Committee of Calcutta University in its annual budget session adopted a resolution roundly condemning the wanton killing in Dhaka of students and teachers by the Pakistani Army. On 3 April the ‘Calcutta University Bangladesh Sahayak Samiti’ was constituted in a meeting attended by students, officers and teaching and non-teaching staff of the Calcutta University. The immediate object of the Samiti was to render all possible help to the freedom fighters and the intellectuals and teachers who came to India as refugees. The office bearers of the Samiti were as follows : President: Professor Satyendranath Sen, Vice-Chancellor of theCalcutta University. Working President: Professor Purnendu Kumar Basu, Pro-Vice Chancellor(Education) of the Calcutta University. Treasurer: Professor Hirendra Mohan Majumdar, Pro-Vice Chancellor(Finance) of the Calcutta University. Secretary: Professor Dilip Kumar Chakraborty, Member, CalcuttaUniversity Senate Committee, Professor of Economics,City College. Joint Secretaries: (1) Professor Ila Mitra, MLA, CPI.(2) Sourindra Nath Bhattacharya, Joint Secretary, RSP.(3) Professor Santosh Kumar Mitra, Teachers’Representative, CPI(M). (4) Professor Sukamal Dasgupta, SUCI. The office was located on the 1st floor of Darbhanga Building, and the office hours of the Samiti were between 11.00 a.m. to 5.30 p.m. and again from 600 p.m. to 8.00 p.m. on the first floor of the house of 14 Bidhan Sarani. Apart from many ex-students of the University viz. Smt. Bina Bhowmik, Smt. Kamala Bose, Smt. Mrinmoyee Bose and Mira Sen and many other came forward to extend help on this great cause specially for distributing food, medicine and medical help among the refugees. The day to day functions of the Samiti were looked after by Professors Aniruddha Roy, Anil Sarkar, Piyus Das, Anshuman Malik, Anil Basu, Gyanesh Patranabis, Jatin Chatterjee, Dipak Hazra, P. Sen Sharma attached to various departments of the University. The officials of Bangladesh Teachers Association also used the Samiti’s office for their purpose. They did a lot for this struggle along with the members of the Sahayak Samiti. The letter which the Vice-Chancellor of the Calcutta University Professor S. N. Sen had sent to various organizations of India and abroad is reproduced below : Calcutta UniversitySenate HouseCalcuttaWest Bengal, India The 14th December, 1971. CALCUTTA UNIVERSITYBANGLADESH SAHAYAK SAMITI An AppealWe hope you are aware that the Calcutta University Bangladesh Sahayak Samiti of the teachers, students and others of the University and the Affiliated Colleges, founded in early April, 1971, has already served the cause of the patriots of Bangladesh by publishing a number of booklets and brochures revealing the truth about Bangladesh and circulated them all over the world. The Samiti has collected the bio-data of thousands of teachers of Bangladesh to help institutions willing to help them in any way. Moreover, the evacuee teachers need immediate financial help for their mere subsistence. We have already distributed more than a lakh of rupees amongst the displaced teachers and intellectuals from Bangladesh apart from another lakh worth of subsidiary assistance to the Mukti Bahini youths. We have also distributed medicines worth nearly 80,000 rupees amongst the evacuees from Bangladesh sheltered on Indian soil apart from various other types of assistance which we received in kind that have been distributed among the people of Bangladesh. We acknowledge with gratitude the massive contribution received through Dr. P.B. Gajendragadkar; the then Vice Chancellor of the University of Bombay and Professor Atin Majumdar of the Australian National University amongst others. Should you suppose that with the recognition of the Bangladesh by the Indian Government, such help is no longer needed? May I stress that it is expected to be a long time before the refugees, in particular the displaced teachers amongst them, are again resettled and found regular employments in their own country. Many have lost their homes and their families in the fighting; and many of their school or college buildings have been damaged or destroyed. As President of the Calcutta University Bangladesh Sahayak Samiti I address this appeal to all (3rd in the series) to send their contributions in cash or kind. The alumni of this century old University must be distributed all over India and the world. I am sure, the people will extend their generous help to us to help suffering humanity. The Government of India has kindly accorded exemption to our donors from the payment of Income Tax to the extent of their donations. The central office of the Samiti is located at the Darbhanga Building, Calcutta University, Calcutta 12, India. S. N. SenVice ChancellorCalcutta University,AndPresident,Calcutta University Bangladesh Sahayak Samiti. Contribution may kindly be sent by cheques issued in favour of “Calcutta University Bangladesh Sahayak Samiti.” Source : The book entitled Indian People’s Response to Bangladesh Liberation War, is a ICSSR funded project report. It is published by CRIBR in February 2010.

