Center For Research In Indo

Author name: admin

বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা ভার্সাই চুক্তির মত ২০২৪-র নির্বাচন কি আর একটি নির্বাচনের পদধ্বনি মাত্র?

।।শিতাংশু গুহ, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৩, নিউইয়র্ক।। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হবার পর ৭ই মার্চ ১৯৭৩ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচনটি ভালোই ছিল। এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যা, সামরিক শাসন পেরিয়ে ১৮ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচন। জাতি প্রথম দেখলো ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’। আরো দেখলো নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন। এ নির্বাচনে ভোটের গুরুত্ব ছিলনা, কারণ ফলাফল আগেভাগে ঠিক ছিল। প্রহসনের নির্বাচনের সেই শুরু। থেমে থেমে আজও তা চলছে, কেউ জানেনা এর শেষ কোথায়?  ১৯৮৬ ও ১৯৮৮-এর নির্বাচনের আগে-পরে হিন্দুর ওপর অত্যাচার হয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়, সংখ্যালঘু নির্যাতন বাদ যায়না। ২০০১-র নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি-জামাত বিজয় উৎসব পালন করে ব্যাপক হিন্দু নির্যাতনের মধ্য দিয়ে। এ যাবৎ নির্বাচনী সন্ত্রাসের মধ্যে ২০০১ এখনো শীর্ষে? ১৯৮১ সালে দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে বিচারপতি সাত্তার বিজয়ী হন। জিয়া হত্যার পর এই নির্বাচন ছিল আর একটি প্রহসন, লোক দেখানো এবং সময় ক্ষেপণ। নির্বাচনটি হয় ১৫ নভেম্বর ১৯৮১, এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন ২৪শে মার্চ ১৯৮২।  এ প্রসঙ্গে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের একটি চমৎকার উক্তি আছে। বায়তুল মোকাররমে এক ভাষণে তিনি বলেন, দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হলো, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন ডঃ কামাল হোসেন ও বিচারপতি আব্দুস সাত্তার; জনগণ ভোট দিলো ড: কামাল-কে, জিতলেন সাত্তার সাহেব এবং ক্ষমতায় বসলেন হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ’। সুরঞ্জিতদার এই বক্তব্য থেকে তখনকার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়! এটি আমি নিজকানে শুনেছি।  দেশে আরো দু’বার জনগণের ভোটে (!) প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়, সেটা ১৯৭৮ ও ১৯৮৬। এতে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না, বরং তা ছিল অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার প্রক্রিয়া? একই লক্ষ্যে বাংলাদশে ১৯৭৭ ও ১৯৮৫-তে দুটি রেফারেন্ডাম হয়েছিল, যা ‘হ্যাঁ-না’ ভোট নামে সমধিক পরিচিত। তবে ১৯৯১ সালের রেফারেন্ডামটি ছিল ভিন্ন আঙ্গিকে। ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়, বিএনপি নেয়না। প্রচার আছে যে, আওয়ামী লীগ তখন সরকারের সাথে আপোষ করেছিল। আসলে তা নয়, বিএনপি চালাকি করে আওয়ামী লীগকে বোকা বানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে পড়ে।  ঘটনাটি ছিল এরকম: নির্বাচনে যাওয়া-না-যাওয়া প্রশ্নে তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় জোটের মধ্যে অনেকগুলো মিটিং হয়। চূড়ান্ত সভায় গভীর রাতে যৌথ সিদ্ধান্ত হয় যে, উভয় জোট নির্বাচনে অংশ নেবে এবং পরদিন তারা পৃথক পৃথকভাবে তা সাংবাদিকদের জানাবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আওয়ামীলীগ পরদিন সকালে জানিয়ে দেয় যে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি বিশ্বাসভঙ্গ করে। তারা প্রচার করে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে হাত মিলিয়েছে। ঐ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করে, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে বসে। শেখ হাসিনা বিরোধী নেত্রী হিসাবে এই প্রথম ক্ষমতার স্বাদ পান। ধারণা করি, ঐসময় তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন যে, দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে। সেই সুযোগ এসেছিল ১৯৯১ সালে। অতিরিক্ত কনফিডেন্সের কারণে তখন আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। শেখ হাসিনা বিরোধী নেত্রী হন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। এরশাদ জেলে যান। শেখ হাসিনা তখন সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। যদিও তখন সেটি কেউ আমলে নেয়নি, প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগকে তখন জোর করে (প্রশাসনিক ক্যু!) হারানো হয়েছিল।  ১৯৮৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরশাদ একাই প্রার্থী ছিলেন, সাথে ক’জন নাম না জানা প্রার্থী। ১৯৯১ থেকে নির্বাচনের কথা মোটামুটিভাবে সবার মনে আছে। সেদিকে যাবার আগে ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনের কথা কিছুটা বলা দরকার। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট বা বিএনপি জোট অংশ নেয়নি। জাতীয় পার্টি খালি মাঠে বিজয়ী হয়। আসম রব তখন ‘গৃহপালিত’ বিরোধী নেতা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন, মতিঝিলে জুতাপেটা হন। অবাক কান্ড যে, রওশন এরশাদ এবং আসম রব প্রায় একই ভূমিকা পালন করলেও রওশন এরশাদ ‘গৃহপালিত’ উপাধি পাননি!   ১৯৭৫-এর পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মূলত: অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং যেনতেন প্রকারেণ ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতি চালু ছিল। নির্বাচনের লক্ষ্যও ছিল তাই? ঐসময় জেনারেলদের ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রয়োজনে ধর্মভিত্তিক দল বিএনপি-জাপার জন্ম হয়, ক্যান্টনমেন্টে। ১৯৮৮ সালে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হলে হিন্দু ও সংখ্যালঘুরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়? আবার ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলে হিন্দুদের মনে কিছুটা আশার সঞ্চারহয়। যদিও ১৯৯৬-র নির্বাচনের পর হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন করে বিএনপি-জামাত গোষ্ঠী।  ২০০১-র নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোট জয়ী হয় এবং তারা বিজয় উৎসব পালন করে সংখ্যালঘু বিশেষত: হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়ে। ২০০১-২০০৬ এসময়ে বিএনপি-জামাত শাসনামলে দেশে জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বাড়ে, বাংলাদেশে হচ্ছেটাও তাই। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ২০০১-এর সংখ্যালঘু নির্যাতনের তদন্ত করতে একটি কমিশন গঠন করে। বিচার হয়নি। বাংলাদেশে হাজার হাজার মন্দির ও মূর্তি ভাঙ্গলেও আজ পর্যন্ত একজন এই অপরাধে শাস্তি পায়নি? এটাই সত্য।   বাংলাদেশে ২০০৮-এর ডিসেম্বরের নির্বাচনটি সম্ভবত: সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সংখ্যালঘু নির্যাতন কম হয়েছে। আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে। তারপর ২০১৪-র ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন। ১৫৩জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। যাকিছু ভোট পড়েছে, দিয়েছে হিন্দুরা। পত্রিকায় শাঁখা-সিঁদুরের ছবি এসেছে, হিন্দু আবার নির্যাতিত হয়েছে। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, বিচার হয়নি। ২০০৯ থেকে দেশে নুতন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উন্নয়নের জোয়ার বইছে, সমানতালে চলছে সংখ্যালঘু নির্যাতন, দেশত্যাগ। ২০০৯ থেকে ২০১৭, এবং এখন পর্যন্ত (২০২৩) সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্যে দায়ী সরকার, বিচার নাই, ফলে নির্যাতন চলছে তো চলছেই।   নির্বাচন এলে নির্যাতনের মাত্রাটা বেড়ে যায়। আগেই বলেছি, বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুরা কম-বেশি নির্যাতিত হয়েছে। এই ধারা এখনো চলছে। সামনের নির্বাচনের আগে-পরে হবেনা এর গ্যারান্টি কোথায়? ৭ই জানুয়ারী ২০২৪-র নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছে একটি দল বা জোট, তারা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। যাঁরা নির্বাচন করছেন, তাঁরা ভোট দিতে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। এমনিতে হিন্দুরা সচেতন, ভোট দেন, এবার ভোট দিতে গেলে কি রোষানলে পড়ার সম্ভবনা থাকবে না? এবার আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু মনোনয়ন কম দিয়েছে, এবং কারো কারো মতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে এঁরা অনেকেই জয়ী হতে পারবেন না?  ১৫ই ফেব্রূয়ারি ১৯৯১ সালের নির্বাচনের কথা বলা হয়নি। ওটাও ছিলো প্রহসনের নির্বাচন। খালেদা জিয়ার ক্ষমতা ধরে রাখার অপপ্রয়াস। যদিও তার সেই আশা পূর্ণ হয়নি। ১২ই জুন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হন। ৩০শে ডিসেম্বর ২০১৮ একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি শুধু নামেই নির্বাচন, অভিযোগ রয়েছে, ‘দিনের ভোট রাতে’ হয়ে যায়। ব্যাপক কারচুপি হয়, মূলত: এটি ছিল ‘বিনে’ ভোটের নির্বাচন।  এপর্যন্ত ১১টি সংসদীয় নির্বাচন, ৩টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং ৩টি রেফারেন্ডাম হয়েছে। তাতেও কিন্তু গণতন্ত্র এখনও ‘সোনার হরিণ’ রয়ে গেছে। নির্বাচন মানেই ঝামেলা, ভয়, শঙ্কা। শঙ্কাটা সংখ্যালঘুর মধ্যে বেশি। এতগুলো নির্বাচনের মধ্যে কয়টি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে  তা বলা মুশকিল? জনগণ ২০০৮-এ একটি সুন্দর নির্বাচন দেখেছে, ২০১৪ এবং ২০১৮-তে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এ সময়টায় যারা নুতন ভোটার হয়েছেন তারা কি এবার ভোট দিতে পারবেন?হয়তো পারবেন, কিন্তু পছন্দমত প্রার্থীকে কি ভোট দিতে পারবেন?ভোট তো দিতে হবে, হয় নৌকা বা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে? এবারের নির্বাচনটি হচ্ছে, নৌকা ভার্সেস আওয়ামী লীগ (স্বতন্ত্র)।  নির্বাচনের আর মাত্র ক’দিন বাকি, তবু হয়তো নির্বাচন নিয়ে শেষ কথা বলার সময় শেষ হয়ে যায়নি। স্কুলে পড়েছিলাম, …

বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা ভার্সাই চুক্তির মত ২০২৪-র নির্বাচন কি আর একটি নির্বাচনের পদধ্বনি মাত্র? Read More »

ভারত হারলেই আনন্দ!

