Center For Research In Indo

Articles

India Bangladesh Relations: An Ideational Bond

DRONA BANDYOPADHYAY SALBONI GOVERNMENT COLLEGE ‘TABA LAAGI AAMI EI PHULBONEY GATHEY KOTO PHULHAAR PHUL HOYE TUMI PHUTECHHO KI TAI DITEY MOREY UPOHAAR’ (IN THE GARDEN OF FLOWERS I MAKE FLORAL GARLAND FOR YOU, THIS IS WHY YOU HAVE BLOSSOMED AS FLOWER TO PRESENT A GIFT TO ME). The above couple of Bengali lines is part of a hit song, recorded by none other than Shahnaz Begum for the musical play ‘Hazar Tarer Bina’, a timeless creation of Enamul Haq and Altaf Mahmud in 1967. More than fifty years have been passed since 1967. Our world of music, theatre, politics and all other human institutions and endeavours have gone through a colossal change as change is the only constant factor in evolutionary human existence. But these mentioned lyrical words are not only a mesmerising musical treat for me and many others but also carries a deep innermost meaning and containing a denotion of self-giving in return of realisation of a cherished goal of a beloved one. In the broader context of bilateral relationship between India and Bangladesh, I think, the above-mentioned lyric is aptly applicable. The role of the state and people of India is intricately interwoven with the sacrifice and determination of freedom-loving people of Bangladesh in the mission of establishing an independent Bangladesh. Popularly it is well known that 17,000 soldiers of Indian armed forces had sacrificed their lives along with the spontaneous support of the common folk of India for the oppressed people of occupied Bangladesh in 1971 who took a dangerously brave decision to launch an armed struggle to liberate their deltaic motherland from the exploitative clutches of Pakistani rule which was not only geopraphically distant but also socio-economically debilitating. The sad and sorrowful tale of long twenty-three years of Pakistani rule had purposively demoted the demographically majoritarian Bengalees into a raw material supplying and foreign-exchange earning lucrative tract of fertile lands which was the richest province in Indian subcontinent before the advent of the Britishers. Bengal was not only a prosperous part of India in history but also carries a very intellectually vigorous tradition contributing her talent in every sector of modern educational, cultural and social exercises. Raja Rammohan Roy to Satyajit Roy, a 200 year old blazing journey of renascent accomplishments. The ingenious contribution of the Bengali Muslims in this journey is already proven and widely recognised in modern Indian subcontinent. The extraordinary personalities like Mir Mosharraf Hossain, Syed Ismail Hossain Siraji, Kazi Nazrul Islam, Begum Rokeya, Qudrat-i-Khoda, Bulbul Chowdhury and few others had generated a distinct social consciousness among the educated Bengali Muslims which was very difficult to be subjugated only in the name of Islamic faith and brotherhood because the civilizational achievements in the early centuries of Islam during the lifetimes of Prophet Muhammad and Four Khalifas was and will remain, an  incessant source of inspiration for the Bengali speaking  Muslims to uplift themselves to a level of  social comprehension and cultivation of lofty ideals like women emancipation, freedom of the oppressed, rational thinking and other allied thoughts. These mentioned ideals are worshipped in India as her classic values of great enduring civilizational tradition since time immemorial. But in imperialist fabrication of Pakistan, minimum rearing of any progressive idea and thought was regarded as a serious threat to the artificial state. Bengal, the stormy petrel, had thrown that serious challenge to the very idea of Pakistani state just after a year of its inception in 1947. The critically logical and highly emotive issue of ‘state language’ had shown the weak foundation of the Pakistani state. The common Bengali Muslims, who had an age-old tradition of following Islam in tandem with embracing folkish culture of Bengal as true sons-of-the-soil. The humongous volumes of ‘Puthi’ literature bear a bright testimony to it. It was a historically raw fact that the Bengali Muslims overwhelmingly supported the Pakistan movement in 1940s but that did not mean they bartered their socio-economic rights for religious unity and identity. From late 1940s they had proven, time and again, the depth and strength of their association with Bengali language, script and consciousness for the rights of their land and people. The climax came in March 1971 when 1970’s electorally victorious Awami League under the astounding and electrifying leadership of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman  had been denied the right to form government at the centre in Pakistan. The well-entrenched military junta and some ‘shrewd’ and ’power-loving’ politicians of West Pakistan could not digest the keen and sharp verdict of an impoverished peasant community in favour of a more democratic and decentralised Pakistan though the same peasant community played an equally intense and forceful historical role to realise Pakistan in post-colonial Indian subcontinent through democratic ways and means two decades ago. The rest is history. The modern state of India which is also the successor of the great Indian civilisation uphiolds the core values like democracy, tolerance, pluralism, non-violence, emancipation of the downtrodden, ens of the exploitation. The birth pangs of Bangladesh through a brutal liberation war had paved the path for the proud realisation of same righteous values in Bangladesh.  It can be mentioned here that the ‘Proclamation of Independence’ (17th April 1971) bears the acknowledgement of the shared values cherished by India and Bangladesh. India’s glorious role of national sacrifice and humanitarian intervention to assist Bangladesh to become independent for the recognition and understanding of universal humanist values will remain  an exceptional exemplication of validating some concrete values in coming ages.

