Center For Research In Indo

Author name: admin

`পাকিস্তানি প্রত্যয় এখনও সজীব’ কেন ?

বিমল প্রামাণিক বড় দেশের পাশাপাশি ছোট দেশ থাকলেই যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে না ইতিহাসে এমন কোন স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম দেখা যায় না। আবার পড়শি দেশের সঙ্গে বৈরি সম্পর্কের দৃষ্টান্তও পৃথিবীতে বিরল নয়। যেমন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। দেশভাগের কারণে সৃষ্ট দুটি দেশ জন্মলগ্ন থেকেই শত্রুভাবাপন্ন হওয়ার প্রধান কারণ ধর্মীয় ভিন্নতা, তিক্ততা। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পঁচাত্তর বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও কি শত্রুতার পারদ কিছুমাত্র নীচে নেমেছে? এবিষয়টি নিয়ে নানা বিশ্লেষণ, তথ্য এবং ইতিহাস আমাদের দেশের নাগরিকদের জানা থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ইতিহাস সরল রেখায় চলে না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে যে নতুন দেশ গঠিত হল – সে দেশ পাকিস্তান আন্দোলনের মূল ভাবনা দ্বিজাতিতত্ত্বই শুধু অস্বীকার করলো না, বাঙালি জাতীয়তাবাদকেই আঁকড়ে ধরল। পাকিস্তান আন্দোলনের প্রাক্কালে বাঙালি মুসলমান নেতৃত্ব ইসলামি রাষ্ট্রের মোহে মুসলমানকে বাঙালি জাতিসত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করেই শুধু ভাবতে শুরু করলো না, বাঙালি হিন্দুদের পূর্ব-পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত করা তাদের অন্যতম প্রধান কাজ বলে মনে করতে লাগলো। সরকারিভাবে হিন্দু বাঙ্গালিরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়ে গেল। ভারতবর্ষকে প্রধান শত্রুতে পরিণত করে ফেলতেও ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তানের চিন্তা চেতনায় আটকাল না। অথচ বিরাট সংখ্যক মুসলমান বাঙ্গালি-সহ ভারতে থেকে গেল ভারতের অন্যান্য নাগরিকের সমঅধিকার নিয়ে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও তাদের নাগরিক অধিকার খর্ব হল না। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে স্বাধীন বাংলাদেশের মুসলমান নেতৃবৃন্দ এবং জনগণ বাঙালি জাতিসত্ত্বা-ভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ কতটুকু মেনে নিতে পেরেছিলেন? মাত্র চারবছরেরও কম সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা ও পরিচালনাকারী মূল নেতৃবৃন্দকে কীভাবে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হল? যারা ক্ষমতা দখল করলো তারাও তো বাঙালি মুসলমান! জাতীয়তাবাদী ভাবধারা থেকে রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা ইসলামি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করল, অনেকে বলেন পাকিস্তানিকরণ – তারাও তো বাঙালি মুসলমানই! তবে কি বাঙালি জাতিসত্তাভিত্তিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমানের সমর্থন ছিল না ? না কি তারা পাকিস্তানপন্থী মুসলমানদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন? মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে একটি বড় সংখ্যক বাঙালি মুসলমান যে পাকিস্তানি সেনা শাসন ও অত্যাচারের সহযোগী হিসাবে পূর্ব-পাকিস্তানকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল – আমরা তার প্রত্যক্ষদর্শী। তারা মোটেই কম শক্তিশালী ছিল না। হেন গর্হিত অপরাধ নেই যা তারা করেনি। স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিত পরে বাংলাদেশ সরকার ঐ সকল পাকিস্তানি দালাল ও ঘোরতর যুদ্ধাপরাধীদেরকে হাতে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিচার করতে ব্যর্থ হল কেন? সেই সব যুদ্ধাপরাধীর তালিকাই বা জনসমক্ষে আনা হল না কেন? সেইসব পাকিস্তানি বাঙালি সেনা, পুলিশ, রাজাকার, আলবদর প্রভৃতি ও নয়মাস পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে রত দালালগণ, মুক্তিযুদ্ধের যারা প্রধান শত্রু ছিল – তাদের বিচার-বিবেচনা ব্যতিরেকে সাধারণ ক্ষমতার আওতায় এনে নতুন স্বাধীন দেশের সমাজ-সংস্কৃতি–প্রশাসন এবং সর্বোপরি নীতি-আদর্শকে কি রক্ষা করা সম্ভব ছিল? না, তা যে কত বড় ভুল ছিল ১৯৭৫ সালের মধ্যেই নেতৃবৃন্দের সমূলে উৎপাটন ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পাকিস্তানি ভাবাদর্শে পুনরায় প্রতিষ্ঠাকরণ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও কি বাঙালি তা থেকে শিক্ষা নিতে পেরেছে? আজকে অর্ধ-শতাব্দি পেরিয়ে এসেও আমরা কি দেখছি – তা বলার প্রয়োজন আছে বলেই মনে করি। “Frequent failure of living with a multicultural ethos has jeopardized communal harmony, and defaced the secular fabric of the society. Islamization has always been, historically a `power concept’. When a secular forces come forward to protect social harmony on the basis of a dominant culture with a highly powerful assimilating forces, forces of Islamization might claim their due and finally crave for a division of the same, assertive secular society.” … After the assassination of Sheikh Mujib in 1975, the relevance of the very Bangladesh concept of 1971 was lost, and Bangladesh became a state tilting towards Islamization. All this shows that the emergent idea of a secular Bangladesh, partially apparent in 1971, was not only missing but was probably mistaken.”1 মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে যে আদর্শের দোদুল্যমানতা, অর্ধশতক অতিক্রম করেও তার অবসান তো ঘটলোই না – বলা যায় আরও জটিলতা বেড়েছে। নানা স্বার্থবাদী রাজনৈতিক শক্তি, যারা মুক্তিযুদ্ধের ঘোরতর শত্রুতা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরঞ্চ অতি দ্রুত বাংলাদেশকে পাকিস্তানিকরণের স্বপ্নে বিভোর ছিল, তারাই আজকে গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে অবতীর্ণ । গণতন্ত্র হত্যার দায় যারা কোন যুক্তিতেই এড়িয়ে যেতে পারে না – তাদের দ্বারা নাগরিক এবং মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বিশ্বাসযোগ্য হবে কেন? তাদের পূর্বসূরি, যারা বাংলাদেশের মানুষের নিকট অপরিচিত নয়, তাদের দুষ্কর্মের ইতিহাস — বাঙালিদের স্মৃতিশক্তি যতই ক্ষণস্থায়ী হোক –- তা এত অল্প সময়ে মুছে ফেলা যাবে কি? জনগণের গণতন্ত্র চর্চার দাবির মান্যতা যদি তৎকালীন পাকিস্তানে স্বীকৃতি পেত, তবে উপমহাদেশের মানচিত্র ভিন্নতর হতে পারতো। বর্তমানের শাসক সম্প্রদায় একথা অনুধাবন করে বলেই বাংলাদেশের মানুষের এখনও সরকারের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে। যেহেতু জনগণই গণতন্ত্রে ক্ষমতার চাবিকাঠি, তাই তাদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। বর্তমান আওয়ামি লিগ সরকার বার বার একথা উচ্চারণ করায় জনগণের আস্থা অটুট থাকবে একথা আশা করা অমূলক নয়। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আজকে জোরগলায় একথা বলছেন যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পূর্ব-পাকিস্তানে বর্বর গণহত্যা চালিয়ে পাকিস্তানের ইতিহাস কলঙ্কিত করেছিল। যদিও ইমরান খান বাহান্ন বছর পর একথা বলেছেন ব্যক্তিগত স্বার্থে। পাকিস্তানি মুসলমান নেতৃবৃন্দ একথা কখনও স্বীকার করেনা। এটা মুসলমান আক্রমণকারীদের জেহাদের অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের অঙ্গ। আজ যারা বাংলাদেশে তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রবক্তা সেজে মঞ্চে নাচনকোঁদন করছে তারাই তো উনিশশো একাত্তরের পাকিস্তানি কোলাবরেটরদের উত্তরসূরি। ইতিহাস থেকে একথা কি মুছে ফেলা হয়েছে না মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ? ‘পাকিস্তানি প্রত্যয় এখনও সজীব’ প্রবন্ধে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন লিখেছেন, “১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ মুসলিম লীগই দেশ শাসন করেছে এবং এ প্রত্যয়টি বাঙালির মানসিকতায় প্রোথিত করেছে। মুসলিম লীগের অবসান হয়েছে, তারা আর ফিরে আসেনি কিন্তু এ প্রত্যয়টির প্রভাব বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে যথাযথভাবে আছে। বঙ্গবন্ধু এ প্রত্যয় থেকে বেরুবার চেষ্টা করেছেন, জয়লাভও করেছেন। কিন্তু তাকে হত্যার পর যখন বামপন্থী, আওয়ামি লিগার, মুক্তিযোদ্ধারা জিয়ার দলে ভিড়লেন তখন বোঝা গেলো, ১৯৭১ সালও বাঙালিকে এ প্রত্যয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে পারেনি।’’২ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন তার লেখায় যেসব জায়গায় ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, তখন কি তারা দ্বিজাতিতত্ত্বের উপর প্রত্যয় হারিয়ে ফেলেছিলেন ? এমনকি শেখ মুজিবসহ মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতৃবৃন্দ নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া সত্ত্বেও যখন দল-মত নির্বিশেষে এমন কি যারা বাংলাদেশ মুক্ত করার জন্য লড়াই পর্যন্ত করেছিলেন তারাও বাংলাদেশের প্রতি প্রত্যয় দেখাতে ব্যর্থ হলেন কেন? এবিষয়ে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর ‘জীবনের স্মৃতিদীপে’ গ্রন্থে অনেক প্রণিধানযোগ্য মন্তব্য করেছেন, তা থেকে একটি উদ্ধৃতি করা হলঃ “তাঁর (বিপ্লবী ত্রৈলক্যনাথ চক্রবর্তী) গ্রন্থে (জীবনস্মৃতি) তিনি হিন্দুদের প্রতি মুসলমান সরকার ও সম্প্রদায়ের যে অত্যাচারের বিবরণ দিয়েছেন – তারজন্য পূর্ববঙ্গের মুসলমানরাই যে দায়ী এ সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই। পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার এবিষয়ে হয়ত উদাসীন ছিলেন, এবং তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে এবিষয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের পরোক্ষ সহানুভূতি ছিল তথাপি মূলতঃ যে পূর্বপাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশের মুসলমানরাই …

