Center For Research In Indo

Articles

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঃ বাঙালি মুসলমানদের মনে সাদরে স্বীকৃতি পেল না কেন?

বিমল প্রামাণিক   পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হওয়ার অব্যবহিত পর থেকেই হিন্দু জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনে দারুনভাবে প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে, সাথে সাথে মেয়েদের নিরাপত্তাও। দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লুটপাট এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে বহুসংখ্যক মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। আমার জানা মতে একটি মুসলমান পরিবারও পাইনি যারা হিন্দুদের পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন বা আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। সুদীর্ঘকাল  একই সাথে একই গ্রামে বসবাস করে যাদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল, সে সকল মুসলমান পরিবারও যেন কেমন হয়ে গেল পূর্ববঙ্গ  স্বাধীন ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হওয়ায়। বঙ্গ বিভাজন করে ইসলামি রাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তান তাদের মোহগ্রস্ত ও আত্মহারা করে ফেলেছিল। তাদের কাছে অন্য আর কিছুর অগ্রাধিকার ছিল না। তা না হলে দেশভাগের মাত্র পাঁচ  বছরের মধ্যেই এক কোটিরও অধিক হিন্দু জনগোষ্ঠী উদ্বাস্তু হয়ে কিভাবে ভারতে আশ্রয়  নিতে বাধ্য হল ? পাকিস্তানের জন্ম থেকেই পূর্ববঙ্গের মুসলমান জনগোষ্ঠী এবং সরকার ইসলামি ভ্রাতৃত্ববোধের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল। সমস্ত ইসলামি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং ভারতকে শত্রু-রাষ্ট্র হিসেবে শুধু জ্ঞান করাই নয়,  চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসনের যাঁতাকলে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক আন্দোলন মাথাচাড়া দেয়। শেখ মুজিব এই রাজনীতিকেই আঁকড়ে ধরেন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির মোড়কে জনগণের সম্মুখে রেখে এমন একটা মোহসৃষ্টি করতে সক্ষম হন,  যা ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে তার দলের ব্যাপক সাফল্য এনে দেয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নৃশংস মুজিব হত্যার পরবর্তী বাংলাদেশে মুসলমান জনগোষ্ঠীর যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহের প্রকাশ আমরা দেখলাম তা তো বাঙালি জাতীয়তাবাদী চরিত্র নয়, সেটা হল উগ্র ইসলামি জাতীয়তাবাদী বৈশিষ্ট্যের ছাপ যা পাকিস্তান আমলের চেয়েও কট্টর ইসলামি, কুরুচিকর সাম্প্রদায়িকতায় জর্জরিত। পাকিস্তানের ইতিহাসে কখনও  বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রভাব দেখা যায়নি, কারণ পাকিস্তানের রাজনীতির ভিত্তিই ছিল দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং বঙ্গ বিভাগও সেই দ্বিজাতিতত্ত্ব মেনেই হয়েছে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ পর্বের পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ইতিহাসে দেখা যায়,  ধীর এবং নিশ্চিত পদক্ষেপে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে অবদমিত, শোষিত বাঙালি মুসলমানের মধ্যে একটা নবচেতনার উত্থান ঘটে যায়, যার ফলে  তিনি পাকিস্তানি ক্ষমতাকেন্দ্রে শুধু  নাড়াই দেননি, দিয়েছিলেন ক্ষমতা ভাগের  বিকল্পের      সন্ধান। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী এবং সামরিক জান্তা এই বিষয়টিকে  একেবারেই মেনে নিতে পারেননি  তারা মগ্ন  ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান দ্বারা  শাসিত এক অঙ্গরাজ্য হিসাবে দমিয়ে রাখার  ক্ষুদ্র এবং স্বার্থপর চিন্তায়। আর সেকারণেই শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয়ে যায় পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের  বিরুদ্ধে লাগাতার এক গণসংগ্রাম। শেখ মুজিব জানতেন তার দল আওয়ামি লিগের মিনার গড়ে উঠেছে মুসলিম লিগের ভিতের উপর যার আদর্শগত ভিত্তি দ্বিজাতিতত্ত্ব। এই দলকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আদর্শে উত্তরণ ঘটানো অসম্ভব কাজ। তাই তিনি সেপথে যাননি। তিনি ছাত্র সমাজের উপর ভরসা রাখলেন। কিন্তু দেশের যে জনতা মুজিবকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করলেন তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চাওয়া। তারা আওয়ামি লিগের ‘ছয়–দফা’ দাবির মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ন ও অধিকারের স্বপ্ন দেখেছিল। তারা পাকিস্তান খন্ডিত হওয়া বা পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার  স্বপ্ন দেখেনি। আর স্বাধীন বাংলাদেশ তাদের কল্পনায়ও ছিল না। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পরবর্তী  ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ গণহত্যার পূর্ব পর্যন্ত  এই প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষাঙ্গন ও গ্রামে-গঞ্জে  বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একটা ধারণা নিয়ে প্রধানত ছাত্র-যুবকদের মধ্যে  একটা উন্মাদনা লক্ষ করা গেল। সবটাই পাকিস্তান-বিরোধী বাঙালি জাতীয়তাবাদের উচ্ছ্বাসে ভরা। বাঙালি সংস্কৃতি- নির্ভরশীলতার  ভিত দুর্বল থাকায় পাকিস্তান-বিরোধী মানসিকতাই এখানে প্রাধান্য পেল। ফলে পাকিস্তানি মানসিকতা থেকে বাঙালি চেতনায়  প্রকৃত উত্তরণ ঘটল না। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণা অচিরেই  উবে গেল যখন ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ থেকে পাকিস্তানি সেনার গণহত্যা দ্রুত সারা পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়লো। আমি তখন রাজশাহী- বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এস.সি. (গণিত) ক্লাসের ছাত্র। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় ঠুনকো বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারণার পরিণতি নিম্নরূপঃ বাঙালি মুসলমানরা আওয়ামি লিগকে ভোটবাক্সে আশাতীত সাফল্য পেতে এগিয়ে এসেছিল এই ভেবে যে তারা ন্যায্য অধিকার পাবে – যা আওয়ামি লিগ স্বপ্ন দেখিয়েছিল। তারা পাকিস্তান ভেঙ্গে ফেলার জন্য ভোট দেয়নি। ফলে পাক-বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে তারাও এক বড় অংশ পাকিস্তানের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গেল। শুধু মুসলিম লিগ জামাতে ইসলামি নয়, আওয়ামি লিগ সমর্থকরাও অনেকেই সামিল হয়ে গেল পাকিস্তান বাঁচাতে। এটা পাকিস্তানের তেইশ বছর বাঙালি মুসলমানদের মগজ ধোলাই-এর ফল যা বিভিন্ন দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সম্পত্তি দখল ও লুটপাট ও হিন্দু-বিতাড়নের ঘটনার মধ্য দিয়ে এতদিন প্রকাশ পেয়েছে। এটা ছিল পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার আক্রোশের বহিঃপ্রকাশও। হিন্দু-মুসলমানের  দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব, সুসম্পর্ক এবং পড়শি বা একই গ্রামের অধিবাসী বংশ পরম্পরায় পরিচিত সম্পর্ককে কী অনায়াসে রাতারাতি ভেঙ্গে ফেলা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ না এলে এটা হয়ত কোনদিনই আমার অভিজ্ঞতায় আসত না। সমাজতত্ত্বের গবেষক বিশিষ্ট পণ্ডিতজন হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে কিছু মতামত ব্যক্ত করলেও দ্বিজাতিতত্ত্বের মত যে বিষধর চিন্তা বাঙালি মুসলমানের  রক্ত-মজ্জায় মিশে আছে তা পরিশ্রুত হওয়া মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। বিশিষ্ট চিন্তক ও প্রাবন্ধিক আহমদ ছফার প্রণিধানযোগ্য মতামত নিম্নে উদ্ধৃত হলঃ         “ইতিহাসে  বিশ-ত্রিশ বছর কোন দীর্ঘ সময় নয়। বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্রযন্ত্রটি প্রতিষ্ঠা করেছে সে রাষ্ট্রের সংকটের অন্ত নেই, কোথায়ও কোন দিক নির্দেশনার চিহ্ন পরিদৃশ্যমান নয়। সামাজিক সভ্য এবং ধর্মীয় কুসংস্কার সাম্প্রতিক কালে এমন প্রচন্ড আকার  নিয়ে দেখা দিয়েছে, অনেক সময় মনে হয়, এই জাতি মেরুদণ্ডের উপর থিতু হয়ে কোনদিন দাঁড়াতে পারবে না। মধ্যযুগীয় ভূত এই জাতিকে এমনভাবে আষ্টে-পৃষ্টে বেঁধে রেখেছে তার নাগপাশ কখন কিভাবে ছাড়াতে পারবে একথা এখন একরকম চিন্তা করাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।         বর্তমান অস্থিরতা এবং মধ্যযুগীয় ধর্মীয়  বদ্ধ মতের পুনরুত্থানের একটি কারণ আমি নির্দেশ করতে চাই। শুরু থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে দলটি গিয়েছিল তার আদর্শিক বৃত্তটি বিশ্লেষণ করলেই সেটা ধরা পড়বে। আওয়ামি লিগ বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। অন্যান্য দলও স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেছে। কিন্তু আওয়ামি লিগের ভূমিকাটি যে প্রধান তাতে সন্দেহ  নেই। কিন্তু এই আওয়ামি লিগের কী পরিচয় ? আওয়ামি লিগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ভাসানী ছিলেন আসাম মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট। হোসেন সহীদ সোহরাওয়ার্দী নিখিলবঙ্গ মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট এবং শেখ মুজিবর রহমান নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক। সুতরাং একথা বলা একটুও অযৌক্তিক হবে না যে, মূলত  আওয়ামি লিগ মুসলিম লিগের একটা অংশ। পাকিস্তানের সঙ্গে বাস করে তাদের ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারছিল না বলে আওয়ামি লিগকে শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সূচনা করতে হয়েছিল।         একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন তাৎপর্যের দিক দিয়ে দুটি এক জিনিস নয়। এই আওয়ামি লিগের আন্দোলন যতই বেগ এবং আবেগ সঞ্চয় করেছে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের নেতৃত্ব  কবুল করে নিয়েছিল। কিন্তু সমাজের ভিতরে তারা কোন নতুন মূল্যচিন্তার জন্ম দিতে পারেনি; নতুন সংস্কৃতি নির্মাণ করতে পারেনি। তারা সেক্যুলারিজমের নীতি শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল।” ১ এই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু উপযোগী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সমাজতাত্ত্বিক অধ্যাপক আবুল বারকাত-এর বিশ্লেষণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সামাজিক রূপান্তরের একটা পরিষ্কার (স্বচ্ছ) ধারণা পেতে সাহায্য করবে। তিনি মনে করেন,  “১. ১৯৪৭-এ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি।  ২. …

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঃ বাঙালি মুসলমানদের মনে সাদরে স্বীকৃতি পেল না কেন? Read More »