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক (২২ শে নভেম্বর ২০২৩) এ আনন্দ-উৎসব হিন্দু বিদ্বেষ থেকে উৎসারিত। ভারত-বিদ্বেষ যা মূলত হিন্দু বিদ্বেষ, এ উপমহাদেশে মজ্জাগত, আপাতত: এ থেকে বেরিয়ে আসার কোন সুযোগ নেই? এজন্যে পাকিস্তান হিন্দু-শূন্য, বাংলাদেশ হিন্দু-শূন্য হবার পথে। অষ্ট্রেলিয়া যোগ্য দল হিসাবে ভাল খেলে জিতেছে, তাঁদের অভিনন্দন। ভারত শক্তিশালী দল, অপরাজিত ছিল, হেরেছে ফাইনালে। খেলা হচ্ছে, ‘হারি-জিতি’ নাহি লাজ, ভারতবাসী দু:খ পেয়েছে, কিন্তু অষ্ট্রেলিয়াকে অভিনন্দন জানাতে ভুল করেনি। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে ভারতের পরাজয়ে আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। না, এটি কোন গোপন বিষয় নয়, বাংলাদেশের দর্শক প্রকাশ্যেই বলেছেন, ভারত হারায় তাঁরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন।    ‘দি নিউজ-বাংলা’ হেডিং করেছে, ‘ভারতের হার, বাংলাদেশে উৎসব’। একজন জাহাঙ্গীর আলম সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “মানুষ এত ‘বে-ইমান’ হয় কি করে, শুধুই ধর্মের জন্যে—ছিঃ বাংলাদেশ ছিঃ”? তাঁর পোস্টে একজন ভারতীয় শুভাশীষ ভট্টাচার্য্য লিখেছেন, ‘যে কেউ অস্ট্রেলিয়াকে সাপোর্ট করতেই পারে, কিন্তু কারণ জানতে চাইলে বলা হলো, ভারত মুসলিম রাষ্ট্র নয়! অস্ট্রেলিয়াও তো মুসলিম রাষ্ট্র নয়, তাহলে? ভারত হিন্দু। বিষয়টি ভারত নয়, বিষয়টি হিন্দু, এক্ষেত্রে ভারত-হিন্দু সমার্থক। ভদ্রলোক লিখেছেন, বিষয়টি পরিষ্কার, এন্টি-হিন্দু। ভারতের টীমে মোহাম্মদ সামি, সিরাজ আছে, তাঁরা চমৎকার খেলেছেন, তাহলেও হবে না, হিন্দুর সাথে থাকলে চলবে না?     তামান্না তাবাস্সুম মিথিলা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ইন্ডিয়া সব ম্যাচে জিতেছে, একটিতে হারলে সমস্যা নেই! তাঁর পোস্টে একজন শাহরিয়ার নাসিফ একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন, ভারত ১০টি জিতেছে, ১টি হেরেছে অর্থাৎ ‘চোরের দশদিন, গৃহস্থের একদিন’।  ‘আরকি’ নামের একটি পোর্টাল ছবির আকারে একটি বক্তব্য দিয়েছে, তাতে লেখা, ‘ইন্ডিয়া হেরে যাওয়ার খুশিতে চিৎকার করতে গিয়ে বড়ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ভারত নিয়ে আসা হচ্ছে’। মো: শাহরুখ ইসলাম  এবং আরো অনেকে টিটকারী করে বলেছেন, ‘হে প্রভু, হরি, কৃষ্ণ, জগন্নাথ, প্রেমানন্দ, ‘এ কেয়া হুয়া’। হিন্দুরা বলেছেন, এরপরও তো ওঁরা কৃষ্ণ নাম নিচ্ছে! একজন আরিফুজ্জাম লিখেছেন, ‘ধর্মের ঢোল আপনি বাজে’।   ভারত-পাকিস্তান খেলায় অধিকাংশ বাংলাদেশী পাকিস্তানকে সমর্থন করে, এর হয়তো একটি কারণ থাকতে পারে, কিন্তু ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে ভারতের পরাজয়ে এ উল্লাস অনেকাংশে ‘বিজাতীয়’। হিন্দু বিদ্বেষ, ভারত বিদ্বেষ ব্যতীত আর কি কারণ থাকতে পারে? নিউইয়র্কে একটি টক-শো তে দু’জন জানালেন, হয়তো এর কারণ ভারতের দাদাগিরি, ভারত বাংলাদেশ থেকে সবকিছু নিয়ে যাচ্ছে, অথবা বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিমাতা-সুলভ আচরণ? যদিও একজন সম্পাদক শেষের বক্তব্যটি প্রমাণসহ নাকচ করে দিয়েছেন! কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মিডিয়ায় এনিয়ে কোন আলোচনা নেই, কেউ কোন কলাম লেখেনি, কারণ মনে মনে সবাই খুশি!    কেউ যদি বলেন, ভারত হারায় এ উচ্ছ্বাস সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বৈ কিছু নয়, তাহলে এঁরা আপনাকে সাম্প্রদায়িক বানিয়ে দেবে এবং ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ হাঁকিয়ে বলবে, ‘খেলার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা টেনে আনবেন না’! সন্ত্রাসের কথা উঠলেও এঁরা  বলেন, ধর্মের সাথে সন্ত্রাসের কোন সম্পর্ক নেই? জিজ্ঞাসা করুন, খেলার মাঠে নামাজ পড়েছিল কারা? বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এটি করে ধর্মের কি লাভ হয়েছে জানিনা, তবে খেলায় জয় আসেনি। এর নিট ফলাফল সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কে দেয়া- যার পরিণতি ভারত বিদ্বেষ, যার উলঙ্গ প্রকাশ ভারতের পরাজয়ের পর সাম্প্রদায়িক উল্লাস। এর বিরূপ প্রভাব পূর্ব-ভারতে পড়েছে, হয়তো আরো পড়বে। প্রাক্তন গভর্নর ড: তথাগত রায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশ অকৃতজ্ঞ, ফের এর প্রমাণ  দিল’।     একজন চমৎকার একটি হাইপোথিটিক্যাল প্রশ্ন করেছেন, তিনি জানতে চেয়েছেন, ফাইনাল খেলাটি যদি ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে হতো, এবং ইসরাইল জিততো, তাহলে বাংলাদেশীরা কি করতেন? আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আমরা খেলাটি ‘বয়কট’ করতাম। এক ভারতের জ্বালায় বাঁচিনা, এর ওপর ইসরাইল! (২) হিন্দুর মাথায় হাত বোলানো! ৩রা নভেম্বর ২০২৩ সরকার এবং দল হিসাবে আওয়ামী লীগ এসময়ে হিন্দু তথা সংখ্যালঘুদের মাথায় হাত বোলাতে শুরু করেছেন। তারা ইতিমধ্যে দেশে বেশ ক’বার হিন্দু নেতা, এবং প্রবাসে ঐক্য পরিষদের সাথে বৈঠক করেছেন। যদিও ফলাফল ‘শূন্য’। গত দেড় দশক সরকার ও আওয়ামী লীগ হিন্দুর কথা বেমালুম ভুলে থেকেছেন। এখন ভোট আসছে, এবার হয়তো ভোটের দরকার হবে, তাই মাথায় হাত বোলানো। এতে কি কাজ হবে? এবার কি শুধু কথায় চিড়ে ভিজবে, না ২০১৮’র অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে?  হিন্দুরা কি তাহলে এবার আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না? পাল্টা প্রশ্ন করা যায়, কেন দেবে? হিন্দুরা তাহলে কাকে ভোট দেবে? ভোটের চিত্রটি ভিন্ন, আগে হিন্দুরা ১শ’ শতাংশ নৌকাকে ভোট দিয়েছে, সত্তরে হিন্দুরা ১শ’ শতাংশ ভোট নৌকায় দিয়েছিল বলেই বঙ্গবন্ধু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল, দেশ স্বাধীন হয়েছিল। পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগের উত্থানে হিন্দুদের অবদান, এমনকি ২০০৮-এ ক্ষমতায় আনতে হিন্দুরা জীবনপণ করেছিল। বিনিময়ে হিন্দুদের ‘কলা’ দেখানো হয়েছে।  ১৩ই অক্টোবর ২০২৩ দৈনিক প্রথম আলো হেডিং করেছে, ‘সংখ্যালঘু নেতাদের সাথে সমঝোতার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ, লক্ষ্য ভোট’। ক’দিন আগে ঐক্য পরিষদের অনশন ভাঙ্গাতে আওয়ামী লীগ ‘সংখ্যালঘু কমিশন’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, আপাতত: সরকার এনিয়ে চুপচাপ। ওয়াশিংটনে হিন্দু নেতারা  আবারো ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ দাবি করেন। মনে হয়, অন্তত: এ দু’টো দাবি পূরণ না হলে এবার আওয়ামী লীগ হিন্দুদের তেমনটা পাশে পাবে না।   তাহলে হিন্দুরা কোনদিকে যাবে? হিন্দুরা সাম্প্রদায়িক দলের দিকে যাবে না, আওয়ামী লীগ এখন আর অ-সাম্প্রদায়িক দল নয়, তবু মাঝে মধ্যে কেউ কেউ মুখে অসাম্প্রদায়িকতার কথা ভুলে বলে ফেলেন, বেকুব হিন্দু তাতেই খুশি? হিন্দুরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এবার নির্বাচনে অসংখ্য হিন্দু প্রার্থী থাকবে। আওয়ামী লীগের ২১জন সংখ্যালঘু এমপি হিন্দুদের নিরাশ করেছেন। এজন্যে ক’দিন আগে রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ২১ জন সাংসদ কিছুই করলেন না!  সিইসি বলেছেন, সংখ্যালঘুরা রাজনৈতিক দলের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। কথাটি সত্য। জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বলেছেন, সরকার জড়িত বলেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হয় না। হিন্দুরা মূলত: শান্তি চায়, সরকার তা দিতে ব্যর্থ। ‘ইসলাম ধর্ম অবমাননা’ এবং হিন্দুদের ওপর আক্রমণ, জেল-জুলুম ঘটনায় হিন্দুরা তিতি- বিরক্ত। ডিএসএ বা অধুনা সিএসএ (সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট) হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্ল্যাসফেমি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইকবালের কারণে ১৮টি জেলায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয়, তাঁর হয়েছে ১৪ মাসের জেল এবং রাকেশ রায়, যিনি ভিকটিম, তার হয়েছে ১১বছরের জেল? এথেকে দেশের বিচার ব্যবস্থার দৈন্যতা এবং হিন্দুর প্রতি ভালবাসা টের পাওয়া যায়!  বর্তমানে হিন্দুদের ‘ভিক্ষা চাইনা, কুত্তা সামলান’ অবস্থা। আওয়ামী লীগের ভালবাসা হিন্দুদের আর দরকার নেই! পূর্ব-পাকিস্তান আমলে হিন্দুরা প্রতিকূল অবস্থায় বাস করতো, কারণ সরকার, রাজনৈতিক দল সবাই ছিল অ্যান্টি হিন্দু। ভরসা ছিলো বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, বাম দলগুলো এবং কিছু ভালো মানুষ। এখন বঙ্গবন্ধুও নেই, নেই সেই আওয়ামী লীগ বা বামেরা, প্রশাসন, রাষ্ট্রযন্ত্র, হুজুর ও ধর্ম ব্যবসায়ীরা সবাই অ্যান্টি সংখ্যালঘু, ভালো মানুষ  কোথায়? হিন্দুদের অবস্থা এখন পাকিস্তান আমলের চেয়েও খারাপ। এই অবস্থায় ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানো ছাড়া সংখ্যালঘু’র সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই?       ভারত কখনও হিন্দুদের জন্যে কিছু করেনি। আওয়ামী লীগ হিন্দুদের জন্যে কিছু করেনি। এই দুই শক্তির ওপর ভরসা করে হিন্দুরা বারবার ঠকেছে, হয়তো ঠকে ঠকে শিখেছে, ‘বলং বলং বাহু বলং’। বাংলাদেশের দুই কোটি হিন্দুকে বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’! বাংলাদেশে গণতন্ত্র, প্রগতিশীলতা বজায় রাখতে, বা উগ্রতা ও ইসলামী মৌলবাদ ঠেকাতে সংখ্যালঘুরা ‘ডিটারেন্ট …

ভারত হারলেই আনন্দ! Read More »