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কয়েকটি কথা

বিমল প্রামানিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রচলিত যে সকল সংজ্ঞা আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেখতে পাই, তা সব সময় পড়শি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে প্রয়োগের সাফল্য আসে না বা দুই দেশের জনগণের উন্নয়নে ও অগ্রগতিতে সহায়ক হয় না৷ তাছাড়া পড়শি দেশগুলির মধ্য স্ব স্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতি বিষয়গুলিও পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রের দিকে একবার আলোকপাত করতে পারি। পঁচাত্তর বছর পূর্বে ভারতের একটি রাজ্য বঙ্গদেশ বিভক্তির ফলে তার মুসলিম প্রধান পূর্বাংশ পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গঠিত হয় একটি মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান। আর সেই পাকিস্তানেরই পূর্বাংশ (পূর্ব পাকিস্তান) ১৯৭১ সালে একটি সশস্ত্র লড়াই এর মধ্য দিয়ে ভারতের সক্রিয় সহযোগিতা ও সাহায্যে বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত। একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাহলো, গত পঞ্চাশ বছর বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ বড়ই সংঘাতময়, বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ ও রক্তাক্ত। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপরে তার প্রভাব পরিলক্ষিত হওয়াই স্বাভাবিক। পড়শি রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতার নজির আমাদের উপমহাদেশে মোটেই বিরল নয়। এর পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গীতে ভারত বিভাজন। এমনকি জাতিগত বিভাজনও এড়ানো যায়নি। যার জের এখনও আমরা টেনে চলেছি। এর পিছনেও রয়েছে ঐতিহাসিক কারণ। আর এই জাতিগত বিভাজনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তি গ্রাসের প্রবণতা। এমন প্রবণতা দুনিয়ার অন্যদেশে আছে বলে জানা নেই। এশিয়ার অন্য একটি দেশ কোরিয়া সেখানে জাতিগত বিভাজন হলেও ধর্মীয় বিভাজন না থাকায় এই সমস্যা নেই। কিন্তু পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে এই সমস্যা প্রবল। ‘Islamisation has always been, historically a ‘power concept’. এদিক থেকে দেখতে গেলে ethnic identity বা জাতিগত পরিচয় ধর্মের নিরিখে অনেকটাই গুরুত্বহীন। এটি মৌলবাদী ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী। ভারতীয় উপমহাদেশে এই মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গী থেকে এসেছে দ্বিজাতি তত্ত্ব — যা ভারতবর্ষকে দ্বিখন্ডিত করেছিল। ইতিহাসের অধ্যায় ভূলে গেলে চলবে না। ইসলামের সামাজিক কেন্দ্রাভিমুখী ধর্মীয় প্রবণতা থেকে উদার গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় উত্তরণ পাকিস্তান বা বাংলাদেশে এখনও সম্ভব হয়নি। ফলে ঐসব দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনসংখ্যা দ্রুত ক্রমহ্রাসমান। এসকল বিষয়ও ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর ছায়াপাত করছে। এসকল বিষয় মাথায় রেখেই ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির অগ্রগতিও সমাধানের কথা ভাবতে হবে। তদুপরি রয়েছে দুদেশের সরকারগুলির বিদেশনীতির বৈচিত্র ও সময়ে সময়ে পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পরিবর্তন। স্বাধীনতা-উত্তর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একেবারেই মধুর ছিল একথা বলা যায় না। বর্তমান নেতৃত্ব ভারতে ও বাংলাদেশে একটি নিরন্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলেছে দু’দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের শান্তিপূর্ণ, উভয়দেশের গ্রহণযোগ্য সমাধান উদ্ভাবন ও বাস্তবায়নে। ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে যা দেশ বিভাগের পর থেকে চলে আসছিল, দু’দেশের সীমান্ত নির্ধারণে কোন সমস্যা নেই। ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসার ঘটেছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, গরুপাচার প্রভৃতি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে — যা দুই দেশের জনগণের বিশেষভাবে সীমান্ত জনগণের দৈনন্দিন জীবন-যাত্রায় ব্যাপকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কারণ এই সমস্যাগুলি দুই দেশের সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলার সাথে সরাসরি জড়িত। আর একটি বিষয় হচ্ছে, দু’দেশের সংশ্লিষ্ট নদীর জলবন্টন। জল- বন্টন সমস্যার উদ্ভব হয় দেশ বিভাগের ফলে। ভারত ও চিনে উৎপত্তি ছোট বড় অনেকগুলি নদী ভারতের পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারত একটি যুক্তরাজ্য। ফলে রাজ্যগুলির অধিকারও গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ঐক্যমত এক্ষেত্রে গুরুত্ব পায়। তাছাড়া, রাজ্যগুলির জল ব্যবহারের উপর কেন্দ্র স্বাধীন মতামত চাপিয়ে দিতে পারে না। এসমস্ত বিষয়গুলি মাথায় রেখেই দু’দেশের মধ্যে জল বন্টনের চুক্তি হয়ে থাকে। দেশ-বিভাগের সময় এসব বিষয় ভেবে দেখার প্রয়োজনীয়তা ও সময় কি নেতাদের হাতে ছিল ! আর একটা বিষয় আমাদের ভেবে দেখতে হবে, তা হলো পড়শি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন শাসন প্রণালী, বাংলাদেশের শুরু থেকেই একটি অঘোষিত/ঘোষিত নীতি সমাজে এবং রাষ্ট্রে কার্যকর রয়েছে যে সংখ্যালঘু নাগরিকদের নিপীড়ন/নির্যাতন/বিতাড়ন। তার ধাক্কা এসে আছড়ে পড়ছে ভারতের সমাজে এবং অর্থনীতিতে। ফলে বাংলাদেশের সংলগ্ন ভারতের রাজ্যগুলিতে নানা সমস্যা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে এর ঢেউ লাগছে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজনীতিতে। এর ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে। ব্যক্তি গন্ডির বাইরে রাজনীতিতে ধর্ম গুলিয়ে ফেললে সমাজে তার প্রভাব আটকানো যায়না।  পাকিস্তান/আফগানিস্তান এর’ খেসারত দিচ্ছে। আমাদের ভাবতে হবে ভারত – বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে আমরা কোন দিকে অগ্রসর হবো। গণতান্ত্রিক দেশে সরকার পরিবর্তন গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এর জন্য বিদেশ নীতি বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়া উচিত নয়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত তৈরী হয় দু’দেশের নানা স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহের উপর, কখনও কখনও ঐতিহাসিক কারণও এর পিছনে থাকে। পড়শি রাষ্ট্র হলেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভাল থাকবে এমন নয়। পাকিস্তান- ভারত সম্পর্ক এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর অনেক সময়ই বৈশ্বিক প্রভাব কাজ করে থাকে। ভারত উপমহাদেশে বা দক্ষিণ এশিয়ায় এমন নজির বিরল নয়, দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই তা নানা সন্দেহ ও বাধার জন্ম দিতে পারে। কিন্তু আমাদের দুই দেশেরই পারস্পরিক স্বার্থ এবং অভ্যন্তরীন স্থিতিশীলতার কথা মাথায় রেখে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে দু’দেশের জনগণের মঙ্গলের লক্ষ্যে। উদার, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সমাজ তৈরি করার লক্ষ্যে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল। সংবিধানের প্রস্তাবনায় মূল নীতি — সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিসমূহ স্পষ্ট হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৩ থেকে সংবিধান নানামাত্রিক অভিঘাতের শিকার হয়। বিশেষত, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডের পর, সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে মূল লক্ষ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়। সংবিধান সংশোধনীর প্রথম পদক্ষেপটি ছিল এইরূপ “যে সকল মহান আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ ঐ সংবিধানের মূলনীতি হইবে।” কিন্তু এর পরিবর্তিত সংশোধনটি ছিল …  “যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল, সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস; জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচারের সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূল নীতি হইবে।” অর্থাৎ, সংশোধনী অংশে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস যুক্ত করে এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল ও সমাজতন্ত্রের ভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক আদর্শ ও উদ্দেশ্য পরিবর্তন করা হয়েছে, যা প্রথম সংবিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এখানে ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস ও আল্লাহর উপরে পূর্ণ আস্থা রাখায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের অবদানকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্ৰীষ্টান প্রকৃতপক্ষে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এটা পাকিস্তানী ধ্যান ধারনারই আর একটা পথ। যেখানে সংখ্যালঘু অধিকার ও অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে । ১৯৭৩ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী আইন পাশ হয় এবং এটি ঐ সালের .২৫ নম্বর আইন, সংশোধণীর মাধ্যমে ২৬, ৬৩, ৭২, ১৪২ নং অনুচ্ছেদ সংশোধনকরা হয়। এই সংশোধনীর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবিধানের চরিত্র ছিল অত্যন্ত গণতান্ত্রিক ও মানবিক; যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকারের ঘোষণা দেওয়া ছিল এবং তা স্থগিতের কোন বিধান বিদ্যমান ছিল না। কিন্তু এই সংশোধনীর মাধ্যমে মৌলিক অধিকার স্থগিতের অধিকার যেমন সরকারের হাতে দেওয়া হল তেমনিভাবে এর অপব্যবহার রোধের কোন বিধান রাখা হল না। এথেকে একথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, বাংলাদেশকে পাকিস্তানী …

