নির্বাচনঃ কি হতে পারে?
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক (১) আওয়ামি লিগ ভাবছে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে। আওয়ামি লিগ চায় বিএনপি নির্বাচন বয়কট করুক। তাহলে আওয়ামি লিগ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে কি হবে? এ প্রশ্নের আপাতত তেমন কোন সদুত্তর নেই। বিএনপি কি নির্বাচনে আসবে? বিএনপি জানে এবার নির্বাচনে না এলে ভেতর থেকেই এই দলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। তাই ধারণা করি, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। দেশের স্বার্থে এবার নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। নইলে দেশ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়বে, যা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। জরিপ বলছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামি লিগ ৬৭টি আসন পাবে? অর্থাৎ আওয়ামি লিগ ক্ষমতা হারাবে? আওয়ামি লিগ হারতে রাজি আছে, কিন্তু ক্ষমতা বিএনপিকে দিতে চাইবে না! তাদের মনোভাব হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসলে নির্বাচনের দরকার কি? আওয়ামি লিগ ও বিএনপি একে অপরকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই আওয়ামি লিগ চাইবে আপাতত নির্বাচন না হোক। এ অবস্থা কি হতে পারে? বাংলাদেশে কি কিছু অসম্ভব? তবে আওয়ামি লিগ সংবিধানের বাইরে যাবে না! এও সত্য যে, এমন সমাধান চাই, যাতে বিদেশিরা মোটামুটি সন্তুষ্ট থাকে। বিএনপি মনে করে, ক্ষমতায় না গেলেও আওয়ামি লিগ হটাতে হবে। ব্রিকস সম্মেলনে মোদী-শিজিনপিং সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামি লিগ-বিএনপি এমত একটি ঐক্যমত কি আশা করা যায়? না, যদিও এটি হওয়া দরকার, কিন্তু কার্যতঃ সেটি অসম্ভব। তাহলে? তাহলে তো অনেক কিছুই হতে পারে, এ বছরের বাকি ক’টি মাস ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কি হতে পারে, এমন কিছু সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যাক। প্রথম সম্ভাবনা হচ্ছে, দেশে জরুরী অবস্থা জারী করা। রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করা। রাষ্ট্রপতি সবার সাথে আলোচনা করে একটি ‘অন্তর্বর্তী’ সরকার গঠন ক্রবেন, যেটি নির্বাচনী লেভেল ফিল্ড তৈরী করবে, এবং এরপর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এতে বিএনপি’র লাভ, তাদের মূল দাবি শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে নির্বাচনে না যাওয়ার শর্ত দাবি পূরণ হবে। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে। এসব কিছুই ‘হাইপোথেটিক’, আলোচনা সাপেক্ষ। দুই/এক বছর পর নির্বাচনে ফলাফল যাইহোক, তাতে আওয়ামি লিগের ক্ষতি নেই? ইতিমধ্যে বৈদেশিক চাপ কমবে, ২০০৮-এর মত একটি স্বচ্ছ নির্বাচন হবে? দ্বিতীয় সম্ভাবনা হচ্ছে, বর্তমান সরকার সবার অংশগ্রহণে একটি সুন্দর নির্বাচন করবে, এবং ফলাফল মেনে নেবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা না হয়ে ঐকমত্য হতে হবে। কারণঃ অবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতের মধ্যে আওয়ামি লিগকে শেষ করে দেবে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ থাকবে না, আমিও থাকবো না? বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, মনে হচ্ছে খুব একটা কঠিন সময় আসছে। এদের আশ্বস্ত করতে হবে। তৃ্তীয়তঃ সরকার ডেকে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা দিয়ে যাবে? তবে এক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন দরকার হতে পারে? তাই আপাততঃ সংসদ বাতিল হচ্ছে না। দলের ভিতর ক্যু হবার কোন সম্ভাবনা নাই, তাই শেখ হাসিনা যা চাইবেন, তাই হবে? চতুর্থতঃ ডঃ ইউনুস? শেখ হাসিনা স্বয়ং ইউনুসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। হয়তো আওয়ামি লিগ ভাবছে বিএনপি ডঃ ইউনুসকে তাদের ‘প্রধানমন্ত্রীর মুখ’ ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে নামবে। এতে বৈদেশিক সমর্থন যেমন মিলবে, তেমনি খালেদা-তারেক ইস্যু পিছিয়ে পড়বে। এই সম্ভাবনা খুব কম, কারণ বিএনপি বাইরের কাউকে বিশ্বাস করেনা। পঞ্চমতঃ বা চুড়ান্ত কথা হচ্ছে, এবারকার নির্বাচন সুষ্ঠু হতেই হবে, নইলে দেশ বিপাকে পড়বে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, বিএনপি