Center For Research In Indo

Author name: admin

Indo-Bangladesh Relations: Contemporary Reflections

Drona Bandyopadhyay Bangladesh is undeniably one of the most important neighbours of India. Our country shares longest boundary with Bangladesh and she has an inevitable geographical and logistical role in providing communicational transit of folk and freight to the North-East of India from mainland. The strategically located seaports and airports can be prudently utilised in future to make intra-national connectivity more smooth and seamless. We are helping Bangladesh in all possible ways. The birth of Bangladesh is not only a saga of the historical culmination of their own Bengali nationalistic movement but also a valiant chronicle of our political leadership, military gallantry and magnanimity of common Indians. Not less than 11,000 armed personnel of Indian defence forces were martyred for the liberation of Bangladesh. In post-1971 period Indian Government has continued to extend economic and other sort of aid and assistance towards the overall welfare of the people of Bangladesh. Though anti-Indianism has a long history since Pakistani times and it is inherently related to acrimonious attitude towards Hindu people and culture. In recent times this sort of public psychology has increased manifold. The evident inability of bilateralism to arrive at a mutually agreeable imperative concurrence on sharing common rivers including Teesta has profusely generated anti-Indianism at the ground level. The unfortunate border killings are also a grave festering issue in Bangladesh. But illegal immigration and smuggling of contraband are the existent reasons behind the border killings. The mainstream media and political personalities in Bangladesh have never publicly acknowledged the actualities that trigger border killings. The general election will take place in Bangladesh at the end of 2023 or at the start of 2024. According to media reports the election schedule will be declared in September 2023. So there is little time for us to thrash the policy out regarding the general elections. The crisis issues in the present political scenario of Bangladesh are touched upon through following points. A. Unpopularity of Awami League: The present Awami League (AL) government has become unpopular due to its autocratic attitude and corruption though corruption is not any factor in the Bangladesh society. India supports AL for its historical legacy. It is enjoying power about 15 years and also increasing unpopularity. B. Failure of Opposition: People always want a change in democracy and they are relying on BNP, the main opposition. But due to various reasons BNP has failed to remove AL from power through street movement. Jatiya Party is a divided house and after Ershad’s death it has become weak. Moreover, it is seen as an associate of AL. C. Western Pressure: Bangladesh is facing tremendous pressure from US, EU and UN due to its dismal human rights record. The Treasury sanctions and recent Visa restrictions declared by US are bright testimonials of US pressure on this poor country. Though they want protection of civil rights and free and fair election in Bangladesh but the main reason behind their actions is the China factor. D. Role of China: China is a very important factor in Bangladesh. AL has established a deep rapport with this country due to both economic and political reasons. In 2019 it was China who gave first recognition to AL Government just after the election. China has huge investments and helping Bangladesh in various ways to become militarily strong. E. Role of Russia: Bangladesh has also a good relation with Russia. In Ukraine war the Bangladesh has taken a pro-Russia stance in a very diplomatic way. F. Rohingya Issue: There are more than a million Rohingya refugees in Bangladesh. Their chances of returning back to Myanmar is very bleak. This primitive minded poor populace is a demographic threat to Bangladesh and also to India. They are illegally entering India and creating problems in various parts of the country. G. Kuki Issue: Manipur is facing civil war between Meiteis and Kukis. Kukis are bringing arms and ammunitions from Myanmar where they are fighting against the junta. Recently, Kukis of Bangladesh have started a low-scale insurgency. Both the events are threat to the integrity and sovereignty of India and Bangladesh. H. BURMA Act of US: US has enacted BURMA Act in April, 2022 to help the democratic movements in Myanmar. As Myanmarese junta is an ally of China for many decades US wants to help the democratic forces and ethnic groups which are fighting against Yangon’s autocratic rule. It is a grand design of US to dominate the entire region in the name of democracy and human rights. Though the China is the main target the emergent India is also a target in long term. I. Decline of secular space in Bangladesh: Over the years it has been observed that secularists are steadily dwindling in numbers and their social spaces is becoming small and narrow. This secularist forces are the main support banks of India. Hence, India has a looming trouble due to their decline. J. Economic Crisis: Bangladesh is facing a severe economic crisis. Inflation, plummeting of foreign exchange reserves, power cuts, etc. is crippling the economic growth. If the conditions get worse India may come to help like in Sri Lanka. India is an emerging world power. With the rise of India at the global stage the stakes are also becoming high. The policy makers should not ignore some unfortunate realities present in Bangladesh. To save Bangladesh and safeguard India’s interests ta balanced Bangladesh policy is the need of the hour.

বাংলাদেশে গণহত্যা  ও যুদ্ধাপরাধে দায়ী পাকিস্তানঃ UNO প্রস্তাবনা তথা আন্তর্জাতিক কণ্ঠস্বরে জোরাল দাবী ন্যায়বিচারের।

সুদীপ কুমার আচার্য্য ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশ) অপারেশন সার্চলাইট অভিযানের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক সম্পন্ন হয়েছিল পৃ্থিবীর অন্যতম সর্ববৃহৎ জেনোসাইড বা গণহত্যা। গণহত্যা হল কোন জাতি, সম্প্রদায়, গোত্র বা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মানুষকে নিশ্চিহ্ন করার একটি অস্ত্রবিশেষ। পাকিস্তানি মিলিশিয়ার সহযোগিতায় জামাত, বিহারী মৌলবাদীদের দল এই ঘৃণ্য কাজ শুরু করে। মাত্র এক-দুই মাস পরেই খুনী স্যাটেলাইটের ভূমিকায় যুক্ত হয় ঘাতক দালাল ঝটিকাবাহিনী, রাজাকার-আল বদর – আল শামস্, পিস কমিটির নামে নরঘাতকের দল। নয় মাস চলা এ জেনোসাইডে বলি হয়েছিল ত্রিশ লক্ষ মানুষ। প্রায় দশ মিলিয়নেরও বেশী হিন্দু পরিবার ভিটেবাড়ি ছেড়ে কোনক্রমে পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতবর্ষে।১ দেশের অভ্যন্তরে ভিটেছাড়া হয়ে পালিয়ে বেরিয়েছেন কুড়ি মিলিয়ন, প্রায় চার লক্ষ নারীর সম্মান ও ইজ্জত নষ্ট হয়েছিল। ২ সমস্ত নখ ও বিষদাঁত বার করে পাকিস্তানি হায়নার দল ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলে দেশ বিভাগের গ্লানি, আরও হাজারো সঙ্কট বুকে নিয়ে সবেমাত্র থিতু হবার চেষ্টা করা পূর্ব পাকিস্তানকে। এখানকার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতার স্পৃহাকে তারা বুটের তলায় পিষে মারে। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি মুসলমান অংশটিকে পাকিস্তান তাদের তাঁবেদার ও ক্রীতদাস হিসেবে রাখতে চেয়েছিল। ১৯৭১ এর জুন মাসে জেনারেল টিক্কা খান রাজাকার অধ্যাদেশ জারী করেন এবং ক্রমে আনসার, মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্রসংঘ ইত্যাদি সমস্ত পাকিস্তানপন্থী সংগঠনের মেম্বাররা থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও কমান্ডারেরা স্টেনগান নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও পৌর এলাকায় এমনকি গ্রামে গঞ্জে নরসংহারের নামে যার প্রধান লক্ষ্য ছিল হিন্দু পরিবারগুলি, ভারতে বাংলাদেশী শরণার্থী শিবির পরিদর্শন ও তাদের সঙ্গে কথা বলে মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি সিনেটে একটি প্রতিবেদন পেশ করে বলেন – Nothing is more clear or more easily documented, than the systematic campaign of terror and its genocidal consequences launched by the Pakistan army on the night of March 25th …Hardest hit have been over members of the Hindu community who have been robbed of their hands and shops systematically slaughtered, and, in some places, painted with yellow patches marked `M’.৩ বলা বাহুল্য এই ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা ঘটার পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হলেও জঘন্য অপরাধের কোন দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়নি। যা হওয়া উচিত ছিল আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে এবং কঠোরতম শাস্তি হওয়া বা পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্লক করা, বয়কট করা ছিল জরুরী। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটি গুরুতর এবং প্রশ্ন জাগে এরকম কিছু হল না কেন ?১৯৪৮ সালের ৯ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘ Convention on the prevention and punishment of the crime of genocide ঘোষণা করেছিল। হিটলার, মুসোলিনী, ফ্রাঙ্কো, তোজো বা স্টালিন জমানা পেরিয়ে সারা বিশ্ব স্বপ্ন দেখেছিল শান্তি প্রতিষ্ঠার, কল্যাণের উন্নতির। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের কৃতকর্ম তাতে জল ঢালে। দক্ষিণ এশিয়ায় ঠাণ্ডা লড়াইকে ডেকে নিয়ে আসবার যদি কেউ সবচেয়ে বড় দাবীদার হয় তার নাম পাকিস্তান। বাংলাদেশ ইস্যুর মধ্যে দিয়ে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় অশান্তি তৈরীর ছক তাদেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। জাতিপুঞ্জের আইন বা নির্দেশনার কোন তোয়াক্কা না করে ১৯৭১ এ গণহত্যায় তারা নেতৃ্ত্ব দেয়। যাইহোক ভারতবর্ষের দৃঢ়তা সুকৌশলের সামনে পাকিস্তান হার মানে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে গণহত্যার বিচার তেমন কোন গুরুত্ব পেল না। রাষ্ট্রসংঘ ও কয়েকটি দেশ কমিটি তৈরি করেছিল এই জেনোসাইডের বিচার চেয়ে। UNO ইনভেস্টিগেশন, আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন, বাংলাদেশ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গণহত্যা হয়েছে বলে মতামত দেয়। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য হল না আর ব্যাপারটি সম্ভবত ধামাচাপা পড়ে গেল। মানবাধিকার ভক্ষণ করা, সাম্প্রদায়িকতা উস্কে মৌলবাদকে চাঙ্গা করা, সংখ্যালঘু ও জনজাতিদের উচ্ছেদ, সম্পত্তি দখল, বঙ্গবন্ধু হত্যা, ইসলামাইজেশন, বি.এন.পি., জাতীয় পার্টির অরাজকতা এরপর বাংলাদেশকে ক্রমাগত আভ্যন্তরীণভাবে জখম করে। নীতি ও আদর্শের অপমৃত্যু ঘটে, বাঙালি মানসিকতার স্থলে চেপে বসল বাংলাদেশীত্বের ভেক ধরা রূপান্তরিত সংস্কৃতির বিষবাষ্প, এসবই পাকিস্তান পন্থার অনুকূলে যায় যেখানে পূর্বেকার যে অপরাধ তারা করেছিল তার বিচার করার মত মানসিক কাঠামোটাই লুপ্ত হয়েছিল। বাস্তবেও প্রায় ২০০৯-১০ সাল পর্যন্ত আমরা সেভাবে কোন সরকার বা নেতৃত্বকে এনিয়ে বৃহত্তর নীতি প্রণয়ন বা মুখ খুলতে দেখি না। অন্যদিকে ইতিহাস বিকৃতি, ঝুটা ভাষণ, ভুলতথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবেশন করে পশ্চিমী বিশ্বে পাকিস্তান নিজ কুকীর্তি গোপন করেছিল। আন্তর্জাতিক ফোরামেও খুনের ষড়যন্ত্র, জেনোসাইড, ইত্যাদি দুষ্কর্মের ট্যাগ যাতে তাদের নামের পাশে না লাগে বা এ ধরণের বিষয়ই যাতে উত্থাপিত না হয় তা নিয়ে তারা অদৃশ্য চেষ্টা করে গেছে। কেননা ছায়াযুদ্ধ বা এসব ব্যাপারে তারা পটু। বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও এক নেগেটিভ মানসিকতা এ নিয়ে ক্রিয়াশীল ছিল। কেননা জেনোসাইড নিয়ে পরবর্তী জেনারেশনগুলির প্রতিবাদী মানসিকতা বা ভাবিত হওয়ার সংখ্যা কম। অজ্ঞানতাবশতঃ হলেও এ এক স্বেচ্ছা অপরাধ। তা নাহলে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করতে এতদিন লেগে গেল কেন ? কিছুদিন আগে ২০১৭ সালে ১১ই মার্চ জাতীয় সংসদ এক প্রস্তাবনা নিয়ে ২৫শে মার্চ দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এবার থেকে গণহত্যা দিবস পালন করার ঘোষণা দেয়।৪লেমকিন ইন্সটিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন, জেনোসাইড ওয়াচ, জেনোসাইড স্কলারস (IAGS), গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্রাটেজি ফোরাম (ICSF), অল ইউরোপিয়ান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংগঠনের মতে পাকিস্তান ১৯৭১ এ জেনোসাইড ঘটিয়েছিল। IAGS ২০২২ এর মাঝামাঝি এক প্রস্তাবনা দ্বারা ‘Resolution to declare crimes committed during 1971 Bangladesh Genocide, crimes against humanity and war crimes’. ত্রিশ লক্ষ শহীদের এই বলিদানকে পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধ হিসেবে সামনে এনেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে ব্যাপারটি ক্রমে হয়ে যাচ্ছিল এক ভুলে যাওয়া স্মৃতির মতন। কেবল এক শ্রেণীর কিছু সচেতন, বুদ্ধিজীবী, লেখক এবং শাহরিয়ার কবীরের মত কয়েকজন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, উদারমনস্ক প্রোগ্রেসিভ যুবক যুবতীরা এ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। লেখালেখি ও এনিয়ে মতামত তৈরির চেষ্টা হয়েছে। সরকার দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিল। শাহবাগে জমায়েতকারীদের বিষয়টি ছিল পরিণত বাঙালি মানসিকতার অগ্রগতির একধাপ মাত্র। আর এতদিনে জামাত ও হেফাজতের কাছে ফাঁসীপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হয়ে গেছেন শহীদ বীরের মর্যাদাপ্রাপ্ত যা বাংলাদেশের নিকট আজ বিপদসংকেত। প্রশ্ন ওঠে বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে সাধারণ মানুষের মনন আবার প্রিপার্টিশেন এর অভিশপ্ত দিনগুলিতে কি ফিরে যাচ্ছে?গণহত্যা চাপিয়ে দেওয়া বা পরিকল্পিত কূটনৈতিক মাধ্যমের কোন বিষয় নয়। এ এক এথনিক ক্লিনঞ্জিং (Ethnic cleansing) যাদের বিরুদ্ধে এবং যেদেশে এরকমটি ঘটে একমাত্র তাদের পরিবারের বুকেই চিরতরে এ ক্ষত রয়ে যায়। এই ব্যথা অনুভবের শক্তি অন্য কারও নেই। আবার সম্পূর্ণ পরিবারকে যদি জেনোসাইডে মরতে হয় তবে তার হয়ে শোক করার বা ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখার লোকও বিশেষ নেই। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসার পথে যাদের নির্বিচারে মরতে হল তাদের হত্যাকারীদের আইনের দৃষ্টিতে কঠোর শাস্তিই একমাত্র প্রাপ্য। আর যেহেতু সেনা ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশীদাররা পাকিস্তানি তাই এ দায় সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানকে নিতে হবে। নতুন প্রজন্মের একথা জেনে রাখা ভাল যে ইসলাম রক্ষার দোহাই দিয়ে একাজ হয়েছিল। ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসের সেই অধ্যায়গুলিকে জেনোসাইডে ভুক্তভোগী যে কোন দেশেরই উচিত উচ্চশিক্ষার বইগুলিতে মুক্তভাবে এই পাঠ্যসূচী অন্তর্ভুক্ত করে ইতিহাসকে তুলে ধরা। বর্তমানে বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্র যেমন ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, কানাডা, প্রভৃতি জেনোসাইড সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য জানাতে পারছে। মানবাধিকারের স্বপ্ন দেখা, প্রকৃত বিচারের স্বপ্ন দেখা তারাও চান অপরাধের যোগ্য জবাব। এক্ষেত্রে এতদিন ধরে UNO র ইনঅ্যাকশন বা …

