Center For Research In Indo

Author name: admin

দ্রুতগতির দুনিয়ায় বাংলাদেশ মেট্রোরেলের বিভিন্ন দিক ও বাস্তবতা

সুদীপ কুমার আচার্য্য বর্তমান বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামি লিগ সরকার জন উন্নয়নের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মেট্রোরেল প্রকল্পের একটি অংশের সম্প্রতি কাজ সমাপ্ত করলেন এবং জনগণের জন্য MRT 6  নামক লাইনটিকে (উত্তরা – আগারগাঁও) উদ্বোধন করা হল গত ২৮ শে ডিসেম্বর ২০২২। বর্তমানে এটিকে সর্বসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া যথাক্রমে ৬০ ও ২০ টাকা।  স্বাধীনতা দিবসে অর্থাৎ  ২০২৩ এর ২৬শে মার্চ উত্তরা – আগারগাঁও রুটে পূর্ণাঙ্গভাবে মেট্রোরেল পরিষেবা শুরু হয়ে যাবে। রাজধানী ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম ও ভিড়ভাট্টার ভয়ঙ্কর অবস্থা চলে আসছে বছরের পর বছর। ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ২ কোটি মানুষ বাস করেন। মুঘল আমলে ঢাকার নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর, সপ্তদশ শতক থেকেই ঢাকা একটি বাণিজ্য কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ যুগ থেকেই ঢাকা ছিল এক বর্ধিষ্ণু নগরী।  কালের পট পরিবর্তনে তার উপর চাপ আরও বেড়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু যানজটের বিভীষিকায় নাকাল হন সাধারণ মানুষ থেকে, অফিসযাত্রী, মুমূর্ষু রোগী থেকে পর্যটনে আসা বিদেশী নাগরিক। সুতরাং এই মেগা প্রকল্পটি নেওয়ার অন্যতম লক্ষ্য ঢাকাকে পরিচ্ছন্নভাবে, সুষ্ঠুভাবে এবং সুন্দর করে তোলা। যানজট থেকে মুক্তি  এবং মানুষের দুদর্শা লাঘব করা। এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল ২০১৩ সালে। ২০১৬ সালের ২৬শে জুন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। MRT 6 লাইনটির স্টেশন নির্মাণ সংখ্যা সংশোধিত হয়ে ১৭টি (কমলাপুর পর্যন্ত) হয়। মেট্রো ৬ এর আংশিক উদ্বোধন উপলক্ষে দিয়াবাড়ীতে যে সমাবেশের আয়োজন করা  হয়েছিল তা নিয়ে উৎসাহের অন্ত নেই। এই উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে  (পঞ্চাশ টাকার স্মারক নোট)। উন্নয়নের মুকুটে অবশ্যই এটি একটি নতুন পালক সংযোজন। ২০৩০ সালের মধ্যে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক  পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মতিঝিল পর্যন্ত MRT 6 লাইনের কাজ আংশিকভাবে সমাপ্ত হয়েছে (৮৬%)। বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদরা MRT 6  লাইনে চার পাঁচবার পরিবর্তন করেছেন।  মেট্রো প্রকল্পে আসল ঋণ ১৬,৫৯৫ কোটি টাকা, ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা মেট্রোরেল প্রকল্পে সর্বমোট বাজেট। মেট্রোরেল প্রকল্পে যে পরিমাণ শক্তি বা বিদ্যুৎ ব্যয় হবে তা প্রতি ঘণ্টায় ১৩.৪৭  মেগাওয়াট। এর জন্য ৫টি Power supply station  তৈরী করা হয়েছে। অর্থাৎ কোন একটি লাইনে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে মেট্রো পরিষেবা ব্যাহত হবে না। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হোটেল সোনারগাঁও থেকে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক পর্যন্ত দূরত্ব ৪.৪০ কিলোমিটার, তৃ্তীয়  ক্ষেত্রে পল্লবী থেকে উত্তরা লাইনটির দূরত্ব হবে ৪.৭ কিলোমিটার। পুরোটাই মাটির ওপর  ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে যাবে। মাটি থেকে উচ্চতা রাখা হয়েছে ১৩ মিটার  যাতে নীচ দিয়ে গাড়ি, ঘোড়া, সাধারণ মানুষও সমানতালে চলতে পারে। উত্তরা থেকে সোনারগাঁও ২১.২৬ কিলোমিটার প্রায় ৩৮ মিনিটে যাওয়া যাবে। পূর্বে আধঘণ্টার পথ যেতে এক ঘণ্টার অধিক সময় লাগত, ক্ষতি হত অর্থনীতির, নষ্ট হত মূল্যবান সময়। মনে করা হচ্ছে যে এবার তা থেকে মুক্তি মিলবে ।  এই প্রকল্পে মোট খরচ ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। যার মধ্যে জাইকা নামক জাপানি উন্নয়ন সংস্থা ব্যয় করেছে ৭৫ শতাংশ (১৭ হাজার কোটি) বাকী টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এর ফলে ব্যবসা বাণিজ্যে গতি আসতে চলেছে। সময় সংক্ষেপের ফলে উপকৃত হবে অনেক মানুষ। উত্তরা থেকে মতিঝিল সাত জোড়া ট্রেন চলবে। প্রত্যেক ট্রেনে অন্তত ২৩০০ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। টিকিট একমুখী কাটা যাবে। ডেইলি প্যাসেঞ্জাররা স্মার্ট কার্ড ও পরে রিচার্জের মাধ্যমে  কাজ চালাতে পারবে।  মেট্রোর এই প্রকল্প নিয়ে  ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের  পক্ষ থেকে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর সম্পাদিত হয়েছে। DMRTC নামক সরকারি প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পটির তদারকি  শুরু করেছে। পূর্বেই মিরপুর স্টেশন থেকে ২০২১ এর ২৯ নভেম্বর এবং আগারগাঁও থেকে ২০২১ এর ১লা ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল।  এর যাত্রী পরিবহণ ক্ষমতা হবে প্রত্যেক দিন প্রায় ১ লক্ষ। তবে বাস্তবে কতটা কার্যকারী হবে তা পূর্ণভাবে ট্রেন চলাচল শুরু নাহলে বলা যাবে না। মেট্রোরেলে ৬টি বগি থাকছে। দিয়াবাড়ি (উত্তরা নর্থ)  থেকে আগারগাঁওয়ের ভাড়া ৬০ টাকা। জীবনযাত্রার মান এতে হবে উন্নত। গতিময়তার যুগে এর যে বিশেষ প্রয়োজন ছিল তা বলাই বাহুল্য।  মরিয়ম আফিজা মেট্রোরেলের প্রথম চালিকা ছিলেন এবং গত বুধবার ২৮শে ডিসেম্বর তার ট্রেনে প্রথম যাত্রীর নাম জননেত্রী শেখ হাসিনা। যাঁরা মেট্রোরেল চালাবেন তাঁদের ট্রেনিং সম্পন্ন হয়েছে। আফিজা ছাড়াও ছয়জন মহিলা চালক আছে।  জাপানের মিতসুবিশি-কাওয়াসাকি কোম্পানির এক্সপার্টরা কারিগরি প্রশিক্ষণ যেমন  দিয়েছেন তেমনই দেশীয় প্রযুক্তি ও অপারেটিং সিস্টেমের ট্রেনিংও কর্তৃপক্ষ চালকদের দিয়েছেন। কিছুদিন আগেই জাপান থেকে ব্যাংকক হয়ে একটি জাহাজ মেট্রোরেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, কোচ ইত্যাদি নিয়ে বাংলাদেশের মংলা বন্দরে আসে। এরপর এগুলিকে workshop এ নিয়ে এসে ফিটিংস করা  হয়। মেট্রো কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে প্রায় ৫২ জন প্রযুক্তিবিদ নিয়োগ করেছেন মেট্রোর ষোলটি বিভাগে। পাশাপাশি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড প্রায় ৩৩০ জন অভিজ্ঞ কর্মচারী নিয়োগ করছেন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে।  ঢাকা মেট্রোর পরিকাঠামো অত্যাধুনিক। তিনতলা স্টেশন। রেলকোচের ভিতরে দিব্যাঙ্গ (Physically challenged), বয়স্ক নাগরিক (Senior Citizen) এবং অন্তঃসত্ত্বা মা  (Pregnant Mother) যাত্রীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা করেছেন যে মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যরা মেট্রোয় যাতায়াতে আংশিক ছাড় পাবেন। আপতকালীন ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সকাল ৮টা  থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আপাতত মেট্রো পরিবহণ শুরু হয়েছে। কিন্তু দিন ও রাতের পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা পেতে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।  একটির নির্মাণ চলছে আরও পাঁচটির নির্মাণ হবে। পরিকল্পনা করা হয়েছে ১০৪টি স্টেশন বানানোর যেখানে ভুগর্ভস্থ ৫৩টি ও উড়ালপুল হয়ে যাবে ৫১টি। (মোট ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ বানানোর  পরিকল্পনা রয়েছে) অন্যান্য লাইনগুলি  হলঃ MRT 1   (বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর ) MRT 1   পূর্বাচল যাত্রাপথ ( নতুন বাজার থেকে তিলগঞ্জ, MRT2 গাবতলী চট্টগ্রাম রোড। MRT5          (উত্তর যাত্রাপথ)  (হেমায়েতপুর – ভাটরা), MRT5 (দক্ষিণ যাত্রাপথ) গাবতলি কল্যাণপুর শ্যামলী সোনারগাঁও হাতিরঝিল আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দি)।  ২০৩০ সালের মধ্যে সমস্ত প্রকল্প সমাপ্ত করবার চেষ্টা চলছে। সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য এর ফলে নিশ্চিতভাবেই আসবে। নতুন এক আর্থিক দিশা পাবেন বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু পাতালরেল অর্থনীতির  সমীকরণে মূলত উপকার হবে উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত বা অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন এক শ্রেনীর বিত্তশালীর, সরকারী আয় বাড়বে, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু প্রায় ৭০ শতাংশ নিম্নবিত্ত ও গ্রামীণ জনসাধারণের  জীবনযাত্রার বিশেষ রকমফের ঘটবে বলে মনে হয় না।   সমীক্ষা অনুসারে ঢাকায় যে ৩ লক্ষের অধিক রিকশাচালক আছেন তাদের রুটিরুজি পথ চলতি মানুষের যাতায়াতের ভাড়ার ওপর নির্ভর করে যা সামাজিকভাবে একটি শ্রেণিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। রিকশা অর্থনীতি মেট্রোর এই গতিময়তার যুগে খুব একটা প্রভাবিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে না। যারা আংশিক দূরত্ব অতিক্রম করবেন তাদের জন্য  মেট্রোর উপযোগিতা কম। কারণ ঢাকা ছাড়াও আরও  নানান অফিস ও বাণিজ্যকেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ  শহরগুলির ভিতরে এখনো মেট্রো পোঁছায়নি। সাধারণ মানুষের  ধরাছোঁয়ার মধ্যে টিকিটের দাম না আনতে পারলে সাধারণ মানুষও বিশেষ উপকৃত হবে না। সর্বশেষে বলি একবার জনৈক  সাংবাদিক চিনের চেয়ারম্যান মাও-সে-তুং কে  জিজ্ঞাসা করেছিলেন সমাজে ফরাসী বিপ্লবের কী উপযোগিতা বা প্রভাব দেখা যায়?  মাও বলেন  `It is too early to say’. একইভাবে সম্প্রতি মেট্রো প্রকল্পের যে অঙ্কুরোদগম হল এখনই তার সুদূরপ্রসারী …