বাংলাদেশে নির্বাচন

শিতাংশু গুহ, নিউ ইয়র্ক     প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: বাংলাদেশে ইতিহাসে মাত্র তিনবার পপুলার ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৮-সালে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তাঁর ক্ষমতা বৈধ করতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তিনি ৭৬.৬% ভোট পেয়ে জয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বী এমএজি ওসমানী পান ২১.৭%। জিয়া হত্যার পর ১৯৮১ সালে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, বিএনপি’র আবদুস সাত্তার ৬৫.৫% ভোট পেয়ে জয়ী হ’ন। প্রতিদ্বন্দ্বী ড: কামাল হোসেন পান ২৬% ভোট। এরপর সাত্তারকে সরিয়ে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এটি বৈধ করতে ১৯৮৬ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরশাদ ৮৪.১% ভোট পেয়ে জয়ী হন, ভোট পরে ৫৪.৯%। এ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না! ১৯৯১ সাল থেকে মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকার চালু হওয়ায় প্রত্যক্ষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নেই, সংসদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকেন।    রেফারেন্ডাম: বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনবার জাতীয় রেফারেন্ডাম, যা ‘হ্যাঁ/না’ ভোট নামে সমধিক পরিচিত। জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ একবার করে তাঁদের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে কিনা তা যাচাই করতে ১৯৭৭ ও ১৯৮৫ সালে ‘হ্যাঁ/না’ ভোট আয়োজন করেন। বলা বাহুল্য, এসব ভোট সবসময় সামরিক শাসকদের অনুকূলে যায়। ১৯৯১ সালের ব্যতিক্রমধর্মী রেফারেন্ডামটি ছিল সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে আসার জন্যে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘হ্যাঁ/না’ ভোট করেন ৩০শে মে ১৯৭৭। এতে তারপক্ষে ভোট পরে ৯৮.৯%। মোট ভোট পড়েছিল ৮৮.১%। দ্বিতীয় ‘হ্যাঁ/না’ ভোট  আয়োজন করেন হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, ২১শে মার্চ ১৯৮৫। তারপক্ষে ভোট পরে ৯৪.৫%। মোট ভোট পড়েছিল ৭২.২%। বলা বাহুল্য, উভয়ক্ষেত্রে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। তৃতীয় রেফারেন্ডাম হয় ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৯১। সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে আসার পক্ষে ভোট পরে ৮৩.৬%, বিপক্ষে ১৫.৫%, মোট ভোট পড়েছিল ৩৫.৫%। একই সংশোধনীতে প্রেসিডেন্ট সংসদে পরোক্ষ ভোট নির্বাচিত হবার বিধান এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদটি বিলুপ্ত করার পক্ষে জনগণ মত দেন।   জাতীয় (সংসদ) নির্বাচন: বাংলাদেশে প্রথম সংসদ নির্বাচন হয় ৭ই মার্চ ১৯৭৩ সালে। আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে। এগার জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়। ভোট পরে ৫৫%। মহিলা রিজার্ভ ১৫টি আসন। এ নির্বাচনে কারচুপি’র অভিযোগ উঠে, তবে সেটি কেন্দ্রভিত্তিক, জাতীয়ভাবে কিছু ছিল না। নির্বাচনটি ভালোই ছিল, গ্রহণযোগ্য ছিল।    দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৮ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯। বিএনপি ২০৭ আসনে জেতে, আওয়ামী লীগ ৩৯। ভোট পরে ৫১%। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। এ নির্বাচনে জাতি প্রথম ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং দেখে, একই সাথে ভোটের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়।    তৃতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ৭ই মে ১৯৮৬ সালে। জাতীয় পার্টি ১৫৩, আওয়ামী লীগ ৭৬, জামাত ১০টি আসন লাভ করে। ভোট পরে ৬১%। বিএনপি ভোট বয়কট করে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন।    চতুর্থ সংসদ নির্বাচন ৩রা মার্চ ১৯৮৮। জাতীয় পার্টি ২৫১, সম্মিলিত বিরোধী জোট ১৯টি আসন লাভ করে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে।  মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ২য়, ৩য় ও ৪র্থ সংসদ নর্বাচনের ফলাফল বিশ্বাসযোগ্য ছিল না, সামরিক স্বেচ্ছাচারী সরকারের ইচ্ছেমত ফলাফল ঘোষণা হয়।   পঞ্চম সংসদ নির্বাচন হয় ১৩ই জানুয়ারী ১৯৯১। বিএনপি ১৪০, আওয়ামী লীগ ৮৮, জাতীয় পার্টি ৩৫, জামাত ১৮টি আসনে জেতে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ভোট পরে ৫৫.৪৫%। এ নির্বাচনটি ভাল এবং গ্রহণযোগ্য হয়। শেখ হাসিনা সূক্ষ্ণ কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন, গ্রাহ্য হয়নি।    ১৯৯৬-এ  দু’টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচন, আওয়ামী লীগ বয়কট করে, বিএনপি জয়ী হয়, আসন ২৭৮। আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে ‘তত্বাবধায়ক সরকার’ দাবি আদায় করে। জুনে আবার সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬, জাতীয় পার্টি ৩২, জামাত ৩, ইসলামী ঐক্যজোট ১, জাসদ (রব) ১, স্বতন্ত্র ১টি আসন লাভ করে। মহিলা রিজার্ভ ৩০টি আসন। ভোট পরে ৭৫,৬%। ১৫ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচনটি জাতির জন্যে কলঙ্ক।    অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে, যদিও বিএনপি ভোট পায় ৪০.৯৭%, আওয়ামী লীগ ৪০.১৩%। আসন, বিএনপি ১৯৩, আওয়ামী লীগ ৬২, জামাত ১৭, ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১৪, জাতীয় পার্টি ৪, ইসলামী ঐক্যজোট ২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ১, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ১টি আসন। স্বতন্ত্র ৬, ভোট পরে ৭৪.৯৭%।   ২০০৮-এ নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বিএনপি ৩০, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ২৭, জাসদ ৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ২, জামাত ২, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১, স্বতন্ত্র ৪, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি আসন। মোট ভোট পরে ৮৭.১৩%। মহিলা রিজার্ভ ৪৫টি আসন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত: এটি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।    দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ৫ই জানুয়ারি ২০১৪, আওয়ামী লীগ ১৫৩টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়লাভ করে। বিএনপি বয়কট করে। ভোট পরে ৩৯.৫৮%। মোট আসন, আওয়ামী লীগ ২৩৪, জাতীয় পার্টি ৩৪, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬, জাসদ ৫, তরিকত ফেডারেশন ২, জাতীয় পার্টি (মন্জু) ২, বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্ট ১, স্বতন্ত্র ১৬টি আসন। মহিলা রিজার্ভ ৫০টি আসন। এটি ‘বিনে ভোটের’ নির্বাচন বলে স্বীকৃতি পায়।   এগারতম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৩০শে ডিসেম্বর ২০১৮। প্রদত্ত ভোট ৮০.২%। মহিলা রিজার্ভ ৫০টি আসন। জাতীয় পার্টি ২৬, বিএনপি ৭, আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন। বাকি অন্যান্য। এ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে, এবং দিনের ভোট রাতে হয় বলে পরিচিতি লাভ করে।    দ্বাদশতম সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ই জানুয়ারী ২০২৪। আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ২৯৯টি আসনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। প্রদত্ত ভোট ৪০%, গুজব রয়েছে ১০%’র নীচে ভোট পড়েছে। বিএনপি বয়কট করেছে। স্বতন্ত্র ৬১টি আসন। এটিকে ‘ডামি ভোট’ বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ নির্বাচন নিয়ে ঢাকার মাঠে সরকারের পক্ষে ভারত-রাশিয়া-চীন এবং অন্যপক্ষে আমেরিকা-ইউরোপ-কানাডা বা পশ্চিমা বিশ্ব খেলছে।         Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

The Bangladesh way to women centric development

Dr. KasturiBhadra Roy Links between the South Asian neighbours, People’s Republic of Bangladesh and the Republic of India are cultural, civilizational, social, and economic. There is much that unites the two countries – a shared history of the common heritage originating from the Bengal region, linguistic and cultural ties, passion for music, literature and the arts. Both are common members of SAARC, BIMSTEC, IORA (Indian Ocean Rim Association) the Commonwealth.   Bangladesh, however, once called a ‘bottomless basket’ by former US Secretary of State Henry Kissinger, has recently garnered worldwide acclaim for its strides in human development. As reflected in the Gender Gap Report‘s 17th edition (2023), Bangladesh secured 59th position in the overall tally.  All other south Asian countries have ranks beyond 100. India secured rank 127.   As compared to India, more percentage of women is participating in paid work in Bangladesh. Economic participation’, in Bangladesh (0.438) is better than its neighbouring India (0.367). Wage of women is closer to the wage of Bangladeshi men for similar work and in fact, in 2018, Bangladesh’s gender wage gap was lowest in the globe (MTBiz 2018).   In ‘Educational attainment’ and ‘Health and survival’ sub-indices, Bangladesh attained (0.936) and (0.962) respectively and has done more or less the same as its neighbouring countries. These are sub-indices where most countries have done well.   However, in ‘political empowerment’, Bangladesh (0.552) is way ahead of its neighbours in south Asia, ranking 7th globally.   These achievements, however, run contrary to the traditional portrait of Muslim society and women in Bangladesh. If we look back at the post war of Independence era, in 1971, Tully          (2019) writes, the economy had collapsed, and, as a result, there was a famine in 1974. The government said 27,000 people died of starvation; unofficial estimates were as high as 1.8 million. The famine was followed by the assassination of Sheikh MujiburRahman, and almost his entire family, leading to a series of military coups and political instability.   Bangladesh went through difficult times, setting up a new administration, rehabilitating displaced persons, and dealing with the assassination of its founder and top political leadership and several aborted and successful military coups (Husain 2021). The two major political parties, Sheikh Hasina’sAwami League and Khaleda Zia’s Bangladesh Nationalist Party, have alternated in power since 1991. Since 2009, the Awami League has ruled, having won three consecutive elections.   The battle of the begums has remained intense and bitter. Khaleda Zia boycotted the elections and has remained in jail for quite some time along with many of her party stalwarts.   It is interesting in this perspective, to see how the country could make substantial economic and social headway with such fierce political rivalry and perceived instability.   Despite bitter political rivalries, however, there has been continuity in economic policies, projects and programmes in Bangladesh. The parties did not deviate from the basic anchors – macroeconomic stability, fiscal prudence, openness to trade, incentivizing the private sector and commitment to social development. Policy irreversibility has shown that a change of government would have no abrupt dislocation that could adversely affect investor and market sentiment, allowing investors to pursue their plans uninterrupted-resulting in economic gains over time (Husain 2021).   After a series of crises post the country’s 1971 liberation war, the elites in Bangladesh reached a consensus to develop better relationships with international donor agencies to take their support in rebuilding the country. The elites accepted the agencies’ conditions and priorities such as women-focused developmental programmes.   Bangladesh has successfully used its low-cost advantage to become a base for garment manufacturing. (Chakravarty 2013).This has led to the migration of millions of people from rural areas into the manufacturing sector, with women being the biggest beneficiaries.   From the 1990s, there were rising numbers of women in paid work in export factories, number of girls’ enrolment in schools, women receiving health care and other services. Women were employed in increasing numbers by the state, including as teachers, health workers, administrators and the police.   Husain also mentions that laws, policies and programmes to protect women and children against violence and to protect the most vulnerable from hunger and poverty were passed and implemented. Women played a growing role in politics through quotas and reservations (the index 0.552 in Bangladesh compared to 0.253 in India).   On the other hand, the Bangladesh Rural Advancement Committee, GrameenBank and Association for Social Advancement have also played a pivotal role in spreading education and health facilities and providing women access to Self-employment through micro credit schemes.   M NiazAsadullah et al (2013), in their article enumerate that an inclusive development strategy involving various non-government stakeholders, religious bodies and aid donors has helped Bangladesh in promoting women-centric development programmes. A strong commitment from the elites, support from donor agencies and involvement of non-government stakeholders in framing the development strategy helped keep women in the forefront of the development process. This is an interesting journey to learn from.  Bangladesh has depended on aid and had to accept the advice that comes with it. However, it hasnot always been a happy relationship. Bangladeshi NGOs, for instance, have often clashed with international donors. The Bangladeshis have claimed, with some justification, that they know what is best for their country. There have also been accusations that Bangladesh has developed an aid-dependence syndrome, and some donors have given bad advice at times, prompted by their country’s commercial interests rather than the interests of Bangladesh.   But Bangladesh’s dependence on aid has meant that it has been far less easy for politicians to politicize economic decisions or twist them to their own advantage. It is undeniable also that it has given NGOs the freedom to make a contribution to the county’s development. Guided by their experience of working on the ground, they have also been able to influenced policy.   India, on the other hand, has taken a different path to growth. Instead of low-skilled manufacturing jobs, the services sector has become the country’s economic powerhouse due to its pool …

The Bangladesh way to women centric development Read More »

বাংলাদেশ কেন স্থিতিশীল ভূখণ্ড নয় ?