Indo-Bangladesh Relations: Contemporary Reflections

Drona Bandyopadhyay Bangladesh is undeniably one of the most important neighbours of India. Our country shares longest boundary with Bangladesh and she has an inevitable geographical and logistical role in providing communicational transit of folk and freight to the North-East of India from mainland. The strategically located seaports and airports can be prudently utilised in future to make intra-national connectivity more smooth and seamless. We are helping Bangladesh in all possible ways. The birth of Bangladesh is not only a saga of the historical culmination of their own Bengali nationalistic movement but also a valiant chronicle of our political leadership, military gallantry and magnanimity of common Indians. Not less than 11,000 armed personnel of Indian defence forces were martyred for the liberation of Bangladesh. In post-1971 period Indian Government has continued to extend economic and other sort of aid and assistance towards the overall welfare of the people of Bangladesh. Though anti-Indianism has a long history since Pakistani times and it is inherently related to acrimonious attitude towards Hindu people and culture. In recent times this sort of public psychology has increased manifold. The evident inability of bilateralism to arrive at a mutually agreeable imperative concurrence on sharing common rivers including Teesta has profusely generated anti-Indianism at the ground level. The unfortunate border killings are also a grave festering issue in Bangladesh. But illegal immigration and smuggling of contraband are the existent reasons behind the border killings. The mainstream media and political personalities in Bangladesh have never publicly acknowledged the actualities that trigger border killings. The general election will take place in Bangladesh at the end of 2023 or at the start of 2024. According to media reports the election schedule will be declared in September 2023. So there is little time for us to thrash the policy out regarding the general elections. The crisis issues in the present political scenario of Bangladesh are touched upon through following points. A. Unpopularity of Awami League: The present Awami League (AL) government has become unpopular due to its autocratic attitude and corruption though corruption is not any factor in the Bangladesh society. India supports AL for its historical legacy. It is enjoying power about 15 years and also increasing unpopularity. B. Failure of Opposition: People always want a change in democracy and they are relying on BNP, the main opposition. But due to various reasons BNP has failed to remove AL from power through street movement. Jatiya Party is a divided house and after Ershad’s death it has become weak. Moreover, it is seen as an associate of AL. C. Western Pressure: Bangladesh is facing tremendous pressure from US, EU and UN due to its dismal human rights record. The Treasury sanctions and recent Visa restrictions declared by US are bright testimonials of US pressure on this poor country. Though they want protection of civil rights and free and fair election in Bangladesh but the main reason behind their actions is the China factor. D. Role of China: China is a very important factor in Bangladesh. AL has established a deep rapport with this country due to both economic and political reasons. In 2019 it was China who gave first recognition to AL Government just after the election. China has huge investments and helping Bangladesh in various ways to become militarily strong. E. Role of Russia: Bangladesh has also a good relation with Russia. In Ukraine war the Bangladesh has taken a pro-Russia stance in a very diplomatic way. F. Rohingya Issue: There are more than a million Rohingya refugees in Bangladesh. Their chances of returning back to Myanmar is very bleak. This primitive minded poor populace is a demographic threat to Bangladesh and also to India. They are illegally entering India and creating problems in various parts of the country. G. Kuki Issue: Manipur is facing civil war between Meiteis and Kukis. Kukis are bringing arms and ammunitions from Myanmar where they are fighting against the junta. Recently, Kukis of Bangladesh have started a low-scale insurgency. Both the events are threat to the integrity and sovereignty of India and Bangladesh. H. BURMA Act of US: US has enacted BURMA Act in April, 2022 to help the democratic movements in Myanmar. As Myanmarese junta is an ally of China for many decades US wants to help the democratic forces and ethnic groups which are fighting against Yangon’s autocratic rule. It is a grand design of US to dominate the entire region in the name of democracy and human rights. Though the China is the main target the emergent India is also a target in long term. I. Decline of secular space in Bangladesh: Over the years it has been observed that secularists are steadily dwindling in numbers and their social spaces is becoming small and narrow. This secularist forces are the main support banks of India. Hence, India has a looming trouble due to their decline. J. Economic Crisis: Bangladesh is facing a severe economic crisis. Inflation, plummeting of foreign exchange reserves, power cuts, etc. is crippling the economic growth. If the conditions get worse India may come to help like in Sri Lanka. India is an emerging world power. With the rise of India at the global stage the stakes are also becoming high. The policy makers should not ignore some unfortunate realities present in Bangladesh. To save Bangladesh and safeguard India’s interests ta balanced Bangladesh policy is the need of the hour.