দ্রুতগতির দুনিয়ায় বাংলাদেশ মেট্রোরেলের বিভিন্ন দিক ও বাস্তবতা Read More »

বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের বর্তমান সংকট ও তিক্ততাঃ গতিপথ কোনদিকে?

সুদীপ কুমার আচার্য্য রুশ-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্পর্ক দীর্ঘকালের।  বাংলাদেশের উত্থানের প্রেক্ষাপট বিচার করলে ভারত ব্যতীত অন্য যে দেশটি মুক্তিযুদ্ধের কালে (১৯৭১) বাংলাদেশের পাশে সামরিক সাহায্য  ও আর্থিক দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশী করে উপস্থিত ছিলো তারা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। অন্যদিকে আমেরিকার নিক্সন প্রশাসন পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে সপ্তম  নৌবহর পাঠিয়েছিল। ইয়াহিয়া খানের আরেক বন্ধু চীনও জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি ভেস্তে দিতে সেই সময়ে ভারত-সোভিয়েত-বিরোধী একতরফা  কথাবার্তা বলে যাচ্ছিল।  অর্থাৎ cold war এর আবর্তে পড়ে ভারতীয় ও সোভিয়েত সংযুক্ত ক্ষমতা বা মোকাবিলা কৌশল না থাকলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সফলতা  পেত না। নতুন কোন রাষ্ট্র গড়ে উঠত কী না তাতেও সন্দেহ আছে!  কেননা সোভিয়েত ইউনিয়ন বা U.S.S.R. ছিল অন্যতম রাষ্ট্র  যা বাংলাদেশকে  স্বীকৃতি দিয়েছিল গড়ে ওঠার সময়েই।  আজ এত বছর পর  পিছনে তাকালে দেখা যায় সেই `Age of Extremes’ এর সময়কাল অতিক্রান্ত, U.S.S.R. ভেঙে পড়েছে এবং একমেরু, দ্বিমেরু থেকে বহুমেরু বিশ্বে বিশ্বক্ষমতার  ভরকেন্দ্রের স্থানান্তর ঘটে চলেছে। ১৯৭২ থেকে যে বাংলাদেশ-রুশ কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা তা পেরিয়ে গেছে অর্ধ শতাব্দী  কিন্তু পরিণত কতটা হয়েছে তা ভেবে দেখতে হবে। কেননা গত কুড়ি বছরে চীন-ইরাণ-পাকিস্তান জোটের প্রতি বাংলাদেশ অনেক বেশী দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে কিছুটা জোয়ার এসেছে তার দিকে আন্তর্জাতিক মহল বিশেষত আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলির নজর আছে। চীন, মার্কিন বদান্যতা বা প্রসাদ লাভের তাগিদ বিশ্বের অন্যান্য বিকাশশীল দেশ যেমন শ্রীলঙ্কার মতন বাংলাদেশেরও ছিল বা আছে। হয়ত সে কারণেই গত কয়েক বছরে এসব দেশ  বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বা কখনও  পররাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণের ব্যাপারে মাথা গলাতে চাইছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচিত শক্তহাতে বিষয়গুলির প্রতিরোধ করা, যা না করে তারা ভীত সন্ত্রস্ত চিত্তে নয়া আর্থিক সাম্রাজ্যবাদের বাঁধা গতে বা স্নায়বিক যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির ন্যায় স্যাটেলাইট রাষ্ট্র বনে যেতে চাইছে।  যা স্বকীয়তা, স্বাধীনতা, সাম্য, সার্বভৌমত্ব ও পারস্পরিক বোঝাপড়া বা সৌভ্রাতৃ্ত্বের বিরোধী। একথা সত্য যে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নানান লবি তাদের কসরৎ দেখিয়ে থাকে কিন্তু এসব  উপেক্ষা করে  কূটনৈতিক বোঝাপড়া বা নিকট বন্ধুদের সহযোগিতার মাধ্যমে তাকে ম্যানেজমেন্ট করাই পররাষ্ট্রনীতির  অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। বর্তমান কঠিন সময়ে বাংলাদেশের প্রতিবেশী বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ট সহযোগিতা ও সম্পর্কের  মাধ্যমে  উন্নয়ন। কোনো দূরবর্তী  দেশের অঙ্গুলিহেলনে ওঠাবসা নয়। এরকমই এক বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়ার প্রতি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ভুলনীতি সম্পর্কে জটিলতা বাড়িয়েছে।  সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাই যার প্রমাণ। গত ২০২২ সালের ১৪ই নভেম্বর রাশিয়ার পিটসবার্গের বন্দর থেকে ছেড়ে  একটি মালবাহী জাহাজ  উরসা মেজর  বঙ্গোপসাগরে এসে উপস্থিত হয় এবং তারা বাংলাদেশের মংলা  বন্দরে ঢুকে মালপত্র খালাসের  জন্য আসছিলেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে বাংলাদেশের নৌ-দপ্তর থেকে জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হয়নি এবং অগত্যা ভারতের হলদিয়া বন্দরের জেটিতে সেটি  মালপত্র খালাস করে। কারণ পেন্টাগনের হুমকি। ঢাকার বিদেশমন্ত্রককে  মার্কিন  দূতাবাস থেকে জাহাজটির বিরুদ্ধে কঠোর আপত্তি জানানো হয়েছিল। এই ম্যাসেজটি আসার পরই বাংলাদেশ নৌ-দপ্তর উরসা মেজরকে তার জলসীমা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলে। আসলে কার্গো জাহাজটিতে বাংলাদেশের পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে যে পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র গড়ে উঠেছে তারই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল। এনিয়ে ২২শে ডিসেম্বর ২০২২ রাশিয়ার দূত বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে গিয়ে ম্যারিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব  (Maritime Affairs Secretary)  রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশিদ আলমের সঙ্গে ৩০ মিনিট একান্ত বৈঠক করেন কিন্তু কোন  কাজ হয়নি।  অর্থাৎ বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করার আপত্তি অটুট থাকে। এখন প্রশ্ন হল আমেরিকার আপত্তির কারণ কী ?  এবং এসব কারণকে পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেন গুরুত্ব দেবে তার রহস্য কি? ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ  শুরু হবার পর থেকেই জো বাইডেন প্রশাসনের  তোপের মুখে রাশিয়া, ইউ.এস.এ. প্রায় ৬৯টি রাশিয়ান জাহাজকে  ব্ল্যাক লিস্টেড করেছে বা কালো তালিকায় তুলেছে। বিশেষত  মিলিটারী কার্গো জাহাজ যাতে সামরিক অস্ত্র শস্ত্র বা গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিকৌশলজনিত  সরঞ্জাম  থাকতে পারে। এরকমই একটি জাহাজ  স্পার্টা-৩ (SPARTA- 3), আমেরিকা ও তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলির বন্দরে এসব জাহাজকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তাই বাংলাদেশকেও মার্কিন প্রশাসনের তরফে এ নিয়ে কড়া বার্তা দেওয়া হয় । বলা হচ্ছে স্পার্টা-৩ জাহাজটি নিজের রং পাল্টে নতুন চেহারা নিয়ে ২৪শে ডিসেম্বর  বাংলাদেশের মংলায় ঢোকার চেষ্টা করছিল।  বাংলাদেশের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয় উরসা মেজর নামধারী এই জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ বা বন্দরে ঢুকতে পারবে না।  কারণ এরকম নামের বা এই রুটের কোন জাহাজকে কখনো বাংলাদেশ তাদের কোন কাজে লাগায়নি ।  কিন্তু আসলে রুশ-বাংলাদেশ যৌথ পারমাণবিক প্রকল্পের সরঞ্জামই  এটি বহন করছিল ।  এতে কোন কিছু বিপদজনক ছিল না তথাপি এটি বাংলাদেশ নৌ-দপ্তরের সবুজ সংকেত পায়নি। আশ্চর্যের বিষয় হল রূপপুর কেন্দ্রটির মেগাপ্রকল্পে অনেক রাশিয়ান ও ইউক্রেনিয়ান প্রযুক্তিবিদ একসাথে কাজ করছেন । রাশিয়া বাংলাদেশকে সস্তায় তেল ও জ্বালানি সরবরাহে সাহায্য করেছে; এছাড়া রাশিয়া বাংলাদেশে প্রাকৃতিক  গ্যাস, যন্ত্রপাতি, সার রপ্তানি করে।    মানবসম্পদ উন্নয়নে নানান সহযোগিতা ও সর্বোপরি পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তৈরীতে ১২.৬৫ বিলিয়ন অর্থসাহায্য করেছে । মস্কোস্থিত Russian State Nuclear Energy Corporation একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংস্থা যারা হিমবাহ, হিমশৈল বা মেরু অঞ্চলে সমুদ্রে রাস্তা বানানোর জন্য বরফ ভাঙ্গার কাজের জন্য পরমাণুচালিত জাহাজ বানায়।  নিউক্লিয় রিঅ্যাক্টর, নিউক্লিয় জ্বালানি, ইয়রেনিয়াম খনি খনন, পারমাণবিক গবেষণার উন্নতি, হাওয়া শক্তি, হাইড্রোজেন জ্বালানি তৈরী করে, পৃথিবীর নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে এরা প্রধানতম। বাংলাদেশেও  এঁরাই কাজ করছেন (রোসাটম সংস্থা) । ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারীতে ২৪০০ মেগাওয়াট এই প্রকল্পটি  রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরী হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয় । এছাড়া আর্থিক ক্ষেত্রে নানান বাংলাদেশী পণ্য গম, চামড়া, বস্ত্র, পাট, বরফজাত খাদ্য, চা, সেরামিক দ্রব্য রাশিয়া আমদানি করে থাকে।  অর্থাৎ  বাংলাদেশের একটি ভাল রপ্তানি বাজার  রয়েছে রাশিয়ায়।  ২০২০ সালে বাংলাদেশ প্রায় ৭৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রাশিয়া থেকে আমদানি করেছিল; ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে  রাশিয়া বাংলাদেশকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা করেছিলো। সুতরাং আর্থিক ক্ষেত্রে  বোঝাপড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কিন্তু এই বিষয়টিকে  স্বল্প গুরুত্ব দিয়ে দেখা ঠিক  নয়।  রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা দাবী করেন আমেরিকার চাপেই বাংলাদেশ নতি স্বীকার করে রুশ জাহাজকে বন্দরে প্রবেশ করতে দেয়নি। আমেরিকার স্বার্থ এক্ষেত্রে কাজ করছে কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণে বাংলাদেশের উচিত স্বাধীনভাবে কাজ করা ।    তাছাড়া পারমাণবিক প্রকল্পগুলির দিকেও আমেরিকার নজর আছে । যাইহোক এক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট প্রশংসনীয় এবং বৃহৎ শক্তিধর দুটি রাষ্ট্রের পারস্পরিক বিবাদের মধ্যে থেকে বাংলাদেশকে তারা পুরোটাই স্বস্তি দিতে পেরেছে যা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর পক্ষেও অত্যন্ত ইতিবাচক। অর্থাৎ  মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে উপেক্ষা করেই ভারতবর্ষ  পরমাণুকেন্দ্রের এসব সরঞ্জাম হলদিয়া বন্দরে নামানোর  অনুমতি দেয় এবং যা স্থলপথে পুনরায় বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়া হয়।  অর্থাৎ ভারতীয় ট্রানজিটের সুফল পেল বাংলাদেশ।  অন্যথায় বিষয়টি আরও জটিল হতো । রাশিয়ার পক্ষ থেকে  মস্কোর ঢাকা এমব্যাসী  থেকে রাষ্ট্রদূত কামরুল ইসলামকে ডেকে কড়া বার্তা  দেওয়া হয়েছে।  রাশিয়া জানিয়েছে এরকম পদক্ষেপ রুশ-বাংলাদেশ  বন্ধুত্বের জন্য একেবারেই শুভ ইঙ্গিত নয় । ঐতিহাসিক কারণে এবং বাস্তবতার নিরিখে দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক এক্ষেত্রে ধাক্কা খাবে। বাস্তবিকভাবেই  বর্তমান সরকার গত ১৬ই জানুয়ারী বাংলাদেশে ৬৯টি রুশ জাহাজ প্রবেশে নিষেধ জারী করেছিল, এখন এটি জাতীয় স্বার্থের কতটা অনুকূলে যাবে তা সময় এলে বোঝা যাবে। পাশাপাশি মার্কিন বা ব্রিটিশ লবির সঙ্গে বাংলাদেশের …

বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের বর্তমান সংকট ও তিক্ততাঃ গতিপথ কোনদিকে? Read More »

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সামনে একটি বড় সঙ্কট

পূর্ণিমা নস্কর বাংলাদেশের  স্বাধীনতার পূর্বেই পূর্বপাকিস্তানের  রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর  রহমান  একজন অবিসংবাদী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনি জনগণের আস্থা অর্জন করেন এবং দেশের মানুষের মনে বিশেষ করে পাকিস্তানের পূ্র্বাঞ্চল তথা পূর্ব বাংলার জনগণের মনে প্রভূত আশার সঞ্চার করেছিল। ১৯৭০ সালের ৭ই জুন শেখ   মুজিবুর রহমান যখন বললেন, আসন্ন নির্বাচন হবে ছয়  দফার প্রশ্নে গণভোট; তখন জনগণের মধ্যে তৈরী হওয়া উত্তেজনা ও আশঙ্কা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পুর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের  মোট ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে আওয়ামি লীগ জয়লাভ করেছিল। ফলে  পাকিস্তানের সরকার গঠনের  প্রশ্নে আওয়ামি লীগই প্রধান দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হল। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মনে শেখ মুজিব যে পাকিস্তানের  প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন — এই ধারণা এবং বিশ্বাস এমনভাবে আন্দোলিত হতে থাকল যে, পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার একটা বাস্তব ভিত  পাকিস্তান রাষ্ট্রে  তৈরি হতে যাচ্ছে। আসলে এটাই ছিল আওয়ামি লীগের রাজনৈতিক সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ।  ছয়দফা দাবীর মধ্যে পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙ্গে আলাদা কোন রাষ্ট্র গঠনের কথা ছিল না। শুধু প্রদেশগুলির অধিকারের কথাই সেখানে প্রধান বিষয়রূপে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এইরূপ পরিস্থিতিতে এমতাবস্থায় পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা হবে বলে মানুষের মনে  যে  উচ্চাশা তৈরি হয়েছিল; বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মনে —  তা যে অদূর ভবিষ্যতে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে – এ বিষয়টি ছিল তখন আলোচনার  বিষয়বস্তু। তদুপরি, পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামি লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের ফল-স্বরূপ আওয়ামি লীগের সমর্থকসহ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের মধ্যে  যে আবেগ ও উৎসাহ দেখা গেল; তা তাদের  আকাঙ্ক্ষারই একটা প্রতিফলন ।   ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ শেখ মুজিবের ভাষণকে বাংলাদেশের মানুষ ধরেই নিয়েছিল যে এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণারই নামান্তর।  দেখা যাচ্ছে, ১৯৭০ এর ৭ই ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের মধ্যবর্তী সময়, মাত্র তিন মাস। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানি  ও পূর্ব পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া রাজনৈতিক জটিলতা, টানাপোড়েন ও  বিশ্বাস  অবিশ্বাসের  বাতাবরণ মোটেই অভিপ্রেত ছিল না। জনগণ এটা একেবারেই আশা করেনি। তারা ছিল আশা-নিরাশার  দোলাচলে ।  মানসিক দিক থেকে বা নীতি আদর্শের প্রেক্ষাপটে মাত্র তিন মাস এতই স্বল্প সময় যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা  মোটেই সহজ ব্যাপার ছিল না। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমানদের দাবী মেনে ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং পাকিস্তানি রাষ্ট্রের তেইশ বছর ইসলামি রাষ্ট্ররূপে পাকিস্তানকে প্রতিষ্ঠা করার যে সার্বিক চেষ্টা অব্যাহত ছিল তারও একটা বড় প্রভাব বাঙালি মুসলমানের  পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাছাড়া সংস্কৃতিগতভাবে বাঙালি মুসলমান পাকিস্তানি রাষ্ট্রে নিজেদের গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল বাঙালি হিন্দুর থেকে একটা পৃথক  জনগোষ্ঠী  (জাতিসত্ত্বা) হিসেবে। অর্থাৎ, দ্বি-জাতিতত্ত্বের বক্তব্য মেনেই। তার কারণ পাকিস্তান গঠণের সময় এই দ্বি-জাতিতত্ত্বই মুসলমান জনগণকে প্রভূতভাবে প্রভাবিত করেছিল। এখন ৭ই মার্চের ভাষণের পর পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান জনসাধারণের মন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে স্থির করা আওয়ামি লীগ নেতৃবৃন্দ  যত সহজ কাজ ভেবেছিল কিন্তু  ব্যাপারটা তত সহজ ছিল না। দীর্ঘকালের চর্চিত ইসলামী সংস্স্কৃতি এবং পাকিস্তানি আবহাওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে তাদের মনে উদ্রেক হওয়া প্রশ্নসমূহের  দিকে ফিরে দেখা যাক।   পাকিস্তানের একটি শক্তিশালী  সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আওয়ামি লীগের পক্ষে সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া এবং তার পরিণতি নিয়ে অধিকাংশ মুসলমান জনগণই যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিল। তাদের মনে প্রথম প্রশ্নই ছিল – তাদের সামনে পাকিস্তানি সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে আওয়ামি লীগের লড়াই করার কোন পরিকল্পনা স্পষ্ট ছিল না। দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতা ঘোষণার পরিণতি কি হবে তাও  তারা  অনুমান করতে পারছিল না। কারণ শেখ মুজিবের হাতে কোন সামরিক  বাহিনী বা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর  সাথে লড়াই করার কোন শক্তি যে  নেই তা তারা জানত। তৃ্তীয়ত, মুক্তিযুদ্ধ পরিকল্পনার বিষয়ে আওয়ামি লীগের সঙ্গে  ভারতবর্ষের কোন বোঝাপড়া হয়েছে কিনা ? চতু্র্থত, পাকিস্তানের তেইশ বছর পাকিস্তান সরকারগুলি বা সামরিক শাসককুল বা পাকিস্তানের জনগণ ভারতকে শত্রু দেশ হিসেবে গণ্য করে এসেছে। এটা জনগণের কাছে কোন গোপন বিষয় ছিল না। ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পর থেকে ভারতকে সরকারিভাবে শত্রু দেশরূপে গণ্য করা হত। এখন ভারত কি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেবে বা সম্পূর্ণ ভারতের উপর নির্ভরশীল  হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চালান কি সম্ভব?  কারণ আমেরিকা, ইউরোপ ও ইসলামিক দেশগুলির  সমর্থন পাকিস্তানের পক্ষেই ছিল। এ প্রশ্ন মুসলমান জনগণকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল। পঞ্চমত, বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষিতে যদি পাকিস্তান গণহত্যা বা crackdown করে তাহলে তা রোধ করা কি আওয়ামি লীগের পক্ষে  সম্ভব হবে ? ষষ্ঠত, যদি দীর্ঘমেয়াদী  সংগ্রামের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর  বিরুদ্ধে কোন গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি আওয়ামি লীগের আছে কিনা সে বিষয়েও সাধারণ জনগণ সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিল।   এই সমস্ত নানা প্রশ্ন বিশেষ করে বাংলাদেশের  মুসলমান জনসাধারণের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ভবিষ্যৎ  সম্পর্কে যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে ফেলেছিল ; তা থেকে তারা সহজে বের হতে পারেনি। এটা ছিল তাদের কাছে বড় একটা  সঙ্কটপূর্ণ সময়। শেখ মুজিবের ডাকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে কি পড়বে না – এনিয়ে তারা ছিল   দ্বিধাদ্বন্দ্বের দোলাচলে । তাদের পাকিস্তানি ও ইসলামি  জাতিসত্ত্বা এতটাই প্রবল ছিল, বাঙালি  জাতিসত্ত্বার যে প্রশ্ন শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সামনে  উত্থাপন করেছিলেন; তা মুসলমানদের ইসলামি       জাতিসত্ত্বাকে অতিক্রম করে তাদের মনে তেমন দাগ কাটতে পারেনি।  ফলে আমরা দেখতে পেলাম, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক সরকার অনেকটাই বাধাহীনভাবে প্রশাসন পরিচালনা ও জনগণের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পেরেছিল। আসলে মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের বাঙালি জনগণের সামনে একটি বড় সঙ্কট। আর  এই সঙ্কট থেকে এদেশের জনগণ অদ্যাবধি বাঙালি না  বাংলাদেশী পরিচয়ের  আবর্তে  ঘূর্ণায়মান রয়েছেন।   এ থেকে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, পাকিস্তানি আন্দোলনের  দ্বিজাতিতত্ত্বের ভূত কি বাঙালি মুসলমানদের এখনও  তাড়া করে চলেছে? নাকি তারা বাঙালি হিন্দুর থেকে আলাদা আইডেন্টিটি (identity) বজায় রাখার মানসে নিজেদের বাঙালি মুসলমান বলতে  স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে? অথবা বাংলাদেশকে বাঙালি মুসলমানের দেশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করার  প্রবল ইচ্ছা  এই মানসিকতার পিছনে কাজ করে ?  