বিমল প্রামাণিক বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স বর্তমানে পাঁচ দশক অতিক্রান্ত। পূর্বে এই ভূখণ্ডটি পাকিস্তানের অধীনে ছিল চব্বিশ বছর  অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। তারও পূর্বে এটি ছিল বৃটিশ শাসনের অধীনে প্রায় দু’শ বছর। বৃটিশ সরকারের শাসনের শুরুতেই বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধীনে আসে অবিভক্ত বাংলা, আসাম, বিহার, মেঘালয়, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা। ১৭৬৫ সালের পরে আরও যুক্ত হয় ঝাড়খণ্ড। ১৮৭৭ সালের পর অর্থাৎ উনবিংশ শতকে ইংরেজ রাজত্বে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির আয়তন সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছয়। তখন আফগানিস্তানের নিকটস্থ খাইবার পাস থেকে শুরু করে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত বিস্তার ঘটে। পরে অবিভক্ত বাংলা তথা বেঙ্গল প্রভিন্স বা বঙ্গপ্রদেশ হিসেবে ১৯৪৭ সালে বিভক্ত হয়ে গঠিত হয় পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গ। যদিও ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি প্রদেশ গঠিত হলেও ১৯১১ সালে সেটা বাতিল হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগকালীন  পূর্ববঙ্গের সঙ্গে সিলেটের কয়েকটি অঞ্চলকে যুক্ত করা হয়। অবশিষ্টাংশ আসাম প্রদেশের সঙ্গে থেকে যায়। এরপরএকটি প্রদেশ হিসেবে পাকিস্তানের যুক্ত হয় আর পশ্চিমবঙ্গ ভারতের প্রদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপরপূর্ববঙ্গ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে এবং বাংলাদেশ নামে একটি দেশ গঠিত হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন শাসন আমলে বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডটির আকার অখণ্ড থাকেনি। সংক্ষেপে এটিই হলবর্তমান বাংলাদেশের পরিচিতি। প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি না করার প্রয়োজনে মুঘল ও দেশীয় রাজাদের ইতিহাস আলোচনায় অন্তর্ভূক্ত করা হল না। বৃটিশ আমল থেকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি এবং পরে বঙ্গপ্রদেশের বিবর্তনের ইতিহাস, বেঙ্গলি রেনেসাঁ ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গদেশের ভূমিকা ও বাঙ্গালিদের আত্মত্যাগের ইতিহাস, দেশ-বিভাগের ফলে বাঙালি হিন্দুদের ব্যাপকহারে পূর্ববঙ্গ ত্যাগের ইতিহাস, মুসলমানদের আংশিক পশ্চিমবঙ্গ ত্যাগ করে পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব- পাকিস্তানে গমনের ইতিহাস, ১৯৫০, ১৯৬৪ সালে পূর্ববঙ্গ ও পূর্ব-পাকিস্তানে ভয়াবহ হিন্দু নিধনের ইতিহাস,১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস—ভারতবর্ষের অবদান, গণহত্যার ইতিহাস, পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বাঙালি দালাল ও সহযোগীদের ইতিহাস এসব জানা আজকের প্রজন্মের জন্য জরুরী। যার নামে এবং আহ্বানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা—সপরিবারে সেই শেখ মুজিবুর রহমান সহ প্রবাসী সরকারের প্রধান চার নেতা স্বাধীনতার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে নৃশংসভাবে নিহত হন। আজকের বাংলাদেশী মুসলমানরা তো এদেরই উত্তরসূরি। এসব ইতিহাস আজকের বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীগণ না পড়লে, না জানলে তারা বাঙালি জাতির শিকড়ে পৌঁছুবে কেমন করে? বর্তমান এবং আগামী প্রজন্ম বাঙালির শৌর্য-বীর্য, গর্ব, বীরত্ব, আত্মত্যাগের ও বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস না জানলে, তাদের শিকড় বাংলার মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারবে না। তারা শিকড়হীন জাতিতে পরিণত হবে। তারা হয়ে যাবে ভাসমান বাঙালি। আজকের বাংলাদেশে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হয় শুধু ইসলামের ইতিহাস, ভারতের মধ্যযুগের মুঘলদের ইতিহাস, উদ্দেশ্য ছাত্র সমাজকে ইসলামি শাসন, ইসলামি ঐতিহ্য মন-মানসিকতায় গেঁথে দেওয়া। ইংরেজ শাসনে বাংলায় কোন স্বতন্ত্রভাবে স্বাধিকার আন্দোলন গড়ে না উঠলেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি হিন্দুদের বড় ভূমিকা রয়েছে, যদিও বাঙালি মুসলমান বৃটিশকে সহযোগিতা করাই শ্রেয় মনে করেছিল। তারা বাঙালি ঐতিহ্যের  কোন ধার ধারে নাই। বাঙালির বীরত্বে গর্বিত হয় না। তারা নিজেদের মুসলিম বলতে পছন্দ করে, বাঙালি বলতে হিন্দুদের বোঝায় – যাদের তারা ঘৃণা করতে পছন্দ করে। এই পাকিস্তানি ভাবধারা তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গেড়ে বসতে বসতে, নিজেদের বাঙালি পরিচয় থেকে বহু দূরে সরে যাচ্ছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক মুনতাশীর মামুন লিখেছেন, “এরাই নিয়ত বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা,  আওয়ামি লিগকে সব সময় দোষারোপ করে। খালেদা জিয়া, বিএনপি বা জিয়াউর রহমান ও এরশাদকে নয়, এরা ধর্মাশ্রয়ী দলকে সমর্থন করে বলে যে তারা আদর্শবাদী দল, মুক্তিবাহিনীর  বিচার চায় তারা পাকিস্তানি বা পাকিস্তানপন্থীদের ১৯৭১ সালে হত্যা করেছে বলে। এরা শিক্ষায়তনগুলোতে শিক্ষক হিসেবে পাকিস্তানতত্ত্ব সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে  সমর্থন  জোগায়। এখন দেখছি স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধ যারা সমর্থন করে তাদের অনেকেও এই পাকিস্তান প্রত্যয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।  আজ ৭৫ বছর কেন এই তত্ত্ব বাঙালিদের প্রভাবিত করছে তার উত্তর খুঁজছি।”১ ধর্মীয় রাষ্ট্র কাঠামোয় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রকৃত অর্থেই কোন বিশেষ মূল্য পায় না। দেশবিভাগ পরবর্তীপাকিস্তানেরচব্বিশবছরেরশাসনেপূর্ববঙ্গেরঅধিবাসীবৃন্দমর্মেমর্মেএটাউপলব্ধিকরেছিল।পূর্ববঙ্গতথাবাংলাদেশেরাষ্ট্রীয়ওসামাজিকঅঙ্গনেজাতিপরিচয়ছাপিয়েধর্মীয়পরিচয়বাঙালিমুসলমানসমাজকেএমনভাবেআষ্টেপৃষ্টেবেঁধেফেলেছেযেতারাআরতাথেকেবেরিয়েআসতেপারছেনা।এবিষয়েবিশিষ্টবুদ্ধিজীবীঅধ্যাপকআহমদশরীফেরমতামতনিম্নরূপঃ “আমাদেরজাতিপরিচয়সমস্যারমতোএমনঅদ্ভূতদুঃসাধ্যসমস্যাপৃথিবীরকোনদেশেরবাভাষারমানুষেরআছেকিনাজানিনা।যেচেতনাথেকেমানুষপ্রাণরসআহরণকরে, সত্তারস্বরূপঅনুভব-উপলব্ধিকরে, সেচেতনাটিইআমাদেরএখনওঅস্পষ্টওঅপূর্ণ।এখনওঅনির্ণীতছায়া, নিরবয়বঅনুভূতিমাত্র।ব্যক্তিমানুষেরওআশৈশবসুনির্দিষ্টতিনটিপরিচিতিথাকে—এগুলোতিনটিপ্রশ্নেরআবশ্যকওজরুরীউত্তর।কিনাম, কোথায়নিবাস, এবংকিবৃত্তি–এতিনটিরউত্তরইব্যক্তিমানুষেরপরিচিতিরআবশ্যিকভিত্তিএবংআত্মপরিচয়েরএতিনটিভিত্তিসবারইদৃঢ়।ব্যতিক্রমবিপর্যয়জাতমাত্র। দৈশিক-ভাষিক-জাতিক-রাষ্ট্রিক জীবনেও তেমনি একটি অভিন্ন সত্তা চেতনায় ঐক্য ও একাত্ম অনুভব না করলে একটা দৈশিক-ভাষিক-রাষ্ট্রিক ও সাংস্কৃতিক জাতি চেতনা দানা বাঁধতে পারে না।  এ অভিন্ন সত্তা-চেতনা বা জাতি-চেতনা থেকেই অভিন্ন উদ্দেশ্যে এবং সিদ্ধ-সাফল্যের লক্ষ্যে রাষ্ট্রিক জীবনে ভাব-চিন্তা-কর্ম-আচরণ নিরূপিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, একটা জাতি গড়ে ওঠে। আমাদের বেলায় তা আজও হয়ে ওঠেনি।২ মুসলমান সমাজে বাঙালি জাতিসত্তাবোধ গভীরে প্রবেশ না করায় বাঙালি জাতি রাষ্ট্র গঠনে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ১৯৭২ সালেই সামনে এসেছিল, ১৯৭৫ সালে এর পট পরিবর্তন তা চিরতরে অবসান ঘটিয়েছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। আবুল মনসুর আহমদ  বাহাত্তরেই লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ আসলে পাকিস্তানেরই সত্যতর রূপায়ণ’!’ অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালি মুসলমানের জাতিসত্তা বা বাঙালি জাতীয়তাবাদী চিন্তার প্রধান অন্তরায় ‘ইসলাম’। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভূত – যা পাকিস্তানের জন্ম ও ভারত-বিভক্তির প্রধান ভূমিকায় দেখা গেল, আজ দেশ বিভাগোত্তর পঁচাত্তরবছরপেরিয়েএসেসেইভূতবাঙালিমুসলমানদেরকাঁধেআবারওচেপেবসেছে।কোরাণ, সুন্নতওশরিয়ারবাঁধনশিথিলনাহলেবাঙালিজাতিসত্তারবিকাশকখনওসম্ভবনয়।‘ইসলাম’এবং ‘জাতিসত্তা’ পরস্পর সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশের আধুনিক গণতন্ত্রকামী গবেষকগণ হিন্দু-মুসলমান  সম্পর্ক বিষয়ক যে মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং বাঙালি মুসলমান সমাজ বাঙালি হিন্দুদের প্রতি যে ধরণের আচরণে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে তার নমুনা নীচে উদ্ধৃত করা হলঃ “The attitude of Muslims towards the minorities is fully influenced by the tenets of Islam.  The tenets and practices of other religious are compared with that of Islam, and in the process, it is established how Islam as a religion is superior to other religions.  The superiority is rationalized on the assessment that the Quran is infallible. Secondly, experience of Muslims in their encounter with the minority communities in the past is transmitted through socialization”…৩  উল্লেখিত বিশিষ্ট পণ্ডিত জনের মতামত প্রণিধানযোগ্য। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ‘পাকিস্তানি প্রত্যয়’ এখনও সজীব কেন তার প্রধানতম কারণ বাঙালি জাতিসত্তারধারণা বাংলাদেশের মুসলমান সমাজে শিকড় বিস্তার করতে পারেনি। নামে ‘বাংলাদেশ’ হলেও দ্বিজাতিতত্ত্বের  শিকড় রয়েছে সমাজের গভীরে। জাতিসত্তা বা জাতীয়তাবাদের শিকড় গভীরে প্রবেশ করার সুযোগ না পেলে কোনো জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র আজকের দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন কোন নজির নাই।  একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, যখন কোন জনগোষ্ঠী স্বজাতি- স্বধর্ম ত্যাগ করে ধর্মান্তরিত  হতে বাধ্য হয় বা স্বেচ্ছায় অন্য ধর্ম গ্রহণ করে, তখন নব্য ধর্মান্তরিত জনগোষ্ঠীর নতুন ধর্মের গুণগান করে মহিমান্বিত করার সবরকম চেষ্টা করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়ে যায়। নতুন ধর্মে তার বিশ্বাস-যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পূর্বেই তাকে পুরাতন ধর্মের অসারতা প্রমাণ করা আবশ্যিক হয়ে পড়ে। এই কর্মে প্রয়োজনে তার পুরানো ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈরী আচরণ করতেও দ্বিধাবোধ করে না বা ন্যায্যতা অন্যায্যতা তার বিবেচনায় আসে না। এখানে কোন জাতিসত্তা-বোধ কাজ করে না। গত দুইশত বছরের বাঙালি মুসলমানের ইতিহাস ঘাঁটলে এমন অনেক নজির দেখতে পাওয়া যাবে। সে কারণেই অধ্যাপক  আদমদ শরীফ বাঙালি মুসলমানের জাতিসত্তা-বোধ সম্পর্কে বলেছেন, “আমাদের জাতিপরিচয় সমস্যার মতো এমন অদ্ভূত দুঃসাধ্য সমস্যা পৃথিবীর কোন দেশের বা ভাষার মানুষের আছে কিনা জানি না। যে চেতনা থেকে মানুষ প্রাণরস আহরণ করে, সত্তার স্বরূপ অনুভব-উপলব্ধি  করে, সে চেতনাটিই আমাদের এখনও অস্পষ্ট ও অপূর্ণ।” … ইসলামি দেশ বা অত্যধিক-সংখ্যক মুসলিম-গরিষ্ঠ দেশে ইসলামি আইন-কানুন থাকা অস্বাভাবিক নয়। সেখানে বসবাসকারী অমুসলমানদের অবস্থা পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের অবস্থা থেকে বোঝা যেতে পারে। …