বাংলাদেশে গণহত্যা  ও যুদ্ধাপরাধে দায়ী পাকিস্তানঃ UNO প্রস্তাবনা তথা আন্তর্জাতিক কণ্ঠস্বরে জোরাল দাবী ন্যায়বিচারের।

সুদীপ কুমার আচার্য্য ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশ) অপারেশন সার্চলাইট অভিযানের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক সম্পন্ন হয়েছিল পৃ্থিবীর অন্যতম সর্ববৃহৎ জেনোসাইড বা গণহত্যা। গণহত্যা হল কোন জাতি, সম্প্রদায়, গোত্র বা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মানুষকে নিশ্চিহ্ন করার একটি অস্ত্রবিশেষ। পাকিস্তানি মিলিশিয়ার সহযোগিতায় জামাত, বিহারী মৌলবাদীদের দল এই ঘৃণ্য কাজ শুরু করে। মাত্র এক-দুই মাস পরেই খুনী স্যাটেলাইটের ভূমিকায় যুক্ত হয় ঘাতক দালাল ঝটিকাবাহিনী, রাজাকার-আল বদর – আল শামস্, পিস কমিটির নামে নরঘাতকের দল। নয় মাস চলা এ জেনোসাইডে বলি হয়েছিল ত্রিশ লক্ষ মানুষ। প্রায় দশ মিলিয়নেরও বেশী হিন্দু পরিবার ভিটেবাড়ি ছেড়ে কোনক্রমে পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতবর্ষে।১ দেশের অভ্যন্তরে ভিটেছাড়া হয়ে পালিয়ে বেরিয়েছেন কুড়ি মিলিয়ন, প্রায় চার লক্ষ নারীর সম্মান ও ইজ্জত নষ্ট হয়েছিল। ২ সমস্ত নখ ও বিষদাঁত বার করে পাকিস্তানি হায়নার দল ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলে দেশ বিভাগের গ্লানি, আরও হাজারো সঙ্কট বুকে নিয়ে সবেমাত্র থিতু হবার চেষ্টা করা পূর্ব পাকিস্তানকে। এখানকার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতার স্পৃহাকে তারা বুটের তলায় পিষে মারে। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি মুসলমান অংশটিকে পাকিস্তান তাদের তাঁবেদার ও ক্রীতদাস হিসেবে রাখতে চেয়েছিল। ১৯৭১ এর জুন মাসে জেনারেল টিক্কা খান রাজাকার অধ্যাদেশ জারী করেন এবং ক্রমে আনসার, মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্রসংঘ ইত্যাদি সমস্ত পাকিস্তানপন্থী সংগঠনের মেম্বাররা থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও কমান্ডারেরা স্টেনগান নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও পৌর এলাকায় এমনকি গ্রামে গঞ্জে নরসংহারের নামে যার প্রধান লক্ষ্য ছিল হিন্দু পরিবারগুলি, ভারতে বাংলাদেশী শরণার্থী শিবির পরিদর্শন ও তাদের সঙ্গে কথা বলে মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি সিনেটে একটি প্রতিবেদন পেশ করে বলেন – Nothing is more clear or more easily documented, than the systematic campaign of terror and its genocidal consequences launched by the Pakistan army on the night of March 25th …Hardest hit have been over members of the Hindu community who have been robbed of their hands and shops systematically slaughtered, and, in some places, painted with yellow patches marked `M’.৩ বলা বাহুল্য এই ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা ঘটার পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হলেও জঘন্য অপরাধের কোন দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়নি। যা হওয়া উচিত ছিল আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে এবং কঠোরতম শাস্তি হওয়া বা পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্লক করা, বয়কট করা ছিল জরুরী। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটি গুরুতর এবং প্রশ্ন জাগে এরকম কিছু হল না কেন ?১৯৪৮ সালের ৯ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘ Convention on the prevention and punishment of the crime of genocide ঘোষণা করেছিল। হিটলার, মুসোলিনী, ফ্রাঙ্কো, তোজো বা স্টালিন জমানা পেরিয়ে সারা বিশ্ব স্বপ্ন দেখেছিল শান্তি প্রতিষ্ঠার, কল্যাণের উন্নতির। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের কৃতকর্ম তাতে জল ঢালে। দক্ষিণ এশিয়ায় ঠাণ্ডা লড়াইকে ডেকে নিয়ে আসবার যদি কেউ সবচেয়ে বড় দাবীদার হয় তার নাম পাকিস্তান। বাংলাদেশ ইস্যুর মধ্যে দিয়ে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় অশান্তি তৈরীর ছক তাদেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। জাতিপুঞ্জের আইন বা নির্দেশনার কোন তোয়াক্কা না করে ১৯৭১ এ গণহত্যায় তারা নেতৃ্ত্ব দেয়। যাইহোক ভারতবর্ষের দৃঢ়তা সুকৌশলের সামনে পাকিস্তান হার মানে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে গণহত্যার বিচার তেমন কোন গুরুত্ব পেল না। রাষ্ট্রসংঘ ও কয়েকটি দেশ কমিটি তৈরি করেছিল এই জেনোসাইডের বিচার চেয়ে। UNO ইনভেস্টিগেশন, আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন, বাংলাদেশ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গণহত্যা হয়েছে বলে মতামত দেয়। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য হল না আর ব্যাপারটি সম্ভবত ধামাচাপা পড়ে গেল। মানবাধিকার ভক্ষণ করা, সাম্প্রদায়িকতা উস্কে মৌলবাদকে চাঙ্গা করা, সংখ্যালঘু ও জনজাতিদের উচ্ছেদ, সম্পত্তি দখল, বঙ্গবন্ধু হত্যা, ইসলামাইজেশন, বি.এন.পি., জাতীয় পার্টির অরাজকতা এরপর বাংলাদেশকে ক্রমাগত আভ্যন্তরীণভাবে জখম করে। নীতি ও আদর্শের অপমৃত্যু ঘটে, বাঙালি মানসিকতার স্থলে চেপে বসল বাংলাদেশীত্বের ভেক ধরা রূপান্তরিত সংস্কৃতির বিষবাষ্প, এসবই পাকিস্তান পন্থার অনুকূলে যায় যেখানে পূর্বেকার যে অপরাধ তারা করেছিল তার বিচার করার মত মানসিক কাঠামোটাই লুপ্ত হয়েছিল। বাস্তবেও প্রায় ২০০৯-১০ সাল পর্যন্ত আমরা সেভাবে কোন সরকার বা নেতৃত্বকে এনিয়ে বৃহত্তর নীতি প্রণয়ন বা মুখ খুলতে দেখি না। অন্যদিকে ইতিহাস বিকৃতি, ঝুটা ভাষণ, ভুলতথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবেশন করে পশ্চিমী বিশ্বে পাকিস্তান নিজ কুকীর্তি গোপন করেছিল। আন্তর্জাতিক ফোরামেও খুনের ষড়যন্ত্র, জেনোসাইড, ইত্যাদি দুষ্কর্মের ট্যাগ যাতে তাদের নামের পাশে না লাগে বা এ ধরণের বিষয়ই যাতে উত্থাপিত না হয় তা নিয়ে তারা অদৃশ্য চেষ্টা করে গেছে। কেননা ছায়াযুদ্ধ বা এসব ব্যাপারে তারা পটু। বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও এক নেগেটিভ মানসিকতা এ নিয়ে ক্রিয়াশীল ছিল। কেননা জেনোসাইড নিয়ে পরবর্তী জেনারেশনগুলির প্রতিবাদী মানসিকতা বা ভাবিত হওয়ার সংখ্যা কম। অজ্ঞানতাবশতঃ হলেও এ এক স্বেচ্ছা অপরাধ। তা নাহলে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করতে এতদিন লেগে গেল কেন ? কিছুদিন আগে ২০১৭ সালে ১১ই মার্চ জাতীয় সংসদ এক প্রস্তাবনা নিয়ে ২৫শে মার্চ দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এবার থেকে গণহত্যা দিবস পালন করার ঘোষণা দেয়।৪লেমকিন ইন্সটিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন, জেনোসাইড ওয়াচ, জেনোসাইড স্কলারস (IAGS), গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্রাটেজি ফোরাম (ICSF), অল ইউরোপিয়ান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংগঠনের মতে পাকিস্তান ১৯৭১ এ জেনোসাইড ঘটিয়েছিল। IAGS ২০২২ এর মাঝামাঝি এক প্রস্তাবনা দ্বারা ‘Resolution to declare crimes committed during 1971 Bangladesh Genocide, crimes against humanity and war crimes’. ত্রিশ লক্ষ শহীদের এই বলিদানকে পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধ হিসেবে সামনে এনেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে ব্যাপারটি ক্রমে হয়ে যাচ্ছিল এক ভুলে যাওয়া স্মৃতির মতন। কেবল এক শ্রেণীর কিছু সচেতন, বুদ্ধিজীবী, লেখক এবং শাহরিয়ার কবীরের মত কয়েকজন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, উদারমনস্ক প্রোগ্রেসিভ যুবক যুবতীরা এ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। লেখালেখি ও এনিয়ে মতামত তৈরির চেষ্টা হয়েছে। সরকার দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিল। শাহবাগে জমায়েতকারীদের বিষয়টি ছিল পরিণত বাঙালি মানসিকতার অগ্রগতির একধাপ মাত্র। আর এতদিনে জামাত ও হেফাজতের কাছে ফাঁসীপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হয়ে গেছেন শহীদ বীরের মর্যাদাপ্রাপ্ত যা বাংলাদেশের নিকট আজ বিপদসংকেত। প্রশ্ন ওঠে বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে সাধারণ মানুষের মনন আবার প্রিপার্টিশেন এর অভিশপ্ত দিনগুলিতে কি ফিরে যাচ্ছে?