`পাকিস্তানি প্রত্যয় এখনও সজীব’ কেন ? Read More »

বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ ও মুক্তিযুদ্ধ

বিমল প্রামাণিক সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সংবিধানে (১৯৭২) যে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইঙ্গিত মিলেছিল অচিরেই তা দ্রুত মুছে যেতে লাগল। “একটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারা জাতীয় জীবনের বহুধাবিভক্ত স্রোতকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করে। বিদ্যমান অবস্থার একটি বড় প্রভাবসৃষ্টিকারী উপাদান হল এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় বুঝতে হলে আমাদের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা মানতে হবে। পাকিস্তান সৃষ্টির কারণের মধ্যেই উগ্র সাম্প্রদায়িকতা বিদ্যমান থাকায় পাকিস্তানের পুরো আমলে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক প্রভাব এক জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। মুসলমানদের আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে বাঙ্গালিত্বকে ছাড়িয়ে মুসলমানত্ব মুখ্য হয় এবং সযত্নে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্নতা আনয়নের দুর্বার চেষ্টা চালানো হয়। শাসকশ্রেনী রাজনীতি ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানদের ধর্মীয় পরিচয়কে সরকারিভাবে সামনে নিয়ে আসে এবং তা বাস্তবায়নে বহু উপাদানের সমাবেশ ঘটায় যাদের অন্যতম হলে ভারত বিরোধিতা ও হিন্দু বিরোধিতা।”১ স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ যারা পাকিস্তান বাহিনীর দোসর লক্ষ লক্ষ বাঙালির গণহত্যাকারী, সম্পদ লুণ্ঠনকারী তাদের বিচারের আওতায় না এনে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দিলেন শেখ মুজিবের সরকার। সাধারণ ক্ষমার আওতায় কারা ছিলেন? তারাই তো মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শত্রু। মুসলিম লিগ, জামাতে-ইসলাম, নেজানে ইসলাম, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ এরা সবাই গর্হিত অপরাধে অপরাধী। এটা বলা সমীচীন যে, “মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির দৃশ্যত পার্থক্য ও মালিকানাবোধ এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে উগ্রতার পরিমিতিবোধ পার্থক্যের প্রশ্ন ব্যতীত এসব শাসকদল সমলক্ষ্য ও সমউদ্দেশ্য অভিসারী পরস্পর কোন্দলরত এক গোষ্ঠীভূক্ত রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক জোট”।২ বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক সংস্কৃতির উত্তরাধিকারকে প্রমাণিত করার জন্য জাতীয় জীবনের কিছু বিষয়কে উপস্থাপন করা হল। ‘ (১) আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্যজোট (O.I.C. = Organisation of Islamic Conference) গঠন এবং এতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি, (২) মুসলিম উম্মার স্বার্থ সংরক্ষণ, (৩) দেশে ক্রমবর্ধমান হারে সরকারি অর্থানুকূল্যে মসজিদ এবং মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, (৪) ইসলামি শিক্ষা প্রসারে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, (৫) সংবিধানে পঞ্চম এবং অষ্টম সংশোধনী আনয়ন ও সংরক্ষণ বিষয়ে সমর্থনদান বা উদ্দেশ্যমূলক নীরবতা ও বাতিল বিষয়ে উদ্যোগহীনতা, (৬) সেকুলারিজম্ বিষয়ে বিরোধিতা বা কপটতাপূর্ণ বক্তব্য প্রদান, (৭) ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতির প্রতিফলন, (৮) সরকারি প্রচারমাধ্যমগুলিতে ধর্ম প্রচার, (৯) হজ পালনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, (১০) জাতীয় বাজেটে নও মুসলিম পুনর্বাসন কর্মসূচি, (১১) ধর্ম বিষয়ে রাষ্ট্রনীতির বৈষম্যমূলক অবস্থান, (১২) ১৯৯০ ও ১৯৯২ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে অমুসলমানদের (হিন্দুদের) কয়েক হাজার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গাসহ অন্যান্য নির্যাতনে সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের নেতিবাচক ভূমিকা, (১৩) ১৯৭২ সালে একই দিনে সারা দেশব্যাপী দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর, (১৪) হজরত বাল চুরির ঘটনায় ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি (দাঙ্গা), (১৫) ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের সময় সাদ্দাম মাতম, (১৬) শত্রু সম্পত্তি আইন, (১৭) ভারত-পাকিস্তান কার্গিল যুদ্ধকালীন (সাম্প্রদায়িক) অসহিষ্ণুতা, (১৮) আফগানিস্তানে তালেবান সরকার কর্তৃক প্রাচীন বৌদ্ধমূর্তির ধ্বংসসাধন (বাংলাদেশে উল্লাস), (১৯) ২০০১ সালের ১লা অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সাম্প্রদায়িক নির্যাতন। একটা নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ইতরবিশেষ পার্থক্যসহ বড় বড় সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান হল এ বিষয়সমূহের পক্ষে।”৩ এমনকি বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামি লিগের শাসন আমলেও ২০১২ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া, ফটিকছড়িসহ নানা জায়গায় এবং ২০২১ সালে কুমিল্লাসহ পঁচিশটি জেলায় সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও প্রতিমাসহ ধর্মস্থানগুলির ধ্বংসসাধন সরকার প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হল। ‘সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি বলতে বর্তমানে কি বুঝায় তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, আন্তর্জাতিক যে কোন বিষয়ে ভারতের অবস্থানের উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তার মাত্রা। অর্থাৎ কিনা ভারত এবং হিন্দুদের সমার্থকভাবে বিবেচনার পাকিস্তানি মনোভাব এখনও অটুট এবং এটা অত্যন্ত প্রভাবশালী। অবিশ্বাস্য হলেও এরূপ সমার্থক দৃষ্টিভঙ্গি মুক্তিযুদ্ধের মূল দলের শীর্ষস্থানেও অবস্থানের পরিচয় মেলে। সুতরাং আজকের বাংলাদেশের সাথে সেদিনের পাকিস্তানের লক্ষ্যনীয় বিশেষ কোন পার্থক্য নেই’।৪ বাংলাদেশের শুরু থেকেই রাজনীতিতে আদর্শ ও সমাজে নৈতিকতায় যে ঘুন ধরেছিল, গত পাঁচ দশকের সমাজ ও রাজনীতিতে তার প্রতিফলন স্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব-পাকিস্তানকে পাকিস্তানি শাসন থেকে মুক্ত করে বাঙালিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। আন্দোলনরত জনগণ তাকে ‘বাংলাদেশ’ বলে অভিহিত করে। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে সাধারণ নির্বাচনের পরেও ‘বাংলাদেশের’ প্রশ্ন জনমনে দেখা দেয় নাই। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণ, সেখানেও কোন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষিত হয়নি বা ঘোষণা করার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এর পরেই ২৫শে মার্চ রাত থেকেই পাকিস্তানি গণহত্যা শুরু হয়ে গেল। ৭ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলনের ডামাডোলে ‘স্বাধীন বাংলাদেশের’ বক্তব্য কোন কোন ছাত্রনেতার মুখে শোনা গেলেও জনসাধারণের উপর তার কোন প্রভাব দেখা যায়নি। অর্থাৎ পাকিস্তানি আদর্শ ও রাষ্ট্র তখনও জনমনে বদ্ধমূল। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে পূর্ব-পাকিস্তানের মুসলমান জনতা আরও কট্টর ভারত বিরোধি ও পাকিস্তানী মানসিকতায় পরিপুষ্ট হয়। এবিষয়টি আমি প্রত্যক্ষ করেছি। শেখ মুজিবের ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণার পিছনে এটি একটি বড় কারণ। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে কোন আদর্শগত দৃঢ়তা লক্ষ করা যায়না। গত পাঁচ দশকের রাজনীতির ইতিহাসে যে সকল দল রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় ছিল বা এখনও রয়েছে, প্রত্যেকটি দলই শুধু ক্ষমতা দখলের জন্য দলীয় নীতি-নৈতিকতা ও জনস্বার্থ বিসর্জন দিতে এতটুকু কুণ্ঠাবোধ করেনি। যেহেতু ‘মুক্তিযুদ্ধ’ সমাজে ও রাজনীতিতে কোন নীতি-নৈতিকতা বা আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি বা সে সুযোগ পায়নি, ফলে দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকারী আর মুক্তিযুদ্ধের শত্রুর সহাবস্থান একই সঙ্গে চলেছে। কারণ তারা একই পাকিস্তানি আদর্শে দীক্ষিত। আজকের বাংলাদেশে নয়, অতীতের সব সরকারই (গণতন্ত্রী- স্বৈরতন্ত্রী, প্রগতিশীল-প্রতিক্রিয়াশীল, মুক্তিযুদ্ধপন্থী- মুক্তিযুদ্ধবিরোধী) তাদের কর্মকাণ্ড, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রগুলিতে একটি বিষয়ে একমত, বা ঐকমত্য পোষণ করে, তা হল ক্রমহ্রাসমান সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে। বিভিন্ন দলের বক্তব্যের মধ্যে কোন তফাৎ নেই। যেমন, (১) সরকার ‘সংখ্যালঘু- সংখ্যাগুরু’ তত্ত্বে বিশ্বাস করে না। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃস্টান নির্বিশেষে সবাই বাঙালি বা বাংলাদেশী। তবে সংবিধানটিকে সংখ্যাগুরুর পক্ষে করা হল কেন ? (২) বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কিন্তু সংখ্যালঘুরা ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার। এটা অস্বীকার করা মিথ্যাচারের সামিল। (৩) ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়, এদেশে হয় না। কিন্তু ১৯৪৭ থেকে এ পর্যন্ত যত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয়েছে এবং তা একপক্ষীয় ও ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। (৪) ইসলাম শান্তির ধর্ম । অর্থাৎ অন্যান্য ধর্ম অশান্ত, তাই তারা দাঙ্গাবাজ, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য তারাই দায়ী। এটাই কি ‘শান্তির ধর্মের’ লক্ষ্য? (৫) এদেশ থেকে কোন নাগরিক ভারতে যায়নি। মিথ্যাবাদী এবং পাগল ব্যতীত সারা দেশের সব মানুষ জানে প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘু জনগণ ভারতে চলে যাচ্ছে, দেশত্যাগ করছে চিরতরে। (৬) দুষ্কৃতিদের কোন দল বা সম্প্রদায় নেই। সত্য কথা হল, সন্ত্রাসীরা সবাই চিহ্নিত রাজনৈতিক দলের ক্যাডার। রাজনৈতিক দলগুলির এসব বক্তব্য দিতে কখনও লজ্জাবোধ করতে দেখা যায়নি। গলাবাজির রাজনীতির চোরাগলিতে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ, হারিয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধ। তথ্যসূত্রঃ ১। নির্যাতিত সংখ্যালঘু বিপন্ন জাতি, দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ, ২০০২। পৃষ্ঠা ১৭৫। ২। প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৭৬। ৩। প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৭৬। ৪। প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৭৭।

বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কে নতুন সংযোজন পদ্মা সেতু

শঙ্কর সরকার, বাংলাদেশ পদ্মা সেতুর উপর রেল চলাচল বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার একটা নতুন অধ্যায়। বাংলাদেশ সরকারের পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা বিশ্বব্যাংক অর্থ বিনিয়োগ বাতিল করলে ধারণা করা হয়েছিল বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এতবড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে না এবং এ নিয়ে দেশে বিদেশে বিভিন্ন রকম আলোচনা সমালোচনা হয়। পদ্মা সেতুর নির্মাণে প্রথমে ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল। পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক অস্বীকার করলে চীন প্রথমে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় এবং পরে চীন পদ্মা সেতু ২ প্রকল্প আরিচা পাটুরিয়া ঘাটে অর্থায়নের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ঘোষণা দেয়। পরে বাংলাদেশের অন্য বন্ধুদেশ মালয়েশিয়া পদ্মা সেতুর নির্মাণে অর্থ বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রস্তাব করে এবং তারপর ভারত সরকারও বাংলাদেশ সরকারের নিকট পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ানোয় এবং চীন, মালয়েশিয়া ও ভারতের অর্থ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশের পর বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্প বিষয়টি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ২০ বা ২৫ হাজার কোটি টাকা যেটাই খরচ হোক ৫ থেকে ৬ অর্থ বছরের মধ্যে লাগবে এবং বাংলাদেশ সরকার সেই অর্থ ৫/৬ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট থেকে খুব সহজেই খরচ করতে পারবে। সমস্ত টাকাটা এক অর্থ বছরের মধ্যে খরচ হবে না। সুতরাং বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সহজেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে এবং শেখ হাসিনা সরকার সমস্ত প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করে পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়োপযোগী সাহসী কাজ শুরু করে এবং শেষ করে। অবশেষে দীর্ঘ দিনের অপেক্ষায় পর গত ৪ এপ্রিল ২০২৩ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে প্রথমবারের মত রেল যোগাযোগ উদ্বোধন করেন। শেষ হলো অপেক্ষার পালা। পদ্মা নদীর বুকে সড়ক পথে গাড়ি চলাচল করছে অনেক দিন এবার ছুটবে রেলগাড়ি। উন্মুক্ত হল যোগাযোগের নতুন দিগন্ত। প্রথমে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে সেতু অতিক্রম করে যাওয়া পর্যন্ত ‘গ্যাংকার’ চালানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে এখন সাত বগির ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্রমতে পদ্মা সেতুর রেল যোগাযোগ প্রকল্পে চীন থেকে কেনা নতুন সাতটি বগি ট্রেনের বহরে যুক্ত হবে। ট্রেন চলাচল করবে আমেরিকা থেকে আনা নতুন ইঞ্জিন দিয়ে। ইঞ্জিন ও বগিগুলো সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানায় রাখা ছিল। সেখান থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার উদ্দেশ্য যাত্রা করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেন সেতুতে রেললাইন বসে যাবার পর তা পরিদর্শন করেছেন রেলমন্ত্রী। ঐদিন সেতুর উপর শুধু গ্যাংকার চালানোর পরিকল্পনা থাকলেও এখন আনুষ্ঠানিকভাবে রেলওয়ে ট্রায়াল কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী দিনে দুপুর ১২ টায় পদ্মা সেতুতে প্রথম যাত্রা শুরু হয় এবং দুপুর ২ টায় টেনটি ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পৌঁছায়। ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুতে এখন শতভাগ রেললাইন বসে গেছে। এই ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত টানা ৪২ কিলোমিটার রেলপথ এখন রেলচলাচলের জন্য প্রস্তুত। রেলের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের অধীনে প্রথমে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে। এই রেলপথ চালু হলে আরও ছয়টি রেলপথ এই রেলপথের সাথে যুক্ত হবে। প্রাথমিক ভাবনায় রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, দর্শনা, যশোরের বেনাপোল, খুলনা, রাজশাহীর ট্রেন এই পথে চালানোর পরিকল্পনা আছে। সেই ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ভারতে যাবার মৈত্রী ট্রেনও এই পথে যাতায়াত করবে । পদ্মা সেতুর রেলওয়ে প্রকল্প চালু করার আগে অনেক জায়গায় গ্যাঙকার পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হয়েছে। এদিকে ঢাকা থেকে মাওয়া অংশে ১০ কিলোমিটার রেলপথ বসানো হচ্ছে খুব দ্রুতগতিতে। মাওয়া ভাঙ্গা অংশে ১২টি বড় সেতু, ২৬.৯৭ কিলোমিটার বাঁধ, ৬৯টি কালভার্ট ও আন্ডারপাস, ৭১০ টি ওয়াকিং পাইল, ৬৮ টি ভায়াডাক্ট ২ পিলার, ৬৭ টি স্পান, ১০৮ টি ভায়াডাক্ট ৩ পিলার, ১০৭ টি স্পান বসানো হয়েছে। ঢাকা থেকে রেলওয়ে সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার বিশেষ ট্রেন যাতায়াত করবে। গেনডারিয়া, পাগলা, ডেমরা, কেরানীগঞ্জ এলাকায় খণ্ডখন্ডভাবে, রেললাইন বসানো হচ্ছে। বৃটিশ আমলের তৈরি সিঙ্গল রেলওয়ের পরিবর্তে বেশ মজবুত ও ঢালাই করে আংশিক ডবল লাইন রেলওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলওয়ে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা রেলসেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, কেরানীগঞ্জ, হয়ে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং হয়ে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা দিয়ে যশোরের সাথে রেল নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে এবং এই যশোর ফরিদপুর ভাঙ্গা স্টেশনের সাথে রাজবাড়ী, কালুখালী, কুষ্টিয়া রেলওয়ে সেকশনটি পদ্মা সেতু হয়ে সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে। বর্তমান রেলপথে ঢাকার সঙ্গে খুলনার দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নতুন রেলপথটি চালু হলে দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এ ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে নতুন পথে অনেক নতুন রেলযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তাতে প্রতিদিন সড়ক যোগাযোগের জন্য হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি কমবে, সময় বাঁচবে, জনজীবনে বয়ে আনবে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশ রেলওয়ের এই নতুন পথে রেললাইন বসে গেলেও আরও কয়েক ধরনের কাজ বাকি আছে। সব কাজ শেষে নিয়মিত পরীক্ষামূলক চলাচলের ব্যবস্থা হবে। পদ্মা সেতুর এই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যে সব কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাঁরা আশা করছেন আগামী সেপ্টেম্বর/অক্টোবর ২০২৩ নাগাদ এই পথ যাত্রী পরিবহনের জন্য সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে যাবে। পদ্মা সেতুর রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্প মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা নির্মিতব্যয় ধরা হয় তার মধ্যে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা লোন দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ফার্স্ট ট্রাক প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করা হয়। পদ্মা সেতুর রেলওয়ে প্রকল্প শুধু রাজধানীর সাথে দেশের উত্তর ও দক্ষিণের রেল ও সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে তাই নয় সমগ্র বাংলাদেশ সড়ক ও রেলপথ একটি অভিন্ন নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সমন্বয়ে একটি আধুনিক উন্নত দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এই পদ্মা সেতু।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক নানা পালাবদল এবং বাংলাদেশ—ভারত সম্পর্ক

