Center For Research In Indo

Author name: admin

নির্বাচনঃ কি হতে পারে?

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক (১) আওয়ামি লিগ ভাবছে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে। আওয়ামি লিগ চায় বিএনপি নির্বাচন বয়কট করুক। তাহলে আওয়ামি লিগ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে কি হবে?  এ প্রশ্নের আপাতত তেমন কোন সদুত্তর নেই। বিএনপি কি নির্বাচনে আসবে? বিএনপি জানে এবার নির্বাচনে না এলে ভেতর থেকেই এই দলের অস্তিত্ব  বিলীন হয়ে যাবে। তাই ধারণা করি, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। দেশের স্বার্থে এবার নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। নইলে দেশ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়বে, যা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। জরিপ বলছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামি লিগ ৬৭টি আসন পাবে? অর্থাৎ আওয়ামি লিগ ক্ষমতা হারাবে? আওয়ামি লিগ হারতে রাজি আছে, কিন্তু ক্ষমতা বিএনপিকে দিতে চাইবে না! তাদের মনোভাব হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসলে নির্বাচনের দরকার কি? আওয়ামি লিগ ও বিএনপি একে অপরকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই  আওয়ামি লিগ চাইবে আপাতত নির্বাচন না হোক। এ অবস্থা কি হতে পারে?  বাংলাদেশে কি কিছু অসম্ভব? তবে আওয়ামি লিগ সংবিধানের বাইরে যাবে না! এও সত্য যে, এমন সমাধান চাই, যাতে বিদেশিরা মোটামুটি সন্তুষ্ট থাকে। বিএনপি মনে করে, ক্ষমতায় না গেলেও আওয়ামি লিগ হটাতে হবে। ব্রিকস সম্মেলনে মোদী-শিজিনপিং  সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামি লিগ-বিএনপি এমত একটি ঐক্যমত কি আশা করা যায়? না, যদিও এটি হওয়া দরকার, কিন্তু কার্যতঃ সেটি অসম্ভব। তাহলে? তাহলে তো অনেক কিছুই হতে পারে, এ বছরের বাকি ক’টি মাস ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কি হতে পারে, এমন কিছু সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যাক। প্রথম সম্ভাবনা হচ্ছে, দেশে জরুরী অবস্থা জারী করা। রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করা। রাষ্ট্রপতি সবার সাথে আলোচনা করে একটি ‘অন্তর্বর্তী’ সরকার গঠন ক্রবেন, যেটি নির্বাচনী লেভেল ফিল্ড তৈরী করবে, এবং এরপর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এতে বিএনপি’র লাভ, তাদের মূল দাবি শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে নির্বাচনে না যাওয়ার শর্ত দাবি পূরণ হবে। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে। এসব কিছুই ‘হাইপোথেটিক’, আলোচনা সাপেক্ষ। দুই/এক বছর পর নির্বাচনে ফলাফল যাইহোক, তাতে আওয়ামি লিগের ক্ষতি নেই? ইতিমধ্যে বৈদেশিক চাপ কমবে, ২০০৮-এর মত একটি স্বচ্ছ নির্বাচন হবে? দ্বিতীয় সম্ভাবনা হচ্ছে, বর্তমান সরকার সবার অংশগ্রহণে একটি সুন্দর নির্বাচন করবে, এবং ফলাফল মেনে নেবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা না হয়ে ঐকমত্য হতে হবে। কারণঃ অবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতের মধ্যে আওয়ামি লিগকে শেষ করে দেবে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ থাকবে না, আমিও থাকবো না?  বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, মনে হচ্ছে খুব একটা কঠিন সময় আসছে। এদের আশ্বস্ত করতে হবে। তৃ্তীয়তঃ সরকার ডেকে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা দিয়ে যাবে? তবে এক্ষেত্রে  সংবিধান সংশোধন দরকার হতে পারে? তাই আপাততঃ সংসদ বাতিল হচ্ছে না। দলের ভিতর ক্যু হবার কোন সম্ভাবনা নাই, তাই শেখ হাসিনা যা চাইবেন, তাই হবে? চতুর্থতঃ ডঃ ইউনুস? শেখ হাসিনা স্বয়ং ইউনুসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। হয়তো আওয়ামি লিগ ভাবছে বিএনপি ডঃ ইউনুসকে তাদের ‘প্রধানমন্ত্রীর মুখ’  ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে নামবে। এতে বৈদেশিক সমর্থন যেমন মিলবে, তেমনি খালেদা-তারেক ইস্যু পিছিয়ে পড়বে। এই সম্ভাবনা খুব কম, কারণ বিএনপি বাইরের কাউকে বিশ্বাস করেনা। পঞ্চমতঃ বা চুড়ান্ত কথা হচ্ছে, এবারকার নির্বাচন সুষ্ঠু হতেই হবে, নইলে দেশ বিপাকে পড়বে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, বিএনপি ক্ষমতায় আসছে না। আওয়ামি লিগের বিকল্প বিএনপি নয়, শেখ হাসিনা’র বিকল্প খালেদা জিয়া নন । তারেক জিয়া’র কোন প্রশ্নই ওঠে না। খালেদা-তারেক নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা শূন্য, জিরো। অনেকে নিরপেক্ষ হতে শুরু করেছেন!  (২) বাংলাদেশে শেখ হাসিনা’র যতটা বিরোধিতা, ভারতে ঠিক উল্টো, সেখানে তিনি ততটাই জনপ্রিয়। পুরো ভারতে কোন দলের কোন নেতা ‘শেখ হাসিনা’ বিরোধী খুঁজে পাওয়া যাবেনা। নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধী বা মমতা ব্যানার্জী’র মুখে কখনো শেখ হাসিনা বিরোধী কথাবার্তা শোনা যায়না। শেখ হাসিনা যাদু জানেন, তিনি সবাইকে যাদু করে রেখেছেন। ভারত তার নিজের প্রয়োজনে শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চায়। এটি শুধু ‘ওপেন সিক্রেট’ তাই নয়, এ লক্ষ্যে ভারত বিশ্বব্যাপী দরবার করে যাচ্ছে। জি-২০ সম্মেলনের পূর্বাহ্নে ভারত শেখ হাসিনাকে অভূতপূর্ব সম্মানে ভূষিত করে তা প্রমাণ করেছে। এতকিছুর পরও সবকিছু যে সরল রেখায় চলছে তা নয়? ব্রিকস সম্মেলন, দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের পর  এবার আমেরিকায় সাধ্যমত চেষ্টা হবে, প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কের পর এক সপ্তাহ ওয়াশিংটনে থাকবেন। একটি  মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে একজন মহিলা গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন বা জীবনযাত্রার যতটা উন্নয়ন করেছেন, তা অন্য মুসলিম দেশগুলোর অনুকরণীয় এবং পশ্চিমা দেশগুলির  শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়া দরকার। বাস্তবতা এখনো উল্টো। সরকারের অপোজিশনে এবার বিএনপি নয়, আমেরিকা।  কাজেই সতর্ক হওয়া দরকার। ছোটবেলায় পড়েছিলাম, ‘অমঙ্গলকে হাসিয়া উড়াইয়া দিলে মঙ্গলসমেত উড়িয়া যাইবে’। সঠিক নির্বাচন না হলে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে তখন আম ও ছালা দুটোই যাবে। ইইউ ইতিমধ্যে জিএসপি সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আমেরিকা যদি জিএসপি ও শান্তিরক্ষীর বিরোধিতা করে তাহলে কি হবে? বাস্তবতা বুঝতে হবে। বিএনপি-জামাত ২০০১-২০০৬ যত অপকর্ম করেছে, সারাদিন এর নিন্দা করা যায়, ঠিক আছে। কিন্তু গত পনের বছরের কর্মকান্ড, বিশেষেত: দু’টি নির্বাচনের দায় তো আওয়ামি লিগকে নিতে হবে। দেশের কথা চিন্তা করে অনেকে ভীত, সন্ত্রস্ত। আওয়ামি লিগ ভাবছে তারা ক্ষমতায় থাকছে, বিএনপি ভাবছে তারা ক্ষমতায় আসছে। বিএনপি অন্তত: এটুকু ভাবছে যে, আমেরিকা যখন লেগেছে, তখন এবার কিছু একটা হবে! সত্যি সত্যি যদি আমেরিকা কিছুটা নমনীয় না হয়, তাহলে দেশের মানুষের অসুবিধা হবে! বাংলাদেশের বড়বড় লোকজনের সবার ছেলেমেয়ে আমেরিকায় থাকে, অনেকে শেষ বয়সে থাকার জন্যে আমেরিকায় বাড়িঘর করেছেন, এঁরা কেউ চাইবেন না, আমেরিকা-ইউরোপের দরজা তাদের জন্যে বন্ধ হয়ে যাক? দেশে এখন লোকজন তাই নিরপেক্ষ হতে শুরু করেছেন! সবাই বসে আছেন, শেখ হাসিনা আমেরিকায় কতটা সফল হবেন এর ওপর। অক্টোবরের শুরুতে তিনি দেশে ফিরে যাবেন। ৬ই অক্টোবর  ঐক্য পরিষদের মহাসম্মেলন, লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হবেন, সরকার তাঁর ২০১৮’র নির্বাচনী ইশতেহার অন্তত: কিছুটা বাস্তবায়ন না করলে হিন্দুদের খোলাখুলি আওয়ামি লিগকে সমর্থন করাটা কঠিন হবে। এবারের ভোটটি আওয়ামি লিগ ভার্সেস এন্টি-আওয়ামি লিগ, ভোট যদি হয়, আওয়ামি লিগের হিন্দু ভোটের দরকার হবে? অবশ্য, অনেকেই আগের মত জিততে চান, সেক্ষেত্রে ভোটের দরকার হবেনা । সেলফি (৩) লিখেছিলাম, শেখ হাসিনা-বাইডেন বৈঠকের চেষ্টা হচ্ছে। দিল্লিতে তা হয়নি। অন্তত: প্রকাশ্যে কিছু হয়নি। ভেতরে ভেতরে কিছু হয়েছে কিনা জানতে সময় নেবে। তবে সেলফি হয়েছে। বাইডেন সেলফি নিয়েছেন। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, পুতুল সবার সাথে বাইডেন ছবি তুলেছেন। এটি ভালো দিক। কারো কোন অসুবিধা হবার কথা নয়, তবে হচ্ছে, কারো কারো জ্বলছে। এতে খুশি হবারও তেমন কারণ নেই, এসব সৌজন্য। আবার বিষয়টি এতটা হালকা নাও হতে পারে। কথা হচ্ছে, যা হয়েছে, ভালই হয়েছে। বাইডেন যখন সেলফি নিচ্ছিলেন, ফরেন সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন তখন দূর থেকে তাকিয়ে দেখছিলেন। হয়তো ভাবছিলেন, ‘প্রেসিডেন্টও তাহলে সেলফি নেন’! আমাদের বিদেশমন্ত্রী তখন পাশেই ছিলেন। …

নির্বাচনঃ কি হতে পারে? Read More »

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের নবজাগরণের অগ্রদূত বনভন্তে

ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের পার্বত্য অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী বসবাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে একজন অসামান্য মহাপুরুষের নাম শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তে। তিনি 1976 থেকে 2012 খ্রী. পর্যন্ত ছিলেন রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে তাঁর অবদান অনতিক্রম্য। তাঁর ধর্মপ্রচারের সময়কাল বিশ শতকের  সত্তরের দশক থেকে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের গোড়া অর্থাৎ 2012 খ্রী. পর্যন্ত প্রায় 42 বছর। 1962 সালে উপসম্পদা বা ভিক্ষুত্ব গ্রহণ থেকে হিসাব করলে এই সময়সীমা আরও 8 বছর বেড়ে হয় 50 বছর বা অর্ধশতাব্দী। সুতরাং সুদীর্ঘ 50 বছর যাবৎ বনভন্তে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্ম ও বৌদ্ধ সংস্কৃতিমুখী সমাজ বিনির্মাণে নিরলসভাবে ধর্মোপদেশ দেশনা করে গেছেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ আচার-অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতিতে নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। 24 ঘণ্টার মধ্যে সুতা কেটে ভিক্ষুদের পরিধেয় চীবর তৈরি করে কঠিন চীবর দানের প্রবর্তন, উপগুপ্ত বুদ্ধের পূজা, ছিমিতং পূজা বা স্বর্গঘর তৈরি করে স্বর্গের সোপানগুলোর ধারণা প্রদান, কার্তিক মাসের চাঁদদেখা থেকে মাসব্যাপী আকাশ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, সারারাত ব্যাপী মঙ্গলসূত্র পাঠ বা পরিত্রাণ শ্রবণ, বিপুল সংখ্যক ভিক্ষু সমাবেশে মহাসংঘদান, একইসাথে শত কূলপুত্রকে শ্রামণ্যধর্মে দীক্ষা বা প্রব্রজ্যাদান, সমগ্র ত্রিপিটক বঙ্গানুবাদ করে প্রকাশের নিদের্শন প্রদান, রাজবন পালি কলেজ প্রতিষ্ঠা, বুদ্ধগয়ার আদলে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে একটি দৃষ্টিনন্দন বিশ্বশান্তি প্যাগোডা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ, তিন পার্বত্য জেলায় এমনকি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শাখা বনবিহার প্রতিষ্ঠা করে একই নীতি আদর্শের শিষ্যসংঘ প্রেরণ করে ধর্মপ্রচার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।   বনভন্তের নির্দেশিত এসব দানকর্ম, উৎসব অনুষ্ঠান, পূর্জা-পার্বণ ও প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধ সমাজ গঠনে অতুলনীয় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে।ফলশ্রুতিতে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামব্যাপী গড়ে ওঠে একটি সুশৃঙ্খল বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুশাসন। চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, বড়ুয়া সকল সম্প্রদায়ের মনে ধর্মচেতনা জাগ্রত করে এবং ত্রিরত্ন তথা বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ এবং বৌদ্ধ বিহারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও অনুরাগের জোয়ার সৃষ্টি হয়। বুদ্ধ বলেছেন সংসার অনিত্য। বনভন্তেও বাংলাদেশের আপামর বৌদ্ধদের মনে ধর্মবোধ সৃষ্টি করে 2012 সালের 30 জানুয়ারি দেহত্যাগ করে পরিনির্বাণ লাভ করেন। তবে তাঁর পবিত্র দেহধাতু প্রায় একযুগ ধরে রাজবন বিহারে  পেটিকাবদ্ধ অবস্থায় ভক্তদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এ প্রবন্ধে পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণে এই মহাপুরুষের কৃতিত্ব সম্বন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে। 1920 সালের 8 জানুয়ারি পূজ্য বনভন্তে ধরাধামে আবির্ভূত হন। তৎকালীন প্রতাপশালী মৌজাপ্রধান হেডম্যান শ্রী ত্রিলোচন দেওয়ান-শাসিত মৌজার অন্তর্গত একটি গ্রাম ছিল মোরঘোনা। সেই গ্রামেই হারুমোহন চাকমা ও বীরপুদি চাকমার সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন রথীন্দ্রলাল চাকমা যিনি নিজের সাধনা ও কর্মের ফলে কাল পরিক্রমায় লোকমুখে বনভন্তে নামে সমধিক পরিচিত ও পূজিত হন। বনভন্তের পবিত্র জন্মস্থান মোরঘোনা ও ধ্যানস্থান ধনপাতা পরিণত হয়েছে পবিত্র তীর্থস্থানে।কাপ্তাই হ্রদের জলে গ্রামটি নিমজ্জিত হলেও বর্তমানে হ্রদের মাঝখানেই নির্মিত হয়েছে বনভন্তের সুদৃশ্য স্মৃতিস্তম্ভ। শ্রদ্ধেয় বনভন্তে গৃহী জীবনে তৎকালীন রাঙামাটি শহরে ধনাঢ্য বিরাজমোহন দেওয়ান বাবুর দোকানে চাকরি নিয়েছিলেন। রাঙামাটি শহরে অবস্থান করার সুবাদে তিনি অবসর সময়ে প্রচুর গ্রন্থ পাঠের সুযোগ লাভ করেন। বনভন্তের জন্মস্থান মোরঘোনা ছিল রাঙ্গামাটির চাকমা রাজবাড়ি ও বড়াদমের দেওয়ান পরিবারের কাছাকাছি।  চাকমা রাজবাড়ি এলাকায় ছিল বিশাল বৌদ্ধ বিহার এবং বড়াদমেও ছিল পার্বত্য চট্টল ধাতুচৈত্য বৌদ্ধ বিহার। ফলশ্রুতিতে রথীন্দ্র ছোটবেলা থেকেই বৌদ্ধ ধর্মীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার ও একান্ত সান্নিধ্যে আসার সুযোগ লাভ করেন। বনভন্তের নিজগ্রাম মোরঘোনাতেও একটি বৌদ্ধ বিহার ছিল। সেদিক দিয়ে বনভন্তে শৈশবে বৌদ্ধ মন্দির, বুদ্ধমূর্তি, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ ধর্মানুষ্ঠান স্বচক্ষে দেখার অপার সুযোগ লাভ করেন যা তাঁর বাল্যকালের কোমল কচি চিত্তে বৈরাগ্যের চিন্তার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সংসার জীবনের চেয়ে বুদ্ধের নির্দেশিত প্রব্রজ্যা জীবনকেই শ্রেয়তর বলে মনস্থির করতে সক্ষম হন। এর ধারাবাহিকতায় 1949 সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে গুরুভন্তে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবিরের নিকট গৃহীজীবন পরিত্যাগ করে প্রব্রজ্জিত হন। তিনি শুরুতে রথীন্দ্র শ্রমণ নাম  প্রাপ্ত হন। পরে পারমার্থিক জ্ঞানের সন্ধানে বারোটি বছর অরণ্যজঙ্গলে ধ্যানসাধনারত অবস্থায় তিনি ভক্ত- পূজারী ও সাধারণ মানুষের নিকট বনশ্রমণ নামে পরিচিত হন। পূজ্য বনভন্তে শ্রমণ থাকা অবস্থায় কাপ্তাই বাঁধের ফলে সৃষ্ট হ্রদের পানি তাঁর সাধনাস্থান ধনপাতা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে দীঘিনালায় চলে আসেন। ওই অবস্থায় তিনি তৎকালীন গুরুস্থানীয় সাংঘিক ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে 1962 সালে উপসম্পদা তথা ভিক্ষুত্ব গ্রহণে সম্মত হন।বনশ্রমণ নিরন্তর সাধনায় নিমগ্ন থাকতে পছন্দ করেন বলে উপসম্পদার পর তাঁর নাম রাখা হয় সাধনানন্দ ভিক্ষু। আর সর্বসাধারণের নিকট বনভন্তে নামেই সম্বোধিত ও পূজিত হতে থাকেন। অতঃপর শুরু হয় তাঁর ধর্মপ্রচার কাজ।     রাঙামাটি পার্বত্য জেলার একটি উপজেলা হলো লংগদু। দীঘিনালা থেকে কাছে। গভীর অরণ্য আচ্ছাদিত এলাকা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেখানে তিনটিলা নামক স্থানে অবস্থান করেন।  তখন তাঁর সাধকজীবন, আধ্যাত্মিক শক্তি, প্রজ্ঞাবল, ঋদ্ধিবল ও বিশুদ্ধ ত্যাগময় সরল সাধাসিধে জীবনযাপন লোকমুখে জানাজানি হতে থাকে। 1973 সালে তাঁর নির্দেশনায় ও উপদেশে লংগদুস্থ তিনটিলা বনবিহারে প্রথমবারের মতো বুদ্ধযুগের মহাউপসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয় । 24 ঘণ্টার মধ্যে সুতা কেটে, রঙে ভিজিয়ে. আগুনের তাপে শুকিয়ে, টানা দিয়ে. কোমর তাঁতে কাপড়/চীবর বুনে ও সেলাই করে সংশ্লিষ্ট বিহারের অধ্যক্ষকে দান করা হলো কঠিন চীবর দান। এমন অভূতপূর্ব দানপ্রক্রিয়া দেখে এবং চাকমাদের প্রথাগত ঐতিহ্যবাহী বেইনবুননের সাথে সামঞ্জস্য দেখে সকলেই অভিভূত হন।এরপর বনভন্তের খ্যাতি দ্রুত   অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর খ্যাতির কথা লংগদু থেকে রাঙামাটির রাজপরিবার পর্যন্ত পৌছঁতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। পরম্পরাগতভাবে সৎ ধর্মানুরাগী, সমাজহিতৈষী, প্রজাবৎসল চাকমা রাজপরিবার শ্রদ্ধেয় বনভন্তেকে সশিষ্যে রাঙামাটির রাজবাড়ির পার্শ্ববর্তী বনে বিহার স্থাপন করে স্থায়ীভাবে বসবাসের আমন্ত্রণ জানায়। বনভন্তের সেই ফাং বা আমন্ত্রণ গ্রহণ ছিল একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত । অতঃপর রাজবাড়ির  উত্তরপাশে সবুজশ্যামল ছায়া সুনিবিড় বনে স্থাপিত হয় রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার যা এখন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র। লংগদু থেকে রাঙামাটি অবস্থানগত, যোগাযোগ ও দায়কদায়িকাদের অবস্থা বিবেচনায় সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থিত। বনভন্তে কর্তৃক রাজপরিবারের আমন্ত্রণে সাড়া প্রদান ও রাঙামাটিতে অবস্থানের সিদ্ধান্তগ্রহণ নিঃসন্দেহে বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারের ক্ষেত্রে মাইলফলক রচনা করে। রাজনৈতিক নানা উত্থান পতনের সময়েও কঠিন পরিবেশে শ্রদ্ধেয় বনভন্তে অভয় ও অবিচল চিত্তে ধর্মপ্রচার করেছেন।  বুদ্ধের দেশিত অহিংসা, করুণা, মুদিতা, উপেক্ষা, কৃতজ্ঞতাও পরোপকারিতার কথা সহজ সরল উপমা দিয়ে দেশনা করে গেছেন। ব্যাখ্যা করেছেন দানের মাহাত্ম্য, শীল পালন ও নৈতিকতার গুরুত্ব, ভাবনার প্রয়োজনীয়তা। সমালোচনা ও প্রতিবন্ধকতা এসেছিল।কিন্তু তিনি তাঁর নীতি থেকে একচুলও চ্যুত হননি।  তাঁর  ঋদ্ধিবলম আধ্যাত্মিক শক্তি, প্রজ্ঞাতেজের সামনে আসলে নিন্দুক, সমালোচক ও শক্তিধররা আপনিই নতজানু হয়েছেন। করজোড়ে বন্দনা নিবেদন করেছেন। এ সময়কালে আশির দশকে রাঙামাটি শহর এলাকা এবং সদর উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন বনভন্তের  ধর্মপ্রচারের আওতায় চলে আসে। বনভন্তের রচিত ও শ্রুত বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগীত, কীর্তন, বন্দুকভাঙ্গা, তৈমিদং, বালুখালি, মগবান, জীবতলি কুতুকছড়ির বৌদ্ধ জনপদ, গৃহ ও বিহারগুলিতে বাজতে শুনা যেতো। বনভন্তের জীবনের শেষ পনেরো বছর ছিল(1997-2012) খ্যাতি ও সাফল্যের স্বর্ণালী অধ্যায়। এসময় বাংলাদেশে ধর্মপ্রচারের অনুকুল পরিবেশ …