গণহত্যা চাপিয়ে দেওয়া বা পরিকল্পিত কূটনৈতিক মাধ্যমের কোন বিষয় নয়। এ এক এথনিক ক্লিনঞ্জিং (Ethnic cleansing) যাদের বিরুদ্ধে এবং যেদেশে এরকমটি ঘটে একমাত্র তাদের পরিবারের বুকেই চিরতরে এ ক্ষত রয়ে যায়। এই ব্যথা অনুভবের শক্তি অন্য কারও নেই। আবার সম্পূর্ণ পরিবারকে যদি জেনোসাইডে মরতে হয় তবে তার হয়ে শোক করার বা ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখার লোকও বিশেষ নেই। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসার পথে যাদের নির্বিচারে মরতে হল তাদের হত্যাকারীদের আইনের দৃষ্টিতে কঠোর শাস্তিই একমাত্র প্রাপ্য। আর যেহেতু সেনা ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশীদাররা পাকিস্তানি তাই এ দায় সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানকে নিতে হবে। নতুন প্রজন্মের একথা জেনে রাখা ভাল যে ইসলাম রক্ষার দোহাই দিয়ে একাজ হয়েছিল। ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসের সেই অধ্যায়গুলিকে জেনোসাইডে ভুক্তভোগী যে কোন দেশেরই উচিত উচ্চশিক্ষার বইগুলিতে মুক্তভাবে এই পাঠ্যসূচী অন্তর্ভুক্ত করে ইতিহাসকে তুলে ধরা। বর্তমানে বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্র যেমন ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, কানাডা, প্রভৃতি জেনোসাইড সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য জানাতে পারছে। মানবাধিকারের স্বপ্ন দেখা, প্রকৃত বিচারের স্বপ্ন দেখা তারাও চান অপরাধের যোগ্য জবাব। এক্ষেত্রে এতদিন ধরে UNO র ইনঅ্যাকশন বা …

বাংলাদেশে গণহত্যা  ও যুদ্ধাপরাধে দায়ী পাকিস্তানঃ UNO প্রস্তাবনা তথা আন্তর্জাতিক কণ্ঠস্বরে জোরাল দাবী ন্যায়বিচারের। Read More »

একটি সুন্দর নির্বাচন করলেই তো হয়!

শিতাংশু গুহ, ১৫ই জুলাই ২০২৩, নিউইয়র্ক।। সমুদ্রে ঝড় উঠলে তা সাথে সাথে উপকূলে আছড়ে পড়ে না, ধীরে ধীরে তা ঘনীভূত হয়, এবং এক সময় ১০নং বিপদ সঙ্কেত উড়িয়ে লোকালয়ে সবকিছু ওলোট-পালট করে দেয়। কখনো-বা ঝড় হালকা হয়ে সামান্য বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে শান্ত হয়ে পরে! আজরা জেয়া বা ডোনাল্ড ল্যু’র সফর নিয়ে এখনও শেষকথা বলার সময় হয়নি। মিডিয়া বলছে, ঢাকার আবহাওয়া অতটা গরম নয়, ল্যু হাওয়া বইছে না, বরং অনুকূল মৃদুমন্দ ‘মোদী’ হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। ভালো। চিড়িয়াখানায় ভালুককে কাতুকুতু দিলে ভালুক নাকি হাসতে বেশ খানিকটা সময় নেয়? এক লোক ভালুককে কাতুকুতু দিয়ে বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষা করে, ভালুক হাসে-না, তিনি চলে যান, চব্বিশ ঘন্টা পর ফিরে এসে দেখেন ভালুক হাসছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাজ-কারবার ঐরকমই, রিয়্যাকশন জানতে আরো সময় নেবে? মার্কিন মুলুকে সব কাজ হয় প্রটোকল অনুসারে, জেয়া-ল্যু প্রটোকল মত কাজ সেরে এসেছেন, রিপোর্ট পরে। এতে খুশি হওয়ার বা দু:খ পাওয়ারও তেমন কোন কারণ নেই! আমেরিকা পাকিস্তানে ইমরান খানের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। দেশের অবস্থা খারাপ, ইমরান খান মস্কো গিয়েছিলেন পুটিনের কাছ থেকে টাকাপয়সা আনতে। এরফলে তিনি দু’কুল হারাচ্ছেন, এখন তার ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। ভারত ইমরান খানের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি, আসার কথাও না। পাকিস্তানী আর্মি আমেরিকাকে ভীষণ ভালবাসে। সুতরাং, খান সাহেবের অবস্থা আর ভালো হবার সম্ভবনা নেই, ‘সুখ’ আর তাঁর কপালে সইবে না? শেখ হাসিনা মস্কো যাননি। বেজিংও না। যদিও বেজিং ও মস্কোর লোকজন আসছেন, বিবৃতি দিচ্ছেন, পাশে থাকার কথা বলছেন। এ বড় বিপজ্জনক খেলা! একদা শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘খেলা হবে’। মমতা ব্যানার্জী ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান চুরি করে নিয়ে বললেন, ‘ খেলা হবে’, এবং বিধানসভা নির্বাচনে ভাঙ্গা-পা নিয়ে খেললেন জিতলেন। এখন ‘খেলা হচ্ছে’ ঢাকায়, আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে ‘কোয়াটার ফাইনাল’। প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে আসছেন। খেলা হবে। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, বাংলাদেশে ক’টি মিডিয়া শামীম ওসমানকে নিয়ে রংচং স্টোরি বানাচ্ছে, যা সবই ‘হলুদ’ রং-এর। এখানে কিচ্ছু হয়নি, জ্যাকসন হাইট্সের ৭৩ স্ট্রীটে দাঁড়িয়ে তিনি চা খাচ্ছিলেন, কিয়ৎ দূর থেকে তাকে একজন ‘গালি’ দেন্, প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, আমাদের ছেলেপিলে আসার আগেই এখান থেকে কেটে পর, নইলে আমেরিকা হলেও তোমার খবর আছে। ব্যস! ঘটনা এইটুকুই। ভিডিওতে কিচ্ছু নাই, তবুও—’পাইছি’–’পাইছি’–ভাব ! বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা হয়না। পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক ভালো, বাংলাদেশের বেজিং-মস্কোর সম্পর্ক ভালো। ইমরান খান মস্কোর সাথে হাত মিলিয়ে বিপদে পড়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধকালে মস্কোর সাথে ‘নুতন প্রেম’ আমেরিকা ভালোভাবে নেবে না? এরমধ্যে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, ঢাকা-দিল্লী চমৎকার সম্পর্ক এবং শেখ হাসিনা-মোদী পারস্পরিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং। শেখ হাসিনা-বাইডেন-এর মধ্যে হিমালয়ের মত দাঁড়িয়ে আছেন নরেন্দ্র মোদী। আমেরিকার সাথে শত্রুতার দরকার কি? চীনের সাথে ব্যবসা করা যাবে, ঘর-সংসার নয়! চীন আমেরিকার শত্রু, ভারত-চীন বন্ধু নয়! বাংলাদেশের আঞ্চলিক গুরুত্ব বাড়ছে, সাথে বাড়ছে ‘খেলা হবার’ সম্ভাবনা। রাশিয়া-চীন ‘দূরের বন্ধু’ থাকুক। নেতারা একটু আস্তে কথা বলুন। ইদি আমিনকে বৃটেন থাপ্পড় মেরে বসিয়ে দিয়েছিলো। নরিয়েগাকে যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিয়ে এসেছিলো। মাহিয়া মুরাদকে কেউ আশ্রয় দেয়নি। আমেরিকা বলছে ‘একটি সুন্দর নির্বাচন করুন’। স্বাধীনতা এনেছেন, দেশের উন্নতি করেছেন, একটি সুন্দর নির্বাচন করে দেখিয়ে দিন্। ব্যস।

বাঙালি ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের লড়াই

বিমল প্রামাণিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে মতাদর্শগত তফাৎ কখনই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পূর্ব প্রজন্ম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিলেন দ্বিজাতি তত্ত্বে বিশ্বাস রেখে। “পাকিস্তান নিছক একটি ভৌগলিক অঞ্চল নয়। এটা একটা আদর্শ, একটা মনস্তত্ত্ব, একটা বিশ্বাস। আমাদের বুঝতে হবে, option থাকা সত্ত্বেও অগ্রসরমান ও শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমান যুবকরা তিরিশ এবং চল্লিশের দশকে কলকাতা গিয়ে মুসলিম লিগের পতাকাতলে সমবেত হয়েছিলেন। সন্দ্বীপের মুজাফফর আহমদ, ফরিদপুরের হুমায়ুন কবীর কিম্বা দিনাজপুরের মোহাম্মদ দানেশরা ছিলেন সংখ্যায় নগণ্য। কাজী নজরুল ইসলাম কিম্বা মুজতবা আলীদের হাতের আঙ্গুলে গোনা যেত। নাজিমুদ্দিন, ভাসানী, আতাউর রহমান খান, ফজলুল কাদের চৌধুরী, শেখ মুজিবুর রহমান, সবুর খান, খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, আবুল মনসুর আহমদ এবং শাহ আজিজুর রহমানরা সংখ্যায় ছিলেন অনেক বেশি। তারা যদি সেদিন মুসলিম লিগ না করতেন, তা হলে এদেশের ইতিহাসটাই অন্যরকম হতো।”১যদি আমরা পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই, “তবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ও ইসলামি মৌলবাদ শক্তিশালী হয়ে ওঠার জন্য শুধু বি.এন.পি. ও জাতীয় পার্টির মুসলিম লীগীয় রাজনীতিই দায়ী নয়, এর পিছনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনীতির প্রবক্তা আওয়ামি লিগের ভূমিকাও রয়েছে। ১৯৪৮-১৯৭১ পর্বে আওয়ামি লিগ পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরই পূর্ব বাংলার বাঙালি মুসলমানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীদার ছিল। ঐসময় আওয়ামি লিগ বাঙালির অভিন্ন সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে বিশ্বাসী ছিল না।”