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কয়েকটি কথা Read More »

বাংলাদেশে ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিষ্ঠাতে সংবিধানের ভূমিকা

পূর্ণিমা নস্কর সংবিধান হল যে কোন রাষ্ট্রের জীবন বিধান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নিশ্চিত ও স্বীকৃত করা এবং আগামীর দিক নির্দেশনার জন্য প্রাথমিক প্রয়োজনে তৈরি হয় বাংলাদেশের সংবিধান। সম্ভাবনাময় সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে প্রণীত হয়েছিল ১৯৭৩ সালের সংবিধান । উদার, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সমাজ তৈরি করার লক্ষ্যে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল। সংবিধানের প্রস্তাবনায় মূল নীতি — সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিসমূহ স্পষ্ট হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৩ থেকে সংবিধান নানামাত্রিক অভিঘাতের শিকার হয়। বিশেষত, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডের পর, সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে মূল লক্ষ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়। সংবিধান সংশোধনীর প্রথম পদক্ষেপটি ছিল এইরূপ “যে সকল মহান আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ ঐ সংবিধানের মূলনীতি হইবে।” কিন্তু এর পরিবর্তিত সংশোধনটি ছিল …  “যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল, সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস; জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচারের সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূল নীতি হইবে।” অর্থাৎ, সংশোধনী অংশে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস যুক্ত করে এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল ও সমাজতন্ত্রের ভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক আদর্শ ও উদ্দেশ্য পরিবর্তন করা হয়েছে, যা প্রথম সংবিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এখানে ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস ও আল্লাহর উপরে পূর্ণ আস্থা রাখায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের অবদানকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্ৰীষ্টান প্রকৃতপক্ষে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এটা পাকিস্তানী ধ্যান ধারনারই আর একটা পথ। যেখানে সংখ্যালঘু অধিকার ও অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে । ১৯৭৩ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী আইন পাশ হয় এবং এটি ঐ সালের .২৫ নম্বর আইন, সংশোধণীর মাধ্যমে ২৬, ৬৩, ৭২, ১৪২ নং অনুচ্ছেদ সংশোধনকরা হয়। এই সংশোধনীর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবিধানের চরিত্র ছিল অত্যন্ত গণতান্ত্রিক ও মানবিক; যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকারের ঘোষণা দেওয়া ছিল এবং তা স্থগিতের কোন বিধান বিদ্যমান ছিল না। কিন্তু এই সংশোধনীর মাধ্যমে মৌলিক অধিকার স্থগিতের অধিকার যেমন সরকারের হাতে দেওয়া হল তেমনিভাবে এর অপব্যবহার রোধের কোন বিধান রাখা হল না। এথেকে একথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় প্রত্যাবর্তনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রইল। বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে চতুর্থ সংশোধনীটি (১৯৭৫ সালের ২৫ শে জানুয়ারী) আলোচিত, বিতর্কিত ও সমালোচিত সংশোধনী। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সংবিধানের একটি মৌলিক পরিবর্তন ঘটানো হয়। চতুর্থ সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতির হাতে অসীম ক্ষমতা অর্পন করা হয় এবং তিনি একবার নির্বাচিত হলে তার অপসারণ প্রক্রিয়াকে প্রায় অসম্ভব করে দেওয়া হয়৷ “সংবিধানে ৫(ক) নামে একটি নতুন ভাগ সৃষ্টি করে ১১৭ (ক) নামে একটি নতুন অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। এর মাধ্যমে দেশের সকল রাজনৈতিক দল বন্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসন প্রবর্তন করা হয়। দেশে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে সকল ক্ষমতা অর্পন করা হয় রাষ্ট্রপতির হাতে।” বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীই সেদেশের উদার গণতান্ত্রিক ভাবধারাকে বাতিল করে বাংলাদেশের ইসলামপন্থী হয়ে ওঠাকে সহজতর করে তোলে। উদার বাঙালি মানসিকতাকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের প্রস্তাবনার উপরে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” যুক্ত হওয়ার ফলে মুসলমান সমাজে একটি দ্বিতীয় পাকিস্তানের ধারণা তৈরি হয়ে গেল। আর সংখ্যালঘু হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান জনগণ পাকিস্তানের মতোই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়ে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হল। এই পঞ্চম (১৯৭৮ সাল) সংশোধনীর ফলে ইসলামী রাষ্ট্রগুলির প্রতি বাংলাদেশের যে ঝোঁক বৃদ্ধি পেল তা সরকারী ঘোষণার মাধ্যমেই পরিষ্কার হয়ে যায়। ইসলামী আদর্শকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ও আদর্শকে গুরুত্বহীন করার জন্য সংগঠিত হয়েছিল সপ্তম সংশোধনী (১৯৮৬ সালের ১০ই নভেম্বর)। মূল সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিসমূহ ৪(১) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত ছিল তা হল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা … তাকে সংশোধিত করে যে নতুন বিধানাবলী সংযোজিত হল, তা হল “৮(১) — সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার — এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভুত এইভাবে বর্নিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র-পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে। ১ (ক) সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই যাবতীয় কার্যাবলীর মূল ভিত্তি।” এরপর ১৯৮৮ সালের ৭ই জুন তারিখে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী হিসাবে পাশ হয়। অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা এবং হাইকোর্ট বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থা করা হয়। এই বিকেন্দ্রীকরণটি ১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর এক ঐতিহাসিক বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার মাধ্যমে সংবিধান বহির্ভূত অকার্যকর ও বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়। আসলে এরশাদের আমলে সাংবিধানিক সংশোধন আনয়নের অন্যতম কারণ ছিল নিরঙ্কুশ শাসন প্রতিষ্ঠা করা। অন্যদিকে সংবিধানের মূল চরিত্রই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী। একই সঙ্গে অতি সাংবিধানিক কিছু কার্যক্রমও হাতে নিয়েছিল যা তিনি চেয়েছিলেন কনভেনশনে পরিণত করতে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, সংবিধানে রাষ্ট্রপতির খাত সৃষ্টি করা, স্ত্রীকে খুশি করার জন্য ফার্স্ট লেডি নামক পদ সৃষ্টি করা, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় এরশাদ ও রওশন এরশাদের নামে। আসলে সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধি জেনারেল এরশাদ চেয়েছিলেন সাংবিধানিক বিকৃতায়নের মাধ্যমে সংবিধানকে সামনে রেখে অতি সাংবিধানিক কার্যক্রম পরিচালিত করতে। এভাবে সামরিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়ে সামরিকায়ন সম্পন্ন করাই ছিল প্রধান লক্ষ্য। অষ্টম সংশোধনীর বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল বিভাগে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একমাস শুনানীর পর কোর্ট সংখ্যাগরিষ্ট ভোটে রায় প্রদান করে। বিচারকগণ “ঢাকায় হাইকোর্টের একটি স্থায়ী বেঞ্চসহ বিভিন্ন স্থানে হাইকের্টের ৬টি বেঞ্চ স্থাপনের বিধান সম্বলিত জাতীয় সংসদে পেশকৃত অষ্টম সংশোধন অবৈধ বলে ঘোষণা করেন। তবে সংশোধনীর অপর বড় অংশ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার বিষয়টি এই আদেশের অংশ নয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকবে।” এই রায় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকে শক্তি যোগায় এবং একটি উদার জাতীয়তাবাদী মানসিকতার যে পরিচয় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল তাকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হল। সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস হেতু জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্রের কোন অস্তিত্বই আর সংবিধানে থাকলো না। সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদ বাতিল করে বলা হলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতা ইসলাম রাষ্ট্রকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,  রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের ব্যবহার। আর এসব কিছুই সেদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে বাস্তবায়িত হওয়ার পথকে চিরতরে রূদ্ধ করে দিল। ২৫ নং অনুচ্ছেদে (২) উপ-অনুচ্ছেদে সংযোজন করা হয়, “রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তি মুসলিম দেশ সমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত সংরক্ষণ ও জোরদার করিতে সচেষ্ট হইবেন। “এব্যতীত সংগঠনের স্বাধীনতা বিষয়ক ৩৮ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পন্ন কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি উদ্দেশ্যানুযায়ী ধর্মভিত্তিক অন্য কোন সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার বা তাহার সদস্য হইবার অধিকার কোন ব্যক্তির থাকিবে না। ফলে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক এবং সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন গড়ায় আর কোন দ্বিধা রইল না। শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এরশাদ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেন এবং রাষ্ট্রধর্মরূপে ইসলামের গ্রহণ বাংলাদেশকে অচিরেই ইসলামী …