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের নবজাগরণের অগ্রদূত বনভন্তে Read More »

সৌদি নয়, বৌদি ও ভাবীই ভবিষ্যৎ

।।শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। (১) নিউইয়র্কে এপ্রিল ২০২৩ এর শেষ সপ্তাহে একজন প্রগতিশীল লেখক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিয়ে ‘সৌদিও চাইনা, বৌদিও চাইনা’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ লেখেন।  ছন্দোময় হেডিং, শুনতে ভালো লাগে, পাঠক খাবে। এতে কিছুটা সংগ্রাম, কিছুটা আপোষ সবই আছে। আমাদের দেশের প্রগতিশীলরা  যেমনটা হ’ন, ‘নিজেদের লোকগুলোকে খুশি রাখা’ এবং তাতে ‘অন্যরা একটু অখুশি হলেও ক্ষতি নেই’-এটিও তাই! এটি আপোস। দেশে এমনতর আপোস  করতে করতে সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে, প্রগতিশীলরা তাই এখন মুখ খুলে ‘টু-শব্দ’টি পর্যন্ত করতে পারছেন না? নিউইয়র্কে এঁরা ইনিয়ে-বিনিয়ে সত্য এড়িয়ে যান, কেউ ভয়ে, কেউবা পুরস্কার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকায়। সৌদি আর বৌদি শব্দের সাথে বাঙালী পরিচিত। বৌদি শব্দটি পুরোপুরি তদ্ভব বাংলা শব্দ। মূলত: বাঙালী হিন্দু এটি ব্যবহার করে, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ধর্ম-নির্বিশেষে ‘ভাবী’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত হয়, বাংলাদেশের মুসলমান ‘ভাবী’ ডাকে। ভাবী বাংলা শব্দ নয়, ‘বৌদি চাইনা’ না বলে ‘ভাবি চাইনা’ বলার সাহস কিন্তু কারও নেই? লেখকের ধর্মীয় পরিচয় তিনি মুসলমান, ‘ভাবী চাইনা তিনি লিখতে পারেন না, লেখা উচিতও নয়, ঠিক একই কারণে ‘বৌদি চাইনা’ লেখা ঠিক হয়নি। তবু তিনি লিখেছেন, কারণ লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মুক্তমনা মুসলমান লেখকরা ‘ঈশ্বরের’ বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন, কিন্তু ঈশ্বরের পরিবর্তে ‘আল্লাহ’ শব্দটি ‘মাইরের’ ভয়ে ব্যবহার করেন না? ‘বৌদি চাইনা’ বললে অনেকে ‘হিন্দু চাইনা’ বুঝবে। একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে এভাবে নাকচ করে দেয়াটা ঠিক হয়নি। হেডিং-এর ভেতর কি আছে অধিকাংশ পাঠক তা পড়ে না, বরং হেডিং দেখে মনে মনে একটি চিত্র এঁকে নেন। সৌদিও চাইনা, বৌদিও চাইনা’- হেডিং-র একটু ব্যাখ্যা দেয়া যাক? বাংলাদেশের আর্দ্র জলবায়ুতে কেউ চাইলেও তপ্ত সৌদি কালচার টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়, আগেও চেষ্টা হয়েছে, সম্ভব হয়নি, কারণ প্রকৃতির         নিজস্ব নিয়মে সবকিছু ঠিকঠাক করে নেয়। তাই, মরু কালচার চাইলেও বঙ্গদেশে ওটি টেকানো বেশ কঠিন। পক্ষান্তরে বৌদিরা বঙ্গদেশের সম্পদ, ভুমিপুত্ৰী, তাঁদের বাদ দেয়া যাবেনা। বৌদি শব্দটি চমৎকার শ্রুতিমধুর, মিষ্টি, রসঘন এবং ভালবাসার। একটি মেয়ের নাম ‘মোসাম্মৎ বিলকিস খানম চম্পা’, লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সবাই তাঁকে ‘চম্পা’ ডাকে। চম্পা নামের মধ্যে কেউ কেউ গন্ধ খুজবেন বটে, কিন্তু ওটি বাংলা শব্দ, সহজ ও শ্রুতিমধুর, তাই বেশি প্রচলিত। ভাষায় অনেক শব্দ আসে-যায়, সবকিছু টেকে না, ‘মোসাম্মৎ’ তাই টেকেনি? ছয়/সাত  দশক আগে অধিকাংশ মুসলিম বাড়ীতে ‘সালুন’ ও ‘মাছের রসা’ শব্দ দু’টি চালু ছিল, এখন নেই, সেই স্থান দখল করেছে ‘তরকারী ও ঝোল’, এটি ভাষার নিয়ম, ধর্মের নয়। একইভাবে ‘মঙ্গল’ শব্দটিও বাংলা। নিউইয়র্কে এবার রমজানে ‘পহেলা বৈশাখ’ পালন নিয়ে যা হলো, যারা বিরোধিতা করলো, তারা প্রায় সবাই ‘তথাকথিত’ প্রগতিশীল, এবং তাদের মূল আপত্তিটি ছিলো ‘মঙ্গল’ শব্দটি নিয়ে! প্রায়শ: শোনা যায়, ‘বাংলা ভাষা হিন্দুদের ভাষা’, কথাটা একেবারে মিথ্যা নয়, এই কারণে সাধারণ মুসলমান এটি মনেপ্রাণে গ্রহণ করে নিতে পারছে না! যেহেতু বাংলা ভাষা ভারতীয় উপমহাদেশের সন্তান, যেহেতু ভারত একদা পুরোটাই হিন্দু ছিলো, তাই বাংলা ভাষায় হিন্দুদের আধিপত্য স্পষ্ট। ইংরেজি গ্রহণ না করে ভারতীয় মুসলমানরা ভুল করেছিল, বাংলাভাষা নিয়ে কি একই ভুল হচ্ছে না? ভাষার কি কোন ধর্ম হয়? সংস্কৃতির পরিধি বৃহৎ, ধর্ম এর একটি উপাদান। বঙ্গ সংস্কৃতি মানে বাংলার সংস্কৃতি। বাংলার জলবায়ু, মানুষের আচার- আচরণ, খাদ্য, উৎসব নিয়েই এটি ভাস্বর। মাছে-ভাতে বাঙালী, এটিই বঙ্গ-সংস্কৃতি। সংস্কৃতিতে দেয়া-নেয়া, আদান-প্রদান চলে। বাঙ্গালী মুসলমানের বিয়েতে আগে ‘গায়ে-হলুদ’ ছিল না, এখন সেটি ঢুকেছে। এটি ধর্ম নয়, সংস্কৃতি, হিন্দু মুসলমান সবাই করে। এখন ঈদের আগের দিন ‘চাঁদনী রাত’ শুরু হয়েছে, এটি আগে ছিল না, এখন হচ্ছে। আগে পান্তা-ইলিশ ছিল না, এখন ঢুকছে। বঙ্গ সংস্কৃতি নাচে-গানে ভরপুর। মরু সংস্কৃতি’র সাথে গান-বাজনা  যায় না, বঙ্গ সংস্কৃতি মানেই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। এর প্রাণ এখনো বৌদিরাই। দেশে যেদিন বৌদিরা (হিন্দুরা) বাদ হয়ে যাবে, সেদিন সংস্কৃতিও বাদ হয়ে যাবে? বাংলাদেশের কথা থাকুক, এই নিউইয়র্ক শহরে বাঙালী সংস্কৃতির প্রাণ বৌদিরা। সাংস্কৃতিক স্কুলগুলোতে একটু ‘ঢু’ মারলে এটি স্পষ্ট হবে, দেখবেন বৌদিরা (হিন্দুরা) নাই তো বঙ্গ-সংস্কৃতি নাই! দেশে কিন্তু ‘সৌদিও চাই, ভাবীও চাই’ ঘটনা ঘটে গেছে। তাইতো, ২০১২-তে রামু থেকে ২০২১-এ কুমিল্লা পর্যন্ত বা এখনও  প্রতিদিন যতগুলো সাম্প্রদায়িক হিংসার  ঘটনা ঘটেছে বা ঘটছে, তাতে শুধু প্রতিক্রিয়াশীলরা নন, তথাকথিত প্রগতিশীলরা উৎসাহের সাথে অংশ নিয়েছেন, বহুস্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রতিবাদ করার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না! আমাদের দেশের কমিউনিস্টদের মত প্রগতিশীলরাও আগে মুসলমান,  তারপর বাঙালী! তাই অন্য ধর্মের লোকজনের ওপর অত্যাচার হলে এঁরা এগিয়ে আসেন না, কথা বলেন না, চোখ বন্ধ করে থাকেন। বৌদিরা তা নয়, বৌদিরা বঙ্গবন্ধু’র মত আগে মানুষ, তারপর বাঙালী, এরপর হিন্দু/মুসলমান। সুতরাং, বৌদিদের (হিন্দুদের) বাদ দিতে চাইলেও বাদ দেয়া যাবেনা। মোঘল-পাঠানরা  ছয়শ বছর চেষ্টা করে পারেনি, পাকিস্তানীরা সিকি শতাব্দী চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী অর্ধ-শতাব্দী ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে, কাজ হচ্ছেনা। কারণ বৌদিদের সাংস্কৃতিক শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত, এবং তা প্রাকৃতিক, চাইলেও ধ্বংস হয়না। আর যদি কখনো দৈব কারণে বৌদিদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পরে, তখন ‘আত্মপরিচয় সংকটে’ ভোগা আজকের তথাকথিত প্রগতিশীলরাও থাকবেন না। কারণ, মৌলবাদ বড়ই নির্মম, কাউকে ক্ষমা করে না। তখন কিন্তু দাউদ হায়দার, তসলিমা’র মত ‘বৌদি জিন্দাবাদ’-ই একমাত্র ভরসা। সৌদি নয়, বৌদি ও ভাবীই । জন্মাষ্টমী ও সংখ্যালঘু   (২) জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে এবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। পাঁচ হাজার হিন্দু নেতানেত্রী (এতো নেতা?) উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামি লিগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না, সবাই এদেশের নাগরিক, সবার সমান অধিকার। সুন্দর কথা। ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইসলাম শ্রেষ্ট ধর্ম, মদিনা সনদে দেশ চলবে একথাও প্রায়শ: বলেন। সংবিধানের ললাটে পঞ্চম   অষ্টম সংশোধনী, অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘রাষ্ট্রধর্ম’ তো আছেই। শত্রু সম্পত্তি আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টও আছে। এরপরও প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন, তখন হিন্দুরা এখন থেকে হিন্দু নামে পরিচিত হোন, অথবা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক হিসাবে পরিচিত হতে পারেন। ঢাকায় অন্যত্র একই অনুষ্ঠানে অর্থাৎ জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সামনে নির্বাচন, সময় খারাপ, এ সময় অশুভ শক্তি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করতে পারে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিকের নাম উল্লেখ করেন। জবাবে  গোবিন্দ প্রামাণিক শত্রু সম্পত্তি আইন, রমনা কালীবাড়ি, হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা ইত্যাদি প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, হিন্দু নির্যাতন ও দেশত্যাগে বাধ্য করা ছাড়া গত ১৫ বছরে আওয়ামি লিগ সরকার হিন্দুদের জন্যে কি করেছে তা জানতে চেয়েছেন। নির্বাচন এলে ভোটারের দাম বাড়ে, আপাতত: হিন্দুদের কিছুটা কদর বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিলেন নিজেদের ‘সংখ্যালঘু’ না ভাবতে। মন্ত্রী বললেন, ‘সংখ্যালঘু’র ওপর হামলা হতে পারে। হিন্দুরা কার কথা শুনবে? মিডিয়া থেকে মন্ত্রীর বক্তব্য আরও কিছুটা শোনা যাক?  মন্ত্রী বলেছেন, খুব স্পর্শকাতর সময়, সামনে নির্বাচন, অশুভ শক্তির খেলা শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার একমাত্র গ্যারান্টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার চেয়ে সনাতন ধর্মের মানুষের আপন দ্বিতীয় কেউ নেই। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশে অসুরের আস্ফালন হচ্ছে । দুষ্টের সংখ্যা বেড়ে গেছে।’  তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে হিন্দুরা নিরাপদে, আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় থাকাকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইবোনেরা নিরাপদে ছিলেন …