২১৯৭২ সালে বদরুদ্দিন উমর সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের ভিত্তি’। এর একটা বাংলা অনুবাদও ঐ সময় আরেকটি বাংলা সাপ্তাহিকে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রবন্ধটিতে লেখক জোরালো যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের ভিত্তি আসলেই ‘বাঙালি মুসলিম জাতীয়তা’।” ৩উপরের আলোচনা থেকে এবিষয়টি স্পষ্ট যে, বাঙালি মুসলমান কখনও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে আঁকড়ে ধরতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি – তা বিভাগ-পূর্ব ভারতে বা পাকিস্তানের তেইশ বছর কিম্বা বর্তমান বাংলাদেশের পাঁচ দশকের অধিককাল। তারা কখনও দ্বিজাতিতত্ত্ব, কখনও অধিকারের দর-কষাকষির আন্দোলনে মুসলিম বাঙালিদের জন্য স্বায়ত্তশাসন বা বর্তমান বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বকলমে বাঙালি ইসলামি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠাকরণের উদ্যোগের চেষ্টা। এ বিষয়টি কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভরশীল নয় – বা বিশেষ সরকারের উপরও এর দায় বর্তায় না। এটা হচ্ছে সমগ্র বাঙালি মুসলমান সমাজের মতামতের প্রতিফলন।এর ফলস্বরূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত সরকারের দ্বারাই বাংলাদেশের প্রধান শত্রু যুদ্ধাপরাধী, যারা জঘন্যতম অপরাধে অপরাধী তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন। কেন এই বিচারহীনতা? আর এর পিছনের কারণ এবং উদ্দেশ্যই বা কি ? একথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এরাতো পূর্বপাকিস্তানেরই বাঙালি মুসলমান, যারা ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিব তথা আওয়ামি লিগকে বিপুল সংখ্যক ভোটে জয়যুক্ত করে পাকিস্তানের ক্ষমতার আসনে বসতে সুযোগ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানের ক্ষমতা না পেলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী/প্রেসিডেন্ট হয়েও তিনি অপরাধীদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে ব্যর্থ হলেন। এটা কি সাধারণ ঘটনা ! বাংলাদেশে তো এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ, বিক্ষোভ দেখা গেল না, এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও ! যারা যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিলেন, তাদের আত্মীয়স্বজনরাও নিশ্চুপ থাকলেন।এটাই পাকিস্তানি ম্যাজিক, মুসলিম জাতীয়তাবাদ। কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ, বিবেচনাবোধ দিয়ে এটা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আজকের পাকিস্তানি ও বাংলাদেশী সমাজের দিকে ফিরে তাকালে এটা বুঝতে কোন অসুবিধা হয়না।বর্তমান বাংলাদেশে রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং ক্ষমতার রাজনীতির মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। ক্ষমতা দখলের জন্য রাজনৈতিক জোট গঠন গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে দেশে বিদেশে সব সময়ই আমরা দেখতে পাই। এমনকি নীতি আদর্শগত বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও অনেক দেশেই জোট সরকার চলছে। বাংলাদেশেও এর নজির রয়েছে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সম্ভবত জোট গঠন চুড়ান্ত পর্যায়ে এখনও পৌঁছেনি। মুক্তিযুদ্ধ বা কোন মতাদর্শগত ঐক্যের চেয়ে দেশের আর্থিক ও পরিকাঠামোগত প্রধান ইস্যু হলেও বিরোধী দলের ইস্যু ভিন্ন। তারা চাইছে ‘free and fair’ নির্বাচন, সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাহলে সমস্যা কোথায় ?বাংলাদেশে অবাধ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলির উপর, এখানে স্বতন্ত্র নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা সর্বজনবিদিত। এর প্রমাণ রয়েছে ১৯৭৩ সালের নির্বাচন থেকেই। তদুপরি বর্তমান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃ্ত্ব উত্তরাধিকারসুত্রে প্রাপ্ত। দলগুলির মধ্যে গণতন্ত্রের অপ্রতুলতা। সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এর প্রতিফলন স্পষ্ট। গণতান্ত্রিক দেশ বা সমাজে বড় ঘটনা হল নির্বাচনী প্রক্রিয়া, সেটাও এই প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। এটা মাথায় রেখেই বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়টি ভাবতে হবে। কোন দেশের সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।