বিভুরঞ্জন সরকারঃ বাংলাদেশের সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক (সেন্টার ফর রিসার্চ ইন ইন্দো-বাংলাদেশ রিলেশনস্ কলকাতা কর্তৃক ২০১0 সালে আয়োজিত সেমিনারে পঠিত) এক আজ আমরা দুটি পৃথক স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নাগরিক হলেও মাত্র ছয় দশক আগেও অর্থাৎ গত শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত আমরা একই দেশের অধিবাসী ছিলাম। ১৯৪৭ সালে কোন প্রেক্ষাপটে, কীভাবে দেশভাগ হয়েছিল, সে ইতিহাস এখানে নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনাপর্বটা ছিল ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে ভারতবাসীর ঐক্যবদ্ধ চেতনার বহিঃপ্রকাশ। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মতের এবং পথের ভিন্নতা ছিল কিন্তু ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে দেশভাগের ধারণাটা যোগ হয়েছে একেবারে শেষ দিকে। যুক্ত বাংলাসহ গোটা ভারতবর্ষেই হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সঙ্গে বসবাস করেছে। এক সঙ্গে রাজনীতি করতে তখন দুই সম্প্রদায়ের মানুষদের তেমন সমস্যা হয়নি। যুক্ত বাংলার হিন্দু সম্প্রদায় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কিংবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে নেতা মেনে নিতে দ্বিধা করেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর এই সুসম্পর্ক বজায় থাকেনি। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়েছে। স্বজন-সম্পদহারা হয়েছে দুই সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ। নানা প্রচার-অপপ্রচার-কূটকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে যে হিন্দু এবং মুসলমান এক দেশে এক সাথে বসবাস করতে পারবে না। বৃটিশ শাসকদের ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতি এবং কোন কোন রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকীর্ণতা, অদূরদর্শিতা ও নীতিহীনতার কারণে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষ পর্যায়ে দু’টি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে অনিবার্য করে তুলেছিল। ওই বিভক্তির ফলে বর্তমান বাংলাদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান ছিল বস্তুত একটি কৃএিম রাষ্ট্র। ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দুটি অংশের আলাদা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অনুসারী মানুষদের কেবলমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করে এক রাষ্ট্রের নাগরিক বানানো হয়েছিল। মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের জীবনে আর কোন সমস্যা থাকবে না, সবাই রাজার হালে থাকবে – পাকিস্তান আন্দোলনের নেতাদের এমন প্রতারণাপূর্ণ প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই পাকিস্তানের পক্ষে এক ধরণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছিলেন। যারা এই প্রতারণার বিষয়টি কিছুটা আঁচ-অনুমান করতে পেরেছিলেন, তারাও পরিস্থিতির চাপে বা অন্য যে কারণেই হোক না কেন পাকিস্তানবিরোধী জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেননি। দু’একটি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু সাধারণ স্রোতটা ছিল পাকিস্তানের অনুকূলেই। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর রাজনীতির প্রধান উপজীব্য ছিল হিন্দু এবং ভারতবিরোধিতা। কিন্তু শাসকদের এ ধরণের সাম্প্রদায়িক ও একদেশদর্শী মনোভাব শুরু থেকেই পাকিস্তান রাষ্ট্রটিকে শাসন-সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আর সে জন্যই বাঙালি মুসলমানদের মোহভঙ্গ হতে বেশি সময় লাগেনি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই ‘রাষ্ট্রভাষা’ প্রশ্নে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর প্রকৃত চেহারা বাঙালিদের সামনে উন্মোচিত হতে থাকে। জনসংখ্যার দিক থেকে বাঙালিরা ছিল পাকিস্তানে সংখ্যাগুরু। সে হিসেবে বাংলাই হওয়া উচিৎ ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বলা হল উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা অর্থাৎ বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতেও তারা কুণ্ঠিত ছিল। উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বেশির ভাগই ছিলেন উর্দুভাষী। সে জন্য শাসকগোষ্ঠীর মুখের ভাষাকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। আর এ থেকেই বাঙালিরা বুঝতে শুরু করে যে, ধর্মের ভিত্তিতে আলাদা রাষ্ট্র কায়েম হলেও সে রাষ্ট্রে বাঙালিদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার বিষয়টিকে বাঙালিরা একেবারেই ভালো চোখে দেখেনি। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকার রাজপথে অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে বাঙালি এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছিল। ভাষা আন্দোলনকে ভারতীয় অনুচরদের ষড়যন্ত্র বলে প্রচার করেও মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়নি। ভাষা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের প্রতি বাঙালির মনে যে ঘৃণার জন্ম নিয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় কেবল বেড়েছে। একের পর এক আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পরিণতি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীকে অনেক পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারি, ষাটের দশকে রবীন্দ্রবিরোধিতা তথা বাঙালির ভাষা- সংস্কৃতির ওপর আঘাত, শোষণ-বৈষম্য, পশ্চিম অংশের উন্নয়ন এবং পূর্ব অংশের প্রতি ক্রমাগত বঞ্চনা চলতে থাকায় বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ- অসন্তোষ ধুমায়িত হতে থাকে। পাকিস্তানে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে তারা সবাই ছিল প্রতিক্রিয়াশীল ধ্যানধারণার অধিকারী, গণবিরোধী ও উচ্চাভিলাষী। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি তাদের সামান্য শ্রদ্ধাবোধ ছিল না। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় অর্থাৎ পাকিস্তানের পূর্ব অংশে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবিদার সংগঠন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের ভরাডুবি এবং আওয়ামি লিগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের অভূতপূর্ব বিজয় রাজনীতিতে নতুন বাতাবরণ সৃষ্টি করে। নির্যাতনের ফলাফল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে শঙ্কিত করে তুলেছিল। বাঙালির ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়া সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা না করে শাসকগোষ্ঠী ভুল পথ অনুসরণ করেছিল। ক্রমাগত, সাম্প্রদায়িক প্রচারণা, উগ্র ভারতবিরোধিতা, গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে যারা কথা বলে তাদের ঢালাওভাবে ভারতের দালাল হিসেবে প্রচার করা- এগুলোই ছিল পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর আত্মরক্ষার ঢাল এবং হাতিয়ার। অথচ অতি ব্যবহারে এই হাতিয়ার এক সময় ভোঁতা হয়ে যায় বা কার্যকারিতা হারায়। বাঙালি জাতি ভয়কে জয় করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। দুই ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর হঠাৎ আক্রমণ শুরু করার পরই বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং শুরু হয় এক অসম ও রক্তাক্ত যুদ্ধ। যুদ্ধটা বাঙালির ওপর আকস্মিকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল সত্য, কিন্তু পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসন-শোষণ, অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে এটা ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখা এক পর্যায়ে অসম্ভব হয়েই পড়বে। ভাঙনটা কবে, কীভাবে ঘটবে সেটাই ছিল দেখার বিষয়। পাকিস্তানি শাসকরাই বাঙালিকে স্বাধীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছে, প্রতিরোধে বাধ্য করেছে। ধাপে ধাপে আন্দোলনের উত্তরণ ঘটেছে। নতুন নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। আর এসব আন্দোলনের সব পর্যায়েই শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতি ও সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তাই বলা যায়, শেখ মুজিবুর রহমান রাতারাতি নেতা হননি। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবে জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন। পাকিস্তানের ২৪ বছরের ১২ বছর কেটেছে তাঁর কারাগারে। তিনি গোড়াতেই এটা উপলব্ধি করেছিলেন যে, পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্য থেকে বাঙালি তার অধিকার পাবে না। এ জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। ষাটের দশকের প্রথম দিকেই তিনি আত্মগোপনে থাকা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় তখনই প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। অপেক্ষা করা হচ্ছিল উপযুক্ত সময় ও সুযোগের। শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সংবলিত ৬ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করার পর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট, মিলিটারি ডিক্টেটর আইয়ুব খান এবং তার মন্ত্রণাদাতাদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে শেখ মুজিব কোন পথে হাঁটছেন, কোথায় তাঁর গন্তব্য। শেখ মুজিবকে ঘায়েল করার জন্য তাঁকে প্রধান আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। আইয়ুব খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা ভেবেছিলেন এই ষড়যন্ত্রমূলক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারা সম্ভব হবে। ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পাকিস্তান ভাঙার কাহিনী মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠলে শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা শূন্যে নেমে আসবে এবং সেই সুযোগে বিচারের নামে তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলান সহজ হবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটে উল্টো ঘটনা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ফলে শেখ …

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক নানা পালাবদল এবং বাংলাদেশ—ভারত সম্পর্ক Read More »

বিএনপি-জামাত মিত্রতায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোনদিকে ?