মুক্তিযুদ্ধের গান

পূর্ণিমা নস্কর স্বাধীনতা কোন দেশের প্রাণ হলে সংস্কৃতি হয় তার সৌন্দর্য।  দেশের এই সংস্কৃতিকে বুকে আগলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই সে দেশের আবেগপ্রবণ মুক্তিযুদ্ধকে করেছিল উজ্জ্বল। আর এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিরাট একটা অংশ ছিল তরুণ প্রজন্ম।  এই তরুণদের টগবগ করা রক্ত, দূর্দমনীয় সাহস  স্বাধীনতা-সংগ্রামকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছিল এবং সেইসব তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে রচিত হয়েছিল অসংখ্য গান।  সেইসব প্রাণশক্তিরূপিণী গানের ডালিকে স্মরণ করে বীর শহীদের প্রতি রইল  আমার অন্তরের গভীর বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ।   এই সমস্ত গানের সম্প্রচারের জন্য স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র বিশেষ ভুমিকা পালন করেছিল। সেই সমস্ত গান তৎকালীন উভয় বাংলার আপামর জনসাধারণকে উদ্বেলিত করেছিল – যার রেশ আজও ম্রিয়মাণ হয়নি। সেইসব গানের কিয়দংশ নিবেদন করার মধ্য দিয়ে সেই সূদুর সত্তরের দশকের প্রথমার্ধে যে উন্মাদনার সৃষ্টি  হয়েছিল স্বাধীন বাংলায় ও পশ্চিমবঙ্গে তার একটা প্রতিচ্ছবি বা অনুরণন ফিরে পাওয়ার প্রয়াস এই  প্রবন্ধে রয়েছে।   যে সব গান বেতার কেন্দ্রগুলি সম্প্রচার করেছিলঃ  “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি।                                                 মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।”  (১)   এই গানে পূর্ব পাকিস্তানের কোটি কোটি মানুষের প্রাণ সজীব, উজ্জ্বল ওঠে। প্রতিরোধ সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় রচনার একটি অমোঘ অস্ত্রস্বরূপ ছিল গানটি। এর রচয়িতা হলেন গোবিন্দ হালদার, সুরকার ও  শিল্পী ছিলেন আপেল মাহমুদ। শ্রোতাদের বিচারে গানটি সেরা গানগুলির মধ্যে পঞ্চম স্থানে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল।   চিরকালীন শোষণ আর নিপীড়ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ইতি বাঙালি বিজয় দিয়ে দেখতে চেয়েছিল, যাতে এসে সামিল হয়েছিল অসংখ্য মানুষের দেশপ্রেমের অনুভব আর প্রাণপণ লড়ে যাওয়ার গৌরব বাসনা। সে সময় নাঈম গহর লিখেছিলেন—         “নোঙ্গর তোলো তোলো         সময় যে হলো হলো         নোঙ্গর তোলো তোলো।“ (২)   পরবর্তীতে সমর দাস  এ গানটিতে সুরারোপিত করলে বাঙালি স্বাধীনতার লড়াইয়ে নতুন করে মনে বল অনুভব করে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত  বাঙালির মনে দেশপ্রেমকে জাগরিত করতে অনবদ্য ভূমিকা রাখে। আরও একটি উল্লেখযোগ্য গান হল—         তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে।         আমরা কজন নবীন মাঝি হাল ধরেছি শক্ত করে। (৩)   গানটির  গীতিকার ও সুরকার আপেল মাহমুদ। কন্ঠশিল্পীরা হলেন আপেল মাহমুদ, রথীন্দ্রনাথ রায় ও সহশিল্পীরা। গানটির মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের লড়াইয়ের অগ্রসরতাকে প্রকাশ করা হয়েছে এবং গানটি ছিল মুক্তি সংগ্রামের তীব্র চেতনার এক বজ্রকঠিন শপথ।   অপর একটি গান, যার কথা, সুর এবং গায়কি লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করে তুলেছিল। গানটি এইরূপ –         “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে,         রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল,         জোয়ার এসেছে জন সমুদ্রে         রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল,         বাঁধন ছেঁড়ার হয়েছে কাল।” (৪) সমবেত কণ্ঠ-শিল্পীদের দ্বারা গাওয়া গানটির গীতিকার গোবিন্দ হালদার এবং সুরকার ছিলেন সমর দাস। এ গানটি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তরুণদের মধ্যে অদম্য সাহস সঞ্চার করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে একটা ভিন্ন মাত্রায় উন্নীত করেছিল।   সমাজের সর্বস্তরের জনতার  অংশগ্রহণ যে স্বাধীনতা সংগ্রামকে শাসককুল আর দাবিয়ে রাখতে পারবে না বুঝেই সিকান্দার আবু জাফর লিখেছিলেন –         “জনতার সংগ্রাম চলবেই         আমাদের সংগ্রাম চলবেই         জনতার সংগ্রাম চলবেই।“ (৫)   শেখ লুৎফর রহমানের সুরে শিল্পীরা যখন সমবেতভাবে এই গান গাইলেন তখন তা এক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।   বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত শুধু সবদিক থেকে সাহায্যই করেনি; মুক্তিযুদ্ধের গানেতেও তার অবদানের সাক্ষর রেখেছে বহুক্ষেত্রে। ভারতের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত প্রতিভাবান শিল্পীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাত ও ধর্মের বিচার না করেই গান রচনা করেন ও পরিবেশন করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। দৃষ্টান্তস্বরূপ গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানটি – “মাগো ভাবনা কেন আমরা তোমার শান্তপ্রিয় শান্তছেলে প্রতিবাদ করতে জানি  শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি তোমার ভয় নেই মা আমরা”।  (৬)   এখানে বাংলাদেশকে মায়ের স্থান দেওয়া হয়েছে। কত শত তরুণ গানটি শুনতে শুনতে গৃহত্যাগী হয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল এবং ইতিহাসে আজ সেসব তথ্য  কিছু হলেও লিপিবদ্ধ হয়েছে।   বিখ্যাত সুরকার গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা আরও একটি গান –         “শোন একটি মুজিবুরের থেকে         লক্ষ মুজিবুরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি- প্রতিধ্বনি         আকাশে বাতাসে ওঠে রণি,         বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।” (৭)   গানটির সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী  ছিলেন অংশুমান রায়।  এই গানটি ছিল এমন একটি গান, যেটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হওয়ার অনেক আগেই ভারতের কোন এক বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত হয়েছিল।   বাংলাদেশি সঙ্গীতজ্ঞরাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছেন। গাজী মাঝহারুল আনোয়ারের লেখা ও আনোয়ার পারভেজের সুরারোপিত এবং কণ্ঠশিল্পী মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সেই বিখ্যাত গান –           “জয় বাংলা বাংলার জয়।         হবে হবে হবে হবে নিশ্চয়।         কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধ রাতে         নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময় জয় বাংলা বাংলার জয়।” (৮) গানটির জনপ্রিয়তা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে পরে এই গানটি ‘জয় বাংলা’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়।  গানটি মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাসহ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল। এ প্রসঙ্গে ডিএল রায়ের একটি বিখ্যাত গান—মাতৃভূমি নিয়ে গর্বিত হওয়ার গান।   “ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা।” (৯)    এই গানটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রত্যাবর্তনের দিক নির্দেশ করে।   আব্দুল লতিফের লেখা ও গাওয়া অপর একটি উল্লেখযোগ্য গান হল –           “ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়          ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়         ওরা কথায় কথায়  শিকল পরায় আমার হাতে পায়ে           ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমাদেরই হাতে পায়ে।” (১০)   এখানে তৎকালীন পাকিস্তানে (অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার সমান মর্যাদা) পূর্ববঙ্গে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির যে প্রকৃষ্ট চর্চার কেন্দ্র ছিল সেখানে লোকজ সঙ্গীত একটা বড় স্থান জুড়ে রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু ঘোষণার প্রেক্ষিতে বিচলিত হয়ে পড়ে এবং নিজেদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার তাগিদ অনুভব করে।   মুক্তিযুদ্ধের ৭৮টি গানের মধ্যে রথীন্দ্রনাথ রায়ের কণ্ঠে বহুল প্রচারিত উল্লেখ্য গানটি ছিল—           “আমার এদেশ সব মানুষের” (১১)   আব্দুল জব্বারের গাওয়া জনপ্রিয় গানটি হল—         সাত কোটি মানুষের আর একটি নাম         মুজিবর, মুজিবর, মুজিবর।  (১২) গানটির কথা লিখেছিলেন শ্যামল গুপ্ত এবং গানটিতে সুর দিয়েছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় সুরকার বাপ্পী লাহিড়ী।   ফেরদৌসী রহমানের গাওয়া অপর এক গান –           “আমার মন জুড়ানো চোখ জুড়ানো।” (১৩)   আব্দুল লতিফের লেখা হৃদয় জুড়ানো গানটি ছিল এইরূপ –         “সোনা সোনা লোকে বলে সোনা         সোনা নয় ততো খাঁটি         বলো যত খাঁটি তার চেয়ে খাঁটি         বাংলাদেশের মাটিরে আমার জন্মভূমির মাটি         ধন্য মানি জীবনটাকে এই বাংলাকে ভালোবেসে।” (১৪)   এ ব্যতীত এ প্রসঙ্গে বলা যায়, ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান আমলে সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্দার আলাউদ্দিন আহমেদের লেখা, সুরে ও কণ্ঠে ধ্বনিত হয় বিখ্যাত যে গান—         “মুজিব বাইয়া যাওরে         নির্যাতিত দেশের মাঝে         জনগণের নাওরে মুজিব         বাইয়া যাওরে।”   (১৫)   এই গানটির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলার ঘরে ঘরে …

মুক্তিযুদ্ধের গান Read More »

নির্বাচনঃ কি হতে পারে?

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক (১) আওয়ামি লিগ ভাবছে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে। আওয়ামি লিগ চায় বিএনপি নির্বাচন বয়কট করুক। তাহলে আওয়ামি লিগ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে কি হবে?  এ প্রশ্নের আপাতত তেমন কোন সদুত্তর নেই। বিএনপি কি নির্বাচনে আসবে? বিএনপি জানে এবার নির্বাচনে না এলে ভেতর থেকেই এই দলের অস্তিত্ব  বিলীন হয়ে যাবে। তাই ধারণা করি, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। দেশের স্বার্থে এবার নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। নইলে দেশ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়বে, যা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। জরিপ বলছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামি লিগ ৬৭টি আসন পাবে? অর্থাৎ আওয়ামি লিগ ক্ষমতা হারাবে? আওয়ামি লিগ হারতে রাজি আছে, কিন্তু ক্ষমতা বিএনপিকে দিতে চাইবে না! তাদের মনোভাব হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসলে নির্বাচনের দরকার কি? আওয়ামি লিগ ও বিএনপি একে অপরকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই  আওয়ামি লিগ চাইবে আপাতত নির্বাচন না হোক। এ অবস্থা কি হতে পারে?  বাংলাদেশে কি কিছু অসম্ভব? তবে আওয়ামি লিগ সংবিধানের বাইরে যাবে না! এও সত্য যে, এমন সমাধান চাই, যাতে বিদেশিরা মোটামুটি সন্তুষ্ট থাকে। বিএনপি মনে করে, ক্ষমতায় না গেলেও আওয়ামি লিগ হটাতে হবে। ব্রিকস সম্মেলনে মোদী-শিজিনপিং  সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামি লিগ-বিএনপি এমত একটি ঐক্যমত কি আশা করা যায়? না, যদিও এটি হওয়া দরকার, কিন্তু কার্যতঃ সেটি অসম্ভব। তাহলে? তাহলে তো অনেক কিছুই হতে পারে, এ বছরের বাকি ক’টি মাস ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কি হতে পারে, এমন কিছু সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যাক। প্রথম সম্ভাবনা হচ্ছে, দেশে জরুরী অবস্থা জারী করা। রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করা। রাষ্ট্রপতি সবার সাথে আলোচনা করে একটি ‘অন্তর্বর্তী’ সরকার গঠন ক্রবেন, যেটি নির্বাচনী লেভেল ফিল্ড তৈরী করবে, এবং এরপর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এতে বিএনপি’র লাভ, তাদের মূল দাবি শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে নির্বাচনে না যাওয়ার শর্ত দাবি পূরণ হবে। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে। এসব কিছুই ‘হাইপোথেটিক’, আলোচনা সাপেক্ষ। দুই/এক বছর পর নির্বাচনে ফলাফল যাইহোক, তাতে আওয়ামি লিগের ক্ষতি নেই? ইতিমধ্যে বৈদেশিক চাপ কমবে, ২০০৮-এর মত একটি স্বচ্ছ নির্বাচন হবে? দ্বিতীয় সম্ভাবনা হচ্ছে, বর্তমান সরকার সবার অংশগ্রহণে একটি সুন্দর নির্বাচন করবে, এবং ফলাফল মেনে নেবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা না হয়ে ঐকমত্য হতে হবে। কারণঃ অবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতের মধ্যে আওয়ামি লিগকে শেষ করে দেবে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ থাকবে না, আমিও থাকবো না?  বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, মনে হচ্ছে খুব একটা কঠিন সময় আসছে। এদের আশ্বস্ত করতে হবে। তৃ্তীয়তঃ সরকার ডেকে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা দিয়ে যাবে? তবে এক্ষেত্রে  সংবিধান সংশোধন দরকার হতে পারে? তাই আপাততঃ সংসদ বাতিল হচ্ছে না। দলের ভিতর ক্যু হবার কোন সম্ভাবনা নাই, তাই শেখ হাসিনা যা চাইবেন, তাই হবে? চতুর্থতঃ ডঃ ইউনুস? শেখ হাসিনা স্বয়ং ইউনুসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। হয়তো আওয়ামি লিগ ভাবছে বিএনপি ডঃ ইউনুসকে তাদের ‘প্রধানমন্ত্রীর মুখ’  ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে নামবে। এতে বৈদেশিক সমর্থন যেমন মিলবে, তেমনি খালেদা-তারেক ইস্যু পিছিয়ে পড়বে। এই সম্ভাবনা খুব কম, কারণ বিএনপি বাইরের কাউকে বিশ্বাস করেনা। পঞ্চমতঃ বা চুড়ান্ত কথা হচ্ছে, এবারকার নির্বাচন সুষ্ঠু হতেই হবে, নইলে দেশ বিপাকে পড়বে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, বিএনপি ক্ষমতায় আসছে না। আওয়ামি লিগের বিকল্প বিএনপি নয়, শেখ হাসিনা’র বিকল্প খালেদা জিয়া নন । তারেক জিয়া’র কোন প্রশ্নই ওঠে না। খালেদা-তারেক নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা শূন্য, জিরো। অনেকে নিরপেক্ষ হতে শুরু করেছেন!  (২) বাংলাদেশে শেখ হাসিনা’র যতটা বিরোধিতা, ভারতে ঠিক উল্টো, সেখানে তিনি ততটাই জনপ্রিয়। পুরো ভারতে কোন দলের কোন নেতা ‘শেখ হাসিনা’ বিরোধী খুঁজে পাওয়া যাবেনা। নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধী বা মমতা ব্যানার্জী’র মুখে কখনো শেখ হাসিনা বিরোধী কথাবার্তা শোনা যায়না। শেখ হাসিনা যাদু জানেন, তিনি সবাইকে যাদু করে রেখেছেন। ভারত তার নিজের প্রয়োজনে শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চায়। এটি শুধু ‘ওপেন সিক্রেট’ তাই নয়, এ লক্ষ্যে ভারত বিশ্বব্যাপী দরবার করে যাচ্ছে। জি-২০ সম্মেলনের পূর্বাহ্নে ভারত শেখ হাসিনাকে অভূতপূর্ব সম্মানে ভূষিত করে তা প্রমাণ করেছে। এতকিছুর পরও সবকিছু যে সরল রেখায় চলছে তা নয়? ব্রিকস সম্মেলন, দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের পর  এবার আমেরিকায় সাধ্যমত চেষ্টা হবে, প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কের পর এক সপ্তাহ ওয়াশিংটনে থাকবেন। একটি  মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে একজন মহিলা গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন বা জীবনযাত্রার যতটা উন্নয়ন করেছেন, তা অন্য মুসলিম দেশগুলোর অনুকরণীয় এবং পশ্চিমা দেশগুলির  শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়া দরকার। বাস্তবতা এখনো উল্টো। সরকারের অপোজিশনে এবার বিএনপি নয়, আমেরিকা।  কাজেই সতর্ক হওয়া দরকার। ছোটবেলায় পড়েছিলাম, ‘অমঙ্গলকে হাসিয়া উড়াইয়া দিলে মঙ্গলসমেত উড়িয়া যাইবে’। সঠিক নির্বাচন না হলে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে তখন আম ও ছালা দুটোই যাবে। ইইউ ইতিমধ্যে জিএসপি সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আমেরিকা যদি জিএসপি ও শান্তিরক্ষীর বিরোধিতা করে তাহলে কি হবে? বাস্তবতা বুঝতে হবে। বিএনপি-জামাত ২০০১-২০০৬ যত অপকর্ম করেছে, সারাদিন এর নিন্দা করা যায়, ঠিক আছে। কিন্তু গত পনের বছরের কর্মকান্ড, বিশেষেত: দু’টি নির্বাচনের দায় তো আওয়ামি লিগকে নিতে হবে। দেশের কথা চিন্তা করে অনেকে ভীত, সন্ত্রস্ত। আওয়ামি লিগ ভাবছে তারা ক্ষমতায় থাকছে, বিএনপি ভাবছে তারা ক্ষমতায় আসছে। বিএনপি অন্তত: এটুকু ভাবছে যে, আমেরিকা যখন লেগেছে, তখন এবার কিছু একটা হবে! সত্যি সত্যি যদি আমেরিকা কিছুটা নমনীয় না হয়, তাহলে দেশের মানুষের অসুবিধা হবে! বাংলাদেশের বড়বড় লোকজনের সবার ছেলেমেয়ে আমেরিকায় থাকে, অনেকে শেষ বয়সে থাকার জন্যে আমেরিকায় বাড়িঘর করেছেন, এঁরা কেউ চাইবেন না, আমেরিকা-ইউরোপের দরজা তাদের জন্যে বন্ধ হয়ে যাক? দেশে এখন লোকজন তাই নিরপেক্ষ হতে শুরু করেছেন! সবাই বসে আছেন, শেখ হাসিনা আমেরিকায় কতটা সফল হবেন এর ওপর। অক্টোবরের শুরুতে তিনি দেশে ফিরে যাবেন। ৬ই অক্টোবর  ঐক্য পরিষদের মহাসম্মেলন, লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হবেন, সরকার তাঁর ২০১৮’র নির্বাচনী ইশতেহার অন্তত: কিছুটা বাস্তবায়ন না করলে হিন্দুদের খোলাখুলি আওয়ামি লিগকে সমর্থন করাটা কঠিন হবে। এবারের ভোটটি আওয়ামি লিগ ভার্সেস এন্টি-আওয়ামি লিগ, ভোট যদি হয়, আওয়ামি লিগের হিন্দু ভোটের দরকার হবে? অবশ্য, অনেকেই আগের মত জিততে চান, সেক্ষেত্রে ভোটের দরকার হবেনা । সেলফি (৩) লিখেছিলাম, শেখ হাসিনা-বাইডেন বৈঠকের চেষ্টা হচ্ছে। দিল্লিতে তা হয়নি। অন্তত: প্রকাশ্যে কিছু হয়নি। ভেতরে ভেতরে কিছু হয়েছে কিনা জানতে সময় নেবে। তবে সেলফি হয়েছে। বাইডেন সেলফি নিয়েছেন। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, পুতুল সবার সাথে বাইডেন ছবি তুলেছেন। এটি ভালো দিক। কারো কোন অসুবিধা হবার কথা নয়, তবে হচ্ছে, কারো কারো জ্বলছে। এতে খুশি হবারও তেমন কারণ নেই, এসব সৌজন্য। আবার বিষয়টি এতটা হালকা নাও হতে পারে। কথা হচ্ছে, যা হয়েছে, ভালই হয়েছে। বাইডেন যখন সেলফি নিচ্ছিলেন, ফরেন সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন তখন দূর থেকে তাকিয়ে দেখছিলেন। হয়তো ভাবছিলেন, ‘প্রেসিডেন্টও তাহলে সেলফি নেন’! আমাদের বিদেশমন্ত্রী তখন পাশেই ছিলেন। …