বাংলাদেশে গণহত্যা  ও যুদ্ধাপরাধে দায়ী পাকিস্তানঃ UNO প্রস্তাবনা তথা আন্তর্জাতিক কণ্ঠস্বরে জোরাল দাবী ন্যায়বিচারের। Read More »

একটি সুন্দর নির্বাচন করলেই তো হয়!

শিতাংশু গুহ, ১৫ই জুলাই ২০২৩, নিউইয়র্ক।। সমুদ্রে ঝড় উঠলে তা সাথে সাথে উপকূলে আছড়ে পড়ে না, ধীরে ধীরে তা ঘনীভূত হয়, এবং এক সময় ১০নং বিপদ সঙ্কেত উড়িয়ে লোকালয়ে সবকিছু ওলোট-পালট করে দেয়। কখনো-বা ঝড় হালকা হয়ে সামান্য বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে শান্ত হয়ে পরে! আজরা জেয়া বা ডোনাল্ড ল্যু’র সফর নিয়ে এখনও শেষকথা বলার সময় হয়নি। মিডিয়া বলছে, ঢাকার আবহাওয়া অতটা গরম নয়, ল্যু হাওয়া বইছে না, বরং অনুকূল মৃদুমন্দ ‘মোদী’ হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। ভালো। চিড়িয়াখানায় ভালুককে কাতুকুতু দিলে ভালুক নাকি হাসতে বেশ খানিকটা সময় নেয়? এক লোক ভালুককে কাতুকুতু দিয়ে বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষা করে, ভালুক হাসে-না, তিনি চলে যান, চব্বিশ ঘন্টা পর ফিরে এসে দেখেন ভালুক হাসছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাজ-কারবার ঐরকমই, রিয়্যাকশন জানতে আরো সময় নেবে? মার্কিন মুলুকে সব কাজ হয় প্রটোকল অনুসারে, জেয়া-ল্যু প্রটোকল মত কাজ সেরে এসেছেন, রিপোর্ট পরে। এতে খুশি হওয়ার বা দু:খ পাওয়ারও তেমন কোন কারণ নেই! আমেরিকা পাকিস্তানে ইমরান খানের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। দেশের অবস্থা খারাপ, ইমরান খান মস্কো গিয়েছিলেন পুটিনের কাছ থেকে টাকাপয়সা আনতে। এরফলে তিনি দু’কুল হারাচ্ছেন, এখন তার ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। ভারত ইমরান খানের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি, আসার কথাও না। পাকিস্তানী আর্মি আমেরিকাকে ভীষণ ভালবাসে। সুতরাং, খান সাহেবের অবস্থা আর ভালো হবার সম্ভবনা নেই, ‘সুখ’ আর তাঁর কপালে সইবে না? শেখ হাসিনা মস্কো যাননি। বেজিংও না। যদিও বেজিং ও মস্কোর লোকজন আসছেন, বিবৃতি দিচ্ছেন, পাশে থাকার কথা বলছেন। এ বড় বিপজ্জনক খেলা! একদা শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘খেলা হবে’। মমতা ব্যানার্জী ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান চুরি করে নিয়ে বললেন, ‘ খেলা হবে’, এবং বিধানসভা নির্বাচনে ভাঙ্গা-পা নিয়ে খেললেন জিতলেন। এখন ‘খেলা হচ্ছে’ ঢাকায়, আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে ‘কোয়াটার ফাইনাল’। প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে আসছেন। খেলা হবে। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, বাংলাদেশে ক’টি মিডিয়া শামীম ওসমানকে নিয়ে রংচং স্টোরি বানাচ্ছে, যা সবই ‘হলুদ’ রং-এর। এখানে কিচ্ছু হয়নি, জ্যাকসন হাইট্সের ৭৩ স্ট্রীটে দাঁড়িয়ে তিনি চা খাচ্ছিলেন, কিয়ৎ দূর থেকে তাকে একজন ‘গালি’ দেন্, প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, আমাদের ছেলেপিলে আসার আগেই এখান থেকে কেটে পর, নইলে আমেরিকা হলেও তোমার খবর আছে। ব্যস! ঘটনা এইটুকুই। ভিডিওতে কিচ্ছু নাই, তবুও—’পাইছি’–’পাইছি’–ভাব ! বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা হয়না। পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক ভালো, বাংলাদেশের বেজিং-মস্কোর সম্পর্ক ভালো। ইমরান খান মস্কোর সাথে হাত মিলিয়ে বিপদে পড়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধকালে মস্কোর সাথে ‘নুতন প্রেম’ আমেরিকা ভালোভাবে নেবে না? এরমধ্যে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, ঢাকা-দিল্লী চমৎকার সম্পর্ক এবং শেখ হাসিনা-মোদী পারস্পরিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং। শেখ হাসিনা-বাইডেন-এর মধ্যে হিমালয়ের মত দাঁড়িয়ে আছেন নরেন্দ্র মোদী। আমেরিকার সাথে শত্রুতার দরকার কি? চীনের সাথে ব্যবসা করা যাবে, ঘর-সংসার নয়! চীন আমেরিকার শত্রু, ভারত-চীন বন্ধু নয়! বাংলাদেশের আঞ্চলিক গুরুত্ব বাড়ছে, সাথে বাড়ছে ‘খেলা হবার’ সম্ভাবনা। রাশিয়া-চীন ‘দূরের বন্ধু’ থাকুক। নেতারা একটু আস্তে কথা বলুন। ইদি আমিনকে বৃটেন থাপ্পড় মেরে বসিয়ে দিয়েছিলো। নরিয়েগাকে যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিয়ে এসেছিলো। মাহিয়া মুরাদকে কেউ আশ্রয় দেয়নি। আমেরিকা বলছে ‘একটি সুন্দর নির্বাচন করুন’। স্বাধীনতা এনেছেন, দেশের উন্নতি করেছেন, একটি সুন্দর নির্বাচন করে দেখিয়ে দিন্। ব্যস।