পূর্ণিমা নস্কর বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুবই স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামি লিগের মতোই বিএনপির নামও সমভাবে উচ্চারিত হয়। একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে (২০১৩ সালে) যখন এদেশের সর্বস্তরের মানুষসহ দেশ-বিদেশের মাটিতে পরিচালিত হওয়া বিভিন্ন ধরণের আলোচনা ও জনমানসে আশার সঞ্চার হয় তখন বিএনপির মতো একটি বড় দলের আচরণ, নেতৃবৃন্দের কথাবার্তা, নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অবস্থান দেখে সাধারণ মানুষ বেশ বিস্মিত হয়। তাদের এই বিস্ময়ের প্রেক্ষাপট অনুসন্ধান করতে হবে জিয়াউর রহমানের সময়কাল থেকেই। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসেই সশস্ত্র সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর সরকারের পতনের পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে কয়েক দফা সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের পর নভেম্বর মাসে সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল (পরবর্তীকালে লেঃ জেনারেল) জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। দেশে গণতন্ত্র রক্ষার নামে প্রহসনমূলক গণভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে জিয়াউর রহমান বিএনপি /বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর) গঠন করে সামরিক শাসনের সূচনা করেন।“১ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জিয়াউর রহমান সামরিকায়ণের উপর গুরুত্ব দেন। তিনি আইনের সুযোগ ও ক্ষমতাবলে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের চেতনা ও আদর্শকে ধুলিসাৎ করে পাকিস্তানি আদর্শ এবং ধ্যান-ধারণার পুনঃপ্রবর্তন করেন। তাঁর দ্বারা গ্রহণ করা প্রথম পদক্ষেপটি ছিল – বাংলাদেশে উদার প্রগতিশীল রাজনীতির বিকাশের পরিপন্থী ও দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল জামাত-ই-ইসলামির পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, জামাত-ই-ইসলামি ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘোরতর বিরোধী ও একটি ইসলামি মৌলবাদী দল। আর জামাত-ই-ইসলামি দলের অন্যতম নেতা গোলাম আজমকে (১৯৭২ সালে যার বাংলাদেশী নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়) রক্ষা করার মাধ্যমে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের শত্রুকেই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন । আসলে জামাত-ই-ইসলামি মৌলিকভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের সামরিকীকরণের বিরোধিতা করেনি। জামাত-ই-ইসলামির সাথে আমলাতন্ত্রের শ্রেণীগত কোন পার্থক্য ছিল না। ফলে ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর, শেখ মুজিবর রহমানের পরবর্তী শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁর ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী করার জন্য জামাত-ই-ইসলামি দলের বিরোধিতা না করে তাদের সমর্থনের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যান বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের অভিমুখে। এটাই পাকিস্তানপন্থী ইসলামি জাতীয়তা । ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক শ্লোগানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা জামাত-ই-ইসলামি নামক রাজনৈতিক সংগঠনটির প্রতি জিয়াউর রহমান এতটাই মোহাবিষ্ট হয়েছিলেন যে, তিনি ইসলামি সাইমুন (বাতাস) কে দৃঢ়ভাবে বজায় রাখার জন্য সংবিধান সংশোধন আইন পাশ করেন। ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল পঞ্চম সংশোধন আইন পাশ হয়। পঞ্চম সংশোধনীতেই সংবিধানের প্রারম্ভে “‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ বাক্যটি সংযুক্ত করেন। এব্যতীত দেশের নাগরিকগণ ‘বাংলাদেশী’ হিসেবে পরিচিত হবেন বলে ঘোষণা করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসকে অন্যতম রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সংবিধানের অন্যান্য মূলনীতির মধ্যে সমাজতন্ত্রকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার অর্থে গ্রহণ করা হয়। আর মৌলিক অধিকারসমূহ বলবৎকরণের অধিকার বা এক্তিয়ার হাইকোর্ট বিভাগের ওপর ন্যস্ত করা হয়। একদলীয় ব্যবস্থা রহিত করে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার পদ্ধতি বহাল রাখা হয়।”২ সুতরাং, বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীটিই বাংলাদেশকে সহজেই ইসলামি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হওয়ার পথকে প্রশস্ত করে দিয়েছিল। জিয়াউর রহমান মুজিব আমলের সংবিধানকে তছনছ করে দেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ত্রিশ লক্ষ বাঙালির আত্মত্যাগের বিষয়টিকেও গুরুত্বহীন প্রমাণিত করে দিলেন। আসলে ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমানের প্রশ্রয়ে আত্মপ্রকাশ করা ঘাতক দালাল জামাত-ই-ইসলামি ও তাদের বাহিনী রাজাকার আলবদররা বাংলাদেশের মাটিতে জেঁকে বসেন। ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তি জামাত সামরিক সরকারের আশীর্বাদে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হয় এবং রাজনৈতিক দল করার অনুমতিও লাভ করে। এসময় খুব স্বাভাবিকভাবেই আশা করা যায়নি যে, জামাতীরা তাদের অতীত ভূমিকার জন্য অনুতপ্ত হবে। কিন্তু তারা উল্টে ঘোষণা করলো –‘একাত্তরে আমরা যা করেছি ঠিকই করেছি।’৩ আর এই অবস্থায় বিএনপি-জামাত সমঝোতা যে ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিতকে নড়বড়ে করে দেবে – তা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশের সামরিক শাসনকালের প্রারম্ভিক পর্যায় থেকে বিএনপি-জামাত সমঝোতা, বন্ধুত্বই মুজিব পরবর্তী বাংলাদেশী সমাজকে পুনরায় পাকিস্তানিকরণের পথকে আরও সহজ করে দিয়েছিল। বাংলাদেশী সমাজে এর প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় এইভাবে – জামাতীয়দের দৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথের মতো বিশ্বকবি, ‘বিজাতীয়, বিধর্মী কবি হিসেবে আখ্যায়িত। রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক রচিত গান, ‘আমার সোনার বাংলা’ তথা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতকে বাতিল করার প্রস্তাব বাংলাদেশের সমাজে উচ্চারিত হয়। পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথ বাতিল হয়। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে পূর্বতন সামরিক শাসন বজায় থাকল পরবর্তী শাসক এরশাদের হাত ধরে। অর্থাৎ জিয়াউর রহমানের আমলে ইসলামিকরণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়, পরবর্তী শাসক, হুসেইন মহম্মদ এরশাদের আমলে (১৯৮২-১৯৯০) তা পূর্ণতা লাভ করে। তিনি বাংলাদেশে কোরাণ ও সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন গ্রহণ না করার কথা ঘোষণা করেন। প্রতি শুক্রবার এক এক মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করেন এবং নামাজ শেষে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলতে থাকেন। এছাড়া পাকিস্তানপন্থী পীরদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান, কওমী মাদ্রাসার পুনঃপ্রতিষ্ঠা – এসব কিছুই জামাতীদের মনোভাবকে সমর্থন করারই নামান্তর। এপ্রসঙ্গে আরও একটি ঘটনার কথা বলা যায়। সেটি হল –“১৯৮৭ সালে মে-জুন মাসে ফরিদপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, অত্যাচার ও লুটপাট সংঘটিত হয়। বায়তুল মোকারম মসজিদের (জাতীয় মসজিদ) মুসল্লিদের সভায় তখন মৌলবাদী জামাত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ঘোষণা করেছিলেন, দিল্লি, মিরাটসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মুসলমান ভাইদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে।”৪ এসব কিছু থেকে একথা বলা যায় যে, এরশাদ তাঁর পূর্ববর্তী শাসকের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন এবং তিনিও জামাত-ই-ইসলামি দলকে বাংলাদেশের মাটিতে তাদের শিকড় শক্ত করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আর তাঁর এই মানসিকতার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছিল “১৯৮৮ সালের জুন মাসে। সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর দ্বারা রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে।”৫ আর এটি ছিল এদেশে ইসলামিকরণ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত রূপ এবং জামাতীদের সুপ্ত বাসনার পূর্ণ প্রতিবিম্ব। অতএব ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সময়টুকুকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধীকাল বললে ভুল হবে না। কেননা সামরিক সমাজের প্রতিনিধিরা প্রথম থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের অবস্থান রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সুদৃঢ় করেছেন। জিয়াউর রহমান এধারা শুরু করেছিলেন এবং এরশাদ তা করেছিলেন সংহত। তাইতো ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, যাদের বিচার হওয়ার কথা ছিল যুদ্ধাপরাধী হিসেবে (জামাত নেতা গোলাম আজম সহ প্রমুখ) তারাই দেশের কর্ণধার হিসেবে মর্যাদা পেয়েছেন। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের একযুগের শাসন, বাংলাদেশে বকলমে পাকিস্তানি শাসনকে শুধু প্রজ্বলিত রাখেনি; সেই শিখাকে অকম্পিত রাখার জন্যও ব্যবস্থা করা হয়। এরশাদের পতনের পর জিয়া পত্নী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসেন। তিনিও তাঁদের থেকে ব্যতিক্রমী ছিলেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার সামনে জেনারেল জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। তাঁর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক চিন্তা জিয়াউর রহমান থেকে ভিন্ন হওয়ার কথা নয়, কারণ তিনি তাঁরই উত্তরসূরি। ২০০১ সালে সামরিক-বেসামরিক আমলারা জোটবদ্ধ হয়ে বিএনপি-জামাতকে ক্ষমতায় আনতে সাহায্য করে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকে। এসময় স্বাধীনতা বিরোধীদের মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয় এবং এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আদর্শের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়। শুধু তাই নয়, এই সময়কালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস ও দুর্নীতির প্রসার ঘটার সাথে সাথে শুরু হয় এথনিক ক্লিঞ্জিং (ethnic cleansing)। শুরু হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সমূলে উৎপাটিত করার কাজ। খালেদা জিয়ার শাসনকাল বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায় বললেও ভুল হবে না। এসময়কালে বাংলাদেশ যে রাজনীতি ও সরকারি মিথ্যাচার প্রত্যক্ষ করল তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু ছিল না। এপ্রসঙ্গে আওয়ামি লিগের …

বিএনপি-জামাত মিত্রতায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোনদিকে ? Read More »

পাকিস্তানি গণহত্যাঃ শরণার্থী সমস্যা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক জনমত গঠন