নির্বাচনঃ কি হতে পারে? Read More »

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের নবজাগরণের অগ্রদূত বনভন্তে

ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের পার্বত্য অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী বসবাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে একজন অসামান্য মহাপুরুষের নাম শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তে। তিনি 1976 থেকে 2012 খ্রী. পর্যন্ত ছিলেন রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে তাঁর অবদান অনতিক্রম্য। তাঁর ধর্মপ্রচারের সময়কাল বিশ শতকের  সত্তরের দশক থেকে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের গোড়া অর্থাৎ 2012 খ্রী. পর্যন্ত প্রায় 42 বছর। 1962 সালে উপসম্পদা বা ভিক্ষুত্ব গ্রহণ থেকে হিসাব করলে এই সময়সীমা আরও 8 বছর বেড়ে হয় 50 বছর বা অর্ধশতাব্দী। সুতরাং সুদীর্ঘ 50 বছর যাবৎ বনভন্তে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্ম ও বৌদ্ধ সংস্কৃতিমুখী সমাজ বিনির্মাণে নিরলসভাবে ধর্মোপদেশ দেশনা করে গেছেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ আচার-অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতিতে নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। 24 ঘণ্টার মধ্যে সুতা কেটে ভিক্ষুদের পরিধেয় চীবর তৈরি করে কঠিন চীবর দানের প্রবর্তন, উপগুপ্ত বুদ্ধের পূজা, ছিমিতং পূজা বা স্বর্গঘর তৈরি করে স্বর্গের সোপানগুলোর ধারণা প্রদান, কার্তিক মাসের চাঁদদেখা থেকে মাসব্যাপী আকাশ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, সারারাত ব্যাপী মঙ্গলসূত্র পাঠ বা পরিত্রাণ শ্রবণ, বিপুল সংখ্যক ভিক্ষু সমাবেশে মহাসংঘদান, একইসাথে শত কূলপুত্রকে শ্রামণ্যধর্মে দীক্ষা বা প্রব্রজ্যাদান, সমগ্র ত্রিপিটক বঙ্গানুবাদ করে প্রকাশের নিদের্শন প্রদান, রাজবন পালি কলেজ প্রতিষ্ঠা, বুদ্ধগয়ার আদলে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে একটি দৃষ্টিনন্দন বিশ্বশান্তি প্যাগোডা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ, তিন পার্বত্য জেলায় এমনকি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শাখা বনবিহার প্রতিষ্ঠা করে একই নীতি আদর্শের শিষ্যসংঘ প্রেরণ করে ধর্মপ্রচার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।   বনভন্তের নির্দেশিত এসব দানকর্ম, উৎসব অনুষ্ঠান, পূর্জা-পার্বণ ও প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধ সমাজ গঠনে অতুলনীয় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে।ফলশ্রুতিতে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামব্যাপী গড়ে ওঠে একটি সুশৃঙ্খল বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুশাসন। চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, বড়ুয়া সকল সম্প্রদায়ের মনে ধর্মচেতনা জাগ্রত করে এবং ত্রিরত্ন তথা বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ এবং বৌদ্ধ বিহারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও অনুরাগের জোয়ার সৃষ্টি হয়। বুদ্ধ বলেছেন সংসার অনিত্য। বনভন্তেও বাংলাদেশের আপামর বৌদ্ধদের মনে ধর্মবোধ সৃষ্টি করে 2012 সালের 30 জানুয়ারি দেহত্যাগ করে পরিনির্বাণ লাভ করেন। তবে তাঁর পবিত্র দেহধাতু প্রায় একযুগ ধরে রাজবন বিহারে  পেটিকাবদ্ধ অবস্থায় ভক্তদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এ প্রবন্ধে পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণে এই মহাপুরুষের কৃতিত্ব সম্বন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে। 1920 সালের 8 জানুয়ারি পূজ্য বনভন্তে ধরাধামে আবির্ভূত হন। তৎকালীন প্রতাপশালী মৌজাপ্রধান হেডম্যান শ্রী ত্রিলোচন দেওয়ান-শাসিত মৌজার অন্তর্গত একটি গ্রাম ছিল মোরঘোনা। সেই গ্রামেই হারুমোহন চাকমা ও বীরপুদি চাকমার সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন রথীন্দ্রলাল চাকমা যিনি নিজের সাধনা ও কর্মের ফলে কাল পরিক্রমায় লোকমুখে বনভন্তে নামে সমধিক পরিচিত ও পূজিত হন। বনভন্তের পবিত্র জন্মস্থান মোরঘোনা ও ধ্যানস্থান ধনপাতা পরিণত হয়েছে পবিত্র তীর্থস্থানে।কাপ্তাই হ্রদের জলে গ্রামটি নিমজ্জিত হলেও বর্তমানে হ্রদের মাঝখানেই নির্মিত হয়েছে বনভন্তের সুদৃশ্য স্মৃতিস্তম্ভ। শ্রদ্ধেয় বনভন্তে গৃহী জীবনে তৎকালীন রাঙামাটি শহরে ধনাঢ্য বিরাজমোহন দেওয়ান বাবুর দোকানে চাকরি নিয়েছিলেন। রাঙামাটি শহরে অবস্থান করার সুবাদে তিনি অবসর সময়ে প্রচুর গ্রন্থ পাঠের সুযোগ লাভ করেন। বনভন্তের জন্মস্থান মোরঘোনা ছিল রাঙ্গামাটির চাকমা রাজবাড়ি ও বড়াদমের দেওয়ান পরিবারের কাছাকাছি।  চাকমা রাজবাড়ি এলাকায় ছিল বিশাল বৌদ্ধ বিহার এবং বড়াদমেও ছিল পার্বত্য চট্টল ধাতুচৈত্য বৌদ্ধ বিহার। ফলশ্রুতিতে রথীন্দ্র ছোটবেলা থেকেই বৌদ্ধ ধর্মীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার ও একান্ত সান্নিধ্যে আসার সুযোগ লাভ করেন। বনভন্তের নিজগ্রাম মোরঘোনাতেও একটি বৌদ্ধ বিহার ছিল। সেদিক দিয়ে বনভন্তে শৈশবে বৌদ্ধ মন্দির, বুদ্ধমূর্তি, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ ধর্মানুষ্ঠান স্বচক্ষে দেখার অপার সুযোগ লাভ করেন যা তাঁর বাল্যকালের কোমল কচি চিত্তে বৈরাগ্যের চিন্তার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সংসার জীবনের চেয়ে বুদ্ধের নির্দেশিত প্রব্রজ্যা জীবনকেই শ্রেয়তর বলে মনস্থির করতে সক্ষম হন। এর ধারাবাহিকতায় 1949 সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে গুরুভন্তে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবিরের নিকট গৃহীজীবন পরিত্যাগ করে প্রব্রজ্জিত হন। তিনি শুরুতে রথীন্দ্র শ্রমণ নাম  প্রাপ্ত হন। পরে পারমার্থিক জ্ঞানের সন্ধানে বারোটি বছর অরণ্যজঙ্গলে ধ্যানসাধনারত অবস্থায় তিনি ভক্ত- পূজারী ও সাধারণ মানুষের নিকট বনশ্রমণ নামে পরিচিত হন। পূজ্য বনভন্তে শ্রমণ থাকা অবস্থায় কাপ্তাই বাঁধের ফলে সৃষ্ট হ্রদের পানি তাঁর সাধনাস্থান ধনপাতা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে দীঘিনালায় চলে আসেন। ওই অবস্থায় তিনি তৎকালীন গুরুস্থানীয় সাংঘিক ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে 1962 সালে উপসম্পদা তথা ভিক্ষুত্ব গ্রহণে সম্মত হন।বনশ্রমণ নিরন্তর সাধনায় নিমগ্ন থাকতে পছন্দ করেন বলে উপসম্পদার পর তাঁর নাম রাখা হয় সাধনানন্দ ভিক্ষু। আর সর্বসাধারণের নিকট বনভন্তে নামেই সম্বোধিত ও পূজিত হতে থাকেন। অতঃপর শুরু হয় তাঁর ধর্মপ্রচার কাজ।     রাঙামাটি পার্বত্য জেলার একটি উপজেলা হলো লংগদু। দীঘিনালা থেকে কাছে। গভীর অরণ্য আচ্ছাদিত এলাকা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেখানে তিনটিলা নামক স্থানে অবস্থান করেন।  তখন তাঁর সাধকজীবন, আধ্যাত্মিক শক্তি, প্রজ্ঞাবল, ঋদ্ধিবল ও বিশুদ্ধ ত্যাগময় সরল সাধাসিধে জীবনযাপন লোকমুখে জানাজানি হতে থাকে। 1973 সালে তাঁর নির্দেশনায় ও উপদেশে লংগদুস্থ তিনটিলা বনবিহারে প্রথমবারের মতো বুদ্ধযুগের মহাউপসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয় । 24 ঘণ্টার মধ্যে সুতা কেটে, রঙে ভিজিয়ে. আগুনের তাপে শুকিয়ে, টানা দিয়ে. কোমর তাঁতে কাপড়/চীবর বুনে ও সেলাই করে সংশ্লিষ্ট বিহারের অধ্যক্ষকে দান করা হলো কঠিন চীবর দান। এমন অভূতপূর্ব দানপ্রক্রিয়া দেখে এবং চাকমাদের প্রথাগত ঐতিহ্যবাহী বেইনবুননের সাথে সামঞ্জস্য দেখে সকলেই অভিভূত হন।এরপর বনভন্তের খ্যাতি দ্রুত   অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর খ্যাতির কথা লংগদু থেকে রাঙামাটির রাজপরিবার পর্যন্ত পৌছঁতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। পরম্পরাগতভাবে সৎ ধর্মানুরাগী, সমাজহিতৈষী, প্রজাবৎসল চাকমা রাজপরিবার শ্রদ্ধেয় বনভন্তেকে সশিষ্যে রাঙামাটির রাজবাড়ির পার্শ্ববর্তী বনে বিহার স্থাপন করে স্থায়ীভাবে বসবাসের আমন্ত্রণ জানায়। বনভন্তের সেই ফাং বা আমন্ত্রণ গ্রহণ ছিল একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত । অতঃপর রাজবাড়ির  উত্তরপাশে সবুজশ্যামল ছায়া সুনিবিড় বনে স্থাপিত হয় রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার যা এখন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র। লংগদু থেকে রাঙামাটি অবস্থানগত, যোগাযোগ ও দায়কদায়িকাদের অবস্থা বিবেচনায় সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থিত। বনভন্তে কর্তৃক রাজপরিবারের আমন্ত্রণে সাড়া প্রদান ও রাঙামাটিতে অবস্থানের সিদ্ধান্তগ্রহণ নিঃসন্দেহে বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারের ক্ষেত্রে মাইলফলক রচনা করে। রাজনৈতিক নানা উত্থান পতনের সময়েও কঠিন পরিবেশে শ্রদ্ধেয় বনভন্তে অভয় ও অবিচল চিত্তে ধর্মপ্রচার করেছেন।  বুদ্ধের দেশিত অহিংসা, করুণা, মুদিতা, উপেক্ষা, কৃতজ্ঞতাও পরোপকারিতার কথা সহজ সরল উপমা দিয়ে দেশনা করে গেছেন। ব্যাখ্যা করেছেন দানের মাহাত্ম্য, শীল পালন ও নৈতিকতার গুরুত্ব, ভাবনার প্রয়োজনীয়তা। সমালোচনা ও প্রতিবন্ধকতা এসেছিল।কিন্তু তিনি তাঁর নীতি থেকে একচুলও চ্যুত হননি।  তাঁর  ঋদ্ধিবলম আধ্যাত্মিক শক্তি, প্রজ্ঞাতেজের সামনে আসলে নিন্দুক, সমালোচক ও শক্তিধররা আপনিই নতজানু হয়েছেন। করজোড়ে বন্দনা নিবেদন করেছেন। এ সময়কালে আশির দশকে রাঙামাটি শহর এলাকা এবং সদর উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন বনভন্তের  ধর্মপ্রচারের আওতায় চলে আসে। বনভন্তের রচিত ও শ্রুত বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগীত, কীর্তন, বন্দুকভাঙ্গা, তৈমিদং, বালুখালি, মগবান, জীবতলি কুতুকছড়ির বৌদ্ধ জনপদ, গৃহ ও বিহারগুলিতে বাজতে শুনা যেতো। বনভন্তের জীবনের শেষ পনেরো বছর ছিল(1997-2012) খ্যাতি ও সাফল্যের স্বর্ণালী অধ্যায়। এসময় বাংলাদেশে ধর্মপ্রচারের অনুকুল পরিবেশ …