বাংলাদেশি মুসলমান সমাজ কোন পথে ?

বিমল প্রামানিক বিশিষ্ট  বাঙালি চিন্তক জনাব আহমদ ছফা  তার বাঙালি মুসলমানের মন ১  পুস্তকে বঙ্গসমাজ এবং মুসলমান বিষয়ে যে আলোচনার  অবতারণা  করেছেন সে বিষয়ে একটু আলোকপাত করা যেতে পারে। ‘বাঙালি মুসলমান বলতে যাদের বোঝায়, তারা মাত্র দুটি আন্দোলনে সাড়া দিয়েছিলেন এবং অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তার একটি তিতুমীরের অনুসারীদের দ্বারা পরিচালিত ওয়াহাবি আন্দোলন। অন্যটি হাজি দুদুমিঁয়ার ফারায়েজি আন্দোলন। এই দুটি আন্দোলনেই মনে প্রাণে অংশ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু উচু শ্রেনীর মুসলমানেরা এই আন্দোলনের সমর্থন করেছেন তার কোন প্রমান পাওয়া যায় না। আসলে কৃষক জনগণই ছিলেন এই আন্দোলন দুটির হোতা।  আধুনিক কোন রাষ্ট্র কিম্বা সমাজদর্শন এই আন্দোলন দুটিকে চালনা করেনি। ধর্মই ছিল একমাত্র চালিকাশক্তি। … এই আন্দোলন দুটি ছাড়া অন্য প্রায় সমস্ত আন্দোলন হয়ত উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে,  নয়তো হিন্দুসমাজের উদ্যোগে এবং কর্মপ্রয়াসের সম্প্রসারণ হিসেবে মুসলমান সমাজে ব্যাপ্তিলাভ করেছে।  সমাজের মৌল ধারাটিকে কোন কিছুই প্রভাবিত করেনি। তার ফলে প্রাগৈতিহাসিক যুগের আদিম কৃষিভিত্তিক কৌমসমাজের  মনটিতে একটু রঙ-টঙ লাগলেও কোন রূপান্তর বা পরিবর্তন হয়নি। … বিংশ শতাব্দীতেও এই মনের বিশেষ হেরফের ঘটেনি।  বাঙালি মুসলমানের রচিত কাব্য সাহিত্য –দর্শন- বিজ্ঞান পর্যালোচনা করলেই এ সত্যটি ধরা পড়বে। কোন বিষয়েই তারা উল্লেখ্য কোন মৌলিক অবদান রাখতে পারেননি। সত্য বটে, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমুদ্দিন প্রমুখ কবি কাব্যের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন ।  একটু তলিয়ে দেখলেই ধরা পড়বে, উভয়েরই রচনায় চিন্তার চাইতে আবেগের অংশ অধিক। তাছাড়া এই দুই কবির প্রথম পৃষ্ঠপোষক গুণগ্রাহী ছিল হিন্দু সমাজ,  মুসলমান সমাজ নয় ।    মুসলমান সাহিত্যিকদের রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল হয়ত চর্বিত চর্বন নয়তো ধর্মীয় পুর্নজাগরণ । এর বাইরে চিন্তা, যুক্তি ও মনীষার সাহায্যে সামাজিক dogma বা বদ্ধমতসমূহের অসারতা প্রমাণ করেছেন, তেমন লেখক কবি মুসলমান সমাজে আসেননি।  বাঙালি মুসলমান সমাজ স্বাধীন চিন্তাকেই সবচেয়ে ভয় করে। তার মনের আদিম সংস্কারগুলো কাটেনি। … অনেক কিছুরই সে সংবাদ জানে, কিন্তু কোন  কিছুকে চিন্তা দিয়ে, যুক্তি দিয়ে, মনীষা দিয়ে আপনার  করতে জানে না।‘২ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিয়েও জনাব ছফার চিন্তা আলোচনার দাবি রাখে। ‘ইতিহাসে বিশ-ত্রিশ বছর কোন দীর্ঘ সময় নয়।  বাঙালি মুসলমান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র  যন্ত্রটি প্রতিষ্ঠা করেছে সে রাষ্ট্রের সংকটের অন্ত নাই, কোথায়ও কোন দিক-নির্দেশনার চিহ্ন পরিদৃশ্যমান নয়। সামাজিক সভ্য এবং ধর্মীয় কুসংস্কার সাম্প্রতিককালে  এমন প্রচণ্ড আকার নিয়ে দেখা দিয়েছে, অনেক সময় মনে হয় এই জাতি মেরুদণ্ডের উপর থিতু হয়ে কোনদিন দাঁড়াতে পারবে না।  মধ্যযুগীয় ভূত এই জাতিকে এমনভাবে আষ্টে-পৃষ্টে বেঁধে রেখেছে তার নাগপাশ কখন কিভাবে ছাড়াতে পারবে এমন কথা একরকম চিন্তা করাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান   অস্থিরতা এবং মধ্যযুগীয় ধর্মীয়  বদ্ধমতের পুনরুত্থানের একটি কারণ আমি নির্দেশ করতে চাই।  শুরু থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নেতৃ্ত্বে যে দলটি গিয়েছিল তার আদর্শিক বৃত্তটি বিশ্লেষণ করলেই সেটি ধরা পড়বে।  আওয়ামি লীগ বাংলাদেশের  মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। অন্যান্য দলও স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে।  কিন্তু আওয়ামি লীগের ভূমিকাটি যে প্রধান তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই  আওয়ামি লীগের কি পরিচয়? আওয়ামি লীগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ভাষানী ছিলেন আসাম মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী  নিখিল  বঙ্গ মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট এবং শেখ মুজিবুর রহমান নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। সুতরাং একথা বলা একটুও অযৌক্তিক হবে না যে, মূলত আওয়ামি লীগ মুসলিম লীগের একটা অংশ ।  পাকিস্তানের সঙ্গে বাস করে তাদের ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারছিল না বলে আওয়ামি লীগকে শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সূচনা করতে হয়েছিল। …” ৩  আওয়ামি লীগ যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু করেছিল তার স্বপক্ষে কিছু দূর্বল যুক্তি অবশ্যই উপস্থাপিত করা যেতে পারে, কিন্তু এই আন্দোলনের মধ্যে যে বাঙালির স্বাধীনতার একটা আকাঙক্ষা ফুটে উঠেছিল – একজন মুক্তিযোদ্ধা* হিসেবে কিছুতেই আমি এটা অস্বীকার করতে পারব না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর  থেকে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত বাঙালি যুব সমাজের অধিকাংশ যেভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নে  আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল – তার প্রমান পাওয়া গেল যখন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার  সংখ্যা মাত্রা ছয় মাসের মধ্যে লক্ষাধিক ছাড়িয়ে গেল। শত প্রতিকূলতা সত্বেও  পূর্বপাকিস্তানের একটা বড় সংখ্যক গ্রামীন সাধারণ মুসলমান মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা ও খাদ্য যুগিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এগিয়ে এসেছিলেন – তা কখনও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে  অভিহিত করা চলে না । স্বাধীনতার আকাঙক্ষা ব্যতিরেকে  শত শত  মুক্তিযোদ্ধা নিঃশেষে প্রাণদান করতে পারত না। অনেক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার পরিজন পাকিস্তানি দালাল, রাজাকার ও সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হলেও তারা শেষ পর্যন্ত  লড়াই চালিয়ে গেছে এবং বিজয়ী হয়েছে। এটাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস না বললে ইতিহাসের অপলাপ হয় ।  জনাব আহমদ ছফার মতে, শেখ মুজিব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য  হয়েছিলেন সে বিষয়ে একটু  আলোচনা করা উচিত বলে মনে হয়। যেদিন বাংলাদেশ প্রবাসী  সরকার মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ করলো ১৭ এপ্রিল ১৯৭১,  সে দিনটি মাত্র  ২৫ মার্চ  থেকে ২২ দিন পর। যে সমস্ত বুদ্ধিজীবীগণ, আমলাবৃন্দ  বা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঐ সময়ের মধ্যে ভারতে পৌঁছুতে পেরেছিলেন বা তার কিছুদিনের মধ্যে প্রবাসী সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের প্র্তি  সমর্থন দান বা সক্রিয়  অংশগ্রহণ করেছিলেন তার সংখ্যা নগণ্য বললে ভূল বলা হয় না। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের বাঙালি  রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবী সমাজের অধিকাংশই একথা বিশ্বাস করতেন যে ইসলামি পাকিস্তান ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের নামে যে আন্দোলন – সেটা বিচ্ছিন্নতাবাদ ছাড়া আর কিছু নয়। জনাব আহমদ ছফা সাহেবও তাই করবেন এটা অস্বাভাবিক  ছিল না। তদুপরি পূর্বপাকিস্তানের মুসলমানগণ পাকিস্তানের মতোই ভারতকে শত্রু হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত ছিল। সেই ভারতের সাহায্যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠিত হতে পারে তা কি বাঙালি মুসলমান মনেপ্রাণে কখনোও বিশ্বাসযোগ্য বলে ভাবতে পারত? যখন তাদের চোখের সামনে লক্ষ  লক্ষ বাঙালি হিন্দুর বাড়িঘর লুট হতে থাকল, বেদখল হল, ভস্মীভূত হল, মা-বোন ধর্ষিত হয়ে গেল – শুধুমাত্র প্রাণ রক্ষার তাগিদে প্রায় নব্বই লক্ষ হিন্দু বাঙালি ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হল, লক্ষ লক্ষ নিহত হয়ে গেল – তখন মুসলমান  বুদ্ধিজীবীরা কি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন না তাদের রক্ষা করার জন্য পাকিস্তানের কাছে কোন দাবি জানিয়েছিলেন? ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি বুদ্ধিজীবী গণহত্যা দিবস পালিত হয়।  যখন পাকিস্তান বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। ৩ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ শুরু হয়েছে । ভারত ও প্রবাসী সরকারের যৌথ বাহিনী ঢাকা দখলের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা কাদের ভরসায়, কাদের নিরাপত্তার আশ্বাসে নিশ্চিত হয়ে ঢাকায় বসবাস করছিলেন?  এতে  স্বাভাবিকভাবেই মনে হয়, শেষ পর্যন্তও তারা পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বাস হারাননি।   তিনি আরও লিখেছেন, “এই আওয়ামি লীগের আন্দোলন যতটা বেগ এবং আবেগ সঞ্চয় করেছে সমাজের  সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের নেতৃত্ব কবুল করে নিয়েছিল। কিন্তু সমাজের ভিতর  তারা কোন নতুন মূল্যচিন্তার জন্ম দিতে পারেনি; নতুন সংস্কৃতি নির্মান করতে পারেনি। তারা সেক্যুলারিজমের নীতিকে শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের অভ্যুত্থানের পর শেখ মুজিব সপরিবারে যখন নিহত হলেন তখন আর অনেকদিন পর্যন্ত আওয়ামি লীগ শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি।  মূলত আওয়ামি লীগই একমাত্র দল যারা আমাদের জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রামের উত্তাপ থেকে জন্ম নিয়েছে …