বাঙালি ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের লড়াই

বিমল প্রামাণিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে মতাদর্শগত তফাৎ কখনই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পূর্ব প্রজন্ম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিলেন দ্বিজাতি তত্ত্বে বিশ্বাস রেখে। “পাকিস্তান নিছক একটি ভৌগলিক অঞ্চল নয়। এটা একটা আদর্শ, একটা মনস্তত্ত্ব, একটা বিশ্বাস। আমাদের বুঝতে হবে, option থাকা সত্ত্বেও অগ্রসরমান ও শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমান যুবকরা তিরিশ এবং চল্লিশের দশকে কলকাতা গিয়ে মুসলিম লিগের পতাকাতলে সমবেত হয়েছিলেন। সন্দ্বীপের মুজাফফর আহমদ, ফরিদপুরের হুমায়ুন কবীর কিম্বা দিনাজপুরের মোহাম্মদ দানেশরা ছিলেন সংখ্যায় নগণ্য। কাজী নজরুল ইসলাম কিম্বা মুজতবা আলীদের হাতের আঙ্গুলে গোনা যেত। নাজিমুদ্দিন, ভাসানী, আতাউর রহমান খান, ফজলুল কাদের চৌধুরী, শেখ মুজিবুর রহমান, সবুর খান, খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, আবুল মনসুর আহমদ এবং শাহ আজিজুর রহমানরা সংখ্যায় ছিলেন অনেক বেশি। তারা যদি সেদিন মুসলিম লিগ না করতেন, তা হলে এদেশের ইতিহাসটাই অন্যরকম হতো।”১যদি আমরা পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই, “তবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ও ইসলামি মৌলবাদ শক্তিশালী হয়ে ওঠার জন্য শুধু বি.এন.পি. ও জাতীয় পার্টির মুসলিম লীগীয় রাজনীতিই দায়ী নয়, এর পিছনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনীতির প্রবক্তা আওয়ামি লিগের ভূমিকাও রয়েছে। ১৯৪৮-১৯৭১ পর্বে আওয়ামি লিগ পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরই পূর্ব বাংলার বাঙালি মুসলমানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীদার ছিল। ঐসময় আওয়ামি লিগ বাঙালির অভিন্ন সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে বিশ্বাসী ছিল না।”২১৯৭২ সালে বদরুদ্দিন উমর সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের ভিত্তি’। এর একটা বাংলা অনুবাদও ঐ সময় আরেকটি বাংলা সাপ্তাহিকে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রবন্ধটিতে লেখক জোরালো যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের ভিত্তি আসলেই ‘বাঙালি মুসলিম জাতীয়তা’।” ৩উপরের আলোচনা থেকে এবিষয়টি স্পষ্ট যে, বাঙালি মুসলমান কখনও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে আঁকড়ে ধরতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি – তা বিভাগ-পূর্ব ভারতে বা পাকিস্তানের তেইশ বছর কিম্বা বর্তমান বাংলাদেশের পাঁচ দশকের অধিককাল। তারা কখনও দ্বিজাতিতত্ত্ব, কখনও অধিকারের দর-কষাকষির আন্দোলনে মুসলিম বাঙালিদের জন্য স্বায়ত্তশাসন বা বর্তমান বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বকলমে বাঙালি ইসলামি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠাকরণের উদ্যোগের চেষ্টা। এ বিষয়টি কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভরশীল নয় – বা বিশেষ সরকারের উপরও এর দায় বর্তায় না। এটা হচ্ছে সমগ্র বাঙালি মুসলমান সমাজের মতামতের প্রতিফলন।এর ফলস্বরূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত সরকারের দ্বারাই বাংলাদেশের প্রধান শত্রু যুদ্ধাপরাধী, যারা জঘন্যতম অপরাধে অপরাধী তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন। কেন এই বিচারহীনতা? আর এর পিছনের কারণ এবং উদ্দেশ্যই বা কি ? একথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এরাতো পূর্বপাকিস্তানেরই বাঙালি মুসলমান, যারা ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিব তথা আওয়ামি লিগকে বিপুল সংখ্যক ভোটে জয়যুক্ত করে পাকিস্তানের ক্ষমতার আসনে বসতে সুযোগ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানের ক্ষমতা না পেলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী/প্রেসিডেন্ট হয়েও তিনি অপরাধীদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে ব্যর্থ হলেন। এটা কি সাধারণ ঘটনা ! বাংলাদেশে তো এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ, বিক্ষোভ দেখা গেল না, এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও ! যারা যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিলেন, তাদের আত্মীয়স্বজনরাও নিশ্চুপ থাকলেন।এটাই পাকিস্তানি ম্যাজিক, মুসলিম জাতীয়তাবাদ। কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ, বিবেচনাবোধ দিয়ে এটা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আজকের পাকিস্তানি ও বাংলাদেশী সমাজের দিকে ফিরে তাকালে এটা বুঝতে কোন অসুবিধা হয়না।বর্তমান বাংলাদেশে রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং ক্ষমতার রাজনীতির মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। ক্ষমতা দখলের জন্য রাজনৈতিক জোট গঠন গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে দেশে বিদেশে সব সময়ই আমরা দেখতে পাই। এমনকি নীতি আদর্শগত বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও অনেক দেশেই জোট সরকার চলছে। বাংলাদেশেও এর নজির রয়েছে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সম্ভবত জোট গঠন চুড়ান্ত পর্যায়ে এখনও পৌঁছেনি। মুক্তিযুদ্ধ বা কোন মতাদর্শগত ঐক্যের চেয়ে দেশের আর্থিক ও পরিকাঠামোগত প্রধান ইস্যু হলেও বিরোধী দলের ইস্যু ভিন্ন। তারা চাইছে ‘free and fair’ নির্বাচন, সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাহলে সমস্যা কোথায় ?বাংলাদেশে অবাধ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলির উপর, এখানে স্বতন্ত্র নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা সর্বজনবিদিত। এর প্রমাণ রয়েছে ১৯৭৩ সালের নির্বাচন থেকেই। তদুপরি বর্তমান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃ্ত্ব উত্তরাধিকারসুত্রে প্রাপ্ত। দলগুলির মধ্যে গণতন্ত্রের অপ্রতুলতা। সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এর প্রতিফলন স্পষ্ট। গণতান্ত্রিক দেশ বা সমাজে বড় ঘটনা হল নির্বাচনী প্রক্রিয়া, সেটাও এই প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। এটা মাথায় রেখেই বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়টি ভাবতে হবে। কোন দেশের সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।যে ‘বাঙালি মুসলমান জাতীয়তা’ দিয়ে প্রবন্ধটি শুরু হয়েছিল তার ফলাফল দিয়েই শেষ হচ্ছে। “অবশেষে ১৯৮৮ সালের ৭ই জুন এরশাদ রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতাকে চুড়ান্তভাবে সংবিধানে সন্নিবেশিত করে বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করার জন্যে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বটি পূর্ণ করলেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনী গৃহীত হল এবং তাতে বলা হল, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে ইসলাম’, তবে প্রজাতন্ত্রে শান্তি ও সম্প্রতির সঙ্গে অন্যান্য ধর্মও অনুশীলন করা যাবে।’৪ স্বাধীনতার সতের বছর পর একজন স্বৈরশাসক একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে দ্বিতীয়ও নয়, আরও নিম্নশ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেন। সেসময় শেখ হাসিনা বলেছিলেনঃ ‘রাষ্ট্রধর্ম বিল সর্বস্তরের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। স্বৈরাচারের ক্ষমতার মসনদ রক্ষার কূটকৌশল হিসাবে পবিত্র ধর্মকে ব্যবহারের চক্রান্ত চলছে।’ আর খালেদা জিয়ার বক্তব্যঃ ‘রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, এবং ধর্মের নামে জাতিকে বিভক্ত করে অনৈক্য সৃষ্টি ও জনগণকে ধোকা দেওয়ার অপচেষ্টা মাত্র।’৫অর্থাৎ, দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধানই একটা ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছিলেন যে, রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে সন্নিবেশিত করার মাধ্যমে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে, এবং এটা জাতিকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র। খালেদা জিয়া পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলেন আর হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী। দু’জন সিদ্ধান্ত নিয়ে রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতার এই বিষবৃক্ষটি সংবিধান থেকে কি উৎপাটন করতে পারতেন না? কিন্তু করেননি। এখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, এবং খালেদা জিয়া বিরোধী দলনেত্রী। এখনও এই কাজটি করা যায়। কিন্তু কেউই উদ্যোগ নিচ্ছেন না।”৬এটাই বাঙালি মুসলিম জাতীয়তা। জিয়া, এরশাদ, বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা তারা কেউ কি মুসলিম জাতীয়তার বাইরে? শেখ মুজিবই যখন বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হলেন – যার ডাকে এবং নামে মুক্তিযুদ্ধ, সে যুদ্ধে মতাদর্শের কোন সুস্পষ্টতা ছিল না। মূল লক্ষ্য ছিল দখলদার মুলশত্রু পাকিস্তানকে পরাস্ত করা। আমরাও সেই লক্ষ্য নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। কোন জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম আমাদের সামনে ছিল না। কোন জাতিরাষ্ট্র কি জাতীয়তাবাদ ছাড়া প্রতিষ্ঠা পায়? বাংলাদেশ একটি বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র। অর্থাৎ একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র। যেমন পাকিস্তান। এটা যারা অস্বীকার করতে চান, তারা ভাবের ঘরে চুরি করেন।   তথ্যসূত্রঃ১ মহিউদ্দিন আহমেদ, জাতিরাষ্ট্র ভাবনা এবং বুদ্ধিজীবী মানস, বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিঃ ধর্ম- সাম্প্রদায়িকতার সঙ্কট, জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, ঢাকা, বাংলাদেশ, ১৯৯৯, পৃঃ ২৬৪।২ ইবনে আজাদ, বাংলাদেশে সেকুলার বুদ্ধিজীবীদের সমস্যা, … পৃঃ ২৫৫।৩ মহিউদ্দিন আহমেদ, ঐ, পৃঃ ২৬৬।৪ আবেদ খান, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতা, ঐ, পৃঃ ২৫০।৫ দৈনিক সংবাদ, ঢাকা, বাংলাদেশ, ৮.৬.১৯৮৮।৬ ইত্তেফাক, ঢাকা, বাংলাদেশ, ৮.৬.১৯৮৮।

স্বাধীনতার পথে বাংলাদেশঃ অগ্নিঝরা মার্চ ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব

ডঃ আনন্দ বিকাশ চাকমা, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে উনিশ শ’ একাত্তরের মার্চ মাসের ঘটনাবলী খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অকস্মাৎ পহেলা মার্চে জাতীয় পরিষদের পূর্বঘোষিত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এ কারণে মার্চের শুরু থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। আন্দোলন সফল করতে ২ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত টানা হরতাল আহূত ও পালিত হয়। এ মার্চ মাসেই পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে প্রথম উড্ডীন হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, বাঙালি জাতি উপভোগ করে প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের শিহরণ জাগানো ভাষণ ও স্বাধীনতার মন্ত্রোচারণ, মার্চের গোড়া থেকেই বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী নেতৃত্বে পরিচালিত হয় বাঙালির সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন, এবং এই মার্চ মাসেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বস্তুত মার্চ ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে বাঁক বদলানোর সময়। মার্চে বাঙালি দেখিয়েছে তাদের ঐক্যবদ্ধ গণশক্তির জাগরণ, স্বাধীনতার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা। মার্চ জুড়েই সেনাবাহিনীর গুলিতে আত্মবলিদান দিয়েছে আন্দোলনকারী ছাত্র, শ্রমিক, যুবারা। পাকবাহিনীর ২৫শে মার্চের রাতের বর্বরতম গণহত্যায় প্রাণ দেয় অগণিত বাঙালি। ২৬শে মার্চ ভোরের আলো ফোটার আগেই বাঙালির ভাগ্যবিধাতা স্বাধীনতার মন্ত্রগুরু বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে। পরে পশ্চিম পাকিস্তানে অন্তরীণ করে রাখে নয় মাস ধরে। কিন্তু বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায়নি, বরং বাঙালি সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশমাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করেছে। তাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার ইতিহাসে মার্চ মাস আগুন ঝরা মার্চঃ দেশ পরিচালনার গণ-রায় প্রাপ্ত বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবকে ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত রাখার পাকি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার মাস, নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙালিকে শত্রুর অন্যায় জাতি-নিধনাভিযানের বিরুদ্ধে দুর্বার গণপ্রতিরোধের মাস।১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল। মহাকালের বিবেচনায় ২৩ বছর খুব বেশি বড় সময় নয়। পৃথিবীর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসেও এটি সবচেয়ে ছোট সময়। ভারতবর্ষেও ১৮৮৫ সালে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার বছর থেকে ১৯৪৭-এ স্বাধীনতা প্রাপ্তি পর্যন্ত স্বাধীনতার লড়াই চলেছে সুদীর্ঘ ৬২ বছর। জাপানের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, রাজনৈতিক দমনপীড়ন ও উপনিবেশায়নের বিরুদ্ধে কোরিয়ান জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কাল ছিল ২৬ বছর। কিন্তু বাঙালি মাত্র ২৩ বছরে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গেছে, এনেছে স্বাধীনতা। প্রতিষ্ঠা করেছে বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম স্বদেশ-বাংলাদেশ। এ যেন বিস্ময়কর অবিশ্বাস্য ঘটনা। মিটিকুলাস। হ্যাঁ বাঙালি অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। তার কারণ যুগ যুগান্তরে শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত বাঙ্গালির জাতীয় জীবনে ভাগ্যবিধাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল একজন সত্যিকারের জননেতা—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। খোকা, মুজিব ভাই, শেখ সাহেব, বঙ্গবন্ধু হয়ে যিনি এখন বাঙালির জাতির পিতার সসম্মানে সুপ্রতিষ্ঠিত। পশ্চিমবঙ্গের একজন ইতিহাসবিদ যথার্থই বলেছেন, ‘ভারতের ইতিহাস পড়লেই দেখা যায় যে বাংলা বরাবরই স্বতন্ত্র ও স্বাধীনচেতা। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বাংলার ও বাঙালির সফল ও সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সুভাষচন্দ্র। পরবর্তীকালে সে ঐতিহ্যকে শিরোধার্য করে পাকিস্তানের বাংলা-বিরোধিতার দুর্বিষহ শাসনের জাল ছিন্ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্রের প্রতিবাদী ও লড়াকু ঐতিহ্য থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দাসত্ব-বিরোধিতার ও বাঙালিকে ‘দাবায়ে রাখতে’ না পারার ঐতিহ্যে যাওয়াটা বাঙালির এক নিজস্ব উৎক্ষেপণ।’শেখ মুজিব ব্রিটিশ আমলে রাজনীতির পাঠ ও প্রশিক্ষণ লাভ করেন সোহরাওয়ার্দী, হাশিম প্রমুখ নেতাদের সান্নিধ্যে এসে। সাতচল্লিশে দেশভাগের সময় খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেন পূর্ব বাংলার বাঙালির অধিকার বঞ্চিত রাখার ষড়যন্ত্রকে। তাই তিনি শপথ নেন পশ্চিম পাকিস্তানিদের সকল ষড়যন্ত্রকে চুরমার করে দিয়ে বাঙালির জীবনে সত্যিকারের স্বাধীনতা এনে দেওয়ার। এর জন্য তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ভোগ, বিলাস, আরাম, আয়েশ, আমোদ-আহ্লাদ সব বিসর্জন দিয়ে বাঙালির মুক্তিপথের সন্ধানে সংগ্রামে নেমে পড়েন। কমরেড মনি সিংহ এর ভাষ্যমতে বঙ্গবন্ধু সেই ১৯৪৭ সাল থেকে স্বাধীনতার স্বপ্ন বুনেছিলেন। পরবর্তীকালে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান, ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা, ১৯৪৯ এ আওয়ামি মুসলিম লিগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেন। অতঃপর ১৯৫৩ তে পার্টির সাধারণ সম্পাদক, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট গঠনে জোরালো ভূমিকা গ্রহণ এবং নির্বাচনে বিজয়লাভ ও মন্ত্রিত্ব গ্রহণ। পরে ১৯৫৭ তে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে দলের সাংগঠনিক কাঠামো সুদৃঢ় করার নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ১৯৬৬-তে এসে আওয়ামি লিগের সভাপতি হিসেবে দলকে পুনরুজ্জীবিত করেন। একই বছর বাঙালির স্বাধিকারের সাঁকো ও মুক্তির সনদ খ্যাত ছয় দফা ঘোষণা করে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামকে নবচেতনায় উদ্দীপ্ত করেন। তাঁর ছয় দফা কর্মসূচি ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে। বাঙালি জনগণ ছয় দফাকে নিজেদের দুঃখ ও শাপ মোচনের মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে। ছয়দফাভিত্তিক আন্দোলনের জোয়ারে হতবিহ্বল হয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাঁকে কারারুদ্ধ করে রাখে বছরের পর বছর। এতেও বাঙালির স্বাধিকার লড়াইকে থামাতে না পেরে আইয়ুব সরকার বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের নীল নকশা হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে একটি দেশদ্রোহ মামলা দায়ের করে। কিন্তু ততদিনে বাঙালি জনগণ তাদের নেতাকে চিনেছে। শেখ মুজিব দেশদ্রোহী নন, দেশপ্রেমিক। তারা বুঝেছে শেখ মুজিব একজন জননায়ক; বাঙালি জাতির ঐক্য, শক্তি ও সাহসের ঠিকানা। তাঁকে মুক্ত করতেই হবে। শুরু হয় দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান। আইয়ুব হার মানলেন। শেখ মুজিবকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। বাঙালি ফিরে পেল তাদের প্রিয় নেতাকে। ভালবাসায় সিক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করলো লাখো মানুষের জনসভায়। বিদায় নিলেন আইয়ুব; শেখ মুজিবের নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব তখন অনন্য উচ্চতায়। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার মানুষ এখন তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ । তাঁর বজ্রকণ্ঠই সমগ্র জাতির কণ্ঠস্বর। এমন ঐক্য বাঙালি ইতিপূর্বে দেখেনি। স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার চেতনা এখন বাংলার ঘরে ঘরে। মানুষের মুখমণ্ডল ভিন্ন, চেতনায়, লক্ষ্যে, স্বার্থে সবাই যেন শেখ মুজিবের প্রতিচ্ছবি।এ সময় এল সত্তরের নির্বাচন। ইয়াহিয়ার ঘোষিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বাংলার অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ধন্দে পড়ে গেল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কৌশল সবসময় ভিন্ন। তিনি নির্বাচনকেই স্বাধীনতা অর্জনের পথে হাতিয়ারে পরিণত করলেন। তিনি নির্বাচন করলেন। ছয় দফাকে নির্বাচনী ইশতেহারে রূপান্তর করলেন। এ পথে ও কৌশলে আসলো বাঙালির নিরঙ্কুশ বিজয়। বঙ্গবন্ধু সফল হলেন। এখন পার্লামেন্টে বসে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন এবং দেশ পরিচালনার দায়িত্বগ্রহণ। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন ভুট্টো, ইয়াহিয়াসহ পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক-অসামরিক এস্টাবলিশমেন্ট। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দমবার পাত্র নয়। বাঙালি ততক্ষণে যে কোন কঠিন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। শুধু দরকার প্রিয় নেতার নির্দেশনা। ১লা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া অধিবেশন স্থগিত করলেন। বাঙালির বুঝতে বাকী রইল না। সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না। ইয়াহিয়ার ঘোষণার প্রতিবাদে ২ ও ৩ মার্চ সারাদেশে ঘোষিত হল হরতাল। পালিত হল সর্বাত্মক হরতাল। আর সিদ্ধান্ত হল ৭ই মার্চ পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষিত হবে। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে লাখো মানুষের সমাবেশে একসভা, একটেবিল, একনেতার ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ। তাঁর মুখ থেকে, তাঁর অন্তরাত্মা থেকে বেরিয়ে এলো সেই অমর পঙক্তিঃ ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’মার্চ জুড়ে সামরিক সরকার দেয় বিধি অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সরকার দেয় অসহযোগ আন্দোলনের দফার পর দফা নির্দেশনা। এর মধ্যে ইয়াহিয়া খান ২৫শে মার্চ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর শর্ত সাপেক্ষে অধিবেশন বসার কথা বললেন। ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ সহচরসহ ঢাকা এলেন। শুরু করলেন ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে প্রহসনমূলক সংলাপ। বাংলাদেশের মানুষ যে কোন চরম ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। অবশেষে ইয়হিয়া খান কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকা ত্যাগ করেন। এভাবে ২ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে চলে বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন তথা স্বাধীনতার অভিযাত্রা। বলতে গেলে পুরো …

স্বাধীনতার পথে বাংলাদেশঃ অগ্নিঝরা মার্চ ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব Read More »

কুকি বিদ্রোহ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ভারত একসাথে কাজ করবে