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের নবজাগরণের অগ্রদূত বনভন্তে Read More »

সৌদি নয়, বৌদি ও ভাবীই ভবিষ্যৎ

।।শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। (১) নিউইয়র্কে এপ্রিল ২০২৩ এর শেষ সপ্তাহে একজন প্রগতিশীল লেখক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিয়ে ‘সৌদিও চাইনা, বৌদিও চাইনা’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ লেখেন।  ছন্দোময় হেডিং, শুনতে ভালো লাগে, পাঠক খাবে। এতে কিছুটা সংগ্রাম, কিছুটা আপোষ সবই আছে। আমাদের দেশের প্রগতিশীলরা  যেমনটা হ’ন, ‘নিজেদের লোকগুলোকে খুশি রাখা’ এবং তাতে ‘অন্যরা একটু অখুশি হলেও ক্ষতি নেই’-এটিও তাই! এটি আপোস। দেশে এমনতর আপোস  করতে করতে সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে, প্রগতিশীলরা তাই এখন মুখ খুলে ‘টু-শব্দ’টি পর্যন্ত করতে পারছেন না? নিউইয়র্কে এঁরা ইনিয়ে-বিনিয়ে সত্য এড়িয়ে যান, কেউ ভয়ে, কেউবা পুরস্কার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকায়। সৌদি আর বৌদি শব্দের সাথে বাঙালী পরিচিত। বৌদি শব্দটি পুরোপুরি তদ্ভব বাংলা শব্দ। মূলত: বাঙালী হিন্দু এটি ব্যবহার করে, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ধর্ম-নির্বিশেষে ‘ভাবী’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত হয়, বাংলাদেশের মুসলমান ‘ভাবী’ ডাকে। ভাবী বাংলা শব্দ নয়, ‘বৌদি চাইনা’ না বলে ‘ভাবি চাইনা’ বলার সাহস কিন্তু কারও নেই? লেখকের ধর্মীয় পরিচয় তিনি মুসলমান, ‘ভাবী চাইনা তিনি লিখতে পারেন না, লেখা উচিতও নয়, ঠিক একই কারণে ‘বৌদি চাইনা’ লেখা ঠিক হয়নি। তবু তিনি লিখেছেন, কারণ লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মুক্তমনা মুসলমান লেখকরা ‘ঈশ্বরের’ বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন, কিন্তু ঈশ্বরের পরিবর্তে ‘আল্লাহ’ শব্দটি ‘মাইরের’ ভয়ে ব্যবহার করেন না? ‘বৌদি চাইনা’ বললে অনেকে ‘হিন্দু চাইনা’ বুঝবে। একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে এভাবে নাকচ করে দেয়াটা ঠিক হয়নি। হেডিং-এর ভেতর কি আছে অধিকাংশ পাঠক তা পড়ে না, বরং হেডিং দেখে মনে মনে একটি চিত্র এঁকে নেন। সৌদিও চাইনা, বৌদিও চাইনা’- হেডিং-র একটু ব্যাখ্যা দেয়া যাক? বাংলাদেশের আর্দ্র জলবায়ুতে কেউ চাইলেও তপ্ত সৌদি কালচার টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়, আগেও চেষ্টা হয়েছে, সম্ভব হয়নি, কারণ প্রকৃতির         নিজস্ব নিয়মে সবকিছু ঠিকঠাক করে নেয়। তাই, মরু কালচার চাইলেও বঙ্গদেশে ওটি টেকানো বেশ কঠিন। পক্ষান্তরে বৌদিরা বঙ্গদেশের সম্পদ, ভুমিপুত্ৰী, তাঁদের বাদ দেয়া যাবেনা। বৌদি শব্দটি চমৎকার শ্রুতিমধুর, মিষ্টি, রসঘন এবং ভালবাসার। একটি মেয়ের নাম ‘মোসাম্মৎ বিলকিস খানম চম্পা’, লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সবাই তাঁকে ‘চম্পা’ ডাকে। চম্পা নামের মধ্যে কেউ কেউ গন্ধ খুজবেন বটে, কিন্তু ওটি বাংলা শব্দ, সহজ ও শ্রুতিমধুর, তাই বেশি প্রচলিত। ভাষায় অনেক শব্দ আসে-যায়, সবকিছু টেকে না, ‘মোসাম্মৎ’ তাই টেকেনি? ছয়/সাত  দশক আগে অধিকাংশ মুসলিম বাড়ীতে ‘সালুন’ ও ‘মাছের রসা’ শব্দ দু’টি চালু ছিল, এখন নেই, সেই স্থান দখল করেছে ‘তরকারী ও ঝোল’, এটি ভাষার নিয়ম, ধর্মের নয়। একইভাবে ‘মঙ্গল’ শব্দটিও বাংলা। নিউইয়র্কে এবার রমজানে ‘পহেলা বৈশাখ’ পালন নিয়ে যা হলো, যারা বিরোধিতা করলো, তারা প্রায় সবাই ‘তথাকথিত’ প্রগতিশীল, এবং তাদের মূল আপত্তিটি ছিলো ‘মঙ্গল’ শব্দটি নিয়ে! প্রায়শ: শোনা যায়, ‘বাংলা ভাষা হিন্দুদের ভাষা’, কথাটা একেবারে মিথ্যা নয়, এই কারণে সাধারণ মুসলমান এটি মনেপ্রাণে গ্রহণ করে নিতে পারছে না! যেহেতু বাংলা ভাষা ভারতীয় উপমহাদেশের সন্তান, যেহেতু ভারত একদা পুরোটাই হিন্দু ছিলো, তাই বাংলা ভাষায় হিন্দুদের আধিপত্য স্পষ্ট। ইংরেজি গ্রহণ না করে ভারতীয় মুসলমানরা ভুল করেছিল, বাংলাভাষা নিয়ে কি একই ভুল হচ্ছে না? ভাষার কি কোন ধর্ম হয়? সংস্কৃতির পরিধি বৃহৎ, ধর্ম এর একটি উপাদান। বঙ্গ সংস্কৃতি মানে বাংলার সংস্কৃতি। বাংলার জলবায়ু, মানুষের আচার- আচরণ, খাদ্য, উৎসব নিয়েই এটি ভাস্বর। মাছে-ভাতে বাঙালী, এটিই বঙ্গ-সংস্কৃতি। সংস্কৃতিতে দেয়া-নেয়া, আদান-প্রদান চলে। বাঙ্গালী মুসলমানের বিয়েতে আগে ‘গায়ে-হলুদ’ ছিল না, এখন সেটি ঢুকেছে। এটি ধর্ম নয়, সংস্কৃতি, হিন্দু মুসলমান সবাই করে। এখন ঈদের আগের দিন ‘চাঁদনী রাত’ শুরু হয়েছে, এটি আগে ছিল না, এখন হচ্ছে। আগে পান্তা-ইলিশ ছিল না, এখন ঢুকছে। বঙ্গ সংস্কৃতি নাচে-গানে ভরপুর। মরু সংস্কৃতি’র সাথে গান-বাজনা  যায় না, বঙ্গ সংস্কৃতি মানেই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। এর প্রাণ এখনো বৌদিরাই। দেশে যেদিন বৌদিরা (হিন্দুরা) বাদ হয়ে যাবে, সেদিন সংস্কৃতিও বাদ হয়ে যাবে? বাংলাদেশের কথা থাকুক, এই নিউইয়র্ক শহরে বাঙালী সংস্কৃতির প্রাণ বৌদিরা। সাংস্কৃতিক স্কুলগুলোতে একটু ‘ঢু’ মারলে এটি স্পষ্ট হবে, দেখবেন বৌদিরা (হিন্দুরা) নাই তো বঙ্গ-সংস্কৃতি নাই! দেশে কিন্তু ‘সৌদিও চাই, ভাবীও চাই’ ঘটনা ঘটে গেছে। তাইতো, ২০১২-তে রামু থেকে ২০২১-এ কুমিল্লা পর্যন্ত বা এখনও  প্রতিদিন যতগুলো সাম্প্রদায়িক হিংসার  ঘটনা ঘটেছে বা ঘটছে, তাতে শুধু প্রতিক্রিয়াশীলরা নন, তথাকথিত প্রগতিশীলরা উৎসাহের সাথে অংশ নিয়েছেন, বহুস্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রতিবাদ করার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না! আমাদের দেশের কমিউনিস্টদের মত প্রগতিশীলরাও আগে মুসলমান,  তারপর বাঙালী! তাই অন্য ধর্মের লোকজনের ওপর অত্যাচার হলে এঁরা এগিয়ে আসেন না, কথা বলেন না, চোখ বন্ধ করে থাকেন। বৌদিরা তা নয়, বৌদিরা বঙ্গবন্ধু’র মত আগে মানুষ, তারপর বাঙালী, এরপর হিন্দু/মুসলমান। সুতরাং, বৌদিদের (হিন্দুদের) বাদ দিতে চাইলেও বাদ দেয়া যাবেনা। মোঘল-পাঠানরা  ছয়শ বছর চেষ্টা করে পারেনি, পাকিস্তানীরা সিকি শতাব্দী চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী অর্ধ-শতাব্দী ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে, কাজ হচ্ছেনা। কারণ বৌদিদের সাংস্কৃতিক শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত, এবং তা প্রাকৃতিক, চাইলেও ধ্বংস হয়না। আর যদি কখনো দৈব কারণে বৌদিদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পরে, তখন ‘আত্মপরিচয় সংকটে’ ভোগা আজকের তথাকথিত প্রগতিশীলরাও থাকবেন না। কারণ, মৌলবাদ বড়ই নির্মম, কাউকে ক্ষমা করে না। তখন কিন্তু দাউদ হায়দার, তসলিমা’র মত ‘বৌদি জিন্দাবাদ’-ই একমাত্র ভরসা। সৌদি নয়, বৌদি ও ভাবীই । জন্মাষ্টমী ও সংখ্যালঘু   (২) জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে এবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। পাঁচ হাজার হিন্দু নেতানেত্রী (এতো নেতা?) উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামি লিগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না, সবাই এদেশের নাগরিক, সবার সমান অধিকার। সুন্দর কথা। ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইসলাম শ্রেষ্ট ধর্ম, মদিনা সনদে দেশ চলবে একথাও প্রায়শ: বলেন। সংবিধানের ললাটে পঞ্চম   অষ্টম সংশোধনী, অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘রাষ্ট্রধর্ম’ তো আছেই। শত্রু সম্পত্তি আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টও আছে। এরপরও প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন, তখন হিন্দুরা এখন থেকে হিন্দু নামে পরিচিত হোন, অথবা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক হিসাবে পরিচিত হতে পারেন। ঢাকায় অন্যত্র একই অনুষ্ঠানে অর্থাৎ জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সামনে নির্বাচন, সময় খারাপ, এ সময় অশুভ শক্তি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করতে পারে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিকের নাম উল্লেখ করেন। জবাবে  গোবিন্দ প্রামাণিক শত্রু সম্পত্তি আইন, রমনা কালীবাড়ি, হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা ইত্যাদি প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, হিন্দু নির্যাতন ও দেশত্যাগে বাধ্য করা ছাড়া গত ১৫ বছরে আওয়ামি লিগ সরকার হিন্দুদের জন্যে কি করেছে তা জানতে চেয়েছেন। নির্বাচন এলে ভোটারের দাম বাড়ে, আপাতত: হিন্দুদের কিছুটা কদর বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিলেন নিজেদের ‘সংখ্যালঘু’ না ভাবতে। মন্ত্রী বললেন, ‘সংখ্যালঘু’র ওপর হামলা হতে পারে। হিন্দুরা কার কথা শুনবে? মিডিয়া থেকে মন্ত্রীর বক্তব্য আরও কিছুটা শোনা যাক?  মন্ত্রী বলেছেন, খুব স্পর্শকাতর সময়, সামনে নির্বাচন, অশুভ শক্তির খেলা শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার একমাত্র গ্যারান্টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার চেয়ে সনাতন ধর্মের মানুষের আপন দ্বিতীয় কেউ নেই। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশে অসুরের আস্ফালন হচ্ছে । দুষ্টের সংখ্যা বেড়ে গেছে।’  তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে হিন্দুরা নিরাপদে, আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় থাকাকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইবোনেরা নিরাপদে ছিলেন …