বাংলাদেশ কেন স্থিতিশীল ভূখণ্ড নয় ? Read More »

বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা ভার্সাই চুক্তির মত ২০২৪-র নির্বাচন কি আর একটি নির্বাচনের পদধ্বনি মাত্র?

।।শিতাংশু গুহ, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৩, নিউইয়র্ক।। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হবার পর ৭ই মার্চ ১৯৭৩ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচনটি ভালোই ছিল। এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যা, সামরিক শাসন পেরিয়ে ১৮ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচন। জাতি প্রথম দেখলো ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’। আরো দেখলো নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন। এ নির্বাচনে ভোটের গুরুত্ব ছিলনা, কারণ ফলাফল আগেভাগে ঠিক ছিল। প্রহসনের নির্বাচনের সেই শুরু। থেমে থেমে আজও তা চলছে, কেউ জানেনা এর শেষ কোথায়?  ১৯৮৬ ও ১৯৮৮-এর নির্বাচনের আগে-পরে হিন্দুর ওপর অত্যাচার হয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়, সংখ্যালঘু নির্যাতন বাদ যায়না। ২০০১-র নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি-জামাত বিজয় উৎসব পালন করে ব্যাপক হিন্দু নির্যাতনের মধ্য দিয়ে। এ যাবৎ নির্বাচনী সন্ত্রাসের মধ্যে ২০০১ এখনো শীর্ষে? ১৯৮১ সালে দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে বিচারপতি সাত্তার বিজয়ী হন। জিয়া হত্যার পর এই নির্বাচন ছিল আর একটি প্রহসন, লোক দেখানো এবং সময় ক্ষেপণ। নির্বাচনটি হয় ১৫ নভেম্বর ১৯৮১, এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন ২৪শে মার্চ ১৯৮২।  এ প্রসঙ্গে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের একটি চমৎকার উক্তি আছে। বায়তুল মোকাররমে এক ভাষণে তিনি বলেন, দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হলো, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন ডঃ কামাল হোসেন ও বিচারপতি আব্দুস সাত্তার; জনগণ ভোট দিলো ড: কামাল-কে, জিতলেন সাত্তার সাহেব এবং ক্ষমতায় বসলেন হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ’। সুরঞ্জিতদার এই বক্তব্য থেকে তখনকার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়! এটি আমি নিজকানে শুনেছি।  দেশে আরো দু’বার জনগণের ভোটে (!) প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়, সেটা ১৯৭৮ ও ১৯৮৬। এতে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না, বরং তা ছিল অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার প্রক্রিয়া? একই লক্ষ্যে বাংলাদশে ১৯৭৭ ও ১৯৮৫-তে দুটি রেফারেন্ডাম হয়েছিল, যা ‘হ্যাঁ-না’ ভোট নামে সমধিক পরিচিত। তবে ১৯৯১ সালের রেফারেন্ডামটি ছিল ভিন্ন আঙ্গিকে। ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়, বিএনপি নেয়না। প্রচার আছে যে, আওয়ামী লীগ তখন সরকারের সাথে আপোষ করেছিল। আসলে তা নয়, বিএনপি চালাকি করে আওয়ামী লীগকে বোকা বানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে পড়ে।  ঘটনাটি ছিল এরকম: নির্বাচনে যাওয়া-না-যাওয়া প্রশ্নে তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় জোটের মধ্যে অনেকগুলো মিটিং হয়। চূড়ান্ত সভায় গভীর রাতে যৌথ সিদ্ধান্ত হয় যে, উভয় জোট নির্বাচনে অংশ নেবে এবং পরদিন তারা পৃথক পৃথকভাবে তা সাংবাদিকদের জানাবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আওয়ামীলীগ পরদিন সকালে জানিয়ে দেয় যে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি বিশ্বাসভঙ্গ করে। তারা প্রচার করে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে হাত মিলিয়েছে। ঐ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করে, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে বসে। শেখ হাসিনা বিরোধী নেত্রী হিসাবে এই প্রথম ক্ষমতার স্বাদ পান। ধারণা করি, ঐসময় তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন যে, দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে। সেই সুযোগ এসেছিল ১৯৯১ সালে। অতিরিক্ত কনফিডেন্সের কারণে তখন আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। শেখ হাসিনা বিরোধী নেত্রী হন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। এরশাদ জেলে যান। শেখ হাসিনা তখন সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। যদিও তখন সেটি কেউ আমলে নেয়নি, প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগকে তখন জোর করে (প্রশাসনিক ক্যু!) হারানো হয়েছিল।  ১৯৮৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরশাদ একাই প্রার্থী ছিলেন, সাথে ক’জন নাম না জানা প্রার্থী। ১৯৯১ থেকে নির্বাচনের কথা মোটামুটিভাবে সবার মনে আছে। সেদিকে যাবার আগে ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনের কথা কিছুটা বলা দরকার। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট বা বিএনপি জোট অংশ নেয়নি। জাতীয় পার্টি খালি মাঠে বিজয়ী হয়। আসম রব তখন ‘গৃহপালিত’ বিরোধী নেতা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন, মতিঝিলে জুতাপেটা হন। অবাক কান্ড যে, রওশন এরশাদ এবং আসম রব প্রায় একই ভূমিকা পালন করলেও রওশন এরশাদ ‘গৃহপালিত’ উপাধি পাননি!   ১৯৭৫-এর পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মূলত: অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং যেনতেন প্রকারেণ ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতি চালু ছিল। নির্বাচনের লক্ষ্যও ছিল তাই? ঐসময় জেনারেলদের ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রয়োজনে ধর্মভিত্তিক দল বিএনপি-জাপার জন্ম হয়, ক্যান্টনমেন্টে। ১৯৮৮ সালে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হলে হিন্দু ও সংখ্যালঘুরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়? আবার ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলে হিন্দুদের মনে কিছুটা আশার সঞ্চারহয়। যদিও ১৯৯৬-র নির্বাচনের পর হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন করে বিএনপি-জামাত গোষ্ঠী।  ২০০১-র নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোট জয়ী হয় এবং তারা বিজয় উৎসব পালন করে সংখ্যালঘু বিশেষত: হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়ে। ২০০১-২০০৬ এসময়ে বিএনপি-জামাত শাসনামলে দেশে জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বাড়ে, বাংলাদেশে হচ্ছেটাও তাই। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ২০০১-এর সংখ্যালঘু নির্যাতনের তদন্ত করতে একটি কমিশন গঠন করে। বিচার হয়নি। বাংলাদেশে হাজার হাজার মন্দির ও মূর্তি ভাঙ্গলেও আজ পর্যন্ত একজন এই অপরাধে শাস্তি পায়নি? এটাই সত্য।   বাংলাদেশে ২০০৮-এর ডিসেম্বরের নির্বাচনটি সম্ভবত: সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সংখ্যালঘু নির্যাতন কম হয়েছে। আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে। তারপর ২০১৪-র ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন। ১৫৩জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। যাকিছু ভোট পড়েছে, দিয়েছে হিন্দুরা। পত্রিকায় শাঁখা-সিঁদুরের ছবি এসেছে, হিন্দু আবার নির্যাতিত হয়েছে। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, বিচার হয়নি। ২০০৯ থেকে দেশে নুতন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উন্নয়নের জোয়ার বইছে, সমানতালে চলছে সংখ্যালঘু নির্যাতন, দেশত্যাগ। ২০০৯ থেকে ২০১৭, এবং এখন পর্যন্ত (২০২৩) সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্যে দায়ী সরকার, বিচার নাই, ফলে নির্যাতন চলছে তো চলছেই।   নির্বাচন এলে নির্যাতনের মাত্রাটা বেড়ে যায়। আগেই বলেছি, বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুরা কম-বেশি নির্যাতিত হয়েছে। এই ধারা এখনো চলছে। সামনের নির্বাচনের আগে-পরে হবেনা এর গ্যারান্টি কোথায়? ৭ই জানুয়ারী ২০২৪-র নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছে একটি দল বা জোট, তারা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। যাঁরা নির্বাচন করছেন, তাঁরা ভোট দিতে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। এমনিতে হিন্দুরা সচেতন, ভোট দেন, এবার ভোট দিতে গেলে কি রোষানলে পড়ার সম্ভবনা থাকবে না? এবার আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু মনোনয়ন কম দিয়েছে, এবং কারো কারো মতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে এঁরা অনেকেই জয়ী হতে পারবেন না?  ১৫ই ফেব্রূয়ারি ১৯৯১ সালের নির্বাচনের কথা বলা হয়নি। ওটাও ছিলো প্রহসনের নির্বাচন। খালেদা জিয়ার ক্ষমতা ধরে রাখার অপপ্রয়াস। যদিও তার সেই আশা পূর্ণ হয়নি। ১২ই জুন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হন। ৩০শে ডিসেম্বর ২০১৮ একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি শুধু নামেই নির্বাচন, অভিযোগ রয়েছে, ‘দিনের ভোট রাতে’ হয়ে যায়। ব্যাপক কারচুপি হয়, মূলত: এটি ছিল ‘বিনে’ ভোটের নির্বাচন।  এপর্যন্ত ১১টি সংসদীয় নির্বাচন, ৩টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং ৩টি রেফারেন্ডাম হয়েছে। তাতেও কিন্তু গণতন্ত্র এখনও ‘সোনার হরিণ’ রয়ে গেছে। নির্বাচন মানেই ঝামেলা, ভয়, শঙ্কা। শঙ্কাটা সংখ্যালঘুর মধ্যে বেশি। এতগুলো নির্বাচনের মধ্যে কয়টি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে  তা বলা মুশকিল? জনগণ ২০০৮-এ একটি সুন্দর নির্বাচন দেখেছে, ২০১৪ এবং ২০১৮-তে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এ সময়টায় যারা নুতন ভোটার হয়েছেন তারা কি এবার ভোট দিতে পারবেন?হয়তো পারবেন, কিন্তু পছন্দমত প্রার্থীকে কি ভোট দিতে পারবেন?ভোট তো দিতে হবে, হয় নৌকা বা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে? এবারের নির্বাচনটি হচ্ছে, নৌকা ভার্সেস আওয়ামী লীগ (স্বতন্ত্র)।  নির্বাচনের আর মাত্র ক’দিন বাকি, তবু হয়তো নির্বাচন নিয়ে শেষ কথা বলার সময় শেষ হয়ে যায়নি। স্কুলে পড়েছিলাম, …

বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা ভার্সাই চুক্তির মত ২০২৪-র নির্বাচন কি আর একটি নির্বাচনের পদধ্বনি মাত্র? Read More »

ভারত হারলেই আনন্দ!