।।শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। (১) সশস্ত্র কুকি বিদ্রোহ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ভারত একসাথে কাজ করবে। সম্প্রতি ভারতের মিজোরাম ও বাংলাদেশ সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেএনএ (কুকি চীন ন্যাশনাল আর্মি)-র তৎপরতায় ঢাকা ও দিল্লি নড়েচড়ে বসছে। বন্ধুবর সেলিম সামাদ-র এ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ ভারতের ১লা আগষ্ট ২০২৩ ‘ইন্ডিয়া ন্যারেটিভ’-এ ছাপা হয়েছে, উৎসাহীরা তা পড়ে নিতে পারবেন, কিন্তু আমি ভাবছি, নুতন করে কুকিদের তৎপরতার সাথে নির্বাচন জড়িত না-তো? ‘ইউ নেভার নো’! ২০২৪-এ বাংলাদেশ ও ভারতে সাধারণ নির্বাচন। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব, শেখ হাসিনা-মোদী চমৎকার সম্পর্কের কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আইএসআই বা তাদের বন্ধুরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারছে না। আপাতত: নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই অঞ্চলকে ‘অস্থিতিশীল’ করার একটি প্রচেষ্টা দৃশ্যমান। মোদির আমেরিকা সফরকালে টের পাওয়া যায় যে, একটি শক্তিশালী লবি মোদিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। একই লবি শেখ হাসিনাকেও হটাতে সচেষ্ট। দু’জনকে না সরাতে পারলেও অন্তত: একজনকে ঘায়েল করতে পারলে তারা কিছুটা সফল হবে। শেখ হাসিনা-মোদী বা বাংলাদেশ-ভারত এটি জানেন, তাই তারা এতদঞ্চলে ‘সন্ত্রাসবাদ’ যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে তার জন্যে একসাথে কাজ করতে আগ্রহী, এবং এটি দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট। (২) মাত্র সেদিন ১৪জন কংগ্রেসম্যান জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে এক চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বহিস্কার করা এবং সামনের নির্বাচনটি যাতে জাতিসংঘের তত্বাবধানে হয় সেজন্যে উদ্যোগী হবার আহবান জানিয়েছেন। মিডিয়ায় এটি ফলাও করে এসেছে। জাতিসংঘে কর্মরত একজনের সাথে এনিয়ে কথা তুলতে তিনি বললেন, ‘দিজ ইজ নট দি ওয়ে’। বললেন, জাতিসংঘ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মত এটি চলে। তবে তিনি বলেন, যাঁরা এসব লবিং করছে তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী, এবং তাদের অর্থবিত্ত আছে। ইতিপূর্বে ঢাকায় এক ডজন রাষ্ট্রদূত ‘হিরো আলম’কে নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এসব চিঠিপত্র কেন, এমত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট জানালেন, ‘উনি তোমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকলে, তোমরা আরও চিঠিপত্র পাবে’। বাংলাদেশে কূটনীতিকরা কিন্তু ভেতরে ভেতরে একই কথা বলছেন। এদিকে এমিনিস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগের সমালোচনা করেছে। (৩) নির্বাচন আসছে, আমাদের বাম নেতারা আবার গা-ঝাড়া দিয়ে উঠছেন, কারণ মনোনয়ন লাগবে, ‘নৌকা’ প্রতীক না পেলে জেতা যাবেনা। রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ও দিলীপ বড়ুয়াসহ ১২ জন বাম নেতা ৭দিন চীন ঘুরে এসে ফরমান দিয়েছেন, মার্কিন চাপ মোকাবেলায় চীনকে পাশে রাখা দরকার। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে বামদের সমস্যা হলো, এঁরা দেশে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার, এবং চীনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তবে এদের প্রায় সবার ছেলেমেয়ে আমেরিকায় থাকে। নেতাদের বয়স হয়েছে, বর্ষীয়ান এসব নেতারা আমেরিকায় এসে বিনে পয়সায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে যান, কিছুটা সময় অবসর কাটিয়ে যান। আমার জানতে ইচ্ছে করে, তাঁদের এ সফরের খরচটা কারা দিয়েছেন? যাহোক, চীনের বিশেষ দূত ‘নীরবে’ ঢাকা সফর করে গেছেন। বামরা ও ইসলামী মৌলবাদীরা সব কাজ ‘নীরবে’ বা তলে তলে করতে পছন্দ করেন। (৪) বিএনপি’র সাম্প্রতিক কর্মসূচি পালনকালে জাতি ‘গয়েশ্বর’ নাটক দেখলো। ভিডিওতে দেখা গেলো ধাওয়া খেয়ে তিনি পড়ে যাচ্ছেন, পুলিশ তাঁকে উঠিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তী দৃশ্যে দেখা যায়, তিনি ডিবি প্রধান হারুনের অফিসে ‘লাঞ্চ’ করছেন, হারুন যথেষ্ট যত্নআত্তি করছেন। এই ভিডিও দেখে গয়েশ্বর বললেন, আমি শুধু হালকা সবজি ও রুই মাছ খেয়েছি। তিনি অভিমানের সুরে বলেছেন, আমাকে খাইয়ে ভিডিও প্রকাশ ‘নিম্নরুচির’ পরিচায়ক। এত খাতির দেখে নিন্দুকেরা হয়তো অন্যকথা বলছেন, তাই তিনি আবার বললেন, ‘গয়েশ্বরকে কিনতে পারে, এতটাকা সরকারের কাছে নেই’! পরে অবশ্য, সাংবাদিকদের ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আটক নয় বরং হামলা থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য হেফাজতে নিয়েছিলপুলিশ। জাতি আশা করবে, ডিবি হারুন, ভবিষ্যতে অন্য নেতাদের এমনি সমাদর করে লাঞ্চ খাওয়াবেন। পাদটীকা: মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘ডেঙ্গু বাংলাদেশ থেকে আসছে’। দিদিকে বলা যায়, আমাদের ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান আপনি নিয়েছেন, এবার ডেঙ্গু নেন!

ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশ – ভারতের টাকা ও রুপিতে বৈদেশিক বাণিজ্য

শঙ্কর সরকার, বাংলাদেশ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের একটি যুগান্তকারী অধ্যায় শুরু হয়েছে দুই দেশের মধ্যে ডলারের পাশাপাশি টাকা ও রুপি দিয়ে বাণিজ্যিক লেনদেন পদ্ধতি শুরু করার মাধ্যমে। বাংলাদেশ যদি কোনো পণ্য অন্য যে কোন দেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে (লেটার অব ক্রেডিট) আমদানি করতে চায় তাহলে ডলার দিয়ে কিনতে হবে এবং পাশাপাশি বাংলাদেশ যদি কোন পণ্য যে কোন দেশে রফতানি করতে চায় তাহলে ডলারের মধ্যমে কেনা-বেচা করতে হবে। অর্থাৎ বৈদেশিক বাণিজ্য করতে আমেরিকান ডলার একটি অতি অপরিহার্য মুদ্রা। এই ডলার যদি বাজারে কম থাকে তাহলে সকল দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ক্ষতি হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে মার্কিন ডলারের বিকল্প যদি আমদানি ও রপ্তানিকারক দেশ দুটি নিজস্ব মুদ্রার মাধ্যমে আমদানি রফতানি বাণিজ্য করতে পারে তাহলে সেটা উভয় দেশের জন্য মঙ্গলজনক। তাতে ডলারের উপরে নির্ভরশীলতা অনেকটা কমে যাবে। ব্যতিক্রম ছাড়া বিশ্বের সব দেশের সাথে বাংলাদেশ এতদিন ডলারেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করে আসছে। ব্যতিক্রমের মধ্যে যেমন চীনা মুদ্রা ইউয়ানে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারেন। ভারত অবশ্য ডলারের পাশাপাশি নিজস্ব মুদ্রা রুপিতে অনেক দেশের সাথে বাণিজ্য শুরু করেছে অনেক আগেই। তবে দেশটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সাথে শুরু করেছে রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। ভারত ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকেই রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করার কার্যক্রম উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের উভয় সরকারের পক্ষ থেকে আপাতত ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে এলসি খোলার মাধ্যমে বানিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পরে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তবে মার্কিন ডলারে বাণিজ্য কার্যক্রম চলার বিষয়টি আগের মতোই উন্মুক্ত থাকবে। ভারতের বিশ্ববিখ্যাত টাটা মোটরসের বাংলাদেশী এজেন্ট মেসার্স নিটল মটরস্ রুপিতে এলসি খোলার মাধ্যমে ভারতীয় গাড়ির প্রথম চালান বাংলাদেশে আমদানী করে এই যুগান্তকারী বাণিজ্যিক কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন। ভারতের সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্য করার আলাপ আলোচনা চলছে এক যুগ ধরে। তবে কোভিড শুরু এবং রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও ডলার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এ অবস্থায় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে গত বছরের ডিসেম্বরে যখন দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয় তখন ভারতের পক্ষ থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশী মুদ্রা টাকা ও ভারতীয় মুদ্রা রুপি ব্যবহাররের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে প্রস্তাব নেওয়া হয়। এরপর ভারতের বেঙ্গালুরুতে গত ২৪-২৫শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জি ২০ ভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরদের সম্মেলনের এক ফাঁকে দুই দেশের গভর্নরদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয় গভর্নর এই কাজটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে একমত হন। ডলার বা অন্য কোন মুদ্রা এড়িয়ে দুই দেশ যখন নিজেদের মধ্যে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্যিক কাজকর্ম পরিচালনা করাকে আর্থিক পরিভাষায় বলে কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য করতে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাঙ্ক ভারতের ষ্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এস বি আই) এবং আই সি আই সি আই ব্যাংক কিছু দিন আগে হিসেব খোলার অনুমতি দিয়েছে। এ হিসেবের নাম নষ্টর হিসাব। নষ্টর হিসাব খোলা নিয়ে বাংলাদেশের ও ভারতের চার ব্যাঙ্কের মধ্যে চিঠি চালাচালি এখনো চলছে বলে জানা গেছে। এক দেশের এক ব্যাঙ্ক অন্য দেশের কোন ব্যাঙ্কে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের হিসেব খুললে সেই হিসেবকে নষ্টের হিসেব বলা হয়। অনুরূপভাবে বিদেশের কোন ব্যাঙ্ক যদি বাংলাদেশের কোন ব্যাঙ্কে একই উদ্দেশ্য হিসেব খুলে থাকে তাকে বলা হয়েছে ভষ্ট্র হিসেব। বাংলাদেশ ইস্টার্ন ব্যাঙ্ক ও সোনালী ব্যাঙ্কের মাধ্যমে আপাতত রুপিতে এলসির মাধ্যমে ভারতের সাথে বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্যে আমদানি রপ্তানি চলবে পরে অন্যান্য সিডিউলড ব্যাংকের মাধ্যমেও রুপিতে ভারতের সাথে আমদানি রফতানি বাণিজ্য বাংলাদেশের সাথে ভারতের চলবে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থাৎ রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই ) ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ইস্টার্ন ব্যাংকের নষ্টর হিসাব খোলার অনুমতি দিয়েছে। ঠিক একইভাবে হিসাব খুলতে সোনালী ব্যাংক আরবিআইয়ের অনুমতি পেতে পারে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে। আপাতত ভষ্ট্র হিসেব খোলার দিকটি বিবেচনায় থাকছে না বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূএগুলি জানায়। রুপির পাশাপাশি বাংলাদেশের মুদ্রা টাকাও যখন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে তখন ভষ্ট্র হিসেব খোলার বিষয়টি আসবে। কার্যক্রমটি ঢাকাতে উদ্বোধন করেন উভয় দেশের গভর্নরগন। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশ পরস্পরের সঙ্গে আলাপ আলোচনা, পরীক্ষা নিরীক্ষা, এবং সুবিধা অসুবিধা যাচাই করে রুপিতে এলসি খুলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হল এক নতুন পদ্ধতিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী 2021-22 অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট আট হাজার নয়শ ষোল কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে, এর মধ্যে এক হাজার তিনশ ঊনসত্তর কোটি ডলারের পণ্যের আমদানি করে ভারত থেকে। একই অর্থ বছরে বাংলাদেশ ভারতে রফতানি করে দুইশ কোটি ডলারের পণ্য। আমদানি রফতানি মিলিয়ে উভয় দেশের মধ্যে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয় ওই অর্থ বছরে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের একই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ভারত চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ও ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকিন আহমেদ এ নিয়ে বলেন, ডলারের বিকল্প ভাবনা করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। ভারতে আমরা যে ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করি সেটা রুপি দিয়ে করা যাবে। তবে খাদ্য পণ্যসহ অতি প্রয়োজনীয় পণ্যকে রুপিতে আমদানি করতে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। অবশ্য ডলারের সঙ্গে রুপির বিনিময়ে হার কত হবে, সেটা কি বাজার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্য বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত নয় ভারতীয় রুপি, আবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রয়েছে বড় ধরণের বাণিজ্যিক ঘাটতি। ফলে রুপিতে লেনদেন করতে বাংলাদেশ কোন ধরণের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে কি না এমন প্রশ্নও রয়েছে। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক কাজকর্ম যেহেতু শুরু হয়েছে তাই এই পদ্ধতি শুধু পণ্য বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা, ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবহার হবে। বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের প্রায় কেন্দ্রস্থলে। বাংলাদেশ সরকার তার বিশ্ব বাণিজ্য অত্যন্ত শক্তিশালী করতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি চালনা ও পায়রা বন্দর আরও বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ও দ্রুত গতিশীল বন্দর তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া স্থল ও বিমান বন্দরগুলোর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করার জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশ আয়তন অনুযায়ী একটি ছোট দেশ হলেও জনসংখ্যা ১৫, ২০ টি মধ্যপ্রাচ্যের অথবা ইউরোপীয় দেশগুলোর সমান। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের একটি বড় বৈদেশিক বাণিজ্য থাকবে সবসময়। এখন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ভারতের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর গত ১৯শে জুন দেশের মুদ্রানীতি প্রণয়নের সময় বলেছেন টাকার পাশাপাশি রুপিতে ব্যবহার করা যাবে, পে কার্ড নামে এমন একটি ডেবিট কার্ড নিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। বাংলাদেশিরা ভারতের যে কোন স্থানে ঘুরতে গেলে এ কার্ড দিয়ে লেনদেন করবেন এবং কার্ডটি চালু হলে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ডলার খরচ কমবে। গভর্নরের মতে কেউ ভারতে ভ্রমণের জন্য গেলে ভ্রমণকারীদের ১২ হাজার ডলারের যে ভ্রমণ কোটা আছে সে পরিমাণ অর্থ তিনি রুপিতে কেনাকাটা …

ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশ – ভারতের টাকা ও রুপিতে বৈদেশিক বাণিজ্য Read More »

আপনি বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দেবেন নাকি পূর্ব-পাকিস্তানের পক্ষে?

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক ক’দিন আগে বলেছিলাম, এবার নির্বাচন হবে অবাধ ও সুষ্ঠূ, নির্বাচনের পর বিতর্ক হবেনা বা সবাই ফলাফল মেনে নেবেন এবং শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসবেন। অনেকের কাছে এ হিসাবটা মেলানো বেশ কষ্টকর। কেউ কেউ জানতে চাচ্ছেন, কিভাবে সম্ভব? কিছু মানুষ ‘গালাগালি’ দিচ্ছেন। রাজনৈতিক মঞ্চের হিসাবটা বড়ই জটিল, এজন্যেই হয়তো বলা হয়, রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু-মিত্র নেই? রাজনৈতিক আদর্শের কথা ভাবছেন? না, ওটি এখন কোথাও নেই, যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকাই এখন আদর্শ! তবু যখন প্রশ্ন উঠবে, বা ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, আপনি বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দেবেন নাকি পূর্ব-পাকিস্তানের পক্ষে? সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনগুলো মোটামুটি সুষ্ঠূ হয়েছে বা হচ্ছে, বিএনপি এতে অংশ নিচ্ছেনা বটে, কিন্তু আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রার্থীদের ভোট দিচ্ছে, ভেতরে ভেতরে প্রচারণা চালাচ্ছে, ফলাফল সবার জানা। ছয় মাস আগে যাঁরা জোর দিয়ে বলতেন যে, আওয়ামী লীগের জয়ের কোন সম্ভাবনা নেই, এখন তারাই বলছেন, আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। এদের যুক্তি হচ্ছে, বাংলাদেশের মত একটি দেশে, যেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন সবাই সরকারের পক্ষে এবং জনগণ বিভক্ত, সেখানে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি দলের পক্ষে যেতে বাধ্য। বিএনপি সমর্থক ভাসমান জনতা, জামাতের ক্যাডার ভিত্তি হয়তো উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে, নির্বাচনের ফলাফলে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনা। বাংলাদেশে সাধারণ ভোটারদের একটি ‘আজব’ মনস্তাত্ত্বিক দর্শন আছে, এঁরা নিজের ভোটটি ‘নষ্ট’ (!) হতে দিতে রাজি নন! অর্থাৎ যাঁরা জিতবে, ভোট তারাই পাবেন। বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে ‘এন্টি-গভর্মেন্ট’, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাগ-ক্ষোভ তাই বেশি। সরকার যেমন যথেষ্ট ভাল কাজ করেছে, অপকর্মের তালিকা ততটা ছোট নয়! ১৯৭৩-১৯৭৫-এ যাঁরা জাসদ-এর রাজনীতি দেখেছেন, তাঁরা জানেন, ঐসময় জাসদ ফুলে-ফেঁপে উঠেছিলো, কারণ তখন রাজাকার, আলবদর, স্বাধীনতা বিরোধী, মৌলবাদী গোষ্ঠী, পাকিস্তানপন্থী সবাই জাসদে ঢুকে ‘দেশপ্রেমিক’ সেজে গিয়েছিলো। বর্তমান আওয়ামী লীগের অবস্থাও অনেকটা একই? সবাই এখন আওয়ামী লীগ! সবাই এখন বঙ্গবন্ধু-প্রেমিক। টঙ্গীর নির্বাচন সুষ্ঠূ হয়েছে। টঙ্গীর নির্বাচন থেকে কি আওয়ামী লীগ শিক্ষা নেবে? মজার ব্যাপার হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকার যে তিনজনকে খুব কাছে টেনে নিয়েছে, এদের কেউ যৌবনে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ করেনি। এই তিনজনের একজন বাদে বাকি দু’জন ব্যর্থ। দেশেও একই অবস্থা, জামাত থেকে এসে যিনি আওয়ামী লীগের কোন না কোন ইউনিয়ন বা মহকুমার প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হয়েছেন, তাঁর দলীয় আনুগত্য তো ছাত্রলীগের একজন কর্মীর মত হবার কথা নয়? দোর্দন্ড প্রতাপশালী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে যখন ফেলা যাচ্ছিলো না, তখন একদল ‘স্তাবক’ সেই কাজটি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু’র জন্যে একই কথা প্রযোজ্য। বঙ্গবন্ধু’র বৃদ্ধ পিতা মারা যাওয়ার পর মুস্তাক আহমদ যত কেঁদেছিলেন, বঙ্গবন্ধুও ততটা কাঁদেননি। বঙ্গবন্ধু নিহত হবার সময় দলের যে অবস্থা ছিলো, এখনো অবস্থাটা প্রায় একই? তফাৎ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু সবাইকে বিশ্বাস করতেন, রাজনৈতিক পোড় খাওয়া শেখ হাসিনা কাউকেই বিশ্বাস করেন না! দলের অবস্থাটা তিনি জানেন বলেই এখন দলকে ‘ট্র্যাক-এ’ আনার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে সুফল পেতে শুরু করেছেন। স্থানীয় নির্বাচনগুলো এর প্রমাণ। বিএনপি ফ্যাক্টর নয়, বিএনপি-জামাত চেষ্টা করছে গণ-অসন্তোষ নিজেদের পক্ষে টানতে, যা স্বাভাবিক। বিএনপি ভাবছে, আমেরিকা তাদের উদ্ধার করবে। এটি ভ্রান্ত ধারণা, বাইডেন গিয়ে তারেককে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেনা, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবেনা। নুরু-কিবরিয়া ঝগড়ার মত দেশবাসী ফখরুল-রিজভী’র ‘বাহাস’ দেখবেন না? মোদীর আমেরিকা সফরে বোঝা গেছে যে, শেখ হাসিনা’র সরকারের বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, তা একই সাথে মোদীরও বিরুদ্ধে, সুতরাং এই দুই নেতা-নেত্রী একত্রে তা প্রতিহত করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতার পক্ষে দু’জনকেই জিতে আসতে হবে। ইসলামী শক্তির একটি অংশ এবার সরকারের সাথে আছে, এঁরা ভোট না দিলেও বিরোধিতা করবে না? সফলতা-ব্যর্থতা নিয়েই একটি সরকার চলে! এতকাল আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা হলেও এখন সফলতা আলোচনায় আসছে। আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে হয়তো এ সময়ে তেমন বিশাল পার্থক্য নেই, কিন্তু বঙ্গবন্ধু’র সাথে জিয়ার তুলনা যেমন চলেনা, শেখ হাসিনা’র সাথেও তেমন খালেদা জিয়ার তুলনা অর্থহীন। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশ অচল, খালেদা জিয়া-তারেক রহমান থাকা পর্যন্ত বিএনপি’র ভবিষ্যৎ অন্ধকার! শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি নয়! সরকার এবার নির্বাচনটি সিরিয়াসলি নিয়েছে। সরকারের লোকজন সর্বত্র পৌঁছাচ্ছেন। ডিজিটাল আইনের প্রতি ক্ষোভ আছে, আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘শিগগিরই সংশোধন আসছে’। হিন্দুরা সুরক্ষা আইন ও কমিশন চাচ্ছে, হয়তো সেটি পাবে। আওয়ামী লীগ নেতারা মুখে কিছুটা লাগাম টেনেছেন। অর্থাৎ ইতিবাচক অনেক কিছু ঘটছে, আরো ঘটবে। ঘটুক। বাংলাদেশ জিতুক। পূর্ব-পাকিস্তান হারিয়ে যাক। মিডিয়ায় দেখলাম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হজ্ব করতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন, সুসংবাদ যে তাঁকে পাওয়া গেছে। নির্বাচনের আগে যদি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হারিয়ে না যান, বা তাঁরা মাঠে থাকেন, তাহলে জয় পাওয়া খুব একটা কঠিন হবেনা। –

`পাকিস্তানি প্রত্যয় এখনও সজীব’ কেন ?