বাংলাদেশে ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিষ্ঠাতে সংবিধানের ভূমিকা Read More »

বাংলাদেশে চীনা তৎপরতা বৃদ্ধি ও তার সুদূরপ্রসারী ফলাফল

সুদীপ কুমার আচার্য্য, রিসার্চ স্কলার, CRIBR চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী ও উৎপাদক দেশ। তারা বাংলাদেশের স্বাভাবিক মিত্র এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে অংশীদার রাষ্ট্র। প্রযুক্তিগত ভাবে চীন বিশ্বের বিস্ময়। IMF এর সাম্প্রতিক গবেষণায় চীনের অর্থনীতির অভূতপূর্ব উন্নতিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশী অগ্রগণ্য বলে মনে করা হচ্ছে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ তারা আমেরিকাকে পিছনে ফেলে বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে উঠে আসবে। চীন, রাশিয়া ও তার ভূতপূর্ব স্যাটেলাইট দেশগুলো, মধ্য এশিয়ার কিছু দেশ মিলিতভাবে যে সংখ্যায় কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন তৈরি করেছিল তা আজ এক অর্থনৈতিক খুঁটি স্বরূপ। অন্যদিকে আশিয়ান দেশগুলির অর্থনীতি এবং বাজারের উপর চীন কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। অন্যদিকে দক্ষিন চীন সাগরের উপর তার প্রভূত কর্তৃত্ব বিরাজমান। অভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে নানান সংস্কার সাধন করে এবং উদার অর্থনীতির পথে হেটে মাও সে তুং এর চীন আজ ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের নানান দেশকে নিজ অর্থনৈতিক প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে সুকৌশলী চীন অন্য ধরণের এক অর্থনৈতিক স্বপ্ন দেখছে যার মডেল বিশ্বজোড়া এক একচ্ছত্র মনোপলি অর্থনীতির জন্ম দিচ্ছে। পিছিয়ে পড়া তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির কাছে কোভিডকালীন সময়ে চীন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। পাশাপাশি চীনের সমৃদ্ধি ও মডেল অর্থনীতি বিশ্বের দেশগুলির কাছে এক শিক্ষনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হোলো পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে কিছু কিছু চীনের বন্ধুরাষ্ট্র নিজেদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছেন এবং অতিমাত্রায় চীন নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছেন যা দেশগুলির স্বাধীন সত্বাকে ক্রমশ বিলীন করে দেবে। চীনের উদ্দেশ্যই হল সম্পর্কের প্রথম পর্যায়ে স্যাটেলাইট বা অনুগামী রাষ্ট্রের ভিত পোক্ত করা। দ্বিতীয় পর্যায়ে নিজস্ব প্রভাব বৃদ্ধি, আঞ্চলিক সহযোগিতার নামে ‘ডমিনো তত্ত্বের’ প্রয়োগ। বিশ্বের যেসব দেশে ক্রমশ প্রগতিশীল চিন্তাধারার মানুষের অভাব ঘটছে, মৌলবাদীদের দাপট বাড়ছে, দারিদ্রের ভয়ংকরতা আছে অথবা যেখানে দুর্বৃত্তায়নের জন্য অর্থের উৎস প্রয়োজন সেখানে আপৎকালীন ভাবে আর্থিক বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হয়। এরকম দেশগুলিই বেজিংএর পছন্দের। কোনো বাধাবিঘ্ন ছাড়াই সহজ শর্তে চীন বাংলাদেশের বৃহৎ প্রকল্প নির্মাণ, যন্ত্রাংশ উৎপাদন, আর্থিক ঋণের যোগান, নানান বিনিয়োগ করে থাকে। যেমন শ্রীলংকার ক্ষেত্রে তারা ৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ ঋণ দিয়েছিলো। যা শোধ করতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভান্ডার ফুরিয়ে আসে কিন্তু প্রকল্প সাফল্য পায় না। ক্রমে অর্থনীতি হয়ে যায় ভঙ্গুর। দেশের ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকে না এবং সমস্ত দায়ভার বর্তায় জনগণের ওপর। একবিংশ শতকের গত দু-দশক জুড়ে বাংলাদেশ চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি। চীনের সঙ্গে ইসলামীকরণের বছরগুলিতে সেই ১৯৭৬ সাল থেকে মিলিটারি জুন্টার আমলে বাংলাদেশের দৃঢ় সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল; সামরিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়ার সূচনাও এই সময়ে শুরু হয়। চীনের প্রযুক্তিগত উন্নতি এক্ষেত্রে ইতিবাচক রসদ জুগিয়েছে কিন্তু তার প্রয়োগ প্রক্রিয়া অনেকক্ষেত্রেই নেতিবাচক ও অনৈতিক। যাই হোক উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত উন্নতির সহায়ক হিসাবে চীন বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে। এর ফলে তারা সুনাম অর্জন করেছে। সাথে সাথে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত উদ্যোগপতি বা বিত্তশালী মুনাফার কারবারীদেরও একটা অংশকে চীন Private Network এ যুক্ত করেছে। কেননা এঁরা তাদের প্রকল্পের উন্নতি ও অগ্রগতির রাস্তাকে সুগম করবে, অভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে প্রভাবে সহায়ক হবে। এইভাবে বিগত পঁচিশ বছরে বাংলাদেশী মানসের বিশ্বাস ও ভিত্তি অর্জনে তারা সফল হয়েছে। কিন্তু এসব আসলে কমিউনিষ্ট তাঁবেদার তৈরী কলোনিয়াল শোষণের প্রথম ধাপ মাত্র যা সুক্ষভাবে আর্থিক বিকাশের নামে সম্পদের বর্হিগমনকে নিশ্চিত করেছে। ব্যাপারটি বিমূর্ত এবং খালি চোখে বোঝা যাবে না। অথচ বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করার চীনা হিসাব বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের চীন নির্ভরতা আকাশচুম্বী হচ্ছে। আবার রোহিঙ্গা শরণার্থী পুনর্বাসনে চীন ছিল বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে মিডিওকার তথা সৎ দালাল। রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের পর চীন মায়ানমারে তাদের দেখভাল করবে এ গ্যারান্টি দিয়েছে। Covid 19 এ পর্যুদস্ত বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ নানা খাতে বেড়ে গেছে। বর্তমানে চীন বাংলাদেশে রপ্তানি করে ১৭-১৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য সামগ্রী। কিন্তু আমদানির পরিমাণ ৭৫ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য। আন্তর্জাতিক সূত্রের হিসাব থেকে জানা যায় চীন বাংলাদেশকে প্রতি বছর ১০০ কোটি ডলারের মত সাহায্য দিয়ে আসছে। ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর রাষ্ট্রীয় সফরকালে ২০ বিলিয়ন ডলারের ২৫টি চুক্তি ও সমঝোতা হয়। ট্রেড, ইনভেস্টমেন্ট, কানেক্টিভিটি, তথ্য বিনিময়, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ সহ নানা বিষয় এখানে গুরুত্ব পায়। জিনপিং বাংলাদেশকে ২৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য করবেন ঘোষণা করেন। বাংলাদেশে চীনের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার চুক্তি হয়ে গিয়েছিল ২০১৪ সালেই শেখ হাসিনার বেজিং সফরকালে। এই সময় বাংলাদেশ চীন থেকে ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল কিন্তু চীনে রপ্তানীর পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ডলারেরও কম। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণে পটুয়াখালী জেলায় চীনা সহায়তায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। পায়রা (লেবুখালী) সেতু গড়ে তুলেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘লনজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কনস্ট্রাকশন’। অতি সম্প্রতি চীন পদ্মা সেতুর কাজ সমাপ্ত করেছে। পায়রা বন্দরে চীনের প্রভাব রয়েছে অপ্রতিহত এবং চীনা কোম্পানি সি এস আই সি এখানে কন্টেনার ইয়ার্ড তৈরীর বরাত পেয়েছে। টার্মিনাল নির্মাণের এই প্রকল্পের আওতায় তিন লাখ ২৫ হাজার বর্গফুট টার্মিনাল, হাই মাস্ট পুল, জলের ট্যাঙ্ক, পাম্প হাউস, সি এফ এস শেড, ওয়ার্কশপ, ফায়ার স্টেশন, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ সবকিছুই চীনা প্রযুক্তিবিদরা করে দেবেন। এছাড়া চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং ও নানান কাজ করে চলেছে। বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বরিশাল বিভাগের এই সমুদ্র বন্দরের ভাগ্য শ্রীলংকার হাম্বানটোটা বা পাকিস্তানের গদর বন্দরের মত হয় কিনা তাও পর্যবেক্ষণ যোগ্য। এছাড়া চট্টগ্রাম কক্সবাজারে প্রভাব বিস্তার, রেল ও নানান মেগা প্রজেক্টে চীনের উৎসাহ আছে। মিলিটারী হার্ডওয়ার তথা সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে বাংলাদেশে চীন একনম্বর জায়গায় বিরাজমান। ভূ রাজনৈতিক কৌশলের দিক দিয়ে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ চীন থেকে দুটি উচ্চ প্রযুক্তির সাবমেরিন আমদানী করেছে। কিন্তু বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরগুলিতে চীনের অভিভাবক সুলভ ভাবভঙ্গিমা বৃদ্ধি পেলে দক্ষিন-দক্ষিনপূর্ব এশিয়া বা ভারতমহাসাগরীয় শক্তিসাম্য বিপন্ন হতে পারে। অস্ত্রশস্ত্রের যোগানের ক্ষেত্রে বলা যায় যদি চিনা অস্ত্রশস্ত্র চোরাচালান হয় এবং বাংলাদেশী সন্ত্রাসবাদী বা মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলির হাতে চলে যায় তা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাবে। চট্টগ্রাম দোহাজারি ভায়া মায়ানমার সীমান্তে ঘুনধুম রেলপথের কাজ (১২৮কিমি) ২০১১ সালেই চালু হয়েছিল। এর ফলে Trans Asian Railway Network এর সংগে বাংলাদেশের যোগাযোগ নিশ্চিত যা চীনের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম। অন্যদিকে কক্সবাজার ঘুনধুম মহাসড়ক সম্প্রসারণ করে মায়ানমার হয়ে চীনের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং সিটির সংগে আন্তর্দেশীয় মহাসড়ক পথে জুড়ে যাচ্ছে ঢাকা। এক্ষেত্রেও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান রেলপথ বাস্তবায়নে কাজ করেছে। বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, রপ্তানি ও বাণিজ্যিক বন্ধন সহজ করাই চীনের প্রধান টার্গেট।   কিন্তু সাম্প্রতিককালে Quadrilateral, Security Dialogue এ বাংলাদেশের যোগদানকে বেজিং কঠোর দৃষ্টিতে দেখেছে। গত বছরের মে মাসে (২০২১) বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন Quad ঘনিষ্ঠ হয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করছে ঢাকা। আসলে এটা ছিল বাংলাদেশের নীতি নিয়ন্ত্রণ বা তার ওপর চাপ তৈরীর কৌশলমাত্র। এছাড়া বাংলাদেশের ভোট প্রক্রিয়ায় বা সরকার নির্বাচনে পরোক্ষভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টাও চীন করে থাকে। তবে বেল্ট ও রোড প্রকল্পে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করা চীনের মুকুটে এক রঙীন পালকের সংযোজন করেছে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে চীন ঢাকায় কনফুসিয়াস …