সৌদি নয়, বৌদি ও ভাবীই ভবিষ্যৎ Read More »

বাংলাদেশ তথা পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলার সংস্কৃতি, রাজনীতি ও জাতীয় সমৃদ্ধি।

শঙ্কর সরকার, বাংলাদেশ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাণ খুলে গেয়েছেন ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’  এটি একটি কবিতা এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ গান। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। বিবিসির  জরিপ ও তথ্যমতে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি —-’  গানটি বাংলাদেশে সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গান। কবিগুরু ভারতবর্ষের মধ্যে সর্বপ্রথম নোবেল পুরস্কার পেয়ে সারা বিশ্বে মর্যাদা ও সম্মানের আসনে বসেন এবং ভারতবর্ষকে সারা বিশ্বে  বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রায় হাজার বছরের পরাধীন ভারতমাতার ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সন্তানেরা ‘বন্দে মাতরম্’ মহামন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেন।  আর এই মহামন্ত্রের স্রষ্টাও এক বাঙালি, সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী বাঙালি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, যিনি মেধায় কমনওয়েলথ ভুক্ত ৫৪টি দেশের মধ্যে তৃতীয় এবং অবিভক্ত ভারতের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন। আধুনিক ভারতবর্ষকে আলোর পথ দেখিয়েছেন যে সব ভারতমাতার সন্তানেরা, তাদের মধ্যে বাঙালিরাই পথিকৃৎ বলা চলে। আজকাল বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহলে একটি কথা প্রায় মাঝে মাঝে শোনা যায় বাঙালি বিভক্ত তাই বাঙালি দুর্বল। আমাদের প্রশ্ন জাগে বাঙালিকে বিভক্ত  করল কে বা  কেন বাঙালি বিভক্ত হল?  ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ডের বাঙালি জাতি কেন বিভক্ত হল? কেন মারাঠা, গুজরাটি, উড়িয়া, তামিল ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ন্যায় বাঙালি একটি অবিভক্ত অভিন্ন জাতি হিসেবে নিজেদের ধরে রাখতে পারেনি বা একটি অখণ্ড জাতি হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারল না কেন? বৃটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতবর্ষে একটি কথা প্রচলিত ছিল সেটা হল What Bengal thinks today India thinks tomorrow. কথাটা সমগ্র ভারতবর্ষের লোকজন স্বীকার করেছেন এবং বৃটিশ সরকারও বিষয়টি মানতো। ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত দুর্বল বাঙালি তাই ভারতের একদা লোকবলে, অর্থবলে, শিক্ষা, শিল্প, প্রতিটি ক্ষেত্রে এক বিশাল জনগোষ্ঠী হয়েও  অবিভক্ত ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বিশ্ববাণিজ্যে ভারতের  অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক পিছিয়ে। বর্তমান বিশ্বে রাজনীতি ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ববাণিজ্যে ভারতীয়দের যেখানে বিশাল ভূমিকা সেখানে বিশাল জাতি হিসেবে বাঙালিদের ভূমিকা সামান্য, কারণ বাঙালি বিভক্ত, ধর্মের ভিত্তিতে  বিভক্তির প্রাচীর যেন জার্মানির প্রাচীরের চেয়েও বেশি শক্তিশালী, ফলে কখনও বাঙালিরা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে একক নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়নি। বাঙালি নৈতিক ও আদর্শগতভাবে  পথ হারিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বহু আগেই।  কারণ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পূর্বেই অবিভক্ত বাংলায় বাঙালি হিন্দু নিজ মাতৃভূমিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। ফল  হয়েছে বঙ্গভঙ্গ। তারই পথ ধরে হয়েছে পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস, জন্মেছে ঘৃণা, হারিয়েছে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা,  বিশ্বাস।  ধর্ম বিশ্বাসে বিভক্ত বাঙালির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নিজের অজান্তেই ঘটিয়ে ফেলেছে ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় দ্যা গ্রেট  ক্যালকাটা কিলিং, নোয়াখালী রায়ট। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম নেতৃবৃন্দ এক ও অভিন্ন জাতি হিসেবে সমৃদ্ধি ও   উন্নতির নেতৃত্ব দেবার পরিবর্তে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।  পূর্ববাংলা তথা আজকের বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরাট অংশ আদর্শগত ও সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালি সংস্কৃতির পরিবর্তে আরবীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির ভাবধারায় পুষ্ট  যার একটা অংশ তালিবানি আদর্শের প্রতি ধাবিত। আজকাল বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ দায়িত্বরত ভিসি মহোদয়ের ও দেশের জাতীয় স্তরের ক্রিকেট খেলোয়াড়ের মুখেও তালিবানি আদর্শের প্রশংসা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষিত বাঙালি  মুসলিম  সমাজ আর ১৯৭০-৭১ সালের শতকরা ২০ ভাগ শিক্ষিত বাঙালি মুসলিম সমাজের সামাজিক অবস্থার পার্থক্য বিশাল যা চোখে পড়ার মত। তাই এই সব বিষয় পর্যবেক্ষণ ও বিবেচনা করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার কর্মী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন আজকাল বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচল করলে মনে হয় আমি পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের রাস্তাঘাটে চলাফেরা করছি। বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার এত পরিবর্তন কেন হল কিভাবে হল সেটাই আসল বিষয়।   বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম এবং শতকরা ১০ ভাগ মানুষ ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ,  খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। ক্ষমতাহীন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পক্ষে সম্ভব নয় দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করা, দেশের যে কোন শুভশক্তিকে সহায়তা করতে পারে মাত্র। কারণ দেশের নির্বাহী বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ এবং বিচার বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯০ ভাগ জনগণের  ইচ্ছার উপর পরিচালিত হয়।  দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকজন যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশ কি একটি মোল্লাতন্ত্রের শাসন-ব্যবস্থা পরিচালিত হবে নাকি আধুনিক রাষ্ট্রের সামাজিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীগণ কি আধুনিক  বাঙ্গালীর  সামাজিক পোশাক পরিহিত থাকবেন নাকি মোল্লা বেশধারী হবে, তাদের আরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের  ভবিষ্যৎ নারীসমাজ একটি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হবে যারা সমানতালে পুরুষের পাশাপাশি  জাতীয় সার্বিক কল্যাণে কাজ করবে নাকি বোরখা, হিজাব পরিহিত মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করবে?  এই প্রশ্ন আমরা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে করছি যাদের উপর দেশ পরিচালনার ভার। ইতিমধ্যে পশ্চিমা কালচার, বাঙালি কালচার ও আরবীয়  কালচারের মিশ্রণে বাংলাদেশে একটি জগাখিচুড়ি কালচারে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে প্রায় ৫০টির বেশী ইসলামী দেশ রয়েছে যার মধ্যে ২৮টি আরব রাষ্ট্র এবং বাকি রাষ্ট্রগুলি এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের। এশিয়া আফ্রিকার ইসলামী রাষ্ট্রগুলি তারা তাদের স্ব স্ব কৃষ্টি, কালচার ও সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশের বিষয়ে অতীব যত্নশীল। তারা ধর্মে মুসলমান হলেও  আরবীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করে না। বিষয়টি আমাদের দেশের রাষ্ট্রপরিচালকদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে কারণ তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন। এই দায়িত্ব শুধু সরকারী দলের নয় সমান দায়িত্ব বিরোধী দলেরও ।    ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকেও  হত্যা করা হয়। দেশে বার বার সামরিক শাসন জারি  হয়েছে। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ ও  বেআইনিভাবে দেশ থেকে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে আমেরিকা, কানাডা, লন্ডন, অষ্ট্রেলিয়াসহ বিদেশের বহুদেশে বাংলাদেশী অভিবাসীরা গড়ে তুলছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল অভিজাত সুরম্য অট্টালিকার বেগমপাড়া যে সব ভবন দেখে খোদ ইউরোপীয়  ও আমেরিকানরা অভিভূত হন। বাধাগ্রস্ত হয়েছে গণতন্ত্র ও স্বাভাবিক রাজনীতি। দূর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচার বিষয়ে জাতীয় সংসদে পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে। এতকিছুর পরেও দেশের উন্নয়ন হয়েছে  উল্লেখযোগ্যভাবে। ১৯৭১ সালের সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। সরকারী কোষাগার শূন্য বিদেশি সাহায্য নির্ভর অর্থনীতি। সামান্য শিল্প কারখানা যা ছিল যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ মাত্র, রপ্তানি ও বিদেশে কর্মসংস্থান শূন্য, ছিল শুধু সামান্য কৃষিজমি যার ফসল উৎপাদন করার মত পর্যাপ্ত  অর্থ কৃষক ও সরকার কারও কাছে ছিল না। ১৯৭০ সালে বন্যা, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বছর বছর বেশ কয়েকবার প্রলয়ংকরী বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও  খরায় দেশের কৃষকের সারা বছর মাথায় হাত, হাহুতাশ আর আর্তনাদ লেগেই থাকত আর যে  সরকার ক্ষমতায় থাকত সে সরকার বিদেশি সাহায্যের জন্য সারা বছর বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছে। সারা বিশ্বের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ অশিক্ষিত, দরিদ্র, তৃতীয় বিশ্বের ক্ষুদ্র একটি দেশ যার আয়তনের তুলনায় প্রায় পাঁচ-ছয় গুণ বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি দেশ। অভাব, অনটন তার নিত্য সঙ্গী। আমাদের রাষ্ট্রপ্রধানদেরও বিদেশে কম  অপমান সহ্য করতে হয়নি। আমেরিকার প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একবার বাংলাদেশকে Bottomless Busket  অর্থাৎ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি বলে চরম অপমানজনক কথা বলে বসলেন। বিদেশী অনেক বড় বড় অর্থনীতিবিদরা মন্তব্য করলেন বাংলাদেশ একটি অকার্যকর বা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।  এই সব অপমান …

বাংলাদেশ তথা পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলার সংস্কৃতি, রাজনীতি ও জাতীয় সমৃদ্ধি। Read More »

A great role of the Calcutta University in 1971 Bangladesh Liberation War.