বিমল প্রামাণিক বড় দেশের পাশাপাশি ছোট দেশ থাকলেই যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে না ইতিহাসে এমন কোন স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম দেখা যায় না। আবার পড়শি দেশের সঙ্গে বৈরি সম্পর্কের দৃষ্টান্তও পৃথিবীতে বিরল নয়। যেমন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। দেশভাগের কারণে সৃষ্ট দুটি দেশ জন্মলগ্ন থেকেই শত্রুভাবাপন্ন হওয়ার প্রধান কারণ ধর্মীয় ভিন্নতা, তিক্ততা। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পঁচাত্তর বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও কি শত্রুতার পারদ কিছুমাত্র নীচে নেমেছে? এবিষয়টি নিয়ে নানা বিশ্লেষণ, তথ্য এবং ইতিহাস আমাদের দেশের নাগরিকদের জানা থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ইতিহাস সরল রেখায় চলে না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে যে নতুন দেশ গঠিত হল – সে দেশ পাকিস্তান আন্দোলনের মূল ভাবনা দ্বিজাতিতত্ত্বই শুধু অস্বীকার করলো না, বাঙালি জাতীয়তাবাদকেই আঁকড়ে ধরল। পাকিস্তান আন্দোলনের প্রাক্কালে বাঙালি মুসলমান নেতৃত্ব ইসলামি রাষ্ট্রের মোহে মুসলমানকে বাঙালি জাতিসত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করেই শুধু ভাবতে শুরু করলো না, বাঙালি হিন্দুদের পূর্ব-পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত করা তাদের অন্যতম প্রধান কাজ বলে মনে করতে লাগলো। সরকারিভাবে হিন্দু বাঙ্গালিরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়ে গেল। ভারতবর্ষকে প্রধান শত্রুতে পরিণত করে ফেলতেও ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তানের চিন্তা চেতনায় আটকাল না। অথচ বিরাট সংখ্যক মুসলমান বাঙ্গালি-সহ ভারতে থেকে গেল ভারতের অন্যান্য নাগরিকের সমঅধিকার নিয়ে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও তাদের নাগরিক অধিকার খর্ব হল না। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে স্বাধীন বাংলাদেশের মুসলমান নেতৃবৃন্দ এবং জনগণ বাঙালি জাতিসত্ত্বা-ভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ কতটুকু মেনে নিতে পেরেছিলেন? মাত্র চারবছরেরও কম সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা ও পরিচালনাকারী মূল নেতৃবৃন্দকে কীভাবে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হল? যারা ক্ষমতা দখল করলো তারাও তো বাঙালি মুসলমান! জাতীয়তাবাদী ভাবধারা থেকে রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা ইসলামি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করল, অনেকে বলেন পাকিস্তানিকরণ – তারাও তো বাঙালি মুসলমানই! তবে কি বাঙালি জাতিসত্তাভিত্তিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমানের সমর্থন ছিল না ? না কি তারা পাকিস্তানপন্থী মুসলমানদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন? মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে একটি বড় সংখ্যক বাঙালি মুসলমান যে পাকিস্তানি সেনা শাসন ও অত্যাচারের সহযোগী হিসাবে পূর্ব-পাকিস্তানকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল – আমরা তার প্রত্যক্ষদর্শী। তারা মোটেই কম শক্তিশালী ছিল না। হেন গর্হিত অপরাধ নেই যা তারা করেনি। স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিত পরে বাংলাদেশ সরকার ঐ সকল পাকিস্তানি দালাল ও ঘোরতর যুদ্ধাপরাধীদেরকে হাতে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিচার করতে ব্যর্থ হল কেন? সেই সব যুদ্ধাপরাধীর তালিকাই বা জনসমক্ষে আনা হল না কেন? সেইসব পাকিস্তানি বাঙালি সেনা, পুলিশ, রাজাকার, আলবদর প্রভৃতি ও নয়মাস পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে রত দালালগণ, মুক্তিযুদ্ধের যারা প্রধান শত্রু ছিল – তাদের বিচার-বিবেচনা ব্যতিরেকে সাধারণ ক্ষমতার আওতায় এনে নতুন স্বাধীন দেশের সমাজ-সংস্কৃতি–প্রশাসন এবং সর্বোপরি নীতি-আদর্শকে কি রক্ষা করা সম্ভব ছিল? না, তা যে কত বড় ভুল ছিল ১৯৭৫ সালের মধ্যেই নেতৃবৃন্দের সমূলে উৎপাটন ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পাকিস্তানি ভাবাদর্শে পুনরায় প্রতিষ্ঠাকরণ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও কি বাঙালি তা থেকে শিক্ষা নিতে পেরেছে? আজকে অর্ধ-শতাব্দি পেরিয়ে এসেও আমরা কি দেখছি – তা বলার প্রয়োজন আছে বলেই মনে করি। “Frequent failure of living with a multicultural ethos has jeopardized communal harmony, and defaced the secular fabric of the society. Islamization has always been, historically a `power concept’. When a secular forces come forward to protect social harmony on the basis of a dominant culture with a highly powerful assimilating forces, forces of Islamization might claim their due and finally crave for a division of the same, assertive secular society.” … After the assassination of Sheikh Mujib in 1975, the relevance of the very Bangladesh concept of 1971 was lost, and Bangladesh became a state tilting towards Islamization. All this shows that the emergent idea of a secular Bangladesh, partially apparent in 1971, was not only missing but was probably mistaken.”1 মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে যে আদর্শের দোদুল্যমানতা, অর্ধশতক অতিক্রম করেও তার অবসান তো ঘটলোই না – বলা যায় আরও জটিলতা বেড়েছে। নানা স্বার্থবাদী রাজনৈতিক শক্তি, যারা মুক্তিযুদ্ধের ঘোরতর শত্রুতা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরঞ্চ অতি দ্রুত বাংলাদেশকে পাকিস্তানিকরণের স্বপ্নে বিভোর ছিল, তারাই আজকে গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে অবতীর্ণ । গণতন্ত্র হত্যার দায় যারা কোন যুক্তিতেই এড়িয়ে যেতে পারে না – তাদের দ্বারা নাগরিক এবং মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বিশ্বাসযোগ্য হবে কেন? তাদের পূর্বসূরি, যারা বাংলাদেশের মানুষের নিকট অপরিচিত নয়, তাদের দুষ্কর্মের ইতিহাস — বাঙালিদের স্মৃতিশক্তি যতই ক্ষণস্থায়ী হোক –- তা এত অল্প সময়ে মুছে ফেলা যাবে কি? জনগণের গণতন্ত্র চর্চার দাবির মান্যতা যদি তৎকালীন পাকিস্তানে স্বীকৃতি পেত, তবে উপমহাদেশের মানচিত্র ভিন্নতর হতে পারতো। বর্তমানের শাসক সম্প্রদায় একথা অনুধাবন করে বলেই বাংলাদেশের মানুষের এখনও সরকারের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে। যেহেতু জনগণই গণতন্ত্রে ক্ষমতার চাবিকাঠি, তাই তাদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। বর্তমান আওয়ামি লিগ সরকার বার বার একথা উচ্চারণ করায় জনগণের আস্থা অটুট থাকবে একথা আশা করা অমূলক নয়। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আজকে জোরগলায় একথা বলছেন যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পূর্ব-পাকিস্তানে বর্বর গণহত্যা চালিয়ে পাকিস্তানের ইতিহাস কলঙ্কিত করেছিল। যদিও ইমরান খান বাহান্ন বছর পর একথা বলেছেন ব্যক্তিগত স্বার্থে। পাকিস্তানি মুসলমান নেতৃবৃন্দ একথা কখনও স্বীকার করেনা। এটা মুসলমান আক্রমণকারীদের জেহাদের অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের অঙ্গ। আজ যারা বাংলাদেশে তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রবক্তা সেজে মঞ্চে নাচনকোঁদন করছে তারাই তো উনিশশো একাত্তরের পাকিস্তানি কোলাবরেটরদের উত্তরসূরি। ইতিহাস থেকে একথা কি মুছে ফেলা হয়েছে না মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ? ‘পাকিস্তানি প্রত্যয় এখনও সজীব’ প্রবন্ধে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন লিখেছেন, “১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ মুসলিম লীগই দেশ শাসন করেছে এবং এ প্রত্যয়টি বাঙালির মানসিকতায় প্রোথিত করেছে। মুসলিম লীগের অবসান হয়েছে, তারা আর ফিরে আসেনি কিন্তু এ প্রত্যয়টির প্রভাব বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে যথাযথভাবে আছে। বঙ্গবন্ধু এ প্রত্যয় থেকে বেরুবার চেষ্টা করেছেন, জয়লাভও করেছেন। কিন্তু তাকে হত্যার পর যখন বামপন্থী, আওয়ামি লিগার, মুক্তিযোদ্ধারা জিয়ার দলে ভিড়লেন তখন বোঝা গেলো, ১৯৭১ সালও বাঙালিকে এ প্রত্যয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে পারেনি।’’২ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন তার লেখায় যেসব জায়গায় ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, তখন কি তারা দ্বিজাতিতত্ত্বের উপর প্রত্যয় হারিয়ে ফেলেছিলেন ? এমনকি শেখ মুজিবসহ মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতৃবৃন্দ নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া সত্ত্বেও যখন দল-মত নির্বিশেষে এমন কি যারা বাংলাদেশ মুক্ত করার জন্য লড়াই পর্যন্ত করেছিলেন তারাও বাংলাদেশের প্রতি প্রত্যয় দেখাতে ব্যর্থ হলেন কেন? এবিষয়ে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর ‘জীবনের স্মৃতিদীপে’ গ্রন্থে অনেক প্রণিধানযোগ্য মন্তব্য করেছেন, তা থেকে একটি উদ্ধৃতি করা হলঃ “তাঁর (বিপ্লবী ত্রৈলক্যনাথ চক্রবর্তী) গ্রন্থে (জীবনস্মৃতি) তিনি হিন্দুদের প্রতি মুসলমান সরকার ও সম্প্রদায়ের যে অত্যাচারের বিবরণ দিয়েছেন – তারজন্য পূর্ববঙ্গের মুসলমানরাই যে দায়ী এ সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই। পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার এবিষয়ে হয়ত উদাসীন ছিলেন, এবং তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে এবিষয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের পরোক্ষ সহানুভূতি ছিল তথাপি মূলতঃ যে পূর্বপাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশের মুসলমানরাই …

`পাকিস্তানি প্রত্যয় এখনও সজীব’ কেন ? Read More »

বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ ও মুক্তিযুদ্ধ

বিমল প্রামাণিক সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সংবিধানে (১৯৭২) যে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইঙ্গিত মিলেছিল অচিরেই তা দ্রুত মুছে যেতে লাগল। “একটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারা জাতীয় জীবনের বহুধাবিভক্ত স্রোতকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করে। বিদ্যমান অবস্থার একটি বড় প্রভাবসৃষ্টিকারী উপাদান হল এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় বুঝতে হলে আমাদের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা মানতে হবে। পাকিস্তান সৃষ্টির কারণের মধ্যেই উগ্র সাম্প্রদায়িকতা বিদ্যমান থাকায় পাকিস্তানের পুরো আমলে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক প্রভাব এক জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। মুসলমানদের আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে বাঙ্গালিত্বকে ছাড়িয়ে মুসলমানত্ব মুখ্য হয় এবং সযত্নে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্নতা আনয়নের দুর্বার চেষ্টা চালানো হয়। শাসকশ্রেনী রাজনীতি ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানদের ধর্মীয় পরিচয়কে সরকারিভাবে সামনে নিয়ে আসে এবং তা বাস্তবায়নে বহু উপাদানের সমাবেশ ঘটায় যাদের অন্যতম হলে ভারত বিরোধিতা ও হিন্দু বিরোধিতা।”১ স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ যারা পাকিস্তান বাহিনীর দোসর লক্ষ লক্ষ বাঙালির গণহত্যাকারী, সম্পদ লুণ্ঠনকারী তাদের বিচারের আওতায় না এনে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দিলেন শেখ মুজিবের সরকার। সাধারণ ক্ষমার আওতায় কারা ছিলেন? তারাই তো মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শত্রু। মুসলিম লিগ, জামাতে-ইসলাম, নেজানে ইসলাম, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ এরা সবাই গর্হিত অপরাধে অপরাধী। এটা বলা সমীচীন যে, “মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির দৃশ্যত পার্থক্য ও মালিকানাবোধ এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে উগ্রতার পরিমিতিবোধ পার্থক্যের প্রশ্ন ব্যতীত এসব শাসকদল সমলক্ষ্য ও সমউদ্দেশ্য অভিসারী পরস্পর কোন্দলরত এক গোষ্ঠীভূক্ত রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক জোট”।২ বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক সংস্কৃতির উত্তরাধিকারকে প্রমাণিত করার জন্য জাতীয় জীবনের কিছু বিষয়কে উপস্থাপন করা হল। ‘ (১) আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্যজোট (O.I.C. = Organisation of Islamic Conference) গঠন এবং এতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি, (২) মুসলিম উম্মার স্বার্থ সংরক্ষণ, (৩) দেশে ক্রমবর্ধমান হারে সরকারি অর্থানুকূল্যে মসজিদ এবং মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, (৪) ইসলামি শিক্ষা প্রসারে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, (৫) সংবিধানে পঞ্চম এবং অষ্টম সংশোধনী আনয়ন ও সংরক্ষণ বিষয়ে সমর্থনদান বা উদ্দেশ্যমূলক নীরবতা ও বাতিল বিষয়ে উদ্যোগহীনতা, (৬) সেকুলারিজম্ বিষয়ে বিরোধিতা বা কপটতাপূর্ণ বক্তব্য প্রদান, (৭) ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতির প্রতিফলন, (৮) সরকারি প্রচারমাধ্যমগুলিতে ধর্ম প্রচার, (৯) হজ পালনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, (১০) জাতীয় বাজেটে নও মুসলিম পুনর্বাসন কর্মসূচি, (১১) ধর্ম বিষয়ে রাষ্ট্রনীতির বৈষম্যমূলক অবস্থান, (১২) ১৯৯০ ও ১৯৯২ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে অমুসলমানদের (হিন্দুদের) কয়েক হাজার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গাসহ অন্যান্য নির্যাতনে সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের নেতিবাচক ভূমিকা, (১৩) ১৯৭২ সালে একই দিনে সারা দেশব্যাপী দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর, (১৪) হজরত বাল চুরির ঘটনায় ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি (দাঙ্গা), (১৫) ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের সময় সাদ্দাম মাতম, (১৬) শত্রু সম্পত্তি আইন, (১৭) ভারত-পাকিস্তান কার্গিল যুদ্ধকালীন (সাম্প্রদায়িক) অসহিষ্ণুতা, (১৮) আফগানিস্তানে তালেবান সরকার কর্তৃক প্রাচীন বৌদ্ধমূর্তির ধ্বংসসাধন (বাংলাদেশে উল্লাস), (১৯) ২০০১ সালের ১লা অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সাম্প্রদায়িক নির্যাতন। একটা নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ইতরবিশেষ পার্থক্যসহ বড় বড় সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান হল এ বিষয়সমূহের পক্ষে।”৩ এমনকি বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামি লিগের শাসন আমলেও ২০১২ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া, ফটিকছড়িসহ নানা জায়গায় এবং ২০২১ সালে কুমিল্লাসহ পঁচিশটি জেলায় সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও প্রতিমাসহ ধর্মস্থানগুলির ধ্বংসসাধন সরকার প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হল। ‘সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি বলতে বর্তমানে কি বুঝায় তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, আন্তর্জাতিক যে কোন বিষয়ে ভারতের অবস্থানের উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তার মাত্রা। অর্থাৎ কিনা ভারত এবং হিন্দুদের সমার্থকভাবে বিবেচনার পাকিস্তানি মনোভাব এখনও অটুট এবং এটা অত্যন্ত প্রভাবশালী। অবিশ্বাস্য হলেও এরূপ সমার্থক দৃষ্টিভঙ্গি মুক্তিযুদ্ধের মূল দলের শীর্ষস্থানেও অবস্থানের পরিচয় মেলে। সুতরাং আজকের বাংলাদেশের সাথে সেদিনের পাকিস্তানের লক্ষ্যনীয় বিশেষ কোন পার্থক্য নেই’।৪ বাংলাদেশের শুরু থেকেই রাজনীতিতে আদর্শ ও সমাজে নৈতিকতায় যে ঘুন ধরেছিল, গত পাঁচ দশকের সমাজ ও রাজনীতিতে তার প্রতিফলন স্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব-পাকিস্তানকে পাকিস্তানি শাসন থেকে মুক্ত করে বাঙালিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। আন্দোলনরত জনগণ তাকে ‘বাংলাদেশ’ বলে অভিহিত করে। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে সাধারণ নির্বাচনের পরেও ‘বাংলাদেশের’ প্রশ্ন জনমনে দেখা দেয় নাই। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণ, সেখানেও কোন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষিত হয়নি বা ঘোষণা করার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এর পরেই ২৫শে মার্চ রাত থেকেই পাকিস্তানি গণহত্যা শুরু হয়ে গেল। ৭ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলনের ডামাডোলে ‘স্বাধীন বাংলাদেশের’ বক্তব্য কোন কোন ছাত্রনেতার মুখে শোনা গেলেও জনসাধারণের উপর তার কোন প্রভাব দেখা যায়নি। অর্থাৎ পাকিস্তানি আদর্শ ও রাষ্ট্র তখনও জনমনে বদ্ধমূল। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে পূর্ব-পাকিস্তানের মুসলমান জনতা আরও কট্টর ভারত বিরোধি ও পাকিস্তানী মানসিকতায় পরিপুষ্ট হয়। এবিষয়টি আমি প্রত্যক্ষ করেছি। শেখ মুজিবের ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণার পিছনে এটি একটি বড় কারণ। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে কোন আদর্শগত দৃঢ়তা লক্ষ করা যায়না। গত পাঁচ দশকের রাজনীতির ইতিহাসে যে সকল দল রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় ছিল বা এখনও রয়েছে, প্রত্যেকটি দলই শুধু ক্ষমতা দখলের জন্য দলীয় নীতি-নৈতিকতা ও জনস্বার্থ বিসর্জন দিতে এতটুকু কুণ্ঠাবোধ করেনি। যেহেতু ‘মুক্তিযুদ্ধ’ সমাজে ও রাজনীতিতে কোন নীতি-নৈতিকতা বা আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি বা সে সুযোগ পায়নি, ফলে দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকারী আর মুক্তিযুদ্ধের শত্রুর সহাবস্থান একই সঙ্গে চলেছে। কারণ তারা একই পাকিস্তানি আদর্শে দীক্ষিত। আজকের বাংলাদেশে নয়, অতীতের সব সরকারই (গণতন্ত্রী- স্বৈরতন্ত্রী, প্রগতিশীল-প্রতিক্রিয়াশীল, মুক্তিযুদ্ধপন্থী- মুক্তিযুদ্ধবিরোধী) তাদের কর্মকাণ্ড, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রগুলিতে একটি বিষয়ে একমত, বা ঐকমত্য পোষণ করে, তা হল ক্রমহ্রাসমান সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে। বিভিন্ন দলের বক্তব্যের মধ্যে কোন তফাৎ নেই। যেমন, (১) সরকার ‘সংখ্যালঘু- সংখ্যাগুরু’ তত্ত্বে বিশ্বাস করে না। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃস্টান নির্বিশেষে সবাই বাঙালি বা বাংলাদেশী। তবে সংবিধানটিকে সংখ্যাগুরুর পক্ষে করা হল কেন ? (২) বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কিন্তু সংখ্যালঘুরা ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার। এটা অস্বীকার করা মিথ্যাচারের সামিল। (৩) ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়, এদেশে হয় না। কিন্তু ১৯৪৭ থেকে এ পর্যন্ত যত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয়েছে এবং তা একপক্ষীয় ও ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। (৪) ইসলাম শান্তির ধর্ম । অর্থাৎ অন্যান্য ধর্ম অশান্ত, তাই তারা দাঙ্গাবাজ, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য তারাই দায়ী। এটাই কি ‘শান্তির ধর্মের’ লক্ষ্য? (৫) এদেশ থেকে কোন নাগরিক ভারতে যায়নি। মিথ্যাবাদী এবং পাগল ব্যতীত সারা দেশের সব মানুষ জানে প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘু জনগণ ভারতে চলে যাচ্ছে, দেশত্যাগ করছে চিরতরে। (৬) দুষ্কৃতিদের কোন দল বা সম্প্রদায় নেই। সত্য কথা হল, সন্ত্রাসীরা সবাই চিহ্নিত রাজনৈতিক দলের ক্যাডার। রাজনৈতিক দলগুলির এসব বক্তব্য দিতে কখনও লজ্জাবোধ করতে দেখা যায়নি। গলাবাজির রাজনীতির চোরাগলিতে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ, হারিয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধ। তথ্যসূত্রঃ ১। নির্যাতিত সংখ্যালঘু বিপন্ন জাতি, দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ, ২০০২। পৃষ্ঠা ১৭৫। ২। প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৭৬। ৩। প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৭৬। ৪। প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৭৭।