বাংলাদেশে চীনা তৎপরতা বৃদ্ধি ও তার সুদূরপ্রসারী ফলাফল Read More »

The Fourth Industrial Revolution and Bangladesh : A Prospective Crossing Point

DRONA BANDYOPADHYAY ASSISTANT PROFESSOR, SALBONI GOVERNMENT COLLEGE Our present world is gratifyingly welcoming the emergence of the Fourth Industrial Revolution. This revolution will make industrial production more technology driven and undeviatingly reduce its dependence on human intervention. The resultant effect will be exponential increase in productivity induced by tremendous advancement in scientific research and technological innovation. Bangladesh is no more a country of despair and death though it is still struggling calamities and crises of different sorts and sets. Due to unthinkable achievement in socio-economic front Bangladesh is also preparing to embrace the momentous advent of Fourth Industrial Revolution to accelerate economic development and social progress. Both the Government and private entrepreneurs are steadily initiating policies and projects to harness the patterns and processes of the Fourth Industrial Revolution. The policy makers and entrepreneurs should come forward to work out appropriate ways and means for the maximum utilization of technologies emanating from the Fourth Industrial Revolution. The concerned authorities should keep in mind that the industrial scenario is very strange in Bangladesh due to its solitary over-dependence on readymade garments sector. It will not be an exaggeration in saying that the entire economy of the country is largely linked with the export-oriented readymade garments industry. This is a grave economic reality for Bangladesh. It has profound vulnerabilities despite dispensing unruffled foreign exchange earnings. Since the entire readymade garments industry is export-oriented Bangladesh has an enduring problem attached with it. If the economies of various export destinations of Bangladesh face financial turmoil or socio-political upheaval this industry of prime exportable item will be in cavernous jeopardy. This probable hazard makes the base of Bangladesh economy extremely susceptible to external factors. Here lies the real challenge for Bangladesh to progress in coming decades. The critical over-dependence of the national economy of Bangladesh on its export of readymade garments and latter’s overwhelming role in the process of industrialization a risky and precarious actuality. In the volatile scenario of international politics the economy is always the second most hapless victim after peace and stability. Due to war and other global conflicts economic recession and political instability takes place. Under these circumstances the readymade garments sector will be affected in colossal manner. Our prevailing international political arena is witnessing US-China protracting tensions and Russian invasion of Ukhraine. No one can prognosticate the ultimate outcome of these two catastrophic occurances. The economies like Bangladesh with large and unskilled populations and struggling for industrial development and poverty eradication are in great peril. According to Sustainable Development Goal 9 (SDG 9) which is one of the seventeen (17) Sustainable Development Goals (SDG) adopted by the United Nations General Assembly in 2015 the world should approach and apprehend the future process of industrialization though resilient infrastructural development, sustainable growth and stimulating innovation. The future world will experience industrialization through greater social inclusion, maintenance of ecological balance and adoption of competitive skills. The industrial sector will grow through technology transfers and advanced innovations further. This is not only a commitment of United Nations but also a national imperative for its member states of which Bangladesh is an important one. The topic of Fourth Industrial Revolution has touched the minds of policy makers, researchers and entrepreneurs in myriad ways. This stage of industrial transformation is solely dependent on forthcoming technologies. The application of new technologies innovated under this Fourth Industrial Revolution has an innate and unpleasant feature of jobless growth aided by lesser human intervention and greater automation. Due to this menacing possibility the oppurtunities for large scale employment are structurally bleak. Hence it carries a potential to danger and vicious threat to social stability of countries like Bangladesh which are densely populated and direly challenged by chronic poverty. But there are also upsides of new revolutionary phenomenon.  In order to gain and garner the possibilities of it the Government should plan in an elaborate fashion. Bangladesh has a large demography. So it can derive an impactful dividend out of it through imparting time-befitting technological knowledge and skills. The Government should set up more institutions of technical learning which will generate skilled manpower throughout the nation. Moreover the Government should start to frame pertinent policies up for new products design and diversification in industrial sector. The focus of automation and digitalisation has come to stay in the world. It will be an obvious act of intelligence to accept and adopt the styles and modes associated with it. Bangladesh needs to start its own ‘startup’ support programmes including incubation centres to facilitate innovation and scale for the digital eco-system. The young entrepreneurs, investors and researchers should be provided operating space, mentoring and some grants to move forward in this regard. The investors should also encourage industrial innovation for small, medium and big enterprises and create institutional cooperation and coordination between industrial units and institutes of research and development. The industrial base in Bangladesh, though expanding, is still narrow. For faster and greater industrialization the youth of the nation can be a driving force if they are properly guided and trained. Their technical capabilities should have to be developed. Bangladesh is quite fortunate in this aspect to have a huge young population. Apart from this Bangladesh have appreciable riverine and marine resources which can be utilized for employment generation. The country is also endowed with natural beauteousness and rich cultural heritage. Trained workforce, strict environmental protection and societal concord can rightfully ensure the furtherance of these above mentioned sectors. If Bangladesh aims to attain continual economic progress in the coming decades it should put dedicated emphasis on achieving competitive capabilities in world economy. Moreover the country should ceaselessly endeavour to strike a proper balance between sustainable development and diversification of economy out. Exclusive agencies should be created to develop futuristic products and solutions for home and abroad. Good governance and efficiency in institutional performance are two other prime areas where Bangladesh is poorly lagging behind many other developing nations of Asia and Africa. The Government of Bangladesh must initiate relevant steps to …