সৌদি নয়, বৌদি ও ভাবীই ভবিষ্যৎ Read More »

বাংলাদেশ তথা পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলার সংস্কৃতি, রাজনীতি ও জাতীয় সমৃদ্ধি।

শঙ্কর সরকার, বাংলাদেশ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাণ খুলে গেয়েছেন ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’  এটি একটি কবিতা এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ গান। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। বিবিসির  জরিপ ও তথ্যমতে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি —-’  গানটি বাংলাদেশে সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গান। কবিগুরু ভারতবর্ষের মধ্যে সর্বপ্রথম নোবেল পুরস্কার পেয়ে সারা বিশ্বে মর্যাদা ও সম্মানের আসনে বসেন এবং ভারতবর্ষকে সারা বিশ্বে  বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রায় হাজার বছরের পরাধীন ভারতমাতার ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সন্তানেরা ‘বন্দে মাতরম্’ মহামন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেন।  আর এই মহামন্ত্রের স্রষ্টাও এক বাঙালি, সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী বাঙালি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, যিনি মেধায় কমনওয়েলথ ভুক্ত ৫৪টি দেশের মধ্যে তৃতীয় এবং অবিভক্ত ভারতের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন। আধুনিক ভারতবর্ষকে আলোর পথ দেখিয়েছেন যে সব ভারতমাতার সন্তানেরা, তাদের মধ্যে বাঙালিরাই পথিকৃৎ বলা চলে। আজকাল বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহলে একটি কথা প্রায় মাঝে মাঝে শোনা যায় বাঙালি বিভক্ত তাই বাঙালি দুর্বল। আমাদের প্রশ্ন জাগে বাঙালিকে বিভক্ত  করল কে বা  কেন বাঙালি বিভক্ত হল?  ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ডের বাঙালি জাতি কেন বিভক্ত হল? কেন মারাঠা, গুজরাটি, উড়িয়া, তামিল ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ন্যায় বাঙালি একটি অবিভক্ত অভিন্ন জাতি হিসেবে নিজেদের ধরে রাখতে পারেনি বা একটি অখণ্ড জাতি হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারল না কেন? বৃটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতবর্ষে একটি কথা প্রচলিত ছিল সেটা হল What Bengal thinks today India thinks tomorrow. কথাটা সমগ্র ভারতবর্ষের লোকজন স্বীকার করেছেন এবং বৃটিশ সরকারও বিষয়টি মানতো। ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত দুর্বল বাঙালি তাই ভারতের একদা লোকবলে, অর্থবলে, শিক্ষা, শিল্প, প্রতিটি ক্ষেত্রে এক বিশাল জনগোষ্ঠী হয়েও  অবিভক্ত ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বিশ্ববাণিজ্যে ভারতের  অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক পিছিয়ে। বর্তমান বিশ্বে রাজনীতি ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ববাণিজ্যে ভারতীয়দের যেখানে বিশাল ভূমিকা সেখানে বিশাল জাতি হিসেবে বাঙালিদের ভূমিকা সামান্য, কারণ বাঙালি বিভক্ত, ধর্মের ভিত্তিতে  বিভক্তির প্রাচীর যেন জার্মানির প্রাচীরের চেয়েও বেশি শক্তিশালী, ফলে কখনও বাঙালিরা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে একক নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়নি। বাঙালি নৈতিক ও আদর্শগতভাবে  পথ হারিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বহু আগেই।  কারণ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পূর্বেই অবিভক্ত বাংলায় বাঙালি হিন্দু নিজ মাতৃভূমিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। ফল  হয়েছে বঙ্গভঙ্গ। তারই পথ ধরে হয়েছে পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস, জন্মেছে ঘৃণা, হারিয়েছে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা,  বিশ্বাস।  ধর্ম বিশ্বাসে বিভক্ত বাঙালির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নিজের অজান্তেই ঘটিয়ে ফেলেছে ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় দ্যা গ্রেট  ক্যালকাটা কিলিং, নোয়াখালী রায়ট। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম নেতৃবৃন্দ এক ও অভিন্ন জাতি হিসেবে সমৃদ্ধি ও   উন্নতির নেতৃত্ব দেবার পরিবর্তে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।  পূর্ববাংলা তথা আজকের বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরাট অংশ আদর্শগত ও সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালি সংস্কৃতির পরিবর্তে আরবীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির ভাবধারায় পুষ্ট  যার একটা অংশ তালিবানি আদর্শের প্রতি ধাবিত। আজকাল বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ দায়িত্বরত ভিসি মহোদয়ের ও দেশের জাতীয় স্তরের ক্রিকেট খেলোয়াড়ের মুখেও তালিবানি আদর্শের প্রশংসা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষিত বাঙালি  মুসলিম  সমাজ আর ১৯৭০-৭১ সালের শতকরা ২০ ভাগ শিক্ষিত বাঙালি মুসলিম সমাজের সামাজিক অবস্থার পার্থক্য বিশাল যা চোখে পড়ার মত। তাই এই সব বিষয় পর্যবেক্ষণ ও বিবেচনা করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার কর্মী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন আজকাল বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচল করলে মনে হয় আমি পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের রাস্তাঘাটে চলাফেরা করছি। বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার এত পরিবর্তন কেন হল কিভাবে হল সেটাই আসল বিষয়।   বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম এবং শতকরা ১০ ভাগ মানুষ ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ,  খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। ক্ষমতাহীন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পক্ষে সম্ভব নয় দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করা, দেশের যে কোন শুভশক্তিকে সহায়তা করতে পারে মাত্র। কারণ দেশের নির্বাহী বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ এবং বিচার বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯০ ভাগ জনগণের  ইচ্ছার উপর পরিচালিত হয়।  দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকজন যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশ কি একটি মোল্লাতন্ত্রের শাসন-ব্যবস্থা পরিচালিত হবে নাকি আধুনিক রাষ্ট্রের সামাজিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীগণ কি আধুনিক  বাঙ্গালীর  সামাজিক পোশাক পরিহিত থাকবেন নাকি মোল্লা বেশধারী হবে, তাদের আরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের  ভবিষ্যৎ নারীসমাজ একটি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হবে যারা সমানতালে পুরুষের পাশাপাশি  জাতীয় সার্বিক কল্যাণে কাজ করবে নাকি বোরখা, হিজাব পরিহিত মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করবে?  এই প্রশ্ন আমরা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে করছি যাদের উপর দেশ পরিচালনার ভার। ইতিমধ্যে পশ্চিমা কালচার, বাঙালি কালচার ও আরবীয়  কালচারের মিশ্রণে বাংলাদেশে একটি জগাখিচুড়ি কালচারে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে প্রায় ৫০টির বেশী ইসলামী দেশ রয়েছে যার মধ্যে ২৮টি আরব রাষ্ট্র এবং বাকি রাষ্ট্রগুলি এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের। এশিয়া আফ্রিকার ইসলামী রাষ্ট্রগুলি তারা তাদের স্ব স্ব কৃষ্টি, কালচার ও সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশের বিষয়ে অতীব যত্নশীল। তারা ধর্মে মুসলমান হলেও  আরবীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করে না। বিষয়টি আমাদের দেশের রাষ্ট্রপরিচালকদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে কারণ তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন। এই দায়িত্ব শুধু সরকারী দলের নয় সমান দায়িত্ব বিরোধী দলেরও ।    ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকেও  হত্যা করা হয়। দেশে বার বার সামরিক শাসন জারি  হয়েছে। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ ও  বেআইনিভাবে দেশ থেকে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে আমেরিকা, কানাডা, লন্ডন, অষ্ট্রেলিয়াসহ বিদেশের বহুদেশে বাংলাদেশী অভিবাসীরা গড়ে তুলছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল অভিজাত সুরম্য অট্টালিকার বেগমপাড়া যে সব ভবন দেখে খোদ ইউরোপীয়  ও আমেরিকানরা অভিভূত হন। বাধাগ্রস্ত হয়েছে গণতন্ত্র ও স্বাভাবিক রাজনীতি। দূর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচার বিষয়ে জাতীয় সংসদে পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে। এতকিছুর পরেও দেশের উন্নয়ন হয়েছে  উল্লেখযোগ্যভাবে। ১৯৭১ সালের সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। সরকারী কোষাগার শূন্য বিদেশি সাহায্য নির্ভর অর্থনীতি। সামান্য শিল্প কারখানা যা ছিল যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ মাত্র, রপ্তানি ও বিদেশে কর্মসংস্থান শূন্য, ছিল শুধু সামান্য কৃষিজমি যার ফসল উৎপাদন করার মত পর্যাপ্ত  অর্থ কৃষক ও সরকার কারও কাছে ছিল না। ১৯৭০ সালে বন্যা, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বছর বছর বেশ কয়েকবার প্রলয়ংকরী বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও  খরায় দেশের কৃষকের সারা বছর মাথায় হাত, হাহুতাশ আর আর্তনাদ লেগেই থাকত আর যে  সরকার ক্ষমতায় থাকত সে সরকার বিদেশি সাহায্যের জন্য সারা বছর বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছে। সারা বিশ্বের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ অশিক্ষিত, দরিদ্র, তৃতীয় বিশ্বের ক্ষুদ্র একটি দেশ যার আয়তনের তুলনায় প্রায় পাঁচ-ছয় গুণ বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি দেশ। অভাব, অনটন তার নিত্য সঙ্গী। আমাদের রাষ্ট্রপ্রধানদেরও বিদেশে কম  অপমান সহ্য করতে হয়নি। আমেরিকার প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একবার বাংলাদেশকে Bottomless Busket  অর্থাৎ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি বলে চরম অপমানজনক কথা বলে বসলেন। বিদেশী অনেক বড় বড় অর্থনীতিবিদরা মন্তব্য করলেন বাংলাদেশ একটি অকার্যকর বা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।  এই সব অপমান …

বাংলাদেশ তথা পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলার সংস্কৃতি, রাজনীতি ও জাতীয় সমৃদ্ধি। Read More »

A great role of the Calcutta University in 1971 Bangladesh Liberation War.

