বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক
বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান-১ ছবিটি দু’টি সাপের। একটি বিশালাকায় অজগর এবং অপরটি কিং-কোবরা। এরা জীবন বাজি রেখে মারামারি করছে। কোবরা কামড় দিয়েছিল অজগরকে। অজগর তাই চেপে ধরে কোবরা-কে। পরিণতি দু’জনের মৃত্যু। অজগর মরে কোবরার বিষে; আর কোবরা মরে অজগরের প্রচন্ড চাপে। অথচ এরা স্বজাতি। সমাজে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে। বন্ধু-বন্ধুতে, পরিবারে, ধর্মে, ভাইয়ে-ভাইয়ে, সর্বত্র। কারণ, ঈর্ষা, ইগো, কে কত বড়, নেতৃত্ব, রাজনীতি, সর্বত্র। কুৎসা, চরিত্রহনন, দালাল, চামচা আখ্যায়িত করা, টাকা মেরে দেয়া, গুজব, মিথ্যাচার- এসব চলতে থাকে। শেষমেষ উভয়পক্ষ হেরে যায়? বাংলাদেশের হিন্দু কমিউনিটি’র দিকে তাকালে কথাটি পরিষ্কার বোঝা যায়। অন্য কমিউনিটি’র কথা বলবো না, এক্ষণে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের কথা বলবো। দেশে ও প্রবাসে একই চিত্র। সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসা নেই, শুধু চরিত্রহনন। প্রত্যেকটি মানুষের কিছু ভাল গুণ থাকে, থাকে কিছু বদভ্যাস। ভালমন্দ নিয়েই মনুষ্য চরিত্র গঠিত হয়? যার মধ্যে শুধুই ভাল বিদ্যমান, তিনি মানুষ নন, দেবতা, বা সাধু-সন্ন্যাসী। সাধু-সন্ন্যাসীরা সমাজের কাজে লাগেনা, তাঁরা নিজেদের স্বর্গলাভের জন্যে কাজ করেন। এটি হিন্দু সমাজের দুর্ভাগ্য। ভারতে যত সাধু সন্ন্যাসী আছেন, এঁরা রাস্তায় নেমে এলে সব-সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। বাংলাদেশে হিন্দু’র ওপর এত অত্যাচার হচ্ছে, সাধু-সন্ন্যাসী-পুরোহিতরা কি মাঠে নামেন? তাঁরা নামেন না, মন্দিরগুলো ভক্তদের বোঝায় ওসব রাজনীতি, বাজে কাজ, সময় নষ্ট, ধর্মে মনোনিবেশ করা এর চেয়ে ঢের বেশি জরুরী! অথচ রাষ্ট্র না থাকলে ধর্ম টেকানো দায়। সৌদি আরবে গিয়ে আপনি ইচ্ছে করলেই পুজা করতে পারবেন না? ওআইসি দেশগুলোতে অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে হাজারো বিধিনিষেধ। মক্কা-মদিনায় আপনার ঢোকার অনুমতি নেই! অথচ মধ্যপ্রাচ্যে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার অনুমতি পেলে আপনি ‘বিজয়’ অনুভব করেন। ইউরোপ-আমেরিকায় আপনি মহাসমারোহে ‘কীর্তন’ করেন, রাস্তায় বিশাল মিছিল করেন, এটুকু বুঝতে চাননা যে, প্রশাসন না চাইলে আপনি তা করতে পারবেন না? ঢাকা-চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর মিছিলে যত মানুষ হয়, সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে সেই মানুষগুলো রাস্তায় নামলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ হয়ে যাবে। ২০২১-র অক্টোবরে কুমিল্লার ঘটনায় ‘ইসকন’ মাঠে নেমেছিল, কারণ তাদের ওপর হামলা হয়েছিল। তখন যদি মতুয়া, অনুকূল ঠাকুর, রামকৃষ্ণ মিশন, বা অন্যরা মাঠে নামতো? না, তাঁরা নামেনি। নিজের ওপর