যে ‘বাঙালি মুসলমান জাতীয়তা’ দিয়ে প্রবন্ধটি শুরু হয়েছিল তার ফলাফল দিয়েই শেষ হচ্ছে। “অবশেষে ১৯৮৮ সালের ৭ই জুন এরশাদ রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতাকে চুড়ান্তভাবে সংবিধানে সন্নিবেশিত করে বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করার জন্যে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বটি পূর্ণ করলেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনী গৃহীত হল এবং তাতে বলা হল, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে ইসলাম’, তবে প্রজাতন্ত্রে শান্তি ও সম্প্রতির সঙ্গে অন্যান্য ধর্মও অনুশীলন করা যাবে।’৪ স্বাধীনতার সতের বছর পর একজন স্বৈরশাসক একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে দ্বিতীয়ও নয়, আরও নিম্নশ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেন। সেসময় শেখ হাসিনা বলেছিলেনঃ ‘রাষ্ট্রধর্ম বিল সর্বস্তরের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। স্বৈরাচারের ক্ষমতার মসনদ রক্ষার কূটকৌশল হিসাবে পবিত্র ধর্মকে ব্যবহারের চক্রান্ত চলছে।’ আর খালেদা জিয়ার বক্তব্যঃ ‘রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, এবং ধর্মের নামে জাতিকে বিভক্ত করে অনৈক্য সৃষ্টি ও জনগণকে ধোকা দেওয়ার অপচেষ্টা মাত্র।’৫অর্থাৎ, দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধানই একটা ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছিলেন যে, রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে সন্নিবেশিত করার মাধ্যমে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে, এবং এটা জাতিকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র। খালেদা জিয়া পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলেন আর হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী। দু’জন সিদ্ধান্ত নিয়ে রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতার এই বিষবৃক্ষটি সংবিধান থেকে কি উৎপাটন করতে পারতেন না? কিন্তু করেননি। এখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, এবং খালেদা জিয়া বিরোধী দলনেত্রী। এখনও এই কাজটি করা যায়। কিন্তু কেউই উদ্যোগ নিচ্ছেন না।”৬এটাই বাঙালি মুসলিম জাতীয়তা। জিয়া, এরশাদ, বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা তারা কেউ কি মুসলিম জাতীয়তার বাইরে? শেখ মুজিবই যখন বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হলেন – যার ডাকে এবং নামে মুক্তিযুদ্ধ, সে যুদ্ধে মতাদর্শের কোন সুস্পষ্টতা ছিল না। মূল লক্ষ্য ছিল দখলদার মুলশত্রু পাকিস্তানকে পরাস্ত করা। আমরাও সেই লক্ষ্য নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। কোন জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম আমাদের সামনে ছিল না। কোন জাতিরাষ্ট্র কি জাতীয়তাবাদ ছাড়া প্রতিষ্ঠা পায়? বাংলাদেশ একটি বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র। অর্থাৎ একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র। যেমন পাকিস্তান। এটা যারা অস্বীকার করতে চান, তারা ভাবের ঘরে চুরি করেন।   তথ্যসূত্রঃ১ মহিউদ্দিন আহমেদ, জাতিরাষ্ট্র ভাবনা এবং বুদ্ধিজীবী মানস, বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিঃ ধর্ম- সাম্প্রদায়িকতার সঙ্কট, জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, ঢাকা, বাংলাদেশ, ১৯৯৯, পৃঃ ২৬৪।২ ইবনে আজাদ, বাংলাদেশে সেকুলার বুদ্ধিজীবীদের সমস্যা, … পৃঃ ২৫৫।৩ মহিউদ্দিন আহমেদ, ঐ, পৃঃ ২৬৬।৪ আবেদ খান, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতা, ঐ, পৃঃ ২৫০।৫ দৈনিক সংবাদ, ঢাকা, বাংলাদেশ, ৮.৬.১৯৮৮।৬ ইত্তেফাক, ঢাকা, বাংলাদেশ, ৮.৬.১৯৮৮।