Calcutta University, Darbhanga Building Bimal Pramanik (Part III) The booklets which the Samiti had published containing important aspects of the liberation struggle were very effective in various parts of India and abroad.  On 9 May the first book was published entitled ‘Bangladesh: The Truth’ written by Dr. Bangendu Ganguli and Dr. (Mrs.) Mira Ganguli. The following is the list of other publications by the Samiti: ‘Conflict in East Pakistan—Background and Prospects’, by Professor Edward S. Mason, Robert Dorffman, Stephen A. Margin. (The data of this book were supplied by the exile Government). ‘Bangladesh Through Lens’—An Album of Pictures ‘Bangladesh—Throes of a New Life’, edited by Dr. Bangendu Ganguli and Dr. (Mrs.) Mira Ganguli. 5. ‘Pakistanism and Bengali Culture’, by Osman Jaman of Chittagong University. ‘Bleeding Bangladesh’, edited by Sipra Aditya. This is a picture album on mass-murder. ‘Bangladesher Muktiyuddhe’, edited by Professor Jatindranath Chattopadhyay and foreword was written by Annadasankar Ray. ‘Muktiyuddhe Bangladesh’ by Professor AsaduzzMn. ‘Chhay Dafa Karmasuchi’ (Six Point Programme). This was the sixth point demand of Awami League. Satai March 1971 Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahmaner Bhasan. (The speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman on 7 March, 1971). ‘Muktijoddhader Proti’ jointly edited by Sukumar Biswas on behalf of Bangladesh Teachers’ Association and By Jatindranath Chattopadhyay, on behalf of the Sahayak Samiti.   To gather international help and support the Samiti sent the following representatives to various countries. Father P.F. Fallon S.J., Professor of European Languages, Calcutta University was sent in June to Vatican City. He met the Pope and apprised him of the genocide conducted by the General Yahya Khan in East Pakistan.  He also visited France, Belgium, Italy, England and West Germany for the same purpose. The retired judge of High Court, Calcutta, Hon’ble Mr. A. K. Das visited England in July to apprise the people through various meeting about the genocide and other horrible incidents in Bangladesh. Mr. Banshibhai Mehta and Smt. Sushila Mehta of Bombay visited England in July and August and distributed among the teachers, students and journalists the pamphlets and books containing the facts of terror in Bangladesh. The noted trade union leader Mr. Shibnath Banerjee visited Afghanistan in October and there he met Badsah Khan, his son the NAP leader Wali Khan, the members of Parliament and the tribal leaders and discussed with them about the freedom struggle of Bangladesh and sought for their help.  He also depicted the hurried picture of Bangladesh to the teachers of Kabul University and several editors and journalists. Shri Purnendu Ray visited England and America in October and delivered lectures in favour of Bangladesh Liberation War in various meetings attended by University teachers, journalists and noted personalities.  At the initiative of the Sahayak Samiti, the University Grants Commission (UGC) Chairman, Professor G.S. Kothari issued a circular to all the universities pleading them to appoint qualified teachers coming from Bangladesh as refugees.  Consequently, many of them were appointed as professors and teachers in various universities and teaching institutions. At the initiative of this Samiti, a medical unit was constituted under the supervision of Smt. Mrinmoyee Bose with the help of the India Red Cross Society and with the personal initiative of Mrs Padmaja Naidu, and collected medicines and other medical equipment.  Some members of the Bangladesh Teachers Association also helped in this effort. Sri Nirod Baran Mukherjee of `Radiant Process’, Shri Ajit Mohan Gupta of ‘Bharat Phototype Studio’ and Sri Barindra Mitra of ‘Good Company’, rendered much help to the Sahayak Samiti in the  matter of publication and other works. I, personally, do not feel it necessary to explain why history of this freedom struggle of Bangladesh has become controversial.  A powerful anti-liberation Islamic lobby was able to remove the front-rank leaders of the freedom struggle through merciless killing just within three and a half years of independence. Before the fruit of liberation could reach the people everything went upside down.  The phenomenon of the liberation struggle became oblivious after the gruesome murder of Sheikh Mujibur Rahman on August 15, 1975. (concluded)

বাংলাদেশের গণতন্ত্র কি একটি মিথ্ (Myth) ?

বিমল প্রামাণিক পাকিস্তানের তেইশ বছরের রাজনীতির ইতিহাসের বড় সময়কালই ব্যয়িত হয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল নির্বাচনই  গণতন্ত্রের আসল কথা। গণতন্ত্রের অন্যান্য উপাদান নিয়ে তারা ভাবিত ছিল না। পাকিস্তান মুসলিম লিগ দীর্ঘকাল সামরিক শাসনের সুযোগ সমাজে জেঁকে বসেছিল, ক্ষমতাও তারাই ভোগ করতো। আওয়ামি লিগের দীর্ঘ লাগাতার সংগ্রামে সামরিক শাসনের ফাঁস সমাজে আলগা হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু সামরিক সরকার অঙ্কুরেই গণতন্ত্রের পিঠে ছুরি মেরে দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়ে জাঁকিয়ে বসতে চেষ্টা করলো। পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা আছে। শুরু হল স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা। মানুষ আশান্বিত হল, এবার স্বাধীন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। প্রত্যাশামত ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচন হল, কিন্তু ১৯৭৪ সালে একদলীয় শাসন এবং ১৯৭৫ সালে এল মহাসঙ্কটময় কাল। গণতন্ত্রের স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেল। বাংলাদেশেও পাকিস্তানের ধারায় একাধিক সামরিক স্বৈরতন্ত্রের অধীনে তথাকথিত বেসামরিক নির্বাচিত সরকার আমরা দেখলাম ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। এটাও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের আর এক রূপ বলে অনেকে মেনে নিয়েছেন। যেমন জেনারেল এইচ এম এরশাদের আমলে দেখেছি। ১৯৯১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার উপর আলোকপাত করা যাক। বাংলাদেশের জনগণের বদ্ধমূল ধারণা গণতন্ত্র সাধারণ নির্বাচন ছাড়া সফল হয় না, পাকিস্তানের আমলেও এই সংগ্রামের ঐতিহ্য পূর্ববঙ্গের মানুষের রয়েছে। কিন্তু আরও একটি বিষয় গণতন্ত্রে অপরিহার্য তা হল সহনশীল সমাজ ব্যবস্থা। সেখানে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হতে হবে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে। যা পাকিস্তানের আমলে দেখা যায়নি। কারণ ১৯৭১ পর্যন্ত  পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ভিতই  গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশেও ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয়টি সাধারণ নির্বাচন  হয়েছে। সেখানেও কি ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত ছিল? সেই সকল সরকারের আমলে কি সাম্প্রদায়িক নির্যাতন হয়নি? সেখানে কি পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ সরকারি মদতে দাঙ্গাকারীগণ উৎসাহিত হয়নি?  সরকারি ও প্রশাসনিক চরম নির্লিপ্ততা দেখা যায়নি? ১৯৯০ সালেও সরকারি মদতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও লুটপাট দেখা গিয়েছিল অর্থাৎ  বাংলাদেশে গত পাঁচ দশকেও কোন স্থিতিশীল ও স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সচেতন বাংলাদেশি নাগরিক প্রত্যক্ষ করেনি। তারা নিজ স্বার্থ ব্যতিরেকে রা কাড়ে না। সাধারণ মানুষের কাছে এসকল নির্বাচন ও শাসন ব্যবস্থাই মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য তারা নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তীতে গণতন্ত্র ধর্ষিত হলেও  সাতপাঁচ ভেবে এড়িয়ে যায়। বলা যায় এই ‘গণতন্ত্র’ তাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। কেন পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এই সঙ্কট আমরা দেশ বিভাগের পর থেকেই দেখে আসছি? অথচ এই সঙ্কট ভারতে দেখা যাচ্ছে না কেন?  পাকিস্তান ইসলামি রাষ্ট্র বিধায় গণতন্ত্র চর্চার বিষয়ে নানা মতভেদ পাকিস্তানি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়ক হল না । এর পরিণামে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম।  নতুন বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের সঙ্কট কাটলো না। এই সঙ্কটের স্বরূপ ইতিহাস থেকে দেখা যাক। ভারত বিভক্তির মূল ভিত্তি ছিল দ্বিজাতিতত্ত্ব। মুসলমান সম্প্রদায় নিজেদের ধর্মভিত্তিক জাতি ঘোষণা করে জাতিগত পরিচয় মুছে ফেলে পাকিস্তান দাবি করল, এবং এতোই বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া হল যে শত শত বছরের স্বজাতি প্রীতি ধর্ম ভিন্ন হওয়ার কারণে স্বজাতি শত্রু বলে গণ্য হতে থাকল। তখন মুসলমানদের  মূল উদ্দেশ্যই হয়ে দাঁড়ালো পাকিস্তানি ভূখণ্ড থেকে অন্য ধর্মের  মানুষকে (শত্রু) বিতাড়িত করা এবং তাদের সহায় সম্পদ দখল করে নেওয়া। যা ছিল ভারতে মুসলমান আক্রমণকারীদের ইতিহাস। নব্য বাংলাদেশকে যাঁরা বাঙালি জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় নিয়ে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ঘোষণা করেছিলেন অঙ্কুরেই সে প্রচেষ্টা বিনষ্ট হয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তান যেমন ইসলামি প্রজাতন্ত্র, বাংলাদেশ বকলমে ‘গণপ্রজাতন্ত্র’ হলেও অঘোষিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতৃবৃন্দ দ্বিজাতিতত্ত্বের বাইরে কেমন করে বেড়িয়ে আসবেন – তাদের পূর্বসূরীগণই  তো  পাকিস্তান  আন্দোলনের প্রধান হোতা ছিলেন। ইতিহাস অস্বীকার করলে সাধারণ বাঙালি মুসলমান মেনে নেবে কেন? অধ্যাপক- ইতিহাসবিদ মুনতাসীর  মামুনের একটি প্রবন্ধের  শিরোনাম ছিল ‘পাকিস্তান প্রত্যয় এখনও সজীব’।  এই প্রবন্ধে তাঁর মতামত প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, “একটি প্রশ্নের উত্তর  খোঁজার চেষ্টা করেছি অনেকদিন, কিন্তু এখনও তেমন সদুত্তর পাইনি।  সেটি পাকিস্তান সম্পর্কিত। আমার কাছে সব সময় মনে হয়েছে পাকিস্তান একটি দেশ শুধু নয় একটি প্রত্যয়। এ প্রত্যয়ের অন্তর্গত, সামরিকায়ন ও আমলাতন্ত্রের শাসন, ‘গণতন্ত্র’ পরিচালিত হবে তাদের নির্দেশে, ব্যাপক দুর্নীতি ও সম্পদ ভোগ করবে সামরিক আমলারা, ধর্মকে শুধু রাজনীতি নয়, মানুষ দমনে ব্যবহৃত হবে, জঙ্গিবাদ প্রাধান্য পাবে। এখানে যারা বসবাস করে তাদের মানসজগৎ এসব উপাদান দ্বারা প্রভাবিত। এরা নির্দয় ও হিংস্র, হাসতে হাসতে মানুষ খুন করে ও ধর্ষণ করে যেমন করেছিল ১৯৭১ সালে এবং সে সব খুনের বিচার হয় না। একজন মুসলমান সমান দু’জন হিন্দু। বাঙালিরাও হিন্দু। এই হল তাদের মানসজগৎ। পাকিস্তান প্রত্যয় যদি প্রাধান্য বিস্তার করে তাহলে সে দেশ ব্যর্থ হতে বাধ্য।  ১৯৪৭ সালের আগে থেকে মুসলিম লিগ এই প্রত্যয় নির্মাণে সচেষ্ট থেকেছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ মুসলিম লিগই দেশ শাসন করেছে এবং এই প্রত্যয়টি বাঙালির মানসিকতায় প্রোথিত করেছে। মুসলিম লিগের অবসান হয়েছে, তারা ফিরে আসেনি কিন্তু এ প্রত্যয়টির প্রভাব বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে যথাযথভাবে আছে। বঙ্গবন্ধু এ প্রত্যয় থেকে বেরুবার চেষ্টা করেছেন, জয়লাভও করেছেন। কিন্তু তাঁকে হত্যার পর যখন বামপন্থী, আওয়ামি লিগার, মুক্তিযোদ্ধারা জিয়ার দলে ভিড়লেন তখন বোঝা গেলো, ১৯৭১ সালও বাঙালিকে এ প্রত্যয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে পারেনি। গত কয়েক দশকে প্রমাণিত হয়েছে এরা  অনেক শক্তিশালী। এবং গণতন্ত্রের নামে এরা প্রতিনিধিত্ব করছে বিএনপি, জামাত ও জাতীয় পার্টিতে।”১ অধ্যাপক মামুন গত পাঁচ দশকের রাজনীতির বাস্তব পরিস্থিতির যে বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন – তা কি বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের সহায়ক হতে পারে?  নীতি-নৈতিকতা বর্জিত রাজনৈতিক শক্তি মধ্যযুগীয় অন্ধ বিশ্বাস লালন করে জীর্ণ পাকিস্তানি  লেবাসের আড়ালে দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায় তা তো আমাদের অজানা নয়। গণতন্ত্রের কুৎসিত রূপ ২০০১—এ  নির্বাচিত সরকারের আমলে বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। সুষ্ঠু গণতন্ত্র বিকাশের পথ কণ্টকাকীর্ণ তো বটেই।   সুত্রঃ ১। Jagonews24.com, 27 May, 2023.