হামলা না হলে কেউ মাঠে নামেনা। এক হিন্দুর বাড়ী পুড়লে অন্য হিন্দু ভাবে, আমার কি, আমারটা তো পুড়েনি। এক হিন্দুর মেয়ে উঠিয়ে নিয়ে গেলে অন্য হিন্দু ওই মেয়ের দোষ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরে? নিজের মেয়েটা হারিয়ে গেলে কপাল চাপড়িয়ে মরে। গুরুকে খুশি করতে গিয়ে হিন্দু প্রতিবেশী হিন্দু’র সুখে সাথী হতে ভুলে যায়। ঘরে আগুন লাগলে প্রতিবেশীই যে প্রথম এগিয়ে আসবে তা বেমালুম ভুলে থাকে। হিন্দু চায়, তার সমস্যা সমাধানে ভারত এগিয়ে আসুক। এতকাল পরেও হিন্দু বুঝলো না যে, ভারত এগিয়ে আসেনি, আসবে না, নিজেদের সমস্যা নিজেদের সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান-২ বাংলাদেশে এ সময় দু’জন হিন্দু ভদ্রলোক বেশ সোচ্চার। একজন হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, এবং অপরজন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক। সামাজিক মাধ্যমে সবাই এদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার হতে দেখেছেন। এদের পক্ষে খুব বেশি কথাবার্তা কি চোখে পড়ে? এঁরা দু’জন আবার একে অপরের চক্ষুশূল, অনেকটা অজগর ও কোবরা’র মত! এই দুইটি মানুষ কি খুব খারাপ? কতটা খারাপ? আপনার চেয়েও খারাপ? ভাবুন, জীবনে কি কখনো এ দু’টো মানুষের প্রশংসা করেছেন? তাঁরা কি কোন ভাল কাজ করেননি? রানা দাশগুপ্তের কথা উঠলেই বলা হয়, সরকারের দালাল। প্রসিকিউটর থেকে সরকারের সকল সুবিধা নেয়, তাঁর পক্ষে সরকারের বিরোধিতা করা সম্ভব নয়, সবই লোক দেখানো! গোবিন্দ প্রামাণিকের কথার শুরুতেই বলা হয়, উনি ডিজিএফআই’র লোক, বিশ্বহিন্দু পরিষদের লোক। বুঝলাম, আপনি তাঁর সমালোচনা করছেন, আপনি কি ওনার মত সাহস করে কথা বলতে পারছেন? আপনি কেন বিশ্বহিন্দু পরিষদ বা ডিজিএফআই’র লোক হন’না? রানা দাশগুপ্তের মত সরকারি দালাল হয়ে আপনিও কিছু কথাবার্তা বলুন, কিছু কাজ করুন। আপনার কোন সমালোচনা নাই, কারণ আপনি কাজ করেন না, শুধু সমালোচনা করেন! যিনি কাজ করেন তিনি সমালোচিত হন, এটিই স্বাভাবিক। রানা দাশগুপ্তকে চিনি ৪৫ বছর। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় ‘শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইন পরিষদ গঠিত হয়, এর সভাপতি ছিলেন বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য্য এবং সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আমিনুল হক, যিনি সার্জেন্ট জহুরুল হকের ভাই, এবং পরে এটর্নি জেনারেল হয়েছিলেন। রানা দাশগুপ্ত, সুব্রত চৌধুরী, প্রফেসর নিম ভৌমিকের নেতা ছিলেন, আমি ছিলাম দপ্তর সম্পাদক। রাশেদ খান মেনন, এমপি’র ওয়ার্কার্স পাটির পল্টন বিল্ডিং-এ এর একটি অফিস ছিল। যে লোকটি সেই তখন থেকে দেশের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে, আপনি ‘দুই দিনের বৈরাগী’ তুড়ি বাজিয়ে তাঁকে উড়িয়ে দেবেন, তা তো হয়না। তাঁর কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করুন, তিনি বনেদি, সম্ভ্রান্ত পরিবার, তাঁর দুর্নীতি করার প্রয়োজন হয়না। এ সময়ে তাঁর অবস্থান ২১ জন সংখ্যালঘু এমপি, মন্ত্রীর চেয়ে শক্তিশালী। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পর তিনিই এখন বাংলাদেশে হিন্দুদের অলিখিত নেতা, মুখপাত্র। রানা দাশগুপ্ত কি ভুল করেন না? অবশ্যই করেন। যুক্তরাষ্ট্রে এসে তিনি ঐক্য পরিষদকে চারভাগে ভাগ করে দিয়ে গেছেন। বহির্বিশ্বে আমেরিকা ও জেনেভায় গিয়ে তিনি কমিটি করছেন, যাদের বাড়ীতে ছিলেন তাদের নেতা বানিয়েছেন, দু’টি কমিটি ‘অকেজো’। আমরা তাঁর কঠোর সমালোচনা করেছি, এখনো করি। গতবার যাতে তিনি সাধারণ সম্পাদক হতে না পারেন একটি শক্তিশালী গ্রূপ সেই চেষ্টা করেছিল, বলেছিল , আমি অপারগতা জানিয়েছিলাম, সবার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম, তিনি নেতা, হিন্দুদের একজন নেতার বড় প্রয়োজন, তাঁর বিরোধিতা ন্য, তাঁকে উপরে উঠতে সাহায্য করুন। একই কথা এডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিকের জন্যে প্রযোজ্য। গোবিন্দ প্রামাণিক সাহস করে যা বলছেন, তা কি আপনি বলতে পারেন? আমি কি লিখতে পারি? পারিনা, আপনি/আমি যা পারিনা, তা অন্য কেউ করছে, তাতে সমস্যা কি? তাঁর সব কথার সাথে আপনার একমত হতে হবে কেন? আমি তাঁর অনেক নীতির সাথে একমত নই, কিন্তু এজন্যে আমায় তাঁর বিরোধিতা করতে হবে কেন? তিনি আমার আশীর্ব্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? হিন্দু মহাজোট যখন প্রথমবার ভাঙ্গে তখন এর এক নেতাকে আমি বলেছিলাম, ‘আপনারা একসাথে থাকুন’, গোবিন্দ প্রামাণিক মাঠে আছে, তাঁর সাথে পারবেন না। তাঁরা আমার কথা শোনেনি, তাঁরা হারিয়ে গেছেন। কিছুদিন আগে যখন কিছু লোক বেরিয়ে গেলেন, তাঁদের একজনকে একই কথা বলেছিলাম, তারাও শোনেনি, তারাও হয়তো হারিয়ে যাবে। এরমানে এই নয় যে, যারা বেরিয়ে গেছেন, তাঁরা অযোগ্য? শুধুমাত্র একত্রে কাজ করতে না পারার জন্যে আমাদের অনেক নেতা হারিয়ে যাচ্ছেন। গোবিন্দ প্রামাণিক ঈশ্বরের বরপুত্র নন, তারও অনেক দোষগুণ আছে, কিন্তু সাহস নিয়ে সত্যকথা বলার কারণে তিনি সামনের সারিতে আছেন, এবং তাঁর পিছনে অনেক মানুষ আছে। যা বলছিলাম, হিন্দুদের একজন নেতা দরকার, কে নেতা হবেন কেউ জানেনা, যাঁরা আছেন, তাঁদের টেনে নীচে না নামিয়ে ওপরে উঠতে সাহায্য করুন। বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান-৩ প্রিয় হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভাইবোনেরা, উঠে দাঁড়াবার সময় এখনই। জেগে উঠুন, নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ান। দীর্ঘদিন ধরেই ভাবছি, শুনছি, জানতে চেষ্টা করছি যে, বাংলাদেশে আমার হিন্দু ভাইবোনেরা একজন চৌকষ, সাহসী, দৃঢ়চেতা নেতা চান। কিন্তু কেউ দায়িত্ব নিয়ে নিজে নেতা হতে চাননা, অথবা …
বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক Read More »