The Fourth Industrial Revolution and Bangladesh : A Prospective Crossing Point Read More »

বাংলাদেশে  ইসলামী মৌলবাদী অক্টোপাশে মতুয়া নারী সমাজ

Dr. Kakoli Sarkar মতুয়া সমাজ বাংলাদেশে হিন্দুবিচ্ছিন্ন কোন অংশ হিসেবে পরিগণিত হয় না। বাংলাদেশে যে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় আছে মতুয়া সম্প্রদায় তার অংশ হিসাবেই পরিগণিত হয়। আমরা যদি সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে হিসাব করি তাহলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সবথেকে বড় অংশ এই মতুয়া সম্প্রদায়। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান হিন্দু নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় মতুয়া সম্প্রদায়ের দিকে একটু নজর দিলে আমরা দেখতে পাই এদের যন্ত্রণা সর্বাপেক্ষা অধিক। উচ্চবর্ণের হিন্দুদের তুলনায় এদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। একদিকে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন আর অন্যদিকে জীবিকার প্রয়োজনে লড়াই– এ দুইয়ের মাঝে পরে তারা এক অসম্ভব যন্ত্রণা ভোগ করে। বিষয়টিকে পরিষ্কার করার জন্য ২০১৮ সালের একটি ঘটনার কথা বলি।         ২০১৮ সালে ২৩ শে আগস্ট কোরবানি ঈদের পরের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পাইকপাড়ায় এক হিন্দু মহিলাকে নির্যাতন করা হয়। সেই মহিলা এক মুসলমানের বাড়িতে কাজ করতো। কোরবানি ঈদের দিন সেই মুসলমানের বাড়িতে গরু কোরবানি হবে। সেই কারণে ওই মহিলা ওই মুসলমান বাড়ির গৃহকর্তীকে বলেন যে, তিনি কোরবানি ঈদের দিন কাজে আসবেন না। যথারীতি কোরবানি ঈদের দিন তিনি কাজে যাননি। কোরবানি ঈদের পরদিন ওই মুসলমান বাড়ি থেকে গৃহকর্তির ছেলে ওই মহিলার বাড়িতে চড়াও হয়ে তাকে ভীষণভাবে মারধর করে এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবার জন্য পেট্রোল ঢেলে দেয়।         এইরকম ঘটনার সম্ভাবনার কারণে বাংলাদেশে কোনো হিন্দু মহিলা অতি বাধ্য না হলে মুসলমানের বাড়িতে কাজ করতে যায় না। যেসব হিন্দুর একটু আর্থিক অবস্থা ভালো তারা কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশে মুসলমানের বাড়িতে কাজ করে না। তাছাড়া বাংলাদেশে মুসলমান ধর্মের অধিকাংশই বিশ্বাস করে যে, কোনো হিন্দু মেয়েকে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে পারলে তারা প্রভূত পুণ্য অর্জন করবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই মহিলা নিতান্ত জীবনের প্রয়োজনে ওই কাজ করতেন। মতুয়াদের সব থেকে বড় সমস্যা এখানে যে, তারা কেবল সংখ্যালঘুই নয় বরং অতি দরিদ্রও বটে।         ইতিহাসের দিকে একটু দৃষ্টি দিলে আমরা দেখব যে বর্ণবাদের ধোঁয়া তুলে হিন্দু সমাজের পিছিয়ে রাখা (পতিত) মানুষগুলোর মধ্যে মতুয়া ধর্ম মতের প্রচার এবং প্রসার ঘটেছিল। শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর এবং তাঁর সহধর্মিনী শান্তি মাতা দেবী এই পিছিয়ে পরা মানুষগুলিকে সর্বপ্রথম একত্রিত করে একটি সঠিক জীবন দর্শন দিয়েছিলেন। শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের সাথে সাথে শান্তি মাতার অবদান অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, কেননা মতুয়া হিসেবে চিহ্নিতকরণের প্রধান দুটি উপকরণ, মতুয়ার গলার করঙ্গের মালা এবং হাতের লাঠি (ছরি)– দুটিই শান্তিমাতার দান। তিনি ভক্তদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতেন। লক্ষ্য করলে দেখা যায় এই ধর্ম মতের শুরু থেকেই নারীকে পুরুষের সমশক্তি হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর শিষ্যদের নির্দেশ দিয়েছেন নাম সংকীর্তনে অথবা ধর্ম আলোচনার ক্ষেত্রে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে আসতে হবে। এই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখি, এই ধর্ম মতে মহিলাদের নেতৃত্বে নাম সংকীর্তনের দল, মহিলা ধর্ম প্রচারক তথা গুরু। এইরকমই একজন গুরু ছিলেন স্বর্ণলতা দেবী, যিনি বরিশাল জেলার বানারীপাড়া থানার অন্তর্গত ব্রাহ্মণবাড়ী গ্রামে বাস করতেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের দক্ষিণে মতুয়া ধর্মের ব্যাপক প্রচার এবং প্রসার ঘটে। মৃত্যুকালে তিনি বহু সংখ্যক শিষ্য এবং ভক্ত রেখে গেছেন। একমাত্র মতুয়া ধর্ম মতের মধ্যেই আমরা নারীদের ব্যাপকভাবে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নাম সংকীর্তনে অংশগ্রহণ করতে দেখি এবং নাম সংকীর্তনে পুরুষদের পাশাপাশি তাঁরাও মাতাম (সাময়িক সমাধি) দেন। নারীদের এই আধিপত্য এই ধর্ম মতের প্রথম থেকেই ছিল। পিছিয়ে পরা সম্প্রদায়, যাদের মধ্যে এই ধর্ম মতের প্রচার এবং প্রসার তাদের মহিলারা প্রথম থেকেই জীবনের প্রয়োজনে যেমন ঘরের কাজ করতো, তেমনি স্বামীদের সাথে বাইরের কাজও করতে যেত। যেমন, ধান কাটার কাজে সাহায্য করা, বাজার–ঘাট করা প্রভৃতি। তখন উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুরা এইসব মহিলাদের নিচু