Calcutta University, Darbhanga Building Bimal Pramanik (Part III) The booklets which the Samiti had published containing important aspects of the liberation struggle were very effective in various parts of India and abroad.  On 9 May the first book was published entitled ‘Bangladesh: The Truth’ written by Dr. Bangendu Ganguli and Dr. (Mrs.) Mira Ganguli. The following is the list of other publications by the Samiti: ‘Conflict in East Pakistan—Background and Prospects’, by Professor Edward S. Mason, Robert Dorffman, Stephen A. Margin. (The data of this book were supplied by the exile Government). ‘Bangladesh Through Lens’—An Album of Pictures ‘Bangladesh—Throes of a New Life’, edited by Dr. Bangendu Ganguli and Dr. (Mrs.) Mira Ganguli. 5. ‘Pakistanism and Bengali Culture’, by Osman Jaman of Chittagong University. ‘Bleeding Bangladesh’, edited by Sipra Aditya. This is a picture album on mass-murder. ‘Bangladesher Muktiyuddhe’, edited by Professor Jatindranath Chattopadhyay and foreword was written by Annadasankar Ray. ‘Muktiyuddhe Bangladesh’ by Professor AsaduzzMn. ‘Chhay Dafa Karmasuchi’ (Six Point Programme). This was the sixth point demand of Awami League. Satai March 1971 Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahmaner Bhasan. (The speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman on 7 March, 1971). ‘Muktijoddhader Proti’ jointly edited by Sukumar Biswas on behalf of Bangladesh Teachers’ Association and By Jatindranath Chattopadhyay, on behalf of the Sahayak Samiti.   To gather international help and support the Samiti sent the following representatives to various countries. Father P.F. Fallon S.J., Professor of European Languages, Calcutta University was sent in June to Vatican City. He met the Pope and apprised him of the genocide conducted by the General Yahya Khan in East Pakistan.  He also visited France, Belgium, Italy, England and West Germany for the same purpose. The retired judge of High Court, Calcutta, Hon’ble Mr. A. K. Das visited England in July to apprise the people through various meeting about the genocide and other horrible incidents in Bangladesh. Mr. Banshibhai Mehta and Smt. Sushila Mehta of Bombay visited England in July and August and distributed among the teachers, students and journalists the pamphlets and books containing the facts of terror in Bangladesh. The noted trade union leader Mr. Shibnath Banerjee visited Afghanistan in October and there he met Badsah Khan, his son the NAP leader Wali Khan, the members of Parliament and the tribal leaders and discussed with them about the freedom struggle of Bangladesh and sought for their help.  He also depicted the hurried picture of Bangladesh to the teachers of Kabul University and several editors and journalists. Shri Purnendu Ray visited England and America in October and delivered lectures in favour of Bangladesh Liberation War in various meetings attended by University teachers, journalists and noted personalities.  At the initiative of the Sahayak Samiti, the University Grants Commission (UGC) Chairman, Professor G.S. Kothari issued a circular to all the universities pleading them to appoint qualified teachers coming from Bangladesh as refugees.  Consequently, many of them were appointed as professors and teachers in various universities and teaching institutions. At the initiative of this Samiti, a medical unit was constituted under the supervision of Smt. Mrinmoyee Bose with the help of the India Red Cross Society and with the personal initiative of Mrs Padmaja Naidu, and collected medicines and other medical equipment.  Some members of the Bangladesh Teachers Association also helped in this effort. Sri Nirod Baran Mukherjee of `Radiant Process’, Shri Ajit Mohan Gupta of ‘Bharat Phototype Studio’ and Sri Barindra Mitra of ‘Good Company’, rendered much help to the Sahayak Samiti in the  matter of publication and other works. I, personally, do not feel it necessary to explain why history of this freedom struggle of Bangladesh has become controversial.  A powerful anti-liberation Islamic lobby was able to remove the front-rank leaders of the freedom struggle through merciless killing just within three and a half years of independence. Before the fruit of liberation could reach the people everything went upside down.  The phenomenon of the liberation struggle became oblivious after the gruesome murder of Sheikh Mujibur Rahman on August 15, 1975. (concluded)

বাংলাদেশের গণতন্ত্র কি একটি মিথ্ (Myth) ?

বিমল প্রামাণিক পাকিস্তানের তেইশ বছরের রাজনীতির ইতিহাসের বড় সময়কালই ব্যয়িত হয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল নির্বাচনই  গণতন্ত্রের আসল কথা। গণতন্ত্রের অন্যান্য উপাদান নিয়ে তারা ভাবিত ছিল না। পাকিস্তান মুসলিম লিগ দীর্ঘকাল সামরিক শাসনের সুযোগ সমাজে জেঁকে বসেছিল, ক্ষমতাও তারাই ভোগ করতো। আওয়ামি লিগের দীর্ঘ লাগাতার সংগ্রামে সামরিক শাসনের ফাঁস সমাজে আলগা হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু সামরিক সরকার অঙ্কুরেই গণতন্ত্রের পিঠে ছুরি মেরে দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়ে জাঁকিয়ে বসতে চেষ্টা করলো। পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা আছে। শুরু হল স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা। মানুষ আশান্বিত হল, এবার স্বাধীন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। প্রত্যাশামত ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচন হল, কিন্তু ১৯৭৪ সালে একদলীয় শাসন এবং ১৯৭৫ সালে এল মহাসঙ্কটময় কাল। গণতন্ত্রের স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেল। বাংলাদেশেও পাকিস্তানের ধারায় একাধিক সামরিক স্বৈরতন্ত্রের অধীনে তথাকথিত বেসামরিক নির্বাচিত সরকার আমরা দেখলাম ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। এটাও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের আর এক রূপ বলে অনেকে মেনে নিয়েছেন। যেমন জেনারেল এইচ এম এরশাদের আমলে দেখেছি। ১৯৯১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার উপর আলোকপাত করা যাক। বাংলাদেশের জনগণের বদ্ধমূল ধারণা গণতন্ত্র সাধারণ নির্বাচন ছাড়া সফল হয় না, পাকিস্তানের আমলেও এই সংগ্রামের ঐতিহ্য পূর্ববঙ্গের মানুষের রয়েছে। কিন্তু আরও একটি বিষয় গণতন্ত্রে অপরিহার্য তা হল সহনশীল সমাজ ব্যবস্থা। সেখানে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হতে হবে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে। যা পাকিস্তানের আমলে দেখা যায়নি। কারণ ১৯৭১ পর্যন্ত  পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ভিতই  গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশেও ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয়টি সাধারণ নির্বাচন  হয়েছে। সেখানেও কি ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত ছিল? সেই সকল সরকারের আমলে কি সাম্প্রদায়িক নির্যাতন হয়নি? সেখানে কি পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ সরকারি মদতে দাঙ্গাকারীগণ উৎসাহিত হয়নি?  সরকারি ও প্রশাসনিক চরম নির্লিপ্ততা দেখা যায়নি? ১৯৯০ সালেও সরকারি মদতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও লুটপাট দেখা গিয়েছিল অর্থাৎ  বাংলাদেশে গত পাঁচ দশকেও কোন স্থিতিশীল ও স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সচেতন বাংলাদেশি নাগরিক প্রত্যক্ষ করেনি। তারা নিজ স্বার্থ ব্যতিরেকে রা কাড়ে না। সাধারণ মানুষের কাছে এসকল নির্বাচন ও শাসন ব্যবস্থাই মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য তারা নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তীতে গণতন্ত্র ধর্ষিত হলেও  সাতপাঁচ ভেবে এড়িয়ে যায়। বলা যায় এই ‘গণতন্ত্র’ তাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। কেন পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এই সঙ্কট আমরা দেশ বিভাগের পর থেকেই দেখে আসছি? অথচ এই সঙ্কট ভারতে দেখা যাচ্ছে না কেন?  পাকিস্তান ইসলামি রাষ্ট্র বিধায় গণতন্ত্র চর্চার বিষয়ে নানা মতভেদ পাকিস্তানি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়ক হল না । এর পরিণামে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম।  নতুন বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের সঙ্কট কাটলো না। এই সঙ্কটের স্বরূপ ইতিহাস থেকে দেখা যাক। ভারত বিভক্তির মূল ভিত্তি ছিল দ্বিজাতিতত্ত্ব। মুসলমান সম্প্রদায় নিজেদের ধর্মভিত্তিক জাতি ঘোষণা করে জাতিগত পরিচয় মুছে ফেলে পাকিস্তান দাবি করল, এবং এতোই বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া হল যে শত শত বছরের স্বজাতি প্রীতি ধর্ম ভিন্ন হওয়ার কারণে স্বজাতি শত্রু বলে গণ্য হতে থাকল। তখন মুসলমানদের  মূল উদ্দেশ্যই হয়ে দাঁড়ালো পাকিস্তানি ভূখণ্ড থেকে অন্য ধর্মের  মানুষকে (শত্রু) বিতাড়িত করা এবং তাদের সহায় সম্পদ দখল করে নেওয়া। যা ছিল ভারতে মুসলমান আক্রমণকারীদের ইতিহাস। নব্য বাংলাদেশকে যাঁরা বাঙালি জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় নিয়ে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ঘোষণা করেছিলেন অঙ্কুরেই সে প্রচেষ্টা বিনষ্ট হয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তান যেমন ইসলামি প্রজাতন্ত্র, বাংলাদেশ বকলমে ‘গণপ্রজাতন্ত্র’ হলেও অঘোষিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতৃবৃন্দ দ্বিজাতিতত্ত্বের বাইরে কেমন করে বেড়িয়ে আসবেন – তাদের পূর্বসূরীগণই  তো  পাকিস্তান  আন্দোলনের প্রধান হোতা ছিলেন। ইতিহাস অস্বীকার করলে সাধারণ বাঙালি মুসলমান মেনে নেবে কেন? অধ্যাপক- ইতিহাসবিদ মুনতাসীর  মামুনের একটি প্রবন্ধের  শিরোনাম ছিল ‘পাকিস্তান প্রত্যয় এখনও সজীব’।  এই প্রবন্ধে তাঁর মতামত প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, “একটি প্রশ্নের উত্তর  খোঁজার চেষ্টা করেছি অনেকদিন, কিন্তু এখনও তেমন সদুত্তর পাইনি।  সেটি পাকিস্তান সম্পর্কিত। আমার কাছে সব সময় মনে হয়েছে পাকিস্তান একটি দেশ শুধু নয় একটি প্রত্যয়। এ প্রত্যয়ের অন্তর্গত, সামরিকায়ন ও আমলাতন্ত্রের শাসন, ‘গণতন্ত্র’ পরিচালিত হবে তাদের নির্দেশে, ব্যাপক দুর্নীতি ও সম্পদ ভোগ করবে সামরিক আমলারা, ধর্মকে শুধু রাজনীতি নয়, মানুষ দমনে ব্যবহৃত হবে, জঙ্গিবাদ প্রাধান্য পাবে। এখানে যারা বসবাস করে তাদের মানসজগৎ এসব উপাদান দ্বারা প্রভাবিত। এরা নির্দয় ও হিংস্র, হাসতে হাসতে মানুষ খুন করে ও ধর্ষণ করে যেমন করেছিল ১৯৭১ সালে এবং সে সব খুনের বিচার হয় না। একজন মুসলমান সমান দু’জন হিন্দু। বাঙালিরাও হিন্দু। এই হল তাদের মানসজগৎ। পাকিস্তান প্রত্যয় যদি প্রাধান্য বিস্তার করে তাহলে সে দেশ ব্যর্থ হতে বাধ্য।  ১৯৪৭ সালের আগে থেকে মুসলিম লিগ এই প্রত্যয় নির্মাণে সচেষ্ট থেকেছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ মুসলিম লিগই দেশ শাসন করেছে এবং এই প্রত্যয়টি বাঙালির মানসিকতায় প্রোথিত করেছে। মুসলিম লিগের অবসান হয়েছে, তারা ফিরে আসেনি কিন্তু এ প্রত্যয়টির প্রভাব বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে যথাযথভাবে আছে। বঙ্গবন্ধু এ প্রত্যয় থেকে বেরুবার চেষ্টা করেছেন, জয়লাভও করেছেন। কিন্তু তাঁকে হত্যার পর যখন বামপন্থী, আওয়ামি লিগার, মুক্তিযোদ্ধারা জিয়ার দলে ভিড়লেন তখন বোঝা গেলো, ১৯৭১ সালও বাঙালিকে এ প্রত্যয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে পারেনি। গত কয়েক দশকে প্রমাণিত হয়েছে এরা  অনেক শক্তিশালী। এবং গণতন্ত্রের নামে এরা প্রতিনিধিত্ব করছে বিএনপি, জামাত ও জাতীয় পার্টিতে।”১ অধ্যাপক মামুন গত পাঁচ দশকের রাজনীতির বাস্তব পরিস্থিতির যে বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন – তা কি বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের সহায়ক হতে পারে?  নীতি-নৈতিকতা বর্জিত রাজনৈতিক শক্তি মধ্যযুগীয় অন্ধ বিশ্বাস লালন করে জীর্ণ পাকিস্তানি  লেবাসের আড়ালে দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায় তা তো আমাদের অজানা নয়। গণতন্ত্রের কুৎসিত রূপ ২০০১—এ  নির্বাচিত সরকারের আমলে বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। সুষ্ঠু গণতন্ত্র বিকাশের পথ কণ্টকাকীর্ণ তো বটেই।   সুত্রঃ ১। Jagonews24.com, 27 May, 2023.