বাংলাদেশি মুসলমান সমাজ কোন পথে ? Read More »

বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের সম্পর্ক

বিমল প্রামানিক বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের সম্পর্ক আর পাঁচটা দেশের মতো নয়। যেহেতু ভারত বিভাজনের প্রাক্কালে  বাংলাও বিভাজিত হবে এ বিষয়টি পূর্ববর্তী সময়েই নির্ধারিত হয়ে যায়। বাংলার রাজনীতি, বাংলার সমাজ এমনকি বাংলার সংস্কৃতি পর্যন্ত বিভাজনের শিকার হয়। কেন এমনটা হয়েছিল তা পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের ইতিহাস পড়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে না। এর পিছনে রয়েছে মুসলমান দেশগুলির ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি। সব সময়ই তারা ধর্মের সঙ্গে ইতিহাসের মিশেলের উর্দ্ধে উঠতে পারে না, এর প্রধান কারণই হচ্ছে ক্ষমতাশীন সরকার এবং সমাজ – যেখানে ইতিহাসবিদ অসহায়; সেখানে ইতিহাস চর্চার কোন নিরপেক্ষতার অবকাশ নেই।  এ বিষয়টি গত স্বাধীনতা পরবর্তী পঁচাত্তর বছরের কঠিন বাস্তবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত  হিসেবে আমরা দেখতে পাচ্ছি। আরও একটি বিষয় গত পঞ্চাশ  বছরের বাংলাদেশি সমাজে প্রকট হয়েছে। যে সমস্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং উৎসব আবহমান বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে বাংলার গ্রামেগঞ্জে দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় অঙ্গ হিসেবে গত কয়েক শতাব্দীকাল মেহনতি মানুষের চিত্ত বিনোদন করে এসেছে – তা মাত্র কয়েক বছরে মানুষের জীবন থেকে  কিভাবে উধাও হয়ে গেল বা কেন তার প্রয়োজনীয়তা  আর অনুভূত হ্য় না – তা নিয়ে কী আদৌ আমরা  চিন্তিত ? যাত্রাগান, কবিগান, পালাগান, জারী, সারি, লোকগান, প্রভৃতি ছিল গ্রামীন জীবনের ঐতিহ্য তদুপরি, দেহতত্ত্বমূলক ফকিরি বা বাউল গান – যারা ছিল পৃষ্ঠপোষক বা শিল্পী তারাও সামাজিক চাপে  হারিয়ে যেতে বসেছে।  তার স্থান পূরণ করছে গ্রামে গ্রামে ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল। যার পিছনে রয়েছে অর্থ-বিত্ত এবং সামাজিক-রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসিরুদ্দিনের ইউসুফের ভাষ্য মত, শহুরে থিয়েটার আজ মৃতপ্রায়। সরকারি অসহযোগিতা ও সামাজিক প্রতিকুলতা এই মৃত্যু আরও ত্বরান্বিত করছে। আমরা যদি পিছনে ফিরে তাকাই, তাহলে সামাজিক অগ্রগতির কয়েকটি দিক কিছুতেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তা হলো বৃটিশ-বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা লড়াই এর ময়দানে জেল-জুলুম, ফাঁসি অত্যাচারের শিকার হলো –স্বাধীনতা- উত্তর কালে তারা সমাজে বা রাষ্ট্রে কী প্রতিষ্ঠা পেল – প্রকৃ্তপক্ষে তারাই প্রতিষ্ঠা পেল যারা বৃটিশদের সহযোগী বা সাহায্যকারী  হিসেবে কাজ করে অর্থবিত্ত –শিক্ষা দীক্ষায় অগ্রণী হয়েছিল। আর বিভক্ত পূর্ববঙ্গে হিন্দু স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম মুসলিম শাসনে একেবারেই চাপা পড়ে গেল। আর বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে বলতে গেলে শাসকদের ইতিহাস বললেই যথাযথ বলা হয় । শাসকের সাথে সাথে  ইতিহাসের পরিবর্তন।  ভারতের ইতিহাসকেও এক কথায় এর অন্যথাচারণ বলা যাবে না। শেখ মুজিব ইতিহাসের এই গতি-প্রকৃতি বুঝেই পাকিস্তানি কোলাবরেটর (collaborator)  তথা দালাল বা সহযোগিরূপে কর্মরতদের  ১৯৭৪ সালে সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিয়ে আসেন।  উনি কোটি কোটি মুসলমানদের শাস্তির মুখে দাঁড় করাতে পারতেন না, যারা তাঁর আত্মীয়স্বজন, এক সময়ের সহকর্মী, যারা তাকে ১৯৭০ সালে বিপুল ভোট দিয়ে পাকিস্তানি ক্ষমতার আসনে বসাতে চেয়েছিলেন।  এটাই বাংলাদেশের প্রকৃ্ত ইতিহাস। এবার আসি বাংলাদেশ এবং ভারতের জনগণের সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলিতে।  বিশেষভাবে বলতে হবে বঙ্গ বিভাগের ফলে যে বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার প্রত্যাবাসন ঘটেছে পূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতে ও পাকিস্তানে তার নিরসন ১৯৭১ সালেই হয়ে গেল বলে অনেকে ভেবেছিলেন – কিন্তু হয়নি। পূ্র্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশ থেকে হিন্দু মাইগ্রেশন (migration) বন্ধ তো হয়ই নি উপরোক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে ভারতে মুসলমান অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।  এর পিছনে  অনেক কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। ঐসব কারণে ভারতে NRC এবং  CAA এর  মতো  আইন চালু হয়েছে ।  এতে দু’দেশের জন সম্পর্কের অস্বাভাবিকতা বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে সকল দূর্বলতা ও অনৈতিকতার ফলে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি রোগী ভারতে এসে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা-কেন্দ্রগুলিতে – তাতে হাসপাতাল এবং ডাক্তারগণ আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বটে, বাংলাদেশি রোগীগণও উপকৃ্ত হচ্ছে বলা যায় আর্থিক এবং সুচিকিৎসা উভয়ক্ষেত্রে,  এক্ষেত্রে জনগণের সম্পর্ক অধিকতর মজবুত হচ্ছে। আর একটি বিষয়ে আমরা নজর দিতে পারি। তা হলো বাংলাদেশি এবং পশ্চিমবঙ্গের বই বিভিন্ন মেলায়  বিপণনের ব্যবস্থা।  আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি কলকাতা বইমেলা ছাড়াও বাংলাদেশি বই প্রকাশকদের  কলকাতায় আলাদা একটি  “ বাংলাদেশি বইমেলা” করা হয়ে থাকে। কলকাতার পাঠকরা বাংলাদেশি লেখকদের বই পড়ার যেমন সুযোগ পায় প্রকাশকরাও  ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হয়। অথচ কলকাতার বাংলা প্রকাশকরা বাংলাদেশের  কোন মেলায় তাদের বই প্রদর্শন  এবং  বিক্রয় করার কোন সুযোগ পায়না। এটা যদি ভারত সরকার বা বাংলাদেশ সরকারের কোন অঘোষিত নীতি হয়ে থাকে – তবে  এই বৈষম্যমূলক নীতির অবসান হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাঙালির চিন্তা ও মেধার বিকাশ কয়েকশো বছর ধরে এই অঞ্চলের বাংলাভাষী জনগণকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছে সেটা রুদ্ধ করার চেষ্টা আত্মঘাতী প্রচেষ্টার  সামিল বৈকি? কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের সরকার বাঙালি হিন্দু লেখকদের প্রবন্ধ, কবিতাসহ অন্যান্য লেখা বাংলাদেশের স্কুল সিলেবাস থেকে বাদ দিয়ে যে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি ইসলামি মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে তাকে মোটেই সমর্থন করা যায় না। যারা আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে নিজেদের  পরিচয় দিয়ে থাকে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতির অবারিত দ্বার রুদ্ধ করা একটা আত্মঘাতী জাতির লক্ষণ। বই বিপণনে বাধা দিয়ে ভারতীয় তথা কলকাতার প্রকাশকদের ব্যবসা বন্ধ করার চেষ্টা শুধু নিন্দনীয়ই নয় এতে ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের বাঙালি পাঠকদের।  বাংলাদেশের পাঠকদের সাহিত্য- সংস্কৃতির অমূল্য-ভান্ডার থেকে বঞ্চিত রেখে তাদের বাংলাভাষা ও সাহিত্যের  বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবাধ বিকাশের সুযোগ না দেওয়া বাঙালি জাতিকে শুধু মৌলবাদের দিকেই ঠেলে দেবে না, ভবিষ্যৎ প্রগতিও রুদ্ধ করবে। বাংলাদেশি বই ব্যবসায়ীদের ভারতীয় বাংলা বই বাংলাদেশের বাজারে অবাধ বিক্রয়ের  বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে তা থেকে একথা না বলে উপায় নেই যে, তাদের অধিকাংশের মন- মানসিকতায় এখনও সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি যুগের অন্ধকার থেকে বাংলাদেশের মুক্ত অঙ্গনের আলোর ছোঁয়া লাগেনি। শুধু ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ই নয় সরকারের ভূমিকাও নেতিবাচক। “জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এন সি টি বি)  কর্তৃক অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকগুলোতে যে ভূল ও তথ্য-ইতিহাস  বিকৃতির ছড়াছড়ি, একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়, এটি তিন ধরণের। এক, বানান ও তথ্যগত বিকৃতি; দুই, বাক্য গঠনে ভূলঃ তিন, মৌলবাদ ও সাম্প্রাদায়িক মনোবৃত্তির অনুপ্রবেশ  ঘটানো।  এক ও দুই নম্বরের ভুলগুলো সঠিক পরিকল্পনা এবং সুষ্ঠু  ব্যবস্থাপনার  অভাবে হতে পারে। কিন্তু তৃতীয় ভুলটি  পরিকল্পিত এবং যারা করেছেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই একটি সাম্প্রদায়িক জাতি রাষ্ট্র গঠনের জন্য এই কাজটি করে চলেছেন।“১ তথ্যঃ ১) প্রসঙ্গ কথা, পাঠ্য পুস্তকে সাম্প্রদায়িকী-করণ  -– বাদ দেওয়া হয়েছে যেসব লেখা, বাংলাদেশ  ঊদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ২০১৭,  ঢাকা।