চোখে দেখত এবং এখনো উঁচু শ্রেণীর হিন্দুরা এবং তার সাথে সাথে মুসলমানরাও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কীর্তন করা সহ বহুমুখী কাজ করার জন্য মতুয়া সমাজের মহিলাদের নিচু হিসেবে চিহ্নিত করে। শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর এবং তাঁর শিষ্যগন এই সমাজের জন্য ইংরেজদের শাসনকালে বহু স্কুল তৈরি করেছিলেন ইংরেজ শাসকের সহায়তায়। সেই সময় গুরুচাঁদ ঠাকুর মহিলাদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ মূলক শিক্ষারও ব্যবস্থা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল ইংরেজরা ভারত ছেড়ে চলে যাবার পর পাকিস্তান সরকার তার বেশিরভাগ স্কুলই বন্ধ করে দেয়। গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রচেষ্টায় ইংরেজ সরকারের নিকট থেকে বাংলার পিছিয়ে পড়া ৩৬ টি জনজাতির জন্য তিনি যে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, পাকিস্তান সরকারের শুরু থেকে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়, যদিও ভারতবর্ষে এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা ডঃ আম্বেদকরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সাংবিধানিক রূপ নেয়। ফলে বাংলাদেশে এরা আবার সেই তিমিরেই নিমজ্জিত হয়। বাংলাদেশে যে কটি জেলাতে তুলনামূলকভাবে মতুয়ারা বেশি সংখ্যায় আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বরিশাল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, যশোর, পিরোজপুর প্রভৃতি। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই সকল জেলাগুলিতে হিন্দু নির্যাতন বেশি পরিমাণে হয়।        মতুয়ারা তাদের ধর্মের অংশ হিসেবে বিদ্যাশিক্ষাকে অপরিহার্য মনে করে। শিক্ষিত হবার প্রবণতা যেহেতু এদের মধ্যে বেশি তাই নির্যাতনের একটি অংশ হিসাবে বাংলাদেশে মৌলবাদী মুসলমানরা স্কুল-কলেজ গুলোকে বেছে নিয়েছে। গত ১২ ই সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলার পিরোজ পুরের নেসারাবাদ উপজেলায় কামারকাঠি বালিকা বিদ্যালয়ে কাকলি রানী নামে এই সম্প্রদায়ের একজন শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করা হয়। কাকলি রানীর বিরুদ্ধেঅ গুজব ছড়ানো হয় যে, তিনি ক্লাসে হিজাব পড়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং মোহাম্মদের চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বলেছেন। যদিও বাস্তবে তিনি এসব কিছুই করেননি। তিনি অত্যন্ত সহজ সরল একজন মানুষ। চক্রান্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে তাঁকে এলাকাছাড়া করা হয়। আর এই কাজ যিনি করেন তিনি হলেন ওই এলাকার জলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তহিদুল ইসলাম তৌহিদ। জলাবাড়ি ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ হিন্দু তথা মতুয়া ধর্মাবলম্বী। বর্তমান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তৌহিদ একজন দুষ্কৃতিকারী, যিনি নির্বাচনের দিন প্রাক্তন চেয়ারম্যান আশীষ বরালকে কুপিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে জয়ী হয়। এই চেয়ারম্যান এবং তার দোসর মৌলবাদীদের প্রচেষ্টায় সাবেক স্বরূপকাঠি উপজেলার নামকরণ করা হয় রাজাকার নাসিরুদ্দিনের নামে নাসারাবাদ। জলাবাড়ি ইউনিয়নটি এই নাসারাবাদ উপজেলার অন্তর্গত। বলাই বাহুল্য এখানে কাকলি দেবীর মত মহিলারা বিদ্যা শিক্ষাদানের পরিবর্তে পালিয়ে জীবন বাঁচান। যেখানে সরকারের কোন দায় নেই হিন্দু মহিলাদের নিরাপত্তা দানের সেখানে হিন্দু মহিলারা অগ্নিকুণ্ডুর উপরে অবস্থান করবেন এটাই স্বাভাবিক।          ২০২০ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের পক্ষ থেকে মহাসচিব গোবিন্দচন্দ্র প্রামাণিক বলেন ২০২০ সালে বাংলাদেশে ৩৭ জুন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হয়, ১১ জনকে গণধর্ষণ করা হয়, ৫ জনকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয় এবং ২৪ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়, ২০০০ এর বেশি ধর্মান্তরিত করা হয়। এই সংখ্যাটা ২০২১ সালে আরও বেড়েছে বলাই বাহুল্য।          বাংলাদেশে মৌলবাদী মুসলমানরা যখন হিন্দু নারীদের যৌন নির্যাতন করে তখন কোনো গোত্র বা বর্ণ দেখে তা করেনা, বরং হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষ বসতই তাদের মহিলাদের লাঞ্ছিত করে। শুধু মৌলবাদী মুসলমান পুরুষদের কাছেই এরা লাঞ্ছিত হয় না, বরং মৌলবাদী মুসলমান মহিলারাও এই লাঞ্ছনা কর্মে সমানে যোগ দেয়। গত ১৯ এ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষা চলাকালে নরসিংদী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে বিবাহিতা হিন্দু পরীক্ষার্থীদের শাখা সিঁদুরসহ পরীক্ষার হলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। ওই স্কুলের হিজাব পরিহিতা একজন শিক্ষিকা হিন্দু মেয়েদের …

বাংলাদেশে  ইসলামী মৌলবাদী অক্টোপাশে মতুয়া নারী সমাজ Read More »