ভারতের চাঁদে অবতরণ ও বাংলাদেশের বিজ্ঞানচর্চা

বিমল প্রামাণিক ২৩ শে আগস্ট ২০২৩ ভারতের একটি গৌরবময় দিন। মহাকাশ গবেষণায় আজ পর্যন্ত ভারতের বৈজ্ঞানিক সমাজের বহু সাধনার ফল চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে অবতরণ। এই চন্দ্রাভিযানের সাফল্যের পিছনে রয়েছে নিরন্তর গবেষণা প্রচেষ্টা, বৈজ্ঞানিক ব্যর্থতাও শক্তি যুগিয়েছে সাফল্যের সোপান তৈরিতে। বিজ্ঞান গবেষণার অগ্রগতিতে নতুন নতুন সাফল্য সামনে এসেছে। জনগণের কাছে বৈজ্ঞানিক সাফল্য যেমন পৌঁছেছে, তেমনই মানুষের কাছে বিজ্ঞানের সুফল আঁকড়ে ধরার আগ্রহ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি জনগণের অগ্রগতিতে নিরন্তর অবদান রাখছে। মানুষ আজকে বিজ্ঞানমুখী, বিজ্ঞান শিক্ষাই জনগণের ভবিষ্যৎ গড়তে একটা কার্যকরী হাতিয়ার, একথা ভারতের মানুষ আজকে বিশ্বাস করছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে বিজ্ঞানের গুরুত্ব। ভারতবর্ষের প্রাচীনকাল থেকেই বিজ্ঞান চর্চার যে ইতিহাস আমরা দেখতে পাই, বিভিন্ন শতাব্দীতে যাদের নাম ভারতের সমাজে গণিতজ্ঞ, দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী হিসেবে আদৃত হয়েছে, তাদের মধ্যে ছিলেন, আর্যভট্ট (গুপ্তযুগ ৩০০ থেকে ৫০০ শতক) গণিতজ্ঞ, পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিদ; বরাহমিহির (৫৫৫—৫৮৭) গণিতবিদ, দার্শনিক ও মহাকাশবিজ্ঞানী; ব্রহ্মগুপ্ত (৫৯৭—৬৬৮) গণিতজ্ঞ ও মহাকাশবিজ্ঞানী; ভাস্করাচার্য (প্রথম) (৭০০ শতক) গণিতবিদ, বৃত্তের ব্যবহার জানতেন; ভাস্করাচার্য (দ্বিতীয়) (১২০০ শতক) অগ্রগণ্য গণিতজ্ঞ, দশমিক ভগ্নাংশের উপর একটি পুস্তক রচনা করেছেন।  এইসব বিজ্ঞানী মনীষীগণ, ভারতবর্ষের বিজ্ঞান চর্চায় পথিকৃৎ ছিলেন। আজকের আধুনিক ভারতের ‘চন্দ্রাভিযান—৩’ এর চাঁদে অবতরণ পূর্বসুরি বিজ্ঞানীদের’-ই পরম্পরা। অন্যদিকে লক্ষ্যণীয় যে স্বাধীন বাংলাদেশের মাত্র সাড়ে-তিন বছরের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতৃবৃন্দের নিশ্চিহ্নকরণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও প্রেক্ষাপটকে আমুল পরিবর্তনের মাধ্যমে ধর্মের রাজনীতিকরণ পাকিস্তানি আমলের মতই সমাজের গভীরে জাঁকিয়ে বসার কাজটি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়ে গেল।  পাকিস্তানি আবর্জনা পরিষ্কার করে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক বাংলাদেশ গঠনের প্রক্রিয়াকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা হল। এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবুল বারকাতের বিশ্লেষণ প্রণিধানযোগ্য। “লক্ষ করা যায় যখন ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়, অথবা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগোষ্ঠী যখন তাদের  কর্মসূচী ঘোষণাপত্রে নির্দিষ্ট ধর্মের পক্ষ গ্রহণ করে, অথবা ধর্মের নামে রাষ্ট্র-সরকার পরিচালনা করা হয়, অথবা সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যেমন শিক্ষা ব্যবস্থায় সুনির্দিষ্ট ধর্মের পক্ষাবলম্বন করা হয় প্রভৃতি। ধর্মের রাজনৈতিকরণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক  অভিঘাতটি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর, প্রগতিবিরুদ্ধ।”  এবিষয়ে আমাদের দেশকেন্দ্রিক অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য যে কথাটি কয়েকদিন আগে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, তা হল “সংবিধানের সংশোধনীর দ্বারা ১৯৭২ সালের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে বটে, কিন্তু ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম রয়ে গেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম কীভাবে সহাবস্থান করতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। তাই ১৯৭২-এর সংবিধানে যেসব মূলনীতি ঘোষিত হয়েছিল অক্ষতভাবে তা যে ফিরে আসবে, আমার সে ভরসা নেই। এবং সে মোড় নেওয়ার সময়ে ইতিহাস আমার ভরসা- নির্ভরসাকে বিবেচনায় নেবে না। আজ মনে হয়, ১৯৭১ থেকে আমরা দূরে, বহু দূরে চলে এসেছি এবং ১৯৭১-এর পূর্ববর্তী ২৪ বছরের সংগ্রাম ও অর্জনের ধারার সঙ্গে তুলনা করলে তার পরবর্তী ৪৬ বছরের ধারাকে পশ্চাদপসরণ ও বিসর্জনের ইতিহাস বলতে হবে।” ১   ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগোত্তর কালপর্বে তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রে ক্রমেই রাজনৈতিক অঙ্গনে ধর্মীয় মৌলবাদের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ করা যায়। পঠনপাঠন ও গবেষণার ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়ে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান পার্লামেন্টে ‘আহমদিয়া মুসলমান’কে অমুসলমান ঘোষণা করে একটি আইন পাশ করা হয়। এর ফলে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর চরম অত্যাচার নেমে আসে। পাকিস্তানের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অধ্যাপক আব্দুস সালাম তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিজ্ঞান বিষয়ক পরামর্শদাতা ছিলেন। পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার এনার্জি ও স্পেস রিসার্চ সংস্থারও চেয়ারম্যান ছিলেন। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ার কারণে অধ্যাপক আব্দুস সালাম দেশত্যাগ করতে বাধ্য হলেন এবং লণ্ডনে আশ্রয় নিলেন। পাকিস্তান আমল থেকেই মুসলমানদের কাছে বিজ্ঞানের চর্চার চেয়ে ধর্মের গুরুত্ব প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষমতা দখল করার মানসে দেশভাগ, সামরিক শাসন, গণহত্যা, পশ্চাৎমুখী শিক্ষার প্রসারণ কোনো  দিক থেকেই মুসলমান সমাজ ও শাসকগণ পিছিয়ে নেই। মুসলমান সম্প্রদায়ের ডি এন এ তো ভারতবর্ষের ডি এন এ থেকে ভিন্ন নয়। শুধু কি ধর্মীয় কারণে তারা পশ্চাৎমুখী ?  একবিংশ শতাব্দীর বহুমুখী বৈজ্ঞানিক সাফল্য ও চেতনা থেকে তারা কি শিখছে? বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ প্রক্রিয়াকে নির্মুল  ক’রে ধর্মভিত্তিক প্রতিক্রিয়াশীলতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হচ্ছে। দেশে একটি শক্তিশালী ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির প্রয়োজনে শুধু সংবিধানের ইসলামীকরণই যথেষ্ট ছিল না, রাজনীতিতে এবং সরকারে ধর্মান্ধ  মানব সম্পদের যোগানটাও জরুরী ভেবে মাদ্রাসা-ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার শ্রীবৃদ্ধি ও স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন দেখতে পাই। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইসলামী মৌলবাদী দলগুলোর যুগপৎ শ্রীবৃদ্ধির ঘটনা এদেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির চরিত্র ও গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করতে সাহায্য করবে। “দীর্ঘ চার দশকের অধিক সময়কাল ধরে বিশেষ রাষ্ট্রীয় আর্থিক ও অন্যান্য পৃষ্ঠপোষকতায় বিকশিত হয়ে এদেশে মাদ্রাসা জনশক্তি আজকে যে স্তরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে এদেশে তারা নিরাপদেই এমন কর্মকাণ্ড চালাতে পারে যে কর্মকাণ্ড (যেমন, তালেবান আন্দোলন) আজকের আন্তর্জাতিক বিশ্ব কর্তৃক আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম মানবতা বিরোধী কর্মসূচী হিসেবে বিবেচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিরোধী আদর্শ ইতিমধ্যেই সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রায় সকল কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানকে সংক্রমিত করে ফেলেছে, একটা বিষয় হলফ করেই বলা যায় যে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল সংস্কার না ক’রে এদেশে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া কঠিনই হবে। আবার ঐ ধরণের কোন সংস্কারে গেলেও  যে ইতিমধ্যেই শক্তিশালী হয়ে ওঠা বিশাল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর দারুণ প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।”২  আমরা একবার অতীতে ফিরে দেখতে পারি, পাকিস্তানের সৃষ্টির পর ২৩ বছরের পঠন-পাঠন বিষয়ে একবার ফিরে তাকালে দেখা যায় পূর্ব-পাকিস্তানে বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করার আগ্রহ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ছিল।আইয়ুব খানের আমলে স্কুল পাঠক্রমে একশত নম্বর উর্দুভাষা চালু করা হলেও ছাত্র/ছাত্রীগণ উর্দুর প্রতি মোটেই আগ্রহী ছিল না – তা বোঝা যায় এস এস সি পরীক্ষার ঐচ্ছিক বিষয়ে উর্দু/আরবি ভাষার ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল না বললেই চলে। যারা মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করতো তাদেরকে সাধারণ শিক্ষার অষ্টম মান (ক্লাস এইট-৮) সমতুল গণ্য করা হতো। এরা শুধু স্কুলের মৌলবি হিসেবে চাকরি পেত। অর্থাৎ মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব  খুবই কম ছিল। উচ্চ শিক্ষার বিজ্ঞান শাখায় কোন  বাংলা বই পাওয়া যেত না, বিদেশী/ভারতীয় বই ছাত্র-ছাত্রীগণ ব্যবহার করত। পাকিস্তানের শেষ লগ্নে এসে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দু’একটি বাংলা বই বাজারে আসে। আমার মনে আছে গণিতের অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের  যোগাশ্রয়ী বীজগণিতের  (Linear Algebra) কথা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলা-প্রীতির জন্য পাকিস্তান বাহিনীর হাতে খুন হয়ে যান। এর পিছনে ছিল বাংলাভাষার প্রতি  ভালবাসা এবং মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্তিম শ্রদ্ধা ও আনুগত্য। তাঁরই স্মৃতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রাবাস হাবিবুর রহমান হল ।  পাকিস্তানি আমলেও নবম-দশম শ্রেণীর কলা বিভাগে সাধারণ বিজ্ঞান অবশ্য পাঠ্য ছিল – যার ফলে কলা বিভাগে পাশ করেও ভাল ছাত্র-ছাত্রীগণ কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করার সুযোগ পেত। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে নবম-দশম শ্রেণীতে বিজ্ঞান ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে চলে যাওয়ায় একটা বড় অংশের  ছাত্র-ছাত্রী আধুনিক বিজ্ঞানের  সাধারণ জ্ঞান থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও মোট ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ – যারা বিজ্ঞান পাঠ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। আমরা দেখতে পাচ্ছি, মোট ছাত্র-ছাত্রীর তিন চতুর্থাংশের বেশি সংখ্যক পড়ুয়ার বিজ্ঞানের সাধারণ জ্ঞানের সঙ্গেও পরিচয় ঘটছে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রাথমিক পরিচয় ব্যতিরেকেই গড়ে  উঠছে। কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই জনগোষ্ঠী সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি বিজ্ঞান …

ভারতের চাঁদে অবতরণ ও বাংলাদেশের বিজ্ঞানচর্চা Read More »