বিমল প্রামাণিক ডাইরেক্টর, সেন্টার ফর রিসার্চ ইন ইন্দো-বাংলাদেশ রিলেশনস্, কলকাতা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও সামরিক সরকার ঢাকাসহ পূর্ব-পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঙালি জনগণের উপর গণহত্যা শুরু করে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বিপুল জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবর রহমানকে বঞ্চিত করা। বাঙালিদের উপর পাকিস্তানি শাসন এবং শোষণ অব্যাহত রাখা। এটা বুঝতে পেরেই ২৬শে মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের অত্যাচার ও গণহত্যার কারণে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে, গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমানা পেরিয়ে ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিতে শুরু করে। মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ লক্ষ। ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশই এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। জুন মাসের ১ তারিখে বৃটিশ লেবার দলের এম পি মাইকেল বারনেস মুক্তিযুদ্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ও পাকিস্তানি অত্যাচারের শিকার হয়ে যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের দুর্দশা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন ‘the world must help to find a solution to the tragedy.’ মিঃ বারনেস এবং মিঃ ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ, চেয়ারম্যান, ‘war on want’ বৃটেনের একটি দাতব্য সংস্থা, ভারতীয় সীমান্তে অবস্থিত অনেকগুলি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে বলেন, ‘the world community must come forward immediately with all possible aid.’ মিঃ চেসওয়ার্থ বৃটিশ ওভারসিজ মন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে সরেজমিনে এই জটিল সমস্যা অনুধাবনের জন্য অনুরোধ করে বলেন যে, এর বিস্তার ও গভীরতা নিরূপণ করা কঠিন; লন্ডন, ওয়াশিংটন এবং মস্কোর এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিৎ। তিনি আরও বলেন, ‘what is taking place here is a potential threat to world peace.’ ১ জাপানি এম পি কে. নিশিমুরা ভারতীয় সীমান্ত অঞ্চলে বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে ভয়াবহ চিত্র ও দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, “সীমান্ত অঞ্চলে শরণার্থী শিবিরগুলি পরিদর্শনকালে আমি দেখলাম হাজার হাজার পুরুষ, নারী ও শিশু সাংঘাতিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য ভারতে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যখন এমন অবস্থা বিরাজমান – বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রকৃত অবস্থা দেখা উচিৎ।” মিঃ এনজিয়ার বি ডিউক, প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এবং ইন্টারন্যাশানাল রেসকিউ কমিটি দলের প্রধান ভারত-পাক উপমহাদেশ সফর থেকে ফিরে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও ঘটনার সত্যাসত্য বিশ্লেষণপূর্বক নিক্সন প্রশাসনকে রিপোর্ট দিয়ে বলেন, “Pakistan Army has tried to maintain a desperate air of tension along the border by mortar fire.” তিনি আরও বলেন, জুলাই মাসের শেষে ভারতে আশ্রয়প্রার্থী পাকিস্তানি শরণার্থীর সংখ্যা ‘will have reached the seven million mark.’২ ইউ এস সিনেটর মিঃ এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের পূর্ব সীমান্তে সাড়ে চারদিন অত্যন্ত কষ্টসহকারে বৃষ্টির মধ্যে পায়ে হেঁটে অনেকগুলি বাংলাদেশি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। শরণার্থীদের কষ্ট-দুর্দশা দেখে তিনি বলতে বাধ্য হন, ‘It is the greatest human tragedy of our time.’ তিনি নারী, শিশু, বয়স্কদের দু্র্দশা ও পাকিস্তানি সেনার গুলিতে আহতদের করুণ অবস্থা দেখে খুবই বিচলিত বোধ করেন। তিনি বলেন, “the American people have read reports about the refugees with heartfelt feeling, but they can not fully assess the magnitude of the problem unless one seeks personally the plight of the refugees.”৩ সারা বিশ্বের সংবাদজগৎ বাংলাদেশের গণহত্যা ও নির্যাতনের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচার শুরু করে। ভারতের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী রাজ্যে পূর্ব-পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ থেকে ভীতসন্ত্রস্ত ও নির্যাতিত মানুষ জীবনের নিরাপত্তার জন্য শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিতে থাকে। পরিস্থিতি স্থানীয় প্রশাসনের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। ভারত সরকার এই গুরু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য হয়। The Times পত্রিকা সম্পাদকীয়তে এ বিষয়ে লেখা হয়, ‘Bengal : Suffering Millions’ “For six weeks now the flow of refugees from East Pakistan into India has gone on relentlessly, into Tripura in the east, into Assam in the north, and heaviest of all into West Bengal. Despite the heroic effort assembled by the Indian Government and by voluntary agencies there is little hope that this gigantic mass of suffering people will find all their needs can be met. The first and most urgent need is food. As the monsoon rains begin any day now shelter will become more urgent. Worst of all-in a view of the difficulty of coping with it in such surrounding—is disease. As described in our report today cholera has now taken a hold that could be extremely dangerous. Yet another risk is that of communal tension in a city like Calcutta where the social fabric is brittle at best and where a stream of refugees is beginning to flow in.”৪ সানডে অস্ট্রেলিয়ান তার সম্পাদকীয়তে ‘Agony and Response’ শিরোনামে লেখেঃ“In West Bengal today we are witnessing a human catastrophe for which even the tormented history of the twentieth century can offer few parallels. In the awesome scale of the disaster, in the uniquely harrowing quality of the suffering, there has been little to compare with what is happening at this moment to the refugees of East Pakistan. The known statistics of death and dislocation are appalling enough; the prospects are even more terrifying. They have already produced in some of us a paralysis of the will, and anesthesia of the mind, blinding us to the urgency of the crisis. Let us imagine, if we can, the combined populations of Melbourne and Sydney driven in terror from their homes by a marauding army, cast adrift in a wilderness without food or shelter, to face the imminent prospect of extermination from starvation or rampant disease.” ৫ আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া প্রভৃতি মহাদেশের বহু দেশের সংবাদপত্র বাংলাদেশ/ শরণার্থীদের দুর্দশা, নানা রোগে হাজার হাজার মৃত্যু ও তাদের উপর অত্যাচারের বহু খবর প্রকাশ করেছে, বহু সম্পাদকীয় ও প্রতিবেদনে গভীর বেদনা, উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। স্ব স্ব দেশের সরকারের প্রতি এবিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য আবেদন করেছে। বিশ্ব জনমত গঠনে তাদের ভূমিকা পালন করেছে। ভারতের সমস্ত ভাষার সংবাদপত্র ভারতে আশ্রিত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী, পূর্ব-পাকিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও অত্যাচারের খবর প্রতিদিন প্রকাশ করে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে যা প্রভূত সাহায্য করেছে। ভারতে আশ্রয়প্রাপ্ত শরণার্থী সংখ্যা এবং তাদের ধর্মীয় পরিচয় দেখলে একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও তাদের মুরুব্বিগণের আসল উদ্দেশ্য কি ছিল। ১৬ই আগস্ট ১৯৭১ পর্যন্ত ভারতে আশ্রিত শরণার্থীর ধর্মীয় বিভাজন ছিল নিম্নরূপঃ হিন্দু ৬৯.৭১ লক্ষমুসলমান ৫.৪১ লক্ষঅন্যান্য ০.৪৪ লক্ষ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের প্রথম থেকেই একথা বুঝতে দেরি হয়নি যে, জনসংখ্যার নিরিখে পূর্ববঙ্গ/পূর্বপাকিস্তানে …

পাকিস্তানি গণহত্যাঃ শরণার্থী সমস্যা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক জনমত গঠন Read More »

ঢাকায় লু’-হাওয়া বইবে, নাকি বাতাস ‘সৌরভ’-এ ভরপুর হবে!

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক অনেকদিন দেশে রাজনীতি ছিলোনা, বিএনপি-জামাত হারিয়ে গিয়েছিলো, মাঠে শুধু ছিলো আওয়ামী লীগ। অধুনা বিএনপি জেগেছে, হঠাৎ জামাত মাঠে নেমেছে। নির্বাচন এলে এমনটা হয়, এবারো হচ্ছে, দেশে এখন রাজনীতি হচ্ছে। এটি ভাল। রাজনীতি হোক। ঢাকাই রাজনীতিতে বিদেশীরাও প্লেয়ার। আমরা তাঁদের ‘হায়ার’ করে ডেকে আনি, অথবা আমাদের ব্যর্থতার কারণে ওঁরা দামী প্লেয়ার হিসাবে জায়গা করে নেন, ‘গোল’ ওরাই দেয়, আমরা হাততালি দেই, ওদের প্রশংসা করি। ভালো দর্শক হিসাবে আমাদের কোন তুলনা হয়না। ওঁরা সার্টিফিকেট দেয়, আমরা নিজেদের ‘ধন্য’ মনে করি। ভারত ও আমেরিকার দুই কূটনীতিক একই দিনে ঢাকা নেমেছেন। তাঁরা শেখ হাসিনা’র সাথে দেখা করবেন বা করেছেন। সামনের সপ্তাহে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।পরের সপ্তাহে আসবেন অর্থনৈতিক বিষয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জোসে ডব্লিউ ফার্নান্দেজ। এদের টেক্কা দিয়ে আগেই আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব (পূর্ব) সৌরভ কুমার। লু’র ঠিক একদিন আগে তিনি আসছেন। ডোনাল্ড লু’-কে বলা হয় ‘রেজিম চেঞ্জ’ স্পেশালিস্ট। দেখা যাক, ঢাকায় লু’-হাওয়া বইবে, নাকি এই প্রচন্ড গরমে বাতাস ‘সৌরভ’-এ ভরপুর হবে? ওঁরা সবাই আসছে, আমাদের গণতন্ত্র শেখাতে, কিভাবে সুষ্ঠূ ভোট করতে হয় সেই জ্ঞান দিতে। ওঁরা আমাদের ‘কাইজ্যা’ (ঝগড়া) থামাতে বৈঠক করবে, সব দলকে নির্বাচনে আনতে চেষ্টা করবে, আশা দেবে, ভরসা দেবে, সাথে থাকতে বুদ্ধি দেবে। এসব সাবজেক্ট ওঁরা নিশ্চিতরূপে আমাদের চাইতে ভালো জানে, তাই তাঁরা আমাদের প্রশিক্ষণ দিতেই পারে। অতীতে যখন ওঁরা এসব করতো না, আমরা তখন, ‘আমরা’ মানে যাঁরা কখনো না কখনো ক্ষমতায় ছিলাম বা আছি, ওঁদের দুয়ারে মাথা খুঁটেছি, আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার ট্রেনিং দেয়ার জন্যে। ওঁরা উদার, ওঁরা ট্রেনিং দিয়েছে, এখনো দিচ্ছে। এটি তো সত্য, জাতি হিসাবে আমরা এখনো সুষ্ঠূ নির্বাচন করতে শিখিনি, তাই ট্রেনিং দরকার! এবার কি শিখবো? মনে হয়না। প্রবাদ আছে, যিনি জেগে ঘুমিয়ে থাকেন, তাকে জাগানো যায়না’, আমরা ধনুর্ভঙ্গ পণ করেছি, আমরা শিখবো না, আমাদের শেখায় সাধ্য কার? বাংলাদেশে সুষ্ঠূ নির্বাচনের সংজ্ঞা হচ্ছে, ‘আপনাকে হারিয়া প্রমাণ করিতে হইবে নির্বাচন সুষ্ঠূ হইয়াছে’। ‘তালগাছ আমার না থাকিলে বিচার সঠিক হয় কি করিয়া’? আশার কথা (!) আমরা বিদেশীদের পরামর্শ শুনি, মেনে নেই, অবশ্য যদি ‘আমার’ পক্ষে বলে! চীন আমার পক্ষে কথা বললে আমরা ‘চীনের গণতন্ত্র’-র ভক্ত হয়ে পড়ি। আমেরিকা আমার বিরুদ্ধে থাকলে, আমেরিকার গণতন্ত্র কোন গণতন্ত্রই নয় বলে মন্তব্য করি। আর ভারত? ভারতের ‘কাঁচালঙ্কা’ কারো কাছে ‘বেজায় ঝাল’ আবার কারো কাছে ‘কাঁচামিঠা’ আমের মত অম্ল-মিষ্টি-মধুর!