ভারতের চাঁদে অবতরণ ও বাংলাদেশের বিজ্ঞানচর্চা

বিমল প্রামাণিক ২৩ শে আগস্ট ২০২৩ ভারতের একটি গৌরবময় দিন। মহাকাশ গবেষণায় আজ পর্যন্ত ভারতের বৈজ্ঞানিক সমাজের বহু সাধনার ফল চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে অবতরণ। এই চন্দ্রাভিযানের সাফল্যের পিছনে রয়েছে নিরন্তর গবেষণা প্রচেষ্টা, বৈজ্ঞানিক ব্যর্থতাও শক্তি যুগিয়েছে সাফল্যের সোপান তৈরিতে। বিজ্ঞান গবেষণার অগ্রগতিতে নতুন নতুন সাফল্য সামনে এসেছে। জনগণের কাছে বৈজ্ঞানিক সাফল্য যেমন পৌঁছেছে, তেমনই মানুষের কাছে বিজ্ঞানের সুফল আঁকড়ে ধরার আগ্রহ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি জনগণের অগ্রগতিতে নিরন্তর অবদান রাখছে। মানুষ আজকে বিজ্ঞানমুখী, বিজ্ঞান শিক্ষাই জনগণের ভবিষ্যৎ গড়তে একটা কার্যকরী হাতিয়ার, একথা ভারতের মানুষ আজকে বিশ্বাস করছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে বিজ্ঞানের গুরুত্ব। ভারতবর্ষের প্রাচীনকাল থেকেই বিজ্ঞান চর্চার যে ইতিহাস আমরা দেখতে পাই, বিভিন্ন শতাব্দীতে যাদের নাম ভারতের সমাজে গণিতজ্ঞ, দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী হিসেবে আদৃত হয়েছে, তাদের মধ্যে ছিলেন, আর্যভট্ট (গুপ্তযুগ ৩০০ থেকে ৫০০ শতক) গণিতজ্ঞ, পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিদ; বরাহমিহির (৫৫৫—৫৮৭) গণিতবিদ, দার্শনিক ও মহাকাশবিজ্ঞানী; ব্রহ্মগুপ্ত (৫৯৭—৬৬৮) গণিতজ্ঞ ও মহাকাশবিজ্ঞানী; ভাস্করাচার্য (প্রথম) (৭০০ শতক) গণিতবিদ, বৃত্তের ব্যবহার জানতেন; ভাস্করাচার্য (দ্বিতীয়) (১২০০ শতক) অগ্রগণ্য গণিতজ্ঞ, দশমিক ভগ্নাংশের উপর একটি পুস্তক রচনা করেছেন।  এইসব বিজ্ঞানী মনীষীগণ, ভারতবর্ষের বিজ্ঞান চর্চায় পথিকৃৎ ছিলেন। আজকের আধুনিক ভারতের ‘চন্দ্রাভিযান—৩’ এর চাঁদে অবতরণ পূর্বসুরি বিজ্ঞানীদের’-ই পরম্পরা। অন্যদিকে লক্ষ্যণীয় যে স্বাধীন বাংলাদেশের মাত্র সাড়ে-তিন বছরের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতৃবৃন্দের নিশ্চিহ্নকরণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও প্রেক্ষাপটকে আমুল পরিবর্তনের মাধ্যমে ধর্মের রাজনীতিকরণ পাকিস্তানি আমলের মতই সমাজের গভীরে জাঁকিয়ে বসার কাজটি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়ে গেল।  পাকিস্তানি আবর্জনা পরিষ্কার করে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক বাংলাদেশ গঠনের প্রক্রিয়াকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা হল। এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবুল বারকাতের বিশ্লেষণ প্রণিধানযোগ্য। “লক্ষ করা যায় যখন ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়, অথবা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগোষ্ঠী যখন তাদের  কর্মসূচী ঘোষণাপত্রে নির্দিষ্ট ধর্মের পক্ষ গ্রহণ করে, অথবা ধর্মের নামে রাষ্ট্র-সরকার পরিচালনা করা হয়, অথবা সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যেমন শিক্ষা ব্যবস্থায় সুনির্দিষ্ট ধর্মের পক্ষাবলম্বন করা হয় প্রভৃতি। ধর্মের রাজনৈতিকরণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক  অভিঘাতটি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর, প্রগতিবিরুদ্ধ।”  এবিষয়ে আমাদের দেশকেন্দ্রিক অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য যে কথাটি কয়েকদিন আগে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, তা হল “সংবিধানের সংশোধনীর দ্বারা ১৯৭২ সালের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে বটে, কিন্তু ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম রয়ে গেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম কীভাবে সহাবস্থান করতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। তাই ১৯৭২-এর সংবিধানে যেসব মূলনীতি ঘোষিত হয়েছিল অক্ষতভাবে তা যে ফিরে আসবে, আমার সে ভরসা নেই। এবং সে মোড় নেওয়ার সময়ে ইতিহাস আমার ভরসা- নির্ভরসাকে বিবেচনায় নেবে না। আজ মনে হয়, ১৯৭১ থেকে আমরা দূরে, বহু দূরে চলে এসেছি এবং ১৯৭১-এর পূর্ববর্তী ২৪ বছরের সংগ্রাম ও অর্জনের ধারার সঙ্গে তুলনা করলে তার পরবর্তী ৪৬ বছরের ধারাকে পশ্চাদপসরণ ও বিসর্জনের ইতিহাস বলতে হবে।” ১   ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগোত্তর কালপর্বে তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রে ক্রমেই রাজনৈতিক অঙ্গনে ধর্মীয় মৌলবাদের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ করা যায়। পঠনপাঠন ও গবেষণার ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়ে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান পার্লামেন্টে ‘আহমদিয়া মুসলমান’কে অমুসলমান ঘোষণা করে একটি আইন পাশ করা হয়। এর ফলে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর চরম অত্যাচার নেমে আসে। পাকিস্তানের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অধ্যাপক আব্দুস সালাম তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিজ্ঞান বিষয়ক পরামর্শদাতা ছিলেন। পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার এনার্জি ও স্পেস রিসার্চ সংস্থারও চেয়ারম্যান ছিলেন। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ার কারণে অধ্যাপক আব্দুস সালাম দেশত্যাগ করতে বাধ্য হলেন এবং লণ্ডনে আশ্রয় নিলেন। পাকিস্তান আমল থেকেই মুসলমানদের কাছে বিজ্ঞানের চর্চার চেয়ে ধর্মের গুরুত্ব প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষমতা দখল করার মানসে দেশভাগ, সামরিক শাসন, গণহত্যা, পশ্চাৎমুখী শিক্ষার প্রসারণ কোনো  দিক থেকেই মুসলমান সমাজ ও শাসকগণ পিছিয়ে নেই। মুসলমান সম্প্রদায়ের ডি এন এ তো ভারতবর্ষের ডি এন এ থেকে ভিন্ন নয়। শুধু কি ধর্মীয় কারণে তারা পশ্চাৎমুখী ?  একবিংশ শতাব্দীর বহুমুখী বৈজ্ঞানিক সাফল্য ও চেতনা থেকে তারা কি শিখছে? বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ প্রক্রিয়াকে নির্মুল  ক’রে ধর্মভিত্তিক প্রতিক্রিয়াশীলতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হচ্ছে। দেশে একটি শক্তিশালী ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির প্রয়োজনে শুধু সংবিধানের ইসলামীকরণই যথেষ্ট ছিল না, রাজনীতিতে এবং সরকারে ধর্মান্ধ  মানব সম্পদের যোগানটাও জরুরী ভেবে মাদ্রাসা-ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার শ্রীবৃদ্ধি ও স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন দেখতে পাই। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইসলামী মৌলবাদী দলগুলোর যুগপৎ শ্রীবৃদ্ধির ঘটনা এদেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির চরিত্র ও গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করতে সাহায্য করবে। “দীর্ঘ চার দশকের অধিক সময়কাল ধরে বিশেষ রাষ্ট্রীয় আর্থিক ও অন্যান্য পৃষ্ঠপোষকতায় বিকশিত হয়ে এদেশে মাদ্রাসা জনশক্তি আজকে যে স্তরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে এদেশে তারা নিরাপদেই এমন কর্মকাণ্ড চালাতে পারে যে কর্মকাণ্ড (যেমন, তালেবান আন্দোলন) আজকের আন্তর্জাতিক বিশ্ব কর্তৃক আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম মানবতা বিরোধী কর্মসূচী হিসেবে বিবেচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিরোধী আদর্শ ইতিমধ্যেই সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রায় সকল কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানকে সংক্রমিত করে ফেলেছে, একটা বিষয় হলফ করেই বলা যায় যে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল সংস্কার না ক’রে এদেশে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া কঠিনই হবে। আবার ঐ ধরণের কোন সংস্কারে গেলেও  যে ইতিমধ্যেই শক্তিশালী হয়ে ওঠা বিশাল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর দারুণ প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।”২  আমরা একবার অতীতে ফিরে দেখতে পারি, পাকিস্তানের সৃষ্টির পর ২৩ বছরের পঠন-পাঠন বিষয়ে একবার ফিরে তাকালে দেখা যায় পূর্ব-পাকিস্তানে বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করার আগ্রহ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ছিল।আইয়ুব খানের আমলে স্কুল পাঠক্রমে একশত নম্বর উর্দুভাষা চালু করা হলেও ছাত্র/ছাত্রীগণ উর্দুর প্রতি মোটেই আগ্রহী ছিল না – তা বোঝা যায় এস এস সি পরীক্ষার ঐচ্ছিক বিষয়ে উর্দু/আরবি ভাষার ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল না বললেই চলে। যারা মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করতো তাদেরকে সাধারণ শিক্ষার অষ্টম মান (ক্লাস এইট-৮) সমতুল গণ্য করা হতো। এরা শুধু স্কুলের মৌলবি হিসেবে চাকরি পেত। অর্থাৎ মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব  খুবই কম ছিল। উচ্চ শিক্ষার বিজ্ঞান শাখায় কোন  বাংলা বই পাওয়া যেত না, বিদেশী/ভারতীয় বই ছাত্র-ছাত্রীগণ ব্যবহার করত। পাকিস্তানের শেষ লগ্নে এসে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দু’একটি বাংলা বই বাজারে আসে। আমার মনে আছে গণিতের অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের  যোগাশ্রয়ী বীজগণিতের  (Linear Algebra) কথা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলা-প্রীতির জন্য পাকিস্তান বাহিনীর হাতে খুন হয়ে যান। এর পিছনে ছিল বাংলাভাষার প্রতি  ভালবাসা এবং মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্তিম শ্রদ্ধা ও আনুগত্য। তাঁরই স্মৃতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রাবাস হাবিবুর রহমান হল ।  পাকিস্তানি আমলেও নবম-দশম শ্রেণীর কলা বিভাগে সাধারণ বিজ্ঞান অবশ্য পাঠ্য ছিল – যার ফলে কলা বিভাগে পাশ করেও ভাল ছাত্র-ছাত্রীগণ কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করার সুযোগ পেত। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে নবম-দশম শ্রেণীতে বিজ্ঞান ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে চলে যাওয়ায় একটা বড় অংশের  ছাত্র-ছাত্রী আধুনিক বিজ্ঞানের  সাধারণ জ্ঞান থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও মোট ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ – যারা বিজ্ঞান পাঠ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। আমরা দেখতে পাচ্ছি, মোট ছাত্র-ছাত্রীর তিন চতুর্থাংশের বেশি সংখ্যক পড়ুয়ার বিজ্ঞানের সাধারণ জ্ঞানের সঙ্গেও পরিচয় ঘটছে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রাথমিক পরিচয় ব্যতিরেকেই গড়ে  উঠছে। কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই জনগোষ্ঠী সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি বিজ্ঞান …

ভারতের চাঁদে অবতরণ ও বাংলাদেশের বিজ্ঞানচর্চা Read More »

A great role of the Calcutta University in 1971 Bangladesh Liberation War.