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক (২২ শে নভেম্বর ২০২৩) এ আনন্দ-উৎসব হিন্দু বিদ্বেষ থেকে উৎসারিত। ভারত-বিদ্বেষ যা মূলত হিন্দু বিদ্বেষ, এ উপমহাদেশে মজ্জাগত, আপাতত: এ থেকে বেরিয়ে আসার কোন সুযোগ নেই? এজন্যে পাকিস্তান হিন্দু-শূন্য, বাংলাদেশ হিন্দু-শূন্য হবার পথে। অষ্ট্রেলিয়া যোগ্য দল হিসাবে ভাল খেলে জিতেছে, তাঁদের অভিনন্দন। ভারত শক্তিশালী দল, অপরাজিত ছিল, হেরেছে ফাইনালে। খেলা হচ্ছে, ‘হারি-জিতি’ নাহি লাজ, ভারতবাসী দু:খ পেয়েছে, কিন্তু অষ্ট্রেলিয়াকে অভিনন্দন জানাতে ভুল করেনি। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে ভারতের পরাজয়ে আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। না, এটি কোন গোপন বিষয় নয়, বাংলাদেশের দর্শক প্রকাশ্যেই বলেছেন, ভারত হারায় তাঁরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন।    ‘দি নিউজ-বাংলা’ হেডিং করেছে, ‘ভারতের হার, বাংলাদেশে উৎসব’। একজন জাহাঙ্গীর আলম সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “মানুষ এত ‘বে-ইমান’ হয় কি করে, শুধুই ধর্মের জন্যে—ছিঃ বাংলাদেশ ছিঃ”? তাঁর পোস্টে একজন ভারতীয় শুভাশীষ ভট্টাচার্য্য লিখেছেন, ‘যে কেউ অস্ট্রেলিয়াকে সাপোর্ট করতেই পারে, কিন্তু কারণ জানতে চাইলে বলা হলো, ভারত মুসলিম রাষ্ট্র নয়! অস্ট্রেলিয়াও তো মুসলিম রাষ্ট্র নয়, তাহলে? ভারত হিন্দু। বিষয়টি ভারত নয়, বিষয়টি হিন্দু, এক্ষেত্রে ভারত-হিন্দু সমার্থক। ভদ্রলোক লিখেছেন, বিষয়টি পরিষ্কার, এন্টি-হিন্দু। ভারতের টীমে মোহাম্মদ সামি, সিরাজ আছে, তাঁরা চমৎকার খেলেছেন, তাহলেও হবে না, হিন্দুর সাথে থাকলে চলবে না?     তামান্না তাবাস্সুম মিথিলা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ইন্ডিয়া সব ম্যাচে জিতেছে, একটিতে হারলে সমস্যা নেই! তাঁর পোস্টে একজন শাহরিয়ার নাসিফ একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন, ভারত ১০টি জিতেছে, ১টি হেরেছে অর্থাৎ ‘চোরের দশদিন, গৃহস্থের একদিন’।  ‘আরকি’ নামের একটি পোর্টাল ছবির আকারে একটি বক্তব্য দিয়েছে, তাতে লেখা, ‘ইন্ডিয়া হেরে যাওয়ার খুশিতে চিৎকার করতে গিয়ে বড়ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ভারত নিয়ে আসা হচ্ছে’। মো: শাহরুখ ইসলাম  এবং আরো অনেকে টিটকারী করে বলেছেন, ‘হে প্রভু, হরি, কৃষ্ণ, জগন্নাথ, প্রেমানন্দ, ‘এ কেয়া হুয়া’। হিন্দুরা বলেছেন, এরপরও তো ওঁরা কৃষ্ণ নাম নিচ্ছে! একজন আরিফুজ্জাম লিখেছেন, ‘ধর্মের ঢোল আপনি বাজে’।   ভারত-পাকিস্তান খেলায় অধিকাংশ বাংলাদেশী পাকিস্তানকে সমর্থন করে, এর হয়তো একটি কারণ থাকতে পারে, কিন্তু ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে ভারতের পরাজয়ে এ উল্লাস অনেকাংশে ‘বিজাতীয়’। হিন্দু বিদ্বেষ, ভারত বিদ্বেষ ব্যতীত আর কি কারণ থাকতে পারে? নিউইয়র্কে একটি টক-শো তে দু’জন জানালেন, হয়তো এর কারণ ভারতের দাদাগিরি, ভারত বাংলাদেশ থেকে সবকিছু নিয়ে যাচ্ছে, অথবা বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিমাতা-সুলভ আচরণ? যদিও একজন সম্পাদক শেষের বক্তব্যটি প্রমাণসহ নাকচ করে দিয়েছেন! কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মিডিয়ায় এনিয়ে কোন আলোচনা নেই, কেউ কোন কলাম লেখেনি, কারণ মনে মনে সবাই খুশি!    কেউ যদি বলেন, ভারত হারায় এ উচ্ছ্বাস সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বৈ কিছু নয়, তাহলে এঁরা আপনাকে সাম্প্রদায়িক বানিয়ে দেবে এবং ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ হাঁকিয়ে বলবে, ‘খেলার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা টেনে আনবেন না’! সন্ত্রাসের কথা উঠলেও এঁরা  বলেন, ধর্মের সাথে সন্ত্রাসের কোন সম্পর্ক নেই? জিজ্ঞাসা করুন, খেলার মাঠে নামাজ পড়েছিল কারা? বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এটি করে ধর্মের কি লাভ হয়েছে জানিনা, তবে খেলায় জয় আসেনি। এর নিট ফলাফল সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কে দেয়া- যার পরিণতি ভারত বিদ্বেষ, যার উলঙ্গ প্রকাশ ভারতের পরাজয়ের পর সাম্প্রদায়িক উল্লাস। এর বিরূপ প্রভাব পূর্ব-ভারতে পড়েছে, হয়তো আরো পড়বে। প্রাক্তন গভর্নর ড: তথাগত রায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশ অকৃতজ্ঞ, ফের এর প্রমাণ  দিল’।     একজন চমৎকার একটি হাইপোথিটিক্যাল প্রশ্ন করেছেন, তিনি জানতে চেয়েছেন, ফাইনাল খেলাটি যদি ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে হতো, এবং ইসরাইল জিততো, তাহলে বাংলাদেশীরা কি করতেন? আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আমরা খেলাটি ‘বয়কট’ করতাম। এক ভারতের জ্বালায় বাঁচিনা, এর ওপর ইসরাইল! (২) হিন্দুর মাথায় হাত বোলানো! ৩রা নভেম্বর ২০২৩ সরকার এবং দল হিসাবে আওয়ামী লীগ এসময়ে হিন্দু তথা সংখ্যালঘুদের মাথায় হাত বোলাতে শুরু করেছেন। তারা ইতিমধ্যে দেশে বেশ ক’বার হিন্দু নেতা, এবং প্রবাসে ঐক্য পরিষদের সাথে বৈঠক করেছেন। যদিও ফলাফল ‘শূন্য’। গত দেড় দশক সরকার ও আওয়ামী লীগ হিন্দুর কথা বেমালুম ভুলে থেকেছেন। এখন ভোট আসছে, এবার হয়তো ভোটের দরকার হবে, তাই মাথায় হাত বোলানো। এতে কি কাজ হবে? এবার কি শুধু কথায় চিড়ে ভিজবে, না ২০১৮’র অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে?  হিন্দুরা কি তাহলে এবার আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না? পাল্টা প্রশ্ন করা যায়, কেন দেবে? হিন্দুরা তাহলে কাকে ভোট দেবে? ভোটের চিত্রটি ভিন্ন, আগে হিন্দুরা ১শ’ শতাংশ নৌকাকে ভোট দিয়েছে, সত্তরে হিন্দুরা ১শ’ শতাংশ ভোট নৌকায় দিয়েছিল বলেই বঙ্গবন্ধু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল, দেশ স্বাধীন হয়েছিল। পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগের উত্থানে হিন্দুদের অবদান, এমনকি ২০০৮-এ ক্ষমতায় আনতে হিন্দুরা জীবনপণ করেছিল। বিনিময়ে হিন্দুদের ‘কলা’ দেখানো হয়েছে।  ১৩ই অক্টোবর ২০২৩ দৈনিক প্রথম আলো হেডিং করেছে, ‘সংখ্যালঘু নেতাদের সাথে সমঝোতার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ, লক্ষ্য ভোট’। ক’দিন আগে ঐক্য পরিষদের অনশন ভাঙ্গাতে আওয়ামী লীগ ‘সংখ্যালঘু কমিশন’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, আপাতত: সরকার এনিয়ে চুপচাপ। ওয়াশিংটনে হিন্দু নেতারা  আবারো ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ দাবি করেন। মনে হয়, অন্তত: এ দু’টো দাবি পূরণ না হলে এবার আওয়ামী লীগ হিন্দুদের তেমনটা পাশে পাবে না।   তাহলে হিন্দুরা কোনদিকে যাবে? হিন্দুরা সাম্প্রদায়িক দলের দিকে যাবে না, আওয়ামী লীগ এখন আর অ-সাম্প্রদায়িক দল নয়, তবু মাঝে মধ্যে কেউ কেউ মুখে অসাম্প্রদায়িকতার কথা ভুলে বলে ফেলেন, বেকুব হিন্দু তাতেই খুশি? হিন্দুরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এবার নির্বাচনে অসংখ্য হিন্দু প্রার্থী থাকবে। আওয়ামী লীগের ২১জন সংখ্যালঘু এমপি হিন্দুদের নিরাশ করেছেন। এজন্যে ক’দিন আগে রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ২১ জন সাংসদ কিছুই করলেন না!  সিইসি বলেছেন, সংখ্যালঘুরা রাজনৈতিক দলের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। কথাটি সত্য। জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বলেছেন, সরকার জড়িত বলেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হয় না। হিন্দুরা মূলত: শান্তি চায়, সরকার তা দিতে ব্যর্থ। ‘ইসলাম ধর্ম অবমাননা’ এবং হিন্দুদের ওপর আক্রমণ, জেল-জুলুম ঘটনায় হিন্দুরা তিতি- বিরক্ত। ডিএসএ বা অধুনা সিএসএ (সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট) হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্ল্যাসফেমি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইকবালের কারণে ১৮টি জেলায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয়, তাঁর হয়েছে ১৪ মাসের জেল এবং রাকেশ রায়, যিনি ভিকটিম, তার হয়েছে ১১বছরের জেল? এথেকে দেশের বিচার ব্যবস্থার দৈন্যতা এবং হিন্দুর প্রতি ভালবাসা টের পাওয়া যায়!  বর্তমানে হিন্দুদের ‘ভিক্ষা চাইনা, কুত্তা সামলান’ অবস্থা। আওয়ামী লীগের ভালবাসা হিন্দুদের আর দরকার নেই! পূর্ব-পাকিস্তান আমলে হিন্দুরা প্রতিকূল অবস্থায় বাস করতো, কারণ সরকার, রাজনৈতিক দল সবাই ছিল অ্যান্টি হিন্দু। ভরসা ছিলো বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, বাম দলগুলো এবং কিছু ভালো মানুষ। এখন বঙ্গবন্ধুও নেই, নেই সেই আওয়ামী লীগ বা বামেরা, প্রশাসন, রাষ্ট্রযন্ত্র, হুজুর ও ধর্ম ব্যবসায়ীরা সবাই অ্যান্টি সংখ্যালঘু, ভালো মানুষ  কোথায়? হিন্দুদের অবস্থা এখন পাকিস্তান আমলের চেয়েও খারাপ। এই অবস্থায় ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানো ছাড়া সংখ্যালঘু’র সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই?       ভারত কখনও হিন্দুদের জন্যে কিছু করেনি। আওয়ামী লীগ হিন্দুদের জন্যে কিছু করেনি। এই দুই শক্তির ওপর ভরসা করে হিন্দুরা বারবার ঠকেছে, হয়তো ঠকে ঠকে শিখেছে, ‘বলং বলং বাহু বলং’। বাংলাদেশের দুই কোটি হিন্দুকে বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’! বাংলাদেশে গণতন্ত্র, প্রগতিশীলতা বজায় রাখতে, বা উগ্রতা ও ইসলামী মৌলবাদ ঠেকাতে সংখ্যালঘুরা ‘ডিটারেন্ট …