ভারত সকল ধর্ম বিশ্বাসীর আবাস: আমেরিকায় মোদী

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক আমেরিকা আসলেই কি বাংলাদেশের কাছে ‘সেন্ট-মার্টিন’ চেয়েছে এবং ৱ্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, ভিসা বাতিল ইত্যাদি কি এ কারণেই? ঘটনা তা নয়, নির্বাচনী বছর কতকিছুই তো শোনা যাবে।  এসব বলা হচ্ছে ‘নির্বাচনী কৌশল’ হিসাবে। আমেরিকা জানে ভারত তাঁর নাকের ডগায় ‘সেন্ট-মার্টিন’ দ্বীপে কাউকে বসতে দেবেনা। এমুহুর্তে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে, বাংলাদেশ তা করবে না? বাংলাদেশ যদি কখনো ‘মিনি-পাকিস্তান’ হয়, এবং এর সরকার ‘এন্টি-ইন্ডিয়া’ হয়, তখনো এটি কতটা সম্ভব তা ভবিষ্যৎ বলবে। এরই মধ্যে সোমবার (২৬জুন ২০২৩) মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট’র প্রধান মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন যে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কখনই বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেনি। তিনি বলেন, যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। এদিকে বারাক ওবামা’র টিভি সাক্ষাৎকার নিয়ে ট্রল হচ্ছে। টিভি সাংবাদিক ক্রিস্টিনা মারিয়া হাইদে আমানপুর  (৬৫)’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেছেন যে, মানবাধিকার ও সাম্প্রদায়িক ইস্যু বাড়তে থাকলে বা  সংখ্যালঘু স্বার্থ না দেখলে ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে। স্মর্তব্য যে, এই টিভি সাংবাদিক কিছুকাল আগে জননেত্রী শেখ হাসিনা’র একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন। মোদীর সফরকালে এই সাক্ষাৎকার ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ তা বোঝা খুব একটা কষ্টকর নয়? বাইডেন মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ, একদা তাঁর ‘বস’ ওবামা উল্টো বাঁশ দিচ্ছেন। এটাই আমেরিকা। সত্য হচ্ছে, ভারত সৃষ্টির পর থেকেই ভারত ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র চলছে, ওবামা এতে নুতন সংযুক্তি। একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যথেষ্ট পুলকিত।  এক সময় অধিকাংশ বাংলাদেশী মুসলমান ‘হুসাইন’ দেখে ওবামাকে ভোট দিয়েছিলো, এখন ‘হুসাইন’ আবার আলোচনায় এসেছে। হোয়াইট হাউস যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-র সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকি মানবাধিকার ও মুসলিম অধিকার নিয়ে মোদিকে একটি প্রশ্ন করেন, এ মুহূর্তে তাকে নিয়েও ট্রল হচ্ছে, বলা হচ্ছে তিনি ‘পাকিস্তানি মুসলমান’, কথা কিন্তু সত্য? হোয়াইট হাউস অবশ্য সাংবাদিক হয়রানীর নিন্দা করেছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত কাউন্সিলওমেন শাহানা হানিফও মোদীর সফরের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন। ৭৫ জন আইনপ্রণেতা মোদির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, এই তালিকায় বার্নি স্যান্ডার্স থেকে জয়পাল পর্যন্ত আছেন। যারা মোদির বিরোধিতা করেছেন, লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তাঁরা ‘বাম-ঘেঁষা’ অথবা ‘ইসলাম-পছন্দ’ এন্টি-ইন্ডিয়ান। নানান কারণে বাইডেন প্রশাসন ডেকে এনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছেন। এটি রাষ্ট্রীয় সফর, দুই-দুইবার মোদী কংগ্রেসের যৌথ-সভায় ভাষণ দিয়েছেন। আমেরিকায় এই প্রথম সর্বত্র ‘মোদী, মোদী’ ধ্বনিতে  উচ্ছসিত উল্লাস দেখা গেছে, এতে বিরুদ্ধবাদীরা ভড়কে গেছে। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন শেষে  ‘ভারত মাতাকি জয়’ শুনে ভারত বিরোধীদের ভাল লাগার তো কোন কারণ নেই? গার্ডিয়ানের মতে উইনস্টন  চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মত সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বারবারই মোদী মোদী ধ্বনি উঠেছে, সবাই উঠে দাঁড়িয়ে হাত-তালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেখানে মোদী দীপ্তকণ্ঠে বলেছেন, ‘উই আর হোমস টু অল ফেইথ’।    হোয়াইট হাউসে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মানবাধিকার ও মুসলিম অধিকার নিয়ে সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকি’র প্রশ্নের উত্তরে মোদী বলেছেন, ভারত আমেরিকার মতই গণতান্ত্রিক দেশ, সেখানে সবাই সমান অধিকার ভোগ করেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র আমাদের ‘ডিএনএ’-তে আছে, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সহনশীল  ও সমানাধিকারের ওপর ভিত্তিশীল। প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রায় একই কথা বলেছেন। পরক্ষণে  যৌথ সভায় মোদী বলেছেন, আমেরিকাতে ৯/১১ হয়েছে, ভারতের মুম্বাইতে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ এখনো হুমকী, আমাদের যৌথভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে। কেউ কেউ একথাটি ‘শেখ হাসিনা’র’ সরকারের পক্ষে বলে মন্তব্য করছেন।  কারণ শেখ হাসিনা’র বিকল্প ‘মৌলবাদী’ সরকার, যা ভারত চায়না। একজন ভারতীয় সাংবাদিক নয়নীমা বসু কিছুকাল আগে বলেছিলেন যে, মোদী বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচন মেনে নিতে ট্রাম্প প্রশাসনকে রাজি  করিয়েছিলেন। হ্যাঁ, সম্ভবত: এবারো মোদী গরম বাইডেনকে নরম করবেন।  মোদী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, আমেরিকা হচ্ছে ওল্ডেস্ট ডেমোক্রেসী, আর ভারত হচ্ছে লারজেস্ট ডেমোক্রেসী।  মোদী এবং বাইডেন দু’জনই বলেছেন বর্তমানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সর্বকালের ঘনিষ্টতম। এই উষ্ণ সম্পর্ক আনন্দঘন করতে হলে বাইডেন প্রশাসনকে হয়তো ‘ঢাকা-কে কিছুটা ছাড় দিতে হবে? বাইডেন প্রশাসন মোদিকে যতই সমাদর করুক, দেখা যাচ্ছে আমেরিকায় একটি শক্তিশালী ‘এন্টি-ভারত’ লবি সু-সংঠিতভাবে  কাজ করছে, এবং এই গ্রূপ একই সাথে ‘এন্টি-শেখ হাসিনা’ বা ‘এন্টি-আওয়ামী লীগ’? মৌলবাদী ইসলামী এই গ্রূপ আমেরিকায় গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে কখনো মোদী বিরোধিতা, কখনো শেখ হাসিনা বিরোধিতা করে দক্ষিণ  এশিয়ায় গণতন্ত্র বিরোধী শক্তিকে মদত দিচ্ছে। এঁরা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক নড়বড়ে করতে চায়?  ভারত তার মত করে এই বিরোধিতা মোকাবেলা করতে সক্ষম। ভারত মাথা নত করেনা। ১৯৭১-এর প্রমাণ,  আমেরিকা-চীনের বিরোধিতা করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। মোদীর ভাষণ বয়কট করা ক’জন আইনপ্রণেতা বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের বৈঠকের কর্মসূচিতে ছিল। ভারত শর্ত দেয়, কংগ্রেসওমেন প্রমীলা জয়পাল ডেলিগেশনে থাকতে পারবেন না, তাঁরা রাজি হন’নি, তাই জয়শংকর বৈঠক বাতিল করে দেন। এটাই ভারত। মোদীর সফরে ভারত যদি লাভবান হয়, তবে বাংলাদেশও লাভবান হবে। লেখাটা শেষ করবো, কক্সবাজার-৩ আসনের  এমপি সাইমুম সরোয়ার কমলের সংসদে একটি মন্তব্য দিয়ে, তিনি বলেছেন, ভারতবিরোধি কোন শক্তিকে বাংলাদেশে  ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবেনা। তার মতে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে এদেশ থেকে ভারত ভাঙ্গার পরিকল্পনা হচ্ছে, আমরা তা হতে দেবোনা। এমপি কমল-কে ধন্যবাদ, তিনি রাজনীতিটা বুঝেছেন। ২৭শে জুন ২০২৩। 