Bimal Pramanik (Part II) Calcutta University, Darbhanga Building On 21 May 1971 a meeting of refugee teachers of all levels was convened in the Asutosh Hall of the Calcutta University and the Working Committee of  the Bangladesh Shikshak Samiti (Bangladesh Teachers Association) was formed with the following personnel. President                                 Dr Azizur Rahaman Mallick, Vice-Chancellor, Chittagong                                                 University.   Working President                 Janab Kamruzzaman, M.N.A., Headmaster, Dhaka Jubilee                                                 High School.   Vice-President                        Dr Faruk Khalil, Professor of Mathematics, Rajshahi University                                                 and Principal Dewan Ahmed, Kumarkhali College, Kustia.   Secretary                                 Dr Anisuzzaman, Reader, Bengali Department, Chittagong                                                 University. Later on Professor Ajay Ray, Reader, Department                                        of Physics, Dhaka University became Secretary.   Assistant Secretaries              (1) Janab Golam Murshid, representative of Universities.                                                 (2) Sri  Rashbehari Ghose, representative of Colleges.                                                 (3) Janab S.M. Anwaruzzaman, representative of Schools.   Treasurer                                Dr Khan Sarwar Murshed, Professor, Department of English,                                                           Dhaka University.   Members                                There were 12 other members.   The objects of the Samiti was (1) to organize the teachers at all levels and consolidate them as an additional force in support of the liberation struggle. (2) to mobilize public opinion in India and abroad in favour  of the liberation struggle. (3) to publish and to render help to other publishers in publishing authentic writings on liberation struggle of Bangladesh. (4) to rehabilitate and to render possible financial help to the teachers of Bangladesh. (5) to render financial help to ensure necessary civil supplies and send them to the fronts. (6) Publicity and help to psychological warfare.   This Samiti  functioned from the office of the `Bangladesh Sahayak Samiti’  located at Darbhanga Building of the Calcutta University and carried a lot of responsibilities with the help of the Sahayak Samiti.   An appeal issued by the `Bangladesh Sikshak Samiti’ asking for help is reproduced below:   BANGLADESH SIKSHAK SAMITI (Bangladesh Teachers’ Association) Darbhanga Building, Calcutta University, Calcutta-12, India.                                                                                                                                                                                                         July 1, 1971 Dear Friend,   Perhaps you are aware that in the face of unparalleled atrocities committed by the Pakistan Army on the people of East Pakistan, now Bangladesh, a large number of teachers of all levels have crossed into India.  Since the communities of teachers had played a significant role for over two decades in the movement for democracy, secularism and a just social order in the country, its members became naturally enough a special target of the Pakistan Army. Many teachers have been killed, others who are trapped in the occupied zones are being harassed and persecuted, a few have been forced at gun point to issue statements in support of the action of the Pakistan Army.  As a result, members of this harassed community are trekking into India everyday.  The teachers from Bangladesh,  now in  temporary exile in India, have formed an association of their own, on whose behalf we are writing you today.   About 100  University teachers, 1000 College teachers, and 3000 school teachers have registered their names with us.  Several thousand others  in different bordering states of India are yet to make contact with the Association.  Most of these teachers have come with their families and all are without any means to support themselves.   Having regard to the contribution that this community has made in the past and their expectant role in the reconstruction of society as and when the country achieves freedom, it is felt that we make all efforts to save it from impending doom.  We have drawn up a number of schemes for providing the teachers with temporary academic occupation, research publication and teaching the  evacuee children in the refugee camps.  The execution of this programme will require financial assistance from non-Government sources, in addition to what the Government of India and the Government of Bangladesh may be in a position to make.   In the circumstances we appeal to you the members of the academic community the world over to contribute generously to the funds of our association.  Contribution may be sent to the Bangladesh Sikshak Samiti, Darbhanga Building, Calcutta University, Calcutta 12, India.   Sincerely yours, Dr. A.R. Mallik Vice-Chancellor, University of Chittagong & President, Bangladesh Sikshak Samiti.     In an interview, Professor Azizur Rahaman Mallik observed “The objects of the Bangladesh Shikshak Samiti (Bangladesh Teachers’ Association) were to render help in unison with the Sahayak Samiti to the teachers who came as refugees from Bangladesh; to run primary schools in the refugee camps; to prepare leaflets; to write letters and distribute leaflets to teachers of different communities, asking support for the liberation struggle and to launch media offensive in favour of the liberation struggle.  We were able to offer financial help from the funds of the Sahayak Samiti  to many teachers, opened many schools in the refugee camps and arranged employment of many teachers. The media offensive we launched in India was the outcome of the initiative of the Sahayak Samiti. Anisuzzaman and myself visited Allahabad, Aligarh, Lucknow, Agra and Delhi with Dilip Chakraborty,  Saurindra Nath Bhattacharya, Anil Sarkar, Dr Aniruddha Kar and Bishnukant Shastri of the Sahayak Samiti. We delivered speech on liberation war not only in the university campuses but elsewhere also. Subid Ali, Member of Provincial Assembly (MPA) also joined us.  He used to translate our speeches in Urdu to the people assembled for meetings. Bishnukant used to speak in Hindi. I wish to mention here the emotional upsurge of Anil Sarkar  in this connection.  At a point of time when the teachers coming as refugees could not be accommodated in the camps he took them to his house and shifted his family to his father in-law’s house and his wife used to come early in the morning in that house for cooking the food and after feeding the teachers went back to her father’s house in the evening.  It may be mentioned here that Anil Sarkar was the Superintendent of the Hazra Boys Hostel and vacated many rooms of the Hostel for the refugees.”   The intellectuals, professors, artists …

A great role of the Calcutta University in 1971 Bangladesh Liberation War. Read More »

Bangladesh general election 2024: Why victory of incumbent Sheikh Hasina is crucial for India

The return of the anti-liberationists would be detrimental to India’s security, especially in the North East Jaideep Saikia Last Updated: August 25, 2023. The writer is a conflict theorist and bestselling author. The views expressed are his own. Views expressed in the above piece are personal and solely that of the author.   First Published in Firstpost, August 25, 2023. Bangladesh goes to the polls in January 2024. The elections are crucial for not only the erstwhile East Pakistan, but India as well. It is important that the secular forces remain in power and not pave way to the barrack politics backed by radical Islam. Such a prognosis makes sense when the geopolitics of the region is taken into account. The return of the anti-liberationist forces of 1971 would sound the death knell to Bengali nationalism that had characterised the triumph of culture over religion. The Indian stand has always been to support the secular forces in Bangladesh. After all, India ably aided the liberation of Bangladesh. It must also be said that the secular half of Bangladesh is pro-India and it stands to reason that Sheikh Hasina—who leads the secular constituency—would be supported by India. Furthermore, the return of the anti-liberationists would be detrimental to India’s security, especially in the North East. Memories of Indian insurgent groups such as the United Liberation Force of Asom and the National Democratic Front of Bodoland billeting themselves in Bangladesh and hitting out at Indian interest with impunity are still fresh. But the manner in which Hasina handed over almost the entire leadership of the belligerent groupings when she came to power merited appreciation. While it is true that certain Islamist outfits have also entered Assam and thereabouts in recent times, the fact of the matter is the continuance of Hasina is vital for India. Under the circumstances, New Delhi has to ascertain Hasina’s return. On the other hand, observers of South Asian geopolitics have commented about the manner in which the US is showing interest in the upcoming Bangladesh elections. Congressmen from the US have visited Dhaka and there was a visitation by the US state office’s coordinator on global anti-corruption. It has also been reported that the director of the US Indo-Pacific Command will be visiting Bangladesh in August. Although there has always been interest in Bangladesh by the US even before its inception in 1971, the concentration of foci of the present calls for analysis. This is especially so as there is speculation that the US is intending a “regime change” that would suit its geopolitics in the region. As a matter of fact, Bangladesh Prime Minister, Sheikh Hasina has herself voiced concern stating that “Washington is working to bring an undemocratic party to power in Bangladesh in the upcoming election”. The history that pertains to US-Bangladesh relationship, especially after the latter’s liberation is mired in high-grade subterfuge. Indeed, one has to only peruse the celebrated book “The Blood Telegram” by Gary J Bass in order to catch the manner in which the US turned a blind eye to the conspiracy that led to the assassination of Sheikh Mujibur Rahman. Bass has documented the manner in which Archer Blood, the US Consul General in the early 1970s, sought to cable Washington about the genocide that was being committed in the “East” by Pakistan. Bass also writes about how the 1975 putsch and the massacre of the Bangabandhu’s family was shelved by the Nixon-Kissinger duo. It is no longer a matter of debate that the US openly supported Pakistan in 1971. The renewed US interest in the erstwhile East Pakistan clearly showcases that the US wants the Bangladesh Nationalist Party (perhaps backed by Islamist radical elements) to win. This is “global policing” at its worst. But it is also true that there are two Bangladeshs. A pre-1971 grouping continues to be loyal to the founding principles of Bangladesh. However, there has been an emergence of a new formation which is largely from the post 1971 era. This assemblage identifies itself with Pakistan and even the global Salafi movement that is attempting to storm troop across the world. But Sheikh Hasina’s dispensation acted swiftly against the anti-liberationists and executed quite a few of them. However, recent events have witnessed a somewhat changed Bangladesh with not only a section of its population once again raising its ugly head by way of attempting to identify itself with Pakistan and the global salafi movement that the world has been witnessing, but with even a section within the Awami League seeking to tilt the balance in favour of anti-India powers. It is in this context that J N Dixit’s prophetic words about maintaining “a certain amount of distance from India” by balancing Bangladesh’s polity by reaching out to anti-India forces such as China and Pakistan might be viewed. It must be understood that there is no political opposition to Sheikh Hasina inside the Jatiya Sangsad with the main opposition political party Bangladesh Nationalist Party having only seven seats as opposed to the overwhelming 302 that the Awami League has. While the huge majority that her party has in the parliament has made Sheikh Hasina the “unquestioned leader” in the mould of her father, Sheikh Mujib-ur-Rahman who was assassinated on 15 August 1975, there is apprehension that all may not turn out to be well post January 2024 and the next Bangladesh polls. It must also be understood that Hasina may be under pressure—as aforesaid—from “Closet Chinese” within the Awami League. Empowering her and the leadership that would take over the reins after her exit should be uppermost in the minds of security managers in New Delhi. India cannot afford the construction of a Chinese “string of pearls” around her neck nor a 1975-like scenario when it lost all ground to anti-liberationist forces that Indian soldiers had fought for and alongside the Mukti Bahini. In any event, analyses has it that the January 2024 elections would primarily be contested on the plank of (a) development (b) health …

Bangladesh general election 2024: Why victory of incumbent Sheikh Hasina is crucial for India Read More »

বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক

বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান-১ ছবিটি দু’টি সাপের। একটি বিশালাকায় অজগর এবং অপরটি কিং-কোবরা। এরা জীবন বাজি রেখে মারামারি  করছে। কোবরা কামড় দিয়েছিল অজগরকে। অজগর তাই চেপে ধরে কোবরা-কে। পরিণতি দু’জনের মৃত্যু। অজগর মরে কোবরার বিষে; আর কোবরা মরে অজগরের প্রচন্ড চাপে। অথচ এরা স্বজাতি। সমাজে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে। বন্ধু-বন্ধুতে, পরিবারে, ধর্মে, ভাইয়ে-ভাইয়ে, সর্বত্র। কারণ, ঈর্ষা, ইগো, কে কত বড়, নেতৃত্ব, রাজনীতি, সর্বত্র। কুৎসা, চরিত্রহনন, দালাল, চামচা আখ্যায়িত করা, টাকা মেরে দেয়া, গুজব, মিথ্যাচার- এসব চলতে থাকে। শেষমেষ উভয়পক্ষ হেরে যায়?   বাংলাদেশের হিন্দু কমিউনিটি’র দিকে তাকালে কথাটি পরিষ্কার বোঝা যায়। অন্য কমিউনিটি’র কথা বলবো না, এক্ষণে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের কথা বলবো। দেশে ও প্রবাসে একই চিত্র। সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসা নেই, শুধু চরিত্রহনন। প্রত্যেকটি মানুষের কিছু ভাল গুণ থাকে, থাকে কিছু বদভ্যাস। ভালমন্দ নিয়েই মনুষ্য চরিত্র গঠিত হয়? যার মধ্যে শুধুই ভাল বিদ্যমান, তিনি মানুষ নন, দেবতা, বা সাধু-সন্ন্যাসী। সাধু-সন্ন্যাসীরা সমাজের কাজে লাগেনা, তাঁরা নিজেদের স্বর্গলাভের জন্যে কাজ করেন। এটি হিন্দু সমাজের দুর্ভাগ্য।    ভারতে যত সাধু সন্ন্যাসী আছেন, এঁরা রাস্তায় নেমে এলে সব-সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। বাংলাদেশে হিন্দু’র ওপর এত অত্যাচার হচ্ছে, সাধু-সন্ন্যাসী-পুরোহিতরা কি মাঠে নামেন? তাঁরা নামেন না, মন্দিরগুলো ভক্তদের বোঝায় ওসব রাজনীতি, বাজে কাজ, সময় নষ্ট, ধর্মে মনোনিবেশ করা এর চেয়ে ঢের বেশি জরুরী!  অথচ রাষ্ট্র না থাকলে ধর্ম টেকানো দায়। সৌদি আরবে গিয়ে আপনি ইচ্ছে করলেই পুজা করতে পারবেন না? ওআইসি দেশগুলোতে অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে হাজারো বিধিনিষেধ। মক্কা-মদিনায় আপনার ঢোকার অনুমতি নেই!    অথচ মধ্যপ্রাচ্যে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার অনুমতি পেলে আপনি ‘বিজয়’ অনুভব করেন। ইউরোপ-আমেরিকায় আপনি মহাসমারোহে ‘কীর্তন’ করেন, রাস্তায় বিশাল মিছিল করেন, এটুকু বুঝতে চাননা যে, প্রশাসন না চাইলে আপনি তা করতে পারবেন না? ঢাকা-চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর মিছিলে যত মানুষ হয়, সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে সেই মানুষগুলো রাস্তায় নামলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ হয়ে যাবে। ২০২১-র অক্টোবরে কুমিল্লার ঘটনায় ‘ইসকন’ মাঠে নেমেছিল, কারণ তাদের ওপর হামলা হয়েছিল। তখন যদি মতুয়া, অনুকূল ঠাকুর, রামকৃষ্ণ মিশন, বা অন্যরা মাঠে নামতো? না, তাঁরা নামেনি।    নিজের ওপর হামলা না হলে কেউ মাঠে নামেনা। এক হিন্দুর বাড়ী পুড়লে অন্য হিন্দু ভাবে, আমার কি, আমারটা তো পুড়েনি। এক হিন্দুর মেয়ে উঠিয়ে নিয়ে গেলে অন্য হিন্দু ওই মেয়ের দোষ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরে? নিজের মেয়েটা হারিয়ে গেলে কপাল চাপড়িয়ে মরে। গুরুকে খুশি করতে গিয়ে হিন্দু প্রতিবেশী হিন্দু’র সুখে সাথী হতে ভুলে যায়। ঘরে আগুন লাগলে প্রতিবেশীই যে প্রথম এগিয়ে আসবে তা বেমালুম ভুলে থাকে। হিন্দু চায়, তার সমস্যা সমাধানে ভারত এগিয়ে আসুক। এতকাল পরেও হিন্দু বুঝলো না যে, ভারত এগিয়ে আসেনি, আসবে না, নিজেদের সমস্যা নিজেদের সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান-২ বাংলাদেশে এ সময় দু’জন হিন্দু ভদ্রলোক বেশ সোচ্চার। একজন হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, এবং অপরজন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এডভোকেট গোবিন্দ  প্রামাণিক। সামাজিক মাধ্যমে সবাই এদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার হতে দেখেছেন। এদের পক্ষে খুব বেশি কথাবার্তা কি চোখে পড়ে? এঁরা দু’জন আবার একে অপরের চক্ষুশূল, অনেকটা অজগর ও কোবরা’র মত! এই দুইটি মানুষ কি খুব খারাপ? কতটা খারাপ? আপনার চেয়েও খারাপ? ভাবুন, জীবনে কি কখনো এ দু’টো মানুষের প্রশংসা করেছেন? তাঁরা কি কোন ভাল কাজ করেননি?    রানা দাশগুপ্তের কথা উঠলেই বলা হয়, সরকারের দালাল। প্রসিকিউটর থেকে সরকারের সকল সুবিধা নেয়, তাঁর পক্ষে সরকারের বিরোধিতা করা সম্ভব নয়, সবই লোক দেখানো! গোবিন্দ প্রামাণিকের কথার শুরুতেই  বলা হয়, উনি ডিজিএফআই’র লোক, বিশ্বহিন্দু পরিষদের লোক। বুঝলাম, আপনি তাঁর সমালোচনা করছেন, আপনি কি ওনার মত সাহস করে কথা বলতে পারছেন? আপনি কেন বিশ্বহিন্দু পরিষদ বা ডিজিএফআই’র লোক হন’না? রানা দাশগুপ্তের মত সরকারি দালাল হয়ে আপনিও কিছু কথাবার্তা বলুন, কিছু কাজ করুন। আপনার কোন সমালোচনা নাই, কারণ আপনি কাজ করেন না, শুধু সমালোচনা করেন! যিনি কাজ করেন তিনি সমালোচিত হন, এটিই স্বাভাবিক।  রানা দাশগুপ্তকে চিনি ৪৫ বছর। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় ‘শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইন পরিষদ গঠিত হয়, এর সভাপতি ছিলেন বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য্য এবং সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আমিনুল হক, যিনি সার্জেন্ট জহুরুল হকের ভাই, এবং পরে এটর্নি জেনারেল হয়েছিলেন। রানা দাশগুপ্ত, সুব্রত চৌধুরী, প্রফেসর নিম ভৌমিকের নেতা ছিলেন, আমি ছিলাম দপ্তর সম্পাদক। রাশেদ খান মেনন, এমপি’র ওয়ার্কার্স পাটির পল্টন বিল্ডিং-এ এর একটি অফিস ছিল। যে লোকটি সেই তখন থেকে দেশের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে, আপনি ‘দুই দিনের বৈরাগী’ তুড়ি বাজিয়ে তাঁকে উড়িয়ে দেবেন, তা তো হয়না। তাঁর কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করুন, তিনি বনেদি, সম্ভ্রান্ত পরিবার, তাঁর দুর্নীতি করার প্রয়োজন হয়না। এ সময়ে তাঁর অবস্থান ২১ জন সংখ্যালঘু এমপি, মন্ত্রীর চেয়ে শক্তিশালী। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পর তিনিই এখন বাংলাদেশে হিন্দুদের অলিখিত নেতা, মুখপাত্র। রানা দাশগুপ্ত কি ভুল করেন না? অবশ্যই করেন। যুক্তরাষ্ট্রে এসে তিনি ঐক্য পরিষদকে চারভাগে ভাগ করে দিয়ে গেছেন। বহির্বিশ্বে আমেরিকা ও জেনেভায় গিয়ে তিনি কমিটি করছেন, যাদের বাড়ীতে ছিলেন তাদের নেতা বানিয়েছেন, দু’টি কমিটি ‘অকেজো’। আমরা তাঁর কঠোর সমালোচনা করেছি, এখনো করি। গতবার যাতে তিনি সাধারণ সম্পাদক হতে না পারেন একটি শক্তিশালী গ্রূপ সেই চেষ্টা করেছিল, বলেছিল , আমি অপারগতা জানিয়েছিলাম, সবার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম, তিনি নেতা, হিন্দুদের একজন নেতার বড় প্রয়োজন, তাঁর বিরোধিতা ন্য, তাঁকে উপরে উঠতে সাহায্য করুন। একই কথা এডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিকের জন্যে প্রযোজ্য। গোবিন্দ প্রামাণিক সাহস করে যা বলছেন, তা কি আপনি বলতে পারেন? আমি কি লিখতে পারি? পারিনা, আপনি/আমি যা পারিনা, তা অন্য কেউ করছে, তাতে সমস্যা কি? তাঁর সব কথার সাথে আপনার একমত হতে হবে কেন? আমি তাঁর অনেক নীতির সাথে একমত নই, কিন্তু এজন্যে আমায় তাঁর বিরোধিতা করতে হবে কেন? তিনি আমার আশীর্ব্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? হিন্দু মহাজোট যখন প্রথমবার ভাঙ্গে তখন এর এক নেতাকে আমি বলেছিলাম, ‘আপনারা একসাথে থাকুন’, গোবিন্দ প্রামাণিক মাঠে আছে, তাঁর সাথে পারবেন না। তাঁরা আমার কথা শোনেনি, তাঁরা হারিয়ে গেছেন। কিছুদিন আগে যখন কিছু লোক বেরিয়ে গেলেন, তাঁদের একজনকে একই কথা বলেছিলাম, তারাও শোনেনি, তারাও হয়তো হারিয়ে যাবে। এরমানে এই নয় যে, যারা বেরিয়ে গেছেন, তাঁরা অযোগ্য? শুধুমাত্র একত্রে কাজ করতে না পারার জন্যে আমাদের অনেক নেতা হারিয়ে যাচ্ছেন। গোবিন্দ প্রামাণিক ঈশ্বরের বরপুত্র নন, তারও অনেক দোষগুণ আছে, কিন্তু সাহস নিয়ে সত্যকথা বলার কারণে তিনি সামনের সারিতে আছেন, এবং তাঁর পিছনে অনেক মানুষ আছে। যা বলছিলাম, হিন্দুদের একজন নেতা দরকার, কে নেতা হবেন কেউ জানেনা, যাঁরা আছেন, তাঁদের টেনে নীচে না নামিয়ে ওপরে উঠতে সাহায্য করুন।    বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান-৩ প্রিয় হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভাইবোনেরা, উঠে দাঁড়াবার সময় এখনই। জেগে উঠুন, নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ান। দীর্ঘদিন ধরেই ভাবছি, শুনছি, জানতে চেষ্টা করছি যে, বাংলাদেশে আমার হিন্দু ভাইবোনেরা  একজন চৌকষ, সাহসী, দৃঢ়চেতা নেতা চান। কিন্তু কেউ দায়িত্ব নিয়ে নিজে নেতা হতে চাননা, অথবা …

বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক Read More »