ভারত হারলেই আনন্দ! Read More »

মুক্তিযুদ্ধের গান

পূর্ণিমা নস্কর স্বাধীনতা কোন দেশের প্রাণ হলে সংস্কৃতি হয় তার সৌন্দর্য।  দেশের এই সংস্কৃতিকে বুকে আগলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই সে দেশের আবেগপ্রবণ মুক্তিযুদ্ধকে করেছিল উজ্জ্বল। আর এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিরাট একটা অংশ ছিল তরুণ প্রজন্ম।  এই তরুণদের টগবগ করা রক্ত, দূর্দমনীয় সাহস  স্বাধীনতা-সংগ্রামকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছিল এবং সেইসব তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে রচিত হয়েছিল অসংখ্য গান।  সেইসব প্রাণশক্তিরূপিণী গানের ডালিকে স্মরণ করে বীর শহীদের প্রতি রইল  আমার অন্তরের গভীর বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ।   এই সমস্ত গানের সম্প্রচারের জন্য স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র বিশেষ ভুমিকা পালন করেছিল। সেই সমস্ত গান তৎকালীন উভয় বাংলার আপামর জনসাধারণকে উদ্বেলিত করেছিল – যার রেশ আজও ম্রিয়মাণ হয়নি। সেইসব গানের কিয়দংশ নিবেদন করার মধ্য দিয়ে সেই সূদুর সত্তরের দশকের প্রথমার্ধে যে উন্মাদনার সৃষ্টি  হয়েছিল স্বাধীন বাংলায় ও পশ্চিমবঙ্গে তার একটা প্রতিচ্ছবি বা অনুরণন ফিরে পাওয়ার প্রয়াস এই  প্রবন্ধে রয়েছে।   যে সব গান বেতার কেন্দ্রগুলি সম্প্রচার করেছিলঃ  “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি।                                                 মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।”  (১)   এই গানে পূর্ব পাকিস্তানের কোটি কোটি মানুষের প্রাণ সজীব, উজ্জ্বল ওঠে। প্রতিরোধ সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় রচনার একটি অমোঘ অস্ত্রস্বরূপ ছিল গানটি। এর রচয়িতা হলেন গোবিন্দ হালদার, সুরকার ও  শিল্পী ছিলেন আপেল মাহমুদ। শ্রোতাদের বিচারে গানটি সেরা গানগুলির মধ্যে পঞ্চম স্থানে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল।   চিরকালীন শোষণ আর নিপীড়ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ইতি বাঙালি বিজয় দিয়ে দেখতে চেয়েছিল, যাতে এসে সামিল হয়েছিল অসংখ্য মানুষের দেশপ্রেমের অনুভব আর প্রাণপণ লড়ে যাওয়ার গৌরব বাসনা। সে সময় নাঈম গহর লিখেছিলেন—         “নোঙ্গর তোলো তোলো         সময় যে হলো হলো         নোঙ্গর তোলো তোলো।“ (২)   পরবর্তীতে সমর দাস  এ গানটিতে সুরারোপিত করলে বাঙালি স্বাধীনতার লড়াইয়ে নতুন করে মনে বল অনুভব করে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত  বাঙালির মনে দেশপ্রেমকে জাগরিত করতে অনবদ্য ভূমিকা রাখে। আরও একটি উল্লেখযোগ্য গান হল—         তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে।         আমরা কজন নবীন মাঝি হাল ধরেছি শক্ত করে। (৩)   গানটির  গীতিকার ও সুরকার আপেল মাহমুদ। কন্ঠশিল্পীরা হলেন আপেল মাহমুদ, রথীন্দ্রনাথ রায় ও সহশিল্পীরা। গানটির মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের লড়াইয়ের অগ্রসরতাকে প্রকাশ করা হয়েছে এবং গানটি ছিল মুক্তি সংগ্রামের তীব্র চেতনার এক বজ্রকঠিন শপথ।   অপর একটি গান, যার কথা, সুর এবং গায়কি লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করে তুলেছিল। গানটি এইরূপ –         “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে,         রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল,         জোয়ার এসেছে জন সমুদ্রে         রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল,         বাঁধন ছেঁড়ার হয়েছে কাল।” (৪) সমবেত কণ্ঠ-শিল্পীদের দ্বারা গাওয়া গানটির গীতিকার গোবিন্দ হালদার এবং সুরকার ছিলেন সমর দাস। এ গানটি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তরুণদের মধ্যে অদম্য সাহস সঞ্চার করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে একটা ভিন্ন মাত্রায় উন্নীত করেছিল।   সমাজের সর্বস্তরের জনতার  অংশগ্রহণ যে স্বাধীনতা সংগ্রামকে শাসককুল আর দাবিয়ে রাখতে পারবে না বুঝেই সিকান্দার আবু জাফর লিখেছিলেন –         “জনতার সংগ্রাম চলবেই         আমাদের সংগ্রাম চলবেই         জনতার সংগ্রাম চলবেই।“ (৫)   শেখ লুৎফর রহমানের সুরে শিল্পীরা যখন সমবেতভাবে এই গান গাইলেন তখন তা এক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।   বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত শুধু সবদিক থেকে সাহায্যই করেনি; মুক্তিযুদ্ধের গানেতেও তার অবদানের সাক্ষর রেখেছে বহুক্ষেত্রে। ভারতের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত প্রতিভাবান শিল্পীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাত ও ধর্মের বিচার না করেই গান রচনা করেন ও পরিবেশন করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। দৃষ্টান্তস্বরূপ গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানটি – “মাগো ভাবনা কেন আমরা তোমার শান্তপ্রিয় শান্তছেলে প্রতিবাদ করতে জানি  শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি তোমার ভয় নেই মা আমরা”।  (৬)   এখানে বাংলাদেশকে মায়ের স্থান দেওয়া হয়েছে। কত শত তরুণ গানটি শুনতে শুনতে গৃহত্যাগী হয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল এবং ইতিহাসে আজ সেসব তথ্য  কিছু হলেও লিপিবদ্ধ হয়েছে।   বিখ্যাত সুরকার গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা আরও একটি গান –         “শোন একটি মুজিবুরের থেকে         লক্ষ মুজিবুরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি- প্রতিধ্বনি         আকাশে বাতাসে ওঠে রণি,         বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।” (৭)   গানটির সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী  ছিলেন অংশুমান রায়।  এই গানটি ছিল এমন একটি গান, যেটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হওয়ার অনেক আগেই ভারতের কোন এক বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত হয়েছিল।   বাংলাদেশি সঙ্গীতজ্ঞরাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছেন। গাজী মাঝহারুল আনোয়ারের লেখা ও আনোয়ার পারভেজের সুরারোপিত এবং কণ্ঠশিল্পী মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সেই বিখ্যাত গান –           “জয় বাংলা বাংলার জয়।         হবে হবে হবে হবে নিশ্চয়।         কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধ রাতে         নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময় জয় বাংলা বাংলার জয়।” (৮) গানটির জনপ্রিয়তা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে পরে এই গানটি ‘জয় বাংলা’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়।  গানটি মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাসহ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল। এ প্রসঙ্গে ডিএল রায়ের একটি বিখ্যাত গান—মাতৃভূমি নিয়ে গর্বিত হওয়ার গান।   “ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা।” (৯)    এই গানটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রত্যাবর্তনের দিক নির্দেশ করে।   আব্দুল লতিফের লেখা ও গাওয়া অপর একটি উল্লেখযোগ্য গান হল –           “ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়          ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়         ওরা কথায় কথায়  শিকল পরায় আমার হাতে পায়ে           ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমাদেরই হাতে পায়ে।” (১০)   এখানে তৎকালীন পাকিস্তানে (অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার সমান মর্যাদা) পূর্ববঙ্গে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির যে প্রকৃষ্ট চর্চার কেন্দ্র ছিল সেখানে লোকজ সঙ্গীত একটা বড় স্থান জুড়ে রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু ঘোষণার প্রেক্ষিতে বিচলিত হয়ে পড়ে এবং নিজেদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার তাগিদ অনুভব করে।   মুক্তিযুদ্ধের ৭৮টি গানের মধ্যে রথীন্দ্রনাথ রায়ের কণ্ঠে বহুল প্রচারিত উল্লেখ্য গানটি ছিল—           “আমার এদেশ সব মানুষের” (১১)   আব্দুল জব্বারের গাওয়া জনপ্রিয় গানটি হল—         সাত কোটি মানুষের আর একটি নাম         মুজিবর, মুজিবর, মুজিবর।  (১২) গানটির কথা লিখেছিলেন শ্যামল গুপ্ত এবং গানটিতে সুর দিয়েছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় সুরকার বাপ্পী লাহিড়ী।   ফেরদৌসী রহমানের গাওয়া অপর এক গান –           “আমার মন জুড়ানো চোখ জুড়ানো।” (১৩)   আব্দুল লতিফের লেখা হৃদয় জুড়ানো গানটি ছিল এইরূপ –         “সোনা সোনা লোকে বলে সোনা         সোনা নয় ততো খাঁটি         বলো যত খাঁটি তার চেয়ে খাঁটি         বাংলাদেশের মাটিরে আমার জন্মভূমির মাটি         ধন্য মানি জীবনটাকে এই বাংলাকে ভালোবেসে।” (১৪)   এ ব্যতীত এ প্রসঙ্গে বলা যায়, ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান আমলে সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্দার আলাউদ্দিন আহমেদের লেখা, সুরে ও কণ্ঠে ধ্বনিত হয় বিখ্যাত যে গান—         “মুজিব বাইয়া যাওরে         নির্যাতিত দেশের মাঝে         জনগণের নাওরে মুজিব         বাইয়া যাওরে।”   (১৫)   এই গানটির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলার ঘরে ঘরে …

মুক্তিযুদ্ধের গান Read More »

নির্বাচনঃ কি হতে পারে?