The Amplitude of Saidpur Airport

The northern region of Bangladesh which is popularly known as North Bengal ( or, Uttar Banga or Uttaranchal in Bengali) has four full-fledged civilian airports in Rajshahi, Ishwardi, Saidpur and Thakurgaon, one STOL ( Short Take-off and Landing) in Bogura and an enormously extensive military airfield in Lalmonirhat. At present, Ishwardi, located in Pabna district, and Thakurgaon airports are inoperative though the earlier one was regularly used by civil aviation operators including Biman Bangladesh Airlines, the state owned national flag carrier of Bangladesh. Since 2014 the flight operations have been stopped in Ishwardi airport due to sharp decline in number of passengers to avail the air connectivity. The story of Thakurgaon airport is totally different and carries a long-standing dismal reality. The CAAB ( Civil Aviation Authority of Bangladesh) had started commercial flight services in 1977 after considerable renovation work but the services had to be stopped due to acute uneconomic response from the local populace which led to its closure in 1980. As the aviation reality shows only Rajshahi and Saidpur airports are functional at present. Both are domestic airports but have hugely profitable scope if upgraded to international ones with expanded state-of-the-art infrastructure and facilities.   The Govt. of Bangladesh under the farsighted and dynamic premiership of Sheikh Hasina, the illustrious daughter of Bangabandhu Sheikh Mujib, has explicit plans and projects to develop the entire aviation infrastructure and industry in Bangladesh to meet the burgeoning demands of fast growing economy and rapidly changing society of this young nation-state in Indian subcontinent.   In this paper I shall concentrate on the Saidpur airport which has an appreciable remunerative dimension due to its extremely favourable geographical location.   The Saidpur airport is located in the outskirts of the Saidpur town in Nilphamari district of Bangladesh. The Nilphamari district is part of the greater Rangpur sub-region in northern Bangladesh. Moreover the Saidpur town has an acclaimed past since the British colonial period. The town started to develop as a centre of commercial and industrial activities in undivided India after the establishment of a railway locomotive workshop in 1870. The large demand of labour to work in the railway industry invited in large scale influx and settlement of working class people from nearby Bihar. After the historic partition of India in 1947 and eventual creation of Pakistan as a separate homeland for the Indian Muslims greater number of Muslims from Bihar and erstwhile United Provinces ( present Uttar Pradesh) had come to settle in Saidpur and adjoining semi-urban areas. During the Pakistan period a cantonment and civilian airport had been established. The airport project was started in 1971, the most remarkable year in the history of Bangladesh, and completed in late 1970s. The airport became fully operational in 1979.   The saga of the construction of Saidpur airport is poignantly intertwined with the armed liberation struggle of Bangladesh in 1971. In that year the Pakistani military junta forcibly employed the local Bengali working class people to give labour in the project as the Saidpur-Parbatipur neighbourhood witnessed violent ethnic clashes between the migrant Urdu speaking staunch pro-Pakistani Bihari population and provincial pro-independence Bengali people in March when the erstwhile East Pakistan (now Bangladesh) was emotionally submerged in the vehement Bengali nationalistic torrents of non-cooperation movement called   by unquestioned leader Sheikh Mujibur Rahman.   The Saidpur airport is the only functional airport of Rangpur division is operating on 134.30 acres of land. It has 6000 metres of asphalt surfaced runway.   Presently the Biman Bangladesh Airlines and the private operators Novoair, Regent Airways and US-Bangla Airlines are offering aviation services from Saidpur to Dhaka, Chittagong and Cox’s Bazar to make it one of the busiest airports of the country.   Since 2018 after the announcement of Sheikh Hasina the Ministry of Civil Aviation and Tourism has initiated the expansion work of the Saidpur airport. For the complete implementation of this project 912.90 acres of land is needed to be acquired and about 5000 Taka crores will be required. The Nilphamari district administration will acquire 535 acres and Dinajpur administration will 317 acres of land. The process of proposed land acquisition is nearly complete.   Under the expansion and allied modernisation project of the Saidpur airport a new terminal complex, parking space for two aircrafts are going on in full swing. The construction of new taxiway, apron, cargo terminal building, air control tower, power house, pump house, fire station, administrative building, VIP and VVIO lounges, radar station are included under the project.   Except these, the construction of park parking space, approach road, peripheral patrol road, overhead water tank, etc. are also included in the expansion and modernisation plan.   The present 6000 metres of runway will be extended to 12000 metres to make the basic airport infrastructure eligible for a standard international airport. After the completion of the expansion-cum-modernisation plan Saidpur will be the fifth international airport in Bangladesh and one of the foremost regional hubs of air connectivity.   The geographical location of Saidpur airport makes it proximate to Nepal, Bhutan and northeast India including Siliguri corridor. In this backdrop both Nepal and Bhutan have expressed their sincere intent to use and utilise the aviation facilities of Saidpur.   In February 2020 bilateral meeting of foreign ministers of Nepal and Bangladesh, held in Meghna State Guest House in Dhaka the landlocked Himalayan nation proposed to use the Saidpur airport which is not very far from it and the Bagdogra airport is 160 kms away from the earlier. Again in third Foreign Office Consultation between Nepal and Bangladesh on bilateral issues the earlier country requested to allow Saidpur airport to be used for civilian purposes.   Similarly in September 2022 Bhutanese authorities have also proposed to the Bangladeshi counterparts to allow them to use Saidpur airport in order to increase regional trade and travel. The use of Saidpur airport along with Banglabandha and Burimari land ports by Bhutan is part of Bhutan-Bangladesh Transit Agreement which had been finalised at that time also. …