ক্ষমতায় আসছে না। আওয়ামি লিগের বিকল্প বিএনপি নয়, শেখ হাসিনা’র বিকল্প খালেদা জিয়া নন । তারেক জিয়া’র কোন প্রশ্নই ওঠে না। খালেদা-তারেক নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা শূন্য, জিরো। অনেকে নিরপেক্ষ হতে শুরু করেছেন! (২) বাংলাদেশে শেখ হাসিনা’র যতটা বিরোধিতা, ভারতে ঠিক উল্টো, সেখানে তিনি ততটাই জনপ্রিয়। পুরো ভারতে কোন দলের কোন নেতা ‘শেখ হাসিনা’ বিরোধী খুঁজে পাওয়া যাবেনা। নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধী বা মমতা ব্যানার্জী’র মুখে কখনো শেখ হাসিনা বিরোধী কথাবার্তা শোনা যায়না। শেখ হাসিনা যাদু জানেন, তিনি সবাইকে যাদু করে রেখেছেন। ভারত তার নিজের প্রয়োজনে শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চায়। এটি শুধু ‘ওপেন সিক্রেট’ তাই নয়, এ লক্ষ্যে ভারত বিশ্বব্যাপী দরবার করে যাচ্ছে। জি-২০ সম্মেলনের পূর্বাহ্নে ভারত শেখ হাসিনাকে অভূতপূর্ব সম্মানে ভূষিত করে তা প্রমাণ করেছে। এতকিছুর পরও সবকিছু যে সরল রেখায় চলছে তা নয়? ব্রিকস সম্মেলন, দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের পর এবার আমেরিকায় সাধ্যমত চেষ্টা হবে, প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কের পর এক সপ্তাহ ওয়াশিংটনে থাকবেন। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে একজন মহিলা গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন বা জীবনযাত্রার যতটা উন্নয়ন করেছেন, তা অন্য মুসলিম দেশগুলোর অনুকরণীয় এবং পশ্চিমা দেশগুলির শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়া দরকার। বাস্তবতা এখনো উল্টো। সরকারের অপোজিশনে এবার বিএনপি নয়, আমেরিকা। কাজেই সতর্ক হওয়া দরকার। ছোটবেলায় পড়েছিলাম, ‘অমঙ্গলকে হাসিয়া উড়াইয়া দিলে মঙ্গলসমেত উড়িয়া যাইবে’। সঠিক নির্বাচন না হলে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে তখন আম ও ছালা দুটোই যাবে। ইইউ ইতিমধ্যে জিএসপি সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আমেরিকা যদি জিএসপি ও শান্তিরক্ষীর বিরোধিতা করে তাহলে কি হবে? বাস্তবতা বুঝতে হবে। বিএনপি-জামাত ২০০১-২০০৬ যত অপকর্ম করেছে, সারাদিন এর নিন্দা করা যায়, ঠিক আছে। কিন্তু গত পনের বছরের কর্মকান্ড, বিশেষেত: দু’টি নির্বাচনের দায় তো আওয়ামি লিগকে নিতে হবে। দেশের কথা চিন্তা করে অনেকে ভীত, সন্ত্রস্ত। আওয়ামি লিগ ভাবছে তারা ক্ষমতায় থাকছে, বিএনপি ভাবছে তারা ক্ষমতায় আসছে। বিএনপি অন্তত: এটুকু ভাবছে যে, আমেরিকা যখন লেগেছে, তখন এবার কিছু একটা হবে! সত্যি সত্যি যদি আমেরিকা কিছুটা নমনীয় না হয়, তাহলে দেশের মানুষের অসুবিধা হবে! বাংলাদেশের বড়বড় লোকজনের সবার ছেলেমেয়ে আমেরিকায় থাকে, অনেকে শেষ বয়সে থাকার জন্যে আমেরিকায় বাড়িঘর করেছেন, এঁরা কেউ চাইবেন না, আমেরিকা-ইউরোপের দরজা তাদের জন্যে বন্ধ হয়ে যাক? দেশে এখন লোকজন তাই নিরপেক্ষ হতে শুরু করেছেন! সবাই বসে আছেন, শেখ হাসিনা আমেরিকায় কতটা সফল হবেন এর ওপর। অক্টোবরের শুরুতে তিনি দেশে ফিরে যাবেন। ৬ই অক্টোবর ঐক্য পরিষদের মহাসম্মেলন, লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হবেন, সরকার তাঁর ২০১৮’র নির্বাচনী ইশতেহার অন্তত: কিছুটা বাস্তবায়ন না করলে হিন্দুদের খোলাখুলি আওয়ামি লিগকে সমর্থন করাটা কঠিন হবে। এবারের ভোটটি আওয়ামি লিগ ভার্সেস এন্টি-আওয়ামি লিগ, ভোট যদি হয়, আওয়ামি লিগের হিন্দু ভোটের দরকার হবে? অবশ্য, অনেকেই আগের মত জিততে চান, সেক্ষেত্রে ভোটের দরকার হবেনা । সেলফি (৩) লিখেছিলাম, শেখ হাসিনা-বাইডেন বৈঠকের চেষ্টা হচ্ছে। দিল্লিতে তা হয়নি। অন্তত: প্রকাশ্যে কিছু হয়নি। ভেতরে ভেতরে কিছু হয়েছে কিনা জানতে সময় নেবে। তবে সেলফি হয়েছে। বাইডেন সেলফি নিয়েছেন। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, পুতুল সবার সাথে বাইডেন ছবি তুলেছেন। এটি ভালো দিক। কারো কোন অসুবিধা হবার কথা নয়, তবে হচ্ছে, কারো কারো জ্বলছে। এতে খুশি হবারও তেমন কারণ নেই, এসব সৌজন্য। আবার বিষয়টি এতটা হালকা নাও হতে পারে। কথা হচ্ছে, যা হয়েছে, ভালই হয়েছে। বাইডেন যখন সেলফি নিচ্ছিলেন, ফরেন সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন তখন দূর থেকে তাকিয়ে দেখছিলেন। হয়তো ভাবছিলেন, ‘প্রেসিডেন্টও তাহলে সেলফি নেন’! আমাদের বিদেশমন্ত্রী তখন পাশেই ছিলেন। …