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক (১) আওয়ামি লিগ ভাবছে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে। আওয়ামি লিগ চায় বিএনপি নির্বাচন বয়কট করুক। তাহলে আওয়ামি লিগ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে কি হবে?  এ প্রশ্নের আপাতত তেমন কোন সদুত্তর নেই। বিএনপি কি নির্বাচনে আসবে? বিএনপি জানে এবার নির্বাচনে না এলে ভেতর থেকেই এই দলের অস্তিত্ব  বিলীন হয়ে যাবে। তাই ধারণা করি, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। দেশের স্বার্থে এবার নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। নইলে দেশ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়বে, যা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। জরিপ বলছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামি লিগ ৬৭টি আসন পাবে? অর্থাৎ আওয়ামি লিগ ক্ষমতা হারাবে? আওয়ামি লিগ হারতে রাজি আছে, কিন্তু ক্ষমতা বিএনপিকে দিতে চাইবে না! তাদের মনোভাব হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসলে নির্বাচনের দরকার কি? আওয়ামি লিগ ও বিএনপি একে অপরকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই  আওয়ামি লিগ চাইবে আপাতত নির্বাচন না হোক। এ অবস্থা কি হতে পারে?  বাংলাদেশে কি কিছু অসম্ভব? তবে আওয়ামি লিগ সংবিধানের বাইরে যাবে না! এও সত্য যে, এমন সমাধান চাই, যাতে বিদেশিরা মোটামুটি সন্তুষ্ট থাকে। বিএনপি মনে করে, ক্ষমতায় না গেলেও আওয়ামি লিগ হটাতে হবে। ব্রিকস সম্মেলনে মোদী-শিজিনপিং  সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামি লিগ-বিএনপি এমত একটি ঐক্যমত কি আশা করা যায়? না, যদিও এটি হওয়া দরকার, কিন্তু কার্যতঃ সেটি অসম্ভব। তাহলে? তাহলে তো অনেক কিছুই হতে পারে, এ বছরের বাকি ক’টি মাস ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কি হতে পারে, এমন কিছু সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যাক। প্রথম সম্ভাবনা হচ্ছে, দেশে জরুরী অবস্থা জারী করা। রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করা। রাষ্ট্রপতি সবার সাথে আলোচনা করে একটি ‘অন্তর্বর্তী’ সরকার গঠন ক্রবেন, যেটি নির্বাচনী লেভেল ফিল্ড তৈরী করবে, এবং এরপর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এতে বিএনপি’র লাভ, তাদের মূল দাবি শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে নির্বাচনে না যাওয়ার শর্ত দাবি পূরণ হবে। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে। এসব কিছুই ‘হাইপোথেটিক’, আলোচনা সাপেক্ষ। দুই/এক বছর পর নির্বাচনে ফলাফল যাইহোক, তাতে আওয়ামি লিগের ক্ষতি নেই? ইতিমধ্যে বৈদেশিক চাপ কমবে, ২০০৮-এর মত একটি স্বচ্ছ নির্বাচন হবে? দ্বিতীয় সম্ভাবনা হচ্ছে, বর্তমান সরকার সবার অংশগ্রহণে একটি সুন্দর নির্বাচন করবে, এবং ফলাফল মেনে নেবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা না হয়ে ঐকমত্য হতে হবে। কারণঃ অবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতের মধ্যে আওয়ামি লিগকে শেষ করে দেবে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ থাকবে না, আমিও থাকবো না?  বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, মনে হচ্ছে খুব একটা কঠিন সময় আসছে। এদের আশ্বস্ত করতে হবে। তৃ্তীয়তঃ সরকার ডেকে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা দিয়ে যাবে? তবে এক্ষেত্রে  সংবিধান সংশোধন দরকার হতে পারে? তাই আপাততঃ সংসদ বাতিল হচ্ছে না। দলের ভিতর ক্যু হবার কোন সম্ভাবনা নাই, তাই শেখ হাসিনা যা চাইবেন, তাই হবে? চতুর্থতঃ ডঃ ইউনুস? শেখ হাসিনা স্বয়ং ইউনুসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। হয়তো আওয়ামি লিগ ভাবছে বিএনপি ডঃ ইউনুসকে তাদের ‘প্রধানমন্ত্রীর মুখ’  ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে নামবে। এতে বৈদেশিক সমর্থন যেমন মিলবে, তেমনি খালেদা-তারেক ইস্যু পিছিয়ে পড়বে। এই সম্ভাবনা খুব কম, কারণ বিএনপি বাইরের কাউকে বিশ্বাস করেনা। পঞ্চমতঃ বা চুড়ান্ত কথা হচ্ছে, এবারকার নির্বাচন সুষ্ঠু হতেই হবে, নইলে দেশ বিপাকে পড়বে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, বিএনপি ক্ষমতায় আসছে না। আওয়ামি লিগের বিকল্প বিএনপি নয়, শেখ হাসিনা’র বিকল্প খালেদা জিয়া নন । তারেক জিয়া’র কোন প্রশ্নই ওঠে না। খালেদা-তারেক নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা শূন্য, জিরো। অনেকে নিরপেক্ষ হতে শুরু করেছেন!  (২) বাংলাদেশে শেখ হাসিনা’র যতটা বিরোধিতা, ভারতে ঠিক উল্টো, সেখানে তিনি ততটাই জনপ্রিয়। পুরো ভারতে কোন দলের কোন নেতা ‘শেখ হাসিনা’ বিরোধী খুঁজে পাওয়া যাবেনা। নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধী বা মমতা ব্যানার্জী’র মুখে কখনো শেখ হাসিনা বিরোধী কথাবার্তা শোনা যায়না। শেখ হাসিনা যাদু জানেন, তিনি সবাইকে যাদু করে রেখেছেন। ভারত তার নিজের প্রয়োজনে শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চায়। এটি শুধু ‘ওপেন সিক্রেট’ তাই নয়, এ লক্ষ্যে ভারত বিশ্বব্যাপী দরবার করে যাচ্ছে। জি-২০ সম্মেলনের পূর্বাহ্নে ভারত শেখ হাসিনাকে অভূতপূর্ব সম্মানে ভূষিত করে তা প্রমাণ করেছে। এতকিছুর পরও সবকিছু যে সরল রেখায় চলছে তা নয়? ব্রিকস সম্মেলন, দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের পর  এবার আমেরিকায় সাধ্যমত চেষ্টা হবে, প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কের পর এক সপ্তাহ ওয়াশিংটনে থাকবেন। একটি  মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে একজন মহিলা গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন বা জীবনযাত্রার যতটা উন্নয়ন করেছেন, তা অন্য মুসলিম দেশগুলোর অনুকরণীয় এবং পশ্চিমা দেশগুলির  শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়া দরকার। বাস্তবতা এখনো উল্টো। সরকারের অপোজিশনে এবার বিএনপি নয়, আমেরিকা।  কাজেই সতর্ক হওয়া দরকার। ছোটবেলায় পড়েছিলাম, ‘অমঙ্গলকে হাসিয়া উড়াইয়া দিলে মঙ্গলসমেত উড়িয়া যাইবে’। সঠিক নির্বাচন না হলে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে তখন আম ও ছালা দুটোই যাবে। ইইউ ইতিমধ্যে জিএসপি সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আমেরিকা যদি জিএসপি ও শান্তিরক্ষীর বিরোধিতা করে তাহলে কি হবে? বাস্তবতা বুঝতে হবে। বিএনপি-জামাত ২০০১-২০০৬ যত অপকর্ম করেছে, সারাদিন এর নিন্দা করা যায়, ঠিক আছে। কিন্তু গত পনের বছরের কর্মকান্ড, বিশেষেত: দু’টি নির্বাচনের দায় তো আওয়ামি লিগকে নিতে হবে। দেশের কথা চিন্তা করে অনেকে ভীত, সন্ত্রস্ত। আওয়ামি লিগ ভাবছে তারা ক্ষমতায় থাকছে, বিএনপি ভাবছে তারা ক্ষমতায় আসছে। বিএনপি অন্তত: এটুকু ভাবছে যে, আমেরিকা যখন লেগেছে, তখন এবার কিছু একটা হবে! সত্যি সত্যি যদি আমেরিকা কিছুটা নমনীয় না হয়, তাহলে দেশের মানুষের অসুবিধা হবে! বাংলাদেশের বড়বড় লোকজনের সবার ছেলেমেয়ে আমেরিকায় থাকে, অনেকে শেষ বয়সে থাকার জন্যে আমেরিকায় বাড়িঘর করেছেন, এঁরা কেউ চাইবেন না, আমেরিকা-ইউরোপের দরজা তাদের জন্যে বন্ধ হয়ে যাক? দেশে এখন লোকজন তাই নিরপেক্ষ হতে শুরু করেছেন! সবাই বসে আছেন, শেখ হাসিনা আমেরিকায় কতটা সফল হবেন এর ওপর। অক্টোবরের শুরুতে তিনি দেশে ফিরে যাবেন। ৬ই অক্টোবর  ঐক্য পরিষদের মহাসম্মেলন, লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হবেন, সরকার তাঁর ২০১৮’র নির্বাচনী ইশতেহার অন্তত: কিছুটা বাস্তবায়ন না করলে হিন্দুদের খোলাখুলি আওয়ামি লিগকে সমর্থন করাটা কঠিন হবে। এবারের ভোটটি আওয়ামি লিগ ভার্সেস এন্টি-আওয়ামি লিগ, ভোট যদি হয়, আওয়ামি লিগের হিন্দু ভোটের দরকার হবে? অবশ্য, অনেকেই আগের মত জিততে চান, সেক্ষেত্রে ভোটের দরকার হবেনা । সেলফি (৩) লিখেছিলাম, শেখ হাসিনা-বাইডেন বৈঠকের চেষ্টা হচ্ছে। দিল্লিতে তা হয়নি। অন্তত: প্রকাশ্যে কিছু হয়নি। ভেতরে ভেতরে কিছু হয়েছে কিনা জানতে সময় নেবে। তবে সেলফি হয়েছে। বাইডেন সেলফি নিয়েছেন। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, পুতুল সবার সাথে বাইডেন ছবি তুলেছেন। এটি ভালো দিক। কারো কোন অসুবিধা হবার কথা নয়, তবে হচ্ছে, কারো কারো জ্বলছে। এতে খুশি হবারও তেমন কারণ নেই, এসব সৌজন্য। আবার বিষয়টি এতটা হালকা নাও হতে পারে। কথা হচ্ছে, যা হয়েছে, ভালই হয়েছে। বাইডেন যখন সেলফি নিচ্ছিলেন, ফরেন সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন তখন দূর থেকে তাকিয়ে দেখছিলেন। হয়তো ভাবছিলেন, ‘প্রেসিডেন্টও তাহলে সেলফি নেন’! আমাদের বিদেশমন্ত্রী তখন পাশেই ছিলেন। …

নির্বাচনঃ কি হতে পারে? Read More »

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের নবজাগরণের অগ্রদূত বনভন্তে

ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের পার্বত্য অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী বসবাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে একজন অসামান্য মহাপুরুষের নাম শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তে। তিনি 1976 থেকে 2012 খ্রী. পর্যন্ত ছিলেন রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে তাঁর অবদান অনতিক্রম্য। তাঁর ধর্মপ্রচারের সময়কাল বিশ শতকের  সত্তরের দশক থেকে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের গোড়া অর্থাৎ 2012 খ্রী. পর্যন্ত প্রায় 42 বছর। 1962 সালে উপসম্পদা বা ভিক্ষুত্ব গ্রহণ থেকে হিসাব করলে এই সময়সীমা আরও 8 বছর বেড়ে হয় 50 বছর বা অর্ধশতাব্দী। সুতরাং সুদীর্ঘ 50 বছর যাবৎ বনভন্তে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্ম ও বৌদ্ধ সংস্কৃতিমুখী সমাজ বিনির্মাণে নিরলসভাবে ধর্মোপদেশ দেশনা করে গেছেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ আচার-অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতিতে নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। 24 ঘণ্টার মধ্যে সুতা কেটে ভিক্ষুদের পরিধেয় চীবর তৈরি করে কঠিন চীবর দানের প্রবর্তন, উপগুপ্ত বুদ্ধের পূজা, ছিমিতং পূজা বা স্বর্গঘর তৈরি করে স্বর্গের সোপানগুলোর ধারণা প্রদান, কার্তিক মাসের চাঁদদেখা থেকে মাসব্যাপী আকাশ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, সারারাত ব্যাপী মঙ্গলসূত্র পাঠ বা পরিত্রাণ শ্রবণ, বিপুল সংখ্যক ভিক্ষু সমাবেশে মহাসংঘদান, একইসাথে শত কূলপুত্রকে শ্রামণ্যধর্মে দীক্ষা বা প্রব্রজ্যাদান, সমগ্র ত্রিপিটক বঙ্গানুবাদ করে প্রকাশের নিদের্শন প্রদান, রাজবন পালি কলেজ প্রতিষ্ঠা, বুদ্ধগয়ার আদলে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে একটি দৃষ্টিনন্দন বিশ্বশান্তি প্যাগোডা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ, তিন পার্বত্য জেলায় এমনকি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শাখা বনবিহার প্রতিষ্ঠা করে একই নীতি আদর্শের শিষ্যসংঘ প্রেরণ করে ধর্মপ্রচার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।   বনভন্তের নির্দেশিত এসব দানকর্ম, উৎসব অনুষ্ঠান, পূর্জা-পার্বণ ও প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধ সমাজ গঠনে অতুলনীয় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে।ফলশ্রুতিতে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামব্যাপী গড়ে ওঠে একটি সুশৃঙ্খল বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুশাসন। চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, বড়ুয়া সকল সম্প্রদায়ের মনে ধর্মচেতনা জাগ্রত করে এবং ত্রিরত্ন তথা বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ এবং বৌদ্ধ বিহারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও অনুরাগের জোয়ার সৃষ্টি হয়। বুদ্ধ বলেছেন সংসার অনিত্য। বনভন্তেও বাংলাদেশের আপামর বৌদ্ধদের মনে ধর্মবোধ সৃষ্টি করে 2012 সালের 30 জানুয়ারি দেহত্যাগ করে পরিনির্বাণ লাভ করেন। তবে তাঁর পবিত্র দেহধাতু প্রায় একযুগ ধরে রাজবন বিহারে  পেটিকাবদ্ধ অবস্থায় ভক্তদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এ প্রবন্ধে পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণে এই মহাপুরুষের কৃতিত্ব সম্বন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে। 1920 সালের 8 জানুয়ারি পূজ্য বনভন্তে ধরাধামে আবির্ভূত হন। তৎকালীন প্রতাপশালী মৌজাপ্রধান হেডম্যান শ্রী ত্রিলোচন দেওয়ান-শাসিত মৌজার অন্তর্গত একটি গ্রাম ছিল মোরঘোনা। সেই গ্রামেই হারুমোহন চাকমা ও বীরপুদি চাকমার সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন রথীন্দ্রলাল চাকমা যিনি নিজের সাধনা ও কর্মের ফলে কাল পরিক্রমায় লোকমুখে বনভন্তে নামে সমধিক পরিচিত ও পূজিত হন। বনভন্তের পবিত্র জন্মস্থান মোরঘোনা ও ধ্যানস্থান ধনপাতা পরিণত হয়েছে পবিত্র তীর্থস্থানে।কাপ্তাই হ্রদের জলে গ্রামটি নিমজ্জিত হলেও বর্তমানে হ্রদের মাঝখানেই নির্মিত হয়েছে বনভন্তের সুদৃশ্য স্মৃতিস্তম্ভ। শ্রদ্ধেয় বনভন্তে গৃহী জীবনে তৎকালীন রাঙামাটি শহরে ধনাঢ্য বিরাজমোহন দেওয়ান বাবুর দোকানে চাকরি নিয়েছিলেন। রাঙামাটি শহরে অবস্থান করার সুবাদে তিনি অবসর সময়ে প্রচুর গ্রন্থ পাঠের সুযোগ লাভ করেন। বনভন্তের জন্মস্থান মোরঘোনা ছিল রাঙ্গামাটির চাকমা রাজবাড়ি ও বড়াদমের দেওয়ান পরিবারের কাছাকাছি।  চাকমা রাজবাড়ি এলাকায় ছিল বিশাল বৌদ্ধ বিহার এবং বড়াদমেও ছিল পার্বত্য চট্টল ধাতুচৈত্য বৌদ্ধ বিহার। ফলশ্রুতিতে রথীন্দ্র ছোটবেলা থেকেই বৌদ্ধ ধর্মীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার ও একান্ত সান্নিধ্যে আসার সুযোগ লাভ করেন। বনভন্তের নিজগ্রাম মোরঘোনাতেও একটি বৌদ্ধ বিহার ছিল। সেদিক দিয়ে বনভন্তে শৈশবে বৌদ্ধ মন্দির, বুদ্ধমূর্তি, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ ধর্মানুষ্ঠান স্বচক্ষে দেখার অপার সুযোগ লাভ করেন যা তাঁর বাল্যকালের কোমল কচি চিত্তে বৈরাগ্যের চিন্তার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সংসার জীবনের চেয়ে বুদ্ধের নির্দেশিত প্রব্রজ্যা জীবনকেই শ্রেয়তর বলে মনস্থির করতে সক্ষম হন। এর ধারাবাহিকতায় 1949 সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে গুরুভন্তে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবিরের নিকট গৃহীজীবন পরিত্যাগ করে প্রব্রজ্জিত হন। তিনি শুরুতে রথীন্দ্র শ্রমণ নাম  প্রাপ্ত হন। পরে পারমার্থিক জ্ঞানের সন্ধানে বারোটি বছর অরণ্যজঙ্গলে ধ্যানসাধনারত অবস্থায় তিনি ভক্ত- পূজারী ও সাধারণ মানুষের নিকট বনশ্রমণ নামে পরিচিত হন। পূজ্য বনভন্তে শ্রমণ থাকা অবস্থায় কাপ্তাই বাঁধের ফলে সৃষ্ট হ্রদের পানি তাঁর সাধনাস্থান ধনপাতা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে দীঘিনালায় চলে আসেন। ওই অবস্থায় তিনি তৎকালীন গুরুস্থানীয় সাংঘিক ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে 1962 সালে উপসম্পদা তথা ভিক্ষুত্ব গ্রহণে সম্মত হন।বনশ্রমণ নিরন্তর সাধনায় নিমগ্ন থাকতে পছন্দ করেন বলে উপসম্পদার পর তাঁর নাম রাখা হয় সাধনানন্দ ভিক্ষু। আর সর্বসাধারণের নিকট বনভন্তে নামেই সম্বোধিত ও পূজিত হতে থাকেন। অতঃপর শুরু হয় তাঁর ধর্মপ্রচার কাজ।     রাঙামাটি পার্বত্য জেলার একটি উপজেলা হলো লংগদু। দীঘিনালা থেকে কাছে। গভীর অরণ্য আচ্ছাদিত এলাকা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেখানে তিনটিলা নামক স্থানে অবস্থান করেন।  তখন তাঁর সাধকজীবন, আধ্যাত্মিক শক্তি, প্রজ্ঞাবল, ঋদ্ধিবল ও বিশুদ্ধ ত্যাগময় সরল সাধাসিধে জীবনযাপন লোকমুখে জানাজানি হতে থাকে। 1973 সালে তাঁর নির্দেশনায় ও উপদেশে লংগদুস্থ তিনটিলা বনবিহারে প্রথমবারের মতো বুদ্ধযুগের মহাউপসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয় । 24 ঘণ্টার মধ্যে সুতা কেটে, রঙে ভিজিয়ে. আগুনের তাপে শুকিয়ে, টানা দিয়ে. কোমর তাঁতে কাপড়/চীবর বুনে ও সেলাই করে সংশ্লিষ্ট বিহারের অধ্যক্ষকে দান করা হলো কঠিন চীবর দান। এমন অভূতপূর্ব দানপ্রক্রিয়া দেখে এবং চাকমাদের প্রথাগত ঐতিহ্যবাহী বেইনবুননের সাথে সামঞ্জস্য দেখে সকলেই অভিভূত হন।এরপর বনভন্তের খ্যাতি দ্রুত   অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর খ্যাতির কথা লংগদু থেকে রাঙামাটির রাজপরিবার পর্যন্ত পৌছঁতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। পরম্পরাগতভাবে সৎ ধর্মানুরাগী, সমাজহিতৈষী, প্রজাবৎসল চাকমা রাজপরিবার শ্রদ্ধেয় বনভন্তেকে সশিষ্যে রাঙামাটির রাজবাড়ির পার্শ্ববর্তী বনে বিহার স্থাপন করে স্থায়ীভাবে বসবাসের আমন্ত্রণ জানায়। বনভন্তের সেই ফাং বা আমন্ত্রণ গ্রহণ ছিল একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত । অতঃপর রাজবাড়ির  উত্তরপাশে সবুজশ্যামল ছায়া সুনিবিড় বনে স্থাপিত হয় রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার যা এখন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র। লংগদু থেকে রাঙামাটি অবস্থানগত, যোগাযোগ ও দায়কদায়িকাদের অবস্থা বিবেচনায় সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থিত। বনভন্তে কর্তৃক রাজপরিবারের আমন্ত্রণে সাড়া প্রদান ও রাঙামাটিতে অবস্থানের সিদ্ধান্তগ্রহণ নিঃসন্দেহে বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারের ক্ষেত্রে মাইলফলক রচনা করে। রাজনৈতিক নানা উত্থান পতনের সময়েও কঠিন পরিবেশে শ্রদ্ধেয় বনভন্তে অভয় ও অবিচল চিত্তে ধর্মপ্রচার করেছেন।  বুদ্ধের দেশিত অহিংসা, করুণা, মুদিতা, উপেক্ষা, কৃতজ্ঞতাও পরোপকারিতার কথা সহজ সরল উপমা দিয়ে দেশনা করে গেছেন। ব্যাখ্যা করেছেন দানের মাহাত্ম্য, শীল পালন ও নৈতিকতার গুরুত্ব, ভাবনার প্রয়োজনীয়তা। সমালোচনা ও প্রতিবন্ধকতা এসেছিল।কিন্তু তিনি তাঁর নীতি থেকে একচুলও চ্যুত হননি।  তাঁর  ঋদ্ধিবলম আধ্যাত্মিক শক্তি, প্রজ্ঞাতেজের সামনে আসলে নিন্দুক, সমালোচক ও শক্তিধররা আপনিই নতজানু হয়েছেন। করজোড়ে বন্দনা নিবেদন করেছেন। এ সময়কালে আশির দশকে রাঙামাটি শহর এলাকা এবং সদর উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন বনভন্তের  ধর্মপ্রচারের আওতায় চলে আসে। বনভন্তের রচিত ও শ্রুত বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগীত, কীর্তন, বন্দুকভাঙ্গা, তৈমিদং, বালুখালি, মগবান, জীবতলি কুতুকছড়ির বৌদ্ধ জনপদ, গৃহ ও বিহারগুলিতে বাজতে শুনা যেতো। বনভন্তের জীবনের শেষ পনেরো বছর ছিল(1997-2012) খ্যাতি ও সাফল্যের স্বর্ণালী অধ্যায়। এসময় বাংলাদেশে ধর্মপ্রচারের অনুকুল পরিবেশ …

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের নবজাগরণের অগ্রদূত বনভন্তে Read More »