The Amplitude of Saidpur Airport Read More »

Bangladesh in the age of Hydrogen fuel

Drona Bandyopadhyay Hydrogen is the fuel of the future. The 21st century looks forward to utilise this abundantly available chemical element of the Earth. The hydrogen is found everywhere from the Earth to Sun. The hydrogen fuel which is generated through several chemical processes is non-toxic and clean in its essential features. It is also highly environment friendly and sustainable energy resource. The usage of  diatomic hydrogen fuel, though highly combustible, is a renewable kind of energy which can be produced from various sources of nature including water, biomass and sunlight. The hydrogen fuel can ensure the decarbonisation through the transition from expensive oil, gas and polluting coal to clean and green energy. The hydrogen is not only a fuel but also an energy carrier. It can be used to store, move and deliver energy from other sources. Not only from renewable sources the but also from fossils the energy can be stored in the form of hydrogen and later it can be used by converting it into fuel. The main sources of hydrogen fuel are water including household water, waste water, recycled water and even sea water and biomass like plants and agricultural products, solid waste, landfill gas and alcohol fuels. Solar energy is another source of hydrogen. 8Bangladesh is the land of water and waterborne. There are innumerable rivers, rivulets, rills, lakes and ponds. It is also primarily an agricultural country with a heavy monsoon and lush greenery. This is why biomass is readily available throughout Bangladesh. There is no of dearth of water and biomass in this deltaic geography of Bangladesh. This country can be an ideal one for producing hydrogen fuel in near future.  Within few decades Bangladesh can emerge as a hub of production and export of hydrogen due to its congenial geographical environment. Bangladesh has taken an important step to build its own hydrogen fuel infrastructure as the country has to meet the immense challenges of Climate Change without hampering the elephantine task of achieving economic development in this fiercely competitive world. The hydrogen fuel production and usage will also led to diversification of energy resources in the economy. The Ministry of Science and Technology of the Govt. of Bangladesh is implementing a pilot project through BCSUR( Bangladesh Council of Scientific and Industrial Research).The Chittagong Centre of BCSIR has established a Hydrogen Energy Laboratory and Processing Plant in its premises in 2021. The Ministry of Science and Technology has allocated 54 crore Taka for the realisation of the entire project which also includes a fuel charging station. The project was inaugurated on 20th January 2021 while the decision to establish such kind of a laboratory and production plant in 2017 and the project work started in on October 2018. The catastrophic advent of Covid pandemic had delayed the completion of this cherished project. The Hydrogen Energy Laboratory has been established to initiate research activities on the optimum usage of hydrogen as the fuel of the coming decades. This laboratory will conduct research on it. It will also ensure quality control and provide technological services in the arena of hydrogen fuel in such a manner where it will act as a national level centre of research and reference. This Hydrogen Energy Laboratory is first of its kind in Bangladesh and in future it will be the pivot of Hydrogen related research and development in the country. This laboratory will play a key role in large scale industrial and commercial production of hydrogen gas in future. In the Chittagong campus of BCSIR a Hydrogen fuel production plant has also been established. It will produce hydrogen fuel from two different sources which are biomass and water. As there are provision for producing the particular fuel from two sources, two separate production units have been established. The biomass based production unit will produce hydrogen  fuel through the process of gasification while the water based one will produce through the electrolysis of water. The biomass unit will produce 1.5 kgs of hydrogen fuel and the water one will 5.8 kgs in present scale. In coming years the combined production capacity can be increased to 29 kg if both the units work round the clock. The BCSIR authorities will also conduct training workshops for preparing skilled manpower in the emerging hydrogen fuel sector. The hydrogen  fuel is also economic in financial terms. To produce 1 kg of hydrogen 9 litres of water are required and it costs 850 taka while 0.87 kg of hydrogen can be produced from 20 kg of biomass and it will cost 900 taka. The fuel value of hydrogen is 120-142 MJ/kg which is three times greater than the traditional fuels like petrol, diesel, LPG ,natural gas and coal and also cleaner than the latter ones. A car can run 100.13 kms using 1 kg of hydrogen fuel and 16 kms using 1litre of petrol . In this sense hydrigen is highly economic mode of energy. Moreover 1kg of hydrogen provides 33.33 Kwh ( Kilowatt-hour) of energy but corresponding amount of petrol or natural gas provides 12Kwh or 14.7 Kwh, rrespectively. The hydrogen fuel is becoming popular all over the world as a cheaper and sustainable form of energy. It is estimated that the total market value of hydrogen fuel will be 600 US dollars by 2050. All the developed countries have made plans to generate maximum fuel from hydrogen by 2030 including Japan and South Korea. UK has set a target to produce 5GW of hydrogen energy by 2030. India and China are also not lagging behind. Both the giant economies are making vast strides in hydrogen sector. The Govt. of India has approved the National Green Hydrogen Mission on 4th January 2023 with an initial outlay of Rs. 19,744 crores  though it was launched by Prime Minister Narendra Modi  on 15th August 2021 commemorating India’s 75th independence celebrations as a derivative of National Hydrogen Policy framed and notified by the Govt. of India in February 2021 for compliance by all the concerned stakeholders.  …

Bangladesh in the age of Hydrogen fuel Read More »

Bangladesh-China India Trade Development

Sankor Sarkar ( Bangladesh) Bangladesh is geographically enclosed by India from three sides. Actually, India is a friendly neighbouring country like Nepal, Bhutan, Mynamar, Sri Lanka. India helped Bangladesh in many ways during the liberation war in 1971. More than 11000 Indian army sacrificed their lives during the freedom struggle of Bangladesh. India provided food, shelter and medical treatment for nearly one crore of refugees  from Bangladesh for a period of  nearly an  year.   This had created a favorable  international opinion for achieving the goal of independent Bangladesh. Later on, Bangladesh emerged as an independent country. Pakistan surrendered to the joint command of  India and Bangladesh. Bangladesh is ever grateful to  India for her liberation. Gradually, India and Bangladesh joined the Regional Cooperation on Trade and Commerce, Communication, Education, Culture, Water sharing, Fuel, Defence, even war against terrorists & separatists also.   Recently, Indian Foreign Secretary Mr. Vinay Kawatra visited Bangladesh in the middle of  February 2023. During his visit, he met Bangladeshi Foreign Secretary Mr.  Masud bin Momen  and talked on bilateral discussion of both the countries.    Bangladesh and India already decided to work through Comprehensive Economic Partnership Agreement (CEPA) for the economic development of both the  countries. Now China also wants to work for all out economic development as a partnership with Bangladesh.  The concerned departments of both the countries have started to  work primarily. Even the concerned officers of both the  countries are working now to prepare a structural frame of the agreement.  An officer of Bangladesh Commerce Ministry says that India and China  are the biggest Partners of our Trade Commerce and Development Project.  Bangladesh decided  for CEPA agreement with India.  On the other hand, Bangladesh is also positive with China regarding CEPA. Not only that being a developing country after 2026 Bangladesh will not get its existing world marketing facilities. For that reason, Bangladesh is thinking for various types of Commercial Agreements like PTA, FTA, CEPA ctc by the instruction of topmost authority of Bangladesh Government and accordingly concerned Ministries of Bangladesh. Regarding CEPA, concerned sources says, China has been  knocking Bangladesh again and again to start discussion formally and Chinese High Commissioner to Bangladesh Mr. Yao Uean has discussed with Bangladeshi Commerce Minister Mr. Tipu Munshi on 2nd  February 2023. Perhaps, Bangladesh and China will arrange a bilateral discussion regarding CEPA  during coming  March 2023. Though China gave tax concessions  to Bangladesh but Bangladesh has not yet been  able to increase export to China. Bangladesh and China both countries are the member of Asia Pacific Trade Agreement(APTA). As a member of APTA, Bangladesh has been getting duty-free facility in Chinese local market for 83 items and  under WTO agreement Bangladesh has been gaining  more than 5000 items duty free facility in Chinese market. Besides, China has increased export business in Bangladesh and on the other hand, Bangladesh could not increase export business to China. As a result, day by day, trade and commerce value difference is increasing between Bangladesh and China. In 2021-2022, Bangladeshi export business reduced to 683 million US Dollar. On the other hand, China has increased export business to Bangladesh up to 26253 million US Dollar. The difference of business between the  two countries is 25569 million US Dollar. At last,  it is seen that 13 percent  Bangladeshi goods export reduced to Chinese  market though China has given 98% duty free for Bangladeshi goods. Not only that Export Import Trade business difference between Bangladesh with the biggest business partner China increasing geometrically day by day. In this circumstances, Bangladesh is very anxious to this type of export import trade difference between the two countries. For this reason, Bangladesh is planning to take steps for check and control. Recently, Bangladesh Foreign Minister Mr. Abdul Momen met new Chinese Foreign Minister Mr. S Gang at the Hazrat Shahjalal  International Airport on his way to Africa visit. Mr Momen said to Chinese Foreign Minister that China had agreed and gave commitment to enter Bangladeshi goods into Chinese market as duty free. But Bangladeshi Exporters are not getting that facility, regarding this matter he requested the Chinese Foreign Minister to solve that problem. On 2nd February 2023, when the Chinese High Commissioner met Bangladeshi Commerce Minister Mr. Tipu Munshi said the matter in same voice. He requested to the Chinese High Commissioner as  Export Import trade difference is very big  so he requested the Chinese High Commissioner to give duty free market for Bangladeshi products in Chinese Market and he also told for Chinese Investment in Bangladesh.   We have come to know from Bangladeshi newspapers that West Bengal merchants from Kolkata want to do business in Bangladesh. In that case not only from Kolkata, but also the businessmen  from other parts of India can think about the matter positively for export import business in Bangladesh like other Indians who have been engaged in business in   Middle East, Hong Kong, Singapore and all over the world.