মুক্তিযুদ্ধের গোপন ঘাঁটি সানি ভিলা

বিমল প্রামানিক ( ডাইরেক্টর, সেন্টার ফর রিসার্চ ইন ইন্দো-বাংলাদেশ রিলেশনস, কলকাতা। ) ‘সানি ভিলা’ ২১ রাজেন্দ্র রোড, কলকাতা -২০ ঠিকানার তিনতলা বাড়িটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে । ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামি লিগ জয়লাভ করার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, আওয়ামি লিগকে সামরিক জুন্তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কিছুতেই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসনভার গ্রহণ করতে দেবে না। যে-কোনো চূড়ান্ত অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে দেশকে ঠেলে দেওয়া হতে পারে এটা বুঝেই তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধির নিকট প্রয়োজনে সাহায্য সহযোগিতা চেয়ে গোপনে বিশেষ দূত প্রেরণ করেন । পূর্বপাকিস্তানে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আওয়ামি লিগের কোনো কোনো নেতাকে ভারতে আশ্রয় নিতে হতে পারে-একথা ভেবেই ভারত সরকার কলকাতায় একটি আশ্রয়স্থলেরও আগাম ব্যবস্থা করে রাখে । আর সেই বাড়িটিই হল ‘সানি ভিলা’ । পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর বিশেষ দূত শ্রীচিত্তরঞ্জন সুতার মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই এই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। আওয়ামি লিগের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দের এখানেই এসে যোগাযোগ করার কথা ছিল । সেই মোতাবেক ২৬ মার্চের পর এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান, শেখ ফজলুল হক মণি, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান প্রমুখ এই বাড়িতে এসে ওঠেন। তারা ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগও করেন । অধ্যাপক ইউসুফ আলি তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “…আমার থাকার জায়গা তাঁরা করে দিলেন কীড স্ট্রীটের এম এল এ ভবনে। তারপর চেষ্টা চলল নেতৃবৃন্দের সাথে সংযোগ স্থাপনের। প্রথমে দেখা হলো জনাব কামরুজ্জামান সাহেবের সাথে বালিগঞ্জ এলাকায় রাজেন্দ্র রোডের নর্দান পার্কের একটি বাড়িতে । পরবর্তীকালে জানা গেল বাংলাদেশ থেকে আগত উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের জন্য এই বাড়িটি সংরক্ষিত ছিল । বাসাটির তিনতলায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বেতার যন্ত্র ছাড়াও যোগাযোগ স্থাপনের অন্যান্য উপকরণ দ্বারাও এটি সজ্জিত ছিল।” ১ ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “… আমরা বিমানে করে আবার কলকাতা ফিরে এলাম । এখানে এসে জানলাম, কলকাতায় গাজা পার্কের কাছে একটা বাড়িতে কামরুজ্জমান ভাই থাকেন । শেখ ফজলুল হক মণিও ঐ বাড়িতে আছেন । পরে আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ও সিরাজুল আলম খান এই বাড়িতে ঘাঁটি করেন।” ২  মঈদুল হাসান ‘মূলধারা ৭১’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘দিল্লী থেকে কলকাতা ফিরে তাজউদ্দিন ৮ই এপ্রিল ভবানীপুর এলাকায় রাজেন্দ্র রোডের এক বাড়িতে কামরুজ্জামানসহ উপস্থিত আওয়ামী ও যুব নেতৃবৃন্দকে দিল্লী বৈঠকের ফলাফল অবহিত করেন। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনাকালে কোন বিবেচনা থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও সরকার গঠনকে অনিবর্তনীয় বিষয় হিসেবে উপস্থিত করেন তাও ব্যাখ্যা করেন। ৩ মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের এক বৈঠক বসে ‘সানি ভিলা’য়। ওই বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক সমর্থন আদায় করা। বলা যায় সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল । যদিও সি পি এম-এর পক্ষ থেকে এরকম একটা বক্তব্য রাখা হয়েছির যে,যদি বাংলাদেশের এই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় পূর্বপাকিস্তানে ও ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে তবে তাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দান কঠিন হয়ে পড়বে। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়েও সি পি এম- এর একটা বড় অংশই এতে সমর্থন দান করেছিল। পরবর্তীকালে পাকিস্তানের প্রতি চীনের সমর্থন সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় সি পি এম অনেকটাই নিজেদের গুটিয়ে নেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের (ই) সাধারণ সম্পাদক, সি পি আই-এর গোপাল বন্দোপাধ্যায়, সি পি এম- এর সরোজ মুখার্জি, ফরোয়ার্ড ব্লকের অশোক ঘোষ, আর এস পি-র নিখিল দাশ এবং কংগ্রেস (স)-এর প্রতিনিধি। বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, আব্দুস সামাদ আজাদ, জিল্লুর রহমান, পুলিন দে,অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ (ন্যাপ), আবদুস সালাম (সি পি বি), ফণিভূষণ মজুমদার, শেখ ফজলুল হক মণি, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, চিত্তরঞ্জন সুতার প্রমুখ।৪ ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ। পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন তাজউদ্দিন আহমেদ এবং ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম। সীমান্তে বি এস এফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তৎকালীন বি এস এফ-এর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান শ্রীগোলোক মজুমদার কলকাতা থেকে সীমান্তে গিয়ে তাদের গ্রহণ করেন এবং তার গাড়িতে সরাসরি কলকাতা বিমানবন্দরে নিয়ে আসেন। বি এস এফ-এর তৎকালীন প্রধান কে এফ রুস্তমজি ঐদিনই দিল্লি থেকে কলকাতা আসেন এবং বিমানবন্দরে বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরিচয় এবং প্রাথমিক আলোচনার পর রুস্তমজির সঙ্গে তার গাড়িতেই প্রায় মধ্যরাতে নেতৃদ্বয় রাসেল স্ট্রিটের আসাম হাউসের অতিথিশালায় এসে ওঠেন। ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন।”…একটি সুন্দর বাড়িতে (আসাম হাউজ) আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হল । একটি ঘরে আমি আর তাজউদ্দিন ভাই, অন্য ঘরে রুস্তমজি”৫ এই বাড়িতে দু’দিন থাকাকালীন তাজউদ্দিন আহমদ কলকাতায় আগত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামি লিগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু সঠিক ঠিকানা না বলতে পারায় বি এস এফ এবং পুলিশের লোকজন তাদের খুঁজে বের করতে পারেনি। এই অবস্থায় ১ এপ্রিল গভীর রাতে বি এস এফ-র তত্ত্বাবধানে নেতৃদ্বয় দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। লক্ষ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাজউদ্দিন আহমেদের সাক্ষাৎ হয় এবং প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠনের বিষয় আলোচনা হয়। ৬ দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে তাজউদ্দিন আহমেদ ও আমিরুল ইসলাম ২বি লর্ড সিনহা রোডের গেস্টহাউসে ওঠেন। এই বাড়িটি তখন ছিল বি এস এফ-এর পূর্বাঞ্চলীয় হেড কোয়ার্টার । ১০ এপ্রিল রাতে এই বাড়িতেই প্রবাসী সরকার গঠনের বিষয়ে আওয়ামি লিগ নেতৃবৃন্দের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, মিজানুর রহমান চৌধুরি, শেখ ফজলুল হক মণি, তোফায়েল আহমেদ, আমিরুল ইসলামসহ অনেক এম এন এ, এম পি এ ও বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ। ১২ এপ্রিল প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ চুড়ান্ত করতে আগরতলা সার্কিট হাউসে আওয়ামি সংসদীয় দলের বৈঠক বসে। দীর্ঘ বাগ-বিতণ্ডার পর তাজউদ্দিন আহমেদকেই সবাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন। ১৩ এপ্রিল ছোটো বিমানে মন্ত্রিসভার সদস্যগণ আগরতলা থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৭ এপ্রিল বাংলদেশ সরকার গঠিত হওয়া পর্যন্ত তাজউদ্দিন আহমেদ এই বাড়িতেই ছিলেন। পরে বি এস এফ -এর ভাড়া করা ৫৭/৮ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়িতে উঠে যান। ৭ তথ্যসুত্রঃ ১। অধ্যাপক ইউসুফ আলির সাক্ষাৎকার, বাংলাদেশের স্বধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, পঞ্চদশ খণ্ড, ঢাকা, ১৯৮৫, পৃঃ ৩৪৭-৩৪৮ ২। ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র,  পঞ্চদশ খন্ড,   পৃঃ  ১১০ ৩। মঈদুল হাসান তরফদার, মূলধারা একাত্তর, ইউনিভার্সিটি  পাবলিশার্স লিঃ, ঢাকা, ১৯৮৬, পৃঃ ১৬। ৪। শ্রীসত্যরঞ্জন ঘোষ, কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী (অবঃ), মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন – সাক্ষাৎকার  (লেখক কর্তৃক গৃহীত, ১৯৯৪) ৫। ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১০১ ৬। শ্রীশরদিন্দু চট্টপাধ্যায়, আই, পি, এস,  প্রবাসী সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের লিয়াঁজো অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন — সাক্ষাৎকার, (লেখক কর্তৃক গৃহীত, ১৯৯৪) ৭। ঐ