একুশের চেতনার অবক্ষয়

Dr. Kakoli Sarkar  ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটি বাংলাদেশের শহীদ দিবস, ভারতবর্ষে তথা সমগ্র বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্কুল, কলেজে, এমনকি ক্লাবগুলিতেও উৎসাহ–উদ্দীপনা চোখে পড়ার মতো। এ কথা ঠিক যে, উৎসাহ–উদ্দীপনা হবারই কথা কারণ, পশ্চিমবঙ্গের জনগণেরও মাতৃভাষা বাংলা। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভারতবর্ষের ত্রিপুরা রাজ্যে, আসামের দক্ষিণাঞ্চলে এবং আন্দামান–নিকোবার দ্বীপপুঞ্জে অধিকাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু ওইসব অঞ্চলে ২১শে ফেব্রুয়ারি উদযাপন নিয়ে উৎসাহ–উদ্দীপনা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেক কম। বিগত ৪/৫ বছর ব্যাপি পশ্চিমবঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন নিয়ে আতিশয্য চোখে পড়ার মতো। আমি একথা বলছি না যে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পশ্চিমবঙ্গে পালন করার প্রয়োজন নেই। আমি জানি বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা ও স্বাধিকার রক্ষা করার অধিকার আছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে যে বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি, তা হল– পশ্চিমবঙ্গে ২১ শে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করতে গিয়ে অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন আমরা বাঙালি হলেও ভারতীয়। তাদের কাছে ভারতীয় হয়ে ওঠাটা যেন এক কষ্টকর বিষয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি পালন করতে গিয়ে তারা বাংলাদেশের অনুকরণে শহীদ দিবস পালন করছেন। বাংলা ভাগ নিয়ে তারা বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করছেন। প্রশ্ন উত্থাপন করাটা দোষের কিছু নয়, কিন্তু কেউ যদি মনে করে আমাদের এক ভাষা তাই আমাদের এক রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়াটা উচিত, তাহলে সেটা নিশ্চয়ই দোষের। বিগত বছরে ২১শে ফেব্রুয়ারি উদযাপন উপলক্ষে আমি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিকটবর্তী একটি স্থানে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিই। সেখানে কিছু বক্তা যা বললেন তার সারাংশ হল এই, “বাংলা ভাষাকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে তাচ্ছিল্য করা হয় এবং বাঙালীদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, সে কারণে আমাদের উচিত হিন্দি ভাষা পরিত্যাগ করা। আমরা কেন হিন্দি শিখবো, ইত্যাদি ইত্যাদি।” আমি সেই অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, “আপনি জাতীয় সংহতি নষ্ট করছেন”। আমার বক্তব্য ঠিক এখানে। পশ্চিমবঙ্গের জনগণ কেবল বাঙালিই নয়, তারা ভারতীয়ও বটে। তাদের বাঙালিত্ব কেউ কেড়ে নিচ্ছে না। নিজেরা তাদের অন্তরে বাংলা ভাষা তথা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন। তাই বলে জাতীয় সংহতি আপনি নষ্ট করতে পারেন না। মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধার আতিশয্য দেখাতে গিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসছে ( বিভিন্ন স্থানে বৃহৎ আকারের শহীদ মিনার তৈরি করার ধুম পড়ে গেছে)। কেউ অবশ্য বলতে পারে, বাংলাদেশের এবং পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিগত মিল আছে, পার্থক্য নেই। কিন্তু তা সঠিক নয়। পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের সংস্কৃতিগত কিছু মিল থাকলেও পার্থক্য আছে। সরস্বতী পুজোতে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়ানো পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, বাংলাদেশের নয়। সামনে দোল। দোলের আগে বুড়ির ঘর পোড়ানো পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতি, বাংলাদেশের নয়। বর্তমানকালে বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদের প্রসারের ফলে সংস্কৃতিগত অনেক পার্থক্য এসেছে। ১৯৯২–৯৩ সালে আমি বাংলাদেশের রাজবাড়ী সরকারি কলেজে একজন মাত্র মেয়েকে বোরকা পড়ে যেতে দেখেছি, কোন হিজাব পরা মেয়ে দেখিনি। কিন্তু বর্তমানে ঐ কলেজে ৯০% মেয়ে বোরকা অথবা হিজাব পরে কলেজে যায়। বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে বহু পরিবর্তন হয়েছে। সেই পরিবর্তনগুলি থেকে আমরা বাঁচতে পেরেছি কি? উত্তর হল, না। কিছুটা পরিবর্তন পশ্চিমবঙ্গেও হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদ যেমন নারী সমাজকে প্রায় অবরুদ্ধ করে ফেলেছে, পশ্চিমবঙ্গেও তেমনি নারী সমাজ অবরুদ্ধ হতে শুরু করেছে। বর্তমানকালে বাংলাদেশের পরিচয় দেবার সময় বাংলাদেশের বহু নেতা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ৯০% মুসলমানের দেশ, কিন্তু অন্য ধর্মাবলম্বীরাও সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ৯০% মুসলমানের দেশ বলে কোনো দেশের পরিচয় দেওয়া যায় কি? তারা তো কেউ এই কথা বলে না যে, বাংলাদেশ ৫০% নারীরও দেশ, বহু লোক দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে–বাংলাদেশে এইরকম একটি দেশ। এ কথা ঠিক যে, পশ্চিমবঙ্গের এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান পূর্ব থেকেই হয়ে আসছে। বর্তমানকালে যেটা দেখা যাচ্ছে তা হল আমরা না বুঝেই বাংলাদেশের সংস্কৃতি কেবল নিতে ব্যস্ত। করোনা কালে আমি লক্ষ্য করলাম, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ওয়েবনার গুলি আয়োজন করা হয়েছিল, তার মধ্যে বহু ওয়েবনারে স্পিকার হিসাবে ছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। যদি প্রশ্ন করি, বাংলাদেশে যে সব ওয়েবনার হয়েছে তার মধ্যে আমরা পশ্চিমবঙ্গের কজন শিক্ষক স্পিকার হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছি? তাহলে তার উত্তর পাওয়া কঠিন। আমাকে খুঁজে দেখতে হবে কজন আমন্ত্রণ পেয়েছেন। বাংলাদেশের শিল্পী সাহিত্যিক অবশ্যই আমাদের কাছে আদরণীয়। আমরা তাদের আমন্ত্রণ করি এবং করবো। কিন্তু প্রশ্ন হল, তারা আমাদের কতজনকে আমন্ত্রণ করছে। কেবল বাংলাদেশের বইয়ের জন্য পৃথক বইমেলার আয়োজন করা হয়। গত বছর ডিসেম্বরে কলকাতার কলেজ স্কয়ারে ২ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের বইমেলা উদযাপিত হলো। সেখানে ৬৮ টি স্টল ছিল, যেখানে বাংলাদেশের ৭৫টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নেয়। আমরা সকলে উৎসাহের সঙ্গে বাংলাদেশের বই কিনেছি। এটা অবশ্যই ভালো ব্যাপার। কিন্তু প্রশ্ন হল, বাংলাদেশে কবার ভারতের বইমেলা হয়। ভারতবর্ষে কি বড় চিন্তক নেই, ভালো সাহিত্যিক নেই, নাকি ভালো বই নেই। তবে কেন তারা আমাদের বই কেনার জন্য ডাকে না? এই প্রশ্নগুলি খুব স্বাভাবিক।  ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য গৌরব–গাঁথা। সেদিন বাংলাদেশে  (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) বাঙালিরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। জীবনের বিনিময়ে তারা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছে। এই ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশ অধিক তাৎপর্যপূর্ণ এই জন্য যে, এই গণআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এক গণজাগরণ এবং চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। সেই চেতনা ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনা। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে যখন দেশভাগ হয় তখন পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) যে চেতনা ছিল তা নিশ্চয়ই ধর্মভিত্তিক চেতনা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগের মাসে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রস্তাবিত পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে উর্দুর পক্ষে দারুণভাবে ওকালতি করেন। তিনি বলেন, “ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সংহতি বজায় রাখার জন্য যেমন হিন্দি ভাষাকে সেই দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেবার বিষয়টি একরকমভাবে চূড়ান্ত হয়ে গেছে, ঠিক তেমনিভাবে প্রস্তাবিত পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার লক্ষ্যে উর্দুকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার বিষয়টিও চূড়ান্ত করা অপরিহার্য”।১   সেই তখন থেকেই অর্থাৎ দেশভাগের পূর্ব থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। তখন থেকেই বাঙালিরা এর বিরোধিতা করে আসছিল। তবুও দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলো এবং তারা (বাংলাদেশীরা) ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পাকিস্তানের সাথে ঐক্যবদ্ধ হলেন। কিন্তু দেশভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করতে পারলেন ধর্মীয় চেতনা প্রধান হতে পারে না। ধর্মীয় চেতনার ধাক্কায় তারা নির্যাতিত, নিপীড়িত। তাদের মধ্যে তখন অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটে। ফলে ভাষা আন্দোলনে তা প্রকট হয়ে ওঠে এবং সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণাও বটে। ১৯৭১ সালে জন্ম নিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। সেই জন্য বাংলাদেশের কাছে ভাষা আন্দোলনের চেতনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা পশ্চিমবঙ্গের জনগণ আমাদের মধ্যে এই চেতনার দ্বন্দ্ব কোনদিন ছিল না, থাকার কথা নয়। ভাষা শহীদই যদি মূল আলোচ্য বিষয় হয় তাহলে ১৯৬১ সালে আসাম রাজ্যে যেসব বাঙালি বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিল আমরা পশ্চিমবঙ্গের জনগণ কজন তাদের কথা স্মরণ করি, বর্তমান প্রজন্মে জানেই বা কজন। বাংলাদেশ যদি সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধরে রাখতে পারতো তাহলে পশ্চিমবঙ্গের সাথে সংস্কৃতিগত এত পার্থক্য তৈরি হতো না, আর এই লেখার অবতারণা করারও প্রয়োজন পড়তো না। ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতির সাথে ধর্ম সাপেক্ষ সংস্কৃতির পার্থক্য অবশ্যই …

একুশের চেতনার অবক্ষয় Read More »